#বালিকা_বউ 🥰
#পার্টঃ২
লেখিকা ঃ মারিয়া
আমাকে রুমে দেখে বলল একি আপনি।
হ্যা কেন??
আপনি আমার ঘরে এসেছেন কেন?? মামনি তো বলল এটা আমার ঘর।
লিসেন। এটা আমারই রুম। আর আমি তোমার স্বামী তাই থাকতেই পারি।
কিন্তু,,
কোনো কিন্তু নয়। কি করছো এখন।
এই একটা বই পড়ছিলাম।
প্রবন্ধের বই। তোমার বয়স কত??
রোশনি আঙুল গুনে গুনে বলল ১৩ বছর ৪ মাস ১২ দিন।
বাহ তোমার সেন্স তো খুব ভালো। আচ্ছা অনেক রাত হয়েছে ঘুমাও এখন বলে বইটা নিয়ে ডেস্কে রেখে আসলাম। বালিশ রাখতে দেখে বলল আপনি আমার সাথে ঘুমাবেন?? এবার আবার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে তবুও নিজেকে সামলিয়ে বললাম হুমম মাঝে কোলবালিশ থাকবে। তাহলে হবে।
খুশি হয়ে বলল আচ্ছা।
মাঝরাতে ঘুমের মধ্যে কারো কান্নার আওয়াজ শুনছি। আস্তে আস্তে শব্দটা বাড়তে লাগল। চোখ খুলে পাশের টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে পাশ ফিরে দেখি রোশনি হাঁটু দুটো ভাজ করে কাঁদছে।
এই রোশনি কাঁদছো কেন??
কান্নার বেগ আরও বেড়ে গেলো।
আরে বাবা না বললে কি করে বুঝবো। তোমার কি কোথাও কষ্ট হচ্ছে বা ভয় পেয়েছো। বলো আমাকে।
আআমার মা বাবার কথা খুব মনে পড়ছে বলেই কেঁদে দিলো। কিছুক্ষণ পর আবার বলল আপনি খুব খারাপ আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন।
এমনিতেই ঘুম ভেঙে গেছে। আর ঘুম আসবে কিনা জানিনা এর মধ্যে এই মেয়ে ন্যাকা কান্না আরম্ভ করেছে। তাই একটু ধমক দিয়েই বললাম আমি কি তোমাকে আমি কোলে করে এনেছি। তুমি তো নিজের পায়েই এসেছো।
হিচকি তুলে বলল আপনি আমাকে ধমকালেন।
মনে মনে বললাম এই রে মেয়েটার সাথে রুড বিহেভ করা একদম ঠিক হয়নি। ওকে ম্যানেজ করতে বললাম এখন কি করলে খুশি হবে??
মা আমাকে ঘুমানোর সময় মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো। ওটা না হলে আমার ঘুম হয় না।
তাহলে কাল রাতে কিভাবে ঘুমিয়ে ছিলে।
কাল তো অনেক ক্লান্ত ছিলাম আর অনেক রাত অবধি আপনার জন্য অপেক্ষা করেছি। কিন্তু আপনি আসেননি দেখে ঘুমিয়ে গেলাম।
ওও আচ্ছা ঘুমাও তুমি আমি বিলি কেটে দিচ্ছি। এরপর বাকিরাত না ঘুমিয়ে বিলি কাটছি আর সে নিশ্চিতে ঘুমাচ্ছে। ভোরের দিকে ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালে উঠে দেখি পাশে রোশনি নেই। হয়তো আমার আগেই উঠে গেছে সেটা ভেবে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে গেলাম। তারপর ব্রেকফাস্ট করতে নিচে গেলাম। কিন্তু রোশনিকে কোথাও দেখছি না। ইশুকে বললাম রোশনিকে দেখেছিস।
না দাদা৷ দেখ হয়তো কিচেনে আছে।
কিচেনে গিয়েও দেখলাম কাজের মাসি আর মা আছে।
মা আমাকে দেখে বলল কিছু বলবি।
হ্যা ওই তোমার বৌমাকে দেখেছো।
কেন ঘরে নেই।
দেখছি না।
আছে কোথাও হয়তো। ভালো করে খুঁজে দেখ।
আমিও বিরক্তি হয়ে বাইরে বের হলাম। একে কোথায় খুঁজবো এখন। তারপর ভাবলাম বাগানে যায়নি তো। বাগানের মধ্যে দিয়ে হাঁটছি হঠাৎ কারো খিলখিল হাসির শব্দ পেলাম। যেটা আমার মাথার উপর থেকে আসছে। উপরে তাকিয়ে যা দেখলাম আমার চোখ কপালে উঠে গেছে। রোশনি বড় একটা পেয়ারা গাছে উঠে পা দুলছে আর পেয়ারা চিবোচ্ছে।
এই তুমি ওখানে গেলে কি করে??
