আনকোরা পর্ব-২০

0
3230

#আনকোরা
#রূবাইবা_মেহউইশ
২০.

বিয়ের পর হানিমুন না হলে নতুন বর কনের সময়টা তেমন জমে না তা কি তুমি জানো?” ঐশী কথাটা বলেই চৈতীর দিকে তাকালো। কাল সারারাত বাস জার্নি করে একটু আগেই বাড়ি এসে পৌঁছেছে চৈতী,দিহান। বাড়ি এসেই শুনলো আজ রাতের ফ্লাইটে দিশান আর ঐশী নেপাল যাবে হানিমুনে। ঐশীর কাজিনরা স্পেশাল গিফট হিসেবে এই ট্রিপের টিকিট দিয়েছে। ঐশী বসে গোছগাছ করছে আর দিশান যাওয়ার আগে অফিসের টুকটাক কাজ গুছিয়ে আসছে। দিহান বাড়ি এসে ফ্রেশ না হয়েই আবার ঘুম দিয়েছে কিন্তু চৈতী বাসে রাতভর ঘুমিয়েছে দিহানের কাঁধে পড়ে। এখন আর চোখে ঘুম নেই তাই সে এসে বসেছিলো ঐশীর পাশে৷ তখনই ঐশী বিয়ে আর হসনিমুন নিয়ে এটা সেটা বলছে চৈতীকে৷ সেও দিলশাদের মত ভাবছে হয়তো চৈতীকে বিয়ে আর সংসার নিয়ে কথা বললে একটু ভাবুক হলে হতেও পারে। তাই হচ্ছে, চৈতী আজকাল সারাক্ষণই ভাবে তার বিয়েটা নিয়ে। কিন্তু দিহানকে নিয়ে ভাবতে গেলেই সে থেমে যায়। কঠিন হয়ে যায় ভাবনা তবুও মা আর ফুপির মুখটা মনে হতেই মনটা অস্থির হয়ে যায়। তারা অনেক কষ্ট পাবে শেষ পর্যন্ত যদি চৈতী কিংবা দিহান এই বিয়েটাকে না আগায়। মাথার ভেতরে যন্ত্রণার পোকারা কিলবিল করে ওঠে চৈতীর বিয়ে নিয়ে বেশি ভাবলেই৷ ঐশীর গোছগাছ শেষ হলে সে ঘর থেকে বেরিয়ে ফুপির ঘরে যায়। দুপুর হয়ে এলো প্রায় তাই দিলশাদ গোসল শেষ করে নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে বসেছে।চৈতীকে দেখে হাসি মুখে কাছে ডাকলেন।

“চাঁদ আর সুইটি কেমন আছে?”

“ভালো।”

“আরও থাকতে চেয়েছিলি?”

ফুপির এ প্রশ্নের জবাব চৈতী দিতে পারলো না। সে চুপ হয়ে আছে তা দেখে দিলশাদ আবার বললেন, “দিহান কোথায়।”

“ঘুমাচ্ছে দেখেছিলাম।”

“ডেকে তোল তাকে। বল গোসল করে খাবার খেতে তুইও গোসল করে কিছু খা। খাওয়ার পর ঘুম দিস শরীরটা ভালো লাগবে এত লম্বা জার্নি করে এসেছিস।”

“ফুপি তোমার কাঁথা শেষ হয়েছে?”

“হুশশশ, ধীরে বল দিহান, দিশান কেউ জানে না কিছু। শুনলে আবার কি না কি”

ফিসফিসিয়ে বলল দিলশাদ। সে ভয় পায় দিহান আবার কোন রিয়াক্ট না করে বসে। চৈতীর মেজাজ খারাপ হলো। দিহান নিজে তো এক মৃত মেয়ের প্রেমে ছ্যাকা খেয়ে সন্ন্যাসী হয়ে আছে তবে অন্য কারো প্রেমে কেন সে নাক গলাবে! কোন অধিকার নেই তার অন্যের জীবনে নাক গলানোর।কিন্তু চৈতী ফুপির সামনে কথাগুলো তুলতে পারলো না। সে শুধু বলল, “আপু কেমন আছে ফুপি?”

