মেঘের পরে রংধনু পর্ব-২

0
2798

#মেঘের_পরে_রংধনু
#পর্ব_২
লিখা: Sidratul Muntaz

অরিনের হাতের দ্বিতীয় চড় খেয়ে ইলহানের মুখ একদম থমথমে হয়ে গেছে। তার শুভ্র নাকের ডগা ফুলে গাঢ় গোলাপী বর্ণ ধারণ করেছে। ”আউট অফ কন্ট্রোল’ হয়ে অরিনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে মন চাইছে। কিন্তু ইলহান তৎক্ষণাৎ নিজেকে সামলে জায়গা ত্যাগ করলো। ওর সমস্ত রাগ গিয়ে প্রকাশ পেল কেবিনের স্লাইডিং দরজা খোলার সময় এবং বের হয়ে বন্ধ করার সময়। খুব জোরে দরজাটা ধাক্কা মেরে খুললো এবং ধাক্কা মেরে লাগিয়ে বের হয়ে গেল। ইলহান নিশ্চিত যদি আর এক মুহুর্ত সে ওই জায়গায় থাকতো তাহলে এতোক্ষণে অরিনকে কুচি কুচি করে ফেলতো। বেয়াদব মেয়ে একটা! ইলহান চলে যেতেই প্রত্যেকে ক্ষিপ্ত মেজাজ নিয়ে চড়াও হলো অরিনের উপর। মারিয়া কটমট করে বললো,
” তুই আবার চড় মারলি? তোর মাথায় কি কিছু নেই?”
তানিশা নাক ফুলিয়ে বললো,” দেখলি, তোর জন্য উনি রাগ করে চলে গেলেন। আমরা তো কথাই বলতে পারলাম না।”
অন্বেষা টুস্কি মারার উদ্দেশ্যে বললো,” ফোন নাম্বারটাও নেওয়া হলো না।”
ইতি মুখে আঙুল দিয়ে চুপ করতে বললো সবাইকে। শ্যানিনের মেজাজ চূড়ান্ত খারাপ মনে হচ্ছে। সে এমনভাবে অরিনের দিকে তাকিয়ে আছে যেনো এখনই ‘আল্লাহু আকবর’ বলে জবাই করে ফেলবে। সবাই শ্যানিনের দিকে তাকিয়ে নিশ্চুপ হয়ে গেল। কিন্তু অরিন নির্বিকার। সে এমনভাবে নিজের সিটে বসলো যেনো কিছুই হয়নি। কিছুক্ষণ নিরবতা বিরাজ করলো। তারপর হঠাৎ শ্যানিন অরিনের কাঁধ খামচে ধরে চেঁচিয়ে উঠলো,
” এই, তুই নিজেকে কি মনে করিস? আমার ভাইয়ের গাল কি তোর কাছে সরকারি সম্পদ মনে হয় যে যখন ইচ্ছা চড় মারবি আর সে কিচ্ছু মনে করবে না?”
অরিন খুব স্বাভাবিকভাবে বললো,” না, তোর ভাইকে আমার হিউমারলেস অস্ট্রেলিয়ান গরু মনে হয়েছে। তাই চড় দিয়েছি।”
শ্যানিন যেনো এইবার তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো,” কি? আমার ভাই গরু?”
” অবশ্যই। নাহলে একটা মেয়ের মন ভাঙার ঘটনা জেনেও কোনো মানুষ ওইরকম সস্তা রসিকতা করতে পারে? ন্যূনতম কমন সেন্স যদি থাকতো তাহলে তোর ভাইয়া অন্তত এই সময় আমার নাম নিয়ে এমন বাজে রসিকতা করতো না।”
” কি এমন বাজে রসিকতা করেছে ভাইয়া? তাছাড়া তুই কি প্রধানমন্ত্রীর নাতনি না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাইঝি যে তোর নাম নিয়ে কোনো রসিকতা করা যাবে না?”
” তুই যেমন একটা ম্যানারলেস তোর ভাই তো আরও ম্যানারলেস। তুই হচ্ছিস মহিলা বলদ আর তোর ভাই পুরুষ বলদ।”
” তোর এতোবড় সাহস! আমাদের ভাই-বোনকে বলদ বলছিস?”
” অবশ্যই বললাম। তোর কিভাবে মনে হলো এই অবস্থায় আমি তোর ভাইকে মিষ্টি গলায় স্যরি বলতে যাবো? তুই কি বুঝে উনাকে এখানে নিয়ে এসেছিস? আমার ইচ্ছে করছে পুরো দুনিয়া খেয়ে ফেলতে। স্যরি বলার অবস্থায় আমি নেই। বুঝতে পেরেছিস স্টুপিড?”