গাছ বেয়ে আদিত্য বাবু।
এখনি নামো বলছি। কেউ দেখলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। কি হলো নামো।
নামছি নামছি বাবা।
তারপর গাছ বেয়ে বেয়ে নিচে নামলো।
তোমাকে কে বলেছে এত উপরে উঠতে। যদি পড়ে যেতে।
ইস এটা আর কেমন গাছ। এর থেকেও বড় বড় গাছে ওঠার অভ্যাস আছে।
হয়েছে। এবার ভিতরে চলো। সবাই তোমাকে খুঁজছে।
ওকে নিয়ে যাবার পর মা বলল কোথায় ছিল। আমি বললাম এই একটু বাগানে।
আচ্ছা। আর রোশনি মা কাউকে না বলে এদিক ওদিক যাবে না কেমন।
আচ্ছা মামণি।
বসো সবাই আমি খেতে দিচ্ছি।
তারপর সবাই মিলে খাবার শেষ করলাম।
রুমে গিয়ে রেডি হচ্ছি ভার্সিটিতে যাবো বলে। রোশনি এসে বলল কোথাও যাবেন।
হুমম ভার্সিটিতে।
আমিও যাবো।
আমি ওর দিকে ঘুরে বললাম এখন তোমার স্কুলে যাবার বয়স ভার্সিটিতে নয়। আচ্ছা তুমি কি পড়তে ভালোবাসো??
হ্যা খুববব।
গুড তাহলে আমি তোমাকে হাইস্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবো।
ও হাততালি দিয়ে বলল কি মজা কি মজা।
কিন্তু এখন তুমি কিসে পড়ছো।
৭ম শ্রেনিতে।
এমন কথা শুনে আমার হিচকি হচ্ছে। যেখানে আমি ভার্সিটিতে সেখানে আমার বউ সেভেনে। oh my God.
কি হলো কিছু বলছেন না যে।
না এখন বের হবো। আর শোনো লক্ষী মেয়ে হয়ে থাকবে। আর বাসার মধ্যেই থাকবে বুঝেছো।
মাথা নাড়িয়ে বলল আচ্ছা।
এখন আসি বাই।
তারপর বাইক নিয়ে সোজা চলে গেলাম ভার্সিটিতে। গেটের ভিতরে ঢুকে দেখি আমার সব ফ্রেন্ড একসাথে আড্ডা দিচ্ছে। ওদের সামনে গাড়ি থামিয়ে নেমে সবার সাথে হাগ করলাম। তনয় বলল কিরে আদি দুদিন তোর কোনো খবর নেই কই ছিলি।
এই একটু কাজে শহরের বাইরে গিয়ে ছিলাম।
তাই বলে ফোনটাও অফ করে রাখবি।
আরে ভাই নেটওয়ার্কের বাইরে ছিলাম তাই হয়তো। আচ্ছা ক্লাসে চল।
চল তাহলে।
দুপা বাড়াতেই একটা মেয়ে আমার সামনে এক হাঁটু গেড়ে প্রপোজ করে বসলো। মেয়েটা সিনথিয়া আমাদেরই ডিপার্টমেন্টে পড়ে। এই দু’বছর ধরে আমার পিছনে পড়ে আছে। মনে মনে ভাবছি গোলাপটা না নিলে আর পথ থেকে সরবে না। তাই গোলাপটা ধরতেই পাশ থেকে কয়েকজন ছেলেমেয়ে সিটি বাজালো আর হাততালি দিলো। সিনথিয়া উঠে যেতেই আমি ফুলটা মাটিতে ফেলে দিয়ে বললাম আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারবো না। কারন আমি একজনকে ভালোবাসি। এটা শুনে অনেকের মুখ হা হয়ে গেলো। তারপর ওকে পাশ কাটিয়ে ক্লাসে চলে আসলাম।
ক্লাসে বসার পর রিত্তিক ( আমার ফ্রেন্ড) বলল দোস্ত সত্যি তুই যেটা বললি।
হয়তো।
তো মেয়েটা কে?? আর কি এই ভার্সিটিতেই।
সব এখনি বললে পরে আর কি শুনবি।
হুমম তাও ঠিক।
এর মধ্যে ক্লাসে ম্যাম চলে আসলো৷ মন দিয়ে সবাই ক্লাস করছে। কিন্তু আমার মনটা বাসায় ফেলে এসেছি। না জানি রোশনি এখন কি করছে।
তাই সব ক্লাস না করেই বাড়ি চলে আসলাম। মা দিদুন ইশু সেটা নিয়ে তামাশা করছে। ওদের উপর রাগ না করে রুমে এসে দেখি স্নান করে চুল আচরাচ্ছে। মেয়েটার চুলগুলো কিন্তু খুব সুন্দর। এত ছোট মেয়ে তার আবার কোমড় অবধি চুল ভাবা যায়।
আয়নায় আমাকে দেখে বলল আদিত্য বাবু আপনি। কখন এলেন।
এইতো কিছু সময় হলো। তারপর ওর সামনে ৬ টা কিটক্যাট ধরে বললাম এই নাও এগুলো তোমার জন্য।
সবগুলো ঘুছিয়ে ধরে বলল এই সববব আমার।
হুমম।
আপনি অনেক ভালো আদিত্য বাবু।
আসলে ওর মুখের এই হাসিটা দেখার জন্যই এতকিছু।
চলবে,,,,,,