অনুভবে তুমি পর্ব-২৪

0
2687

#অনুভবে_তুমি
#পর্ব_২৪
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

অতশীদের পুরো বাসা ঘেরাও করে রেখেছে পুলিশ।অতশী বাসায় ঢুকতে চাইলে তাকে যেতে নিষেধ করলো সবাই।অতশী তখন বললো,এটা আমাদের বাসা।দয়া করে আমাকে ভিতরে যেতে দিন।পুলিশ তখন বললো, সরি ম্যাম, স্যার নিষেধ করেছে।স্যার না আসা পর্যন্ত কেউ ভিতরে যেতে পারবে না।
–মানে কি?কি শুরু করেছেন আপনারা?এই বলে অতশী জোর করেই বাসার ভিতর ঢুকতে ধরলো।
তখন একজন মহিলা পুলিশ অতশীকে টেনে বের করে বললো,স্টপ।বারণ করা সত্ত্বেও ভিতরে ঢুকছেন কেনো?
অতশী বুঝতে পারলো না কিছু।কেনো এতো পুলিশ?আর কেনোই বা তাকে ভিতরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না?

হঠাৎ সেখানে ইভান আসলো।ইভান এসেই সকল পুলিশ দের উদ্দেশ্যে বললো,অয়ন কে দেখামাত্র গ্রেফতার করবে।সে যেনো পালাতে না পারে।
ইভান কে দেখে অতশী এগিয়ে আসলো।আর বললো,আপনি কি শুরু করেছেন এসব?আমার বাসায় আমাকে ঢুকতে নিষেধ করেছেন?

ইভান তখন ইশারা করে সবাইকে বললো ওনাকে যেতে দাও।
অতশী বাসার ভিতর না গিয়ে ইভান কে একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগলো।
ইভান তখন অতশীকে ধমক দিয়ে বললো,বেশি কথা না বলে বাসার ভিতর চলে যাও, এই বলে ইভান নিজেও চলে যেতে ধরলো।
হঠাৎ একটি সি,এন,জি এসে দাঁড়ালো ইভানের সামনে।
ইভান ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকলো।
সবাইকে অবাক করে দিয়ে সি,এন,জি থেকে বের হয়ে এলো অয়ন।

অয়ন কে দেখামাত্র কয়েকজন পুলিশ তাকে বন্দুক তাক করে ঘেরাও করলো।অয়ন তখন বললো,কেনো আমাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে জানতে পারি কি?

পুলিশ তখন বললো আপনি ইভান স্যারের বোন কে কিডন্যাপ করেছেন।সেই অপরাধে আপনাকে গ্রেফতার করা হলো।
এদিকে অয়ন কে দেখামাত্র ইভান রাগে দাঁত কটমট করতে লাগলো।

অয়ন তখন হাসতে হাসতে বললো,নিজের বউ কে আমি কেনো কিডন্যাপ করতে যাবো?এই বলে অয়ন ইভানের সামনে এসে দাঁড়ালো।আর সবার সামনে জোরে জোরে করে বললো,মৌরি আমার বিয়ে করা বউ।আমরা দুইজন দুইজনকে ভালোবাসি।
ঠিক তখনি মৌরিও গাড়ি থেকে নেমে এলো।

অতশী নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিলো না।সে এসব কি দেখছে?ওদিকে ইভান এতোটাই রেগে আছে যে তার মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছে না।

মৌরির হাত ধরে অয়ন অতশীর সামনে আসলো।আর বললো,তোর ভাবীকে ঘরে নিয়ে যা।
অতশী চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।
অয়ন তখন চিৎকার করে বললো,কথা কানে যায় না?যা রুমে নিয়ে যা।
অতশী সেই কথা শুনে মৌরির হাত ধরে রুমে নিয়ে যেতে ধরলো।

