অপূর্ব প্রাপ্তি পর্ব-৩৮

0
819

অপূর্ব প্রাপ্তি
পর্ব-আটত্রিশ
নাফিসা নীলয়া!

নীরার জীবনে এতো আনন্দ আর খুশি সে খুব কমই পেয়েছে। শিহাব যে তার জন্য এতোটা করতে পারবে সেটা সে জানতো। কিন্তু আজকের সারপ্রাইজটার কথা সে ভাবতেই পারেনি। সে বাচ্চাদের সাথে সময় কাটালো ইচ্ছে মতো। মালিহা নীরার কাছে এসে বললেন।

-তোর এই হাসি মুখ দেখে আমার আজীবনের কষ্ট ফিকে হয়ে যাচ্ছে। শিহাবের মতো জীবনসঙ্গী আমার মেয়ের জীবনে আছে ভেবেই আনন্দ হচ্ছে। শোন শিহাব যেভাবে তোর সব ভালো মন্দ খেয়াল রাখছে তোরও কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে। আমি জানি আমার মেয়ে দায়িত্বশীল তবুও বললাম।

মালিহার কথা শুনে নীরা হাসলো।বললো।

-আমি আমার যথাসম্ভব চেষ্টা করবোই।

রেহান অনেক মেয়েদের সাথে ফ্ল্যার্ট করছে। মিলা শুধু দাঁত কিড়মিড় করে রেহানের কর্মকান্ড পর্যবেক্ষন করছিলো। সে আর সহ্য করতে না পেরে রেহানের সামনে গিয়ে দাড়ালো। এতে রেহান একটু বিরক্তকর ভাব দেখালো। মিলাকে পাওা না দিয়েই সামনের মেয়েটার সাথে কথা চালিয়ে গেল। এতে মিলা আরো রেগে গেল। সে রেহানকে বললো।

-তোমার সাথে কথা আছে এদিকে তাকাও।

রেহান ব্যস্ততা দেখিয়ে বললো।

-পরে বলো। দেখতেই পাচ্ছো এখন সময় নেই।

মিলা রেগেমেগে সামনের মেয়েটাকে বললো।

-আপনি একটু ওদিকে যান ওর সাথে আমার পার্সোনাল কথা আছে।

মেয়েটা এতে অপমানিত বোধ করে চলে গেল। মিলার এমন কথা শুনে রেহান নিজেই এবার রেগে গেল। বললো।

-সমস্যা কি তোমার? ওকে এভাবে বললে কেন? ভাগ্য ভালো ও একটা ডিসেন্ট মেয়ে এজন্যই তোমাকে কিছু বলেনি।

মিলা এই কথার ধারেকাছেও না গিয়ে বললো।

-তোমার সমস্যা কি? সারাদিন মেয়েদের আশেপাশে এতো ঘুড়ঘুড় কিসের? এতো ফ্ল্যার্টবাজ কেন তুমি? আমি আশ্চর্য হয়ে যাই একটা ছেলে এই পরিমান বেয়াদব হয় কি করে! সারাদিন মেয়েদের সাথে ফ্ল্যার্টিং ছাড়া তো আর কোনো কাজই করো না তুমি।

মিলার কথা শুনে রেহান হঠাত গম্ভীর হয়ে গেল। শক্ত কন্ঠে বললো।

-তাতে তোমার কি? আমি মেয়েদের সাথে ফ্ল্যার্ট করি না হয় যা খুশি তাই করি। তোমার সাথে তো করতে যাচ্ছি না। এতে তো তোমার কোনো সমস্যা হবার কথা না। তুমি এতো কনসার্ন কেন? হোয়াই?

রেহানের এই প্রশ্নের উওরে মিলা কিছু বলতে পারলো না। আসলেই তো রেহান যা খুশি তাই করুক। তাতে তো তার সমস্যা হবার কথা না। সে কেন এসব ভাবছে। এখন সে কি বলবে! মিলার ভাবনার মধ্যেই রেহান আবারও বলে উঠলো।

-তুমি কখন কি বলো সেটা তুমি নিজেই জানো না। আমাকে আর কি বলবে।

বলেই রেহান সেখান থেকে চলে গেল। মিলা মনে মনে বললো।

-আমি কখন কি বলি কি ভাবি তা আমি নিজেও জানি না। সত্যিই জানি না।

নীরা রুমার সাথে একপাশে দাড়িয়ে ছিলো। সাইফ রুমাকে ডাকার কারনে রুমা সাইফের কাছে গেল। তখনই শিহাব এসে নীরার পাশে দাড়ালো। নীরা হেসে বললো।

-থ্যাংক ইউ।

শিহাব প্রশ্ন করলো।

-থ্যাংক ইউ কেন?

