“এখনো ভালোবাসি”💖
Writer:TaNia
Part-34
জানালার সামনে মুখ গোমারা করে বসে আছে প্রিয়ু।জানালার কাচ বেধ করে রাতের আকাশটার দিকে তাকিয়ে আছে ,কি আশ্চর্য! আকাশটারও কি আজ মন ভালো নেই।তাইতো কেমন মনমরা হয়ে আর উদাসীন হয়ে বসে আছে ঠিক আমার মতো।আচ্ছা আকাশেরও কি মন খারাপ হয়।হয়তো! তা না হলে আকাশ জুড়ে বৃষ্টি কেনো নামে।কারণ আকাশের যখনই মন খারাপ থাকে আকাশও তখন কাঁধে,আর তার মন খারাপের আভাশ জানিয়ে দেয় আমাদের।আজ আমার মতো আকাশের মনের অবস্থাও ভালো না,তাইতো সেই কখন ধরে কেঁদেই যাচ্ছে।
–“প্রিয়ু জানালার পাশে বসে বৃষ্টির সেই রিমঝিম শব্দে নিজেকে আচ্ছন্ন করছে।মাঝে মাঝে মেঘের গুরুগুরু গর্জন,গাছের ডালে বাতাসের ঝাপটা কানে বাজছে।হঠাৎ জোরে শব্দ করে কোথাও বাজ পড়লো,আর এই বাজ পড়া শব্দে প্রিয়ু কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো।জানালা দিয়ে আবারও বাহিরে তাকালো।বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে বাহিরে এখনো।তবে এসবের মাঝে জানালার কাচের উপর আছড়ে পড়া বৃষ্টির ফোটাগুলো নিবিড় ভাবে একবার দেখলে কতোনা অপূর্ব লাগছে।তা হয়তো কোনও উপমা করেও প্রকাশ করা যাবেনা।বাহিরে বৃষ্টি তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছে।বৃষ্টির মাত্রা যতো বাড়ছে,
ভেতরের অনুভূতির মাত্রাগুলো যেনো খুব গাঢ় হতে শুরু করছে প্রিয়ুর।হঠাৎ করে আয়নের কথা ভীষণ ভাবে মনে পড়ছে।আয়নের জন্য জমে থাকা রাগ অভিমান গুলো যেনো বৃষ্টির সাথে সব ধুয়ে নিয়ে যাচ্ছে।আর সুখের কিছু মুহুর্তের কথা মনে করে,প্রিয়ুর মনে শরীরে এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যাচ্ছে।”
‘দেয়ালে টাঙ্গানো বিশাল ঘড়িটার দিকে বারবার তাকালো প্রিয়ু।রাত নয়টা বাজতে চলছে।আয়ন এখনো আসে নিই বাড়ীতে।কিন্তু কেনো?এতো লেট তো কখনো করেনা।প্রিয়ুর মনের অস্থিরতা একটু একটু করে বাড়ছে।এ থেকে রেহাই পেতে পড়ার টেবিলে বসে পড়লো প্রিয়ু।মনটাকে পুরো ধরে পড়াতে মনোবেশ করার চেষ্টা করছে।প্রায় ঘন্টা খানিক বইয়ের সাথে যুদ্ধ করেও প্রিয়ু এক অক্ষর আয়ত্তে আনতে পাড়লো না।এ কেমন জ্বালা।আগে তো কখনো এমন হয় নি।বরং বর্ষণ দেখলে মনটা কেমন ফুরফুরে হয়ে যেতো।শরীরে বৃষ্টির ছোঁয়া পেতে ছাদে ছুটে যেতে মন চাইতো।কিন্তু আজ!’
