আনকোরা পর্ব-১১

0
2791

#আনকোরা

#রূবাইবা_মেহউইশ
১২.
অসময়ে ঝড় বৃষ্টি বড্ড ভোগান্তির সৃষ্টি করে জনজীবনে। পথেঘাটে হুটহাট ছাতার জোগাড় সম্ভব নয় আর আজ এমনই সময়ে বৃষ্টি শুরু হলো যখন না তো বাড়ি ফিরে লাভ হবে আর না পথে কোথাও বসে উপকার হবে৷ বাড়ির একটি গাড়িতে সকলকে নিয়ে বসা সম্ভব ছিলো না বলেই দিহান মাকে বলেছে, ” তুমি, আব্বু, ময়না খালা আর মামিকে নিয়ে যাও। আমি চৈতীকে নিয়ে রিকশা করে চলে আসবো।”

খুব স্বাভাবিক আর শীতল গলায় দিহানের কথা শুনে দিলশাদ খুশি হলেন। তবে এবার আর ভুল ধারণা পোষণ করলেন না দিহান, চৈতীর মাঝে ভালো কিছু হচ্ছে বা হবে।চৈতীও চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো দিহানের কথার পর আর এটাই তার সম্মতি ভেবেছে দিহানের সাথে যাবার। দু দিন পর দিহানের হঠাৎ বাড়িতে আগমন আর একেবারে পরিপাটিভাবে দেখে খুব অবাক হয়েছিলেন দিলশাদ। ছেলেকে স্বাভাবিকভাবে চোখের সামনে দেখতে পেয়েই শান্ত লাগছিলো তার।চৈতীর সুন্দর খোঁপাটা নষ্ট করায় তাকে ধমক দিতে গিয়ে দিলেন না৷ চৈতী তখন মুখ ফুলিয়ে কান্না করে দিবে দিবে ভাব। দিলশাদ আর সুইটি দুজনেই বলেছিলো, “আয় খোঁপাটা ঠিক করে দেই।” চৈতী দেয়নি। সে খোঁপা খুলে ফুলের মালাটা ছুঁড়ে মেরেছিলো। দিহান পাত্তা দিলো না সেদিকে সে বরং নিজেরই পান্জাবীর হাতা গুটিয়ে নিতে নিতে বলল, “আকাশের অবস্থা তেমন ভালো না। যে কোন সময় বৃষ্টি নামতে পারে তোমরা বেরিয়ে পড়ো৷ আমি আর চৈতী রিকশা করে চলে আসবো।”

এ কথার পর দিলশাদের মনে হলো যা হচ্ছে হোক। সে যা বলে করুক আমি কিছুই বলবো না।তিনি সত্যি সত্যিই বেরিয়ে পড়লেন সবাইকে নিয়ে। চৈতী চুপচাপ পার্সটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো জানালার কাছে। দিহান পারফিউমটা লাগিয়েই ডাকলো, “আয় বেরিয়ে পড়ি।”