ইভান হঠাৎ কোনো কথা না বলে অতশীর হাত থেকে মৌরির হাত ছেড়ে নিলো আর তাকে টেনে নিয়ে যেতে ধরলো।
অন্যদিকে পুলিশ অয়ন কে নিয়ে যেতে ধরলো।
অয়ন তখন চিৎকার করে বললো, ইভান তোর ক্ষমতা আছে দেখে সেটার অপব্যবহার তুই করতে পারিস না।কোন অপরাধে তুই আমাকে পুলিশে দিচ্ছিস?তোর বোন নিজেই এসেছে আমার কাছে।সে নিজেই বলেছে বিয়ে করতে।এখানে আমার অপরাধ টা কোথায়?

মৌরি ভয়ে কোনো কথাই বললো না।অয়ন তখন বললো মৌরি কথা বলো।এভাবে চুপ করে আছো কেনো?তুমি চুপ করে থাকলে তো আমাকে ধরে নিয়ে যাবে পুলিশ।
মৌরি তখন বললো, ভাইয়া আমি অয়ন ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না দেখেই এই সিদ্ধান্ত টা নিয়েছি।তুমি ওকে ছেড়ে দাও।ওর সাথেই আমি আমার সারাটা জীবন কাটাতে চাই।প্লিজ ভাইয়া।

ইভান সেই কথা শুনে মৌরির হাত ছেড়ে দিলো।ইভানের চোখ মুখের দিকে দেখা যাচ্ছে না।রাগে চোখ লাল হয়ে গেছে। সে কখনোই ভাবি নি মৌরি এইরকম একটা কাজ করবে।ইভান আর তার বাবা মা সারা রাত মৌরির চিন্তাই ঘুম পাড়তে পারি নি।তারা ভেবেছিলো নিশ্চয় মৌরি কে অয়ন অপহরণ করেছে,নিশ্চয় মৌরি বিপদে আছে।আর এদিকে মৌরি বিয়ে করেছে অয়ন কে।
ইভান তখন সকল পুলিশ দের অর্ডার করলো অয়ন কে ছেড়ে দাও।
অয়ন ছাড়া পাওয়া মাত্র ইভানের কাছে চলে আসলো।আর বললো,আমার গায়ে হাত দিয়েছিলি,মনে আছে?আমি তখন বলেছিলাম এর জবাব তোকে অন্যভাবে দিবো।কেমন লাগলো জবাব টি?আমাকে তোর বোনের আশেপাশে যেতে নিষেধ করেছিলি আমি সেজন্য কাছাকাছি রাখার ব্যবস্থা করলাম। আমাকে যদি ধরার চেষ্টা করিস তাহলে কিন্তু হেডলাইনে সবার আগে তোরই নাম থাকবে।সি আই ডি অফিসার ইভানের বোনের জামাই এখন জেলে।
মিডিয়ার লোক যদি শোনে সি আই ডি অফিসার ইভান এর বোন পালিয়ে বিয়ে করেছে তাহলে তোর মানসম্মানের কি হবে একবার ভেবে দেখেছিস?
তোর বাবার মাথাও একদম নিচু হয়ে যাবে।তার চেয়ে বরং সবাইকে জানিয়ে দে আমি তোর বোনের হাজব্যান্ড।তোরা নিজের থেকেই আমার সাথে বিয়ে দিয়েছিস।এটাই সবচেয়ে বেশি ভালো হবে।

মৌরি ইভানের কাছে এগিয়ে এসে বললো,ভাইয়া বিশ্বাস করো আমি বাবা আর তোমার মানসম্মানের কোনো ক্ষতি করতে চাই নি।কিন্তু তোমরা সবাই যখন আমাকে জোর করে বিয়ে দিতে চাচ্ছো,সেজন্য বাধ্য হয়ে এই কাজটি করতে হলো আমাকে।

