মনের_অন্দরমহলে পর্ব ৫১
#আনিশা_সাবিহা
স্তব্ধ নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন আয়াশ। উনার চোখে আকাশ ভরা বিস্ময়। গোলাপি ও কালো বর্ণের সংমিশ্রণে ঠোঁটজোড়া একে ওপরের থেকে আলাদ হয়ে হা হয়ে রয়েছে। আলতো করে কাঁপছে সেই ঠোঁটজোড়া। এক পর্যায়ে হাত থেকে পড়ে গেল ছবিগুলো। চোখ বুঁজে ফেলেন উনি। সোফায় ঠেস লাগিয়ে বসেন। উনার এমন অদ্ভুত আচরণে একটা সময় আমিও ভ্যাবাচেকা খেয়ে যাই। মনে করতে থাকি আসলে আমি কি কি বলে ফেলেছি। স্মৃতিচারণ করতেই মৃদু কেঁপে উঠলাম আমি। এতো হিংসা, এতো পজেসিভনেস আমার মধ্যে কি করে এলো? এতো রাগ তো হওয়ার কথা নয়! গা এলিয়ে সোফায় বসে আছেন আয়াশ। চোখ এখনো বন্ধ করেই আছেন। আমি উনাকে ডাকতে গেলাম,
–“আ…আপনি…”
–“আমাকে ডেকো না। প্লিজ আনিশা! এই মূহুর্ত অনুভব করতে দাও। আমি ফিল করতে চাই। তোমার কথাগুলো এখনো আমার কানে বাজছে। তোমার শব্দকে আমি ফিল করছি। প্লিজ কিছু বলবে না আজ।”
চোখ বুঁজে থেকেই বললেন আয়াশ। আমি এবার সরু করে তাকালাম মৃধার দিকে। ওর প্রতি অত্যন্ত রূঢ় হয়ে পড়েছি আমি। সেও নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে। চোখে টলটল করছে পানি। তার কোনো নড়াচড়া নেই। একটু পরেই সে মাথা তুলে আমার দিকে চেয়ে হাসার চেষ্টা করে মিহি সুরে বলল,
–“তুমি মজা ক…করছ আনিশা? প্র্যাংক করছ আমার সা…সাথে? নিশ্চয় মজাই করছ! তোমরা তো কাজিন তাই না? আর স্যারের মতো একজন মানুষ যদি বিয়ে করেন তাহলে তো পুরো শহর জানার কথা। মজাটা করো না। আমি ধরে ফেলেছি।”
তার কথায় লুকিয়ে ছিল অজস্র যন্ত্রণা। কেউ যদি আচমকা জানতে পারে তার পছন্দের মানুষ আসলে অন্যকারো তাও বহুদিন ধরে অন্যকারো তাহলে তার মনে বেঁধে রাখা অনুভূতিগুলো টুকরো টুকরো হয়ে যায়। সেটাকে দুঃস্বপ্ন মনে হয়। হয়তবা মৃধার ক্ষেত্রেও তাইৃ। কিন্তু আমার কেন যেন বিন্দুমাত্র দুঃখ লাগল না মৃধার জন্য। এখনো সেই মাথায় দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। আমি আবারও কপট হয়ে বললাম,
–“এটা মজা নয় এটা সত্যি। সামনে যেই মানুষটাকে দেখছো সেই মানুষটা এক বছর আগে আমায় একপ্রকার জোর করে সুইসাইডের ভয় দেখিয়ে বিয়ে করেছেন। এই মানুষটা এখন যেমন আছেন আগে তেমন ছিলেন না। আমাদের বিয়ের কথা কেউ জানতো না কারণ আমি তখন অন্ধ ছিলাম আর আমার বয়স তখন কম ছিল। এটা যদি জানাজানি হতো তাহলে সবথেকে বেশি হ্যারাজ আমায় হতে হতো। এমনকি বিয়ের পর পরই মিডিয়ার লোকেরা খবর পেয়ে এই বাড়িতেও এসেছিল। আমায় যাতে এসব বাজে প্রশ্নের মুখোমুখি না হতে হয় তাই উনি বিষয়টা