মনের_অন্দরমহলে পর্ব ৪৭

মনের_অন্দরমহলে পর্ব ৪৭
#আনিশা_সাবিহা

–“তোর কি খুব কষ্ট হচ্ছে রুদ্র?”

রুদ্রের দিকে হাসি বিহীন মুখে তাকিয়ে প্রশ্ন করে আয়াশ। রুদ্র শান্ত কন্ঠে বলে,
–“আমি পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছি। দাউদাউ করে জ্বলছি এক না পাওয়া ভালোবাসার আগুনে।”

–“তাও আমি কিছু করতে পারব না তোর জন্য। কারণ তুই জানিস আমায়। আমি নিজের প্রিয় জিনিসগুলোও কারোর সঙ্গে শেয়ার করি না। প্রিয় মানুষকে কি করে ত্যাগ করব? আমি কোনো অবস্থাতেই আনিশাকে ছাড়তে পারব না। যদি কখনো মরে যাই তবুও এমন কিছু করে যাব যাতে ওকে কেউ না পায়। তুইও না।”

–“আমি জানি আয়াশ। আনিশা যেমন আমার ভালোবাসা তুইও তেমনই আমার ভালোবাসা। বরং তোর প্রতি আমার ভালোবাসা অনেক দিনের। তোকে আমি রগে রগে চিনি। তুই যে আনিশাকে পাওয়ার জন্য কতটা উন্মাদ সেটা তোর চোখেই আমি দেখতে পাই। হয়ত তোর মতো আনিশাকে আমি ভালোবাসতে পারব না। সেকারণেই ও তোর!
আমি ওকে কেঁড়ে নিতেও চাই না। কারণ ও যদি জানে আমার মনের কথা তাহলে ও ভয়ানক অস্বস্তিতে পড়বে। আর আমি এটাও চাই না যে একটা মেয়ের জন্য আমাদের সম্পর্ক নষ্ট হক।”

আয়াশ চুপ করে থাকে বেশ কিছুক্ষণ। তার মনও আজ ভীষণ বিষণ্ণ। এখানে রুদ্রের বদলে যদি অন্য কেউ থাকত তবে সে কথা বলার অবস্থাতে থাকত কিনা সন্দেহ! কিন্তু তার সামনে রুদ্র দাঁড়িয়ে আছে। যে কিনা তার সুখ-দুঃখের দিনগুলো একসঙ্গে আয়াশের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছে। রুদ্র আয়াশের মুখ দেখে বুঝতে পারে আয়াশ দ্বন্দ্বে ভুগছে। তার দ্বন্দ্ব কাটাতে রুদ্র মেকি হাসি হেঁসে মজা করার চেষ্টায় বলে,

–“তোর মনে আছে? যখন ছোট ছিলি তখন একবার শুধু তোর সবথেকে ফেভারিট একটা শার্ট পড়েছিলাম। তারপর তুই কি করেছিলি? শার্টটা আমার গা থেকে ধস্তাধস্তি করে খুলে নিয়ে একেবারে আগুন ধরিয়ে দিলি শার্টে। আর সেদিন বলেছিলি, ‘যেই জিনিস আমার প্রিয় সেই জিনিস কখনো ভুলবশত অন্য কারো হয়ে যায় তাহলেও সেটাকে আমি চিরস্থায়ী হতে দেব না। ধ্বংস করে ফেলব সেই প্রিয় বস্তুটিকেই যেটা আমার প্রিয় হয়েও অন্য কারোর!’ মনে আছে তোর?”

আয়াশ একটু একটু করে নিজের দ্বন্দ্ব কাটিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হেঁসে বলে,
–“আমি এখনো চাই না আমার প্রিয় মানুষ আর প্রিয় জিনিস অন্য কেউ দেখুক বা স্পর্শ করুক। আমার ভয়ানক রাগ হয় রুদ্র। তোর প্রতিও আমার ভয়াবহ রাগ হচ্ছে। ভয়াবহ রাগ! যেটা আমার মস্তিষ্ক শূন্য করে দেয়।”

–“মনকে প্রতিদিন এটা ভেবে শান্তনা দিই যে যদি আনিশার সঙ্গে তোর আগে আমার দেখা হতো তাহলে হয়ত ও আমারই হতো। তোর নয়। যদি পরে তোর সঙ্গে ওর সাক্ষাৎ হতো তাহলে সর্বস্ব দিয়ে আমি ওকে আগলে রাখতাম। হয়ত তোর মতো পারতাম না। তবে আগলে রাখতাম আমি নিজের মতো করে।”