ইভান অনেক কষ্টে নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করলো।কারন সবার সামনে কিছু বলতে পারলো না সে।তবুও বললো, ভুল যখন করেই ফেলছিস কিছুই করার নাই।তাহলে এক কাজ কর।তুই এখন আমার সাথে বাসায় আয়।পড়ে বড় করে ধুমধামে আবার বিয়ে দিতে চাই তোদের।
মৌরি তখন বললো সত্যি তুমি মেনে নিবে ভাইয়া?আমার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না।

কিন্তু অয়ন সেই কথা শুনে এগিয়ে এলো।আর ইভান কে বললো,কি দারুন বুদ্ধি তোর!একজন সি আই ডি অফিসারের বুদ্ধি যে এতো কম সত্যি আমার জানা ছিলো না।তুই কি ভেবেছিলি আমি তোর ফাঁদে পা দিয়ে মৌরি কে পাঠিয়ে দেবো?কখনোই না।আমি আর নতুন করে বিয়ে করতে চাই না।আর কাউকে জানানোর প্রয়োজন ও মনে করি না।আমি মৌরিকে কিছুতেই তোর সাথে পাঠাবো না।আর মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত ওর হাত ছাড়ছি না।এই বলে অয়ন মৌরি কে নিয়ে রুমে চলে গেলো।
ইভান বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলো।এই পরিস্থিতিতে তার কি করা উচিত কিছুই বুঝতে পারলো না সে।যেখানে নিজের বোনই অন্যজনের পক্ষ নিচ্ছে সেখানে তার কিছুই করার নাই।

অতশী তখন ইভানের কাছে গিয়ে বললো, আগে ভালো করে যাচাই করবেন।তারপর তাকে ধরার জন্য পুলিশ পাঠাবেন।ভাইয়া কি বললো শুনছেন তো?শুধু ভাইয়া না, মৌরিও তো বললো সে নিজে এসেছে। ভাইয়ার এতে কোনো দোষ নাই।
ইভান অতশীর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো।তারপর আর এক মুহুর্ত ও দেরী করলো না।তাড়াতাড়ি করে চলে গেলো।

এদিকে মৌরি কে নিয়ে বাসার মধ্যে ঢুকতেই অয়নের আম্মু আর দাদী এগিয়ে আসলো।অয়নের আম্মু কোনো কথা না বলে হঠাৎ অয়নের গালে ঠাস ঠাস করে দুই টা চড় মারলো।
আর বললো,কি শুরু করেছিস এসব?
বাসার সামনে পুলিশ দিয়ে ভরে গেছে।সন্ত্রাসগিরি কি বাসার মধ্যেও শুরু করেছিস?
কি জবাব দিবো আমি সবাই কে?আমি একজন সন্ত্রাসের মা?
আর এই মেয়ে কে?একে কেনো নিয়ে এসেছিস?
অয়ন কোনো কথা না বলে তার ঘরে চলে গেলো।

অতশী তখন তার আম্মুকে বললো আম্মু অয়ন ভাইয়া বিয়ে করেছে।এর নাম মৌরি।
–বাহঃ দারুন তো।একা একা বিয়েও করে ফেলছে।ভালোই তো।কেউ কিছু বলে না দেখে এতো সাহস বেড়ে গেছে!

অতশী তখন বললো, আসলে আম্মু মৌরিকে ওর বাবা মা বিয়ে দিতে ধরছিলো সেজন্য ওরা চুরি করে বিয়ে করছে।
অতশীর দাদী তখন বললো, তাই বলে আমাদের জানাবে না?তুই সাপোর্ট করছিস এদের?

