#নিস্তব্ধ_প্রেমাবেগ
#পর্ব_১+২
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ
কিছু আধা পুরাতন জামা গুছিয়ে ব্যাগে ভরে নেয় শ্রেয়া!বা হাতের পিঠ দিয়ে দুচোখ মুছে চৌকি থেকে নেমে পড়ে।গলা থেকে ওড়ানাটা খুলে ঝাড়া দিয়ে আবার পেঁচিয়ে বেঁধে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।রান্না ঘরের কোণা থেকে ঝাড়ু নিয়ে বারান্দাসহ পুরো উঠান বাড়িতে ডোকার গলি ঝাড় দেয়।তারপর জামা নিয়ে পুকুরে চলে যায়।ঘাটে যেতেই দেখা হয় মিনা শিলা রুমানার সাথে। সাথে আয়শা ভাবিও আছে।সবাইকে দেখে মুখটা কালো পানশিটে হয়ে যায়।মাথা নিচু করে ছলছল চোখে এগিয়ে আসে সবার দিকে।ওদের দিকে তাকিয়ে আরো কান্না পাচ্ছে শ্রেয়ার।একটু পর ওদের ছেড়ে জীবনের মত চলে যেতে হবে ভেবেই বুকটা হুহু করে উঠল।চার বান্ধবীর কত স্মৃতি কত আনন্দময় মূহুর্ত ভাবতেই চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।
পা টিপে টিপে দু সিঁড়ি নেমে পানিতে পা দিলো শ্রেয়া।মিনা শিলা এসে ঝাপটে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।অনেকক্ষন কাঁদার পর মাথা তুলে শ্রেয়া।আয়শা ভাবী শ্রেয়ার হাত টেনে বুকে জড়িয়ে নেন।।তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে বড়লোকের বাড়ি যাচ্চিস একটু মান্যি গন্যি করে চলিস।তুই ও তো খুব চঞ্চল আর মুখের উপর সত্যি কথা বলে ফেলিস তাই বলে রাখি সাবধানে চলিস…দোয়া করি অনেক ভালো থাকিস।
শ্রেয়া আয়শা ভাবিকে জড়িয়েও কেঁদে দেয়।
.
.
.
.
.
গোসল সেরে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি এসে কাপড় শুকা দেয় শ্রেয়া..!
সৎমা চেঁচিয়ে বললো খেয়ে বিদেয় হ..!আর কত জ্বালা দিবি বল তো?কম তো জ্বালিয়ে খাস নি।প্রথমে খেলি নিজের মাকে এখন বাপটাকে খেতে বসে আছিস..জলদি বিদেয় হ।
শ্রেয়া মাথা ঘুরিয়ে মাকে দেখে তারপর নিজের কাজে মনযোগ দেয়।মুখে টু শব্দটি করে না।
এমন সময় শ্রেয়ার দাদা এসে ঘরের দুয়ারে বসে।গলা থেকে গামছা নামিয়ে মুখটা মুছে নেয়।
শ্বশুরকে দেখে মাথায় ঘোমটা টেনে দাঁড়ায় শ্রেয়ার সৎমা!
এক গেলাস পানি দেও ত বউ মা
হ বাবা আনতাছি
হামিদা বানু পানি এগিয়ে শ্বশুরের দিকে।তিনি পানি খেয়ে গ্লাস সামনে রেখে বলে খুবই খিদা পাইছে যাও দুই বাসনে ভাত আনো।
বাবা দুই বাসনে ক্যান?আপনে তো..
শেরেয়া খাইবো না??একটু পরই তো মেলা করন লাগবো যাও যাও জলদি আনো
হামিদা বানু মুখ বেকিয়ে মনে মনে একশ গালি দিলো শ্রেয়াকে।তারপর দুই প্লেটে খাবার এনে পাটি বিছিয়ে বসতে দিলো।
শ্রেয়া চুল থেকে গামছা খুলে দড়িতে মেলে খেতে বসল দাদার পাশে।প্রত্যেক লোকমা খাবার মুখে দিতে গিয়ে চোখ বেয়ে টুপটুপ করে পানি পড়ছে শ্রেয়ার। আজই যে এ বাড়িতে তার শেষ খাওয়া।আর হয়ত..!
