অপূর্ব প্রাপ্তি পর্ব-৩৯ ২

0
814

অপূর্ব প্রাপ্তি
পর্ব-ঊনচল্লিশ (দ্বিতীয় অংশ)
নাফিসা নীলয়া!

বিয়ের পরের কয়েকটা দিন নাকি সবার স্বপ্নের মতো কাটে। নীরারও স্বপ্নের মতোই কেটেছে। শিহাবের মতো জীবনসঙ্গী, বাবার মতো শ্বশুড় নিজের ভাই-বোনের মতো দেবর ননদ। সবাইকে নিয়ে খুব ভালোই সংসার চলছিলো নীরার। কিন্তু এরকম স্বপ্ন স্বপ্ন দিন কি সবসময় কাটে! সেটা নিয়েও মাঝেমাঝে ভাবে নীরা। রুমার সাথে এগুলো শেয়ার করলে রুমা আরো হাসতে হাসতে নীরার গায়ে ঢলে পরে। রুমার ভাষ্য অনুযায়ী নীরার আজীবন এমন সুখে সুখেই কাটবে। কিন্তু নীরার মাঝেমাঝে ভয় করে। ছোটবেলাতে যখনই সে একটু সুখের দিন দেখতো। তারপর পরই দেখা যেতো কষ্ট তার দুয়ারে এসে হাজির হয়েছে। সেজন্যই সে একটু ভয় পায়। রুমা ছাড়া এগুলো সে কারো সাথেই শেয়ার করে না। স্কুলের ব্রেক টাইমে বসে বসে এসবই ভাবছিলো সে। ঘরে বাইরে দুই জায়গাতেই সে সমানভাবে সামলাতে পারছে। রুমা অসুস্থাতার কারনে আজ আসেনি সেজন্য নীরা আজ একাই বসে আছে। নীরা এসব ভাবতে ভাবতেই জিনিয়া এসে খবর দিলো নীরার সাথে একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা দেখা করতে এসেছেন। নীরা জিনিয়াকে মহিলাটিকে বসাতে বললো। জিনিয়া চলে যাওয়ার পর নীরা কিছু কাগজ গুঁছিয়ে বাইরে গেল।

জায়মা এসেছেন নীরার স্কুলে নীরার সাথে দেখা করতে। কেন যেনো নীরার সাথে তার খুব দেখা করতে ইচ্ছে করছিলো। সেজন্যই তিনি এখানে এসে হাজির হয়েছেন। নীরা এসে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে দেখলো জায়মা বসে আছেন। নীরা জায়মাকে দেখে অবাক হয়ে গেল। জায়মা নীরাকে দেখে সামান্য হাসলেন। নীরাও একটু হেসে সালাম দিলো।

-আসসালামু আলাইকুম আন্টি আপনি হঠাত?

জায়মা হালকা হেসে জবাব নিলেন সালামের।

-ওয়ালাইকুমুস সালাম। বসো। তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।

নীরা কথা না বাড়িয়ে বসলো। জায়মার চেহারার দিকে তাকালো। জায়মা নিঃসন্দেহে একজন রূপবতী নারী। মধ্যবয়স্ক হলেও তাকে দেখতে সুন্দর লাগে। কিন্তু এবার জায়মার চেহারার হাল বেহাল লাগলো নীরার কাছে। লাস্ট বার যখন দেখা হয়েছে তখনো এমন লাগেনি। নীরার তাকানো দেখে জায়মা হাসলেন আবারও। বললেন।

-তোমাকে দেখতে ইচ্ছে হলো সেজন্য ভাবলাম দেখা করে আসি।

নীরা আবারও অবাক হলো। কিন্তু কিছুই বললো না। জায়মা নীরার হাত ধরলেন।

-তোমার কাছে আমার ক্ষমা চাওয়া উচিত। নিজের ছেলের সুখের কথা না ভেবে। একটা মেয়ের আত্নসম্মানের কথা না ভেবে আমি খুব বড় ভুল করেছি। তোমাকে অপমান করেছি। আমাকে কি ক্ষমা করা যায়?