অতশী তখন বললো যা হবার তা তো হয়েই গেছে এখন বাড়ির বউ টাকে ঘরে ঢুকতে দাও।এই বলে অতশী নিজেই মৌরিকে ঘরে রেখে আসলো।

অয়ন জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
অতশী তখন অয়নের কাছে এসে বললো, ভাইয়া তুই কাজটা ঠিক করিস নি।ইভান আর ওর পরিবারের সবাই অনেক কষ্ট পেয়েছে।এইভাবে না বলে বিয়ে করা মোটেও ঠিক হয় নি।
আম্মু আর দাদীও ভীষণ মন খারাপ করেছে।

অয়ন তখন বললো,এতো দরদ লাগছে কেনো তোর? লেকচার দেওয়া শেষ হলে চলে যেতে পারিস।কারো উপদেশ শুনতে আমার ভালো লাগছে না।অতশী সেই কথা শুনে চলে গেলো।

মৌরি হঠাৎ অয়ন কে জিজ্ঞেস করলো, ব্যাপার কি? সবাই আপনাকে সন্ত্রাস বলছে কেনো?আপনি কি আসলেই একজন সন্ত্রাস?

অয়ন কোনো উত্তর না দিয়ে সেই আগের মতোই চুপচাপ হয়ে থাকলো।
মৌরি তখন অয়ন কে জড়িয়ে ধরে বললো সবার মনে কষ্ট দিয়ে আপনার হাত ধরে চলে এসেছি।বুঝতেই পারছেন ও বাড়িতে আর জীবনেও ঢুকতে পারবো না।এমন কোনো কাজ করবেন না যেনো আমাকে সবার কাছে লজ্জিত হতে হয়।সবাই আমাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে।

অয়ন সেই আগের মতোই মন খারাপ করে জানালার দিকে তাকিয়ে থাকলো।তার মাথায় নানা ধরনের চিন্তাভাবনা। সে কি করবে এখন?ইচ্ছা করলেও সে এই গ্যাং থেকে বের হতে পারবে না।অয়ন এমন ভাবে বাঁধা পড়ে গেছে যে চাইলেও তাকে তার বস বের হতে দেবে না।এই গ্যাং এ একবার যে নাম লেখায় তাকে আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে দেয় না তারা।

অয়নের বাবা মারা যাওয়ার পর পুরো সংসারের দায়িত্ব অয়নের কাঁধে এসে পড়ে।সংসার সামলানোর জন্য সে একটা কোম্পানি তে জয়েন করে।কিন্তু সেই কোম্পানি তে কাজ করতে গিয়ে অয়ন বাজে ভাবে ফেঁসে যায়।তার উপর চক্রান্ত করে ওই কোম্পানির ম্যানেজার। এজন্য পুলিশ ধরতে আসে অয়ন কে।অয়ন পুলিশের নাম শোনামাত্র ভয়ে আঁতকে ওঠে।কারন তখন সে পুলিশ কে ভীষণ ভয় পেতো।সে নিজেকে বাঁচানোর জন্য ম্যানেজারের হাতে পায়ে পড়ে।তখন ম্যানেজার তাকে বলে তার হয়ে কাজ করতে হবে।সে যা বলবে তাই করতে হবে।অয়ন সাথে সাথে রাজি হয়ে যায়।কারন অয়ন স্বপ্নেও ভাবে নি ম্যানেজার তাকে এমন এক অন্ধকার জগতে ঢেলে দিবে।অয়ন নিজের সংসার সামলানোর জন্য আর জেল খানায় যাওয়ার ভয়ে ম্যানেজারের কথা মতো একটা পেপারে সাইন করে।যেখানে লেখা আছে অয়ন কে ১০ বছরের জন্য কাজ করতে হবে।কিন্তু তার আগেই যদি অয়ন কাজ ছেড়ে দেয় তাহলে তাকে মরতে হবে।গ্যাং এর বস তাকে বাঁচতে দেয় না।

এদিকে মৌরি অয়ন কে আবার জিজ্ঞেস করলো।কি হলো আপনার?উত্তর দিচ্ছেন না কেনো?