পুরোপুরি লুকিয়ে যান। আর তুমি অনেক খোলা মনের মেয়ে মৃধা। আর আয়াশ সকলকে নিজের ব্যক্তিগত কথা বলেনও না। এটা উনার স্বভাব। তাই তোমাকেও জানায়নি হয়ত ইনসিকিউরিটির জন্য। আশা করছি তুমি এবার থেকে মাথায় রাখবে যে যাকে নিজের পছন্দের তালিকায় রেখেছো সেই মানুষটি আমার। শুধু এবং শুধুই আমার। ইফ হি ইজ এ বিগ সেলফিশ ম্যান দেন আই এম মোর সেলফিশ ওয়াইফ দেন হিম।”
বলেই আয়াশের দিকে একপলক তাকালাম। উনি এবার চোখ মেলে আবার শূন্য দৃষ্টিতে থুতনিতে হাত দিয়ে চেয়ে আছেন আমার দিকে। উনার দিকে একবার চোখ রাঙিয়ে হনহনিয়ে সিঁড়ি বেয়ে দৌড়ে নিজের ঘরে চলে এলাম আমি। এসেই চরম আকারে লজ্জা পেয়ে গেলাম। এতো কথা কি করে বললাম আমি? হাউ? ঢক গিলে এবার মাথা চাপড়াতে ইচ্ছে করছে। ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম এবার। কিভাবে নির্লজ্জের মতো বার বার বললাম, ‘উনি আমার। আমার প্রেমিক পুরুষ। আমার স্বামী!’
এসব ভাবতে ভাবতে বুঝতে পারলাম একটা নির্লজ্জ ব্যক্তির সঙ্গে থাকতে থাকতে আমিও নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছে। লজ্জা হারিয়ে যাচ্ছে আমার। বেলকনিতে এসে চোখ বন্ধ করে থাকলাম আমি। বিড়বিড় করে বললাম,
–“নিজের কাউকে ধরে রাখতে মাঝে মাঝে নির্লজ্জ হলে ক্ষতি কি?”
মুখে যাই বলি না কেন ভেতরে একপ্রকার লজ্জায় মরি মরি অবস্থা আমার। আচ্ছা আয়াশ এখন কি করছেন? আর মৃধা? সে কি করছে? হয়ত ওর খারাপ লেগেছে। আমারও বা কি করার? এসব আমি চোখের সামনে দেখতে পারছিলাম না। এতসব ভাবনা ভাবতে ভাবতে চোখ গেল বাগানের সরু মার্বেল পাথরের করা রাস্তার দিকে। মৃধা জোরে জোরে হেঁটে বেরিয়ে যাচ্ছে। যেন খুব তাড়া তার। কীসের তাড়া? একপ্রকার ছুটে বেরিয়ে যায় মেয়েটা। আমি তা দেখে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলি। সে হয়ত পুড়ছে প্রেম নামক জলন্ত আগুনে। কিন্তু তবুও আমি আয়াশকে অন্যের সাথে দেখতে নারাজ।
কিছু মূহুর্তের মাঝেই মেইন গেট দিয়ে বেরিয়ে যেতেই অদৃশ্য হয়ে যায় মৃধা। আমি পিছু ঘুরতেই আমার কাঁধে কোনোকিছুর ভর বুঝতে পেরে নিশ্চিত হয়েই গেলাম কাঙ্ক্ষিত মানুষটির আগমন ঘটেছে। সেখানেই চুপ করে গেলাম আমি আর ঘুরলাম না। এই মূহুর্তে উনার চোখে চোখ রেখে কথা বলার মতো অবস্থা নেই আমার। কাঁধে একের পর এক চুমু এঁকে দিয়ে আমার কানে নিজের ঠোঁট ঘেঁষে খুব ধীর কন্ঠে বলেন,
–“আজ আরেকটু হলে আমার হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেত খুশির চোটে। তুমি কি আমায় হার্ট অ্যাটাক করানোর প্ল্যানিং করে সকালে ঘুম থেকে উঠেছো নিশাপাখি?”