–আবার সময় দেখলো প্রিয়ু,এগোরা টা বাজে।বাহিরে এখনো তুমল বৃষ্টি।কিন্তু আয়ন এখনো আসেনি।
সব দ্বিধাকে পিছনে পেলে,ফোনটা নিয়ে আয়নকে কল করেই দিলো।কিন্তু আশ্চর্য আয়ন ফোন রিসিভ করলো না।প্রিয়ু ভাবলো হয়তো আয়ন গাড়ীতে,বা বৃষ্টির কারণে রিংটোন শুনতে পায়নি বা গাড়ী চালাচ্ছে বলে ফোন পিক করেনি।নিজেকে নিজেই যেনো বুঝ দিয়ে যাচ্ছে প্রিয়ু।ফোনটা রেখে আবারও জানালায় দাঁড়িয়ে বাহিরের দিকে তাকালো।রাস্তায় কোনও জনমানব নেই।কেমন শূন্যতা বিরাজ করছে চারদিকে।এমনেই অনেক রাত,তার উপর এতো বর্ষণ, মানুষ কেনো কুকুড়গুলো হয়তো কোথাও কোনও আশ্রয় চলে গেছে।রাস্তার লেম্পসাইডের আলোতে ঝিড়িঝিড়ি বৃষ্টির ফোটাগুলো দেখতে এতোটা সুন্দর্য আগে অনুধাবন করিনি কখনো প্রিয়ু।আসলে সবাই ঠিকই বলে,বৃষ্টিতে প্রকৃতি নতুন রুপে সাঝে।বর্ষার প্রতিটি রুপ আসলে মন থেকে ফিল করতে হয়,কিন্তু আজ প্রিয়ু কেনো জানি করতে পাড়ছে না।মনটা কেমন উতলা হয়ে পড়ছে।বারবার অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছে।মনের ভেতর নানা রকম চিন্তা ভাবনার ঠেউ খেলে যাচ্ছে।কিন্তু কেনো?কেনো আজ এমন হচ্ছে।প্রিয়ু বিচলিত হয়ে আবার ঘড়ির দিকে তাকালো।এতোক্ষণ হয়ে গেলো আয়নের কোনও ফোন আসেনি এখনো।প্রিয়ু এবার সত্যিই ঘাবড়ে গেলো।তাই বাকি কিছু না ভেবে অফিসেই কল করলো।কিন্তু এতোরাতে অফিসে কেউ নেই বলে কেউ ফোন পিক করলো না।আয়নকে আবার কল করলো।কিন্তু এখন ফোন বন্ধ বলছে।প্রিয়ু টেনশনে পড়ে গেলো।কি করবে এখন।আয়নের আবার কোনও বিপদ হয়নি তো এটা ভাবতেই মনটা মোচড় দিয়ে উঠলো প্রিয়ুর’।
“প্রিয়ু ছুটলো অনিকের রুমের দিকে।দু বার নক করার সাথে সাথে সারা এসে দরজা খুললো।
প্রিয়ুকে এতোরাতে এখানে দেখেই সারার মেঝাঝ চওরা হয়ে গেলো।তুমি এতো রাতে এখানে।কমনসেন্স কি নেই তোমার।এতোরাতে কাউকে ডিস্টার্ব করতে হয়না জানো না।”
–প্রিয়ু জানে সারা ওকে পছন্দ করে না।কেনো করেনা তাও ভালো ভাবে অনুধাবন করতে পারে।অন্য সময় হলে প্রিয়ুও দুচারটে কথা শুনিয়ে দিতো সারাকে কিন্তু এখন প্রিয়ু কিছু বলার অবস্থায় নেই।তাই চুপচাপ সারার কথাগুলো গিলে ফেললো,”আম সরি সারা।কিন্তু অনিক ভাইয়াকে একটু ঢেকে দেয়না প্লিজ।”
–কেনো?কি দরকার। আগে আমাকে বলো।তারপর ভাববো।
–‘রুমের বাহিরে প্রিয়ুর কন্ঠ শুনে অনিকও এসে দাঁড়ালো দরজার সামনে।এই সময় প্রিয়ুকে এখানে দেখে অনিক অবাক হয়ে জিঙ্গেস করলো,”কি হয়েছে প্রিয়ু।তুই এখানে,সব ঠিক আছে তো।”
–ভাই,আ..আ য়ন বাড়ীতে এখনো আসে নি।কথাটা বলতেও প্রিয়ুর গলা কাঁপছিলো।তুমি কিছু জানো।কোথায় ও।ওর ফোনটাও বন্ধ বলছে।আমার ভীষণ ভয় লাগছে ভাই।”
