ভালোবাসা বারণ পর্ব-১৪

0
2389

#ভালোবাসা_বারণ
#পর্বঃ১৪
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
* ঈশা বিছানা থেকে উঠার চেষ্টা করতেই অয়ন ঈশাকে হেঁচকা টানে বিছানা থেকে তুলে দাঁড় করায়। ঈশা কাঁদছে অয়নের এমন ব্যবহারে। ঈশার চোখের জলের দিকে অয়নের বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ নেই। রাগে চোখ গুলো জ্বল জ্বল করছে অয়নের। অয়ন ঈশার বাহু জোড়া শক্ত করে চেপে ধরে ঈশাকে উদ্দেশ্য করে দাঁতে দাঁত চেপে বলছে

— আপনার মত একটা নির্লজ্জ বেহায়া মেয়েকে বিয়ে তো দূর আমার পাশে বসার অনুমতিও আমি দিতে পারি না। সো নিচে গিয়ে সবাইকে বলে দিবেন যে আপনার এই বিয়েতে মত‌ নেই। আশা করি বুঝতে পেরেছেন সব।

ঈশা অয়নের কথার কোনো জবাব দিলো না। বরং শুধুমাত্র হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল সে। অয়ন
ঈশার বাহু জোড়া ছেড়ে দিলো। ঈশা চোখের জলটা মুছে নিলো। অয়নের প্রতিটা কথার আঘাত ঈশার হৃদয়কে রক্তাক্ত করেছে। বুকের মধ্যে প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে ঈশার। কিন্তু অয়নকে কিছু বলা বা তার দিকে দৃষ্টিপাত করার শক্তি ঈশার শরীরে নেই। একটা হেরে যাওয়া মানুষের ন্যায়‌ অয়নের রুম থেকে মাথা নিচু করে বেরিয়ে যায় ঈশা। অয়ন ঈশার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশা রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই অয়ন নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়। দরজাটা বন্ধ করে অয়ন ধপাস করে বসে পরে সোফায়। চুল গুলো বড় থাকায় সব গুলো চুল এসে পরলো অয়নের মুখের উপর। চুল গুলো অয়ন ভাঁজ করে সোফায় হেল দিয়ে বসে। চোখ জোড়া লালা বর্ণ হয়ে আছে তার। আজ ঈশাকে সে চিরদিনের মতো হারালো। আজকের পর হয়তো বা কোনো দিনও ঈশা আমাকে খুঁজবে না। আর হয়তো সরি বলতে আসবে না সে। আমাকেও সহ্য করে নিতে হবে সে অন্য কারোর।

— বিশ্বাস করো ঈশা তোমাকে কষ্ট দিতে আমি চাইনি। শুধু একটা প্রশ্ন আমার। কেনো তুমি তিনটি জীবন নষ্ট করে দিতে চাচ্ছো? রিহানের সাথে সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও তুমি কেনো আমাকে বিয়ে করতে চাও? কি জন্য আমাকে বার বার আঘাত করো তুমি? সত্যি বুঝতে পারি না আমি।

আপন মনে কথা গুলো বলছে অয়ন। চোখের সামনে যেনো আঁধার নেমে এসেছে তার। চোখ জোড়া ক্লান্ত।

* ঈশা অয়নের রুম থেকে বেরোতেই সবাই ঈশার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বুঝতে চাচ্ছে সবাই তাদের কি কথা হলো? ঈশাকে দেখে বেশ অন্যরকম লাগছে। চোখ জোড়া ফুলে উঠেছে ঈশার। ঈশা নিচে আসতেই তাকে উদ্দেশ্য করে অয়নের বাবা বলতে লাগলো

— কি হয়েছে মা? তোমার চোখ ফুললো কি করে? অয়ন কি কিছু বলেছে তোমায়?

অয়নের বাবার কথা শুনে ঈশার মুখ থেকে একটি শব্দ ও বের হলো না। ঈশা ছলছল চোখে মাথাটা নিচু করে বলল

— স্যার, বিয়েতে রাজি না। উনি আমার মতো একটা মেয়েকে কখনও নিজের লাইফ পার্টনার হিসেবে মানতে পারবে না। এই কথা এখানেই শেষ।

কথাটা শেষ করে ঈশার ধৈর্য্য আর তার সঙ্গ দিলো না। দৌড়ে বেরিয়ে যায় অয়নের বাড়ি থেকে। ঈশার বড্ড দমবন্ধ লাগছে অয়নের বাড়িতে। সহ্য হচ্ছে না কিছুই। ঈশা চলে যাবার পর তার মা বাবাও উঠে চলে যায়। অয়নের বাবা অনেকটা মিনতি করলেও তারা তাদের কোনো কথাই শোনে না। কেনো শুনবেন বলুন? যেখানে নিজের মেয়ের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরছে। এই দৃশ্য দেখার পর কোনো পিতাই নিজেকে সামলাতে পারে না। ঈশার বাবাও তার ব্যতিক্রম নয়। ঈশার পিছন পিছন তার বাবা মা ও চলে আসে। ঈশার পরিবার চলে যেতেই অয়নের বাবা মাথায় হাত রেখে বেশ হতাশ হয়ে বসে পরে।

— কিরে ঈশা কি হয়েছে? বলবি তো আমাদের! এভাবে কান্না করছিস কেনো? কিছু তো বল!