সে যদি একটাবার তাকাতো চৈতীর মুখের দিকে তবে বুঝতে পারতো সে মুখে কেমন অন্ধকার করে মেঘ জমেছিলো তার মুখে । তারা বাড়ি থেকে বের হয়ে রিকশায় উঠতেই শুরু হলো ছিঁচকে বৃষ্টি আর মাঝ পথে পৌঁছুতেই তেজ বাড়লো বৃষ্টির।তাই আর বাড়ি না ফিরে বা কোথাও না নেমে সোজা সেন্টারেই গেল। বৃষ্টির ছাঁটে নিচের দিকে শাড়ি ভিজে গেছে চৈতীর, গালে মুখে বৃষ্টির ফোঁটা মুক্তোর দানার মত লেগে আছে। তারা পৌঁছে দেখলো হলুদের আসর জমজমাট। পরিচিত, অপরিচিত অসংখ্য আত্মীয়ের ভীড়। শীত নেই তবুও ভেজা শাড়ির নিচের অংশ আর কাঁধের দিক ভেজা থাকায় একটু একটু শীত লাগছে চৈতীর।সে বর কনের স্টেজের সামনে এসে দাঁড়াতেই দিহানও এসে দাঁড়ালো তার পাশে। আত্মীয় স্বজন সকলের দৃষ্টি যেন বর কনের পাশাপাশি তাদের দুজনকেও দেখছে। আত্মীয়দের মধ্যে এমনিতেও কানাঘুষা ছিলো দিহান কিংবা দিশানের মধ্যে কারো না কারো সাথেই হবে চৈতীর বিয়ে। কিন্তু সেই বিয়েটা যে এমন হুট করে তেমন কাউকে না জানিয়ে হবে তা অকল্পনীয় ছিলো। চৈতীর অস্বস্তি হচ্ছে দিহানের এমন আচমকা তার পাশাপাশি দাঁড়ানো দেখে আর তার দাঁড়ানোর ভাবটাও অন্যরকম৷ কেমন যেন নতুন বর কনের মতই লাগছে আজ তাদেরকেও পাশাপাশি। দিহান অগ্রাহ্য করছে সকলের দৃষ্টি এমন আচরণ করলেও সে মূলত সকলের দৃষ্টির জন্যই এমন করে এসে চৈতীর পাশে দাঁড়িয়েছে। পরিবারের সদস্যরা জোড়ায় জোড়ায় হলুদ লাগালো বর কনেকে। দিশানের ভালো লাগলো ভাইকে সামনে দেখে তবুও একটু কষ্ট হচ্ছে বোনটার জন্য। দু ভাইয়ের একটি মাত্র ছোট বোন ছিলো দিশা। আজ বাড়ির এমন জমকালো অনুষ্ঠান, দূর-দূরান্ত থেকে আত্মীয়রা এসেছে অথচ বাড়ির মেয়েটাই নেই। হাসি হাসি মুখের আড়ালেই ঢাকা পড়ছে দিশানের বোনের জন্য চাপা কষ্ট। দিহানকে দেখতেই হাত তুলে ইশারা করলো দিশান। দিহান দেখলো তারপরই চৈতীর হাত ধরে ডাকলো, “আয় দিশানকে হলুদ দিবো।”

অবাকের চরমে পৌঁছে গেছে চৈতী কিন্তু মুখে তা প্রকাশ করতে পারেনি৷ সেও এগিয়ে গেছে দিহানের সাথে। দিশানের পাশে দিহান আর ঐশীর পাশে চৈতী বসেছে। সামনে থেকে এই দৃশ্য দেখে দিলশাদের চোখ ছাপিয়ে জলের ধারা বইলো। কি চমৎকার লাগছে তাদের। সকলের চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে এই সৌন্দর্য দেখে। কিন্তু ভেতরটা কেউ জানে না।

হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে মধ্যরাত হলো। বৃষ্টি তখনও হচ্ছিলো কিন্তু সন্ধ্যের চেয়ে কম৷ রাতে বাড়ি ফিরে অনেকটা ক্লান্তি নিয়েই শাড়ি বদলে বিছানায় শুয়ে পড়লো চৈতী। মুখের মেকাপ তোলেনি, চোখের কাজল লেপ্টে আছে তা মোছেনি, লিপস্টিক তোলেনি৷ বিছানায় শুয়ে পড়তেই তার দু চোখে ঘুম নেমে এলো। কথা ছিলো অভ্রকে ফোন করবে তা আর করা হলো না। অভ্রও অনেকটা সময় অপেক্ষা করে ভেবে নিলো চৈতী ব্যস্ত তাই আর সেও কল করেনি। কাল শুক্রবার অভ্রের অফিস বন্ধ তাই কাল দিনে যে কোন সময়েই কথা বলতে পারবে ভেবে স্বস্তি নিয়ে সেও ঘুমিয়ে পড়লো। দিহান ঘরে ফিরে পাঞ্জাবী বদলে দোতলায় গেল। কাজিনরা মিলে ধরেছে তারা আলাদা পার্টি করবে রাতভর। সেখানে উপস্থিত দিশানও ছিলো। তার বিয়ে তাই বলে সেও ছাড় পায়নি। ভোর রাত অব্ধি সব ভাই আর দুলাভাইরা মিলে আড্ডা আর ড্রিংক পার্টি করেই ভোররাত করে ফেলল। শেষে অনেকটা জোর করেই দিশান উঠে গেল নিজের ঘরে। এবার একটু ঘুম দরকার। বাকিরাও ঘুমালো তবে সেই ঘরেই যেখানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। দিহানও সেখানে শুতে চাইলে ওয়াসিম তার চাচাতো ভাই বলে উঠলো, “তোর এখানে শুতে হবে না। তুই এখনও নতুন জামাই আছিস যা বউয়ের কাছে গিয়ে ঘুমা।”