আমি নিশ্চুপ কিছুক্ষণ চুপ থেকে মিহি সুরে নির্বিঘ্নে উত্তর দিলাম,
–“আমি কেন এসব প্ল্যানিং করতে যাব?”
–“করেছো করেছো! আর আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দেওয়া? ‘আই এম মোর সেলফিশ ওয়াইফ দেন হিম?’ নট ব্যাড।”
–“দেখুন আমি ওই কথা…. ”
–“তুমি ওই কথা?”
আমি গলা খাঁকারি দিয়ে স্পষ্টভাষী হয়ে বলার চেষ্টা করলাম,
–“আমি ওই কথা বলেছিলাম কারণ মৃধার মতো মেয়েকে আপনার হাত থেকে বাঁচাতে।”
বলেই দম ছাড়লাম আমি। আয়াশ তা শুনে আমায় নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলেন। আমার বাহু ধরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি পর্যবেক্ষণ করে বললেন,
–“হোয়াট ডু ইউ মিন?”
–“সিম্পল। আপনার মতো লুইচ্চার কারখানা আর অসভ্য মানুষের খপ্পরে একমাত্র আমিই পড়েছি তাই মৃধাকে আপনার খপ্পরে পড়তে দেব না।”
আমতা আমতা করে কথাগুলো বলতেই আয়াশ আমার দিকে দৃঢ় দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই কন্ঠে মিইয়ে গেল আমার। আমার বাহু থেকে হাত সরিয়ে কোমড়ে হাত রাখলেন উনি। খামচে ধরে নিজের কাছে টানতেই উনার বুকে গিয়ে পড়লাম আমি। চেপে ধরলাম উনার গেঞ্জি। অবাক নয়নে তাকাতেই উনি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
–“সিরিয়াসলি? বাহানা বানাও কি করে এতো?”
–“আ…আমি বাহানা বানাবো কি করে?”
–“বানাও তো অবশ্যই। তুমি জানো তুমি আমার থেকে দূরে যাওয়ার বাহানা খোঁজো। আর অনেকে আমার কাছে আসার বাহানা খোঁজে?”
–“তাহলে তাদের কাছে যান না কেন?”
অজস্র অভিমান নিয়ে বললাম আমি। উনি আমার চোখেমুখে ফুঁ দিয়ে বললেন,
–“কারণ আমি আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মায়াবিনী রমনীকে চাই। যার মায়া আমায় খুন করে ফেলেছে। যে আমার মন কেঁড়েছে। আমার প্রতিটি নিশ্বাস আর প্রশ্বাস শুধু তাকে চাই। আমার প্রাণ আর মন দুটোই যে তার মাঝেই লুকিয়ে আছে।”
মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেলাম আমি। মাঝে মাঝে মনে হয় ভাগ্যিস ওই নীলাদ্রের হাত ধরে সেদিন পালিয়ে যাইনি। ভাগ্যিস এই অসভ্য লোকটার পাল্লায় পড়েছিলাম। উনার ভালোবাসা দেখেছিলাম। উনার ভালোবাসা দেখে ভালোবেসেছি আমি। ঘোর লেগে গেল আমার দুচোখে। এখনো চোখে চশমা পড়ে আছেন উনি। সেটা খুলে ফেললাম। যদিও চশমার আবরণ উনার চোখের সেই গভীরতা ঢাকতে পারেনি। এই গভীরতা ঢাকার ক্ষমতা এই সামান্য চশমার নেই। সেটা হাতে নিয়ে আমি আয়াশ পায়ের ওপর ভর দিয়ে আরো কাছাকাছি দাঁড়ালাম। আয়াশ ভড়কে যাওয়ার নাটক করে বললেন,
–“মাই গড! এই মেয়ে নিশ্চয় আমায় আজ মেরেই ফেলবে। এতো কাছে আসছো তুমি? আমি কি ভুল দেখছি?”
–“উঁহু না। আপনি ভুল দেখছেন না। আমি তো শুধু আপনার সমান হওয়ার চেষ্টা করছি। ব্যাস…আর কিছু না।”
–“একটা কথা বলো! তুমি যখন ওই নীলাদ্রের সঙ্গে…”
আমি উনাকে থামিয়ে দিয়ে তেতে উঠে বললাম,
–“খবরদার উনার কথা বলে আমার মুড খারাপ করবেন না। জঘন্য ছেলে!”
