দ্বিতীয় পুরুষ পর্ব-২

0
1943

#দ্বিতীয় পুরুষ
পর্ব ২
_নীলাভ্র জহির

এবার চিত্রার বাসর ঘর সাজানো হয়েছে প্লাস্টিকের ফুল দিয়ে। চিত্রা তার নতুন স্বামীকে ভালো করে দেখল। সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত একজন যুবক। মাথায় তার কোঁকড়া চুল। ছেলেটা এসে বিছানার ওপর বসতেই চিত্রার বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেল। তার স্বামী জানতে চায়, বৃষ্টি শুরু হইবো। আপনার কিছু লাগলে কন। আমি আইনা দেই।
চিত্রা ঘাড় বেঁকিয়ে বলে, কিছু আনা লাগবো না। আমার সব জিনিসপত্র এইখানেই আছে।
– তাইলে বাতি নিভাইয়া দেই?
চিত্রার শরীরে এক ধরনের শিহরণ বয়ে যায়। ভয় ভয় মুখে সে বলে না, আপনার লগে একটু আলাপ পরিচয় হোক।
ছেলেটা হাসিমুখে বলল, তা তো হইবোই। এহন আপনি আমার ঘরের বউ। রূপক মিয়ার বউ। এই হল আপনার পরিচয়।
চিত্রা লাজুক হেসে বলল, আপনার নাম তো জানি। আপনি মানুষটা কেমন এগুলা বুঝি জানতে হইব না?
– না জাইনাই তো বিয়া কইরা ফালাইছেন। এহন সারা জীবন ধইরা জানবেন। আমি কিন্তু মানুষটা খারাপ না।

চিত্রা মুচকি হাসলো। রূপকের হাসিমুখ আর চাহনি দেখেই সে বুঝতে পেরেছে ছেলেটা খারাপ নয়। এত সুন্দর একটা ছেলে তার স্বামী। যে ছেলেটা খুব সুন্দর করে হাসে, সুন্দর করে কথা বলে। নিজের ভাগ্যকে এই প্রথম নিজের ঈর্ষা হলো চিত্রার।

রুপক বলল, বাতিটা নিভাইয়া দেই ?
চিত্রা লাজুক হাসল। মাথা নিচু করে থাকল। বাসর ঘরে স্বামীকে বাতি নিভানোর কথা কোন স্ত্রী কি বলতে পারে? এ তো ভারি লজ্জার কথা।

রূপক ঘরের আলো নিভিয়ে দিল। পায়ের শব্দ শুনে চিত্রা বুঝতে পারলো রুপক এখন তার বিছানায় এসে বসলো। হঠাৎ নিজের গায়ের উপর তার স্পর্শ টের পেল চিত্রা। রূপক তার বাহুতে হাত রেখেছে, একটা গরম হাত।
চিত্রার কেমন ভয় ভয় হতে থাকে। হাত পা কাঁপতে শুরু করল তার। রূপক তাকে ধরে বিছানায় শুয়ে পড়ল। একজন অপরিচিত পুরুষ মানুষ এখন তার এত কাছে! তাকে ধরে তার পাশে বিছানায় শুয়ে আছে। যে মানুষটাকে একটু আগেও চিনতো না। শুধুমাত্র কবুল বলার পর মানুষটা তার ওপর অধিকার খাটাতে শুরু করল সে বাধা দিতে পারবে না। কারণ এটাই জগতের নিয়ম। লজ্জা হলেও তাকেও অধিকার খাটাতে হবে এই অপরিচিত যুবকের ওপর । অচেনা অজানা দু’জন মানুষ কিভাবে শরীরে শরীরে মিলিত হয়। প্রকৃতির নিয়ম বড় অদ্ভুত।
রূপক বলল, আমার গায়ে কোন গন্ধ পাইতাছেন?
– নাতো ।
আমি কিন্তু সিগ্রেট খাই।
কথাটা বলেই শব্দ করে হাসলো রূপক। বলল, সিগ্রেটে আপনার সমস্যা নাই তো।
লাজুক হেসে চিত্রা উত্তর দেয়, না।
– মেলা বন্ধুর কাছে শুনছি তার বউ সিগরেট খাইলে চিল্লাফাল্লা করে। মুখে গায়ে বাজে গন্ধ হয়। আমার গায়ে কি সেরকম গন্ধ পাইতাছেন?
– না,
– পাইবেন না তো। আমি সিগারেট খাওনের সময় হাত লম্বা কইরা সিগ্রেট ধইরা টানসি । ঘরে ঢোকার আগে মেসওয়াক কইরা আইসি। সব আপনার লাইগা।

