সর্বনাশিনী পর্ব-৮

0
2307

#সর্বনাশিনী
#সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
৮।
চারিদিকের রঙ্গিন আলোয় ভরপুর। জায়গাটির ঠিক পিছনে-ই মিউজিক বাজাচ্ছে। ডান্স ফ্লোরে চলছে উড়ো ধুরো ডান্স। দেখেই বোঝা যাচ্ছে পাবলিক মাতাল হয়ে নাচে ব্যস্ত ডান্স ফ্লোরের সুন্দরী রমণীদের সাথে। ঠিক তার উল্টো পাশে নিরব নির্জন একটি জায়ায় হাতে রেড ওয়াইনের গ্লাস নিয়ে বসে আছে দেশের টপ টেন বিজনেস ম্যানদের মাঝে অন্য তম দীপক মিশ্র। পাশেই সুন্দরী ললনা তার লতানো শরীর দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে।

” মি. মিশ্র! ইট’স হ্যায়ার!”

কর্কস মিষ্টি একটি কন্ঠ ভেসে এলো তার পাশেই ডিভানে আরাম করে বসে থাকা বঙ্গললনার।

” মিস. আকৃতা ইউ হ্যাভ নো রিগ্রেটস!”

দীপক মিশ্র ঠোঁটের সাথে ওয়াইনের গ্লাসটি লাগিয়ে বলল। স্নেহা ঠোঁটের কোনে হাসি নিয়ে মাথা নাড়িয়ে বলল,

” নো মি. মিশ্র।”

দীপক কৌতূহল কন্ঠে আগ্রহ প্রকাশ করলো,

” তা আপনি ঠিক কেন এমন করছেন মিস মেখ? ইউ নো? আমরিন এ্যামপায়ার আর মিশ্র গ্রুপ বিজনেস কম্পিটউটর?”

” আমি তা ভালো করে জানি মি. মিশ্র। আর তাই আপনাকে সাহায্য করছি। সব থেকে বড় কথা… ইটস গুড আফটারনুন ফর ইউ? সো ট্যাক ইট!”

দীপক মিশ্র ওয়াইনের গ্লাস উপরে তুলে এপ্রিশিয়েট করে বলল,

” থ্যাংক ইউ ফর দ্যা ডিল!”

স্নেহা উঠে দাঁড়ালো। ঠোঁটের কোনে বাঁকা হেসে বেড়িয়ে গেলো সেখান থেকে।

পরের দিন সকালে,
স্নেহা তার নিয়ম মাফিক অফিসে ঢুকলো। ঠিক তখনি হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো ম্যানেজার শশি,

” স্নেহা? প্লীজ টেক ইট! এন্ড গো স্যার হোম, স্যার আজ অফিস আসেনি, আর এই ফাইলটি খুব ইম্পর্টেন্ট। এখানে স্যারের সাইন লাগবে।”

স্নেহা মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বলল। আবারো বেড়িয়ে গেলো বাহিরের দিক। তরুনের গিফট করা গাড়িটি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো স্নেহা তার শশুর বাড়ি। স্নেহা হা করে শ্বাস ছাড়লো। রাস্তার পথ যত ফুরোচ্ছে? পুরোনো স্মৃতি চরণ হচ্ছে। এই-তো তাদের বিয়ের ঠিক চার মাস পরেই…স্নেহা কনসিভ করে। যা সে জানতোই না… স্নেহা খুব একটা সময় দিলশাদের সাথে ভালো কাটেনি। যতটুকু কাটিয়েছে শুধু বেদনাদায়ক সময়। কনসিভ করাটাই ছিলো যেন তার জীবনের সব থেকে বড় পাওয়া। বিন্দু এই খবর শুনে স্নেহাকে নিয়ে আসে তার কাছে। দিলশাদ পাল্টাতে থাকে। স্নেহার প্রতি যত্নবান হতে থাকে। যেদিন প্রথম জানলো বাবা হচ্ছে দিলশাদ হুট করেই অনেক খেলনা নিয়ে উপস্থিত হয়। বিন্দু কঁপালে হাত। হেসে হেসে ছেলেকে বলে,

” পাগল ছেলে!”