নীরা হতভম্ব হয়ে গেল জায়মার কান্ড দেখে। তার কি বলা উচিত সে বুঝতে পারলো না। জায়মা হয়তো বুঝলেন। তিনি নীরার হাত ছেড়ে দিয়ে বললেন।

-যা করেছি তার নিশ্চয়ই ক্ষমা হয় না। তবুও তুমি আমাকে ক্ষমা করার চেষ্টা করো।

নীরা বলে উঠলো।

-আন্টি ক্ষমা চাওয়া আর ক্ষমা করা মহৎগুন। আপনি যে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন এটাই বেশি। কিন্তু আমার কাছে এসব না বলে শিহাবকে বললে ভালো হতো।

শিহাবের কথা শুনে জায়মার চেহারায় বিষাদ ফুটে উঠলো। তিনি বললেন।

-আমি আমার ছেলে-মেয়ের সামনাসামনি হয়তো হতে পারবো না জানো। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়।

নীরা কিছু বললো না বলার মতো কিছুই নেই। জায়মা আবার আলতো করে নীরার হাত ধরলেন।

-তুমি খুব ভালো একটা মেয়ে আমি জানি তুমি আমার ছেলে-মেয়েদের খেয়াল খুব ভালো করেই রাখছো। তিতলি আর রেহানকে নিজের ভাই বোনের মতোই দেখো তুমি। তবুও বলছি আমি তো ওদের জন্য কখনো কিছুই করিনি। তুমিই নাহয় এখন সেই অভাব পূরণ করবে।

-আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করি সবসময় আর ভবিষ্যতেও করবো ইনশাআল্লাহ।

জায়মা এবার উঠে দাড়ালেন। বললেন।

-মাঝেমাঝে যদি তোমার সাথে দেখা করতে আসি তাহলে কি তুমি কিছু মনে করবে?

নীরা আলতো হেসে বললো।

-আমি কিছু মনে করবো না। আপনি আসতে পারেন।

নীরার আশ্বাস শুনে জায়মা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেন। উঠে বললেন।

-আমার ছেলের জন্য তুমিই বেস্ট চয়েজ। আফসোস এটা বুঝতেই আমার খুব সময় লেগে গেল। আজ আসি আবার দেখা হবে। ভালো থেকো।

নীরাও উঠলো জায়মাকে এগিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে। তারপর বললো।

-আপনিও ভালো থাকবেন।

জায়মা হেসে বিদায় নিলেন। নীরা জায়মার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

মানুষ ভুল করে অন্যায় করে কিন্তু সময় থাকতে বোঝে না। অনুতপ্তও হয় না। সময় শেষ হয়ে গেলে বুঝতে পারে। অনুতপ্ত হয়। কিন্তু তখন সবই হাতের বাইরে চলে যায় কিছুই করার থাকে না।

মিলা আর রেহানের কয়দিন বাদেই ফাইনাল ইয়ারের এক্সাম শুরু হবে। দুজনেই পড়ালেখা নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। এর মধ্যেও দুজনের ক্যাম্পাসে দেখা হয়ে গেলে দুজন দুজনকে জ্বালাতে ভোলে না। রেহানকে মেয়েদের সাথে ফ্ল্যার্ট করতে দেখলেই নীরা সেদিকে তেড়ে যায়। রেহান প্রথম প্রথম যদিও বলতো সে যা খুশি তাই করুক এতে মিলার কি! কিন্তু মিলার সব অকাট্য যুক্তির কাছে সে হার মেনে যেতো। এমনসব যুক্তি দিতো যে রেহান আর কিছু বলতেই পারতো না।

আজও রেহান একটা মেয়ের সাথে কথা বলতে বলতে যাচ্ছিলো। যদিও সে আগের মতো ফ্ল্যার্ট করে না। তবুও একটু আধটু তো করতেই হয়। ঠিক তখনই মিলা সেই করিডোর দিয়েই যাচ্ছিলো। মিলা মনে মনে ঠিক করেছে রেহান যা খুশি তাই করুক সে আর কিছু বলবে না। সে তো এমন ছিলো না। এমন ইম্ম্যাচিউরের মতো বিহেভ এটলিস্ট তার সাথে যায় না। তার আপা এসব শুনলে উল্টো তাকেই বকবে। সেজন্য মিলা আজ আর কিছু বললো না। আজ রেহানকে বাড়াবাড়ি ফ্ল্যার্টও করতে দেখেনি সে। তাহলে কোন যুক্তিতে সে রেহানকে কথা শোনাবে। হেসে কথা বলাটা তো নরমাল। তাই মিলা রেহানকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল।