“সে! আছে বোধহয় ভালোই।” চাপা দীর্ঘশ্বাস দিলশাদের কথায়। চৈতীর আর ভালো লাগলো না বসতে সে উঠে চলে গেল নিজের ঘরে৷ গোসল দরকার গরম লাগছে সেই সাথে জামাকাপড়ও বদলাতে হবে । গোসল করে বের হতেই দেখলো দিহান জেগে গেছে। তার বা হাত ডান কাঁধে আর কপাল কুঁচকানো যেন খুব ব্যথা পাচ্ছে কাঁধে। চৈতীর মনে পড়লো সে পুরো রাস্তা দিহানের এই কাঁধে মাথা ফেলে ঘুমিয়েছিলো। সামনে থাকা বিপদ হয়তো যেকোন সময় তাকে বলেই উঠবে, “ফাজিল তোর কারণে আমার কাঁধটা পঁচে গেছে।”

সন্ধ্যার পর দিশান আর ঐশী এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো। বাড়ির গাড়ি নিয়ে গেছে, তাদের পৌঁছে ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে চলে আসবে৷ দিহান আজ বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে গেছে কাল থেকে আবার অফিসের জন্য সময় হবে না। পুরো এক সপ্তাহ বন্দী অফিসের কাজে। চৈতী বই খাতা নিয়ে বসেছে সামনে পরীক্ষা। বান্ধবীরা দু তিন জন মেসেজ দিয়ে দিয়ে বিভিন্ন সাজেশনের কথা বলছে। চৈতী নিজেই তো কতগুলো দিন পড়াশোনার বাইরে। বান্ধবীদের সাথে কথা বলে ফোন রাখতেই একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল এলো। কে দিলো ভাবতে ভাবতেই রিসিভ করলো সে। ওপাশ থেকে যিনি কথা বললেন খুবই রোষপূর্ণ কন্ঠস্বর তার। চৈতীর ছাত্রীর মা কল দিয়েছে। চৈতী আর পড়াবে না কিন্তু সে কথা আর জানায়নি ওদিকে মহিলা কতদিন ধরে অপেক্ষা করছে তার। বুঝতে পারলো ভুলটা তারই মহিলার রাগটাও জায়েজ কারণ মেয়েটার সামনে পরীক্ষা। চৈতী কি বলা উচিত বুঝতে পারছে না আবার বলার আসলে কিছুই নেই ভেবে ক্ষমা চেয়ে নিল। মহিলা রেগে খুব বাজে আচরণও করলেন স্যরি শুনে। ফোন কেটে সে ঘড়িতে সময় দেখলো দশটা বাজে। খিদে তেমন পায়নি তবুও খাবারের জন্য গেল। ফুপি তখনও নিজের ঘরে বসে কাঁথা সেলাই করছে। খাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করতেই দিলশাদ বলল, “আজ তো তোর ফুপা দাওয়াতে গেছে। দিশান, ঐশীও নেই আর দিহান এখনও ফেরেনি। আমি পরে দিহান আসলে খাবো তুই খেয়ে নে।”

আমার ঘুম পাচ্ছে খুব ফুপি৷ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি?

“আচ্ছা।”

চৈতী খেতে গিয়েও খেতে পারলে না। তার বা গালের ভেতর মাড়িতে ব্যথা লাগছে হঠাৎ করেই আর শরীরও অসুস্থ লাগছে খুব৷ না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লো। দিহান বাড়ি এসে মায়ের সাথে খাবার খেয়ে ঘরে গিয়ে দেখলো চৈতী ঘুমিয়ে আছে এলোমেলো হয়ে৷ ঘুমের মধ্যেও তার চোখ মুখ কুঁচকে আছে। দিহান ভাবলো আলো জ্বলছে বলে হয়তো এমন করে আছে। সে বাতি বন্ধ করে চুপচাপ পাশেই শুয়ে পড়লো। সকালে ঘুম ভাঙলো চৈতীর গোঙানি শুনে। শোয়া থেকে উঠে দিহান চৈতীর দিকে তাকালো। চোখ কচলাতে কচলাতে ডাকলো, “চৈতী! কি হয়েছে তোর? এ্যাই চৈতী, চৈতী উঠ বল কি হয়েছে?”