–“আহা, শোনোই না! জাস্ট একটাই প্রশ্ন। তোমার সাথে যখন ওই নীলাদ্রের সম্পর্কের শুরু হয়েছিল ও তখন তোমায় প্রপোজ করেনি?”
আমি মুখ ভার করে বললাম,
–“হ্যাঁ করেছিল। তো?”
–“তুমি উত্তরে কি বলেছিলে?”
–“আমি উত্তরে হ্যাঁ বলেছিলাম।”
–“এতটুকুই?”
ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন আয়াশ। আমি কথাগুলো মনে করে বললাম,
–“হ্যাঁ।”
–“ইট মিনস তুমি ওকে কখনো আই লাভ ইউ বলো নি?”
–“না!”
আয়াশ বিস্ফোরিত নয়নে আমার দিকে তাকালেন। নিজের মাথা ঝাঁকুনি দিয়ে মৃদু আর্তনাদ করে বললেন,
–“ওহ গড! এটা কার পাল্লায় পড়লাম আমি?”
আমি এবার চোখজোড়া ছোট করে তাকালাম আমি। মানে উনি কি বোঝাতে চাইছেন?
–“মানে কি বলতে চাইছেন?”
–“তোমার মাঝে আমিষের কোনো গুনাগুন নেই। যা আছে সব এলাচি আর মশলা! যদিও ওই ব্লাডি বিচকে এসব না বলে ভালোই করেছো। তবে তুমি আমার বউ হয়ে একটা নিরামিষ? আমি ভাবতে পারছি না! মাথা ঘুরছে আমার।”
আয়াশ এতোটাই হেয়ালি করে কথাগুলো বললেন যে আমার বোধগম্য হলো না একটা কথাও। আমার ভ্রু কুঞ্চিত হয়ে গেল। আমি উনার গেঞ্জির গলা ধরে বললাম,
–“ওসব বাদ দিন। এলাচি, মশলা, আমিষ কিসব খাবারের কথা টেনে আনছেন? আমার কথা শুনুন।”
আয়াশ মনোযোগের সহিত আমার দিকে তাকাতেই আমি বললাম,
–“মৃধা বাড়ি থেকে কিভাবে বেরিয়ে গেছে?”
আয়াশ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললেন,
–“আমি কি করে জানব? আমি তো দেখিনি। আমি তো জাস্ট ওই সিসিটিভি ফুটেজ আর ছবিগুলো দেখছিলাম। ও বেরিয়ে গেল ‘আসি’ বলে।”
–“আপনি সেটাও দেখেন নি? অন্যসময় তো দাঁত কেলিয়ে ওর সাথে কথা বলেন। আজ কি হলো?”
–“ওটার তো একটা কারণ আছে।”
আমি ফিচেল গলায় বললাম,
–“আচ্ছা শুনুন মৃধাকে এসিস্ট্যান্ট হিসেবে রাখার কোনো দরকার নেই।”
–“কেন? ডু ইউ ফিল জেলাস মাই লিটল ওয়াইফ…?”
–“এর অনেক কারণ আছে। সে আপনাকে পছন্দ করে। আজ এসব জানার পর নিশ্চয় ও কষ্ট পাবে। দেখুন আমি ওকে এভাবে কথাগুলো বলতে চাইনি। কিন্তু মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেছে। ও কষ্টও পেয়েছে। আপনার থেকে দূরে থাকলে হয়ত কষ্ট কমবে। আর…”
–“আর?”
আমি আয়াশের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দূরে সরে এলাম। উনার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম পায়ের পাতা উঁচু করে উনার কানের কাছে ফিসফিস করে বললাম,
–“আমার হিংসে হয়।”
–“কেন?”
–“বুঝে নিন!”
আয়াশ সোজা হয়ে দাঁড়িয়েই প্রশ্ন করল,
–“ভালোবাসো?”
