#কন্ট্রাক্ট_অফ_ম্যারেজ
Sadia afrin nishi
–“পর্ব-২১”
“এই বল না বাসর রাত কেমন কাটালি?আমার ভাইটা নিশ্চয়ই তোকে অনেক অনেক আদর দিয়েছে?”
–“এসব কথা ছাড় তো মৃধা।”
–” কেন কেন? কেন ছাড়ব? একে তো তুই আমার বেস্টু তারওপর এখন আবার আমার ভাবি। তো সেই সূত্রে আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে তোর পারসোনাল ম্যাটার সম্পর্কে জানার। ”
–” আচ্ছা কিছু যদি নাই হয় তাহলে তুই কী জানতে চাইছিস বল?”
–‘ কিছু হয়নি মানে কী?’
–” কিছু হয়নি মানে কিছুই হয়নি। তোর ভাইটা একটা আস্ত নিরামিষ। বাসর রাতে সে আমার থেকে সময় চেয়ে নিয়েছে নিজেকে আমার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য।”
–‘ কী বলছিস এসব? ‘
–‘ হুম ঠিকই বলছি।’
তারপর আহিবা মৃধাকে তাদের বাসর রাতের সব কথা খুলে বলল। মৃধা কী বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না। তাদের দু বান্ধবীর জীবনটা এমন কেন হলো ? বাসর রাত নিয়ে প্রতিটি নারীর মনেই আলাদা আলাদা স্বপ্ন বোনা থাকে কিন্তু সেই স্বপ্নের জলাঞ্জলি দিতে হয় পুরুষদের ইচ্ছের কাছে। আদ্র হয়তো আহিবাকে সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে মেনে নিবে কিন্তু আহিবার মনের সুক্ষ্ম স্বপ্নগুলো তার কী হবে? এটা ভাবার সময় তার নেই।
—————————-
“কোথায় যাচ্ছেন আপনি?”
মৃধার প্রশ্নে থমকে দাড়াল আয়ান। ঘাড় কাত করে পেছন ফিরে একপলক পর্যবেক্ষণ করে নিল মৃধাকে। তারপর আবার ফিরে গেল নিজ মূর্তিতে। মৃধার প্রশ্নে আয়ানের ত্যাড়ছা উত্তর,
–‘ কৈফিয়ত দিতে হবে তোমাকে?বউ গিরি ফলাচ্ছ?’
মৃধা টাসকি খেয়ে গেল। অপ্রস্তুত কন্ঠে আমতা আমতা করে বলল,
–‘ নাহ তেমন কিছু নয় আসলে মা বলছিল আপনার কথা এজন্য বললাম।’
আয়ান ছোট্ট করে উত্তর দিল,
–‘ ওহ ‘ আচ্ছা তাহলে আসি ন্যায়রা ওয়েট করছে আমার জন্য। ‘
আয়ান চলে গেল দ্রুত। পেছন ফিরে মৃধার করুণ মুখশ্রী দেখার সময় তার আর হলো না। আয়ান চলে যেতেই মৃধা বিষন্ন মনে দৌড়ে গেল বেলকনিতে যেখান থেকে আয়ানের বাড়ি থেকে বিদায় মুহুর্ত দৃশ্যমান।
আয়ান বাড়ি থেকে বেড়তেই ন্যায়রা এসে তাকে জাপটে ধরে কী কী যেন বলতে লাগল। এই দৃশ্য চক্ষুগোচর হলো না মৃধার। বুকের মধ্যে তীব্র ব্যথার সঞ্চার হচ্ছে তার। তবুও দেখা ছাড়া আপাতত তার কাছে আর কোনো অপশন নেই।
এদিকে আয়ানের বিরক্ত লাগছে প্রচুর। অন্যসময় হলে ন্যায়রা এতক্ষণে কড়া করে কিছু কথা শুনিয়ে দিত সে কিন্তু এখন পরিস্থিতি অন্যরকম। কারণ চুপিসারে সেও প্রেয়সীর মায়াভরা মুখের স্নিগ্ধতা দেখতে মিস করে নি। সামনে যতই মৃধাকে জেলাস ফিল করানোর জন্য ন্যায়রাকে স্বায় দিক কিন্তু অন্তরের অন্তঃস্তলে তো শুধু মৃধারই বসবাস। দেখা যাক এই জেলাসির খেলায় কে জেতে আর কে হারে?