ম্লান হেঁসে বলে রুদ্র। আয়াশ নিজের হাতের মুঠো শক্ত করে। ঘাড়ের রগ একবার উঠছে একবার নামছে। সে অন্তত ধীর কন্ঠে বলে,
–“স্টপ রুদ্র প্লিজ! আমি যেন তোকে কিছু করে না বসি তার আগে চুপ কর। কেন জানি না এখন আমি তোর মুখে আনিশার নামটাও সহ্য করতে পারছি না।”

রুদ্রের কথাগুলো বলার ইচ্ছে করছিল ভীষণ। সে নিজেকে আটকাতে পারে না তাই বলে ফেলেছে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে। সে কি করে ভুলে গেল আনিশা তারই বেস্টফ্রেন্ডের স্ত্রী? নিজের ওপর নিজেরই ভীষণ লজ্জা হলো রুদ্রের। ঘর্মাক্ত হলদে ফর্সা চোখেমুখে দেখা গেল আলতো গোলাপি আভা। মাথা নিচু করে চশমা ঠিক করতে করতে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে বলল,

–“আমার মতো স্টুপিড একজনের কথা কানে নিস না তো। আমি বললেই কি আনিশাকে তুই ছাড়বি নাকি?”

–“নেভার এভার। বিকজ আই এম এ বিগ সে…”

–“সেলফিশ! ইউ আর এ বিগ সেলফিশ ম্যান। আই নো দ্যাট। কিন্তু কি জানিস? সেলফিশ হওয়া হয়ত ভালো। অন্তত এই স্বার্থপরতার জন্য নিজের কাছের মানুষকে নিজের করে পাওয়া যায়। সেটা হোক ছলেবলে বা কৌশলে! তুই তো পেয়েছিস তাকে।”

আয়াশ কিছু বলে ওঠার আগেই ঝনঝন আওয়াজ হলো। আয়াশ ও রুদ্র কিছুটা চমকে তাকালো ছাঁদে আসা দরজাটার দিকে।

তাড়াহুড়ো করে বালতি হাতে উঠালাম আমি। ছাঁদে এসেছিলাম ফুলের গাছগুলোতে পানি দেবার জন্য। পাইপলাইন থেকে পানি না আসায় নিচে গিয়ে বালতি নিয়ে আসছিলাম আমি। কিন্তু ছাঁদে আসতেই আমার নামে আলোচনা শুনতে পেয়ে কিছুটা কৌতূহলবশে একটু আড়ালেই দাঁড়িয়ে থাকি আমি। রুদ্রের কথাবার্তা শুনে ধীরে ধীরে পায়ের তলা থেকে মাটি সরতে থাকে। অস্বস্তিবোধ বাড়তে থাকে। রুদ্র আমার প্রতি এমন অনুভূতি পোষণ করেন ভাবতেই তিক্ততা বেড়ে যায় আমার মনের ভেতর। একসময় হাত থেকেই বালতিটা পড়ে যায়। তড়িঘড়ি তুলতে গিয়ে দেখি আয়াশ আর রুদ্র আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।

রুদ্রের তাকিয়ে থাকা দেখে চরমভাবে লজ্জিত লাগল নিজেকে। চোখ নামিয়ে বালতিটা হাতে নিয়ে দাঁড়ালাম। তাকানোর সাহস অবধি পাচ্ছি না। শুঁকনো গলায় বললাম,
–“আ…আই এম স…সরি। ভুল করে আ…আপনাদের কথা শুনে ফেলেছি।”

বলেই আর এক মূহুর্তও দাঁড়ালাম না। যত জোরে পারলাম তত জোরে ছুট দিলাম। সিঁড়িতে পা ফেলে একপ্রকার দৌড়েই ঘরে চলে এসে হাঁপাতে লাগলাম। এখনো আমার মনে ঘিরে আছে অসংখ্য অস্বস্তির বেড়াজাল। রুদ্রের মনে এমন অনুভূতি জন্মানো কি কোনো দরকার ছিল? এখন উনার সামনে দাঁড়াব কি করে আমি? এসব ভেবে মাথা খারাপ করে দিলাম আমি। বিছানায় বসে চাদর খামচে ধরে এখনো জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি আর কানে বাজছে রুদ্রের বলা কথাগুলো। সবটা গুলিয়ে আসছে আমার।

দরজার খট করে লাগানো শব্দ আঁতকে উঠে বললাম,
–“ক…কে কে!”

