মেঘের পরে রংধনু পর্ব-২১

0
998

#মেঘের_পরে_রংধনু
#পর্ব_২১
লিখা: Sidratul Muntaz

ফয়সাল জোয়ার্দার সন্ধ্যায় বাসায় ফিরলেন হাত ভর্তি মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে৷ হালিমা এতো কিছু দেখে চোখ কপালে তুলে বললেন,
” ওমা, এসব কি? এতো মিষ্টি কেনো? কোনো সুখবর আছে নাকি?”
ফয়সাল সাহেব হাসি মুখে চেয়ারে বসে অফিসের ব্যাগ কাঁধ থেকে নামিয়ে ডাইনিং টেবিলে রাখতে রাখতে বললেন,
” সুখবর মানে? দারুণ সুখবর। অরিনকে ডাকো, অর্ণভ কই? সবাইকে আসতে বলো।”
” আগে আমাকে বলো, কাহিনী কি?”
” কাহিনী হচ্ছে, অরিনের বিয়ে ঠিক করে ফেললাম।”
হালিমা খুশিতে চোখ বড় বড় করে ফেললেন। মোনাজাতের মতো হাত উপরে তুলে বললেন,
” আলহামদুলিল্লাহ! এই প্রথম তুমি সঠিক সময়ে একটা সঠিক কাজ করলে।”
” সঠিক সময়ে মানে? আমি তো ভাবলাম তুমি এতো জলদি বিয়ের কথা শুনে আরও রেগে যাবে।”
” রেগে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। বরং আমি খুব খুশি হয়েছি। খুশিতে আমার দুই রাকাত নফল নামায আদায় করতে ইচ্ছে করছে।”
” কিন্তু এখন আমি যেটা বলবো সেটা শুনলে মনে হয় এতো খুশি থাকবে না।”
” কেনো?”
” বিয়েটা এই সপ্তাহের মধ্যেই হচ্ছে।”
” বলো কি? এতো অল্প সময়? আচ্ছা হোক, তাও হোক ৷ ছেলে ভালো হলেই হলো। ছেলে কি করে? দেখতে কেমন?”
” দেখতে তো মাশআল্লাহ। অরিনের বান্ধুবি আছে না শ্যানিন? তাদের বাড়ি থেকে প্রস্তাব এসেছে। এইবার বুঝে নাও ছেলে কেমন?”
হালিমার হাসি মাখা মুখে অমাবস্যা ভর করলো যেনো। তিনি টেবিল থেকে একটা মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে ছুঁড়ে ফেললেন। আরও প্যাকেট ফেলতে যাচ্ছিলেন। ফয়সাল সাহেব অতি দ্রুত স্ত্রীকে থামালেন।
” আরে করো কি? এতো দামী মিষ্টি ফেলে দিচ্ছো কেনো?”
” তুমি কোন সাহসে ওদের এমন জঘন্য প্রস্তাবে রাজি হলে? তুমি কি মেয়ের জন্মদাতা না জন্মশত্রু?”
” মানেটা কি? এখানে শত্রু হওয়ার মতো কি হলো? আর জঘন্য প্রস্তাব মানে? তুমি নিজেই তো বিয়ের কথা শুনে খুশি হলে।”
” খুশি হয়েছিলাম কারণ ভেবেছিলাম অন্য জায়গায় বিয়ে হলে অরিনের মাথা থেকে এই বিয়ের ভূতটা অন্তত নামবে। কিন্তু তুমি তো আবার সেই একই ভূত কাঁধে করে তুলে এনেছো দেখছি।”
” ও, তার মানে অরিনও বিয়েতে রাজি? তাহলে তো কোনো সমস্যাই নেই।
” অবশ্যই সমস্যা আছে। আমি রাজি না। অর্ণভও রাজি না। মা হয়ে মেয়ের এতোবড় সর্বনাশ কি করে হতে দেই? হাজার হলেও অরিন আমার পেটের মেয়ে। যদি সতীনের মেয়েও হতো তাহলেও আমি ওর সাথে এতোবড় অন্যায় করতাম না।”
ফয়সাল সাহেব ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললেন,” আজব! এখানে অন্যায় করার প্রসঙ্গ আসছে কেনো?”