কথাগুলো শুনতে বড়ই ভালো লাগে চিত্রার। এই প্রথম জীবনে সে ভালোবাসার কথা শুনছে। তার হৃদয়ে দোলা লাগল। একজন মানুষ যাকে সে কখনো চেনেও না, জানেও না, সে তার জন্য দূরে হাত রেখে সিগারেট টেনেছে। ঘরে ঢোকার আগে মেসওয়াক করে এসেছে। এ কথাগুলো শুনতে তার নিজেকে ভীষণ সৌভাগ্যবতী মনে হচ্ছিল। মনে এক ধরনের সুখের দোলা অনুভব করল চিত্রা। রূপকের গরম হাতের স্পর্শ পেল সে। রুপক তার বাহু চেপে ধরে তাকে মৃদু কাছে টেনে নিল। লজ্জা ও সংকোচে অনেকটা কুকড়ে গেল চিত্রা।
রূপক বলল, আমার কিন্তু লজ্জা করতাছে।
কথাটা শুনে লজ্জা পায় চিত্রা নিজেও। লজ্জা তো তারও করছে। এই লজ্জা এক অন্যরকম লজ্জা। যে লজ্জা পেতেও শান্তি লাগে। নিজের স্বামীর কাছে লজ্জা পাওয়াটা খুবই গৌরবের বিষয়।
পাশাপাশি শুয়ে রইলো তারা দুইজন। যুবক বলল, তুমি তো আমার স্ত্রী। আমরা জনম জনম একসঙ্গে থাকব। আজ আমি তোমার কাছে কিছু কথা কই। তুমিও কথা দাও আমার কথাগুলো তুমি রাখবা?
চিত্রা বলল, হ, রাখমু। আপনি বলেন কি কথা?
রূপক বলল, আমার বাপ মারে তুমি কখনো কষ্ট দিয়ে কথা বলবা না। তারা তোমারে যা ইচ্ছা কইতে পারে। সব সময় মাথায় রাখবা তারা মুরুব্বী। গুরুজন । আমগো ভালো-মন্দের জন্য তারা নানান কথা বলবে। আমার মায়ের একটু রাগ বেশি। সবকিছু কম বুঝে। এইজন্য চিল্লায় বেশি। মা তোমারে কিছু কইলে তুমি যদি কষ্ট পাও আমারে কইও। তোমার কষ্ট আমি দূর কইরা দিব। কিন্তু তুমি আমার মায়ের লগে কোনো খারাপ আচরণ করতে পারবা না। তারে কষ্ট দিয়ে কিছু বলতে পারবানা। হাজার হউক সে আমারে জন্ম দিছে। আমারে অনেক আদর যত্নে মানুষ করছে। সে রাগী হইলেও সে আমার মা। কম বুঝলেও সে আমার মা। আমার মারে কেউ কষ্ট দিলে আর আমার সহ্য হয় না। তুমি আমারে কথা দাও কোনোদিনও আমার মায়ের কষ্ট দিবানা?
চিত্রা বলল, আপনার মা মানে আমারও মা। আপনি জানেন না আমার মা নাই? জন্মের পরেই মারে হারাইছি। পাগলা এক বাপের কাছত মানুষ হইছি। মায়ের আদর পাই নাই। আপনের মায়ের কাছে আমি আমার মায়ের আদর খুজব।
– তাই যেন হয় বউ। তুমি আমার বাপ মারে অনেক আদর সম্মান করবা। আমি সারা জীবন তুমি যা চাইবা তাই আইনা দিব।

মনটা খুশিতে ভরে গেল চিত্রার। খুব আনন্দ হতে লাগলো। বিয়ের প্রথম রাত নাকি অনেক আনন্দের হয়। সেই কথা আজ তার কাছে সত্যি বলে প্রমাণ হলো। সম্পূর্ণ নতুন একজন মানুষ কত দ্রুত তার আপন হয়ে উঠল ভাবতেই অবাক লাগছে তার।
রূপক বলল, আমার বাপ অনেক কষ্ট কইরা দোকান করছে। তার দোকানে আমি কাম করি। আমার বাপে পুরা দোকান আমারে দিয়া দিছে। তুমি কও কয়টা পোলার এত সৌভাগ্য হয়। যে বড় হইয়াই বাপের খাড়া করানো ব্যবসা পাইয়া যায়। আমি পাইছি। আমার বাপ রে আমি অনেক সম্মান করি। তুমিও করবা। কোনদিনও আমার বাপরে আঘাত দিয়া কোন কথা কইবা না। তুমি আমার এই দুইটা কথা রাখবা তো বউ?