মাথা তুলে আয়াশকে দেখতে পেয়ে উঠে দাঁড়ালাম। ধীর পায়ে হেঁটে আমার কাছে এসে দাঁড়ালেন আয়াশ। আমি উনার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। আমার দৃষ্টিতে রাগ, অভিমান, অস্বস্তি আর লজ্জা সব একসঙ্গে মিশে আছে। সেটা কি উনি দেখতে পাবেন? উনি আমার কাঁধে দুটো হাত রেখে একটু নিচু হয়ে বললেন,
–“লুকিয়ে লুকিয়ে কথা শোনা ভেরি ব্যাড হ্যাবিট নিশাপাখি। সেখানে প্রাইভেট কথা চলছিল! তোমার শুনে ফেলা উচিত হয়নি।”

আমার রাগটা যেন ধপ করেই বেড়ে গেল। কিসের প্রাইভেট কথা? নিজের বউকে ভালোবাসার কথা অন্য কারো মুখে শোনা প্রাইভেট কথা? ফাজিল লোক! ইচ্ছে করছে মাথা ফাটিয়ে দিতে। সেই ইচ্ছেটাকে মরুভূমির বালিতে চাপা দিয়ে তেতে উঠে বললাম,
–“কীসের প্রাইভেট কথা সেটা তো শুনলামই। নিজের বউয়ের নামে এসব মনোযোগ দিয়ে শোনেন লজ্জা লাগে না হ্যাঁ?”

–“তুমি নিজেকে আমার বউ মানো?”

থতমত খেয়ে গেলাম আমি। তারপরেই নিজেকে সামলে নিয়ে আগের মতোই ঝাঁঝালো গলায় বললাম,
–“আমি মানি বা না-ই মানি। আপনি তো মানেন। রুদ্র কিসব বলে যাচ্ছিলেন আর আপনি কিছুই বললেন না?”

–“তুমি কি চাচ্ছিলে আমার বউকে রুদ্র ভালোবাসার চোখে দেখার অপরাধে মার্ডার করে দিই?”

–“আমি জানি না। এভাবে কথা উল্টেপাল্টে বলবেন না আমার ছোট্ট মস্তিষ্কে ঢুকতে পারে না।”

অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বললাম আমি। রাগটা তড়তড় করে বাড়ছে। আয়াশের ওপরেও সেই সঙ্গে রুদ্রের ওপরেও। কিছুক্ষণ নিরবতা পালনের পর হঠাৎ করেই উনি বলে উঠলেন,
–“আমার কাছে আর মাত্র সাড়ে সাতদিন আছে। দেন তুমি মুক্ত। আমার পাগলামি, আমার অসভ্য আচরণ, আমার উন্মাদনা, প্রতিদিন ও প্রতিটা মূহুর্তে তোমার কাছে এসে তোমায় ছুঁইয়ে দেওয়ার ছুতো খুঁজতে থাকা সব তো হারিয়ে যাবে। সব হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে। হেয়ার ইজ দ্যা মেইন কুয়েশ্চন আর ইউ হ্যাপি মাই ডিয়ার?”

আয়াশ কথাগুলো স্বাভাবিক ভাবে বলার চেষ্টা উনার কথায় ক্ষোভ জিনিসটি বেশ ভালোভাবে ফুটে উ,ঠেছে। আমি উনার কথা শুনে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকালাম। সেটা দেখে আয়াশ দ্রুত বলে উঠলেন,
–“হোয়াই ইউ আর ক্রায়িং? এসব কথা বললে তুমি কাঁদো নয়ত উত্তর দাও না। হোয়াটস ইউর প্রবলেম?”

আমি ধীরে ধীরে মাথা নাড়ালাম। উনি গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে থাকলেন আমার দিকে। আমার চোখেমুখে কি উনার জন্য ভালোবাসা নেই? যদি থাকে তাহলে দেখতে পাচ্ছেন না কেন? আমি তো উনার চোখেমুখে ভালোবাসা দেখতে পাই। তাহলে উনি কেন নন?