” তোমার কাছে এটা অন্যায় লাগছে না? ও, লাগবে কি করে? অরিনের সাথে সাথে বুড়োটা তোমারও ব্রেইনওয়াশ করে দিয়েছে। বুঝেছি আমি।”
ফয়সাল সাহেব টেবিল থেকে জগ নিয়ে এক গ্লাস পানি ঢেলে বললেন,
” নাও, আগে পানিটা খেয়ে মাথা ঠান্ডা করো। তারপর আমি একটা কথা বলছি ঠান্ডা মাথায় শোনো। না বুঝে চেচাবে না।”
হালিমা পানি খেলেন না। কিন্তু স্বামীর কথা শোনার আগ্রহ তৈরী হলো মনে। তিনি চেয়ার টেনে বসে টেবিলে হাত রেখে গুরুগম্ভীর গলায় বললেন,
” কি?”
” দেখো, ছেলে-মেয়ে এখন বড় হয়েছে। ওদের যুগটা তো আমাদের যুগের মতো না। এখনকার ছেলে-মেয়েরা অনেক মডার্ণ। এই যুগে প্রেম-পীড়িতি তো খুব সাধারণ বিষয়। তাছাড়া শায়িখ সাহেব খুবই ভালো মানুষ। আমি আজকে উনার সাথে হসপিটালে দেখা করতে গেছিলাম।”
” নিজের মেয়ে অসুস্থ হলো তাও তুমি দেখতে গেলে না আর শায়িখ সাহেবকে দেখতে ঠিকই ছুটে গেলে?”
” আহা, তো কি হয়েছে গেলে? বয়স্ক মানুষ। কখন মরে যায় তার নেই ঠিক! অরিন তো আর মরে যাচ্ছিলো না। আমি বাসায় এলে তো ওকে দেখতেই পাবো। এখন আমার কথা শোনো, শায়িখ সাহেবের সাথে আজ আমি প্রায় একঘণ্টার মতো কথা বলেছি। উনার ভাব-ভঙ্গি দেখে আমার যা মনে হলো, উনি খুব ভয়ে আছেন। হয়তো কঠিন কোনো রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি চান অসুস্থ হয়ে একদম বিছানায় পড়ে যাওয়ার আগেই বিয়ের ঝামেলাটা সেরে ফেলতে।”
” আর তুমিও তাতে রাজি হয়ে গেলে?”
” রাজি হবো না কেনো? আমার মায়া লেগেছে।”
” নিজের মেয়ের জন্য মায়া লাগলো না? আরে ওই বুড়ো তো বউ চায় না। চায় রেডিমেট আয়া। অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে গেলে তাঁর সেবা-যত্ন করার জন্য, প্রস্রাব-পায়খানা পরিষ্কার করার জন্য কাউকে তো লাগবে। এজন্যই অরিনকে নিতে চাইছে।”
” কি আশ্চর্য! এজন্য চাইবেন কেনো? উনার কি টাকার অভাব আছে? আমার মতো ছোট-খাটো চাকরিজীবি না তিনি। বিরাট বড় ব্যবসায়ী। তাঁর জন্য আয়ার অভাব হবে না। বরং ওই বাড়িতে গেলে অরিনকে কিছুই করতে হবে না। পায়ের উপর পা তুলে রাণীর মতো থাকবে আমার মেয়ে।”
” আমার কোনো দরকার নেই মেয়েকে রাণী বানানোর। পাষণ্ড, বিবেকহীন বাবা তুমি। নিজের মেয়ের জন্য মায়া লাগে না। কোথাকার কোন আধবুড়ো দামড়ার জন্য মায়ায় মরে যাচ্ছো। ছি!”
