রহিবে মনের গহীনে পর্ব-২৭

0
1948

#রহিবে_মনের_গহীনে
#পর্ব_২৭
#Nishi_khatun

দেখতে দেখতে সময় যে কখন ফুরিয়ে যায় তা কেউ বলতে পারে না। যে অরিনের পরিক্ষার জন্য ইহান বেচারার বিবাহ আটকে ছিল আজ তা শেষের পথে।
আর মাত্র কয়েকটা পরিক্ষা বাকি আছে।

এদিকে টুকটাক করে ইফান ইহানের বিয়ের জোগাড়যন্ত্র শুরু করে দিয়েছে।

অরিনের পরিক্ষার শেষের দিন পরিক্ষা শেষে ইফান অরিনকে নিজের সাথে আনতে যায়। দুজনে আসার সময় সাহিত্য, রাহিল, অন্তি সহ বাকিরা এসে অরিন আর ইফানের কাছে মাফ চেয়ে যায়।

অরিনকে কিছু বলতে না দিয়ে ইফান বলে,” যারা অন্যকে অপমানিত করতে চেষ্টা করে। সময় একদিন ঠিক তার প্রতিশোধ নেই! তাছাড়া তোমাদের আমরা মুখে মাফ করে দিলেও হয়তো অন্তর থেকে মাফ করতে পারবো না। যদি কোনদিন সম্ভব হয় মাফ করে দিবো।”

এরপর অরিনের হাত ধরে হনহন করে সে স্থান থেকে
চলে আসে।

এদিকে পরিক্ষার কয়েকদিন পর শুরু হয় ইহানের বিয়ের আয়োজন। অরিন জিনিয়ার হাতে হাত লাগিয়ে সব সময় সাহায্য করতে চেষ্টা করে। সে যে বাড়ির বড় বউ! সে কথা জগৎ সংসারের লোকেরা না জানলেও এটাই চরম সত্যি। তাই নিজের দাঁয়িত্ব নিজেই বুঝে নিয়েছে সে।

গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের দু দিন আগের হঠাৎ করে ইফান কাউকে কিছু না বলে কোথাও চলে যায়। এতে বাড়ির সকলে অনেক চিন্তিত হয়ে যায়। এদিকে সকলে ইফানের সাথে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করে কিন্তু সে ফোনটা বন্ধ করে রাখে। সকলে তো একপ্রকার ভেবে নিয়েছিল ইহানের বিয়েতে সে হয়তো মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছে তা-ই মাঝপথে চলে গেছে।
অরিনের মন কিছুতেই সবার এই ধারণার সাথে একমত হতে পারছিল না। তার বিশ্বাস ইফান কখনোই এমন কাজ করতে পারে না। যার জন্য অন্যরা মনে কষ্ট পাবে। যেহেতু ইফান নেই তার অনুপস্থিতিতে বাড়ির সকল দাঁয়িত্ব অরিনের কারণ সে ইফানের স্ত্রীর।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অরিন নিজের কাজে মন দিয়েছিল। এক ইফানের সম্মান বাঁচাতে হবে আরেক ইফানের দাঁয়িত্ব তাকে পালন করতে হবে নয়তো কিসের স্ত্রীর?

হলুদের অনুষ্ঠানের আগের দিন খুব সকালে বাড়ির কলিংবেল বাজতে শুরু করে। অরিন যেহেতু ফজরের নামাজ পড়ে রান্নাঘরে এসেছিল সে দরজা খুলতে এগিয়ে যায়।

সদরদরজা খুলতেই দেখে দরজার সামনে ইফার দাঁড়িয়ে আছে। অরিন মিষ্টি হেসে ইফান কে সালাম দেয়। ইফান সুন্দর ভাবে সালামের জবাব দেয়।
অরিন আর কোন প্রশ্ন করবে তার আগেই দেখে ইফানের পাশে রঙিলা আর গোলাপি এসে দাঁড়িয়ে আছে। অরিন খুশিতে তাদের জড়িয়ে ধরে তারপর নিজের হাতে চিমটি কেটে দেখে না সত্যি এসব কিছু।