“অনিক রুমের দেয়াল ঘড়িটির দিকে তাকিয়ে একবার সময়টা দেখে নিলো।প্রায় একটার কাছাকাছি।এতো রাত হয়ে গেলো ভাই এখনো বাসায় আসেনি।বাহিরে তো প্রচণ্ড বৃষ্টিও হচ্ছে কখন ধরে।আমিতো ভাবলাম ভাই হয়তো এসে পড়েছে।আসলে আমার আজ বাহিরে একটা মিটিং ছিলো তাই আমি মিটিং করে সোজা বাসায় এসে পড়েছি।ভাইয়ের সাথে আমার দেখা হয়নি আজ সারাদিন।”
–এদের কথার মাঝে সারা ব্যাঙ্গ করে বলে উঠলো,”দেখো আবার, তোমার জ্বালায় কোথাও চলে যায়নি তো।সব সময় তুমি পালাও আজ আয়নদা পালিয়ে গেছে,বলেই হাসতে লাগলো।”
সারার এই সময় এমন চাইল্ডনেস বিহেভিয়ার অনিক একদম আসা করেনি।তাই হতাশ কন্ঠে সারাকে একটা ধমক দিলো,”সেট আপ সারা,আর ইউ মেড।কখন কি বলতে হয় যদি না জানো,তাহলে মুখটা খোলার কোনও দরকারই নেই।চুপ করে বসে থাকো।”
–অনিকের ধমকে সারা রেগে সেখান থেকে চলে গেলো।আর অনিক নিজে একবার আয়নের ফোনে ট্রাই করতে লাগলো।প্রিয়ু ঠিক বলছে ফোন সুইচঅফ।অনিক দেরি না করে অফিসের দারোয়ানকে কল করলো।
–হ্যালো,কাওসার
‘জে স্যার।’
–আয়নদা কি অফিসে আছে।
‘নাতো স্যার।আয়ন স্যার তো সেই কবেই বের হয়ে গেছে।’
–কখন বের হয়েছে।এক্সাক্ট টাইম বলো।
‘রাত আটটার দিকে নিজের গাড়ীতে কইরা বের হইতে দেখছি।তবে আজ স্যারের বডিগার্ড যায়নি।একা যাইতে দেখছি স্যারকে।’
–ওকে ঠিক আছে।অনিক ফোন কেটে,রবিন সহ সবাইকে কল করে খোঁজ শুরু করে দিলো।মুহুর্তের মধ্যেই বাড়ীর সবার ঘুম হারাম হয়ে গেলো।ড্রয়িংরুমে বসে সবাই আয়নের অপেক্ষা করতে লাগলো।এতোরাতে খবর পেয়ে তিয়াশও চলে আসছে নূর ভিলায়।অনিক তিয়াশ বের হয়েছে আয়নকে খু্ঁজতে।রবিনও তার লোকজন নিয়ে বের হয়ে গিয়েছে আয়নকে খুঁজতে।প্রিয়ু ঘামটি মেরে বসে আছে,মনে এক অজানা ভয় নিয়ে।
………………………………
তাকে চেয়েও, যাবে না চাওয়া
এ যেন আমার নিষিদ্ধ পাপ,
তাকে পেয়েও, হবে না পাওয়া
এ আমায় দেয়া নিয়তির অভিশাপ।
__অগ্নিলা অনন্যা।
ভালোবাসার সাথে প্রিয় মানুষটিকে একটু কাছে চাওয়ার অনুভূতি সবারই জাগে।মনের মধ্যে হাজারো নিষিদ্ধ চাওয়া গুলো বাসা বাধে তখন।কাছে আসার অকুলতা দিনদিন যেনো বেড়ে যায়,তার সাথে বাড়ে কিছু নিষিদ্ধ চাওয়া।চুম্বকের মতো একজন আরেকজনকে আকর্ষণ করে ফেলে তখন।কখনো কখনো মানুষ নিজের এই চাওয়ার কাছে এতোটাই অসহায় হয়ে পড়ে যে,না চাওয়া সত্যও ডুবে যায় অতুল গব্বরে।
“–দিনেশের মনে বারংবারই তিতিরকে পাওয়ার ব্যাকুলতা বেশি ছিলো।তাইতো ও তিতি না বলার পরও বারবার ছুটে যেতো তিতির কাছে একটু ভালোবাসার উষ্ণতা পেতে।আজ সেই তিতির নিজ ইচ্ছায় দিনেশের কাছে এসেছে।নিজের ভালোবাসার প্রকাশ করছে এক অনবদ্য উপায়,যা হয়তো দিনেশ কল্পনাও করেনি।তিতির এর এই রুপ দিনেশকে পাগল করে তুলছে,তিতিরকে আজ কাছে পাওয়ার ইচ্ছায় হিতাহিত জ্ঞান যেনো লোপ পাচ্ছে।ঠিক বেঠিকের এই খেলায় আজ আবেগ,অনুভূতির জয় হয়ে যাবে মনে হয়।”