চিত্রার চোখ দুটো ছল ছল করে উঠলো। সে বলল , আপনি কোনো চিন্তা কইরেন না। আমার উপর ভরসা রাখেন। আপনের অসম্মান হয় এমন কোন কাজ আমি কখনো করবো না। আপনি যা বলছেন আমি তা সবসময় রাখতে চেষ্টা করব।
রুপক উত্তেজিত হয়ে চিত্রাকে জরিয়ে ধরল। আনন্দিত কন্ঠে বলল, এমন একটা লক্ষী বউই আমি চাইছিলাম। তোমার ভাইয়ের লগে আমি একসঙ্গে পড়ছি। পড়াশুনা বেশি দূর করতে পারিনাই। বাপে কইত দোকানে বইতে। মনে অনেক সাধ ছিল কুন্দনপুর ডিগ্রি কলেজে পড়ব। দোকানে বইলে কি আর কলেজ পড়া হয়। পড়াশোনা তো লাটে উঠছে। তয় আমার খুব শখ আছে আমার পোলা-মাইয়া হোক তারে আমি কলেজ পর্যন্ত পড়াবো। যারা কলেজে পড়ে তাদের ব্রেন বুদ্ধি অনেক ভালো হয়।

মুচকি হেসে চিত্রা বলল, আপনার ব্রেন বুদ্ধি অনেক ভালো। কলেজে না পড়লেও ভালা মানুষ হওয়া যায়। আপনি একটা ভালা মানুষ।
– তোমারে আমার বড়ই ভালো লাগছে। তুমি খুব মিষ্টি কইরা কথা কও। মনডা চায় সারাক্ষণ শুধু তোমার কথাই শুনি।
লজ্জায় এলোমেলো হয়ে যেতে লাগল চিত্রা। এভাবে কেউ কোনদিনও তার কথার প্রশংসা করে নি। কথাও বুঝি সুন্দর হয়!
রুপক বলল, চুপ কইরে রইলা কেন? একটু কথা কও শুনি।
লাজুক হেসে চিত্রা বলল, কি কথা কমু? আপনি কন আমি শুনি। আপনের কথা শুনতে আমার ভালো লাগতেছে।
রূপক চিত্রাকে জড়িয়ে ধরে বলল, কাছে আসো। এত দূরে যাইতাছো ক্যান? তোমার কি শরম করতাছে?
চিত্রা উপর নিচে মাথা নাড়ায়। অন্ধকারে সেটা দেখতে পায়না রূপক। বাইরে বাতাস শুরু হয়েছে। সাথে মেঘের হালকা-পাতলা গর্জন। এই গর্জনে তাদের কথা বাইরে থেকে আর কেউ শুনতে পাবে না। আজকের রাতটা বড় মাধুর্যতা পূর্ণ হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে। ঝুম বৃষ্টি নামুক। বৃষ্টি এলে ভীষণ ভালো হবে। কেন যেন আজ চিত্রার মন চাইছে আজ খুব বৃষ্টি হোক। ভোর পর্যন্ত বৃষ্টি হোক।
রূপক বলল, চুপ কইরে রইলা কেন? কথা কও। তোমার মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনি।
– আপনি বড়ই শরম দেন।
– কই শরম দিলাম? আমি তো তোমার সোয়ামী। আমার কাছে তোমার কিসের শরম। কাছে আসো ।
রূপক চিত্রার নরম থলথলে শরীরটা নিজের বুকের মধ্যে নিয়ে নিল। রূপকের শক্ত বুকে নিজেকে শিশুর মনে হলো চিত্রার। উঠতি বয়সি মেয়ে চিত্রা। যৌবনে পা দিয়েছে। তবে বয়সের চাইতে তাকে অনেক বড় দেখায় তার সুন্দর স্বাস্থ্যের কারণে। রোগা পটকা সোহরাব উদ্দিনের মেয়েটা বড়ই স্বাস্থ্যবতী হয়েছে।

রুপক আস্তে আস্তে চিত্রার গলায় হাত দেয়। চিত্রার একটুও ভয় কিংবা দ্বিধা হয় না। এই মানুষটা তার স্বামী, এই ভীষণ সুন্দর মানুষটা। তার কাছে নিজেকে উজার করে দিতে ভালই লাগে তার। রুপকের হাত ধীরে ধীরে নিচের দিকে নামতে থাকে। খিলখিল করে হেসে ওঠে চিত্রা । চিত্রার সুডৌল স্তন স্পর্শ করে রুপক। চিত্রার হাসি থেমে যায়। এক শিহরণ বইতে শুরু করে তার দেহে। সে নড়াচড়া করতে পারল না। মন প্রাণ সব কিছু উজার করে দিয়ে এই মানুষটাকে সে গ্রহণ করতে চায়। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটা বুঝি এমনই সুন্দর।