রেহান দেখলো মিলা তাকে না চেনার ভান করে চলে গেল। পাশ কাটিয়ে চলে গেল। এটা দেখে রেহান অবাক হলো। সে তার পাশের মেয়েটার সাথে দ্রুত কথা শেষ করে মিলার পিছু নিলো। মিলা একমনে হাটতে হাটতে লাইব্রেরিতে গেল। রেহানও পিছুপিছু গেল। মিলা যেই টেবিলে বসলো। রেহান গিয়ে মিলার সামনে সেই টেবিলেই বসলো। এতে মিলা বিরক্ত হয়ে রেহানের দিকে তাকালো। চারপাশ পরখ করে দেখলো সবাই পড়ছে। সেজন্য সে আস্তে আস্তে বললো।

-এখানে কি তোমার? অন্য টেবিলে যাও।

রেহান নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললো।

-কেন টেবিলে কি তোমার নাম লেখা আছে?

মিলা এই কথা শুনে দাঁত কিড়মিড় করে বললো।

-ফাজিল ছেলে। তুমি একাই এখানে বসে থাকো। আমি নিজেই অন্য টেবিলে যাচ্ছি।

বলেই মিলা উঠতে গেল। রেহান তড়িঘড়ি করে বললো।

-আচ্ছা বসো বসো। তোমাকে আমি বিরক্ত করবো না। একটা কথা জানার ছিলো। আজ আমাকে কথা শোনালে না যে!

মিলা বিরক্ত হয়ে বললো।

-তুমি যা খুশি তাই করো। আমি আর কথা বলতে যাবো না। শুধু আমাকে জ্বালাতে আসলেই মেরে তোমাকে আলু ভর্তা বানাবো।

মিলার এই কথা শুনে রেহান জোরে হেসে ফেললো। আশেপাশের সবাই বিরক্ত হয়ে তাকালো রেহানের দিকে। রেহান হালকা হেসে সবাইকে বললো।

-স্যরি গায়েজ। প্লিজ কন্টিনিউ।

তারপর মিলার দিকে তাকিয়ে দেখলো মিলা রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তা দেখে রেহান বললো।

-কখনো কি আমার দিকে হেসে তাকাতে পারো না?,

মিলা কটমট করে বললো।

-না পারি না।

বলেই হাতের বইটা নিয়ে উঠে দাড়ালো। লাইব্রেরি থেকে বের হলো। রেহানও মিলার পেছন পেছন বের হলো। মিলা রেগে পেছনে তাকিয়ে বললো।

-একদম আমার পেছন পেছন আসবে না।

রেহান দাঁত কেলিয়ে পাশাপাশি হাটতে হাটতে বললো।

-পেছনে হাটতে না করেছো পাশে হাটতে তো না করোনি।

মিলার ইচ্ছে করছে রেহানের মাথা ফাটিয়ে দিতে। সে বললো।

-যা খুশি তাই করো যাও। শুধু আমার সাথে আসবে না।

রেহান হেসে বললো।

-তোমাকে কিন্তু আমি বুঝি। আগে বুঝতাম না এখন বুঝি। রাগী স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড মেয়ে। শুধু আমার বেলাতেই স্ট্রেইট কিছু বলতে পারছো না। বলতে না পেরে অযথাই রেগে যাও।

রেহানের কথা শুনে মিলা হাটা থামিয়ে দিলো। বিদ্রুপ করে বললো।

-ও রিয়েলি তা তুমি কি এমন যে তোমাকে আমি কিছু স্ট্রেইট কাট বলতে পারবো না। হাহ্ নিজেকে এতোটাও ইম্পর্টেন্স দেওয়ার দরকার নেই।

