#পাগল_প্রেমিকা
#sharmin_akter_borsha (লেখিকা)
#পর্ব_২৮
হাত ছাড়িয়ে বাড়ির দিকে দৌঁড় দিলে পেছন থেকে অভ্র আর নিলয় ও রিমনের সাথে….
দরজার দিকটায় আগুন খানিকটা কম কম রিমন, অভ্র, নিলয় এক সাথে দরজায় লাথি দিলে দরজা ভেঙে ভেতরের দিকে উল্টে পরে। তিনজনে এক সাথে দরজার উপর দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলো। রুমের মধ্যে ঠিক মাঝখানে একটা মেয়ে উপুড় হয়ে পরে আছে। উপর থেকে একটা অর্ধেক কাঠ আঁধা জলন্ত নিচে পরতে যাবে তার আগেই রিমনের চোখে পরে গেলো দৌঁড়ে নিচ থেকে হাত দিয়ে টান দিয়ে সরিয়ে নিলো নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে একটু দূরে বসে পর। চুল দিয়ে মুখটা ঢেকে আছে। হাত দিয়ে চুলগুলো সরিয়ে বৃষ্টি কে দেখে দুইচোখ দিয়ে পানি ছেড়ে দিলো কপালে আলতো পরশ একে দেয় নিজের বুকের সাথে আবারও আগের ন্যায় শক্ত করে জরিয়ে ধরে। তখন অভ্র ও নিলয় রিমনের উদ্দেশ্যে বলে…
‘ এখন চল আমরা বের হই। পরে তো একজনও বের হতে পারবো না। ‘ নিলয় বলল।
‘ বাহিরে একবার চল তারপর যত ইচ্ছে জরিয়ে ধরে রাখিস। অভ্র বলল!
প্রতিউত্তরে রিমন ওদের দুজনের দিকে চোখ বুলালো কিছু না বলেই বৃষ্টি কে পাঁজা কোলে তুলে নেয়।
চারজনে এক সাথে তো বের হওয়া যাবে না আর দু’জন করেও বের হওয়া যাবে না। তাই সবার আগে রিমন বের হল বৃষ্টি কে নিয়ে পেছনে অভ্র আর নিলয়ও বের হয়ে আসল। এই বাড়ির সামনে থেকে চলো গেলো। ক্লাবের সামনে নিয়ে আসলো বৃষ্টির অবস্থা ভালো না। এখনও হুশ ফিরেনি এদিকে রিমি বৃষ্টির এমন অবস্থা দেখে ভয়ে কান্না জুড়ে দেয়। সোহান বলল…
– ওকে এখনই হাসপাতাল নিতে হবে।
রিমন আবারও বৃষ্টি কে পাঁজা কোলে তুলে নিলো। গাড়ির মধ্যে নিয়ে শুয়ে দেয়। গাড়ি চালাচ্ছে সোহান নিজেই রিমন বৃষ্টিকে কোলে নিয়ে বসে আছে।
হাসপাতালের সামনে এসে গাড়ি ব্রেক হল। বৃষ্টি কে আবারও পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে হাসপাতালের ভেতরে ছুটতে লাগল মুখ দিয়ে চেচিয়ে যাচ্ছে..
– কেউ আছে নার্স ডাক্তার!
রিমনের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে দৌঁড়ে আসেন দু’জন নার্স, একজন নার্স বলে উঠলেন!
– হসপিটালে এই মুহুর্তে ইমার্জেন্সি তে একজনই ডাক্তার আছে আমি উনাকে ডেকে নিয়ে আসছি।
দ্বিতীয় নার্স প্রথম নার্সকে থামিয়ে দিয়ে বললেন।
– ডাক্তার আহানের কাছে যেতে হবে না। তুমি গিয়ে ডাক্তার নীলকে ইনফর্ম করো। উনি ওর চেম্বারেই আছে আমি একটু আগেই উনাকে উনার চেম্বারে বসে থাকতে দেখেছি যাও তারাতাড়ি গিয়ে বলো পেসেন্ট এর অবস্থা খুবই ক্রিটিকাল।
– এখনই যাচ্ছি।
বৃষ্টিকে অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে দিলো।
____
নার্স মেয়েটা ছুটে চেম্বারের সামনে এসে বিনা অনুমতি নিয়ে ঠাস করে দরজা খুলে দিলো। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে পরার জন্য রেডি হচ্ছিলেন হুট করে দরজা খুলে ভেতরে চলে আসায় বিস্মিত হয়ে গেল। নার্স এর দিকে ভয়ানক দৃষ্টি নিয়ে তাকালেন। কপালের চামড়া ভাজ পড়েছে নার্স এর এমন কর্মকান্ডে উনি বেশ বিরক্ত হয়েছেন সেটা বুঝাই যাচ্ছে উনার মুখ দেখে। নার্স ডাক্তার নীল এর দিকে তাকিয়ে মুখ কাজুবাজু করে ভয়ে মিশ্রিত কন্ঠে বলল..
