উপন্যাসের_সারাংশ_প্রহর [৫]
#sadiya_jannat_sormi (লেখিকা)
সকাল নয়টার দিকে ঘুম ভাঙল মেঘার,রাত একটার দিকে রুমে এসে শুয়েছে সে। ঘুম থেকে উঠে ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই হুড়মুড় করে বিছানা থেকে উঠে পড়লো মেঘা। নয়টা বেজে গেছে ইশশ্, নির্ঘাত আজ ক্লাস মিস করবে। তড়িঘরি করে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে বাচ্চাদের মতো বইয়ের ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে রুম থেকে বের হলো। বসার রুমে আসতেই শায়লা বেগম মেঘার পথ আটকে দাঁড়ালেন, চোখ পাকিয়ে বললেন,,,, নাস্তা না করে কোথায় চললি তুই?
খালামনি প্লিজ, আজকে যেতে দাও নাহলে ক্লাস মিস করবো আমি।(মেঘা)
কথা গুলো বলেই মেঘা আশে পাশে তাকালো কিন্তু কোথাও অহনা কে দেখতে না পেয়ে জিজ্ঞেস করল,, আচ্ছা খালামনি অহনা কোথায়? ওকে তো আশে পাশে কোথাও দেখছি না।
ও তো কখনই বেরিয়ে গেছে, আমি জিজ্ঞেস করলাম তুই একা যাচ্ছিস কেনো তখন ও বললো তুই নাকি আজ যাবি না তাই ও একাই যাচ্ছে।(শায়লা বেগম)
শায়লা বেগমের কথা শুনে মেঘা রেগে গিয়ে বলল,,ও আমাকে ছেড়ে চলে গেলো আবার এটাও বললো আমি আজ যাবো না। ওয়েট অহনা ওয়েট,তোর জম তোকে শেষ করতে আসছে,,, খালামনিকে পাশে সরিয়ে দিয়ে মেঘা তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বেরিয়ে গেল।
________________________________
ব্লাক শার্ট টা ইন করে নিয়ে হসপিটালে যাওয়ার জন্য রেডি হলো ড. মাহদী।আজ ওর অফ ডে তার পরেও হসপিটালে যাওয়ার জন্যই রেডি হয়েছে সে,অফ ডে তে ছেলে কে হসপিটালে যাওয়ার জন্জন্য রেডি হতে দেখে বেশ অবাক হলেন ড.আফরোজা চৌধুরী। তিনি মাহদীর এই অদ্ভুত কর্মকাণ্ড বুঝতে না পেরে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন,, এসব কি হচ্ছে মাহদী,তুমি অফ ডে তে হসপিটালের জন্য রেডি হয়েছো কেন, আমার জানামতে আজ তো তুমি নিজেই ছুটি নিয়েছিলে। তাহলে আবার,,
আফরোজা চৌধুরীর কথা শেষ হওয়ার আগেই মাহদী ওনাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,,,,,
মা তুমি কি চাও না তোমার নাতি নাতনি দের সাথে খেলতে?
মাহদীর কথা শুনে বিষম খেলেন আফরোজা চৌধুরী।যেই ছেলে বিয়ের কথাটাও সহ্য করতে পারে না সেই ছেলে আজ বলছে তিনি কি নাতি নাতনি দের সাথে খেলতে চান না। আফরোজা চৌধুরী কে চুপ থাকতে দেখে মাহদী আবার জিজ্ঞেস করল,,,
কি হলো মা,বলো তুমি চাও না কি?
হ্যা হ্যা চাই তো, চাইবো না কেন? কিন্তু আগে আমি আমার এক মাত্র ছেলের বিয়ে টা তো দেই তারপর নাতি নাতনির আশা করবো। তুই হঠাৎ এসব কথা জিজ্ঞেস করছিস কেন বলতো?(আফরোজা চৌধুরী)
না মা,ও কিছু না আমি তো এমনিতেই একটু জিজ্ঞাসা করলাম আর কি। আচ্ছা আমি এখন যাই, নাহলে লেইট হয়ে যাবে আমার, এই বলে এপ্রোন টা হাতে নিয়ে মাহদী রুম থেকে বেরিয়ে গেল। মাহদীর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে তিনি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে রইলেন, ছেলের কথা বার্তা সন্দেহ জনক মনে হচ্ছে ওনার। মাহদী আবার নতুন প্রেমে টেমে পড়লো না কি এই দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগতে লাগলেন তিনি।
_____________________________________________
আধঘন্টা যাবত মেঘার সামনে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে অহনা।মেঘা ভার্সিটিতে এসেই আগে অহনা কে খুঁজে বের করে শাস্তি দিয়েছে আর শাস্তি টা হচ্ছে পয়চল্লিশ মিনিট ওকে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। অলরেডি একটা ক্লাস তো মিস হয়েছেই এখন অহনার মনে হচ্ছে দ্বিতীয় ক্লাসটাও মিস যাবে এই মেঘুর বাচ্চার দেওয়া শাস্তির জন্য।ওর সামনেই মেঘা আয়েশি ভঙ্গিতে বসে আছে আর একটু পর পর ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে।ভাব টা এমন যেন অহনা কে কা’টা ঘায়ে নুনের ছিটা দেওয়ার মতো। একটু পরে অহনা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,,