–“তো কি ভাবলে? তুমি ডিভোর্স পাওয়ার পর কি করবে তুমি? বিয়ে করবে? যদিও বিয়ে করতেই পারো। তাছাড়া কি করার আছে?”

আমি কিছুই বললাম না। অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে থাকলাম। অসহ্য লাগছে এবার। আয়াশ আবারও বললেন,
–“আমি কিন্তু ডিভোর্সের এপ্লিকেশন অলরেডি করে দিয়েছি।”

মাথার আগুন যেন দপ করে জ্বলে উঠল। আয়াশের দিকে ঘুরে হুট করেই একটা ভয়ানক সাহস দেখিয়ে বসলাম। উনার কালো শার্টের কলার টেনে ধরতেই অপ্রস্তুত হয়ে চোখ দুটো বড় বড় করে ফেললেন। আমি কলার ধরে ঝাঁকাতে লাগলাম।
–“অসভ্য, পাঁজি লোক! আমার সঙ্গে এক বছর লুইচ্চামি করে এসে এখন কিনা আমাকে ছেড়ে দেওয়ার প্লানিং করা হচ্ছে? কেন রে? আমার প্রতি সব আর্কষণ উঠে গেছে না? এখন কাকে মনে ধরেছে? ওই মৃধাকে? আপনারা সব ছেলেরা একরকম। লুইচ্চার কারখানা!”

বলেই উনার শার্টের কলার ছেড়ে একপ্রকার ধাক্কা দিলাম আয়াশকে। উনি কয়েকধাপ পেছনে গেলেও পড়ে গেলেন না। আমি প্রচন্ড রাগে বিছানা থেকে বালিশ হাতে তুলে নিয়ে ছুঁড়ে মারলাম উনাকে। তারপর দ্রুত পায়ে চলে এলাম ঘর থেকে।

আনিশা যাবার পরেই আয়াশ ঘর কাঁপিয়ে হাসি দিল। মেয়েটা পারেও! কখন কি করে নিজেও বোঝে না। হাসি থামিয়ে আনিশার যাওয়ার পানে চেয়ে বলল,
–“আমিও দেখি তোমার সহ্যক্ষমতা কতটা! কতটা ধৈর্য থাকতে পারো তুমি। যেদিন তোমার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙবে সেদিনই তো নিজের মনের সকল অনুভূতি উজাড় করে ফেলবে।”

বাড়ির নিচে শেষ প্রান্তে একটা খোলা বারান্দা রয়েছে। সেখানে টিমটিম করে লাল, নীল আরো বিভিন্ন রঙের লাইট জ্বলছে। রয়েছে একটা বড় মাপের দোলনা। সেখানেই বসে রয়েছি আমি। হিম হয়ে যায় শরীর মৃদু কাঁপছে। খোলা চুল হাত খোঁপা করে চুপটি করে বসে রইলাম। বেশ কিছুক্ষণ ভাবনাচিন্তা করার পর বুঝতে পারলাম আমি বড় দুঃসাহস দেখিয়ে ফেলেছি। শেষমেশ কিনা আয়াশ রায়হানের কলার ধরে টানছিলাম! ভাবতেই ভড়কে গেলাম আমি। এই দুঃসাহসিক কাজটা দুর্বল মন নিয়ে কি করে করলাম! নির্ঘাত আয়াশ রেগে গিয়েছেন। সামনাসামনি হলে হয়ত নিস্তার নেই আমার। ভেবে সেখানেই চুপটি করে বসে রইলাম।

পেছন থেকে একটা হাত আমার সামনে আইসক্রিম ধরতেই হকচকিয়ে উঠে তাকালাম ঘাড় ঘুড়িয়ে। আয়াশ মৃদু হাসি দিয়ে ইশারা করলেন আইসক্রিম নিতে। আমি তবুও উনার দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম আসলে উনি এখন কোন মুডে আছেন? হাজার চেষ্টা করেও সফল হলাম না বোঝার। উনি আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন আইসক্রিম। আমি সুযোগ বুঝে নিচু সুরে বললাম,
–“আসলে আমার তখন ওই ব্যবহারটা করা ঠিক হয়নি। আমার কি হয়েছিল আমি নিজেই জানি না। আই এম সরি।”

আয়াশ ঠোঁট কামড়ে হাসলেন। লোকটার এই হাসিটা ভীষণ মারাত্মক। হার্টবিটও যেন দ্বিগুন হারে বেড়ে যায়। আমায় পেছন দিকে ঘুরিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে আমার কানের পিঠে চুল গুঁজে দিয়ে ফিসফিস করে বললেন,
–“আমি কিন্তু ইনজয় করেছি তোমার কর্মকান্ড! আমি তো এটা ভেবেই পাচ্ছি না যে তোমার এই রুপও আছে! মাই গড!”