রহমত মিয়া নাতনির চোখের পানি দেখেও কিছু বলছেন না।কষ্টে তার বুকটাও ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু সৎমায়ের কাছে নাতনি যতটা কষ্টে আছে তার চেয়ে শহরে গেলে কতটা ভালো থাকবে তাই ভেবে বুকে পাথর রেখে চুপ করে আছেন।এখন তিনি কাঁদলে শ্রেয়াও যে ভেঙে পড়বে।
কেনো রকম খেয়ে উঠে গেলো শ্রেয়া।রহমত মিয়া গলা খাঁকারি দিয়ে বললো শেরেয়া রেডি হইয়া ল।
আমজাদ আইয়া পড়লো বইলা।
শ্রেয়া ঘরে যেয়ে বালিশে মুখ চেপে অনেকক্ষণ যাবৎ কান্না করলো।তারপর চোখ মুখ মুছে একটা লাল জামা পড়ে নিলো।
গাড়ির শব্দ পেলো শ্রেয়া।আমজাদ দাদু এসে গেছে তাহলে।ভেবেই আরো কান্না পাচ্ছে শ্রেয়ার।কোনরকম ব্যাগটা নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।
রহমত মিয়া নাতনিকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলেন।বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললেন বাঁইচা থাকলে তোরে দেইখা আইমু বইনা।ভালা থাকিছ।আমি তো জানি তুই খুব নম্র মাইয়া তাও কই দষ্যিপনা করিছ না।সবার কামকাজ কইরা দিছ পারলে লেহাপড়াডাও করিছ।আর কহনো গেরামো আইছ না।
.
.
.
.
দাদার কথায় চিৎকার করে কাঁদতে থাকে শ্রেয়া।
শামসুর মিয়া নেশা জাতীয় কিছু খেয়ে ডুলতে ডুলতে এসে বারান্দায় বসে।মাটির তৈরি বারান্দায় গড়িয়ে পড়ে বলছে যা গা যাহ।আমরা তোরে কিছু দিতে পারি নাই।তাই তোর দাদায় আমগোত্তে তোরে আলদা কইরা দিতাছে যা মা যা।শ্রেয়া বাবার কথা শুনে বাবার কাছে আসতে নেয় হামিদা বানু বাঁধা দেয়।
শ্রেয়াকে আর এগুতে দেয় না আমজাদ সাহেব। মাথায় হাত বুলিয়ে বলে চল দাদুন আমরা চলে যাই।
ব্যাগটা নিয়ে শ্রেয়াকে নিয়ে গাড়িয়ে উঠে বসে।গাড়ির চারপাশে গ্রামের সবাই জড়ো হয়েছে।অনেক মুরুব্বি,মহিলা,বাচ্চারা শ্রেয়ার চলে যাওয়া দেখে কাঁদছে কেউ কেউ সমালোচনা করছে।রহমত মিয়া নাতনিকে বিদায় দিয়ে চোখের পানি মুছেন।
হুজাইফাকে একটা বার দেখে যেতে পারে নি বলে আরে কষ্ট হচ্ছে শ্রেয়ার।
শ্রেয়া মুখে ওড়না চেপে কাঁদতে থাকে।আমজাদ সাহেব মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করতে চেষ্টা করে।
একসময় তার কোলে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়ে শ্রেয়া।
.
.
.
.
.
রহমত মিয়া নাতনির চলে যাওয়া পর ঘরে এসে কিছু কাগজ পত্র বের করে। এমন সময় বাড়ির উঠোনে কিছু লোক আসে।
রহমত মিয়া চেখের পানি মুছে হাসিমুখে পলিথিনে মোড়া কাগজগুলো নিয়ে দুয়ারে আসে।হামিদা বানু রান্না ঘরে কাজ করছিলো। শামসুর মিয়া সেখানেই শুয়ে আছে।
রহমত মিয়া কাগজপত্র লোকেদের হাতে দিয়ে বললেন এই নাও দলিল।লোকদুজন রহমত মিয়ার সাথে হাত মেলালো।তিনি কাপড়ের থলেটা বের করে আনেন ঘর থেকে।
হামিদা বানু মাতায় কাপড় টেনে বাহিরে এসে বললেন আসসালামু আলাইকুম।কিয়ের দলিল গো মনু চাচা।
কেন হামিদা জানো না তোমার শোউরে এই ভিটা মাটি বেইচা দিছে।
হামিদা বানু মুহুর্তেই মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েন।চিৎকার করে বিলাপ করে বলতে থাকেন ও হুজাইফা রে তোর দাদা তোর কপাল পুড়লো রে।ও হুজাইফারে।সব সব ওই ডাইনীর লাইগা হইছে।সব ওই ডাইনীর লাইগা।গেছে তো গেছে সব ধ্বংস কইরা গেছে…!
