#ভালোবাসা_বারণ
#পর্বঃ১২
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
অয়ন বাসায় আসতেই দেখতে পেলো ঈশার বাবা মা কে। হঠাৎ অয়নের বাসায় তাদের উপস্থিতি অয়নকে ভাবিয়ে তুললো। অয়ন অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সবার দিকে। অয়ন কে দেখতে পেয়ে সবাই হাসি মুখে তাকায় তার দিকে। অয়ন তাদের দিকে কিছুটা এগিয়ে আসতেই অয়নের মা বলে উঠে
— ঐ তো অয়ন চলে এসেছে।
অয়ন ভদ্রতার সহিত ঈশার বাবাকে সালাম জানিয়ে বিনয়ের সঙ্গে জ্বিগাসা করলো
— আংকেল কেমন আছেন আপনি?
ঈশার বাবা মৃদু হেসে বলল
— হ্যাঁ, ভালো আছি বাবা। তুমি কেমন আছো?
— জ্বি, ভালো আছি আমি।
— এতোক্ষণ তোমার বিষয়ে কথা হচ্ছিলো।
— ওহহহহ।
— আচ্ছা তুমি অফিস থেকে এসেছো এখন ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নাও। কাল কথা বলবো তোমার সাথে।
অয়ন একটু অবাক হয়ে বলল
— ঠিক আছে আংকেল।
অয়ন সকলের সামনে থেকে চলে আসে নিজের রুমে। রুমে এসে অয়ন সোফায় ধপাস করে বসে পরে। ঈশার বাবা কথা গুলো ভাব্বাচ্ছে অয়নকে। হঠাৎ আজ এলেন ওনারা আবার বলল কাল কথা হবে! বিষয় কি? জানতে তো হবেই আমায়। অয়ন ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার টেবিলে বসে আছে। খাবার খাচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে কাউকে কি জ্বিগাসা করবো কি না? কিন্তু জ্বিগাসা করাই বা উচিত কি না সেটা ভাব্বার বিষয়। অয়ন খাবার শেষ করতেই অয়নকে উদ্দেশ্য করে তার বাবা বলছে
— আজ ঈশার বাবা মা এসেছে দেখেছিস তো তুই!
— জ্বি দেখেছি আর কথাও তো বলেছি।
— হুম। ওনারা কাল আবার আসবে।
— ওহহহহ।
অয়নের শান্ত উত্তরে সন্তুষ্ট না তার বাবা। উনি আবারও বলতে লাগলেন
— কেনো ঈশার বাবাকে আজ ইনভাইট করা হয়েছে জানিস তুই?
— উহু। কেনো বাবা?
— হুম ওনার মেয়ে ঈশাকে তো তুই চিনিস। তোর অফিসেই কাজ করে।
— হুম।
— ঈশাকে আমাদের বেশ পছন্দ হয়েছে। ওকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসতে চাই।
— মানে?
— মানে তোর বউ করে ঈশাকে এখানে নিয়ে আসতে চাই।
অয়ন কথাটা শুনতেই ভিশন অবাক হয়ে যায়। “একি বলছে বাবা! ঈশাকে বিয়ে করবো আমি? হাউ হট’স পসিবল? ঈশার মতো মেয়েকে আমি নিজের জীবনের সাথে কোনো মতেই জড়াতে চাই না। ঈশা রিহানের সাথে থাক। ভালো থাক। সুখে থাক। ভালোবাসায় পূর্ণতা জরুরি। আমি চাই না আমার মতো অন্য কারো ভালোবাসা অপূর্ণ থাকুক। কিন্তু এই কথাটা এখানে বলে কোনো লাভ হবে না। এই কথাটা ঈশার সামনে বলতে হবে। ও মেয়ে হয়েছে বলে ছেলেদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার কোনো অধিকার ওর নেই। এতো দিন রিহান এখন আবার আমি! আসুক কাল, ভালো করে বুঝিয়ে দিবো”। অয়ন নিজেকে একটু শান্ত করলো। শান্ত গলায় বলল তার বাবাকে
— তোমাদের পছন্দ হলে আমার অমত নেই।