– স্যার একজন ইমার্জেন্সি পেসেন্ট আসছে উনার অবস্থা খুবই খারাপ আপনি ছাড়া হাসপাতালে এই মুহূর্তে অন্য কোনো ডাক্তার নেই।
– হোয়াট দ্যা হেল! তোমার সাহস হয় কি করে নক না করে উইথ আউট পারমিশন আমার চেম্বার প্রবেশ করার? টেবিলের উপর হাত চাপটে জোর গলায় চেচিয়ে বললেন ডাক্তার নীল।
দাঁড়িয়ে থাকা নার্স হাল্কা কেঁপে উঠলেন ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে থেকেই বললেন..
– আমাকে মার্জিত করবেন স্যার! পেসেন্ট এর অবস্থা খুব ক্রিটিকাল তাই নক বা পারমিশন নেওয়ার কথা মাথা থেকেই উড়ে গিয়েছিল।
– আমার ডিউটি টাইম শেষ আমি এখন বেরই হচ্ছিলাম ইমার্জেন্সি কেবিন এ গিয়ে ওখানের কাউকে বলো। কাঠ কন্ঠে বলল!
নিজের উপর এক রাশ বিরক্ত হচ্ছে ইচ্ছে করছে নিজের চুল নিজেই টেনে ছিড়তে হাসপাতালে সে অনেক বছর ধরেই আছে মাঝেমধ্যে কোনো ভুলক্রুমে ভুল হয়ে গেলে বাকি সব ডাক্তার রা ভুল ধরিয়ে নেয় বা ক্ষমা করে দেয়। কিন্তু ডাক্তার নীল সবার থেকে আলাদা একদম একজন বদমেজাজি ডাক্তার যার মধ্যে মনে হয় কোনো ফিলিংস নেই একদম একটা হৃদয়হীন ব্যক্তি ভুল হলে ক্ষমা করা তো দূরের কথা। হাজার টা কথা না শুনিয়ে তিনি ছাড়বেন না। বাকি দের সাথে সাধারণ ফ্রিলি ভাবে কথা বলা যায় কিন্তু ডাক্তার নীল এর সাথে নয়। উনি সব সময় রেগেই থাকেন চট চট করে কথা বলেন কথায় কোনো রসকষ নেই। রাগ সবসময় নাকের ডগায় থাকে। উনার সাথে কথা বলতে হলে সবাই দুইবার ভাবে ও হিসেব করে কথা বলে না জানি কখন কিভাবে রিয়েক্ট করে। মিলাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবারও কন্ঠস্বর কঠোর করে প্রশ্ন করল..
– এখনও দাড়িয়ে আছো? ডাক্তার নীল আর কিছু বলার আগেই দরজার সামনে পূর্ণা এসে দাঁড়াল আর মিলাকে উদ্দেশ্য করে বলল।
– তোকে কখন বলেছি স্যারকে নিয়ে যেতে ওইদিকে বৃষ্টির অবস্থা খুব ক্রিটিকাল। পূর্ণা বলল।
ওদিকে কালো ব্লেজার হাতে নিয়ে গায়ে জড়াতে যাবে তখন পূর্ণার বলা কথা শুনে থেমে যায় ডাক্তার নীল। ব্লেজার টা হাতে রেখেই পূর্ণার দিকে তাকালো।
– স্যার যাবে না বলেছেন চল আমরা ইমার্জেন্সি তে গিয়ে দেখি কোন ডাক্তার আছে। মিলা বলল…
দু’জনে হতাশ হয়ে চলে যাবে তখন পেছন থেকে ডাক্তার নীল পূর্ণাকে ডাকে বলল।
– পূর্ণা কি বললে তুমি? ডাক্তার নীল।
– জি স্যার পেসেন্ট এর অবস্থা ক্রিটিকাল! পূর্ণা বলল।
ডাক্তার নীল এবার একটু বেশিই বিরক্তবোধ করলেন আর বিরক্তি তার কথার মধ্যে প্রকাশিত হচ্ছে বললেন.
– নাম কি মেয়েটার? মিলা আসছে পর থেকে ক্রিটিকাল বলে যাচ্ছে এখন পূর্ণা কি একটা পেসেন্ট এর নাম বলল সেটা আবারও শোনার জন্য ডাক্তার নীল প্রশ্ন করল কিন্তু পূর্ণা ও একই কথা বলল এত বোকা হয় কি করে মানুষ?
পূর্ণা ও মিলা দু’জনেই মাথা নিচু করে ফেলল। পূর্ণা ধরেই নিয়েছে এই মিলা এসেছে পরে নির্ঘাত কিছু একটা গোলমাল পাকিয়েছে তাই নীল স্যার এত ক্ষেপে আছে এই মিলাকে তো পরে দেখে নেবে মনে মনে ঠিক করল। মুখ খুলে ডাক্তার এর উদ্দেশ্যে বলল..
