কন্ট্রাক্ট_অফ_ম্যারেজ পর্ব-২০

0
5202

#কন্ট্রাক্ট_অফ_ম্যারেজ
Sadia afrin nishi

“পর্ব-২০”

অফিসে বসে মৃধা নিজের মনে কাজ করছে। হঠাৎ সে খেয়াল করল আয়ান আর ন্যায়রা হেসে হেসে কথা বলতে বলতে অফিসে ঢুকছে। মৃধা তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিল ওদের দিক থেকে। তারপর আবার নিজের কাজে মন দিল। কিন্তু ওই যে বেহায়া মন বারংবার সেদিকেই দৃষ্টিপাত করছে। ওদের একসঙ্গে দেখে হৃদয়ের গহিনে তীব্র ব্যথা জাগ্রত হচ্ছে। এ ব্যথার কী নাম দেওয়া যায়? জেলাসি? হয়তো তাই। কিন্তু মৃধার মন তা মানতে নারাজ। মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে সে নিজেকে বোঝাল আয়ানের সঙ্গে তার বিয়েটা শুধুই একটা কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ। এক বছর পর তাদের দু’জনের রাস্তা ভিন্ন। তাই আয়ান কী করল, কার সঙ্গে মিশলো এটা তদারকি করার অধিকার মৃধার নেই।

মৃধার নিশ্চুপ চাহনি দৃষ্টি এড়াল না আয়ানের। কিন্তু সেদিকে পরোয়া না করে ন্যায়টাকে নিয়ে সোজা ভেতরে চলে গেল সে। এদিকে ন্যায়রা যাওয়ার আগে পেছন ফিরে মৃধার দিকে তাকিয়ে এক বিশ্ব জয়ের হাসি দিয়ে চলে গেল। ন্যায়রার এই হাসিতে মৃধার মনে অজানা আতঙ্কের বীজ বপন শুরু হলো। না চাইতেও কিছু অনিশ্চিত চিন্তা তাকে গ্রাস করতে লাগল ক্রমাগত।

————————-

–“তোমার জন্য এসব কিছু হয়েছে। তুমি নিশ্চয়ই কাজটা ঠিক মতো করতে পারো নি নয়তো আয়ান কীভাবে মৃধাকে বিয়ে করে?”

–” আরে আরে রিলাক্স। এতো ব্যস্ত হচ্ছ কেন? সবে তো কলির সন্ধ্যে। বিয়ে করেছে তো কী হয়েছে আগে সংসার তো করুক?”

–” মানে কী বলতে চাইছ তুমি?”

–” মানে এটাই যে আমাদের প্ল্যান পুরোপুরি ফ্লপ হয়নি। দেখছ না আয়ান কেমন মৃধাকে ইগনোর করছে। হয়তো পরিস্থিতির চাপে বিয়েটা করতে হয়েছে। আয়ান মৃধার এই দূরত্বই বলে দিচ্ছে ওদের রাস্তা বেশি দূর এগোবার নয়।”

–” এমনটাই যেন হয়।”

–” অবশ্যই হবে। হতেই হবে। আর যদি নাও হয় তাহলে এবার এমন ব্যবস্থ করব না যাতে সাপও মরে লাঠিও না ভাঙে।”

তারপর দুজনেই উচ্চস্বরে হাসতে শুরু করল। এদিকে এদের এসব কথা সবটাই শুনে ফেলল মৃধা। সে মনে মনে ভাবল, ‘তাহলে এই সেই কারণ জন্য আয়ান আমাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করছিল। কিন্তু ওদের প্ল্যানটা কী ছিল? আয়ানকে ওরা কী এমন বলেছে যার জন্য এতো কিছু করল আয়ান? উত্তর জানতে মৃধা দরজা ঠেলে রুমের ভেতরে প্রবেশ করল। মৃধাকে দেখা মাত্র নয়ন আর ন্যায়রা দুজনেই অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল।আবার মুহূর্তেই নিজেদের যথাসম্ভব স্বাভাবিক করে নিল। মৃধা ওদের দু’জনের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তু ওদের দু’জনের এসব নিয়ে কোনো ভাবান্তর নেই।আর এই ওরা দু’জন হলো ন্যায়রা আর নয়ন। অফিসের একটা ফাঁকা রুমে বসে তারা তাদের কুকীর্তি গুলো আলোচনা করছিল আর ঠিক সেসময়ই মৃধা ওই রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের কথপোকথন শুনে নেয়।

মৃধার দৃষ্টি উপেক্ষা করে ন্যায়রা তাচ্ছিল্যের সুরে নয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল,

— “এই দেখো চলে এসেছে তোমার জানেমান। কী টান দেখেছ তো প্রতি। তবুও তুমি শুধু বলো ও নাকি তোমাকে লাইক করে না। দিস ইজ নট ফেয়ার নয়ন।”

নয়ন ন্যায়রার কথায় তাল মিলিয়ে ঠাট্টার ছলে মৃধাকে বলল,

–” ওহ রিয়েলি, এতটা পছন্দ করো তুমি আমাকে মৃধা? ওই যে বাংলা সিনেমায় একটা গান আছে না, তুমি যেখানে আমি সেখানে সে কী জানো না, একই বাঁধনে বাঁধা দু’জনে ছেড়ে……………. ”

নয়নকে গানটা শেষ করতে না দিয়ে মৃধা গিয়ে খুব শক্ত করে তার কলার চেপে ধরে বলল,

–” শয়তানের দল, ইচ্ছে করে এসব করেছিস তোরা? আয়ানের চোখে আমাকে অপরাধী তৈরি করেছিস? কী এমন দেখিয়ে আয়ানকে ভুল বুঝিয়েছিস বল আমায়? দ্রুত বল? ”