দিহানও সাথে সাথে উঠে গেল আর তা দেখে তাদের দুলাভাই মশকরা শুরু করলো, “আরেহ শালা দেখি সত্যিই বউয়ের ন্যাওটা। আমরা সব বউ ছেড়ে এখানে থাকছি চালের বস্তার মত গাদাগাদি করে। আর উনি চললেন বউ সামলাতে।”

“তো কি করবো দুলাভাই? তুলার বস্তা রেখে চালের বস্তায় ঘুমিয়ে কি মজা পাবো নাকি?”

“এ্যাই দিহান তোর কি লজ্জা শরম কিছু নাই? এখানে যে আমরা বড় ভাইরা আছি সে কথা কি ভুলে গেলি!”

হাসিঠাট্টা আরো চলল অনেকক্ষণ। আর হাসিঠাট্টাতে কখন যে ফজরের আজানও হয়ে গেছে বুঝতে পারেনি দিহানরা।কিন্তু রাত জেগে ভোরে প্রায় সকলেই ঘুমে ঢুলু ঢুলু। যে যার মত মেঝেতে পাতা বিছানায় ঘুমিয়ে পড়লো। নিঃশব্দে দিহানও অনেকটা সময় পড়ে রইলো কিন্তু ঘুম তার চোখ ছুঁয়ে সঙ্গী হলো না। চুপচাপ সে উঠে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। বাইরের ঘোলাটে ফর্সা আকাশে সূর্যের দেখা তখনও মেলেনি। ঘরের আবছা অন্ধকারে তার কিছুতেই বসতে ইচ্ছে করলো না। ছাঁদের দরজার চাবিটা থাকে রান্নাঘরের দেয়ালটাতেই। সেটাকে নিয়ে সে চলে গেল ছাঁদে। কুই কুই করে একটা দুটো পাখির ডাক কানে আসছে। কাল সন্ধ্যে থেকে বৃষ্টি মধ্যরাত পর্যন্ত হয়েছিলো। সেই বৃষ্টিতেই যেন ঢাকা শহর ধুয়েমুছে আজ একেবারে নতুন আর সতেজ রুপ ধারণ করেছে। ছাদটা ভেজা বৃষ্টির পানিতে। দিহান পায়ের স্যান্ডেল জোড়া খুলে খালি পায়ে হাঁটলো কিছু সময়। শিরশিরিয়ে উঠলো পায়ের তালু তবুও আরাম বোধ হলো অনেকটা। দেহের অবসাদ, ভেতরের ক্লান্তি মানসিক ক্লেশ সবটাই যেন কিছু সময়ের জন্য উধাও হয়ে গেল তার।

ছুটির দিন ঘুম থেকে উঠতেই বেলা বারোটা বাজলো অভ্রের। তার মা নাশতা তৈরি করে একবার ডেকে গেছে। সে উঠে মুখ হাত ধুয়ে নাশতা খেতে বসতেই তার মাও এসে পাশে বসলো। অভ্র মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলো কিছু বলতে চাইছে।

“কি বলবে?”

“আমার মুখ দেইখাই বুঝলি কিছু বলতে আইছি!”

