ধোঁয়াশা পর্ব-১৮

0
944
  • #ধোঁয়াশা
    #পর্ব_১৮
    #Saji_Afroz
    .
    .
    .
    সবটাই যেনো ধোঁয়াশা লাগছে নিয়ন্তার কাছে।
    প্রিয়ার স্বামী যদি বাবলু হয় তাহলে ইরফানের বউ বলতে শুনেছিলো কেনো সে?
    আলিনা কেনো ইরফানকে বাবাই বলে ডেকেছিলো!
    নানারকম প্রশ্ন এসে জমেছে নিয়ন্তার মনে। এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য ইরফানের সাহায্য তার প্রয়োজন।
    .
    বিছানার পাশে এসে ঘুমন্ত অবস্থায় ইরফানকে দেখতে পেলো নিয়ন্তা। তার পাশে বসে কপালে আলতো করে ঠোঁট ছোয়াতেই ইরফান তার চোখ জোড়া খুলে বললো-
    স্বপ্ন দেখছি না তো!
    -নাহ। তুমি ঘুমের ভান ধরে ছিলে?
    -আজ্ঞে না। কাল অনেকক্ষণ ঘুরাঘুরি করার কারণে শরীরটা মেষমেষ করছে।
    -ওহ! তা তোমরা কে কে গিয়েছিলে?
    -এখানকান বন্ধু এরা। তুমি চিনবেনা।
    -ছবি তুলোনি?
    -তুলেছি।
    -দেখি?
    -এটার জন্য পারমিশন নিতে হবে নাকি!
    .
    বালিশের পাশ থেকে ইরফানের মোবাইল নিয়ে নিয়ন্তা গত কালকের তোলা ছবিগুলো দেখতে থাকে।
    বন্ধুদের সাথে ইরফানের শ্রীমঙ্গলের তোলা ছবি দেখে ভাবনায় পড়ে গেলো নিয়ন্তা।
    ইরফান যদি বন্ধুদের সাথে থাকে তাহলে প্রিয়ার সাথে কে ছিলো!
    .
    নিয়ন্তা ইচ্ছে থাকা স্বত্তেও ইরফানকে এই বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করছেনা। যদি এসব সত্য হয়ে থাকে ইরফান কিছুই স্বীকার করবেনা। আর যদি মিথ্যে হয়ে থাকে অহেতুক প্রশ্নের কারণে ইরফান মনে কষ্ট পাবে। এমনিতেই তাকে পদে পদে কষ্ট দিয়েছে নিয়ন্তা। তবে মিথ্যে হওয়ার কিছু নেই। সে নিজের চোখে দেখেছে যা দেখেছে। কিন্তু যা দেখেছে তা সত্যি হতে হবে কথা নেই। এর পেছনে রহস্য লুকিয়ে থাকতে পারে।
    নিয়ন্তার উদঘাটন করতে হবে, কি সেই রহস্য!
    .
    .
    .
    -আমি নিয়ন্তাকে বুঝাতে চেয়েছিলাম, ভালোবাসার মানুষটা বিশ্বাস ভঙ্গ করলে কতোটা কষ্ট হয়। আজ একটুর জন্য হলেও নিয়ন্তা সেই কষ্টটা বুঝেছে।
    .
    বর্ণের কথা শুনে প্রিয়া বললো-
    নিয়ন্তা কি এই রহস্য আদৌ বের করতে পারবে?
    .
    প্রিয়ার কথা শুনে স্মিথ হেসে বর্ণ বললো-
    পারবে। নিয়ন্তা অতি চালাক একজন মেয়ে। সে নিশ্চয় রহস্যের কাছাকাছি চলে আসবে। আর আমি এটাই চাই। এই রহস্যের সমাধান করতে করতে সে যেনো আসল রহস্যে পৌঁছে যায়।
    -নিশ্চয় পৌঁছাবে।
    -তার জন্য তোমার আর বাবলুর সাহায্য আমার একান্তই প্রয়োজন।
    -আমরা তো আছি তোমার পাশে।
    -আজ ইরফান সেজে বাবলু আর আলিনা সেজে ইরা যে অভিনয় করেছে এতে নিয়ন্তার মনে হাজারো প্রশ্ন জমেছে।
    -নিয়ন্তা যদি সে মুহুর্তে আমাদের কাছে ছুটে আসতো?
