গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected story)
পর্ব- ১৪
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
–“ছোট সাহেব! জানেন ভালোলাগা থেকে ভালোবাসার এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়।” কথাটি আমি লিখে দ্রুততার সাথে উনাকে মেসেজ করে পাঠিয়ে দিলাম। রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছে রুদ্রিক। গাঁয়ে তার ফরমাল সাদা শার্ট গলায় ঝুলে থাকা টাইয়ের নাট টা খুলে ফেললো। প্রচন্ড গরম লাগছে। একটিবার ‘মায়া কুঞ্জ’ বাড়িতে যেতে হবে। রুদ্রিকের এই গেট-আপ চেঞ্জ করে, নরমাল ড্রেস-আপ করতে হবে। রুদ্রিকের ভাবনার মাঝে-ই’ তার ফোনের মেসেজ টন বেঁজে উঠলো। কাজলের মেসেজ পেয়ে। কিছুক্ষন সেদিকে তাঁকিয়ে রইলো রুদ্রিক।
“ভালোলাগা থেকে ভালোবাসার অধ্যায় শুরু? কীভাবে? ”
কথাটা আনমনে বিড়বিড় করলো রুদ্রিক। নাহ কাজলের থেকে-ই’ জানতে হবে।
কথাটি ভেবেই রুদ্রিক রাস্তের এক কিনারে গিয়ে, নিজের ফোনটা বের করে কাজলের নাম্বারে ফোন করলো।
আমার মেসেজ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছোট সাহেবকে আমাকে ফোন দিলেন। উনার নাম্বার দেখে আমার নিজের অজান্তেই মুখে হাঁসি ফুটে উঠলো।
ছুটকি একবার আমার আমার ফোনের দিকে তাঁকালো আরেকবার আমার দিকে। তারপর ভ্রু কুচকে বলল,
“কীরে আপাই? তোকে কে এমন ফোন দিলো? যে তোর মুখে হাঁসি ফুটে উঠলো?”
ছোট সাহেবের ভাবনায় এতোটাই মগ্ন ছুটকি যে এত্তোক্ষন এই রুমে ছিলো তার আমি খেয়াল করেনি। তাড়াতাড়ি আমি ছোট সাহেবের ফোন কেটে দিলাম।
কাজল এইভাবে হুট করে কল কেটে দেওয়ায় রুদ্রিক কিছুটা রেগে গেলো। এই মেয়ের এত্তো সাহস? রাফসিন শেখ রুদ্রিকের ফোন কেটে দেয়?
আমি ছুটকির দিকে তাঁকিয়ে বললাম,
“এই তুই এখন নিজের রুমে যা? পড়া নেই তোর? ”
ছুটকি আমার কথা শুনে মুখটা বেকিয়ে বইগুলো হাতে গিয়ে দ্রুতপায়ে বেড়িয়ে গেলো। আমার দিকে এমনভাবে তাঁকিয়ে ছিলো, মনে হয় এখুনি চোখ দিয়ে গিলে খেয়ে ফেলবে। ছুটকি বেড়িয়ে যেতেই, আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে, দরজা আটকে ছোট সাহেবকে কল দিলাম।
কাজলের কল পেতেই রুদ্রিক কিছুক্ষন তাঁকিয়ে রইলো। তারপর কিছু একটা ভেবে ফোনটা রিসিভ করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই কাজল বলল,
“ছোট সাহেব! আমি জানি আপনি আমাকে এখন বকা দিবেন। বলবেন তুই সামান্য ড্রাইভারের মেয়ে হয় এই ‘রাফসিন শেখ রুদ্রিকের’ ফোন কেটে দিলি? এত্তো বড় সাহস তোর? যদি এইসব বলার মুড আপনার থেকেও থাকে,কিন্ত প্লিয এখন এইসব বকা শুনার মুড অন্তত আমার নেই। ”