-‘প্রথম ভালোবাসার প্রথম স্পর্শ।শরীর মনে কাঁপুনি ধরিয়ে দেয়।দিনেশ ডুব দেয় আজ তিতির মাঝে।তিতিরও আজ নিজেই আদিমতার ডাকে সারা দিয়ে দিনেশকে একদম কাছে টেনে নেয়।দিনেশ তিতির এমন রুপে একদম অবাক হয়নি।দিনেশ বুঝেও যেনো কিছু বুঝতে চাইলো না।তিতির কে পাওয়ার এই লোভটা আজ নিজেও সামলাতে পাড়লো না।দিনেশ জানে,আজ রাত যতো মধুরিমা হবে,কাল ভোরে এর তিক্ততা আরো বেশি প্রকাশ পাবে।কিন্তু তবুও দিনেশ তিতির থেকে নিজেকে সরালো না।যা হবার হবে,কিন্তু আজ যেনো তিতির কে ওর চাই চাই।এতোদিন পর তিতির অনুমতি পেয়ে একপ্রকার বাঁধনহারা মনের মতো তিতিরকে জড়িয়ে ধরে তার বলিষ্ঠ বাহুর মধ্যে দিনেশ।নিজের ঠোঁট দিয়ে ক্রমশ চেপে ধরে তিতিরের ঠোঁটদুটো।অমৃতের স্বাধ জেনো আজ খুঁজে পেয়েছিলো তিতির ঠোঁটদুটোতে।ও পাগল হয়ে ক্রমশ তিতিরকে নিজের আরো কাছে টানতে থাকে।দিনেশের বলিষ্ঠ দেহের শক্ত হাতের খামচিতে তিতির কোন শব্দও করলো না,এমনকি বাঁধাও দিলো না।
“দুজন এতোটাই আবেশিত উন্মাদ হয়ে পড়েছে যে কোনটা ভুল আর কোনটা সঠিক সব চিন্তা ভাবনার কোন হিতাহিত জ্ঞান নেই।দুজন দুজনাতে মত্ত হয়ে গিয়েছে।কালকের সকাল ওদের জীবনে কি ঝড় বয়ে আনবে তা হয়তো ওরা কল্পনাও করেনি।
………………….
দূরের মসজিদে আযানের ধ্বনি শুনতে পেয়ে প্রিয়ু ড্রয়িংরুমের সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।সবাই অনেক আগেই নিজ নিজ রুমে চলে গেছে।কিছুক্ষণ আগে অনিকও চলে এসেছে।অনেক খোঁজাখুঁজি করার পরও আয়নের হদিস পায় নিই।তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই ফিরতে হলো।সকাল পর্যন্ত দেখে পুলিশকে ইনফোরম করার চিন্তা করলো সবাই।
–“কিন্তু প্রিয়ুর মন মানলো না।তাই ও ড্রয়িংরুমেই বসে থাকলো আয়নের অপেক্ষায়।কিন্তু শরীরটা মনের সাথে আর পাড়ছে না।এমনেই অসুস্থ অসুস্থ লাগছে প্রিয়ুর।আয়নের চিন্তায় সারারাত চোখের পাতা এক করেনি একটুও।ক্লান্ত হয়ে সোফায় শরীরটা এলিয়ে দিয়ে নয়ন জোড়া ব্যাকুল হয়ে তাকিয়ে ছিলো দরজার দিকে সারারাত।কিন্তু এখন আর পাড়ছে না।তাই দাঁড়িয়ে পড়লো নিজের রুমের দিকে যাওয়ার জন্য।”
রুমে এসে প্রিয়ু কিছুক্ষণ পুরো রুমটায় একবার চোখ বুলালো।কতো না স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই রুমটিতে আয়ন আর ওর।রুমে প্রবেশ করার পরই একটা মিষ্টি ঘ্রাণ আসলো প্রিয়ুর নাকে।এটা যেকোনও ঘ্রাণ নয়।আয়নের পারফিউম এর ঘ্রাণ।আয়ন খুব পারফিউম শৌখিন লোক।দেশ বিদেশের নামীদামি ব্রান্ডের পারফিউম আছে তার কালেকশনে।কিন্তু এর মধ্যে একটা পারফিউম আয়ন রেগুলার ইউস করে।যেটার ঘ্রাণে প্রিয়ু আয়নের নেশায় বারবার ডুবে যেতো।আর এখন পুরো রুমে আয়নের সেই পারফিউম এর ঘ্রাণে মো মো করছে।প্রিয়ু প্রাণ ভরে ঘ্রাণটা নেওয়ার চেষ্টা করছে।মনে হয় আয়নকেই ও নিশ্বাসের সাথে নিজের মাঝে নিয়ে নিবে।