চৈতী তাকালো কিন্তু কথা বলল না। দিহান ভয় পেয়ে গেল যেন এমন গোঙানি শুনে। বুক ধড়ফর করে উঠলো প্রিয়ন্তির দ্বিতীয় কেমো থেরাপির আগের দিনের কথা মনে হয়ে। অজানা ভয়ে আতঙ্কিত হয়েই দিহান ঘর ছেড়ে মায়ের ঘরে গেল। দরজা লাগানো মা উঠেনি তাই সে দরজা ধাক্কালো, ” জেগে আছে মা? আব্বু তোমরা কি ঘুমিয়ে আছো?” দিহানের এমন ভয়ার্ত এলোমেলো ডাক শুনে দিহানের বাবা মা দুজনেই ভয় পেয়ে গেলেন। ঘুম ভেঙেছে তাদের আরো আগেই। নামাজ পড়ে আবার শুয়েছিলেন দুজনেই কিন্তু এমন ডাক কলিজায় লাগলো খুব দিলশাদের। সে আগে আগে দরজা খুলে দিহানকে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে?

দিহান বলল, চৈতী কেমন যেন করছে।

দিলশাদ আর এক সেকেন্ডও দেরি না করে চলে গেল দিহানের ঘরে৷ সারা ঘরে চোখ বুলিয়ে দেখলো চৈতী নেই। পেছনে পেছনে দিহান আর তার বাবাও এলো।

“চৈতী কোথায়?”

দিলশাদ অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো আর তখনি বাথরুমের দরজায় আওয়াজ হলো। চৈতী তার বা গাল চেপে ধরে গোঙাতে গোঙাতে বিছানার কাছে আসলো।

“কি হয়েছে তোর?”

“ফুপি অনেক ব্যথা মাড়িতে,গালে।” অস্পষ্ট শোনালো চৈতীর কথা। দিলশাদ তার সামনে গিয়ে বলল, “দেখি কি হয়েছে?”

চৈতীর হাতটা সরিয়ে দিতেই দেখলো গাল অনেক ফোলা।

“হা করতো।”

চৈতী হা করলো কিন্তু ফোলা মাড়ি ছাড়া দিলশাদ কিছুই দেখলো না। সকালে সবার নাশতার পর দিহানকে দিয়ে চৈতীকে পাঠালো ডেন্টিস্টের কাছে। এর মাঝে আবার সুইটির সাথে কথা হওয়ায় দিলশাদ তাকে জানিয়েছে চৈতীর কথা। তখন সুইটি বলল চৈতীর এমন আগেও দু বার হয়েছে৷ ডাক্তার বলেছিলো মাড়ির ভেতর একটা নতুন দাঁত আছে কিন্তু সেটা বাঁকা আর মাড়ি ভেদ করে এখনও বের হয়নি। দিহানও চেকাপ করিয়ে আনার পর জানালো আজও ডাক্তার একই কথা বলেছে৷ তবে কিছু মেডিসিন দিয়েছে তিনদিন খেয়ে ব্যথা সেরে গেলে মাড়ি কাটতে হবে কিছুটা। সারাদিন চৈতী কোন কথা বললো না। ফোলা মাড়ি নিয়ে চিবিয়ে কোন খাবারও খেতে পারলো না।প্রচণ্ড ব্যথায় পাউরুটি দুধে ভিজিয়ে খেয়ে মেডিসিন খেল হালকা গরম সেক দিলো। সে রাতটা ব্যথা কমে যেতেই ভালো ঘুম হলো তার। সামনে পরীক্ষা অথচ বই ছুঁয়ে দেখা হলো না একটুও। পরের দিন সকালে দিহান আবার অফিসে যাওয়ার জন্য এটা সেটা খুঁজতে গিয়ে সব এলেমেলো করে ফেলল। চৈতীর এখন ঝিম মেরে কিছুটা ব্যথা লাগলেও তেমন আর ভয়ানক ব্যথা নেই৷ দিহানের উপর বিরক্ত হয়ে নিজেই সব গুছিয়ে সামনে দিলো, নাশতা বেড়ে খাওয়ালো৷ বাড়িতে দিশান না থাকলে বাড়িটা একদম নিরব হয়ে যায় তবে আজকে সকাল থেকে দিহানের চেঁচামেচি আর চৈতী কথা বলতে না পেরে চোখ রাঙানি দিচ্ছে এই দেখে দিহানের বাবা খুব আমোদিত গলায় দিলশাদকে বললেন, বাড়িতে তিনটি কাপল একটা টক, একটা মিষ্টি আর একটা ঝাল।