“মা, যখন শান্তভাবে কোন কথা বলতে চাও তখনি তুমি এভাবে খাওয়ার সময় পাশে বসে আমার দিকে তাকিয়ে থাকো। আর এটা নতুন কিছু নয়।”

অভ্রের মা ছেলের কথা শুনে হেসে ফেললেন। এটা সত্যি কথা তিনি এমনটা প্রতিবারই করেন যখনই কোন গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চান। এবার আর তাই সময় নষ্ট না করে বলেই ফেললেন, “আমি তোর সেই পছন্দ করা মাইয়ার সাথে দেখা করতে চাই।তার বাপ, মা সম্পর্কেও খোলাখুলি কথাবার্তা বইলা নিতে চাই। তুই আমার একটা মাত্র পোলা আমার জীবনে সম্বল তুই৷ অনুরে আজকা বিয়া দিলে কালকাই ও অন্য বাড়ির, অন্য ঘরের চিন্তায় থাকবে। দিনশ্যাষে আমার ঘর আমার সংসার তুই আর তোর বউ পোলাপানই হইবো। তোরে কষ্ট দিয়া আমি সুখ কই পামু বল?”

মায়ের চোখ জল জমে চিকচিক করছে। অভ্রেরও কষ্ট হলো কিন্তু সে কিছু বলার আগেই আবার মা বলল, ” তোর আর অনুর কথা শুনছি আমি সব৷ কালকে দেখলাম ওই মাস্টারনিই সেই মাইয়্যা। ”

“তুমি শুনেছিলে আমাদের কথা।”

অভ্রের মা হ্যাঁ বলল।

“তাহলে কিছু বললে না কেন?”

“কি বলতাম! ডরাই তো বাপ আমি। দুইটা মাস কত কষ্ট কইরা তোরে নিয়া হাসপাতালে ছিলাম। বিয়া যোগ্য মাইয়ারে একলা বাড়িতে রাইখা হাত পা ভাঙা পোলা নিয়া হাসপাতালে থাকছি। কলিজা চব্বিশ ঘন্টা হাতে নিয়া ঘুরছি আমি এই বুঝি নতুন কোন বিপদ আসলো আবার এই ভয়ে। তোরা বুঝবি না আমি কি কি দেখছি এই জীবনে৷এই বয়সে আইসা একটু সুখের মুখ দেখতে শুরু কইরাই আবার দুঃখ দেখছি চোখে৷ তোর কিছু হইলে আমি কেমনে থাকমু!”

অভ্র এক হাতে মাকে জড়িয়ে ধরে কপালে আলতো করে চুমো খেল।সে জানে তার মা’টা জীবনে কি পরিমাণ যে সংগ্রাম করেছে সারাটা জীবন। চাইলেই পারতো নতুন সংসার, নতুন জীবনে প্রবেশ করতে। অল্প বয়সে স্বামীহারা মেয়েকে আবারও বিয়ে দেওয়ার জন্য কম চেষ্টা করেনি অভ্রের নানা। অনু তখন দু বছরের। কিন্তু ছেলে, মেয়ের ভবিষ্যত খারাপ না হয় ভেবে ভেবেই তো তিনি এ সংসার ছেড়ে যাননি৷ আর আজ ছেলে বড় হওয়ায় সুখের মুখ দেখতে গিয়েও দুঃখের দশায় ডুবেছিলেন। কত যে ভয় ছিল মনের ভেতর! অভ্রের মা আবারও মনে করিয়ে দিলেন পারলে যেন আজই দেখা করার ব্যবস্থা করে সে।

ভোর সকালে ছাঁদে হাঁটাহাটি করে ঘরে ফেরে দিহান৷ চৈতী দরজা না লাগিয়েই ঘুমিয়েছে দেখে বেশ অবাক হয় সে। ঘরে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে কাউচে হেলান দিয়ে পড়ে থাকে কিছু সময়৷ কখন যে ঘুমে তলিয়ে যায় তা জানে না৷ ঘাড় বাঁকিয়ে ঘুমানোর ফলে ঘাড়ে প্রচণ্ড ব্যথা হয় আর তাতেই আবার ঘন্টাখানেক বাদে তার ঘুম ভেঙে যায়৷ বা হাতে ঘাড় ঘষতে ঘষতে উঠে দাঁড়াতেই দেখে চৈতী বাথরুম থেকে বের হচ্ছে।

“তুই কি আবার ঘুমাবি?”