    -আসতো না আমি জানতাম। সে ইরফানের আন্টি বদলের দিনও তাকে কিছু না বলে নীরবে চলে গিয়েছিলো। এমনি নিয়ন্তা।
    -কিন্তু সেদিন সে সত্যিটা জানতে চেষ্টা করেনি।
    -আজ করবে। কারণ এখন তার বিশ্বাস আছে ইরফান এতোটা ভুল করতেই পারেনা। সেই বিশ্বাসটা তখন ছিলোনা ইরফানের প্রতি। কালকের ঘটনার পর প্রথমে ইরফানের প্রতি রাগ হলেও পরে সবটা ঠান্ডা মাথায় ভাববে নিয়ন্তা। এভাবে আস্তে-ধীরে সে সব সত্যির মুখোমুখি হবে।
    -আমিতো সেদিনই বুঝেছিলাম কোনো একটা গোলমাল নিশ্চয় আছে, যেদিন ইরফান আমাকে বলেছিলো আমার ব্যাপারে কিছু যেনো নিয়ন্তা জানতে না পারে।
    এরপর আর সুযোগই হয়নি কি এবং কেনো নিয়ন্তার কাছে অজানা থাকবে তা জানার। তবে আজ বুঝতে পারলাম কি।
    -কি?
    -এই যে আমি আত্মা দেখতে পারি, তাদের সাথে কথা বলতে পারি। এসব যদি নিয়ন্তা জানতো নিশ্চয় আমার মাধ্যমে কিছু বের করার চেষ্টা করতো। আর তাই ইরফান চায়নি নিয়ন্তা আমার সম্পর্কে কিছু জানুক। আমিও না বুঝে কিছু জানায়নি নিয়ন্তাকে। এমনি সে এটাও জানেনা আমার স্বামী মৃত। আমি যতটুকু বুঝেছি ইরফানও তাকে এই বিষয়ে কিছু বলেনি।
    -সেটা ভালোই হলো একদিকে। এই পয়েন্ট টা আজ আমি কাজে লাগাতে পারলাম।
    -হু।
    .
    কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বর্ণ বললো-
    আমার কাজ শেষ হলেই চলে যেতে হবে আমার। কিন্তু তোমার স্বামীর আত্মা তোমাদের সাথেই থাকে কেনো?
    .
    ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে প্রিয়া বললো-
    আলিনার জন্য। চেয়েছিলাম দূরে থাকবো সব কিছুর থেকে। কিন্তু আলিনা তার বাবাকে ছাড়া অসুস্থ হয়ে পড়ছিলো। এদিকে আমিও বাবলুকে বলেছিলাম তার আত্মা যেনো আমাদের পিছু আর না নেই। এটা বলে দূরে চলে গেলেও আলিনার জন্য ফিরে আসতে হয়েছে আমার আবারো এই বাড়িতে!
    .
    .
    .
    অনেকক্ষণ যাবৎ নিয়ন্তাকে চুপচাপ দেখছে ইরফান।
    শোয়া থেকে বসে নিয়ন্তাকে জড়িয়ে ধরে বললো সে-
    কি হয়েছে? আমাকে বলা যায় না?
    .
    কিছুক্ষণ চুপ থেকে হালকা কেশে নিয়ন্তা বললো-
    আচ্ছা প্রিয়া আপুর স্বামী কোথায়?
    -হঠাৎ এই প্রশ্ন?
    -জানতে ইচ্ছে হলো।
    -সে বলেনি তোমাকে?
    -না।
    -এক মাস আগে মারা যায় সে।
    -কিভাবে?
    -রাস্তা পার হতে গিয়ে ট্রাকের নিচে পিষে।
    -ইশ!
    -ভালো ছিলো বাবলু মানুষটা।
    -ওহ। আচ্ছা আলিনা তোমাকে বাবাই ডাকে?
    -তুমি কিভাবে জানলে?
    -জেনেছি আর কি।
    -হু ডাকেতো। তোমার কাছ থেকে ছ্যাঁকা খাওয়ার পর পরই এই বাসাটা নিয়েছি আমি। আর তখন থেকে বাবলুর পরিবারের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে আমার। এই সুবাদে তারা আলিনাকে শিখিয়েছে আমায় বাবাই ডাকার জন্য।
    -ও আচ্ছা।
    .
    নিয়ন্তার মুখটা নিজের দিকে এনে ইরফান প্রশ্ন করলো-
    কোনো কারণে প্রিয়াকে নিয়ে আমায় সন্দেহ করছো না তো তুমি?
    .
    এক গাল হেসে নিয়ন্তা বললো-
    কারো সম্পর্কে জানতে চাওয়া মানেই কি তাকে নিয়ে সন্দেহ করা?
    .
    কথাটি শুনে ইরফান তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো-
    ভালোবাসি তোমাকে অনেক। সব করতে পারি তোমার জন্য।
    .
    নিয়ন্তাও পরম আবেশে ইরফানের বুকে মিশে রইলো।
    কাল কি হয়েছে অনেকখানিই বুঝতে পারছে সে। কিন্তু কেনো হয়েছে এটাই বের করার পালা।
    .
    .
    .
    ঘড়িতে সময় রাত ১টা….
    গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন নিয়ন্তা ও ইরফান।
    কিন্তু হঠাৎ কিছুর শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো ইরফানের।
    চোখ জোড়া খুলেই সে দেখতে পেলো পুরো রুম অন্ধকার। অথচ সে ডিম লাইট জ্বালিয়ে শুয়েছিলো যা তার স্পষ্ট মনে আছে।
    .
    শোয়া থেকে উঠে পড়লো ইরফান। চোখ জোড়া কচলিয়ে পা বাড়ালো ডিম লাইট জ্বালানোর উদ্দেশ্যে।
    সুইচের পাশাপাশি যেতেই সে লক্ষ্য করলো, ড্রয়িংরুমের লাইট টা জ্বলে আছে। সাধারণত বন্ধ থাকে, নিয়ন্তা ভুলে হয়তো অফ করেনি এমনটা ভেবে ইরফান ড্রয়িং রুমের দিকে এগিয়ে গেলো।
    .
    .
    সুইচ অফ করে পেছনে তাকাতেই আবছা আলোতে কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো ইরফান।
    দেখে মনে হচ্ছে কোনো ছেলে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
    ঢোক গিলে ইরফান প্রশ্ন করলো-
    কে? কে দাঁড়িয়ে আছে এখানে?
    .
    কোনো সাড়া না পেয়ে ইরফান লাইট জ্বালালো। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলোনা সে। মনের ভুল ভেবে সুইচ আবার অফ করে পেছনে তাকাতেই আরো কাছে কাউকে দেখতে পেলো।
    .
    থরথর করে কাঁপছে ইরফান। নিয়ন্তাকে ডাকতে চেয়েও ডাকতে পারছেনা সে।
    কোনমতে লাইট অন করার জন্য সুইচ অন করলো সে।
    এবার আস্তেআস্তে পেছনে ফিরলো ইরফান।
    নাহ, কাউকেই দেখতে পাচ্ছেনা সে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সামনে পা বাড়ালো সে।
    কিন্তু টপটপ করে কিছু পড়ার শব্দ পাচ্ছে ইরফান।
    ধীরেধীরে নিজের ডান দিকে তাকালো সে। মেঝেতে চোখ পড়তেই দেখলো টাটকা রক্ত পড়ছে। আর এই রক্ত পড়ছে উপর থেকে। সাহস করে উপরে তাকালো ইরফান। কিন্তু যা দেখলো তাতে নিজেকে আর সে সামলাতে পারেনি।
    শূন্যে ভাসছে বর্ণ, তার শরীর থেকে ঝরছে তাজা রক্ত।
    এমন একটা দৃশ্য দেখে নিয়ন্তার নাম ধরে চেঁচিয়ে নিজের রুমের দিকে ছুটে গেলো ইরফান।
    .
    ইরফানের চেঁচানোর শব্দ পেয়ে ঘুম ভেঙ্গে গেলো নিয়ন্তার।
    .
    ইরফানকে ছুটে আসতে দেখে সে শোয়া থেকে উঠে তাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বললো-
    কি হয়েছে তোমার? ভয় পেয়েছো?
    -বর্ণ আছে ওখানে, বর্ণ।
    -তুমি বসো, আমি দেখছি।
    -নিয়ন্তা ও ছাড়বেনা তোমাকে। যেওনা।
    -কিচ্ছু হবেনা, বসো তুমি।
    .
    .
    ড্রয়িং রুমে এসে কাউকে দেখতে পেলোনা নিয়ন্তা। কিন্তু সে জানে, ইরফান যা বলছে তা মিথ্যে নয়।
    লম্বা একটা দম ফেললো নিয়ন্তা।
    গম্ভীর গলায় বর্ণের উদ্দেশ্যে বললো-
    কি চাও তুমি? কি চাও? কেনো আমাদের এভাবে প্যারা দিচ্ছো তুমি? হ্যাঁ? ইরফান তোমার কি ক্ষতি করেছে? বরং ও আমাকে ভালোবাসা দিচ্ছে, যেটা তুমি দিতে পারোনি। তুমি তো আমার পুচকিটাকেই মেরে ফেললে।
    ইরফান কি করেছে?
    তোমার সাথে যা হয়েছে তার জন্য আমি দায়ী আমি। ইরফান নয়।
    .
    ক্ষানিকক্ষণ চুপ থেকে নিয়ন্তা আবার বললো-
    ভালো যদি বাসো তাহলে আমাকে আমার মতো থাকতে দিয়ে চলে যাও।
    -আমি তো শুধুশুধু এমন করছিনা। ইরফান জানে কেনো করছি। তাকেই জিজ্ঞাসা করো। সে যদি সবটা বলে আমি চলে যাবো এখান থেকে।
    .
    কথাগুলো বাতাসের মতো ভেসে কানে এসেছে নিয়ন্তার।
    কি বুঝাতে চাইছে বর্ণ? কি এমন ইরফান জানে যা নিয়ন্তা জানেনা!
    .
    (চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here