মৌরির ডাক শুনে অয়ন বর্তমানে ফিরে আসলো।

অয়ন তখন বললো, কে কি বললো তাতে আমার যায় আসে না।মানুষ তো কথা বলবেই। তুমি আমাকে ভালোবাসো আর আমি তোমাকে ভালোবাসি এটাই এখন সবচেয়ে বড় সত্য কথা।আমরা এখন বিয়ে করেছি।এখন চিন্তা করো কিভাবে নিজের সংসার সাজাবে!
–তার মানে সত্যি আপনি সন্ত্রাস?আমার প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছেন কেনো?ভাইয়া অনেকবার বলেছিলো আমাকে।আজ আপনার আম্মুও বললো।

অয়ন তখন মৌরির মুখ চেপে ধরে বললো,তুমি অন্তত আমাকে সন্ত্রাস বলো না।সন্ত্রাস শব্দ টা শুনতে আমার মোটেও ভালো লাগে না।
আমাকে শুধু একটু বিশ্বাস করো।আর আমার পাশে থেকো সবসময়।

মৌরি সেই কথা শুনে অয়নের বুকে মাথা রেখে বললো,আপনার পাশে সবসময় থাকার জন্যই সবাইকে ছেড়ে চলে এসেছি।সবার বিরুদ্ধে গিয়ে আপনাকে বিয়ে করেছি।প্লিজ আমাকে কাঁদাবেন না।
অয়ন মৌরির কথা শুনে তাকে তার বুকের সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিলো।আর মনে মনে ভাবতে লাগলো,মৌরি তুমি ভুল প্রফেশনের মানুষ কে চয়েজ করেছো।জানি না কি আছে কপালে?

সেদিন অয়ন অতশীর কথা শুনে তার আস্তানায় গিয়ে সকল সরাঞ্জাম সরিয়ে রেখেছে।কারন ইভান এই আস্তানার খোঁজ পেয়ে গেছে।
হঠাৎ মৌরি ফোন দেয় অয়ন কে।আর জানায় সে বাসা থেকে চলে এসেছে।আর ফিরবে না বাসায়।
অয়ন সেই কথা শোনামাত্র মৌরির কাছে চলে যায়।মৌরি অয়ন কে দেখামাত্র দৌঁড়ে চলে আসে।আর বলে আজকেই তাকে বিয়ে করতে হবে।তা না হলে আর কখনোই তাদের একসাথে থাকা হবে না।কারন ইভান বুঝতে পেরেছিলো অতশী কিছু একটা করেছে যার জন্য পাত্রপক্ষ মৌরিকে পছন্দ করে নি।তখন ইভান আবার দেখায় মৌরিকে।তখন পাত্রপক্ষ বলে আগের বার এই মেয়েকে তারা দেখে নি।তারা অন্য আরেকজন কে দেখেছে।ইভান তখন বলে এটাই আমার বোন মৌরি।আগের বার বাজে সাজের কারনে অন্য রকম লেগেছিলো।
পাত্রপক্ষ এবার পছন্দ করে মৌরিকে।তখন ইভান ঠিক করে আজকেই তাহলে বিয়ে হবে।পাত্রপক্ষও রাজি হয়ে যায়।সেজন্য মৌরি বাসা ছেড়ে পালিয়ে আসে।

অন্যদিকে ইভান অয়নের বাসা থেকে বের হওয়ার পর সাংবাদিকেরা তাকে ঘিরে ধরলো।সবার এক প্রশ্ন, স্যার আপনি এ বাসায় কেনো পুলিশ ঘেরাও করে রেখেছেন?এই বাসার কেউ কি কিডন্যাপ এর সাথে জড়িত।
ইভান কারো প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।সে সবাই কে এড়িয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো।
ইভান সোজা তার বাসায় চলে গেলো।বাসায় গিয়েও সেই এক প্রশ্ন।সাংবাদিকেরা ইভানের বাসাতেও এসেছে।ইভান কিছুতেই আর এসব সহ্য করতে পারছিলো না।সে ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে থাকলো।এদিকে ইভানের বাবা মা এখনো জানে না মৌরি পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে।