–“রুমের প্রতিটি জিনিসে আয়নের স্পর্শ অনুভোব করছে প্রিয়ু।হঠাৎ বুকের মধ্যে একটা শূন্যতার অনুভূতি হচ্ছে।আর সামলাতে পাড়লো না,অনেকক্ষণ ধরে নিজের কান্নাটা দলা পাকিয়ে রেখেছিলো।কিন্তু এখন আর পারছে না প্রিয়ু।কেনো হচ্ছে এমন,আমিতো তো চেয়েছি তুমি আমার থেকে দূরে সরে যাও।তাহলে কেনো এখন আমি চাই তুমি ফিরে আসো।কান্নায় একদম ভেঙ্গে পড়লো প্রিয়ু।মুখে যাই বলুক,কিন্তু ওর অনুভূতিতো অন্যকথা বলছে এখন।তবে কি প্রিয়ুও আয়নকের আসক্তিতে নিজেও আসক্তি হয়ে পড়েছে।”
–প্রিয়ুর মনে পড়ে গেলো আয়নের বলা সেই কথা,”আল্লাহ যাতে তোকে খুব শীঘ্রই বিধবা করে দেয়।আর আমার থেকে তোকে মুক্ত করে দেয় একবারের মতো।”
তাহলে কি আয়নের দোয়া কবুল হয়ে গেলো।আমি কি আর কখনো আয়নকে দেখতে পারবো না।নিজের মনের কথা কি আর বলা হবে না।এটা ভেবেই প্রিয়ু মাটিতে বসে ডুকরে কেঁদে উঠলো আবার,”প্লিজ আয়ন ফিরে আসো।আমি আর কখনো তোমাকে এসব বলবো না।কখনো তোমার থেকে দূরে যেতে চাইবো না।প্লিজ ফিরে আসো।খুব মনে পড়ছে তোমাকে।আমি দূরে চলে যেতে চেয়েছিলাম,কিন্তু আজ তুমিই আমার থেকে দূরে চলে গেলে,এতোটাই দূরে যে হাত দিলোও তোমাকে স্পর্শ করতে পারছি না।আজ আমি বুঝতে পাড়ছি,তোমাকে ছাড়া আমার কোনও মানে নেই।কোনও অস্থিত্ব নেই।তুমিহীন আমি শুন্য।আমার পূর্নতা শুধু তোমার মাঝে।আমি বড্ড পাগল, তাই তো কখনো বুঝার চেষ্টা করিনি তোমাকে।বারবার তোমাকে,তোমার ভালোবাসাকে অবহেলা করছি।আম সরি,প্লিজ একবার ফিরে আসো।আমি প্রমিজ করছি তোমাকে আর নিজ থেকে আলাদা করবো না।প্লিজ।
–“হঠাৎ প্রিয়ু কিছু একটা মনে করে উঠে দাঁড়ালো।চোখের পানি মুছে ওয়াসরুমে গিয়ে ওজু করে নামাযে দাঁড়ালো। প্রিয়ু বুঝতে পারছে এই মুহুর্তে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ ওকে সাহায্য করতে পারবে না।সৃষ্টি কর্তার কাছে জায়নামাজে বসে আয়নের জান ভিক্ষা যাচ্ছে প্রিয়ু।আয়নের বলা কথাটা যাতে মিথ্যা হয়,তার জন্য স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনা করে সিজদায় বসেই কান্না করছে।”
–যে প্রিয়ু আয়নের চেহারাও দেখতে চায়নি,আশ্চর্য! আজ সেই প্রিয়ু আয়নকে একবার দেখার জন্য এতোটা ছটফট করছে।আয়নের জন্য দোয়া যাইছে।ভালোবাসায় হয়তো সবই সম্ভব।তাইতো আয়নের ভালোবাসা প্রিয়ুর মনেও ভালোবাসার সুবাশ ছড়িয়ে দিয়েছে।
কিন্তু কি হবে আয়নের।আয়নের সে দোয়ার।উপরওয়ালা প্রতিদিন মানুষের একটি ইচ্ছা নাকি পূরণ করে।তবে কি সত্যিই আল্লাহ কবুল করেছে আয়নের দোয়া।
চলবে……