মেঘু হয়েছে কি?সরি বলছি আর কখনো তোকে এইভাবে একা ফেলে চলে আসবো না। এইবারের মতন মাফ করে দে বইন প্লিজ।
উহু,তোর এই মিছে মিছে অভিনয়ে আমার মন আর গলবে না অহনা। ভুল যখন করেছিস তখন শাস্তি তো পেতেই হবে, ভুল টা তোর আমাকে একা ফেলে আসা নয়, খালামনির কাছে মিথ্যা কথা বলার জন্য। তুই খালামনির কে বলেছিলি যে আমি আজ ভার্সিটিতে আসবো না তাই তো?(মেঘা)
হ হ্যা হ্যা মানে না মানে ওই আর কি বলেছিলাম। কি করবো বল, তুই যেভাবে ম’রা’র মত ঘুমাচ্ছিলি আমি তো ধরেই নিয়েছিলাম তুই আজ আসবি না।(অহনা)
তাহলে তুই আমাকে ডাকতে পারিস নি?(মেঘা)
সরি, তখন মাথায় আসে নি কথা টা।(অহনা)
এই কারণেই তোকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছি আমি। চল এখন হাত নামা,আজ আমাকে হসপিটালে যেতে হবে সেটা জানিস তো? নাকি এটাও ভুলে গেছিস।(মেঘা)
না মনে আছে আমার কিন্তু তুই ক্লাস করবি না কি?(অহনা)
মেঘা অহনার কথায় মাথা নাড়িয়ে না বললো। অহনা আর বিশেষ কিছু বললো না ওকে, বলে যে লাভ নেই এই মহান সত্যি টা ও জানে।অগ্যতা মেঘার সাথে হসপিটালের উদ্যেশ্যে পা বাড়ালো।
হসপিটালে এসে প্রথমেই ইশতিয়াকের সামনে পড়লো মেঘা। ওকে দেখেই মেঘা রাগে রি রি করে উঠলো, এই অসভ্য ছেলে টা হসপিটালে ও চলে এসেছে। এদিকে ইশতিয়াক ও মেঘা কে দেখে ভ্রু কুঁচকালো, ফালতু মেয়ে টা হসপিটালে কেন এসেছে তার কারণ ভেবে পেলো না।মেঘা রাগে গজগজ করতে করতে ইশতিয়াকের পাশ কাটিয়ে চলে এলো, কেন জানি ইশতিয়াক কে দেখেই ওর মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে।ওই দিন অতগুলো কথা শোনার পর ইশতিয়াকের প্রতি ওর রাগ জন্মেছে খুব, এখন তো কিছু হয় নি তারপরও রাগ হচ্ছে ওর। ইশতিয়াক ওকে ওইদিন কথা শুনিয়েছিল সেজন্য আজ ওকে কথা না শোনালেই নয় তাই পাশ কাটিয়ে আসার সময় বিড়বিড় করে বললো, কি এমন সুপার স্টার তিনি যে তাকে দেখে মেয়ে রা ধাক্কা খেতে আসবে?পুরাই একটা ছাগলের মত চেহারা তার উপর আবার এটিটিউড দেখাতে আসে।
ইশতিয়াক মেঘার কথা শুনে যতক্ষণে ঘুরে তাকিয়েছে ততক্ষণে মেঘা কোথায় উধাও হয়ে গেছে। বুঝতে পারলো না মেয়ে টা কি ওকে এই কথা গুলো বললো নাকি অন্য কাউকে।যাকেই বলুক ওকে না বললেই হলো,আই সি ইউ এর সামনে বিশ্রাম চেয়ারে বসে লাবীব রহমানের আপডেট জানার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো ও।
মেঘা আজ হসপিটালে এসেছে নিজের রিপোর্ট নেওয়ার জন্য প্লাস রিপোর্ট এ কি আছে তা ডক্টরের কাছ থেকে জানার জন্য। সেজন্য ডক্টর মাহদীর সামনে দশ মিনিট ধরে বসে আছে,ডক্টর রিপোর্ট দেখছেন কিন্তু কিছু বলছেন না এখনো। একটু পরে ডক্টর বললেন,, তোমার কোনো সমস্যা নেই, রিপোর্ট একদম ঠিক ঠাক আছে, কোনো সমস্যা দেখা যায় নি।ডক্টরের কথা শুনে মেঘা হাফ ছেড়ে বাঁচলো, কয়েক দিন হঠাৎ করেই মাথায় প্রচন্ড ব্যথা করছিল তাই দেখে খালামনি জোর করে হসপিটালে তো নিয়ে এসেছেই সাথে টেস্ট তো করিয়েছে। কারণে অকারণে ও যে মাথা ব্যথা করতে পারে এটা খালামনি কে বোঝানো সম্ভব হয় নি তাই এই অহেতুক ঝামেলায় পড়তে হয়েছে।মেঘা হাসি মুখে বললো,,,,
তাহলে আমি আসছি, ধন্যবাদ আপনাকে বিষয় টা ক্লিয়ার করার জন্য। নাহলে আমার খালামনি যা মানুষ উনি কিছুতেই শান্ত হতেন না,ইনফ্যাক্ট রিপোর্টের কথা যতক্ষণ পর্যন্ত না শুনবেন ততক্ষণ তিনি শান্ত থাকবেন না।
মাহদী মেঘার কথা শুনে মুচকি হাসলো, তারপর বললো,,,,,, গার্ডিয়ান তো এই রকমই হয়। বাচ্চাদের অসুস্থতায় তারা ভালো থাকতে পারেন না, তুমি যখন কারো গার্ডিয়ান হবে তখন তুমিও এমন করবে।এই নাও তোমার রিপোর্ট আর তোমার খালামনিকে বলিও ওনার ভাগ্নি একদম ঠিক আছে।
মেঘা রিপোর্ট টা হাতে নিয়ে মাহদীর কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল আর মেঘার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মাহদী হাসতে লাগল।ও মেঘার রিপোর্টের ভিতরে ছোট একটা চিরকুট ঢুকিয়ে দিয়েছে যেটা দেখেই মেঘা শকড হয়ে যাবে।
চলবে ইনশাআল্লাহ