আমি চোখ বড় বড় করে ফেললাম। একটু বেশিই ওভার রিয়েক্ট করে ফেলেছি। আমি আটকা আটকা গলায় বলার চেষ্টা করলাম,
–“ওই আসলে…”

–“থাক না নিশাপাখি! বাহানা দিতে হবে না। আমি যা বোঝার বুঝে গিয়েছি।”

চোখ টিপে বললেন উনি। আর ইশারা করলেন আইসক্রিম খেতে। আমি আইসক্রিমের প্যাকেট খুলে খেতে শুরু করতেই বললাম,
–“আপনি খাবেন না?”

–“এমনিতে আমার আইসক্রিম খাওয়া পছন্দ না। তবে তুমি যখন কাছে আছো তখন খেতে আপত্তি নেই।”

অন্য হাত থেকে আরেকটা আইসক্রিম বের করে বললেন উনি। আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,
–“আমি থাকার সাথে আইসক্রিম খাওয়ার কি সাথ?”

–“আছে আছে!”
বলেই আইসক্রিমের প্যাকেট খুলে আচমকা আমার গালে মাখিয়ে দিলেন। ঠোঁটেও ভরিয়ে দিলেন বেশ খানিকটা আইসক্রিম। আমি মূহুর্তেই বোকা বনে গেলাম। হুঁশ এলে উনার হাত খপ করে ধরে বললাম,
–“আরে এটা খাওয়ার জিনিস গায়ে মাখানোর জিনিস না।”

আয়াশ হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললেন,
–“তো আমি কোথায় মাখাচ্ছি? আমি খাওয়ার জন্য রেডি করছি।”

আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আয়াশ আমার পিঠে হাত রেখে অন্যহাত কোমড়ে রেখে আমায় এগিয়ে নিয়ে এলেন। অপ্রস্তুত হয়ে আমি আমার হাতের আইসক্রিম ভুল করে আয়াশের গালে মাখিয়ে ফেললাম। উনি তা দেখে কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমার গালে নিজের ঠোঁট বুলাতে থাকলেন। এমন কর্মকান্ডে আমার হাত থেকে এবার আইসক্রিম পড়েই গেল। মূর্তি হয়ে গেলাম! এমন পাগলামিও কেউ করে?

–“আরো কয়েকদিন তো আমার কাছে আছোই। তো সেটার এডভান্টেজ নেওয়া যাক! ক্ষতি কি?”

আমি কিছু বলার সুযোগই পেলাম না। আমার ঠোঁটে আঙ্গুল রাখলেন উনি। গালে, মুখে ঠোঁটে নিজের ঠোঁট বুলিয়ে গেলেন আর দিয়ে গেলেন ভালোবাসার পরশ!

গভীর রাত! সবখানে নিস্তব্ধতা। আমি পা টিপে টিপে হেঁটে যাচ্ছি। উদ্দেশ্য আয়াশের ঘর। আজকে দুনিয়া উল্টে গেলেও আমায় উনাকে নিজের মনের অনুভূতির কথা জানাতে হবে। বলতেই হবে আমার #মনের_অন্দরমহলে কি অনুভূতি লুকিয়ে রয়েছে?

আয়াশের ঘরের দরজা খুলে চোরের মতো প্রবেশ করলাম। উনি বেশ এসির টেম্পারেচার বেড়ে দিয়ে উপুর হয়ে ঘুমোচ্ছেন। ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে বসলাম বিছানায়। তৎক্ষনাৎ নড়েচড়ে উঠলেন আয়াশ। সোজা হয়ে পড়লেন। উনি ঘুমিয়েছেন কিনা সেটা বোঝার জন্য একটু নিচু হয়ে মুখটা এগিয়ে নিয়ে গেলাম। সঙ্গে সঙ্গে থুঁতনিতে আলতো কামড় পড়তেই ধড়ফড়িয়ে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেই একজোড়া হাত চেপে ধরল আমার। আমি ধরা পড়ে গেলাম। পিটপিট করে তাকালেন আয়াশ। আমি বোকা বোকা হাসি দিয়ে তোতলিয়ে বললাম,
–“আসলে…ওই আসলে…”

–“চোর তো আগে থেকেই ছিলে। মন চুরি করতে প্রচন্ড দক্ষ তুমি। এখন কি চুরি করতে এসেছো?”