কাজলের কথা শুনে রুদ্রিক হাঁসলো। যাকে বলে নিশব্দ হাঁসি। ফোনের অপার থেকেও কাজল রুদ্রিকের হাঁসির শব্দ পাচ্ছে।
রুদ্রিকের আশেপাশে গাড়ি চলাচল করছে। কেননা রুদ্রিক রাস্তায় মোড়ের কিনারে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।
গাড়ির শব্দ পেয়ে আমি বলে উঠলাম,
“ছোট সাহেব আপনি কী রাস্তায়? ”
—“হু। রাস্তায় আছি। ”
——“আপনার তো এখন ক্লাবে থাকার কথা। ”
(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
“আসলে আমি কিছু কাজে গিয়ছিলাম। আর এইটা বল তুই হঠাৎ এই মেসেজ দিলি কেন? ”
কথাটা ঘুড়ানোর জন্যে বলল রুদ্রিক।
আমি মুচকি হেঁসে বললাম,
“কেন বুঝিন নি আমার কথা? আপনার তো এত্তোগুলো গার্লফ্রেন্ড কিন্ত ভালোবাসা ঠিক কী দিয়ে শুরু হয় তা জানেন নাহ? ”
কাজলের এমন প্রশ্নে রুদ্রিক কিছুটা ইতহস্ত হয়ে পড়েন। আমি কিছুক্ষন চুপ থেকে কিছুটা আবেগময় কন্ঠে বললাম,
“ভালোলাগা থেকেই ভালোবাসার সৃষ্টি। কাউকে যদি আপনার ভালোলেগে যায় তাহলে সেখান থেকেই ভালোবাসার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়।”
—–“এইসব কথা আমার মাথায় ঠিক ঢুকে নাহ।
এইসব ভালোবাসার কথা আমাকে দিয়ে হবে নাহ।”
কাজল হাঁসলো। রুদ্রিকের কথা শুনলে তার হাঁসি-ই’ পায়। বড্ড অবুঝ রুদ্রিক। কাজল খানিক্টা জড়ানো কন্ঠে বলল,
“ভালোলাগার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা থেকে’ই ভালোবাসার নামক নামক বিশাল সমুদ্রের সৃষ্টি হয়। ”
কথাটি শুনে আপনমনে হাঁসলো রুদ্রিক। সে অনেককিছুই’ বুঝে,কিন্তু ঠিক তা প্রকাশ করতে চায়না।
—-” মনে হচ্ছে ভালোবাসা নিয়ে তুই পিএইচডি করে ফেলেছিস। কাউকে আগে ভালোবেসে ফেলেছিস নাকি? ”
কথাড়ি শুনে আমার বুকটা ধক করে উঠে। অতীতের সেই বিষাদময় স্মৃতি মনে পড়লেও, আমার কান্না পাচ্ছে নাহ। বরং অন্যরকম ভালো লাগছে।
আমি হেঁসে বললাম,
“হুম আমি তো একজনকে অনেক ভালোবাসতাম। বলতে গেলে এখনো ভালোবাসি। ”
কথাটি শুনে-ই’ রুদ্রিকের মনে হয় জান যায় যায় অবস্হা। রুদ্রিক শুকনো ঢুক গিলে বলল,
“কাজল তুই সাদিকে ভালোবাসিস? দেখ তুই কিন্তু সাদিকে ভালোবাসতে পারিস না। তুই সাদিকে কেন? তুই কাউকে ভালোবাসতে পারিস নাহ। বুঝেছিস? ”
আমি শুধু ভাবতে পারছিনা। এইসময় উনার ফেসটা ঠিক কিরকম ফানি হতে পারে। আমি শুধু বললাম,
“সত্যি ছোট সাহেব। আপনি মজা ও বুঝতে পারেন নাহ। রাখছি। ”
কথাটি বলেই আমি কট করে ফোন কেটে দেই। কাজলের কথায় রুদ্রিক বোধহয় সস্হি পেলো। এই মেয়েটা কারণে অকারণে তাকে ভয় দেখিয়ে দেয়। কিন্তু এই কথাটা তো ঠিক সে এক মুহুর্তের জন্যে ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। যাকে বলে কাজলকে হারানোর ভয়। আচ্ছে এমনটা হয় কেন?