অয়নের কথা শুনে সবার মুখে আনন্দের হাসি উঁকি দেয়। অয়ন খাবার টেবিল থেকে উঠে নিজের রুমে চলে আসে। বিছানার উপর বসে আনমনে ভাবছে অয়ন ঈশার কথা। “কি করে ঈশা ভাবতে পারলো আমি ওকে বিয়ে করবো? আমার কি বিন্দুমাত্র মানসম্মান নেই নাকি? যে মেয়ে রাস্তার ভিতর অন্য কাউকে জরিয়ে ধরে ন্যাকামো করতে পারে। তার চরিত্র কি আমার জানা আছে। আর তার থেকেও বড় কথা হলো ঈশার মতো একজনকে আমি চেয়েছি ঠিক। তবে এখন কার ঈশা কে নয়! আমি সেই আগের ঈশা কে চাই। যে ঈশা ভার্সিটিতে এসে সবার আগে আমার খোঁজ নিতো। যে ঈশার ডায়রিতে আমাকে নিয়ে না বলা হাজারটা কথা থাকতো। যে ঈশা অফিসে এসে সবার আগে আমার চেম্বারে আসতো”। কথা গুলো ভাবতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো অয়ন। সে দিন আর কখনও ফিরবে না। আর না ঈশা আমার হবে।
— এসব কি বলছো মা? অয়ন চৌধুরীর মতো একটা বেয়াদব ছেলে। যার ভিতর বিন্দু মাত্র লজ্জা বোধ নেই। যে লোকটা একটা নারীকে সম্মান করতে জানে না। যার মধ্যে অহংকার রয়েছে। তাকে আমি কখনও নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে মেনে নিতো পারবো না মা। আর এটা আমার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
ঈশার কথা শেষ হতেই ঈশার বাবা ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলেন
— অয়নের সাথে তোর কি হয়েছে তা আমার জানা নাই। কিন্তু মা অয়নের মতো ভালো ছেলে আর একটাও দেখিনি আমি। ও হয়তো উগ্র মেজাজি কিন্তু মনের দিক থেকে ভিশন ভালো একটা ছেলে। আমার মত হলো তোদের ভিতর যেই ঝামেলা তৈরি হয়েছে তা মিটিয়ে নেয়া ভালো। অয়ন যা করেছে তার জন্য আমি বলবো ভূল মানুষ করে। কেউ ভূলের উর্ধ্বে নয়। তাই বলে কি কাউকে একটা সুযোগ পাবে না? আর কি বলবো? বাকি সব তোর সিদ্ধান্ত।
ঈশা তার বাবার কথাটা শুনে একটু নিশ্চুপ হয়ে যায়। হুম সেটাই তো! অয়ন কে একটা সুযোগ দেয়া উচিত। কিন্তু এতোটা বাজে ব্যবহার যে আমায় করেছে। তাকে কি করে ক্ষমা করে দেই?
* ঈশা কে চুপ দেখে তার বাবা তাকে প্রশ্ন করলো
— কিরে চুপ করে আছিস যে? কিছু তো বলবি!
— হুম তোমরা যা ভালো বুঝো তাই করো।
* সকাল হতেই অয়ন বিছানা থেকে উঠে যায়। অফিসে যাবে না আজ। তাই একটু লেট করে ঘুম থেকে উঠতে চেয়েও সে পারেনি। কারন কেউ একজন কল করে অয়নের ঘুমের ১২টা বাজিয়েছে। অয়ন চোখ কচলাতে কচলাতে ফোনটা হাতে নিয়ে ফোনের স্কিনে তাকাতেই দেখতে পেলো রিয়াদ এর কল এসেছে। অয়ন কলটা পিক করতেই ওপার থেকে রিয়াদ বলতে লাগলো
— অয়ন তুই কোথায় আছিসরে?
— এই সময়ে কোথায় থাকার কথা আমার? নিজের রুমেই তো আছি।
— আরে আমি সেটা বলিনি। শোন না আজ রাতে পার্টি আছে। আসবি তুই?
— আজ রাতে!
— হুম আজ রাতে।
— ওকে ডান। কিন্তু সেটা এতো সকালে কল করে জানানোর প্রয়োজন হলো কেনো? পরেও তো বলতে পারতিস?