ইভান কে এভাবে ঘরের দরজা বন্ধ করা দেখে ইভানের বাবা ইভান কে ডাকতে লাগলো।ইভান দরজা খুলতেই তার বাবা বললো,কি হয়েছে ইভান?মৌরি কই?
ইভান তখন বললো নাই,মরে গেছে।
–মানে?কি বলছো বাবা?
–হ্যাঁ মরেই গেছে।
ইভানের মা সেই কথা শুনে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো আর বললো,কি হয়েছে মৌরির?কোথায় ওই।
ইভান তখন চিৎকার করে বললো,বললাম তো মরে গেছে।বার বার কেনো জিজ্ঞেস করছো ওর কথা?

ইভানের বাবা তখন ইভানের মা কে বললো তুমি রুমে চলে যাও।আমি কথা বলছি ইভানের সাথে।ইভানের মা সেই কথা শুনে চলে গেলো।
ইভানের বাবা তখন আবার জিজ্ঞেস করলো,কি হয়েছে মৌরির?
ইভান তখন বললো, বাবা মৌরি পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে?
ইভানের বাবা অবাক হয়ে বললো,কি বলছিস এসব?কে সে?ও পালিয়ে না গিয়ে আমাদের কে তো বলতে পারতো।
ইভান তখন বললো,সন্ত্রাসের কথা আর কি বলবে?
এক নাম্বারের সন্ত্রাস সে?যাকে ধরার জন্য আমাদের পুরো টিম অপেক্ষা করছে।তাকে সরাসরি ক্রসফায়ারের পারমিশন দেওয়া হয়েছে।

ইভানের বাবা শোনার সাথে সাথে মাথা ঘুরে পড়ে গেলো।তিনি কি শুনছেন এসব?মৌরি কি করে নিজের এতোবড় সর্বনাশ করলো?
ইভান তখন তার বাবাকে বিছানায় শুয়ে দিলো।আর চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে দিলো।
ইভানের বাবা জাগ্রত হয়েই মৌরি মৌরি বলে চিল্লাতে লাগলো।তার মেয়েকে ফিরে আনতে বললো তার কাছে।
ইভান তখন বললো, বাবা আপনি শান্ত হন।আমি দেখছি কি করা যায়?ইভান সত্যি বুঝতে পারছে না সে কি করবে?কারন অয়নের গ্যাং এর প্রধান কাজ হলো মানুষ খুন করা।কেউ কাউকে মেরে ফেলতে চাইলে তার একটা ছবি আর ঠিকানা এই গ্যাং এর কাছে পাঠিয়ে দেয়।আর এই গ্যাং তাকে মেরে ফেলে।বিনিময়ে অনেক টাকা পাই তারা।এইভাবে একদিনে যে তারা কত লোক কে খুন করে তা কল্পনার বাহিরে।

অয়ন অনেক চেষ্টা করেছে ফিরিয়ে আসতে।কিন্তু তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে।অয়ন কে সহ তার পুরো পরিবার কে খুন করা হবে যদি অয়ন এই পেশা ছেড়ে দেয়।
অয়ন মানুষ খুন করতে করতে এখন ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।সে রেস্ট নিতে চায়।কিন্তু কিভাবে মুক্ত করবে নিজেকে? একদিকে পুলিশ অন্য দিকে তার বস।পুলিশের হাতে পড়লে সারাজীবন এর জন্য জেল আর বসের হাতে পড়লে ডাইরেক্ট খুন হবে।

