ভালোবাসা বারণ পর্ব-১৩

0
2460

#ভালোবাসা_বারণ
#পর্বঃ১৩
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
ঈশা কথা শেষ করার আগে রেহেলা বেগম কর্কশ গলায় বলল ঈশাকে

— আত্নসম্মান, জেদ, অপমান বোধ, এই সবের জন্য তো আর আমি এতো ভালো একটা ছেলেকে হাত ছাড়া করতে পারি না। তোর বিয়ে ওর সাথেই হবে। আর এটাই ফাইনাল।

ঈশার কোনো কথা শোনার প্রয়োজন বোধ করলো না রেহেলা বেগম। ঈশা চুপ করে আছে। কি বলবে? তার‌ মা এর ভাবনা চিন্তা তো আর বদলানো যাবে না। তবে হুম নিজের আত্নসম্মান কখনও বিসর্জন দেয়া চলবে ন তার।

* সন্ধ্যার দিকে ঈশার বাবা মা সহ ঈশা উপস্থিত হয় অয়নের বাসায়। অয়ন নিজের রুমেই ছিলো। কিছু ফাইল পত্র নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছে সে। ঈশার বাবা মা আসতেই ফারজানা অয়নের রুমে দৌড়ে চলে আসে। অয়নের রুমে এসে ফারজানা হাঁপাতে হাঁপাতে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— এই অয়ন তোর বউ চলে এসেছে।

ফারজানার হাস্যজ্বল মুখের কথাটা অয়নের কানে আসতেই অয়ন ফাইলের ভিতর থেকে মুখটা তুলে ফারজানার দিকে দৃষ্টিপাত করলো। অয়ন ফাইলটা হাত থেকে টেবিলের উপর রেখে ফারজানার দিকে একটু এগিয়ে আসতে আসতে বলল

— কে এসেছে?

— তোর হুবু বউ এসেছে।

— হাউ ফানি। আচ্ছা এখানে ঈশার আসার কি দরকার ছিলো? মানে কেনো আসলো ও?

— কেনো আসবে না? তোর বাবা ওদের সবাইকে আসতে বলেছে।

— ওহহহ।

— আচ্ছা রেডি হয়ে নিচে আয়। তোর জন্য সবাই অপেক্ষা করছে।

অয়নের কথা গুলো ফারজানার মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন তৈরি করে দিলো। “সত্যি কি অয়ন ঈশা কে বিয়ে করতে চায়? ওর কথার ধরন অনুযায়ী তো অন্য কিছু মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে অয়ন বেশ বিরক্ত ঈশার আসায়”। ফারজানা আর কিছু না ভেবে অয়নের রুম থেকে বেরিয়ে যায়। অয়ন নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে রেডি হচ্ছে। ” আজ ঈশাকে আদর করে নিজের জায়গাটা বুঝিয়ে দিবো। সামান্য একটু দয়া দেখানো যায় তাকে। এর বেশি কিছু চিন্তা করা যায় না ঈশাকে নিয়ে। এটাই বোঝাতে হবে”। আপন মনে কথা গুলো ভেবে মিট মিটিয়ে হাসছে অয়ন।

* রেডি হয়ে নিচে আসলো অয়ন। সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে অয়নের চোখে পরে ঈশা ও তার পুরো পরিবারকে। অয়নকে তারা দেখতে পেয়ে প্রচন্ড খুশি হলো। আর খুশি হবে নাই বা কোনো? অল্প বয়সে যে বেশ নাম করে ফেলেছে সে। অয়ন তাদের দিকে বাঁকা হাসি দিলো। ঈশাও যে অয়নের দিকে তাকায়নি এটা কিন্তু না। অয়নকে বেশ সুন্দর লাগছে পাঞ্জাবিতে। যে কারো দৃষ্টি কারবেই অয়নের সুন্দর্য। ঈশা কয়েক মিনিটের জন্য অয়নের মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলে। ঈশার ঘোর কাটে অয়নের কথা শুনে। অয়ন সবাইকে বেশ স্বাভাবিক কন্ঠে সালাম জানিয়ে বলল

— কেমন আছেন‌ আংকেল? আপনার শরীর এখন ঠিক আছে? মেডিসিন টাইমলি নিচ্ছেন তো!