সারারাত ধরে বৃষ্টির পর সকালবেলা ঝলমলে রোদ উঠেছে। রোদ ওঠার আগেই উঠে পড়েছে চিত্রা। সে নতুন বউ। দেরিতে ঘুম থেকে উঠলে লোকে নানান কথা বলবে। ফজরের আজানের সঙ্গে সঙ্গে ঘুম থেকে উঠে পড়েছে। এই বাড়ির কোথায় কি আছে সে কিছুই জানেনা। রাতে ঘুমানোর আগেই সে তার স্বামীর রূপককে বলে রেখেছিল,
ফজরে উইঠা আমারে একটু পুকুরপাড়ে নিয়া যাইবেন?
যামু।
আপনের যদি ঘুম না ভাঙ্গে?
– ঘুম না ভাংলে তুমি মিষ্টি কইরে ডাক দিবা।
– আমিতো মিষ্টি কইরা ডাকতে পারিনা।
– কোকিল যদি কয় আমি মিষ্টি কইরা ডাকতে পারিনা সেটা কি বিশ্বাস হওয়ার কথা।

চিত্রা খিলখিল করে হেসে উঠেছিল রূপকের কথা শুনে। তার জীবনে প্রেম এসেছে। রঙিন ভেলায় ভেসে ভেসে। সেই রঙিন রঙে সে নিজেকে রাঙিয়ে নিয়েছে। স্বামীর দেহের এক সর্বশ্রেষ্ঠ সুখের সন্ধান পেয়ে আনন্দে পাগল হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থায় পড়েছিল চিত্রা।

এই আনন্দ সকালবেলাতে ও তার মনে উরু উরু করতে লাগলো। ঘর ও উঠান ঝাড়ু দিয়ে চিত্রা নিজের ঘরের দরজা আলগা করে বসে রইল। নতুন বউয়ের দরজা ধাক্কাধাক্কি করে খুলতে হলে সেটা বড়ই লজ্জার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তার দরজায় কেউ ধাক্কা দিতে হবে না। দরজায় টোকা দিলেই খুলে যাবে দরজা। তাকে আর লজ্জায় পড়তে হবে না।

জা, ননদ ও পাড়া-প্রতিবেশীরা ইতিমধ্যেই কোলাহল করতে করতে চলে এসেছে। চাচাতো এক জায়ের গলা শোনা গেল, কি লো উঠছো নি?
চিত্রা লম্বা ঘোমটা টেনে দিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে এল। হাসির রোল পড়ে গেল সবার মধ্যে। আতঙ্কগ্রস্থ হলো চিত্রা। তাকে দেখে হাসার কি হল? তার চেহারায় কোথাও হাসার মতো কোন ছাপ আছে কি?
এক জা বলল, সারারাইত খুব ঝড় বাতাস হয়েছে। শইল্যেও দেহি ভালোই বাতাস লাগছে। টক বাইগনের মত লাল হইয়া রইছ।
হাসির রোল পড়ে গেল সবার মধ্যে। লজ্জায় একদম কুকড়ে গেল চিত্রা।
মহিলারা এসে চিত্রাকে ঘিরে ধরল। ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করতে লাগলো, কেমন হইল?
– কি হইব?
আবারো হাসির রোল পড়ে গেল মেয়েদের মধ্যে। বাচ্চা কোলে নেয়া এক মহিলা এগিয়ে এলো। চিত্রার মাথার ঘোমটা সরিয়ে চিত্রার ভেজা চুলে হাত দিয়ে শব্দ করে হাসতে হাসতে বলল, প্রথম রাইতেই হইয়া গেছে।
উচ্চ হাসির রোল পড়ে গেল সবার মধ্যে। কয়েকজন চিত্রাকে টানতে টানতে একটা খড়ের ঘরের দিকে নিয়ে গেল। জানতে চাইল, সব হইছে?
লজ্জায় কথা বলতে পারলোনা চিত্রা। মাটির দিকে মাথা নিচু করে রইল সে। মেয়েরা আবারো শব্দ করে হাসতে লাগলো। একজন বৃদ্ধা মহিলা এসে চিত্রার হাত ধরে বলল, নাতি বউ । ওরা তোমারে জালাইয়া মারবো। তুমি আমার লগে আহো।
বৃদ্ধা চিত্রাকে টেনে নিয়ে উঠোনের মাঝখানে এলেন। মেয়েগুলো সেখানে এসে ঘিরে ধরলো চিত্রাকে। কিন্তু বৃদ্ধাকে ডিঙিয়ে তারা কিছু বলতে পারলো না। বৃদ্ধা বললেন, বইয়া আমার লগে সুপারি কাটো।
উঠানে একটা ডালি ভর্তি সুপারি। দুইজন মহিলা বটিতে বসে সুপারি কাটছে। একজন মহিলা উঠে গিয়ে একটা পিড়ি ও বটি এগিয়ে দিল চিত্রার দিকে।
– বহেন ভাবি। সুপরি কাটেন। কাটতে পারেন তো?
দাদি বললেন, কেন পারব না? মাইয়া মানুষ সবই পারতে হইবো। না পারলে শিখাইয়া দিমু। আমার যখন বিয়া হইছে আমার তখন আট বৎসর বয়স। কোন কামই করতে পারতাম না। আমি কি সংসার করছি না? আটজন পোলা-মাইয়া জন্ম দিছি।