শ্যানিন কষে একটা চড় দিল অরিনকে। তারপর উচ্চ গলায় বললো,
” বেয়াদবি করবি আবার স্যরি বলবি না? একটা ক্যারেক্টরলেস বাজে ছেলের জন্য তুই আমার ভাইকে অপমান করবি? আর আমি তার বোন হয়ে সেটা সহ্য করবো? তোকে তো আমার স্রেফ জবাই করতে মন চাইছে।”
অরিন উঠে ধপাশ করে একটা চড় ফিরিয়ে দিল শ্যানিনকে। তারপর বললো,
” খবরদার, আমার বয়ফ্রেন্ডকে ক্যারেক্টরলেস বলবি না।”
শ্যানিন চিৎকার করে উঠলো,
” রায়হান তোর বয়ফ্রেন্ড না৷ এক্স বয়ফ্রেন্ড। আর অবশ্যই ক্যারেক্টারলেস। ওর জন্য তুই আমাকে মারলি?”
অরিন আরও দ্বিগুণ চিৎকার দিল।
” ও কখনও আমার এক্স হবে না। ও আমার বয়ফ্রেন্ড ছিল আর সবসময় থাকবে। বুঝেছিস?”
মারিয়া বিড়বিড় করে বললো,” শুরু হয়ে গেছে এদের মারামারি। এই কেউ এদের থামা, নাহলে কলেজের মতো অবস্থা শুরু হবে।”
সবাই ভয়ে চুপসে রইল। অরিন আর শ্যানিন একবার ঝগড়া লাগলে টিচার ছাড়া ওদের থামানোর সাধ্য কারো নেই। শ্যানিন গর্জিত গলায় বললো,
” একটা বিবাহিত ছেলে বিয়ের পরেও তোর বয়ফ্রেন্ড থাকবে? এই কথা বলতে লজ্জা করলো না?”
” একদমই না। কেনো লজ্জা করবে?”
” ছি, তোর মতো থার্ড ক্লাস মেয়েদের জন্যই আরেক মেয়ের সংসার ভাঙে। বেয়াদব!”
” আর তোর মতো ছ্যাঁচড়া মেয়েরাই পারে অন্যের ভাইয়ের পেছনে লালা ফেলে ঘুরতে। ছি! ধিক্কার তোকে।”
কথাটা শুনে শ্যানিন একদম স্তব্ধ হয়ে গেল। সে কখনও ভাবেনি অরিন তাকে এই বিষয়টা নিয়ে খোঁটা দিবে। কোনো এককালে অরিনের ভাই অর্ণবকে শ্যানিন প্রপোজ করেছিল। কিন্তু অর্ণব শ্যানিনের আবেগকে পাত্তা দেয়নি। বরং ছোটবোনের মতো উপদেশ দিয়েছিল, ভালো করে লেখাপড়া করো, ভালো ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হও, নিজের পরিচয় তৈরী করো। দেখবে আমার চেয়েও অনেক ভালো ছেলে পাবে। শ্যানিনের মতো বিশ্ব সুন্দরীকেও যে এইভাবে রিজেক্ট করে দেয় সে কোনো সাধারণ পুরুষ না। সে মহাপুরুষ! সেদিন থেকে শ্যানিনের আগ্রহ আরও বেড়ে গেছে অর্ণবের প্রতি। কিন্তু আজকে অরিন এটা কি করলো? শ্যানিনকে পুরনো অতীত মনে করিয়ে এইভাবে কষ্ট দিতে পারলো? শ্যানিনের চোখে জল টলমল করছে। ইতি সেটা বুঝতে পেরে শ্যানিনকে পেছন থেকে ধরে বললো,
” মাইন্ড করিস না। ওর তো মাথা ঠিক নেই। তোরও কি মাথা ঠিক নেই? এই অবস্থায় ওর কথা ধরিস না প্লিজ। ও রায়হানের শোকে পাগল হয়ে গেছে।”
শ্যানিন ঝারি মেরে ইতির হাত সরিয়ে দিল। তারপর চোখ মুছতে মুছতে কেবিন থেকে বের হয়ে গেল। মারিয়া অরিনকে উদ্দেশ্য করে বললো,
” এইবার শান্তি হয়েছে তোর? কি দরকার ছিল এই কথাটা বলার?”