ঈশার বাবার কাছে বরাবরই অয়ন সুপাত্র। অয়নের সব কিছুই বার বার তাকে মুগ্ধ করে। অয়নের দিকে মুচকি হেসে ঈশার বাবা উত্তর দেয়

— হুম, ভালো‌ আছি‌ আমি।

ঈশার বাবার কথা শেষ করতেই অয়নের বাবা বলল

— আচ্ছা তা হলে‌ আসল কথায় আসা যাক।

— হুম। আসল কথা হলো আমরা সবাই চাই অয়ন আর ঈশা এক‌ সাথে নিজেদের জীবন কাটাক। আমরা চাই আমাদের মেয়েকে আপনাদের দিয়ে আপনার ছেলেকে আমাদের করে নিতে।

ঈশার বাবা কথা শেষ হতেই অয়ন সবাইকে অবাক করে দিয়ে বেশ কর্কশ গলায় বলল

— ওয়েট। আমার কিছু কথা আছে। যদি অনুমতি দিন তো বলতে পারি।

ঈশার বাবা মুচকি হেসে জবাবা দিলো

— হ্যাঁ, বলো‌ অয়ন কি বলতে চাও!

— আসলে আংকেল আমি চাই ঈশারা সাথে একটু একান্তে কিছু কথা বলতে। যদি আপনারা অনুমতি দেন তো!

অয়নের কথা‌ শুনে ঈশার বাবা মুখটা মলিন করে ফেলে। অয়ন তার মুখ মলিন দেখে নিজে একটু চুপসে যায়। আমার কথায় কি ওনারা আঘাত পেলো‌ মনে? ভাবছে অয়ন। হঠাৎ ঈশার বাবা হাহাহা করে হেসে‌ বলল

— আরে মন খারাপ করলে নাকি বাবা? আমি তো‌ তোমার সাথে একটু মজা করে মুখটা মলিন করেছি। বর্তমানে এটা একটা সাধারণ বিষয়। যাও কথা বলে নাও।

অয়ন বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ঈশার দিকে দৃষ্টিপাত করতেই ঈশা ভারি কন্ঠে বলতে লাগলো

— আমার তেমন কোনো ব্যক্তিগত কথা নেই আপনার সাথে। তাই যা আপনি‌ আমাকে বলতে চান সেটা সবার সামনে বলতে পারেন।

ঈশার কথা শুনে অয়ন একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায়। প্রথমত অয়নের কথাটা যদি সবার সামনে‌ বলার মতো হতো! তবে কি‌ আর আলাদা ভাবে কথা বলার অনুরোধ করতো নাকি সে? অয়ন রাগকে কন্ট্রোল করে ঠোঁটের কোণে মিছক হাসির রেখা টেনে ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— সব কথা তো আর সবার সামনে বলা যায় না। আর তুমি তো আমার স্ত্রী হবেই। তাই এভাবে আমার কথার অবাধ্য হওয়া উচিত না। তাই না বলো!

অয়নের শান্ত কন্ঠ শুনে ঈশা বেশ বুঝতে পারছে কোনো ঝড় নিশ্চই অপেক্ষা করছে তার জন্য। তা না হলে অয়ন আমি তার সাথে না কথা‌ বলতে চাওয়ার পরেও এতোটা শান্তিতে কথা উনি বলতেন না। এমনকি বলতে পারেন ও না। ঈশাকে নিশ্চুপ দেখে তার বাবা একটু গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন

— ঈশা অয়ন যা বলছে তাই কর।

অয়ন একটু মুচকি হেসে ওখান থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে চলে আসে। ঈশাও কিছুটা বাধ্য হয়ে অয়নের পিছন পিছন তার রুমে চলে আসে। ঈশা রুমে ঢুকতেই অয়ন ধপাস করে দরজাটা বন্ধ করে দেয়। দরজা বন্ধের শব্দে ঈশা কেঁপে উঠে অজানা ভয়ে। অয়ন দরজা বন্ধ করে ঈশার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশা দরজার কাছে ছুটে চলে আসে। কাঁপা কাঁপা গলায় অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলে

— এইসব কি? দরজা বন্ধ করলেন কেনো?

অয়ন বাঁকা হেঁসে জবাব দিলো ঈশাকে

— দরজা বন্ধ করতেই ভয় পেয়ে গেলে। উফফফফ যখন কিছু করবো তখন কি করবে?

— মমানে? কি করবেন আপনি?