আমিও ফিসফিস করে লজ্জা মিশ্রিত চাহনি নিয়ে পেছন থেকেই বললাম,
–“একদিন আপনি বলেছিলেন আমার কর্মকান্ড আপনাকে জানিয়ে দেবে আমি আপনার জন্য কি ফিল করি! তাহলে জেনে নিন।”
মুচকি হেঁসে দূরে সরে যেতেই বুঝতে পারলাম আমার লজ্জা লাগছে। গলা আর কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে। এই লোকটার সামনে এক সেকেন্ডও থাকা যাবে না। সেই ভেবে ছুট লাগালাম আমি। ভেতরে চলে এলাম।
বুকে হাত রেখে আনিশার ভেতরে যাওয়া দেখল আয়াশ। তার ঠোঁটের কোণে এক মনোমুগ্ধকর হাসি।
–“আমি তোমার আগে তোমার অনুভূতি সম্মন্ধে জানতে পেরেছি নিশাপাখি। তোমাকে যা বুঝলাম, তুমি ভাঙবে তবুও মচকাবে না। তবে আয়াশ রায়হানও হার মানার পাত্র নয়। তুমি যদি তোমার মনের কথা নাও বলো আমি ছাড়ছি না। কিছুতেই না।”
৫ দিন পর…
পাঁচ দিন হয়ে গেল একটা বাংলোতে রয়েছি আমি। আমার সঙ্গে শুধুমাত্র ফুলকি রয়েছে। আমরা দুজনই। এই বড় আর পুরোনো বাংলোতে কারো আনাগোনা নেই। আয়াশ এখানে রেখে গিয়েছেন আমায় পাঁচ দিন আগে। কিন্তু কেন রেখে গিয়েছেন সেটা আমি আদোও জানি না। উনার সঙ্গে ফোনেও বেশি কথা হয় না আমার। এই পাঁচ দিনে মাত্র তিনবার কথা হয়েছে উনার সাথে। উনি বোঝেন না উনার সাথে কথা না বললে আমার মনে অস্থিরতা বাড়ে! উনার মনে কি সেই অস্থিরতা আর সেই উন্মাদনা তৈরি হয় না? পাঁচটা দিন উনাকে চোখের সামনে দেখতে না পেয়ে মেজাজ বিগড়ে গেছে আমার। আমি যে এখানে থাকি এই খবরটা কেউ জানে না। আমায় এখান থেকে বের হতেও মানা করে দেওয়া হয়েছে। এতে নাকি আমার প্রাণের সংশয় হতে পারে। কিন্তু উনি? উনার কি সেই সংশয় হতে পারে না?
সকালবেলা উঠে ফ্রেশ হয়ে প্রথমেই আয়াশের নম্বরে ট্রাই করলাম আমি। উনার নম্বর বিজি দেখাতেই রাগে-দুঃখে ফেটে পড়লাম। বিগড়ানো মেজাজ নিয়ে এসে বড়সড় সোফার ওপরে পা তুলে বসলাম। নিউজপেপার এসেছে। সেটা টেবিলে রাখা। এই বাংলোতে সবকিছুতে রাজকীয় ভাব আছে। যেন আগে কোনো রাজা থাকতো। সোফা আর টেবিল সবকিছুতে রাজকীয় কারুকার্য করা। শুধু নতুন করে রিপেয়ার করা হয়েছে এই যা। খবরের কাগজ হাতে নিতেই ফ্রন্ট পেজে আবারও আয়াশের সৎ মায়ের নাম নজরে পড়ল আমার। এই কয়েকদিন এটাই চলছে। প্রতিদিন উনার নামে কোনো না কোনো সত্যি বেরিয়ে আসে। এমনকি টিভির নিউজ চ্যানেলের হেডলাইনেও উনার নামটা ওপরে থাকে।
কৌতূহল নিয়ে টিভি অন করলাম আমি। নিউজ চ্যালেনে দিতেই একটা খবর চোখে পড়তেই চোখজোড়া থমকে গেল আমার। সব স্থির হয়ে গেল। আমি থমকালাম। এসব কি…??
চলবে…
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবের সঙ্গে তুলনা করবেন না।]