ঘুম জড়ানো গলায় বললেন আয়াশ। আমি আমতা আমতা করে বললাম,
–“আমি কিছু চুরি করতে আসিনি।”
–“তুমি কি কিছু বলতে চাও? বললে তাড়াতাড়ি বলো! আর বেরিয়ে যাও। এমনিতে খুব ঘুম পেয়েছে। দুটো ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে নিয়েছি ঘুমের জন্য। এখন তুমি এখানে থাকলে রাতের ঘুম কিন্তু উড়ে যাবে আমার।”

থমথমে কন্ঠে আমার দিকে একপানে চেয়ে কথাটি বলে ওঠেন আয়াশ। নীল রঙের টিমটিমে আলোতে স্পষ্ট উনার চেহারা। চোখজোড়া বড় বড় করে উৎসুক হয়ে রয়েছেন আমার দিকে। আমি মিনমিন করে বললাম,
–“আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই।”

–“সেটা তো বুঝেছি। এমনি এমনি তো রাতে আমার ঘরে আসো নি। বলো ঝটপট বলো।”

আমি চোরের মতো এদিক-ওদিক তাকাচ্ছি। শুঁকনো ঠোঁট জিহ্বা দিয়ে ভিজিয়ে নিলাম। এসির বাতাস যেন এখন গরম লাগতে শুরু করল। তখনই আমি এদিক-ওদিক তাকিয়ে এসির রিমোট খুঁজতে খুঁজতে বললাম,
–“এসির রিমোট টা কোথায়?”

আয়াশ সঙ্গে সঙ্গে অবিশ্বাস্য কন্ঠে বলে উঠলেন,
–“তুমি এই ঘরে এসির রিমোট খুঁজতে এসেছো?”

–“আরে না না। আমার গরম লাগছে।”

–“এসির টেম্পারেচার প্রায় অনেক দেওয়া আছে। তুমি তো এতো এসির বাতাস সহ্য করতেই পারো না। তুমি ঠিক আছো?”

আমি এবার নিজের ওপরই বিরক্ত হয়ে গেলাম। যেই কথা বলতে এসেছি সেটা কেন মুখে আসছে না? নিজেকে মনে মনে কয়েক ধমক দিয়ে মনস্থির করলাম আজ আমি যেটা বলতে এসেছি সেটা বলবই। গলা খাঁকারি দিয়ে কন্ঠে দৃঢ়তা এনে বললাম,
–“যেটা বলতে এসেছি সেটা শুনুন।”

–“হ্যাঁ শুনতেই তো জেগে আছি। টেল মি!”

আমার প্রতি মনোযোগী হয়ে বললেন আয়াশ। আমি একটু জড়োসড়ো হয়ে বললাম,
–“আয়াশ?”

–“ইয়েস?”

–“আমি আপনাকে?”

–“তুমি আমাকে?”

কন্ঠস্বর আঁটকে গেল। কাঙ্ক্ষিত শব্দটি উচ্চারণ হচ্ছে না আমার দ্বারা। এখন আমার কি করা উচিত? চোখ খুলে বড় বড় শ্বাস নিলাম। অবলা নারীর মতো তাকিয়ে বললাম,
–“আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারছি না আমার ভয় করছে।”

কথাটুকু বলামাত্র নিজের জিহ্বায় কামড় দিলাম। বলার ছিল কি আর বলে ফেললাম কি? আনিশা, তুই বোকা! মস্ত বড় একটা বোকা!

চলবে….

[বি.দ্র. কাল গল্প না দেওয়ার জন্য দুঃখিত। এসাইনমেন্টে এতোটাই ব্যস্ত ছিলাম যে ফেসবুকে আসারও সময় পাইনি ভালো করে। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবের সঙ্গে তুলনা করবেন না।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here