দিলশাদের সেদিকে খেয়াল কই? দিলশাদ স্নেহাকে কোলে করে রুমে নিয়ে যায় সবার সামনে থেকে। স্নেহা অবাক। এত কেয়ার? সত্যি? স্নেহার চোখে জল ছলছল করে উঠলো। স্নেকে বিছানায় বসিয়ে, ঠিক তার সামনেই দিলশাদ হাটু গেরে বসলো। স্নেহার পেটের কাছে কান নিয়ে ছোট প্রাণটির হৃৎস্পন্দনের শব্দ শুতে চাইলো। কিন্তু বাচ্চাতো এখনো ছোট ধীরে ধীরে তার শরীরের গঠন হবে বড় হবে তারপরেই না বুঝতে পারবে দিলশাদ!

স্নেহার বড্ড লজ্জা লাগছিলো। দিলশাদের এমন কেয়ারে সে অভস্ত্যত নয়। তাই কেমন লাগছিলো যেন। তবু-ও স্নেহা দিলশাদের প্রতিটি মুভ মেন্ট পর্যবেক্ষণ করছিলো। একপর্যায়ে দিলশাদ স্নেহার মেদহীন পেটে গভীর চুমু খেলো। স্নেহা সঙ্গে সঙ্গে শিউরে উঠলো। স্নেহার প্রতিটি অঙ্গে আরো গভীর হতে লাগলো দিলশাদের নরম ঠোঁটের স্পর্শ। স্নেহা কেঁপে উঠলো, অপ্রত্যাশিত ভালোবাসায়। দিলশাদ স্নেহার কানের কাছে এসে থেমে গেলো, নিচু গলায় বলল,

” তুমি আমাকে অনেক বড় একটি উপহার দিয়েছো স্নেহা। কিন্তু তাই বলে আমার থেকে ভালো কিছু আশা ছেড়ে দেউ। ভুলে যেও না কখনো আমি শুধু সেহেরের। আর এই বাচ্চাটা-ও আমার। এই বাচ্চার উপর তোমার কোনো অধিকার থাকবে না!”

একজ যুগল এমন ইন্টিমেটের সময় যদি ঠিক এমন একটি কথা বলে তার পার্টনার? অবশ্যই তা ভালো লাগবে না? স্নেহারো লাগলো না হতাশা জনক চোখে স্নেহা বলল,

” আপনি না হয় আমাকে সারা জীবন ভুল বুঝে গেলেন দিলশাদ, তবে এই বাচ্চার বেলায়, কোনো ভুল ভাবনায় আপনাকে থাকতে দিবো না। বাচ্চাটি শুধু একার আপনার না.. আমারো। এর উপর ঠিক ততটুকু অধিকার আছে আমার যতটুকু আপনার!”

দিলশাদ রেগে গেলো। চোখ মুখ লাল করে স্নেহার গালে শক্ত করে ধরলো। শাসিয়ে বলল,

” আমার মুখে মুখে তর্ক পছন্দ নয়। বাধ্য থাকো, নয়তো এই বাচ্চা জম্ম হওয়ার পর আর মুখ দেখতে পারবে না।”

স্নেহা আত্মকে উঠলো,

” এতটা কঠোর হবেন না!”

দিলশাদ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। তার এই হাসিতে স্নেহা ধমে গেলো। মুখ দিয়ে রা বের করার সাহস পেলো না। চোখ দিয়ে অজস্র জল পড়তে লাগলো।

কিন্তু স্নেহার খুশিতে গ্রহণ লাগবে না? তা কি হয় নাকি? পৃথিবীতে যারা যত সরল, নরম তাদের জন্য শত শত কষ্ট। মারিয়া… দূর সম্পর্কের আত্মীয়া বিন্দুর। বাবা-মা এক দূর্ঘটানায় মারা যাওয়ায় ছোট থেকে বিন্দু আর শিশির আদর স্নেহ দিয়ে বড় করেছে। টিভি স্টার বানিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ মারিয়ার ফলোয়ার। সুন্দর দেহ, সুন্দর রূপ নিয়ে তার বড্ড অহং। ছোট থেকেই একটি তার দূর্বলতা… দিলশাদ আমরিন। কিন্তু দিলশাদ প্রথমে সেহের এখন স্নেহাতে আসক্ত। মারিয়ার কোনোই চান্স নেই। কিন্তু একটা আশা ছিলো স্নেহাকে দিলশাদ ডিভোর্স দিবে বলেছিলো। কিন্তু বাচ্চার আগমনে দিলশাদ আমরিন যেনো ইউক হয়ে পড়ছে স্নেহার প্রতি। এসব কিছু যেন আউট ওফ কান্ট্রোল হচ্ছিলো মারিয়ার।মারিয়া তাই ছক কসলো।

” বাচ্চা টা? বাচ্চাটা যদি না থাকে? তাহলে তাহলে হবে তো দিলশাদ আমার?”