” আধবুড়ো দামড়া? এইসব কি ধরণের সম্বোধন হালিমা? ”
হালিমা কোনো জবাব না দিয়ে শাড়ির আঁচল ঠিক করতে করতে অর্ণভের ঘরে গেলেন। অর্ণভকে ঘর থেকে ডেকে বৈঠক ঘরে ফয়সাল সাহেবের কাছে নিয়ে এলেন। অর্ণভ রাগান্বিত হয়ে বললো,
” বাবা, এইসব কি শুনি? তোমারও কি অরিনের মতো মাথা গেছে?”
” আমার মাথা মাথার জায়গাতেই আছে। বরং তোদের মা-ছেলের মানসিক সমস্যা হয়েছে। একটা নরমাল বিষয় নিয়ে এতো সিন ক্রিয়েট করার কি আছে বুঝলাম না।”
” নরমাল বিষয়? বাবা এটা তোমার নরমাল কিভাবে মনে হয়? তোমার মেয়ের সারাজীবনের প্রশ্ন। ওর লাইফটা কি শেষ করে দিতে চাও?”
” গাঁধার মতো কথা বলছিস কেনো? লাইফ শেষ হবে মানে? বিয়ে হলেই মানুষের লাইফ শেষ হয়ে যায়? তোর মায়েরও তো আমার সাথে বিয়ে হয়েছে৷ তার কি এখন লাইফ শেষ হয়ে গেছে?”
” বাবা স্যরি, কিন্তু আমি আর না বলে পারছি না। তুমি টাকার লোভে অন্ধ হয়ে গেছো। এজন্য এতো ডেঞ্জারাস বিষয়টাকেও নরমালাইজ করার জন্য আজে-বাজে যুক্তি দিচ্ছো।”
” আমি টাকার লোভে অন্ধ হয়ে গেছি? ছাগলের বাচ্চা বলে কি! মেয়েকে ভালো জায়গায় বিয়ে দেওয়ার আকাঙ্খাকে যদি টাকার লোভে অন্ধ হয়ে যাওয়া বলে তাহলে পৃথিবীর সব বাবাই টাকার লোভে অন্ধ। তুইও একদিন টাকার লোভে অন্ধ হবি। যেদিন তুই বাবা হবি।”
” তোমার মতো নিকৃষ্ট বাবা আমি জীবনেও হতে চাই না।”
অরিন চিৎকার-চেচামেচী সব দরজার ফাঁক থেকে দেখছিল। হঠাৎ ভুল করে দরজায় আওয়াজ করে ফেললো। সবার নজর অরিনের দিকে গিয়ে ঠেকলো। ফয়সাল বললেন,
” অরিন, তুই এদিকে আয় মা।”
অরিন নতমাথায় দরজার আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো। তার জন্যই বাসায় এতো ঝগড়া হচ্ছে৷ অরিনের খুবই খারাপ লাগছে। ফয়সাল বললেন,
” বিয়েটা তো অরিনের। সারাজীবন সংসার ও করবে। তাই অরিন যেই সিদ্ধান্ত নিবে সেটাই আমরা ভেবে দেখবো। অরিন, তুই-ই বল মা। এই বিয়ে করতে কোনো আপত্তি আছে??”