নয়ন তার কলারের যে অংশটা মৃধা চেপে ধরে আছে সেদিকে একবার তাকালো তারপর অন্যদিকে তাকিয়ে কিয়ৎক্ষণ মৃদু হেসে বলতে শুরু করল,

–” হ্যাঁ বেইব, আমরাই এই কাজটা করেছি তোমাকে আর আয়ানকে আলাদা করার জন্য। কারণ ন্যায়রার চাই আয়ানকে আর আমার চাই তোমাকে। তাই দুজনে মিলে তোমাকে আয়ানের কাছে খারাপ প্রমাণ করেছি। এবার আয়ান আর কখনোই তোমাকে একসেপ্ট করবে না। এই সুযোগে ন্যায়রা আয়ানকে নিজের করে নেবে। আর তুমি যখন স্বামীর অবহেলা সইতে না পেরে বেদনার স্রোতে ভাসবে ঠিক তখনই আমি সেই স্রোত থেকে তোমায় টেনে তুলে আমার ভালবাসার সাগরে ভাসিয়ে দিবো।”

নয়নের কথা শুনে মৃধার রাগ যেন সপ্তম আসমানে চড়ে বসল। সে নয়নের কলার আরো শক্ত করে চেপে ধরে বলল,

–” ইতর,বদমাইশ, না আয়ান আমার থেকে দুরে যাবে আর না তুই কোনোদিন আমাকে পাবি। আমি আয়ানের কাছে সবকিছু প্রমাণ করে দিব।তোরা শুধু দেখে নিস তারপর তোদের কী হয়।”

নয়ন এবারেও হেসে ফেলল মৃধার বক্তব্যে। সে তড়িঘড়ি করে মৃধার হাত থেকে শার্টের কলার ছাড়ানোর এক্টিং করে বলল,

–” এই এই বেইব, কী করছ তুমি? শার্টটা ছিড়ে যাবে তো। আমার তো তোমার জামাইয়ের মতো কোটি কোটি টাকা নেই যে ঘন্টায় ঘন্টায় নিউ ড্রেস পরব। তুমি বরং এই রাগ গুলো বাড়ি গিয়ে নিজের জামাই এর ওপর দেখাও। শুধু শার্ট কেন দরকার পরলে প্যান্ট, গেঞ্জি, টাওয়াল সবকিছু ছিড়ে ফেল তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। কিন্তু আমার শার্টটা ছেড়ে দাও। আমি গরীব মানুষ ভাই?”

এতক্ষণ ন্যায়রা ওদের কথা শুনছিল আর দাড়িয়ে দাড়িয়ে হাসছিল। সে এবার ওদের একদম কাছাকাছি এসে মৃধার হাত থেকে নয়নের শার্টের কলারটা ছাড়াতে ছাড়াতে বলল,

–“দেখো কাপড় ছিঁড়তে গিয়ে আয়ানের গায়ে যেন টাচ করে বসো না। ওটা কিন্তু আমার হক।তুমি কখনোই আয়ানকে আটকে রাখতে পারবে না। আমি আমার আয়ানকে ঠিকই নিজের কাছে এনে তবে ছাড়ব। চলে এসো নয়ন। ”

তারপর নয়ন আর ন্যায়রা মৃধাকে পাশ কাটিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেল। এদিকে ওরা চলে যেতেই মৃধা ধপ করে নিচে বসে পরল। এখন সে কী করবে? কীভাবে এদের বিরুদ্ধে সকল প্রমাণ জোগাড় করবে? আয়ান তো প্রমাণ ছাড়া কিচ্ছু বিশ্বাস করবে না? তাহলে উপায়?

———————–

ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুলে চিরুনি চালাচ্ছে আহিবা। বিকেল পাঁচটা ওভার হয়ে গেছে এখনই আদ্র চলে আসবে। নিজেকে একটু গুছিয়ে নেওয়া প্রয়োজন এখন তার। চুলে চিরুনি কেটে বিনুনি তৈরি করছে সে। অর্ধেক বিনুনি তৈরি হতেই আদ্র চলে এলো। আহিবা অপ্রস্তুত হয়ে উঠে দাড়াল। হাত থেকে চিরুনি পড়ে গেল ফ্লোরে। আদ্র ভ্রু কুঁচকে আহিবাকে পর্যবেক্ষণ করছে । মেয়েকে একটু নার্ভাস লাগছে তার কাছে। আদ্র কৌতুহলী কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,

–” হোয়াট হ্যাপেন্ড? এনি প্রবলেম?”

আহিবা নাকের ওপর জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম এক হাতে মুছে নিল। অন্য হাতে তার অর্ধেক বিনুনি ঝুলছে। ড্রেসিং টেবিলের আয়নাতে সে আদ্রকে দেখছে। আদ্রের প্রশ্নের উত্তর স্বরুপ সে ছোট্ট জবাব দিল,

–” কই কিছু না তো।”

আদ্রের সন্দেহ তবু গেল না। সে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ল,

–” তাহলে এভাবে ঘামছ কেন?”

আহিবার মৃদু স্বরে জবাব,
–” ওই গরম লাগছে হয়তো তাই।”

আদ্র আর কথা বাড়াল না। ছোট্ট করে শুধু “ওহ” বলে চলে গেল ওয়াশরুমে। আহিবা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। হাতে থাকা অর্ধেক বিনুনি দ্রুত টেনে টুনে সম্পন্ন করল। তারপর ছুটে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। এই লোকটা কাছাকাছি থাকলে তার হার্টবিট ফার্স্ট হয়ে যায়।এর কারণ তার অজানা?

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here