মারিয়া ঠিক কিছু দিনের মাঝেই সফল হলো তার কাজে। সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে স্নেহা স্লিপ কেঁটে একে বারে নিচে পড়ে যায়। এবং তিন মাস বয়সেই স্নেহার অংশটি পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়। এর জন্য অবশ্যই দোস স্নেহা উপর পরেছিলো। যার জন্য স্নেহাকে দিলাদ তাদের বাসা থেকে বের করে দিয়ে ছিলো।

স্নেহা আজ আবার সেই বাসায় নিজের পা রেখে এগিয়ে গেলো ভিতরে। স্টাডি রুমের সামনে এসেই নক করলো দরজা।

“কামিং!”

ভেতর থেকে গম্ভীর কন্ঠ ভেসে এলো। স্নেহার হার্ট ভীট দিগুণ বেগে বৃদ্ধি পেলো। ডিপ ডিপ করে ছন্দ বাজিয়ে যাচ্ছে এই হৃদপিণ্ড নামক যন্ত্রটা। কেন? কেন এমন হয়? স্নেহা যতবার এই লোকটির সামনে আসে? নিজেকে ভুলে যেতে থাকে! কেন এমন মনে হয়? পুরো দুনিয়া ফেলে নির্জনে দিলশাদের বুকে মাথা রাখতে। কেন এমন মনে হয়? এই নিকৃষ্ট এরোগেন্ট লোকটিকে কাছে পেতে। স্নেহার অবচেতন মন জাগ্রত হতে স্নেহার আবেগ-বিবেক ধংস করতে চাইছে খুব করে। কিন্তু সচেতন মন একটা টোকা মেরে মস্তিষ্ককে জাগ্রত করে তুললো। স্নেহা এসে দাঁড়ালো দিলশাদের সামনে। দিলশাদ নিস্প্রভ দৃষ্টি মেলে আকৃতা শেখকে দেখছে,

” ফাইল!”

স্নেহা এগিয়ে দিলো। যথাসম্ভব চোখে জোরা নিচে রেখে আছে স্নেহা। দিলশাদের তীক্ষ্ণ চাহনি স্নেহাকে আনকম্ফোর্টেবল করে তোলে। দিলশাদ ফাইলটি পর্যবেক্ষণ করে নিলো ভালো করে। ফাইল দেখার মাঝে আড় চোখে আকৃতা শেখকে গভীর ভাবে খুটিনাটি দেখতে লাগলো। স্নেহার নরমাল মুভ মেন্টের সাথে স্বভাব সাথে খাপ খাইয়ে যায়। দিলশাদের মাথায় চিন্তার দুটি ভাজ পড়লো। তারপর সাইন করে এগিয়ে দিলো। স্নেহা মাথা নাড়িয়ে যেই বাহিরে যেতে লাগলো। দিলশাদ স্নেহার হাত টেনে ধরলো। সন্ধিহান কন্ঠে বলল,,

” হো আর ইউ?”

স্নেহা উপরে তাকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে চোখ ফিরে নিয়ে বলল,

” স্যার আপনি কি আমাকে একা পেয়ে ফায়দা উঠাতে চাইছেন?”

দিলশাদ ভাবলেশহীন ভাবেই বলল,

” তোমার কি মনে হচ্ছে?”

স্নেহা হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলো। দিলশাদ আরো শক্ত করে ধরে স্নেহাকে আরো কাছে টেনে নিলো, দিলশাদের ঝংকার তোলা কন্ঠ। উৎসুক চোখ জোরা নিয়ে বিচলিত হয়ে বলল,

” তোমার উপস্থিত, তোমার স্পর্শ, তোমার চাহনি, সব.. সব কিছু তার মতো। তুমিই কি সেই?”

একমুহূর্তের জন্য স্নেহার মনে হয়েছিলো সে ধরা পড়ে গেছে। কিন্তু? কিন্তু না.. শুধু ডাউট। স্নেহা নিজেকে শক্ত করে বলল,

” স্যার আপনি ভুল করছেন, প্লীজ লেট মি গো।”

দিলশাদ ছাড়লো না আরো কাছে টেনে নিলো। এতটা কাছে যে একটা সুতো পরিমাণ জায়গায় দু’জনের ঠোঁটের মাঝে…. যে একটা চিত্র। ভালোবাসায় মগ্ন দুটি নর-নারী। ঠিক সেই সময় বড়সর আওয়াজ করে দরজা খুলে গেলো। আর দেখলো….

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here