দিহানের কথায় চৈতী সামনে তাকায়৷
“তোমার কি ঘাড় ব্যথা!”

“হ্যাঁ, কাৎ হয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ তাই।”

” বিক্স লাগাবে?”

“না আলমারিতে দ্যাখ একটা স্প্রে আছে পেইন রিমুভার। সেটা একটু দে” বলেই দিহান বিছানায় উল্টো হয়ে শুয়ে পড়লো হাত পা ছড়িয়ে। চৈতী স্প্রে টা এনে নিজেই স্প্রে করে দিলো দিহানের ঘাড়ে৷ তারপর ঘর থেকে বের হতে যাবে তখনি ফোন বাজলো তার৷ “অভ্র” নামটা দেখে প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও পরে রিসিভ করে ব্যালকোনিতে চলে গেল। কয়েক মিনিট বাদেই সে আবার ঘরে ঢুকে ডাকলো, “দিহান ভাই!”

দিহানের চোখে ঘুম সে প্রথম ডাক শুনতে পায়নি। দ্বিতীয় ডাক পড়তেই চোখ মেলে ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো চৈতীর দিকে।

“অভ্রের মা রাজী হয়ে গেছে। তিনি আমাকে দেখতে চেয়েছেন আর কিছু কথাও বলবেন বলছেন। আমি বলেছি তিনটের দিকে যাবো। তুমি কি একটু বাড়িতে খেয়াল রাখবে? মানে সবাই তো তখন আমরা বিয়ের প্রোগ্রামে থাকবো কেউ আমার খোঁজ করলে একটু সামলে নিও।”

দিহান চোখ দুটো টেনে টেনে পুরোপুরি খুলে চৈতীর মুখের দিকে তাকালো৷ হাসি হাসি মুখটাতে তার আনন্দের চমক বিজলীর মত চমকাচ্ছে। ‘ভালোবাসা’ এক অদৃশ্য জাদু৷ এই জাদুর অনেকরকম শক্তি আছে।

ঘড়িতে সময় চারটা দশ; অভ্র ফোনের দিকে বারবার তাকাচ্ছে। চৈতী আরও আধঘন্টা আগে বলেছে সে বেইলি রোড পৌঁছে গেছে। কিন্তু এখনো রেস্টুরেন্টে ঢোকেনি। এত দেরি কেন হচ্ছে তার। অভ্রের মা আজ বোরকা পড়েননি। সুন্দর করে শাড়ি পরে পরিপাটি হয়ে এসেছেন ছেলের সাথে। অনুকে নিয়ে আসেনি সাথে তা নিয়ে অভ্র একটু রাগ করেছিলো মায়ের সাথে কিন্তু এখানে এসে মায়ের স্ফূর্তিতে এটা ওটা বলা কফি আর বার্গার অর্ডার করা দেখে তার মন ভালো হয়ে গেছে। মায়ের কত শখ আহ্লাদ বাবার মৃত্যুর সাথে সাথেই শেষ হয়ে গিয়েছিলো। আজ ছেলের সাথে বেরিয়ে কেমন কিশোরী মেয়ে হয়ে গেছেন। মন ভরে যাচ্ছে অভ্রের মায়ের এত হাসিখুশি মুখটা দেখে৷ ঠিক কত বছর পর মাকে এত সহজ আর হাসিখুশি দেখছে তার মনে নেই। বার্গারের শেষ অংশ অভ্র নিজ হাতে মাকে খাইয়ে দিতে দিতেই চৈতী এসে ঢুকলো রেস্টুরেন্টে। অভ্র আর তার মা দু জনেই বিষ্ময়ে তাকিয়ে আছে চৈতীর দিকে। মোটামুটি রকমের ভারী লেহেঙ্গা, হাত ভর্তি চুড়ি আর গলায়, মাথায়,স্বর্ণের গয়নায় মোড়া। চুল গুলো খোঁপা করা আর তাতে লাল রঙের অনেকগুলো গোলাপ কলি লাগানো। হঠাৎ করে দেখলে তাকেই নতুন বউ বলে ভ্রম হবে যে কারো৷ হচ্ছেও বোধহয় তাই তো আশেপাশের টেবিলের মানুষগুলো অবাক চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। অভ্র এগিয়ে এসে চৈতীর সামনে দাঁড়িয়েই মুচকি হেসে বলল, ” মাথায় ঘোমটাটা থাকলে এতক্ষণে সবাই ভাবতো বিয়ের কনে পালিয়ে এসেছে।”