-এতো সুন্দর সারপ্রাইজের জন্য।

শিহাব ও হাসলো এবার। তখনই রেহান আসলো ওদের কাছে। বললো।

-ভাই তোমার বন্ধু সব এসে গেছে। তোমাদেরকে খুঁজছে সবাই। স্পেশালি কথা আপু পাগল করে দিচ্ছে একদম।

কথাটা বলেই রেহান ব্যস্ত ভঙ্গিতে চলে গেল। শিহাব নীরার হাত ধরে বললো।

-চলো সবার সাথে দেখা করবে।

নীরাও কিছু না বলে শিহাবের সাথে হাটতে লাগলো। হাটার সময় শিহাব বারবার জিজ্ঞেস করলো। নীরার হাটতে বেশি সমস্যা হচ্ছে কিনা। নীরা বারবারই না করলো।

ওরা হেটে পৌছাতে পৌছাতেই কথা নামের মেয়েটা দৌড়ে ওদের সামনে এসে পরলো। এসেই শিহাবকে দুটো কিল দিয়ে বললো।

-এতোক্ষন লাগে আসতে?

নীরার সামনে এভাবে মার দেওয়ায় শিহাব একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেল। সে নীরার দিকে আড়চোখে তাকালে কথা বলতে শুরু করলো।

-শালা বউয়ের দিকে তাকাস কেন? এদিকে তাকা? এতোক্ষন লাগলো কেন?

শিহাব আমতা আমতা করে কথার কাছে গিয়ে আস্তে করে বললো।

-আমার বউয়ের সামনে আমার মান সম্মানটা নষ্ট করিস না। প্লিজ।

শিহাবের এই কথা শুনে কথা চেঁচিয়ে বাকি বন্ধুদের বললো।

-নেহাল,রাফি,সামিয়া শুনছিস ও কি বললো। বললো ওর বউয়ের সামনে ওর মান সম্মান নষ্ট না করতে। হাহ্!

কথার কথা শুনে বাকি সবাই হেসে উঠলো। ওদের বন্ধু নেহাল বললো।

-আচ্ছা বাদ দে ভাবির সাথে পরিচিত হয়ে নেই। কিরে ভাবির সাথে পরিচয় করিয়ে দে।

শিহাব এবার নীরার দিকে তাকালো দেখলো নীরা মিটিমিটি হাসছে। সে আর পাওা না দিয়ে নীরাকে বললো।

-নীরা ওরা হচ্ছে আমার বন্ধু।

তারপর বাকিদের দিকে তাকিয়ে বললো।

-আর ও হচ্ছে আমার ওয়াইফ নীরা মাহমুদ।

নীরা সবার দিকে তাকিয়ে হাসলো। রাফি আর নেহাল বললো।

-ভালো আছেন ভাবি?

নীরা হেসে সবার উদ্দেশ্যে বললো।

-আলহামদুলিল্লাহ আপনারা সবাই ভালো আছেন?

সামিয়া এবার কথা বলে উঠলো এতোক্ষন সে চুপ করে ছিলো।

-আলহামদুলিল্লাহ্ আপনাকে দেখে এবার আমরা আরো ভালো আছি।

কথা বললো।

-ভাবি তোমার এই যে স্বামী মানে শিহাব। ইনি তো বলতো জীবনে প্রেমই করবে না বিয়ে তো দূরের কথা। বিয়ে করলে বউরা নাকি ঝামেলা করে সেজন্য ইনি বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। আর এখন সেই তোমার প্রেমে দিওয়ানা হয়ে বিয়েই করে নিলো।

নীরা কথার এমনসব কথা শুনে হাসলো কিছু বললো না। শিহাব আমতা আমতা করে বললো।

-আমি এমন কিছুই বলতাম না। ও মিথ্যা বলছে তাই না নেহাল রাফি?