রেহান তবুও দাঁত কেলিয়ে বললো।

-তুমিই ভালো জানো! আমি ইম্পর্টেন্স দেই না তুমি।

মিলা মুখ খুলে কিছু বলতে চাইছিলো তার আগেই রেহান উল্টো দৌড়ে চলে গেল।

মিলা রেহানের যাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকলো।

রাতের বেলা সবাই একসাথে খাওয়ার সময় নীরা লক্ষ করলো শিহাব আজ অন্যান্যদিনের তুলনায় চুপচাপ রয়েছে। বাকি দিন সবার সাথে টুকটাক কথা বললেও আজ চুপ করে আছে। ব্যপারটা নীরার কাছে অন্যরকম লাগলেও নীরা এখন কিছু বললো না। রেহান খেতে খেতে নীরাকে বললো।

-ভাবি মনি একটা কথা বলো তো মিলা এমন বদরাগী কেন? আই মিন তোমার মতো শান্তশিষ্ট মেয়ের যে ওরকম একটা বোন আছে তা সেটা কি কেউ বুঝবে!

রেহানের কথা শুনে নীরা হেসে বললো।

-আজও নিশ্চয়ই ঝগড়া করেছো তোমরা। তুমিও কিন্তু আমার বোনকে কম জ্বালাও না।

নীরার কথা শুনে তিতলি বলে উঠলো।

-হাহ্ ওর কাজই তো সবাইকে জ্বালাতন করা।

এই কথা শুনে রেহান তিতলির মাথায় গাট্টা মারলো। দুই ভাই বোন খোঁচাখুঁচি করা শুরু করলো। জহুরা আর নীরা হাসছিলো ওদের কান্ড দেখে। শিহাব উঠতে উঠতে নীরাকে গম্ভীর কন্ঠে বললো।

-নীরা ঘরে এসো তো। দরকার আছে।

নীরা বললো।

-একটু পরে আসছি।

শিহাব আর কিছু না বলেই চলে গেল। নীরা নিজের মতো তিতলিদের সাথে কথা বলতে থাকলো। জহুরা নীরার কাছে গিয়ে বললেন।

-তুই যা ওদের যা দরকার আমি দেখবো।

-না একটু পরেই যাবো। তুমিও বসো তো।

নীরা জহুরার বারন শুনলো না। সবকিছু গুঁছিয়ে রেজা সাহেবের ঘরে চা দিয়ে তারপর ঘরে গেল। গিয়ে দেখলো শিহাব গম্ভীর মুখে ল্যাপটপ ঘাটছে। নীরা আর বিরক্ত না করে ওয়াসরুম থেকে ফ্রেস হয়ে আসলো। শিহাবের দিকে তাকিয়ে দেখলো শিহাব এখনো কাজই করে যাচ্ছে। নীরা শিহাবের সামনে গেল। তবুও শিহাবের কোনো হেলদোল দেখা গেল না। এতে নীরা একটু অবাক হলো। তারপর ভাবলো শিহাব হয়তো দরকারি কাজই করছে এজন্য কথা বলছে না। তাই সে আস্তে আস্তে হেটে বারান্দাতে গেল। একা একা দাঁড়িয়ে থাকলো কিছুক্ষন প্রায় পনেরো মিনিটি পরে শিহাব ভেতর থেকেই নীরাকে ডাকলো।

-নীরা এখানে এসো।

নীরা শিহাবের ডাক শুনে ভেতরে গেল। তারপর বললো।

-কাজ শেষ? কাজ করছিলে বলে বিরক্ত করিনি। কি দরকার ছিলো?

নীরার প্রশ্ন শুনে শিহাব বললো।

-তোমাকে আমি কখন ডেকেছিলাম আর তুমি কখন এসেছো বলো তো!

নীরা স্বাভাবিক ভাবেই বললো।

-তুমি তো দেখছিলে আমি কাজ করছিলাম। তাছাড়া বাবাকে চা ও বানিয়ে দিতে হয়েছিলো।

শিহাব এই কথা শুনে রেগে গেল। শক্ত কন্ঠে বললো।

-চা খালাও বানিয়ে দিতে পারতো। তোমাকে আমি ডেকেছিলাম। বলেছিলাম দরকার আছে। তবুও আসলে না। আচ্ছা একটা কথা বলো তো। আমি ডাকলেই কি তোমার সব কাজ পরে যায়? আমি নোটিস করেছি এটা। তোমার সমস্যা টা কি? সবার খেয়াল রাখছো তুমি আমি এতে খুবই খুশি। কিন্তু তুমি আমাকে দেখেও দেখছো না। বিয়ের আগের কথা না হয় বাদই দিলাম কিন্তু বিয়ের এতোদিন পরেও তুমি সেই একই আচরণ করো। আমি কাছে আসলে তোমার সমস্যা আমি ডাকলে তুমি ব্যস্ত থাকো। এসব কি!