বিলাপ করে কাঁদতে লাগলেন তিনি।
রহমত মিয়া কাপড়ের থলে নিয়ে ভালা থাইকো বউ মা বলে বাড়ির বাহিরে চলে গেলো।
মনু চাচা যাওয়ার আগে বলে গেলেন হামিদা বানু কালই এই নেশাখোর জামাই আর পোলা লইয়া বারি ছাড়বা।আমরা বাহির করলে কিন্তু বহোউত খারাপ হইবো।
হামিদা বানু স্বামীকে ঝাঁকিয়ে বললেন সব তো শেষ এহনও চুপই থাকবা তুমি??কিছু করবা না।
শামসুরের মাঝে কোনে ভাবান্তর হলো না।
#নিস্তব্ধ_প্রেমাবেগ
#পর্ব_২
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ
মাহমুদ ভিলার ড্রয়িংরুমে সবাই বসে আছেন।ঝর্না মাহমুদ,আকাশ মাহমুদ,জয় ও জিসান মাহমুদ,আদিবা মাহমুদ,ইরিনা,আর সার্ভেন্ট দুজন।
সবাই দাঁড়িয়ে আছে বসে আছেন আমজাদ সাহেব।
শ্রেয়া পাশে বসা।
দুপকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জয়।বিরক্তি নিয়ে বারবার ফোনের দিকে তাকাচ্ছে ইরিনা।জিসান খুব আগ্রহী হয়ে কথা শোনার জন্য দাঁড়িয়ে আছে।
ওর নাম শ্রেয়া! শ্রেয়া রহমান দিহা। ও আমার একমাত্র ছোট বেলার বন্ধুর নাতনি।রহমতের ছেলের মেয়ে।ও আজ থেকে এ বাড়িতেই থাকবে।পরিবারের একজন সদস্য।
ওর কথা তো তোমরা আগে থেকেই জানো তবুও আজ বললাম।
আমজাদ সাহেব বাড়ির সকলের উদ্দেশ্য কথা গুলো বললেন।
তারপর শ্রেয়াকে উদ্দেশ্য করে বললেন _
শ্রেয়া দাদান বলে ডাকে সবাই আমাকে।তুমিও আমায় আজ থেকে দাদান বলে ডাকবে কেমন।শ্রেয়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।
আকাশ মাহমুদকে দেখিয়ে বলল ও আকাশ আমার ছেলে ও আমার ছেলের বউ আমার মা ও বটে! ও জয় ও জিসান ও আদিবা ঝর্না-আকাশের ছেলে-মেয়ে আমার নাতি নাতনি।আর ও হচ্ছে আদিবার খালাতো বোন ইরিনা।ও ও আমার আরেকটা নাতনি।আজ থেকে তুমিও আমার আরেকটা নাতনি।সবাইকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে পরিচয় করিয়ে দেয় আমজাদ সাহেব।
শ্রেয়া ম্লান হাসলো।
সবাই একে একে শ্রেয়ার সাথে পরিচিত হলো কথা বললো।কিন্তু জিসান?সে দুপকেটে হাত দিয়ে বিশ্লেষন করছে শ্রেয়াকে।সাধারন ঘরের সাধাসিধা মেয়ে।লম্বা,শ্যামলা,ছোট চোখ, পাতলা গড়নের সূক্ষ্ম মুখমন্ডল! চুলগুলো কেমন তা বোঝা যাচ্ছে না।কারণ মাথা বাঁধা আর মাথায় ঘোমটা দেয়া।মেয়েটার চেহারায় বিশেষ কিছু না থাকলেও বেশ ভালোই লাগছে।কেঁদেছে খুব বোঝাই যাচ্ছে। কাঁদবে না কেন বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছে তাই হয়ত।নাকের ডগাটা লাল হয়ে আছে।চোখগাুলোও ফোলা।
কিন্তু মোট কথা হলো মেয়েটা এভাবে আমাদের বাসায় চলে এলো কেনো??মার থেকে জানতে হবে।২মিনিট সময়েই এসব ভেবে ফেললো জিসান।
সবাই যে যার কাজে চলে গেলো।যাওয়ার আগে আমজাদ সাহেব বলে গেছেন আপদত ইরিনার বিয়ে অব্দি শ্রেয়া জয়ের স্টাডি রুমের পাশের রুমটায় থাকবে।তারপর না হয় গেস্টরুমে শিফট করে দেয়া যাবে।
সবাই চলে গেলে ঝর্না মাহমুদ(জয়ের মা) শ্রেয়াকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে যান।তারপর একটা ঘর খুলে দিয়ে বললেন এখানেই থাকবে তুমি।
বাড়িটাতে ডুকে যতটা না অবাক হয়েছে শ্রেয়া তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছে ঘরটায় ডুকে।এত গোছানো ঘর হয়??আগে কখনো দেখে নি শ্রেয়া।হা হয়ে সবটা দেখলো।
ঝর্ণা মাহমুদের কথা শুনে ঘোর কাটল শ্রেয়ার..!