শিহাবের কথা শুনে সবাই একএে না বলে উঠলো। রাফি বললো।

-না কথা তো ঠিক কথাই বলেছে। তুই তো এমনসব কথাই বলতি।

শিহাব বেচারা আর কিছু না বলে চুপ রইলো। নীরার কাছে যেই ইম্প্রেশন ছিলো তা একদিনেই সবাই মাটি করে দিচ্ছে ভেবেই শিহাবের কষ্ট লাগলো।

কথা দুঃখী দুঃখী মুখ করে বললো।

-বুঝলে ভাবি তুমি এতো সুন্দরী আর ট্যালেন্টেড এই তোমার অপেক্ষাতেই শিহাব আমাকে রিফিউজ করেছিলো। আমি তো আর তোমার মতো সুন্দরী আর ট্যালেন্টেড না।

কথা যে এগুলোও বলবে শিহাব সেটাও ভাবেনি। সে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইলো। বাকিরা হাসলো। নীরাও একটু হেসে বললো।

-মোটেও না। তুমি আরো বেশি সুন্দর। দেখতে খুব মিষ্টি মাশাআল্লাহ।

নীরার কথা শুনে সবাই আরেক দফা হাসলো। সবার সাথে অনেক কথা হলো গল্পগুজব হলো। তারপর নীরাকে রেজা সাহেব এসে ডাকলেন। শিহাবের বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বললেন।

-তোমাদের ভাবিকে এবার আমার সাথে নিয়ে যাই। আমার আম্মাজানের সাথে আমার কলিগদের আলাপ করাতে হবে।

রেজা সাহেবের কথা শুনে সবাই হেসে সম্মতি দিলে। রেজা সাহেব নীরার হাত ধরে নিয়ে গেলেন।

এদিকে শিহাব অনেকদিন পর বন্ধুদের পেয়ে আরো গল্প করতে শুরু করলো। সে গল্প করতে থাকলেও তার নজর ছিলো একটু দূরে রেজা সাহেবের সাথে দাড়ানো নীরার দিকে। নেহাল সেটা লক্ষ করে বললো।

-বাহ্ আমাদের বন্ধুর নজর দেখি সারাদিন তার বউয়ের ওপরেই নিবদ্ধ।

এই কথা শুনে বাকি সবাইও টিপ্পনি কাটলো। শিহাব নির্বিকার ভাবে বললো।

-তো? বউয়ে ওপরই তো নজর নিবদ্ধ রাখতে হয়। অন্য নারীতে তো না।

সামিয়া এবার বললো।

-আচ্ছা একটা কথা বলি কিছু মনে করিস না। মানে ভাবির যে সমস্যা টা এটাকে তুই কিভাবে নিয়েছিলি?

সামিয়ার কথায় সবাই শিহাবের দিকে উৎসুক হয়ে তাকালো।

শিহাব ওদের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে নীরার দিকে তাকিয়েই বললো।

-নীরাকে দেখার পর ওর জন্য আমার মনে যেই অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে। তা এর আগে কখনো হয়নি। আর ভবিষ্যতেও অন্য কারো জন্য এমন অনুভূতি হবে না। ওকে আমি জেনে শুনেই আমার বউ করেছি। ও যেহেতু আমার তারমানে ওর সবই আমার। ওর সমস্যা গুলোও আমার। নীরা এমনই একজন যাকে পেয়ে আমি নিজেকে লাকি মনে করি। ও আমার ভাই-বোনদের জন্য আমার পরিবারের জন্য বেস্ট। আমার জন্য তো সবথেকে বেস্ট। আমি মনে করি না ওর সমস্যা টা আদতেও কোনো সমস্যা। কারন ওর এতো এতো সফলতা ওর এই একটা ছোট্ট সমস্যাকে ডিঙিয়ে গেছে। কয়জন পারে ওর মতো লড়াই করতে! ও এতোদূর সব নিজে মোকাবেলা করেছে। আজ ও অনেক মেয়েরই আইডল অনেকেরই অনুপ্রেরনা। আর নীরা যদি সফল না ও হতো তবুও আমি ওকেই বিয়ে করতাম।

শিহাবের কথা শুনে সবাই মুগ্ধ হলো। কথা বললো।

-বাহ্ বন্ধু বাহ্। প্রাউড অফ ইউ।

শিহাব হাসতে হাসতে নিজেই বললো।

-কথা ইউ নো। ও আমাকে পাওাই দিতো না। আর ওর কাছে আমি রিজেক্টেডও হয়েছি বারবার। তারপরও চেষ্টা করে গেছি। এন্ড ফাইনালি ওকে বিয়ে করতে পেরেছি।

শিহাবের এই কথা শুনে সবাই হতভম্ব হয়ে গেল। যে কিনা সবসময় নিজের ইগো বজায় রাখতে কাউকে পাওাই দিতো না। সে এভাবে রিজেক্টেড হয়েছে। রাফি হতভম্ব মুখেই বললো।