অরিন নিজেও বিস্মিত। কি করে তার মুখ দিয়ে এমন একটা কথা বের হয়ে গেল? আসলেই কথাটা বলা উচিৎ হয়নি। নিশ্চয়ই শ্যানিন খুব কষ্ট পেয়েছে। রাগ খুব মারাত্মক জিনিস। রাগের মাথায় মানুষ কত জঘন্য কথা বলে ফেলতে পারে। সেটা আজ নিজেকে দিয়ে অরিন বুঝলো। কিছুক্ষণ মাথায় হাত ঠেকিয়ে চুপচাপ সিটে বসে থাকলো অরিন। তারপর নিজের ব্যাগ খুলে একটা অরিও বিস্কিটের প্যাকেট নিয়ে কেবিন থেকে বের হলো। শ্যানিনকে মানাতে হবে।

শ্যানিন অনেকটা দূরে লোকাল সিটে বসে আছে। ট্রেনের অধিকাংশ জায়গাই ফাঁকা। শ্যানিন একদম পেছনের সিটে গিয়ে জানালার সাইডে বসেছে। ওর মুখ জানালার দিকে ঘুরানো। অরিন খুব ভালো করেই জানে, শ্যানিন এখন ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদছে। এই মেয়েটা যে এতো ইমোশনাল বাহিরে থেকে দেখলে বোঝাই যায় না। অরিন শ্যানিনের পাশের সিটে বসলো। শ্যানিন অরিনের উপস্থিতি টের পেয়ে আরেকটু দূরে সরে বসলো। অরিন আরও কাছে এসে একদম শ্যানিনের গা ঘেষে বসলো। এরপর নরম গলায় বললো,
” স্যরি।”
শ্যানিন উত্তর দিল না। ঘুরে তাকালোও না। অরিন বিস্কিটের প্যাকেট খুললো। শ্যানিনের দিকে প্যাকেটটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
” নে, ছোটবেলার মতো অর্ধেক তোর, অর্ধেক আমার।”
শ্যানিন হাত দিয়ে ঠেলে বিস্কিটের প্যাকেট সরিয়ে দিল। অরিন বললো,
” এতো রাগ? বলেছি না স্যরি? আমার বয়ফ্রেন্ডের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। কাঁদবো আমি। আর আমাকে থামাবি তুই। সেটা না করে তুই নিজেই কাঁদছিস? তুই কেমন বেস্টফ্রেন্ড?”
শ্যানিন তাও প্রত্যুত্তর করলো না। অরিন এইবার শ্যানিনের মুখ ধরে ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো,
” এই, স্যরি বললাম তো। এইযে দ্যাখ কান ধরছি। আর জীবনেও তোকে কিছু বলবো না আমি। উঠ-বস করতে হবে?”
শ্যানিন একহাতে চোখের পানি মুছে বললো,
” লাগবে না।”
” সত্যি? তাহলে তোর রাগ ভেঙেছে?”
” রাগ ভাঙবে। যদি তুই দু’টো কাজ করিস।”
” ঠিকাছে বল। তোর রাগ ভাঙানোর জন্য আমি কি করতে পারি?”
” প্রথমত, ইলহান ভাইয়ার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।”
” আচ্ছা চাইবো। আর দ্বিতীয়?”