রুদ্রিক এইসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে। আজকে এমনিতে সেই অনেক টায়ার্ড। কালকে আবার ভার্সিটির ফাংশনের সব আয়োজন করতে হবে। কথাটি ভেবেই রুদ্রিক নিজের কাঁধের ব্যাগ টা ঠিক করে হাঁটা শুরু করে
এদিকে আমি ফোনটা রেখে হাঁসছি৷ সত্যি উনি অদ্ভুদ! হাঁসতে হাঁসতে কখন যেনো চোখ থেকে দুফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। মানুষ যতই চেস্টা করুক না কেন? অতীতের বিষাদমন স্মৃতি হুট করে ভেঁসে উঠলে,চোখ থেকে অনাচ্ছাকৃতভাবে কান্না আসবেই। নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের চোখের সামনে অন্য কারো হতে দেখেছি। এর থেকে যন্ত্রনাময় স্মৃতি আর একটা হতে পারে বলে আমি মনে করিনা। কিন্তু ছোট সাহেবের কথা মনে পড়তেই আমার মনে, এক অন্যরকম শান্তি অনুভব হয়।
আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যে-ই’ করে। কথাটা ভেবেই আমি নিজের ফোনে উনার ছবি বের করি। কালো শার্টে এটিটিউড স্টাইলে দাঁড়িয়ে আছেন।মুখে রয়েছে উনার বাঁকা দাঁতের হাঁসি। আমি ছবিটা দেখে আনমনে বলে উঠলাম,
“আচ্ছা আমি কী আপনাকে ভালোবাসি? ”
উহু বলবো নাহ। আগে আপনার মনে আমার জন্যে যে সুপ্ত অনুভুতি রয়েছে তা আপনার মুখ দিয়ে স্বীকার করাবো হুহ। ”
তখনি আমার মা এসে বললেন,
“কিরে কাজল কি এতো ভাবছিস? কখন থেকে খেতে ডাকছি তোকে। আয় খেতে।
আমি তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম,
” তেমন কিছু ভাবছিলাম নাহ মা!”
মা আমার আরেকটু কাছে এসে বললেন,
“কয়েকদিন ধরে-ই’ তোকে খেয়াল করছি কাজল। তুই কি নিয়ে যেনো চিন্তা করিস। ”
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
“আমি আবার কি নিয়ে চিন্তা করবো?”
মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“তুই যতই লুকিয়ে রাখার চেস্টা করিস না কেন? আমি তো তোর মা আমি বুঝি তুই কিছু নিয়ে তো চিন্তা করছিস। ”
আমি জানিনা মা তোর মাথায় এখন কী ঘুড়পাক খাচ্ছে, কিন্তু একটা কথা-ই’ বলবো। যা করবি ভেবে চিন্তে করবি কিন্তু।
আরেকটা কথা জীবনে সবসময় নিজের সকল কথা আবেগ আমার কাছে শেয়ার করবি। তোর মা অতোটাও খারাপ নয় যে মেয়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে যাবে।”
মা এর কথা শুনে আমি মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। মায়ের কাছ থেকে কখনো-ই’ কিছু লুকানো যায়না।
__________________
ইশানী শেখ ক্লান্ত হয়ে সোফায় মাথা এলিয়ে দিলেন।
ইশানী শেখকে দেখে একজন সার্ভেন্ট এসে, গরম ধোয়া উঠা কফি নিয়ে আসে। ইশানী শেখ কফির মুখ
আফজাল শেখ নিজের বোনকে দেখে এগিয়ে এসে বললেন,
“তোর সাথে আমার কিছু কথা ছিলো?
ইশানি শেখ কফির কাপে চুমুক দিয়েই বললেন,
” বল কী বলবি? ”
—-“ব্যাংক থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো ক্যাস তুলেছিস তুই। কিজন্যে জানতে পারি? ”
ইশানি শেখ গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
“এই কম্পোনিতে আমারাও শেয়ার আছে। তাই আমি চাইবো তুই আমাকে অন্তত ব্যক্তিগত ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবি নাহ। ”
আফজাল শেখ খানিক্টা গলা খাকারি দিয়ে বললেন,
“আচ্ছা। সেসব কথা বাদ দে। আমি যেজন্যে তোর সাথে তোর কথা বলতে এসেছি। তা হলো রুদ্রিকের বিয়ের ব্যাপারে৷ ”
ইশানি শেখ ভ্রু কুচকে বললেন,
“রুদ্রিক সবে মাত্র ভার্সিটিতে এখুনি বিয়ের ব্যাপারটা বেশ তাড়াহুড়ো হয়ে যাবেনা? ”
—-“আমি চাইছিলাম রুদ্রিককে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়েটা দিতে। এতেই ভালো হবে। তাছাড়া এই বিয়ের মাধ্যমে যদি রুদ্রিক ও আমার মধ্যে দুরত্ব কমে যায়। তাতে ক্ষতি কী? ”
সদর দরজার কাছে আসতেই রুদ্রিকের কানে আফজাল শেখের কথা ভেসে উঠে।
—-বাকীটা আগামী পর্বে…
চলবে কী?
(ছোট বলবেন নাহ। ইদ চলে আসলে লিখতে মন চায় না 🌚।কেমন হয়েছে জানবেন কিন্তু)
লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি