#কন্ট্রাক্ট_অফ_ম্যারেজ
Sadia afrin nishi
“পর্ব-২৩”
ন্যায়রার আগমনে বিরক্তির রেশ উপস্থিত সবার মুখে। আয়ানও মনে মনে ভীষণ বিরক্ত কিন্তু মুখে প্রকাশ করছে না। সবাইকে স্তব্ধ দেখে ন্যায়রার প্রশ্ন,
— কী হলো এভাবে চুপ মে’রে গেলে কেন সবাই? আর এখানে আমাকে বাদ দিয়ে কীসের সেলিব্রেশন হচ্ছে শুনি?
আয়ান হেসে জবাব দিল,
— আজ আমাদের মুগ্ধের রেজাল্ট বেড়িয়েছে।মাশাল্লাহ, ভাই আমার খুব ভালো করেছে। সেটারই ছোট্ট সেলিব্রেশন হচ্ছে আরকি।
— তাই বলে আমাকে বাদ দিয়ে?দিস ইজ নট ফেয়ার আয়ান।
–ওকে সরি, এবার আয় তো লেট হয়ে যাচ্ছে তো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ আসছি
অনিচ্ছা সত্ত্বেও সবাই ন্যায়রাকে এই খুশির মুহূর্তের শামিল করতে বাধ্য হলো।সবথেকে বেশি যার ন্যায়রার প্রতি অনিহা সে আর কেউ নয় আমাদের মৃধা। তার অবশ্য সবথেকে বড় কারণ ন্যায়রা গিয়ে আয়ানের সঙ্গে চিপকে দাড়িয়েছে। কী দরকার আছে অন্যের বরের এত কাছে ঘেঁষাঘেঁষি করার। নিজে একটা বর তৈরি করে তার সঙ্গে চিপকে থাক না। কে মানা করছে তোকে? ডাইনি একটা, রাক্ষসী, আমার বরটাকে হজম করার ধ্যান্দা। এমনও হাজারটা গালি মনে মনে ন্যায়রার উদ্দেশ্যে ছুড়ে দিচ্ছে মৃধা।
কেক কেটে সবাইকে কেক খাওয়ানোর পালা শেষ। সবাই মৃধার তৈরি কেকের অনেক প্রশংসা করেছে। শুধু আড়ালে মুখ ভেংচি কেটেছে ন্যায়রা। তারমতে কেকটা খুবই চিপ হয়েছে আরও স্ট্যান্ডার্ড হওয়া উচিত ছিল।
সবাই মিলে এখন আড্ডা দিচ্ছে ড্রইং রুমে। ন্যায়রা এখনো আয়ানের পাশ ঘেঁষে চিপকে আছে। মৃধা ওদের থেকে কিছুটা দুরে। আহিবা ন্যায়রাকে সেভাবে চেনে না তবুও তার কাছেও ওকে কেমন অসহ্য লাগছে। তার মনে হচ্ছে মেয়েটা একটু বেশিই বেহায়া নয়তো অন্যের বরের কোল ঘেঁষে বসার কী আছে? মনের সন্দেহ মনেই রেখে দিয়ে আড্ডায় মন দিল সে।
সবাই মিলে আয়ানকে চেপে ধরেছে একটা গান গাওয়ার জন্য। অবশেষে সবার রিকুয়েস্টে আয়ান সুর তুলেছে গিটারে।রুমের চারপাশে নিস্তব্ধতা মাঝখানে গিটারের টুংটাং আওয়াজে। যতবার গিটারে আওয়াজ উঠছে ঠিক ততবারই মৃধার বক্ষঃস্থল কেঁপে কেঁপে উঠছে। বারংবার মনে হচ্ছে এই গিটারের সুর শুধু তার নামে উঠছে। সত্যিই কী তাই?
( Ek villain মুভির Banjjara গানটি গাইল আয়ান। পুরোটা সময় আয়ান শুধু মৃধার চোখে নিজের দৃষ্টি আবদ্ধ রেখেছে। দুজন কেমন একটা ঘোরে ডুবে ছিল। এই দৃশ্য দেখে হিংসায় জ্বলে পুড়ে ছাড়খার হয়ে যাচ্ছিল ন্যায়রার হৃদয়।)
করতালির আওয়াজে ধ্যানভঙ্গ হয় আয়ানের। মৃধাও এতক্ষণে তার দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছে অন্যত্র। সবাই আয়ানের গানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ শুধু নিস্তব্ধ মৃধা। মৃধাকে চুপ থাকতে দেখে মুগ্ধ বলল,
–‘ কী হলো আপুনি আমার ভাইয়ের গানটা কেমন লেগেছে বলো বলো?’
মৃধা অপ্রস্তুত হয়ে বলল,
–‘ কী বলবো? ভালোই ছিল নিশ্চয়ই। ‘
আয়ান সহ সকলে হতাশ হলো মৃধার জবাবে। পরিস্থিতি অন্যরকম দেখে মৃধা দ্রুত সেখান থেকে কেটে পড়ল। সিড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার সময় কাধ বাঁকা করে ন্যায়রার দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে কটু কথা শোনাতে ভুলল না সে। তারপর আবার দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে গেল নিজ কক্ষে।
—————————–
ভয়ংকর রেগে আছে মৃধা । যেন তার রাগের আগুনে সকলে ভষ্মীভুত হয়ে যাবে এমন। আয়ান তার থেকে কিছুটা দুরত্ব অবলম্বন করে আছে। কারণ এই মুহুর্তে মৃধা হাতের কাছে যা পাচ্ছে তাই ছুড়ে মারছে। আয়ান বারকয়েক মৃধাকে থামানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু ফলাফল শূন্য। আয়ান কিছুতেই বুঝতে পারছে না মৃধা কেন এমন করছে। অবশেষে আয়ান নিজেকে ধাতস্থ করে ধীরে ধীরে মৃধার নিকটে পৌঁছল। তারপর পেছন থেকে মৃধার এক হাত ঘুরিয়ে এনে তাকে বক্ষঃস্থলে মিশিয়ে নিল। হঠাৎ আক্রমণে মৃধা খানিকটা শান্ত হলো। অনেকক্ষণ ভাঙচুরের ফলে এমনিতেই সে ক্লান্ত ছিল তাই আয়ানের তেমন একটা কষ্ট হয়নি তাকে বসে আনতে। আয়ান মৃধাকে বুকের শক্তে চেপে ধরে বলল,
–‘ কী প্রবলেম কী তোমার? এমন করছ কেন?পাগল হয়ে গেলে নাকি?সকাল থেকে দেখছি আমাকে ইগনোর করছ এখন আবার এমন পাগলামি? এসবের মানে কী মৃধা?
মৃধার রাগ যেন আয়ানের কথায় আরো দিগুণ বেড়ে গেল। সে জোরে আয়ানের বুক বরাবর হাত দিয়ে ধাক্কা মা’র’ল। আয়ান কিছুটা দুরে ছিটকে গেল। মৃধা আয়ানের দিকে ক্রোধান্বিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কর্কশ কন্ঠে বলল,
–‘ নাটক হচ্ছে তাই না। তুই কিছুই জানিস না। এতসব কান্ড করে এখন নিজে কিছুই জানে না। যারা আমার ক্ষতি করতে চায় তাদের সঙ্গে সারাদিন ঢলাঢলি করে বেড়াবে আর দিনশেষে আমাকে এসে বলবে কী হয়েছে। তুই কেন এসেছিস এখানে? যা না তোর ওই ন্যায়রা ডাইনির কাছে যা। পেত্নী, শাঁকচুন্নি একটা আমার সবে সবে গড়ে ওঠা সংসার ভাঙার জন্য উঠে পড়ে লেগে আছে। আর তুই আমার বর হয়ে কীনা সর্বক্ষণ ওই ডাইনিকে সঙ্গ দিস। আজ তোর একদিন কী আমারই একদিন। এই মৃধাকে যতটা নরম মনের ভাবছিস এই মৃধা ঠিক ততটাই কঠিন। আজ দেখাব তোকে মজা কাকে বলে। ঘরে বউ রেখে অন্য নারীর সঙ্গে ঘেঁষাঘেঁষি তাও আবার বউকে দেখিয়ে দেখিয়ে। দাঁড়া তোর হচ্ছে আজকে।’