তিনদিন পর সবাইকে অবাক করে দিয়ে ইভান আবার আসলো অতশীদের বাসায়।কেউ ভাবতেই পারে নি ইভান আবার আসবে।
অতশী নিজেই ইভান কে গেস্ট রুমে বসতে দিলো।আর নাস্তা আনার জন্য চলে যেতে ধরলো। ইভান তখন বললো, অতশী অয়ন কে একটু ডেকে দাও।ওর সাথে আমার কিছু কথা আছে।
অতশী সেই কথা শুনে অয়ন কে ডাকতে গেলো।কিন্তু রুমে গিয়ে দেখে অয়ন আর মৌরি একসাথে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।অতশী সেজন্য ঘুরে আসলো।
ইভান অতশীকে দেখে বললো,কি হলো?অয়ন কই?
–ঘুমাচ্ছে।
–তাহলে ডেকে দাও।
–আপনি গিয়ে ডাকেন।
ইভান সেই কথা শুনে বললো, তোমার দ্বারা কি কোনো কাজই হয় না?এই বলে ইভান নিজেই চলে যেতে ধরলো।
অতশী তা দেখে বললো,না না যাবেন না।আপনি বসেন।আমিই ডেকে দিচ্ছি।
অতশী তখন আবার গেলো অয়ন কে ডাকতে।কিন্তু রুমে তার ভাই ছিলো না।মৌরি একাই ঘুমিয়ে আছে।

অতশী বুঝতে পারলো না কিছু।কোথায় গেলো আবার?

হঠাৎ অয়ন পিছন দিক থেকে অতশীর মাথায় টোকা দিয়ে বললো,এ রুমে কি করিস?

অতশী একদম চমকে গেলো।আর বললো,ইভান এসেছে।তোকে ডাকছে।
–ইভান?ইভান কেনো এসেছে?
–তা আমি কি করে বলবো?এই বলে অতশী চলে গেলো।

অয়ন তখন নিজেও বের হলো রুম থেকে।রুম থেকে বের হতেই দেখে ইভান বসে আছে।
অয়ন ইভান কে দেখে তার কাছে এগিয়ে গেলো।আর বললো,
–কি ব্যাপার সি আই ডি অফিসার?
বোনের বাড়িতে এসেছেন?না তদন্ত করতে এসেছেন?

ইভান অয়ন এর কথা শোনামাত্র উঠে দাঁড়ালো।আর বললো,অয়ন লাস্ট ওয়ার্নিং দিয়ে গেলাম।আর কোনো ক্রাইম করিস না।আমার বোন কে বিয়ে করেছিস দেখে ভাবিস না তোকে আমি ধরবো না।

–আমি কখন বললাম যে আমাকে তুই ধরবি না?অবশ্যই ধরবি।তবে প্রমান দেখাতে হবে।প্রমাণ ছাড়া তুই আমাকে ধরতে পারবি না।

ইভান তখন বললো আজকের নিউজ কি দেখিস নি?তোদের আস্তানা যে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে এখনো খবর পাস নি?অস্ত্র সহ তোদের টিমের ১০ জন কে ধরা হয়েছে।তাদের সবাই কে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।এখন পুলিশের পিটন খেতে খেতে এক দমে সবার নাম বলে দেবে।

অয়ন সেই কথা শোনামাত্র তার মোবাইল টা অন করলো।কারন তার ফোন কাল থেকে অফ আছে।বার বার কে যেনো ফোন করে দেখে মৌরি ফোনটা বন্ধ করে রেখেছিলো।সেই থেকে আর খোলে নি অয়ন।অয়ন বিয়ে করে নতুন এক জীবন ফিরে পেয়েছে।সে ভুলেই গিয়েছে তার আসল পরিচয় কি?

অয়ন ফোন খুলতেই দেখে হাজার টা ম্যাসেজ। কলে না পেয়ে মেসেজ করেছে সবাই।অ
অয়ন তা দেখামাত্র ইভান কে রেখেই সাথে সাথে বের হয়ে গেলো।
ইভান তখন অয়নের হাত ধরে বললো, অয়ন থাম।যাস না এখন।আমার কথা শোন।
অয়ন তবুও চলে গেলো।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here