————————–
‘মাথা কী খুব ব্যথা করছে? আমি কী একটু টিপে দিব তাহলে?’
আহিবার উদ্বীগ্ন কন্ঠে প্রশ্ন। আদ্র একপলক তার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে নিল।তারপর কিয়ৎক্ষণ পরে মৃদু স্বরে বলল,
–‘ নাহ থাক। কাজের প্রেসার পড়লে আমার এমনটা প্রায়শই হয়ে থাকে। এটা নিয়ে টেনশনের কিছু নেই। তুমি বরং শুয়ে পড়।’
আদ্রের কথায় অস্থিরতা যেন দিগুণ বেড়ে গেল আহিবার। লোকটা এমন কেন? কী হতো যদি মাথা একটু সে টিপে দিত? নিজের শান্তির জন্য না হোক অন্তত তার শান্তির জন্য হলেও তো পারত সম্মতি দিতে? লোকটা কী তাকে একটুও বুঝে না? তার বেদনায় যে দিগুণ রক্তক্ষরণ হয় আহিবার মনে। কবে বুঝবে এই লোক তাকে? আদৌও কী বুঝবে কখনো?
মারাত্মক যন্ত্রণা সহ্য করে আদ্র ঘুমোনোর চেষ্টা করছে। ঘুমটা ঠিকভাবে হলে মাথা ব্যথা অনেকটা কমে যাবে। এদিকে বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করে ছটফট করছে আহিবা। মনে হচ্ছে পেইন আদ্রের নয় তার হচ্ছে। শত চেষ্টা করেও মনের কোণে শান্তি খুজে পাচ্ছে না সে। তীব্র ব্যথার মাঝেও আদ্রের মনের কোণে দেখা মিলল এক চিলতে সুখের। যাক কেউ তো অন্তত তার কষ্টে কষ্টায়িত হচ্ছে। তার যন্ত্রণায় কারও তো ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। কেউ তো বারবার খেয়াল রাখছে তার। কেউ তো করছে টেক কেয়ার।এত এত পাওয়ার মধ্যেও মনের কোণে আরও একটি প্রশ্ন এসে বারবার হানা দিচ্ছে তার। এই অনুভূতি সারাজীবন থাকবে তো এমন? নাকি ভেঙে চুরে চুরমার হয়ে যাবে? আবার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না তো সেই ঘটনার? এমন হলে আদ্র একেবারে চিরতরে নিঃশেষ হয়ে যাবে।
—————————-
ড্রেসিং টেবিলের ফুলদানিটা ঠিকঠাক করে গুছিয়ে করছিল মৃধা। আকাশে প্রচন্ড মেঘ করেছে। মেঘগুলোর রঙ বেশ রক্তিম। মুরব্বিরা বলেন এমন রক্ত রঙা মেঘ জমলে নাকি ঝড় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আয়ানের জন্য ভেতরে ভেতরে টেনশনে শেষ হয়ে যাচ্ছে সে। একে তো ন্যায়রার সঙ্গে বেড়িয়েছে তারওপর আবার এই আশঙ্কা জনক রাতে। টেনশন যেন ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে তার। বারংবার শুধু ঘড়ির কাঁটায় চোখ বুলচ্ছে সে।
রাত এগারোটা নাগাদ ঘরে প্রবেশ করল আয়ান। মৃধার চিন্তার মাত্রা আয়ান আসতেই কিছুটা কমে এলো। কিন্তু আয়ানের ভাব-লক্ষণ তার কাছে সুবিধার ঠেকছে না। কেমন জানি অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে মৃধার পানে। মৃধার ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে। আয়ানের চোখের দৃষ্টি শান্ত। ওই শান্ত চোখের মাঝেও লুকিয়ে আছে কিছু চাওয়া। মৃধা খুব সহজেই আয়ানের