দিহানের বাবার কথা শুনে তীক্ষ্ণ চোখে তাকায় দিলশাদ তা দেখে তিনি আবার বলে, “আমি কিন্তু ভুল বলিনি শাদ।তুমি আর আমি টক জোড়াই, আর দিশান, ঐশী মিষ্টি কিন্তু দিহান আর চৈতী যেভাবে সারাক্ষণই লড়াই করে তারা ঝাল উপাধি পাওয়ারই যোগ্য।”

দিলশাদ তার স্বামীর কথায় গম্ভীর মুখে ধমকে উঠে, বুড়ো বয়সে ভীমরতিতে পেয়েছে! কাপলের উপাধি বিশারদ হয়েছো তাই না? নাকি বয়স ষাটের গোড়ায় আসতে গিয়ে রঙিন মুখ পেয়েছো কোথাও।ছেলে, বউদের জোড়া ঠিক করার চাকরি নিয়েছেন উনি যত্তসব!

“এজন্যই আমরা টক আমি সহজ সরল মানুষ তুমি বরাবরই লেবুর মত ।”

দিহানের বাবা চুপ করো অফিসে যাও। আমার মাথা গরম করো না।ভদ্রলোক আর সাহস পেলেন না মজা করার কিন্তু তিনি চলে যেতেই দিলশাদ একটুখানি হাসলো। মনে মনে বলল, “মন্দ বলোনি দিহানের বাবা আমরা বাড়িতে টক, মিষ্টি, ঝাল কাপলই আছি। আল্লাহ্ যেন সারাজীবন পাশে রাখে আমার ঝাল, মিষ্টিদের।

চৈতীরা যাওয়ার পরদিনই রাতের বেলা অনেক ক্লান্তি নিয়ে বাড়ি ফিরলো চাঁদ৷ বেশ রাত করেই ফিরেছে সেদিনও৷সুইটির চোখেও ঘুম ছিলো না তাই সে বসে বই পড়তে পড়তে অপেক্ষা করছিলো চাঁদের জন্য। এ বাড়িতে তাদের আসবাব তেমন বেশি নেই আবার বইপত্রও সব আনা সম্ভব নয়।কিন্তু সুইটির বরাবরই সময় কাটে বই পড়ে। শখের বশেই সে অনেক বই কিনে শেলফ ভরেছিলো। ভেবেছিলো মেয়েটাকে খুব বই পড়ুয়া বানাবে কিন্তু তা আর হয়নি। বছর পাঁচেক আগে সুইটি সাতকাহন বইটা আনিয়েছিলো দিশাকে দিয়ে।দীপাবলিকে নিয়ে লেখা সমরেশ মজুমদার এর এই চমৎকার বইটি ভেবেছিলো মেয়েকে পড়তে বলবে। মেয়ে হিসেবে শিক্ষনীয় কত কি শিখবে এটা পড়ে কিন্তু না মেয়ে তার বইটা ছুঁয়েও দেখলো না। সুইটি এটা বহুবার পড়েছে কিন্তু নিজের মধ্যে বিশেষ কোন জ্ঞানই আয়ত্ব করেনি এর থেকে আবার হতে পারে সে চাঁদকে অনেক বেশিই ভালোবেসে নিজের শিক্ষা নেওয়া বিষয়গুলোও এড়িয়ে গেছে। আজ রাতে চাঁদ বাড়ি আসার পর দেখলো সুইটি সাতকাহন পড়ছে। সে রাতের খাবার টেবিলেই পেল তাই নিজেই নিয়ে খাওয়া শুরু করলো। এক ফাঁকে জেনে নিলো সুইটি খেয়েছে কিনা! সুইটি হ্যাঁ সূচক জবাব দিয়ে পাশে এসে দাঁড়ালো। চাঁদ খাবার মুখে নিয়েই তাকালো সুইটির দিকে, ” যদি আমার জন্য জেগে থেকে থাকো তাহলে শুয়ে পড়ো গিয়ে। আমি এগুলো গুছিয়ে রেখে আসছি।”
সুইটি নড়লো না জায়গা থেকে সে আরেকটু কাছে এসে বলল, ” আপনি আজ মোবাইল নিয়ে যাননি?”