অভ্রের কথা শেষ হতেই চোখে পড়লো রেস্টুরেন্টের দরজায় দিহান৷ সে এদিকেই আসছে। তাকে দেখতেই চোয়াল শক্ত হলো অভ্রের তবুও নিজেকে সামলে সে প্রশ্ন করলো, “দিহান কেন এসেছে?”

“আমাকে নিয়ে এসেছে। দিশান ভাইয়ার বিয়ে থেকে এসেছি তো।”

“ওহ!”

দিহান চলে এসেছে অভ্রদের টেবিলের সামনে। অভ্রের মাকে সালাম দিতেই তিনি কথা শুরু করলেন৷ প্রথমে কথা পরিবার নিয়েই শুরু হলো। দিহানও তাদের সাথেই ছিলো তাই দিহানই বলল, “দেখুন আন্টি চৈতী আর অভ্রের বিয়ে আমি নিজে দিবো। মামাকে নিয়ে টেনশন করার কিছু নেই বিয়েটা হয়ে গেলে আর কিছুই করবে না মামা৷ যতই হোক চৈতী ছাড়া আর কোন সন্তান নেই মামা মামীর।”

দিহানের সাথে কথা বলেই অভ্রের মা বেশি খুশি হলেন। আরো অনেকটা সময় কথা বলে ঠিক করলো চৈতীর মাকে সাথে নিয়েই তারা কাজী অফিসে গিয়ে অভ্র আর চৈতীর বিয়ে দিবেন৷ অভ্রকে চৈতী আর দিহানের বিয়ের কথা আগেই জানিয়েছিলো চৈতী৷ তা শুনে অভ্র বলেছিলো ওই জোর করা বিয়ে তোমরা দুজন মেনেছো? চৈতী না বলতেই অভ্র বলেছিলো তবে আমারও মানার কোন প্রশ্নই আসে না৷ কিন্তু এই মুহুর্তে অভ্রের মনে হলো চৈতীর বিয়েটা মায়ের কাছে লুকানো থাকলেও বিয়ের রেজিষ্ট্রির জন্য তো লুকানো থাকবে না। তাই সে মাকে আগে সিন এনজিতে বসিয়ে দিহানের সামনে দাঁড়ালো।

“কিছু বলবে?” দিহান প্রশ্ন করলো। আর আজই প্রথমবার সে অভ্রকে তুমি সম্মোধন করলো।

“তোমাদের ডিভোর্সটা তো এখনও হয়নি। তাই,,,”

“তোমাকে ভাবতে হবে না। মামিকে রাজী করাতেও কিছুদিন সময় লাগবে। আর আমি কালই ডিভোর্স ফাইল করবো৷ এসব আলোচনা ফোনে হবে এখন তেমার মাকে নিয়ে বাড়ি যাও।” চৈতীও তাই ভাবছিলো সেও অভ্রকে তাড়া দিলো। কিন্তু তাতে কিছুই মন্দ বৈ ভালো হয়নি। অভ্রের একটু ভুল সারাজীবনের জন্য আলাদা করে দিলো অভ্র, চৈতীকে।

চলবে
(আমার পাঠকদের ধৈর্য্যের পরীক্ষা আরও নেওয়া বাকি 😁)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here