বিছানায় শ্রেয়াকে নিয়ে বসলেন তিনি।বলল আমি জানি সবটা তোমার ব্যাপারে।
কথাটা শুনেই ছলছল চোখে তারদিকে তাকালো শ্রেয়া।তিনি বুঝতে পেরেছেন তার কথায় শ্রেয়ার খারাপ লেগেছে।তিনি হেসে শ্রেয়ার চোখ মুছে দিলেন।তারপর বললেন পাগলি!মন খারাপ করছো কেন?সবার পরিবার কি ভালো হয়?তাছাড়া সব সৎ মায়েরা ভালো হয় না।শ’তে কয়েকজন ভালো হয়।
তাতে কি তুমি তো খুব ভাগ্যবতী।কেনো বলোতো?আমাদের মত এরকম একটা পরিবার পেয়েছো।আমাদের বাসার সবাই খুব ভালো।শুধু জয় একটু রাগী তারপর ও সে রাগ কারো উপর খাটায় না।নিজের উপরই দেখায়।ভয় নেই। তাছাড়া বাকি সবাই তোমাকে খুব ভালোবাসবে।
শ্রেয়া একটু হাসার চেষ্টা করলো।
ঝর্ণা শ্রেয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল আমায় আজ থেকে মামনি বলে ডাকবে। দেখবে তোমায় মায়ের মত করে আদর করবো।না ডাকলে কিন্তু আদর করবো না বলে দিলাম…!মুখ ফুলিয়ে বললেন তিনি।
শ্রেয়া তারদিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো।দুহাত বাড়িয়ে দিলেন ঝর্ণা।
শ্রেয়া দ্রুত যেয়ে জড়িয়ে ধরলো তাকে।কাঁদতে কাঁদতে বলল মামনি বলে ডাকবো একটু মায়ের মত আদর কোরো আমায় একটু কোরো!
শ্রেয়ার এরকম কান্না দেখে ঝর্ণা বেগমের মায়ের কথা মনে পড়ে গেলো।তিনিও চোখের পানি ফেলতে লাগলেন।বেশ কিছুক্ষণ পর শ্রেয়া মাথা তুললো।তিনি চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল ওই ওয়াশরুম।ফ্রেশ হয়ে আয় খেতে দি।
খেতে ইচ্ছে করছে না মামনি।থাকি না তোমার কাছে।
আমি খায়িয়ে দেবো।আয়…
শ্রেয়া খুশি হয়ে বলল সত্যিই??
একদম!
জয়ের মা চলে গেলেন।শ্রেয়া ফ্রেশ হয়ে একটা জামা পড়ে নিচে আসে।
জয়ের মা হাসি মুখে বলেন চেয়ারে বস।একে একে সবাই খেতে আসল।
আমজাদ সাহেব বাহির থেকে এখনো ফিরে নি।
আদিবা এসে হাসি মুখে চেয়ারে বসতেই চোখ গেলো শ্রেয়ার জামাটায়।একদম রংহীন জ্বলে যাওয়া জামা।এরকম জামা তো এ বাড়ির কাজের লোকেরাও পরে না।মিনমিনেয়ে বলে চোখ সরিয়ে নিলো আদিবা।
জিসানকে দুবার ডাকতেই জিসান মাথায় চুল ঠিক করতে করতে নিচে এলো।শ্রেয়া হা হয়ে তাকিয়ে দেখছে জিসান।জিসান ব্যাপারটা খেয়াল করলো কিছু বলতে যাবে এমন সময় চোখ পড়ল শ্রেয়ার ছেঁড়া ওড়নার দিকে।কিছুটা পুড়ে গেছে ওড়নাটা।মুখটা শুকিয়ে গেলো জিসানের।
সবাই যে যার চেয়ারে বসে গেছে।জয়ের পাশে বসেছে তার মা তার পাশে বসেছে শ্রেয়া।শ্রেয়ার মুখোমুখি বসেছে জিসান।জয়ের মা শ্রেয়াকে খায়িয়ে দিলেন।শ্রেয়াও খুব খুশি হয়ে খেয়ে নিলো।আমি আর খাবো না মামনি…!