অরিন বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে ‘না’ বলতে নিচ্ছিলো কিন্তু ভাইয়া আর মা’র মুখের দিকে তাকাতেই দেখলো তারা দু’জন একসাথে অরিনকে চোখ রাঙানি দিচ্ছে। অরিন ভয় পেয়ে বললো,
” তোমাদের যা ভালো মনে হয় তাই করো। আমি যেকোনো সিদ্ধান্ত মেনে নিতে রাজী।”
ফয়সাল সাহেব সন্তোষজনক হাসি দিয়ে বললেন,” বাহ, এই না হলে আমার মেয়ে! আমার তো সিদ্ধান্ত একটাই। বিয়েটা হবে এবং এই সপ্তাহেই হবে। কারো যদি দ্বিমত থাকে তাহলে সে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে পারে।”
হালিমা বললেন,” তাহলে আমি আমার ছেলেকে নিয়ে এখনি বাসা থেকে বের হয়ে যাবো।”
ফয়সাল সাহেব অত্যন্ত স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললেন,” দরজা ওইদিকে।”
হালিমা আরও রেগে বললেন,” অর্ণভ, ট্রেনের টিকিট কাট। আজই তোর মামার কাছে চট্টগ্রাম চলে যাবো।”
অর্ণভ বললো,
” হ্যাঁ সেটাই ভালো। আমারও এই বাড়িতে থাকার ইচ্ছে, রুচি কোনোটাই নেই। তোমরা বাপ-মেয়ে মিলে যা ইচ্ছে তাই করো।”
অরিন মুখে হাত দিয়ে কেঁদে ফেললো। মা’কে জড়িয়ে ধরে বললো,
” ক্ষমা করো মা। আমি এই বিয়ে করবো না। আর কোনোদিন বিয়ের কথা বলবো না। তাও তোমরা এমন করো না প্লিজ।”
” এইটা আমাদের না বলে তোর বাবাকে বল।”
অরিন বাবার কাছে গিয়ে বললো,” বাবা প্লিজ, মা’কে থাকতে বলো।”
ফয়সাল সাহেব চেয়ারে বসে ফোন টিপতে টিপতে নির্বিকারভাবে বললেন,” যার ইচ্ছা হবে থাকবে, যার ইচ্ছা হবে চলে যাবে৷ আমার কাউকে তেল মারতে ইচ্ছা করছে না।”
অর্ণভ বললো,” তুমি তো চাইছোই আমরা চলে যাই। যেনো বিয়েতে আর কোনো বাঁধা না থাকে। অরিন, বাবা কিন্তু তোকে বোঝা মনে করে এই কথা জেনে রাখ। নাহলে এইরকম একটা প্রস্তাবে কখনোই রাজী হতো না। তুই হলি বাবার কাছে আপদ। কোনোমতে তোকে বাড়ি থেকে বিদায় করতে পারলেই বাঁচা গেল। বুঝেছিস?”
ফয়সাল সাহেব মুচকি হেসে বিরবির করে বললেন,” গর্ধবের মতো কথা। গরু একটা!”
অর্ণভ হাত ভাজ করে বললো,” বাবা তুমি তাহলে একটা কাজ করো। তুমিও শায়িখ সাহেবের মেয়ে শ্যানিনকে বিয়ে করে নাও। তাহলে চোরে চোরে মাস্তুত ভাই। ব্যাপারটা ভালোই জমবে।”
ফয়সাল সাহেব কথাটা শুনে এতো রেগে গেলেন যে টেবিল থেকে স্টিলের মগ নিয়ে অর্ণভের মাথায় ছুঁড়ে মারলেন। অর্ণভ আঁটসাঁট হয়ে মাথা নিচু করে ফেললো। মগটা অর্ণভের মাথা অতিক্রম করে পেছনে চলে গেছে। মাথায় আঘাত লাগেনি। হালিমা বললেন,
” আরে, এই তুমি কোন সাহসে আমার ছেলেকে মারো?”
ফয়সাল সাহেব রুক্ষ মেজাজ নিয়ে বললেন,” মারবো না তো কি করবো? গাঁধার বাচ্চা কি বলে এইসব? আমি শ্যানিনকে বিয়ে করবো মানে?”
” ঠিকই তো বলেছে। শ্যানিনের বাপ বুইড়া হয়ে যদি আমার মেয়েকে বিয়ে করতে পারে তাহলে তুমি কেনো পারবে না? একবার বলে দেখো তো, তার মেয়েকে তোমার সাথে বিয়ে দেয় নাকি? তুমি তো ঠিকই রাজী হয়েছো৷ তিনি রাজী হবেন?”