শ্যানিন কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বললো,
” রায়হানকে তুই একদম ভুলে যাবি। আর কখনও ওর নাম যেনো তোর মুখে না শুনি।”
অরিনের মুখের হাসি হাসি ভাবটা উঁবে গেল মুহুর্তেই। সে দুনিয়া ভুলে থাকতে পারবে কিন্তু রায়হানকে ভুলে কিছুতেই থাকতে পারবে না। তাছাড়া অরিনকে সবার আগে জানতে হবে রায়হানের কি আসলেই বিয়ে হয়েছে? নাকি অরিনই ভুল খবর শুনেছে? যদি রায়হানের বিয়ের খবর সত্যি হয় তাহলে অরিন যেভাবেই হোক ওকে খুঁজে বের করবে। অন্তত একবার রায়হানের সঙ্গে দেখা করবে। আর জিজ্ঞেস করবে,” কি অপরাধ ছিল আমার? কেনো এতোবড় শাস্তি দিলে?” মনে মনে এসব চিন্তা করলেও আপাতত শ্যানিনের রাগ ভাঙানোর জন্য অরিন স্বীকার করে নিল যে সে কখনও রায়হানের নাম মুখে আনবে না। কিন্তু মনে মনে ঠিকই সেই নাম সাতবার জপ করলো। শ্যানিন অরিনের উত্তরে সন্তুষ্ট হয়ে ওর হাত থেকে বিস্কিটের প্যাকেট নিল। দু’জন মিলেমিশে চকলেট বিস্কিট খেতে লাগলো। হঠাৎ অরিন দেখতে পেল ইলহান ট্রেনের বাথরুম থেকে হাত-মুখ ধুঁয়ে বের হচ্ছে। অরিনের সাথে চোখাচোখি হতেই আবার বাথরুমের দিকে চলে গেল ইলহান। অরিন বুঝলো না। কি হলো?আরেকটু ভালো করে তাকিয়ে দেখলো ইলহান আয়নায় দাঁড়িয়ে ভেজা চুলগুলো হাতের সাহায্যে ব্যাক ব্রাশ করছে। তারপর অরিন যে গালে পরপর দুইটা চড় মেরেছিল সেই গাল ভালো করে বেসিনে ধুঁয়ে নিচ্ছে। চড়ের কারণে গালের চামড়া গোলাপী হয়ে আছে। মনে হয় পাঁচ আঙ্গুলের দাগও বসে গেছে। অরিনের খুব মেজাজ খারাপ লাগলো। কারণ ইলহান এমনভাবে গাল ধুঁয়ে নিচ্ছে যেনো ওর গালে আবর্জনা লেগে আছে। অরিন নিজের হাতের দিকে তাকালো। তার হাত কি এতোই নোংরা যে সে চড় মেরেছিল বলে এতোবার করে গাল ধুতে হবে? তাও আবার অরিনকে দেখিয়ে দেখিয়ে গাল ধোঁয়া হচ্ছে। অর্থাৎ ইলহান অরিনকে বুঝাতে চাইছে,” দ্যাখ মেয়ে, তোর ময়লা হাতের আবর্জনা কিভাবে আমার ঝকঝকে তকতকে গাল থেকে তুলে পরিষ্কার করছি। আর কখনও যদি ওই নোংরা হাতে আমাকে চড় দিতে আসিস তাহলে তোর হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার মাখিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দিবো। বেয়াদব!”
অরিন মনে মনে এসব ভেবে খুব আপসেট হয়ে পড়লো। অথচ ইলহান চোখে, মুখে, মাথায় পানি ঢালছে যেনো নিজেকে শান্ত রাখতে পারে। একসাথে দুইটা চড় খেয়ে ওর নাক-মুখ দিয়ে প্রায় ধোঁয়া বের হচ্ছিল। রাগের ধোঁয়া। আর এখন অরিনকে দেখে মাথায় আগুন ধরে গেছে। মাথা ঠান্ডা করতেই সে বারবার হাত-মুখ ধুচ্ছে। মাথায় পানি দিচ্ছে। খুব বেশি রাগ উঠে গেলে ইলহান এমনই করে। এটা তার রাগ নিয়ন্ত্রণের কৌশল। তাছাড়া বারবার সে অরিনের দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে এটাই বুঝাতে চাইছে যে সে কত পরিমাণে রেগে আছে। এজন্যই বার-বার গালে হাত দিচ্ছে
অরিন যদি এখন এসে ওর পা জড়িয়ে ধরে কাঁদে তাও এই রাগ কমবে না। অথচ অরিনের তখন মন চাইছিল ইলহানকে আবার একটা চড় মেরে ওর পরিষ্কার করা গাল আরও বেশি নোংরা করে দিতে।

কি আশ্চর্য! যে ছেলেটিকে দেখামাত্রই অরিন পরপর দু’বার চড় দিয়েছিল তার সামনেই বর্তমানে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বসে থাকতে হচ্ছে। আর ইলহান তার মন্ত্রমুগ্ধ দৃষ্টি নিষ্পলকভাবে অরিনের দিকে তাক করে রেখেছে। অরিন দেয়ালঘড়ির দিকে তাকালো। পাঁচটা বেজে বিশমিনিট। অরিন বললো,
” তিনঘণ্টা হয়ে গেছে। এইবার অন্তত যেতে দিন আমায়।”
ইলহান নিষ্পলক তাকিয়ে থেকেই বললো,
” উহুম, আরও আঠাইশ মিনিট বাকি।”
অরিন ঠোঁট গোল করে একটা বিরক্তির নিশ্বাস ছাড়লো। এই সাইকো তাকে ঝামেলায় না ফেলে ছাড়বে না মনে হচ্ছে। তিনঘণ্টা ধরে কেউ এক জায়গায় বসে থাকতে পারে? হাত-পা অবশের মতো হয়ে গেছে। অরিন একটুও নড়াচড়া করতে পারছে না। তাকে চেয়ারের সাথে শক্তভাবে বেঁধে রাখা হয়েছে। অন্তত এই বাঁধনটা খুলে দিক। সাইকোপ্যাথ সেটাও করছে না। ইলহান বললো,
” কথা বলো অরি। চুপ করে থাকতে ভালো লাগছে না।”
” কি বলবো?”