কথা শেষ করে মৃধা একটা ফুলদানি হাতে তুলে নেয় আয়ানের গায়ে ছোড়ার উদ্দেশ্যে। আয়ানের চক্ষু চড়কগাছ। একে তো মৃধা তাকে তুই তুকারি করছে তারওপর আবার থ্রেড দিচ্ছে। এখন আবার মা’রতে উঠছে। আয়ান দ্রুত পদে হেটে এসে মৃধার থেকে ফুলদানি টি তিনি নিল।অতঃপর বলল,
–‘ এসব কী বলছ তুমি মৃধা। আমাকে তুই তুকারি করছ। তুমি নিশ্চয়ই সত্যি সত্যি পাগল হয়ে গেছ। আর ন্যায়রা তোমার ক্ষতি কেন করতে যাবে? তুমি শুধু শুধুই ওকে ভুল বুঝস।’
–‘তাই না আমি ভুল বুঝছি আর তুই তো খুব সঠিক বুঝছিস। তা কীভাবে বললে বিশ্বাস করবি তুই যে তোর ন্যায়রা আমার ক্ষতি চাইছে? গতরাতে মাতাল হয়ে সবই তো স্বীকার করে নিয়েছিস আমার কাছে তাহলে এখন এসব নাটক বাদ দে। তুই নাকি আমায় ভালবাসিস? তো কেমন ভালবাসা রে তোর যে সামান্য একটা দুই সেকেন্ডর ভিডিও দেখে আমাকে অবিশ্বাস করলি? আমি কী তোকে বলেছিলাম আমি নয়নকে ভালবাসি? আর না ওই ভিডিওতে আমি নয়নকে ভালবাসি বলেছিলাম? কোনটা বল? শুধু হাত ধরা দেখেই বুঝে নিলি আমি নয়নকে ভালবাসি। অদ্ভুত!’
আয়ান প্রশ্নাত্বক দৃষ্টি নিয়ে বলল,
–‘তাহলে নয়ন কেন তোমার হাত ধরে ছিল? ‘
–‘ ওই যে ষরযন্ত্র। ষরযন্ত্র করে আমাদের আলাদা করার জন্য এমনটা করেছে ন্যায়রা আর নয়ন। আমি সবকিছু ওদের কাছ থেকে জেনে নিয়েছি। ‘
–‘ কীভাবে? ‘
তারপর মৃধা আয়ানকে সবকিছু খুলে বলল। দুই -এ দুই-এ চার আয়ান বুঝতে পারল আসলেই মৃধা ঠিক কথা বলছে। আয়ান মৃধাকে বলে,
–‘ আচ্ছা আমারও একটা সন্দেহ ছিল কিন্তু সেটা পুরোপুরি সিওর ছিলাম না। তবে এখন আমি পুরো কনফিডেন্ট। কিন্তু আমাদের ওদেরকে ধরতে হবে নয়তো ওরা কিছুতেই ধরা দিবে না। ‘
–‘ হুম সেটা আমি জানি এজন্যই তো এতদিন সব জেনেও কিছু করতে পারছিলাম না। ‘
–‘ আচ্ছা তাহলে একটা কাজ করি আমরা দুজনে একটা প্ল্যান তৈরি করি যেটার মাধ্যমে খুব সহজেই ওদের ধরতে পারব। ‘
–‘ হুম করাই যায় তবে খুব একটা সহজ ব্যাপার নয় কিন্তু? ‘
–‘ খুব কঠিনও নয়। তুমি সাথে থাকলে সব অসম্ভবকে সম্ভব করতে প্রস্তুত আমি।’
–‘ এ্যাহহহ ঢং, হুহহ
—————————
বেলকনিতে থাকা গোলাপ গাছে আজ লাল রঙা গোলাপের দেখা মিলেছে। সেই গোলাপ খুব সন্তপর্ণে ছুয়ে দিচ্ছে আহিবা। এই গোলাপ গাছটি আদ্র লাগিয়েছে। শুধু গোলাপ নয় আরও নানারকম ফুলের গাছ দিয়ে ডেকোরেট করা তার বেলকনি। আহিবার কোমল হাতের ছোঁয়ায় আদ্রের গাছগুলো আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। আহিবা ফুলগুলোর সঙ্গে আপন মনে খেলা করছে। হঠাৎই পেছন থেকে রাশভারী কন্ঠস্বর কানে বাজতেই কেঁপে উঠল সে।
–‘ আমার গাছে হাত দেওয়ার সাহস কী করে হলো তোমার? ‘
চলবে,