” আজব কাহিনী! কেনো শায়িখ সাহেব তার মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে দিতে রাজী হবেন? ”
” তাহলে তুমি কেনো তোমার মেয়ে উনার সাথে বিয়ে দিতে রাজী হয়েছো?”
” আরে, আমি কি উনার কাছে বিয়ে দিচ্ছি অরিনকে? আমি তো বিয়ে দিচ্ছি উনার ছেলের কাছে।”
হালিমা আর অর্ণভ তব্দা লেগে যাওয়ার মতো স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। বোকার মতো একজন- আরেজনের সাথে একবার চোখাচোখি করলেন। কিছুক্ষণ সবাই নিরব। একটু পর হালিমা বললেন,
” কার সাথে? আবার বলো তো।”
ফয়সাল সাহেব এবার একটু জোরে শব্দ করেই বললেন,” অরিনের বিয়ে হচ্ছে শায়িখ সাহেবের ছেলের সাথে। পাত্রের নাম ইলহান মাহদী।”
হালিমা আবার অর্ণভের দিকে তাকালেন। অর্ণভ ইতস্তত করে বললো,
” আমরা তো ভেবেছি পাত্র শায়িখ সাহেব নিজেই।”
অরিন কথাটা শুনে এতো হতভম্ব হলো যে ওর হাতের ভাজ পর্যন্ত খুলে পড়ে গেল।
” শায়িখ সাহেব পাত্র কেনো হবেন? উনি এই বয়সে বউ রেখে আরেকটা বিয়ে করতে যাবেন নাকি? পাগলের মতো চিন্তা-ভাবনা! পাগলের কারখানা হয়েছে আমার বাসায়। যেমন বেক্কল মা তেমন বেক্কল ছেলে।”
হালিমা আঙুল উঁচু করে বললেন,” এই সহজ কথাটা তুমি এতোক্ষণ বুঝিয়ে বললে না কেনো?”
” আমি কি আর জানি তোমরা যে এমন আজব ধারণা নিয়ে বসে আছো?”
ফয়সাল সাহেব রেগে-মেগে অফিস ব্যাগ নিয়ে শোবার ঘরে চলে গেলেন। অর্ণভ বললো,
” মা, বাবা কিন্তু আমার সাথে তোমাকেও বেক্কল বলেছে।”
” ঠিকই তো বলেছে। তোর বাপের সাথে সংসার করতে করতে আমি আসলেই বেক্কল হয়ে গেছি। আগে যদি এই সহজ কথাটা বুঝিয়ে বলতো তাহলে কি এতো ঝামেলা হতো? শুধু শুধু ঝগড়াঝাঁটি করলাম। তোর বাপ একটা রামবলদ। আর তুই হলি সেই রামবলদের ছেলে হামবলদ।”
হালিমা কথা সমাপ্ত করে রান্নাঘরে ঢুকলেন। অর্ণভ গলার স্বর উঁচু করে বললো, ” তুমি নিজেই তো প্রথমে আমাকে উল্টা-পাল্টা বুঝিয়েছো মা। এখন আমি হামবলদ হয়ে গেলাম?”
অরিন কোমরে হাত গুজে অর্ণভের দিকে তাকিয়ে বললো,
” সিরিয়াসলি ভাইয়া? তোমরা সত্যিই এসব ভেবেছো?”