” না, কিছু কাজ ছিলো আর্জেন্ট তাই আর খেয়াল করা হয়নি।”

“এখন তো আপনার কাজ নির্দিষ্ট আর সবটাই হেড অফিসে বসে। ফোন তো সাথে রাখার অসুবিধা নেই।”

“কি হয়েছে? ফোনের পেছনে পড়লে কেন?” খেতে খেতেই বলল চাঁদ খান৷ সুইটি কোন জবাব না দিয়ে বলল খাবারগুলো ঢেকে রাইখেন কিন্তু থালাবাটি ধুতে যাবেন না আমি ভোরেই ধুয়ে নিবো। চাঁদ ক্লান্তিতে বেশ কাহিল থাকায় সত্যিই আর সেগুলো ধুলো না। অন্যান্য সময় সে নিজের প্রত্যেকটা কাজ নিজে করে নেয়। বিছানায় গিয়ে টেবিল ল্যাম্পটা বন্ধ করে সুইটির পাশে শুয়ে পড়লো৷ দেহের ক্লান্তি থাকলেও সে সুইটিকে টেনে বুকে চেপে রাখলো আর তখনি সুইটি বলল, “আপনার বান্ধবী অনামিকা খন্দকার ফোন করেছিলো আপনার ফোনে।”

চাঁদ চমকালো যেন কথাটা শুনে।

দিহান সারাদিন অফিসের কাজে নিজেকে খুব ব্যস্ত রাখে। কিন্তু তার মাথাগরম স্বভাবের কারণে অফিস কর্মীদের মধ্যে তার বদনাম হয়ে গেল খিটখিটে স্যার নামে। বসের ছোট ছেলে যতোটা নরম আর কোমল স্বভাবের বড় ছেলে ঠিক ততোটাই উগ্র আর রাগী স্বভাবের। দিহান শুনেছে এসব কিন্তু সে তেমন পাত্তা দেয় না কারো কথা।চৈতীও তাকে এসবই বলে। বাড়িতে আরো দু দিন কাটলো চৈতীর ফোলা গাল নিয়ে৷ ঔষধের কারণে ব্যথা না থাকলেও ফোলা কিছুতেই সারলো না। কাল তিন দিন ছিলো ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কিন্তু চৈতী ভয়ে গেল না।দিলশাদ খুব জোরে করেও নিতে পারেনি। আজ আর দিলশাদ কোন কথা শুনলো না সে দিহানকে ফোন করে বলল, “বাবা আমার একটা কাজ করে দিবি?”

মায়ের অনুরোধমাখা সুর শুনে দিহান তো ভড়কে গেল।নিশ্চয়ই কোন ঝামেলামার্কা কাজ হবে তাই সে বলল আজ ফিরতে লেট হবে। দিলশাদও কম না সেও বলল, যত দেরিই হোক আজকে চৈতীকে হাত পা বেঁধে হলেও নিয়ে যেতে হবে ডাক্তারের কাছে।”

“বেঁধে কেন!” দিহান হতভম্ব হয়ে গেল।

“তো কি করবো সে মাড়ি কাটবে মানে অপারেশন এসব বলে আর যেতে চাইছে না। কালও এমন করেছে।”