চিত্রা সুপারি কাটতে শুরু করলো। তার নতুন শাড়ির আচল বারবার মাথা থেকে পড়ে যাচ্ছে। এক হাত দিয়ে চিত্রা আবারো ঘোমটা টেনে দেয়। গায়ে হলুদ হয়েছে গত পরশু। হলুদের রং লেগে রয়েছে ত্বকে। লাল সুতি একটা কাপড়ে তাকে নতুন বউ হিসেবে ভারী সুন্দর মানিয়েছে।
সকালের মিষ্টি আলোয় বসে তারা সবাই মিলে সুপারি কাটতে থাকে। দু চারজন মহিলা এসে পাশে বসে। জিজ্ঞেস করে, আমারে চিনছো। আমি তোমার জেঠতো ভাইয়ের বউ। আমিই হইলাম সবার বড় বউ।
চিত্রা একঝলক তাকে দেখে আবারও সুপারি করতে শুরু করে। ধীরে ধীরে তাকে ঘিরে লোকজন আসর জমাতে থাকে। পাড়া প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজন যার যার ঘুম ভাঙলে সবাই এসে হাজির হয়। নতুন বউ দেখতে এসেছে সবাই। কিছুক্ষণের মধ্যেই মনে হয় পুরো গ্রামের সব মহিলা এসে হাজির। সকলে বউ দেখতে এসেছে। কানাকানি ফিসফিসানি কিংবা কখনো উচ্চ হাসির শব্দ কানে আসে চিত্রার। সে লজ্জায়, সংকোচে কারো দিকে তাকাতে পারে না। মাথা নিচু করে মাটির দিকে চেয়ে থাকে। চিত্রার শাশুড়ি এসে বলে, আর সুপারি কাটা লাগবো না। সবাই তোমারে দেখতে আইছে। উঠ, রুবিনা তোমারে সাজাইয়া দিবে। যাও সাজুগুজু করো। বিয়ের শাড়ি পিন্দো। সাজুগুজু কইরা চেয়ারে বইসা থাকো।

চিত্রা কি করবে বুঝতে পারে না। রুবিনা নামের মেয়েটি এসে বলল, উঠেন ভাবি। আসেন আপ্নারে সাজাইয়া দেই।
চিত্রা রুবিনার সঙ্গে আসে। তার স্বামীর ঘরের পাশের একটা ঘরে নিয়ে এসে বসানো হয় তাকে। মেয়েরা তাকে ঘিরে ধরে থাকে। দুইজন মেয়ে গিয়ে তাঁর ঘর থেকে বিয়ের স্যুটকেসটা নিয়ে আসে। সুটকেস খুলতেই সব মেয়েরা হুড়মুড় করে ঝুঁকে দেখতে থাকে ভিতরে কি কি জিনিস আছে। সব জিনিস এলোমেলো করে রুবিনা চিত্রাকে সাজুগুজু করিয়ে দেয়। বড় আনন্দ হয় চিত্রার। বিয়ে ব্যাপারটাই আনন্দের।
তখন শুনতে পায় তার স্বামী রূপকের গলাখাকারি। রূপক বলে, রুবিনা তোর ভাবীর সঙ্গে একটু দরকার ছিল।

মেয়েদের মধ্যে ফিসফিসানি হাসির রোল ওঠে। তারা ঘর থেকে বেরিয়ে রূপককে ঘরে ঢুকতে বলে। ভীষণ লজ্জা হয় চিত্রার। রূপক ঘরে ঢুকে তার পাশে দাঁড়ালো।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here