অর্ণভ এক কান ধরে বললো,” স্যরি, মিস্টেক হয়ে গেছে।”
অরিন আর কিছু না বলে ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দিল। সকালে অর্ণভের ধমকের কথা মনে করে এখন তার আবারও কান্না আসছে। এদিকে অরিনের ধাম করে দরজা আটকানোর শব্দটা অর্ণভের বুকের ঠিক মাঝখানে আঘাত করলো। সে মনে মনে ভাবলো, অরিনের কাছে ক্ষমা চাওয়া দরকার। রাগের বশে মেয়েটাকে কত উল্টা-পাল্টা কথা বলে ফেলেছিল।
হালিমা রান্নাঘরের বেসিনে দাঁড়িয়ে প্রথমে মুখ ধুঁয়ে নিলেন। খুশিতে তাঁর কান্না পেয়ে গেছে। তিনি স্থির হয়ে দাঁড়িয়েও থাকতে পারছেন না। দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে নিজেকে শান্ত করলেন। তিনি কখনও স্বপ্নেও কল্পনা করেননি যে তাঁর কালো মেয়েটার জন্য এতো ভালো বিয়ের ঘর আসবে। আচ্ছা, ছেলেটার চরিত্র ভালো তো? শুধু চেহারা আর টাকা-পয়সা দেখেই তো মেয়েকে তুলে দেওয়া যায় না। হালিমা শুনেছেন ইলহান নাকি অস্ট্রেলিয়ায় ছিল পাঁচ-ছয়বছর। সেখানে গিয়ে আবার কোনো বদভ্যাস তৈরী হয়নি তো? বেশিরভাগ সুন্দর ছেলের চরিত্র সুন্দর হয় না। এই ছেলে কেমন হবে কে জানে? ভালোভাবে খোঁজ-খবর নিতে হবে।
অরিন সকালে ঘুম থেকে উঠে জানতে পারলো তার নামে একটা পার্সেল এসেছে। ডেলিভারিম্যান দরজার বাহিরে দাঁড়ানো। অরিন দরজার সামনে গিয়ে দেখলো পিজ্জাবার্গ থেকে কেউ তার জন্য গিফট পিজ্জা পাঠিয়েছে। অরিন জিজ্ঞেস করলো,
” কে দিয়েছে?”
ডেলিভারিম্যান হেসে বললো,” বক্স খুললেই নাম জানতে পারবেন।”
অরিন দরজা আটকে পিজ্জার বক্সটা খুলেই চমকে উঠলো। বিরাট মাপের পিজ্জা!অরিনের পছন্দের সসেজ কার্ণিভাল। পিজ্জার সাথে একটা হলুদ কাগজের চিরকুটও আছে। অরিন চিরকুট খুলে দেখলো প্রথমেই ইংরেজী অক্ষরে বোল্ড করে লেখা, ‘স্যরি।’ তারপর নিচে কিছু বাংলা লেখা।
” বড় ভাই হয়ে ছোট বোনের কাছে ক্ষমা চাইছি। বিষয়টা কি লজ্জার? হোক লজ্জার। তাও পিজ্জা খেয়ে আমাকে ক্ষমা করে দে। তোকে কত আজে-বাজে কথা বলেছি। আসলেই আমি হামবলদ। মায়ের কথাই ঠিক। তুই সব এক কামড়ে ভুলে যা তো! কিন্তু এতোবড় পিজ্জা আবার একা খেয়ে বসে থাকিস না। সামনে না তোর বিয়ে? এখন এতো খেলে তো ভূড়ি বেড়ে যাবে। তখন রোমিও’র পাশে তোকে মানাবে না। রোমিও’র বাপ বুড়োটার পাশেই মানাবে। মানে শায়িখ সাহেব। দেখা যাবে তাঁর সাথেই তোকে বিয়ে দিয়ে দিতে হচ্ছে। কারণ রোমিও তোর এত্তো মোটা ভূড়ি দেখে ভয় পেয়ে পালিয়ে গেছে। কি সর্বনাশ ঘটবে বলতো? তাই বলছি ডায়েটে থাক,কম খা। ক্ষমা করার জন্য যতটুকু খাওয়ার প্রয়োজন ততটুকুই খা।
-তোর হামবলদ ভাই।”
অরিন চিরকুটটা বুকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো,” তোমাকে খুব মিস করবো ভাইয়া। আমি তোমাদের ছেড়ে কোথাও যেতে চাই না। কোত্থাও না!”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here