-ইগোয়িস্টিক এরোগেন্ট রাগী শিহাবের এতো বদল। সত্যিই মানা যায় না।

শিহাব আবার কথাকে বললো।

-তুই একদিন বলেছিলি তোর মতো আমারও অবস্থা হবে। আসলেই হয়েছিলো! আর তখন আমার তোর কথা খুব মনে পরছিলো।

কথা এই কথা শোনার পর রাগী ভাব ধরে বললো।

-ও হ্যালো তোর জন্য আমি এতোটাও পাগল ছিলাম না।

সবাই আরেকদফা হাসাহাসি করলো এই কথায়।

আনন্দ মজাতে সবার দিন কাটলো। শিহাব আর নীরাকে নিয়ে সবাই নীরাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। রেহান যায়নি রেজা সাহেবের সাথে থেকে গেছে। মিলার অবচেতন মন চাইছিলো রেহানও যাতে আসে কিন্তু রেহান আসলো না। তিতলিই গেল মিলাদের সাথে। যাওয়ার সময় তিতলির সাথে নির্বানের একবার চোখাচোখি হয়ে গেল। নির্বানও ওদের সাথেই আসছিলো। তিতলিকে দেখে নির্বান একটু হাসলো। তিতলিও প্রতিউওরে সৌজন্যতার হাসি হাসলো।

নীরাদের বাড়িতে আসার পরও অনেক হই হুল্লোড়, হলো। রাতে সবাই যে যার ঘরে যাওয়ার পরও নীরা রুমা,মিলা আর তিতলির সাথে অনেকক্ষন গল্প করছিলো। আর শিহাব একা একা ঘরে বসে বসে রেগে যাচ্ছিলো। তাকে বসিয়ে রেখে নীরা কি করে পারছে এতো রাত পর্যন্ত গল্প করতে। শিহাব আশ্চর্য হয়ে গেল। নীরার কাছে সে এটা এক্নপেক্ট করেনি অন্তত।

অনেকক্ষন পরে নীরা ঘরে প্রবেশ করলো। শিহাব বাতি বন্ধ করে শুয়ে ছিলো। নীরা ভাবলো শিহাব হয়তো ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেছে। এসব ভেবেই সে বাতি জ্বালাবে কি জ্বালাবে না এই দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছিলো। তখনই শিহাব শুয়ে থেকেই বললো।

-বাতি জ্বালাতে পারো। আমি ঘুমাইনি।

নীরা শিহাবের কথামতো বাতি জ্বালালো। শিহাব উঠে বসলো। দেখলো নীরা এখনো ফ্রেশই হয়নি। শিহাব ভেবেছিলো নীরা হয়তো এসেই ফ্রেশ হয়ে নিয়েছে। আসার পর থেকে চার ঘন্টা সে নীরাকে দেখেইনি। বাড়ির সবার সাথে কথা বলে ব্যস্ততায় দুজনের আর দেখাই হয়নি। নীরার এই অবস্থা দেখে শিহাব আরো রেগে গেল। গম্ভীর কন্ঠে বললো।

-এখনো ফ্রেশ হওনি কেন?

নীরা স্বাভাবিক ভাবে বললো।

-আসলে সময়ই পাইনি। আসার পর থেকেই সবার সাথে কথা বলে তিতলি মিলাদের বায়না পূরণ করতে করতেই লেট হয়ে গেছে। এ বলে একে খাইয়ে দাও ও বলে ওকে চুল বেঁধে দাও।

কথা বলতে বলতেই নীরা জামাকাপড় নিলো ওয়াশরুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। শিহাব আরো রেগে নীরার হাত থেকে সব ফেলে দিয়ে বললো।

-সবার খেয়াল রাখতে মানা করিনি। তাই বলে নিজের খেয়াল না রেখে সবার খেয়াল রাখবে!

নীরা বুঝলো শিহাব রেগে গেছে। তারও ভুল ছিলো এভাবে এতোখন ওদিকে থাকা বোধ হয় ঠিক হয়নি। নীরা কন্ঠস্বর একটু নরম করে বললো।

-আচ্ছা এখন থেকে খেয়াল রাখবো। এবার যাই।

এই কথা শুনে শিহাবের মনে হলো নীরা তার কথাই ভালোভাবে শুনবে না। সে আর কোনো কথা না বলে পুনরায় শুয়ে পরলো। নীরাও আর কিছু না বলে ওয়াসরুমে চলে গেল। ফ্রেস হয়ে ফিরে এসে দেখলো শিহাব শুয়ে পরেছে। সে শিহাবকে ডাকলো।

-শিহাব ঘুমিয়ে গেছো?