” যা ইচ্ছা বলো। তবুও বলো।”
” আমার এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।”
” তাও কথা বলতে হবে। নাহলে কিন্তু টাইমিং ডাবল হয়ে যাবে। তিনঘণ্টা আঠাইশ মিনিটের জায়গায় ছয়ঘন্টা ছাপ্পান্ন মিনিট।”
কি যন্ত্রণা! অরিন না পারতে কথা বললো,
” ঠিকাছে তাহলে একটা প্রশ্ন করি।”
” একটা কেনো?একশোটা করো।”
” আপনি কিভাবে জানলেন আমি একা বাড়ি ফিরছি? আমাকে কিডন্যাপ করার জন্য কি আগে থেকেই এতো ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন?”
ইলহান হেসে ফেললো। ওর হাসিটা দেখে মনে হলো অরিনের প্রশ্নটা খুবই অযৌক্তিক। অরিন বললো,
” হাসছেন কেনো?”
” তুমি বেডরুম থেকে বাথরুমে গেলেও আমার কাছে খবর চলে আসে অরি। সেইখানে কিনা তুমি রাত একটা বাজে একা একা বাসায় ফিরবে আর এই খবর আমার কাছে আসবে না? তা কি করে হয়?”
অরিনের হৃৎপিন্ডটা প্রবল বেগে লাফিয়ে উঠলো। এতোদিন সে ভাবতো ইলহান তাকে ভয় দেখানোর জন্য এসব বলে। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে সত্যিই ইলহান তাকে ফলো করে। খুব মারাত্মকভাবে ফলো করে! ও মাই গড! এই সাইকোটা আর কি কি করে আল্লাহ মালুম। এখন যদি ইলহান বলে, অরিনকে মাঝরাতে বাসা থেকে বের করার জন্য সে নিজেই মারিয়ার ছোটচাচাকে বাইক এক্সিডেন্ট করিয়েছে তাও অরিন একটুও অবাক হবে না। কারণ ইলহানের দ্বারা সবকিছু সম্ভব। অরিন ঢোক গিলতে চেষ্টা করলো। আশ্চর্য! ওর গলা এতো শুকিয়ে যাচ্ছে কেনো?
” কষ্ট হচ্ছে অরি? আমি কি তোমার হাতের বাঁধন খুলে দিবো?”
” যাক, এতোক্ষণে অন্তত বুঝতে পারলেন যে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বসে থাকতে আমার কষ্ট হচ্ছে।”
” তুমি এটা আগে বলবে না? এখনি খুলে দিচ্ছি।”
ইলহান অরিনের কাছে আসলো হাত-পা খুলে দেওয়ার জন্য। অরিন বললো,
” আমাকে তুলে আনতে কাদের পাঠিয়েছেন আপনি? লজ্জা করে না? গুন্ডা ভাড়া করে মেয়ে কিডন্যাপ করেন?”
” ঠিকাছে। এরপর থেকে নিজেই গুন্ডা হয়ে যাবো। তারপর তোমাকে আমি নিজেই তুলে আনবো। তখন চলবে অরি?”
” আমার নাম অরিন।”
” কিন্তু আমার কাছে তুমি অরিন নও অরি। অরি মানে জানো? যে অনিষ্ট করে। তুমি তো আমার জীবনের অনিষ্ট সেই কবেই করে দিয়েছো। তোমাকে দেখার পর থেকে আমার সর্বনাশ হয়েছে। তাই আমার কাছে তুমি অনিষ্টকারী, অরি।”
অরিন মনে মনে বললো,” তাহলে আপনি আমার জীবনের অরিন্দম হয়ে যান। অরিন্দম মানে জানেন? যে সকল অনিষ্ট বিনাশ করে। দয়া করে আমাকেই বিনাশ করে ফেলুন।”

চলবে ইনশাল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here