“ওহ আচ্ছা। আমি বিকেলেই আসছি। ও যাবে না ওর ঘাড় যাবে৷ রাতভর ক্যা ক্যা করে আমার ঘুম নষ্ট করে তা ভাল্লাগে তার।”
দিহান সত্যিই এলো বিকেলে চৈতীকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেল। দুজন ডেন্টিস্ট একসাথেই বসলো। টেস্ট আগেই করা আছে আজকে শুধু মাড়ির বাড়তি মাংসটুকু কেটে দাঁতটা বের করা হবে। চৈতী ভয়ে প্রথমে চেঁচামেচি করতেই দিহান তার পাশেই বসে হাত ধরলো৷ বারবার বলতে লাগলো ভয় পাস না প্লিজ কিচ্ছু হবে না ইনজেকশন পুশ করতেই দেখবি ব্যথাও টের পাবি না৷ ডাক্তার এনেস্থিসিয়া দিলো, সময়মত মাড়িও কাটা হলো। কিন্তু বাড়ি ফিরতে ফিরতে চৈতী কেমন ঝিমিয়ে বসেছিলো। ডাক্তার বলেছিলো এনেস্থিসিয়ার কারণে পেশেন্ট অনেকটা সময় হয়তো ঝিমিয়ে থাকবে। তবে তেমন সমস্যা হবে না। আর এক ঘন্টা পর আইসক্রিম খাওয়াবেন। বাড়ি ফিরে চৈতী চুপচাপ ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লো৷ এক ঘন্টা পর দিলশাদ নিজে গিয়ে চৈতীকে মাড়ির তুলো ফেলে আইসক্রিম খেতে বললেন৷ চৈতীর কোন হেলদোল নেই সে কেমন যেন হুঁশে নেই বলে মনে হলো৷ দিলশাদ চিন্তায় পড়ে গেল। দিহানকে বলল ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ কর। সেও ডাক্তারকে সমস্যা বললে ডাক্তার জানালো এনেস্থিসিয়ার কারণে এমন হচ্ছে। পেশেন্ট খুব দূর্বল আর তাই হয়তো সময় লাগছে তার একটু এখন আপাতত ঘুমাতে দিন সকালে উঠলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। চৈতী জলদিই ঘুমিয়ে পড়লো আর দিহান নিজে তার বিছানা ঠিক করে দিলো। এগারোটার পর দিহান বাইরে থেকে সিগারেট খেয়ে বাড়ি ফিরলো।তার শরীরে ক্লান্তি কিন্তু মনটাও ভালো লাগছে না আজ। ঘরে ঢুকে আজ মুখহাতও ধোয়নি শুয়ে পড়লো বিছানায়। সিগারেটের উৎকট গন্ধটা নাকে লাগতেই চৈতীর ঘুম ভেঙে গেল। সে চোখ পিটপিট করে তাকালো দিহানের দিকে। দিহানও চমকে গেল চৈতীর হঠাৎ তাকানোতে তারপরই সে পাশ ফিরিয়ে শুলো। কয়েক সেকেন্ড পরই দিহান অনুভব করলো তার বুকে চৈতীর হাত। চৈতী তাকে জাপটে ধরে নিজের বুক মিশিয়ে দিলো দিহানের পিঠে। আকস্মিক এমন আচরণে দিহান প্রথমে ভয় পেয়ে গেলেও পরে আবার ভাবলো চৈতী ঘুমের ঘোরেই এমন করছে৷ সে চৈতীর হাত সরাতে গিয়ে টের পেল চৈতী তার শার্টের বোতাম খুলছে। বাইরে আজ চাঁদ নেই তাই জানালা খোলা থাকার পরও ঘরটা অন্ধকার। যতটুকু আবছা দেখা যায় সবটাই চোখ সয়ে যাওয়ায়। শার্টের দুটো বোতাম খুলতেই দিহান শোয়া থেকে উঠে বসলো।
“কি করছিস তুই!”

চৈতী কিছু বলল না সেও কেমন গা দুলিয়ে উঠে বসলো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে স্বাভাবিক নয়।চৈতী আরেকটু কাছে এলো দিহানের তা দেখে দিহান বলল, “ঠিক আছিস তুই?”