শিহাবের কথাগুলো শুনে নীরা কি বলবে সে ভেবে পেলো না। বললো।

-এভাবে বলছো কেন?

শিহাব আগের মতোই বললো।

-কিভাবে বলবো? ওহ্ আরেকটা কথা যেটার জন্য ডেকেছিলাম কিন্তু তুমি তো খুবই ব্যস্ত ছিলে। মিসেস জায়মা তোমার স্কুলে গিয়েছিলেন কেন? আর তুমি ওনার সাথে দেখা করেছো কেন?

নীরা এবার বুঝলো শিহাবের রাগের কারন। কিন্তু এতোটাও রেগে যাওয়ার মতো কিছু হয়নি তার মতে। শিহাব এটা জেনেছে কি করে সেটা ভেবে নীরা একটু অবাক হলো। সেজন্য নীরা বললো।

-তুমি জানলে কি করে?

শিহাব রাগী স্বরেই বললো।

-কেন? আমাকে জানাতে চাইছিলে না তুমি?আমি গিয়েছিলাম তোমার স্কুলে তারপর দেখলাম তুমি ওই মহিলাকে হাসতে হাসতে এগিয়ে দিচ্ছো।

এবার নীরা নিজেই একটু রেগে গেল।

-তুমি এইভাবে কথা বলছো কেন শিহাব? আমার স্কুলে গিয়েছিলে আর এটা দেখেই আমার সাথে দেখা না করেই চলে এলে? একজন মায়ের বয়সী মহিলা আমার সাথে দেখা করতে আসলে আমি কি তার সাথে দেখা না করবো? আর উনি তোমার মা শিহাব। যেমনই হোক।

শিহাবের চোয়াল শক্ত হলো। সে রাগের সাথেই বললো।

-উনি আমার মা নন। আমার জীবনের সবথেকে বড় দূর্ভাগ্য আমি ওনার গর্ভে জন্মেছি। তুমি কি জানো না উনি আমাদের সাথে কি কি করেছেন? জানো সবই জানো। আমি আমার ভাই-বোনদের নিষেধ করেছি ওনার সাথে দেখা না করতে। আজকে তোমাকেও আমি নিষেধ করছি তুমি ওনার সাথে দেখা করবে না।

নীরা হতবাক হয়ে গেল শিহাবের কথা শুনে। বিস্মিত কন্ঠেই বললো।

-তুমি এরকম বলতে পারো না।

শিহাব একগুঁয়ে ভাবেই বললো।

-অবশ্যই পারি।

নীরাও বললো।

-আমি কার সাথে দেখা করবো আর কার সাথে দেখা করবো না, এটা তুমি ঠিক করে দিতে পারো না। একজন মানুষ ভুল করেছে অন্যায় করেছে। নিজের ভুল বুঝতেও পেরেছে। তিনি আমার কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন। তোমার কাছেও তিনি ক্ষমা চাইতে চেয়েছেন। আমি কি করে ওনাকে বলবো আমার সাথে যেনো উনি দেখা না করেন।

শিহাবের ধৈর্যের বাধ ভেঙে যাচ্ছে এবার। সে প্রচন্ড রেগে গেল। মাথার রগ দপদপ করছে তার। তবুও ধীর গলায় বললো।

-তুমি ওনার সাথে দেখা করবে না। এটাই আমার শেষ কথা। দূর্ভাগ্যবসত উনি আমার মা। তাই আমি যা বলবো তাই হবে। তুমি ওনার সাথে দেখা করবে না নীরা। আমার সাথে জড়িত কেউ ওনার সাথে দেখা করতে পারবে না। এটাই শেষ কথা।

কথা শেষ করেই শিহাব বাইরে চলে গেল। যাওয়ার সময় জোরে শব্দ করে দরজা লাগিয়ে গেল। নীরা হতাশ হয়ে বসে পরলো। এতো রাগ জীবনে না জানে কি কি দেখায় তাকে।

–চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here