— অনেক কিছু করবো।

কথাটা শেষ করতেই অয়ন ঈশার দিকে এগিয়ে যায়। ঈশা একপা দু’পা করে পিছিয়ে যেতে যেতে দেয়ালের সাথে লেপ্টে যায়। ঈশা ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে অয়নের দিকে। অয়ন ঈশার কোমরে হাত দিতেই ঈশার চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়লো। অয়ন ঈশার চোখে জল দেখে সজোরে চেপে ধরে তার কোমর। ঈশা চোখ বন্ধ করে ঠোট জোড়া আলগা করে ফিসফিস করে বলছে অয়নকে

— প্লিজ অয়ন আমাকে এখন যেতে দিন। বিশ্বাস করুন আমি এই সব কোনো ভাবেই সহ‌্য করতে পারছি না। বড্ড অসহ্য লাগছে আমার। প্লিজ

অয়ন ঈশার কথা শুনে রাগে ফেটে পরে। ঈশার কোমর ধরে স্লাট করে নিজের কাছে টেনে নেয় অয়ন। ঈশা এখনও চোখ বন্ধ করে আছে। হাত জোড় দিয়ে অয়নকে আটকাতে চেষ্টা করছে। অয়ন ঈশার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলছে

— এখন না করে দিলে হবে? বিয়ে তো আমাদের হবেই। তখন তো নিজের ইচ্ছে মতো ভোগ করতে পারবো। তবে এখন কেনো নয়!

— অয়ন প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি আপনার প্রতিটা স্পর্শে আমার অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। আমি কিছুতেই আপনাকে মানতে পারছি না। প্লিজ

* অয়ন ঈশার চুল গুলো মুঠো বন্দি করে ঈশা কে নিজের সাথে চেপে ধরে চিৎকার করে বলতে লাগলো

— মানতে কি করে পারবি তুই? তোর মনের মধ্যে তো রিহান এর বসবাস। রাস্তায় যখন জরিয়ে ধরে আদর বিনিময় করিস অসুস্থ বাবাকে হাসপাতালে ফেলে। তখন তো দিব্বি ভালো লাগে। শান্তি লাগে তখন। আর আমি টাচ করলে অসহ্য যন্ত্রণা হয়।

ঈশা অয়নের এমন ব্যবহারে ভিশন অবাক হচ্ছে। ঈশা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— চুল গুলো ছাড়ুন প্লিজ আমার কষ্ট হচ্ছে ভিশন। আর বিশ্বাস করুন আমি রিহানকে জরিয়ে ধরিনি। আর না আমাদের মাঝে কোনো প্রেমের সম্পর্ক আছে। প্লিজ অয়ন প্লিজ।

— শাট আপ ওকে। আমি নিজের চোখে দেখেছি সব। আর কত নাটক তুই করবি বল! একের পর এক মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছিস। এতোটুকু ও খারাপ লাগছে না তোর? এই একটা দেহ কতজনকে দিবি তুই? কতজনকে বল!

অয়নের রাগ মিশ্রিত চিৎকার করার কন্ঠ ঈশাকে মারাক্তক ভাবে আঘাত করে যাচ্ছে। ঈশা অয়নের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল

— আমার এই একটা দেহ একজনের জন্য। হাজার জনের সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়ানো আমার কাজ না। ভূলে যাবেন না আমি বাজারের কোনো পতিতা মেয়ে না যে যেমন ভাবে ইচ্ছে হয় তেমন ভাবে আমাকে ছোট করে যাবেন আর আমি নিরব থাকবো।

অয়ন বিকট শব্দে তাচ্ছিল্য কর হাসি দিয়ে ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— আচ্ছা তাই নাকি? তবে এই দেহটা তো রিহানের জন্য বরাদ্দ করে দিয়েছিস। তবে আমাকে কেনো তোদের এই নোংরা খেলায় জরাচ্ছিস? কেনো বিয়ে নামক একটা পবিত্র সম্পর্কে ঘৃণায় পতিত করছিস? উত্তর দে আমায়!

ঈশা কান্না ভেজা কন্ঠে বলল

— আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই না। ঘৃণা করি আপনাকে আর এটাই সত্যি। কিন্তু পরিবারের মুখের দিকে তাকিয়ে এখানে এসেছি। ভেবেছি একটা সুযোগ আপনাকে দিবো কিন্তু আপনি প্রমান করে দিলেন আপনি সুযোগ পাবার অযোগ্য।

কথাটা শেষ হতেই অয়ন ঈশা কে এক ধাক্কা মেরে বিছানার উপর ফেলে দেয়। এক পা বিছানার উপর রেখে ঈশার দিকে ঝুঁকে বললো

— আমাকে কি সুযোগ দিবে তুমি? আর ঘৃণা আমায় করবে কি? ঘৃণা করি আমি নিজে তাও তোমায়।

*ঈশা বিছানা থেকে উঠার চেষ্টা করতেই অয়ন ঈশাকে………………….

#চলবে………………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here