দৃষ্টির মানে বের করে ফেলতে সক্ষম হলো। আয়ান হঠাৎ ধুম করে দরজাটা লাগিয়ে দিল। দরজার শব্দে মৃধার আত্মা কেঁপে উঠার উপক্রম। দরজা আটকে আয়ান ঢুলুঢুলু পায়ে একটু একটু করে মৃধার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আয়ানের হাঁটার গতিবিধি এবং চোখের রক্তবর্ণ ধারণ দেখে মৃধা খুব সহজেই বুঝে গেল আয়ান ড্রাংক। অজানা ভয়ে মৃধার বুক দুরুদুরু করছে। মৃধার মন বলছে তার এখন এখান থেকে পালানো উচিত কিন্তু তার পা অবশ হয়ে আছে। বিন্দু মাত্র নড়বার শক্তি তার নেই। আয়ান যখন মৃধার খুব কাছাকাছি প্রায় ঠিক তখনই মৃধা প্রবল চেষ্টার পর এক ছুটে পালাতে চাইল সেখান থেকে কিন্তু দেখা যাচ্ছে তার আগেই আয়ান তাকে আটক করে নিয়েছে নিজের বাহুডোরে। মৃধা গলা কাটা মুরগীর ন্যায় ছটফট করতে রয়েছে আয়ানের থেকে ছাড়া পাবার জন্য। কিন্তু আয়ান,,, সে তো নিজের কাজে অটুট। মৃধার ছটফটানি বন্ধ হচ্ছে না দেখে আয়ানের বেজায় রাগ হচ্ছে। সে এবার স্বজোরে ছুড়ে মে’রে মৃধাকে বিছানার উপর ফেলে দিল। তারপর নিজেও চড়ে বসল মৃধার ওপর। আয়ান নিজের দু’হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে নিয়ে বিছানার সঙ্গে চেপে ধরল মৃধার হাতজোড়া। মৃধা যেন এবার বাকহারা, সর্বশক্তি হারা। মৃধার ছটফটানি বন্ধ হয়ে গেছে মুহূর্তেই। আয়ান সেটা দেখে মৃদু হেসে মৃধার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
–‘ গুড গার্ল। ‘
ততক্ষণাৎ আয়ানের মুখ থেকে মাদকের বিশ্রী গন্ধ ভেসে ভেসে মৃধার নাকে গিয়ে ঠেকল।ওই গন্ধে মৃধার বমি হওয়ার উপক্রম। ব্যাস, মৃধার ধ্যান ভাঙতে এটুকুই যথেষ্ট ছিল।
——————————-
কোনো মিষ্টি মধুর উষ্ণ আলিঙ্গনে ঘুমিয়ে ছিল আহিবা। আজানের ধ্বনি কর্ণপাত হতেই চোখ মেলে তাকালো সে। চোখ খুলতেই ভীষণ ভাবে অবাক হলো সে সাথে লজ্জা। আদ্রের বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে ঘুমিয়ে ছিল সে এতক্ষণ? ভাবা যায় এসব? লজ্জায় লাল নীল বেগুনি হতে লাগল তার মুখশ্রী। সে মনে মনে ভাবল, কতটা বেহায়া হয়ে যাচ্ছে সে দিন কে দিন। বেহায়ার মতো নিশ্চয়ই নিজে থেকে লোকটা কাছে গিয়েছিল? কিন্তু আহিবা হয়তো একটু খেয়াল করলে বুঝতে পারত বেহায়া সে নয় আদ্র হয়েছে। কারণ আদ্রের কাছে নয় বরং আদ্র তার জায়গায় এসে তাকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে ছিল। নিজেকে হাজার টা গালি দিতে দিতে বিছানা থেকে নেমে সে চলে গেল ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে।
চলবে,
(প্রিয় পাঠকমহল,,, আমাকে ডিলিট রোগে পেয়েছে। কপি করতে গিয়ে ভুলে ডিলিট করে ফেলি। গতকালও এটাই হয়েছে। বাই দি ওয়ে, কোনো একটা কারণে মনটা ভীষণ খারাপ গায়েস)