তখন গোলাপি বলে,”আমাদের ইফান বাবা তার ভাইয়ের বিয়েতে দাওয়াত দিয়ে এনেছে। আমরা আসতে চাই- নি সে আমাদের জোর করে সঙ্গে নিয়ে এসেছে।”

একথা শোনার সাথে সাথে অরিন ইফান কে জড়িয়ে ধরে কান্নারত অবস্থায় বলে,”আমি ভাবতেও পারি নাই আপনি আমার জন্য আমার পরিবারের সদস্যদের আনবেন।”

ইফান অরিনে কপালে চুমা দিয়ে বলে,”তুমি আমার বাড়ির সম্মান! আমার জীবনের একটা অংশভাগ! আর আমি যদি তোমার খুশির কথা চিন্তা না করি তাহলে কে করবে শুনি? এসব কিছু ছাড় যাও তাদের বাড়ির ভেতরে নিয়ে যাও।”

জিনিয়া আর ইজাজ যখন এসব জানতে পারে তখন তারা খুব গর্বিত বোধ করে নিজের ছেলের এমন চিন্তাভাবনার জন্য। সত্যি তাদের ছেলে আর ছেলের বউটা একদম অন্যরকম। তাদের সম্পর্কের ভিত্তি একদম অন্যধারার। আল্লাহ আল্লাহ করে এদের সম্পর্ক আর পাঁচটা সাধনার স্বামী স্ত্রীর মতো হলে আলহামদুলিল্লাহ্‌।

ইহানের বিয়ে উপলক্ষে গোলাপি আর রঙিলা দাওয়া খেতে এসে তো রান্নাঘরের সব দাঁয়িত্ব নিয়েছে। জিনিয়া আর জরিনার ছুটি। তাদের মেয়ের জন্য যারা এত কিছু করেছে তাদের বাড়ির কাজ তো তারা সারাজীবন করে দিতে রাজি এটা তো শুধুমাত্র বিয়ের মানুষদের জন্য রান্ধাবাড়া করা।

এদিকে হলুদের অনুষ্ঠানের দিন সকালে অরিন হলুদ রঙের একটা গাউন পড়ে নিজেকে হলুদ পরী সাজিয়েছে। সে ইহানের হলুদের স্টেজ সাজাতে ব্যস্ত। কোন খাবার কোথায় রাখতে হবে এসব কিছু সে তদারকি করছিল।

তখন হঠাৎ কন্যা পক্ষ তাদের বাড়িতে হলুদের উপহারাদি নিয়ে সোজা এসে উপস্থিত হয়। তখন অরিন বুঝতে পারে তারা কন্যা পক্ষ। তা-ই দ্রুত তাদের আদর-আপ্যায়নের ব্যবস্থা কমপ্লিট করতে ব্যস্ত হয়ে যায়।

ইজাজ আর জিনিয়ার একটু দূরে দাঁড়িয়ে অরিন এই বিয়ে বাড়ির কাজের প্রতি দায়িত্বশীল তা দেখে তাদের মনে খুব শান্তি লাগছে। আবার এটা ভেবেও আফসোস হচ্ছে আজ যেখানে অরিন এবাড়ির বড় বউয়ের মর্যাদার সাথে কাজ করবে সেখানে এক আশ্রিতার ভূমিকা পালন করতে হচ্ছে তাকে।
তবে আজকাল ইফান আর অরিনের কেমেস্ট্রি দেখে মনে হয় না এদের দুজনের মাঝে কোন সম্পর্ক নেই। ইহানের বিয়ের সম্পন্ন দাঁয়িত্ব ইফানের কাধে সে তার বাবা- মা কে বিয়ের কোন কাজ করতে দেয় না। আরেকদিকে অরিন জিনিয়াকে রান্নাঘরের কোন কাজ করতে দিচ্ছে না।

এদিকে কন্যার বাড়ির আত্মীয়দের জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করে তাদের সামনে খাবার পরিবেশ করছিল তাদের পাশে এসে ইফানের নানি নানারকম কথা বলছিল। তখন কন্যার পক্ষের একজন অরিনকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে,”নানী আপনাদের বাড়ির এই মেয়েটা কে? আপনাদের সাথে তার কি সম্পর্ক? ”

ইফানের নানীর সোজাভাবে উত্তর দেয়- কোন সম্পর্ক নেই। আমার মেয়ের জামাই রাস্তা থেকে উঠিয়ে এনেছে।

ইফানের নানীর মুখে এমন কথা শুনে লজ্জায় খুব অপমানিত বোধ করছিল অরিন। না পারছে স্থান ত্যাগ করতে না পারছে এখানে চিৎকার করে কান্না করতে।

জিনিয়া নিজের মায়ের মুখে এমন কথা শুনে খুব অপমানিত বোধ করে। এতোদিনেও তার মা মেয়েটাকে আপন বলে ভাবতে পারছে না।
এখানে অরিনের কী দোষ?

ইজাজ জিনিয়া কে উদ্দেশ্য করে বলো,” আশা করি আজ তুমি তোমার মা’কে কিছু বলবে। তুমি তোমার বড় ছেলের বউয়ের মানসম্মান এভাবে সকলের সামনে নষ্ট হতে দিতে পারো না। বাকিটা তোমার ইচ্ছা।”

জিনিয়া সকলের সামনে এসে উপস্থিত হয়ে বলে,”প্লিজ আপনারা আমার মায়ের কথা কিছু মনে করবেন না। অরিন কোন রাস্তার মেয়ে নয় সে আমাদের পরম-আত্মীয়! ইহানের বিয়ের দাওয়াতি বাকি সবার মত সেও। আসলে আমার আম্মার মাথায় সমস্যা আছে। সে কোথায় কাকে কি বলে নিজেই জানে না। প্লিজ তার কথায় কেউ অরিনকে লজ্জিত করবেন না। আর অরিন প্লিজ আমার আম্মার পক্ষ থেকে তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি মাফ করে দিও।”

অরিন কি বলবে বুঝতে পারছে না। তারপর সেখানে সবাইকে এক্সকিউজ মি বলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।

এদিকে রান্নাঘরের সামনে থেকে রঙিলা আর গোলাপি এসব কিছু দেখে শুনে মনে বড় কষ্ট পেয়েছে।
আহারে তারা কত আদরযত্নে মেয়েটা কে বড় করেছে। সেখানে আজ মেয়েটা কে সবাই অপমানিত করতে ব্যস্ত। আজ যদি এই মেয়ের বাবা- মা বেঁচে থাকতো তাহলে এর আজ সবাই তাকে মাথায় করে রাখতো। টাকাপয়সা সব আছে শুধু বাবা- মা নেই বলে এই অবস্থা?

গোলাপি রান্নাঘরের ভেতরে গিয়ে সোজা অরিনের ভাইয়ের কাছে কল করে এখানে যা কিছু ঘটেছে সব কিছু খুলে বলে দেয়। এতে অরিনের ভাই ইফানের পরিবারের উপর প্রচণ্ড পরিমাণে ক্ষিপ্ত হয়। তার বোনটা না জানি আরো কত অপমানিত হয়েছে তার ঠিক নেই। মেয়েটা কখনো এবাড়ির কারো নামে নিন্দা করে নাই। সব সময় সে এবাড়ির সকলের নামে গুণগান করেছে। তবে আজ বুঝতে পারছে তার বোনের সব কথা সত্যি ছিল না।

এদিকে উপরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে সবটা দেখেছে ইফান। আজ সে খুব রেগেছে! নানা-নানি এতো সমস্যা কেন অরিনকে নিয়ে? অরিন তাদের কোন পাকা ধানে মই দিয়েছে আজ সে শুনেই দম নিবে।

ইহানের কানে এসব কিছু পৌছাতে সে বলে,”ছিঃ আমার নানা-নানি চিন্তা ভাবনা এতো নিকৃষ্ট কেন? আর আমার বিয়েতে শুধু তারা দু জন কেন এসেছে? বাকিরা কেন আসে নাই? তাদের কি সমস্যা এই বিয়েতে?”

(আমি চেষ্টা করছি রেগুলার গল্প দিতে কিন্তু সম্ভব হচ্ছে না। নেক্সট পর্বে আশা করি সারপ্রাইজ আছে। এখন আপনারা বলেন কি সারপ্রাইজ থাকতে পারে?)



চলবে”””””””

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here