রেহেলা বেগম কান্না দেখে কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করলো ঈশাকে। ঈশা কারো কথা‌ কানে তুলছে না। আপনমনে আজকের কথা গুলো ভাবছে আর চোখের জল ফেলছে সে। ঈশার কান্না দেখে তার বাবা অনেকটা বিচলিত হয়ে নিজের মেয়ের কাছে এসে বসলো। ঈশার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলো তার বাবা। হাত বুলাতে বুলাতে বলল ঈশাকে

— মা অয়ন তোকে কিছু বলেছে? কেনো কাঁদছিস তুই? আমাদের বল। মনটা হালকা হবে তোর।

ঈশা কিছু সময় চুপ থেকে কান্না ভেজা কন্ঠে বলতে লাগলো

— বাবা ঐ অয়ন চৌধুরী আমার চরিত্র নিয়ে যা নয় তা বলেছে। আমি নাকি ওনার যোগ্য না। উনি বিয়ে তো দূর আমার পাশে বসতেও হাজার বার ভাববে। আরো অনেক জঘন্য কথা বলেছে আমায়। যা আমি তোমাদের বলতে পারবো না। এরপরেও যদি তোমরা অয়নের সাথে আমার বিয়ে নিয়ে কোনো কথা বলো তোমরা। তবে এই বাড়ি ছেড়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো পথ থাকবেনা আমার।

ঈশার কথা শুনে সবাই নিশ্চুপ। সত্যি তো বলেছে মেয়েটা। চরিত্র নিয়ে যে এতোটা বাজে কথা বলতে পারে। তার থেকে আর কি আশা করা যায়? ঈশার বাবা ও মা ঈশার এই সিদ্ধান্ত অমত করেনি। আর না করাটাই স্বাভাবিক। ঈশাকে একটু একা থাকতে দিতে হবে। সবাই ঈশার রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

* অয়নের বাবা চিৎকার করে অয়নকে ডাকতে লাগলো অয়নকে। তার চিৎকারে শব্দ অয়নের কানে আসতেই অয়ন দৌড়ে নিচে নেমে আসে। অয়ন তার বাবার কাছে এসে ভিশন চিহ্নিত কন্ঠে বলল

— বাবা এই ভাবে চিৎকার করছো কেনো? তুমি অসুস্থ হয়ে পরবে তো। একটু শান্ত হয়ে যাও। আমি আছি তো এখানেই

অয়ন তার বাবাকে স্পর্শ করতেই তার বাবা তাকে অবাক করে দিয়ে অয়নের হাত তার শরীরের উপর থেকে সরিয়ে দেয়। অয়ন একটু অবাক হয়ে থ মেরে দাড়িয়ে যায়। অয়নের সাথে তার বাবা কখনও এমন করেনি। অয়নকে উদ্দেশ্য করে তার বাবা বলছে

— ঈশাকে অপমান করার সাহস হলো কি করে তোর? ঈশাকে বাজে কথা বলেছিস কেনো? উত্তর দে।

অয়ন শান্ত গলায় বলল

— আমি এই সব কথা বলতে পারবো না। আর আমার ব্যক্তিগত বিষয়ে আমি কাউকে কিছু বলতে বাধ্য নই।

অয়নের কথাটা শেষ করার আগেই তার বাবা তার গালে সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। থাপ্পড়ের শব্দে পুরো বাড়িটা কেপে উঠলো। সবাই নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। অয়ন মাথাটা এক পাশ কাত করে দাঁড়িয়ে আছে গালে হাত‌ দিয়ে। অয়নের বাবা অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— সব সময় আমরা তোকে অনেক বড় দেখতে চেয়েছি। একটি বারের জন্য ও ভেবে দেখি নাই যে সত্যি ছেলেটা আমার বড় হয়েছে। আজ মনে হচ্ছে সত্যি তুই অনেক বড় হয়ে গেছিস। তোর সামনে এখন আমাদের ভিশন ছোট মনে হচ্ছে। খুব ছোট।

অয়ন আর কিছু বলার ভাষা খুঁজে পেলো না। বাবার দিকে কর্ণপাত করতেও লজ্জা লাগছে তার। তবুও অয়নকে নিশ্চুপ থাকলে চলবে না। অয়ন ফিসফিস করে বলল

— হ্যা তোমরা যা ভাবার ভাবতে পারো। কিন্তু ঈশাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

* কথাটা শেষ হতেই অয়ন নিজের রুমে চলে আসে। ঈশাকে অপমান করে আমার বুঝি বড্ড ভালো লাগছে তাই না? সবাই নিজের কষ্টটা বোঝে। আমি যে সব হারিয়ে ওকে আপন করতে গিয়েছি। তবে ভাগ্য আমার সাথে উপহাস ছাড়া কিছু দিলো না। ঈশা আমাকে না অন্য কাউকে ভালোবাসে। এইটা শোনার পরে নিজের উপর নিজের ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করেছিলো। তখন আমারও কষ্ট হয়েছে। কেউ তখন একটি‌ বার ও‌ আমার খবর নেয়নি।

অয়ন নিজের রুমে বসে এই সব ভাবছে। হঠাৎ করে অয়নের ফোনটা বেজে‌ উঠলো শব্দ করে। অয়ন ফোনের স্ক্রিনে তাকাচ্ছি বেশ অবাক হয়ে যায়। অয়ন দেখতে পায়……………………..

#চলবে…………………..

( প্রথমে আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। বড় করে লিখতে চেয়েছি কিন্তু আবারও ব্যর্থ হয়েছি। বা পা এ আঘাত পেয়েছি। ব্লেডিং ও হয়েছে বেশ। পা এর আঘাতের জন্য জ্বর চলে এসেছে শরীরে। ছোট করে দিলাম বলে বাজে মন্তব্য করবেন না। ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here