শ্রেয়ার মুখে এরকম শুদ্ধভাষা শুনে সবাই ওর দিকে মুখ তুলে তাকালো।
জিসান বলেই ফেললো কি যেন নাম তোমার।
শ্রেয়া কাচুমাচু হয়ে বলল শ্রেয়া রহমান নিতুল।
আমায় একটা কথা বলোতো…তুমি তো গ্রামে থাকতে..অজপাড়াগাঁ যেটাকে বলে।তোমার এত সুন্দর নাম কে রেখেছে আর তুমি এত শুদ্ধ ভাষায় কথা শিখেছো কোথথেকে??(জিসান)
~আসলে আমার মা ছিলেন গ্রামের বড় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা!তিনি শহরেই থাকতেন তাইমা খুব শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতো আর আমাকেও শিখিয়েছে।আর নামটা আমার মায়েরি রাখা।
আকাশ মাহমুদ কৌতূহলী হয়ে বলল_তোমার মা শহরে বড় হয়েছে?তাহলে গ্রামে বিয়ে হলো কি করে আর তাছাড়া ওরকম একটা লোকের সাথে।
এবার শ্রেয়ার কান্না পাচ্ছে।বাবাকে এরকম লোক বলায়।ধরা গলায় বললো~বাবা এরকম ছিলেন না।
আসলে বাবা শহরে চাকুরী করতেন।আর মায়ের সাথে বাবার শহরেই পরিচয়..!তারপর পালিয়ে বিয়ে করে গ্রামে গিয়ে। আমার ৯ বছর বয়সে মা মারা যান।বাবা তখন-ই বিপথে চলে যান।দাদু ভেবেছিলো আরেকটা মা আনলে হয়ত বাবা ঠিক হয়ে যাবে।শাসন করতে পারবে দেখাশোনা করবে।।আর আমাকেও বড় করবে।তখনই নতুন মায়ের সাথে গ্রাম থেকে বিয়ে দেন দাদু।কিন্তু মা আমাকেও মেয়ে মনে করেন নি।আর বাবার যা টাকা-সম্পত্তি ছিলো তাও শেষ করে দেয়।বাবার আরো অবনতি হয়।
উপস্থিত সবার মন খারাপ হয়ে যায়।শ্রেয়া আস্তে আস্তে উঠে নিজের ঘরে চলে যায়।বালিশে মুখ চেপে খুব কাঁদে।
আমজাদ সাহেব বাড়ি ফিরে দু হাত ভর্তি ব্যাগ নিয়ে।এসেই সোজা শ্রেয়ার রুমে যায়।তার পিছু পিছু একটা বুকসেলফ নিয়ে ড্রাইভার করিম যায়।
শ্রেয়া দাদান..
দাদুর কন্ঠ পেয়ে মাথায় কাপড় টেনে উঠে দাঁড়ায় শ্রেয়া।
তিনি ঘরে যেয়ে বিছানার উপর সব শপিংব্যাগগুলো রাখলেন।বুকসেলফটা টেবিলের পাশেই রাখলেন।
শ্রেয়া এসব দেখে খুব অবাক।
~এসব তোমার।দেখো পছন্দ হয় কিনা।বুড়ো মানুষ তো আন্দাজের উপর এনেছি।ঢোলা হলে আমাদের আউট হাউজে করিমের বউ ময়নার সেলাই মেশিন আছে আদিবার সাথে যেয়ে ঠিক করে নিও।আর শাড়িও আছে!
আর এই বুকসেলফে বইগুলো রেখো..!
শ্রেয়ার খুশিতে চোখে পানি চলে এসেছে।আমজাদ সাহেব শ্রেয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল জামাকাপড় বই গুলো গুছিয়ে শুয়ে পড়ো।আসছি।
শ্রেয়া ডানে মাথা নাড়ল।
চলবে_
বানান ভুল হলে কষ্ট করে নিজ দায়িত্বে ঠিক ভাবে পড়ে নিবেন 🙂