— হুম সেটা বলা যেতো কিন্তু তোকে সবার প্রথমে জানাতে ইচ্ছে করলো। তাই আরকি কল করেছি।
— ওকে।
আরো কিছুটা সময় কথা বলার পরে অয়ন ফোনটা রেখে দিলো। এই রিয়াদ বড় অদ্ভুত একটা মানুষ। ওর কাজ কোনোটাই আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারে না। না চাইতেও ওকে সন্দেহ হয় আমার। অয়ন আর কিছু না ভেবে ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে অয়ন ব্যল্কনিতে দাড়িয়ে আছে একা। বৃষ্টি হচ্ছে বাহিরে। একটা শীতল বাতাস এসে ছুঁয়ে যাচ্ছে অয়নকে। এই বাতাস আর বৃষ্টি অয়নকে বাধ্য করে অতিতের পাতায় চোখ বোলাতে। সেই অতিতের কথা মনে পরছে অয়নের যা সে খুব যত্নে লুকিয়ে রেখেছে নিজের ভিতর।
* আনমনে নিজের রুমে বসে আছে ঈশা। জীবনেও কখন কাউকে নিয়ে ভাবেনি সে। বরাবর নিজের আত্নসম্মান, ক্যারিয়ার, লাইফ নিয়ে ভেবে আসা ঈশার আজ অয়নকে নিয়ে ভাবতে বেশ ভালো লাগছে। উহু আজ বললে ভূল হবে। সেই ভার্সিটিতে থাকা কালিন ঈশা অয়নকে চিনতো। তবে অতটাও না। একদিন একটা ছেলের সাথে সিনিয়ার এক আপুর ঝামেলা হয়। সেখান থেকেই অয়নের সাথে তার পরিচয়। অয়ন রোজ ভার্সিটির সামনে দিয়ে যাতায়াত করতো বিধায়। তাকে রোজ দূর থেকে এক দৃষ্টিতে দেখতো সে। ভালো লাগা কাজ করতো অয়নকে দেখে। উজ্জ্বল ফর্সা চেহারার মধ্যে পিং কালারের ঠোঁট জোড়া অয়নের সুন্দর্যকে করেছে পরিপূর্ণ। এক অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলো অয়ন। যার ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ ছিলো ঈশা। অয়নের অফিসে চাকরি পাবার জন্য কতটা কষ্ট করতে হয়েছে তাকে? তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সব ঠিক ঠাকই চলছিলো। হঠাৎ করেই অয়ন কেনো জানি বদলে যায়। কেনো যেনো হঠাৎ করেই ভিশন বাজে ব্যবহার করতে থাকে তার সাথে। আর কি কি অয়ন করেছে তা তো দেখলেনই।
* ঈশা ভাবনা বাদ দিয়ে জানালাটা খুলে দিলো। বৃষ্টি শেষ হয়ে গেছে। কিছু সময় যেতেই ঈশার রুমের সামনে এসে হাজির হয় রিয়ান। রিয়ান এসে ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— আপু কি করিস?
রিয়ানের কথা শুনে ঈশা মুখ ঘুরিয়ে পিছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলো তার ছোট ভাই দাঁড়িয়ে আছে। ঈশা মৃদু হেসে রিয়ানকে বলল
— ওখানে দাঁড়িয়ে থাকবি? ভিতরে আয়।
রিয়ান দৌড়ে এসে ঈশার পাশে বসে পরলো। যদিও রিয়ান ঈশার সৎভাই। তবে সেটা বোঝার কোনো উপায় নেই। রিয়ান সব সময় ঈশাকে নিজের আপন বোনের মতো করে ভালোবাসে আর ঈশাও রিয়ানকে নিজের আপন ভাই এর মতো স্নেহ করে। যদিও রেহেলা বেগমের সাথে ঈশার সম্পর্ক অতটা ভালো নয়। রিয়ান ঈশার চোখ বরাবর প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিপাত করে বলল
— আচ্ছা আপু ঐ ছোট লোকটাকে কি তুই সত্যি সত্যি বিয়ে করবি?
রিয়ানের কথা শুনতেই ঈশার হাস্যজ্বল চেহারাটায় কালো মেঘে ঢেকে যায়। ঈশা কিছুটা থমকে গেছে। রিয়ান আবারও বলতে লাগলো তার বোন ঈশাকে
— আপু এমনিতে কিন্তু ঐ লোকটা দেখতে ভালো। কিন্তু উনি আসলে তোর যোগ্য না। তুই কিন্তু এর থেকেও ভালো কাউকে ডিজার্ভ করিস।
কথাটা কানে আসতেই খিল খিল করে হেসে ফেললো ঈশা। এতোটুকু একটা পিচ্চি মানুষ আমি কি ডিজার্ভ করি তা আমার থেকেও ভালো জানে। ঈশা তার ভাই এর গাল জোড়া ধরে আলতো করে টান দিয়ে বলল
— অনেক পেঁকেছিস তুই। দাঁড়া তোর একটা ব্যবস্থা করতে হবে।
দুই ভাই বোনের কথার মাঝে চলে আসে ঈশার মা রেহেলা বেগম। উনি এসে কিছু গহনা ও শাড়ি দিয়ে যায় ঈশাকে। ঈশা শাড়িটা হাতে নিয়ে তার মা কে কিছু জ্বিগাসা করার আগেই উনি চেঁচিয়ে বলতে লাগলেন
— কোনো ভাবেই তুই অয়নের সাথে কোনো ঝামেলা করে বিয়েটা না করে দিবি না। ও যাই করেছে করুক। পুরুষ মানুষ এমনটা করেই থাকে। তোর সব সহ্য করতে হবে।
* রেহেলা বেগম এর কথা শুনে ঈশা পুরো অবাক হয়ে যায়। এসব কি বলছে মা? ঈশা ভিশন রাগ নিয়ে তার মাকে উদ্দেশ্য করে বলে
— কেনো সব সহ্য করতে হবে? ওরা পুরুষ আমরা নারী। ওরা মানুষ আর আমরা পশু তাই তো?? ওদের কষ্ট আছে আমাদের নাই।
ঈশা কথা শেষ করার আগে রেহেলা বেগম…………………
#চলবে…………….