চৈতী কোন জবাব দিলো না উল্টো দু হাতে দিহানের শার্ট টেনে ধরলো এতে হয়তো শার্টের নিচের বোতাম গুলো ছিঁড়ে গেছে। দিহান অবাক হতেও ভুলে গেল। অন্ধকার রাত ঘরটাও পুরো আঁধারে ঢাকা। খোলা জানালা দিয়ে হালকা শীতল বাতাস তিরতিরিয়ে ঘরে ঢুকছে। চৈতী এবার কেমন হামলে পড়লো দিহানের খোলা বুকে। দিহান টেনে তাকে সরাতে চাইলে সে আরো জাপটে ধরে তাকে চুমু খেল লাগাতার। উদ্ভ্রান্তের মত দিহান তাকে বুক থেকে সরাতে চাইছে আর চৈতী নিজের সর্বস্ব দিয়ে জড়িয়ে ধরছে।

দিহান আর সামলে থাকতে পারছে না৷ বুকের মাঝে তপ্ত চুমোয় তার পুরুষ দেহটা জেগে উঠতে চাইছে। কিন্তু এ যে অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ হয়ে যাবে তার তাই নিজেকে সামলে চৈতীকে ছাড়াতে চাইলো।
“কি করছিস চৈতী, ছাড় আমায় নইলে বড্ড ভুল হয়ে যাবে।” দিহান বলতেই থাকলো কিন্তু চৈতীর থামার নাম নেই। সে দিহানের শক্ত হাত টেনে নিজর পেটে ছোঁয়াতে চাইছে। উঁচু হয়ে দিহানের ঠোঁটে চুমু খেতেও চেষ্টা করছে। বাইরের নিরবতা ঘরের ভেতরে ভয়ঙ্কর হয়ে চিৎকার করছে যেন দিহানের কানে৷ সে বুঝতেই পারছে না কি হচ্ছে এসব! কেন চৈতী হঠাৎ এমন আদিম খেলায় ডুবতে চাইছে। সন্ধ্যে পর্যন্তও সব ঠিক ছিলো৷ কিন্তু চৈতী এখন নিঃশব্দে যুদ্ধ শুরু করেছে। দিহানও কম নয় সে নিজেকে আটকে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে চৈতীকে ছাড়াতে চাইছে আর চৈতী উন্মাদ ক্ষুধার্ত বাঘিনীর মত দিহানকে আক্রমণ করছে। ধরাশায়ী হচ্ছে না কেউ তবুও চলছে একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়াই৷ চৈতী এক সময় জোর করে বহু কষ্টেই দিহানের ঠোঁটে পৌঁছুলো। সেই সাথে ছুটলো তার গাল বেয়ে স্রোতস্বিনী। দিহান তখনও দেহের বিরুদ্ধে যাওয়ার লড়াই করছিলো। কিন্তু কে জানে কি হলো চৈতীর চোখের জল গড়িয়ে তার বুকের কাছটায় পড়তেই সে তার গতিপথ বদলে নিলো। মুহুর্তেই আঁকড়ে ধরলো চৈতীর ওষ্ঠ। আঁধার ঘরে হিংস্রতা হঠাৎই বদলে কোমল স্পর্শে দুটো দেহেই আপোষহীন খেলায় মেতে উঠলো। অতি অনাকাঙ্ক্ষিত তবুও অলিক সুখে ভেসে গেল দুজন। ঝড়হীন রাতে নিশ্চুপ ঝড় বইলো দুই দেহে৷ চৈতীর চোখে অশ্রু গড়ালো আরো অনেকটা সময়৷ আর দিহান যুদ্ধের সমাপ্তি হতেই বিছানা ছেড়ে ছেঁড়া শার্ট গায়ে দিয়েই বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। চৈতীর নগ্ন দেহ পড়ে রইলো নিথর আরো কিছু সময় তারপর সে তলিয়ে গেল গভীর ঘুমে। সে জানে না কি অপেক্ষা করছে তার জন্য এই আঁধারের অন্তরালে থাকা প্রভাতে!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here