– বৃষ্টি..!
বৃষ্টি নাম শুনে বুক চিড়ে এক দীর্ঘ শ্বাস বের হয়ে আসল ডাক্তার নীল এর বৃষ্টি নামটা শোনার পরই উনার স্কুল লাইফের বান্ধবীর কথা মনে পরে গেলো৷ শুধু ভালোবাসি বলেছিল বলে বন্ধুত্বে ফাটল ধরে আর দূরত্ব সৃষ্টি হয়। ডাক্তার নীল এর জীবনে এক জনই মেয়ে ছিল আছে আর সেই থাকবে আর সে মেয়েটা হচ্ছে উনার প্রথম ও শেষ ভালোবাসা উনার স্কুল লাইফের বান্ধবী।
দু’জনের নাম সেম হওয়ায় নীল পূর্ণার উদ্দেশ্যে বলল।
– আমিই দেখবো কোথাও যেতে হবে না কত নাম্বার কেবিনে আছে আমাকে নিয়ে চলো।
– জি স্যার চলুন।
ডাক্তার নীল আগে আগে বেরিয়ে গেলেন পেছনে পেছনে মিলা ও পূর্ণা হাটছে। ডাক্তার নীল এর যাওয়ার দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে মিলা বলল…
– যাবেই যখন তাহলে এতক্ষণ এত কথা শোনানোর কি আছে?
– চুপ থাক উনি শুনে ফেলবে, উনার কান হাতির কান কেও হার মানায় দূর থেকেও সব শুনে ফেলে আর উনাকে বোঝা আমাদের কর্ম নয়। কখন যে কি বলে আর কখন যে কি করে বসে তা নিয়ে আমাদের মাথা না ঘামালেও চলবে এখন চল।
কেবিনের সামনে আসতেই দেখল সবাই এমন ভাবে কান্না করছে জেনো পেসেন্ট মারা গেছে আর এখন তার অন্তিম সংস্কার করবে। আঁড়চোখে সবার দিকে এক নজর তাকিয়ে কেবিনের মধ্যে প্রবেশ করল। পেসেন্ট এর মুখটা বা দিকে ঘুরানো ছিল আর কিছু চুল দিয়েও ঢাকা ছিল তাই ডাক্তার নীল মেয়েটার মুখের দিকে তেমন ভাবে খেয়াল করেনি। ডান হাতের অনেকটা জায়গা আগুনে লেগে পুরে গেছে ভেতরের লাল মাংস উচ্ছে পরছে ইশশ দেখেই শরীর কেঁপে উঠছে। মিলা কেবিনে প্রবেশ করে ঠাই মেরে দাঁড়িয়ে রয়েছে পূর্ণা বৃষ্টি কে সোজা করে শুইয়ে দেয় মাথাও সোজা করে দিয়ে মুখের সামনে থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিলো। এখন বৃষ্টির মুখ পুরো দেখা যাচ্ছে কাত হয়ে যায় মুখ থেকে অক্সিজেন মাস্ক টা ও নড়ে গেছে।
সোহান বলল…
– ওকে আপনারা আইসিইউ তে নিচ্ছেন না কেনো।
– এখানে ডাক্তার কে আপনি না আমি পেসেন্ট এর জন্য কি করতে হবে সেটা আমি বুঝবো। আর যদি আপনারা মাতাবার করেন তাহলে আপনারাই করেন আমি চললাম।
ডাক্তার নীল এর বলা কথাশুনে উপস্থিত সবাই একঢোক পানি বেশি গিলল। মনে মনেই, মিলা ও পূর্ণা এক অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল সবাইকে অবাক করে দিয়ে ডাক্তার নীল আবারও বললেন।
– আমার কাজ আমাকে করতে দিন পেসেন্ট কে আইসিইউতে নিতে হবে না তার দরকার নেই।
বলে পেছনে মাথা ঘুরিয়ে বৃষ্টির দিকে তাকালো। এখন নীল এর মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সোহানের সামনে থেকে সরে বৃষ্টির বেডের কাছে ছুটে গেলো। মুখের দিকে তাকালো কপালে অনেকটা জায়গা ক্ষত রক্ত শুকিয়ে গেছে ক্ষত জায়গা কালো হয়ে গেছে। ডাক্তার নীল নিজের উপর কন্ট্রোল আপা হারিয়ে ফেলল। মিলা ও পূর্ণাকে ধমক দিয়ে বলল..
– তোমরা দু’জন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামশা না দেখে তারাতাড়ি গিয়ে ও.টি রেডি করো আর বৃষ্টি কে ও.টি তে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করো জলদি।
খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে ডাক্তার নীল কে সবাই উনার দিকে ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে তাকিয়ে আছে কিছুক্ষণ আগে বলল আইসিইউতে নিতে হবে না আর এখন উনিই নিয়ে যাচ্ছে আর সবাই কে তারাহুরো করতে বলছে৷ সবার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব।
চলবে?