শিহাব কোনো আওয়াজ করলো না। নীরা ভাবলো শিহাব বোধ হয় ঘুমিয়ে গেছে। সে বাতি বন্ধ করে এসে নিজেও শুয়ে পরলো। তারপর আবার উঠে বসলো। শিহাবের হাত ধরে বললো।

-আমি জানি তুমি ঘুমাওনি উঠো তো।

নীরার কথা শুনে শিহাব উঠে বসলো। সে নীরার কোনো কথাই ফেলতে পারে না। এবারও পারলো না। গম্ভীর গলায় বললো।

-সারাদিন অনেক ধকল গেছে। তোমার ঘুমানো উচিত।

নীরা জানে না শিহাবের রাগ বা অভিমান সে কি করে ভাঙাবে। তাই সে বললো।

-আচ্ছা তুমিও ঘুমাও। আর কিছু লাগলে আমাকে ডেকো।

বলে নিজেই আবার শুয়ে পরলো। শিহাব হা করে তাকিয়ে থাকলো। তারপর বুঝলো নীরা তার রাগ অভিমান ভাঙাতে পারবে না। তার বউই এমন। এজন্য সে নিজেই আবার বললো।

-নীরা উঠো। একটু পরে ঘুমাবো আমরা। চলো তোমাদের ছাদে গিয়ে ঘুরে আসি।

নীরা শুয়ে থেকেই বললো।

-কালকে যাবো। এখন সত্যিই ঘুমানো উচিত। তুমি এমনিতেও ক্লান্ত হয়ে গেছো।

শিহাব রেগে নীরার হাত টেনে বসালো। নীরা একটু বিরক্ত হয়ে বললো।

-ঘুমাও না।

শিহাব নীরাকে বললো।

-এখন না উঠলে আমি তোমাকে কোলে করে নিয়ে যাবো।

নীরা অবাক হলো। সে জানে শিহাবের দ্বারা এটা করাও অসম্ভব কিছু না। সেজন্য সে বললো।

-কিহ্! একদম না। এসব সিনেমাটিক কান্ড আমার পছন্দ না।

শিহাব হেসে বললো।

-বউয়ের সাথে সিনেমাটিক,রোমান্টিক কাহিনী করাই যায়।

নীরা হতাশ হয়ে বললো।

-এতোক্ষন না তুমি রেগে ছিলে?

শিহাব আবার গম্ভীর মুখে ফিরে গেল। নীরা শিহাবের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো।

-চলো।

শিহাব কিছু না বলে বিছানা থেকে উঠলো। নীরা আর শিহাব দুজন মিলে ছাদে গেল। চাঁদের আলোকে চারদিক আলোকিত হয়ে আছে। ছাদে ওঠার পরপরই নীরার মন দ্বিগুণ ভালো হয়ে গেল। সে শিহাবের হাত ধরলো নিজে থেকেই। শিহাব অবাক হলেও প্রকাশ করলো না। নীরা নিজ থেকেই বললো।

-তুমি না বললে তো এতো সুন্দর পরিবেশের দেখাই পেতাম না।

শিহাব শুধু বললো।

-হু।

নীরা হুট করেই শিহাবকে নিজ থেকে জড়িয়ে ধরলো। বললো।

-থ্যাংক ইউ।

শিহাব আরেক দফা অবাক হয়ে হেসে ফেললো। সে নিজেও আলতো করে নীরাকে জড়িয়ে ধরলো। বললো।

-এতো উন্নতি? বাহ্!

নীরা হেসে শিহাবকে ছেড়ে দাড়ালো। তারপর আবার বললো।

-কেন আগে কি অবনতি ছিলো?

শিহাব নীরাকে এই প্রশ্নের উওর না দিয়ে বললো।

-কেন যেনো তোমার ওপর রেগে থাকতে পারি না। হয়তো খুব খুব ভালোবাসি বলেই।

বলেই হাসলো। নীরা তাকিয়ে রইলো শিহাবের সুন্দর হাসির দিকে। বললো।

-তোমার হাসি এতো সুন্দর। আচ্ছা ছেলে মানুষের এতো সুন্দর হাসি হবে কেন! এতো সুন্দর হাসি শুধুই আমার জন্য। মনে থাকে যেনো।

নীরার কথা শুনে শিহাব হাসতে হাসতে নীরাকে জড়িয়ে ধরে বললো।

-অবশ্যই মনে থাকবে। তোমার এতো উন্নতি দেখে আমি খুব খুশি হয়েছি।

নীরা কিছু না বলে অনুভব করলো শিহাবকে।

–চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here