মন চায় তোকে পর্ব-১৩

0
1950

#মন_চায়_তোকে
#পার্ট_১৩
#নিশাত_জাহান_নিশি

পরের দিন,,,,,,

সকাল আটটা,,,,,

অন্তর ঘুম থেকে উঠে মল্লিকাকে ছেড়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলো। ওয়াশরুমের দরজাটা হালকা ভেজিয়ে অন্তর ফ্রেশ হয়ে রুমে ঢুকল। মল্লিকা ঘুম থেকে উঠে পিটপিট চোখে অন্তরের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্তর মুচকি হেসে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—–“কি মিসেস নীলান্জ্ঞনা? এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?”

মল্লিকা লাজুক হেসে অন্তরের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—–“এক্টু এদিকে আসবেন অন্তর?”

অন্তর বাঁকা হেসে মল্লিকার দিকে এগিয়ে এলো। মল্লিকা অন্তরের শার্টের কলার ধরে অন্তরকে ওর মুখের কাছাকাছি এনে হুট করে অন্তরের ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরল। অন্তর চোখ বড় বড় মল্লিকার দিকে তাকিয়ে আছে। মল্লিকা মুচকি হেসে অন্তরকে চোখ মেরে চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেলল। অন্তর কিছুটা উওেজিত হয়ে মল্লিকার ঠোঁট জোড়া রুড ভাবে আঁকড়ে ধরল। খুব রুডলি কিস করছে অন্তর। মল্লিকা এবার এক্টু এক্টু ব্যাথা পেতে শুরু করেছে। অন্তর এখন মল্লিকার ব্যাথা বুঝার পর্যায়ে নেই। সে ব্যস্ত মল্লিকার ঠোঁটের স্বাদ নিতে।

প্রায় দশ মিনিট পর হুট করেই অন্তরের ফোন বেজে উঠল। প্রথমবারের কলে অন্তর পাওা দেয় নি। বাট পর পর অনেকবার কল আসার পর অন্তর চট জলদি মল্লিকার ঠোঁট জোড়া ছেড়ে কিছুটা হাঁফিয়ে কলটা রিসিভ করল। ঐ পাশ থেকে মেয়েলী কন্ঠে কেউ চেঁচিয়ে বলল,,,,,,

—–“আমাকে ঠকিয়ে এখন বউয়ের সাথে রোমান্স করা হচ্ছে তাই না? বউয়ের সাথে হানিমুনে আসা হয়েছে? আমি জীবিত থাকতে তোর এই সুখ বেশিদিন সইবে না। তোর বউকে আমি কেটে কুটে পানিতে ভাসিয়ে দিবো। রক্তের ছিটি ফুটা ও খুঁজে পাবি না। আমাকে রাগিয়ে তুই একদম ঠিক করিস নি অন্তর। কাল রাতে তোর বউ এর হাত কেটেছি। আজ কাটব নাড়ি ভুড়ি। শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষায় আছি।”

কথাগুলো বলেই মেয়েটা কলটা কেটে দিলো। অন্তরকে কিছু বলার সময় দেয় নি মেয়েটি। অন্তর ফোনটা বেডের উপর রেখে মাথায় হাত দিয়ে রাগটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। মল্লিকা কিছু না বুঝেই বেকুবের মতো শুয়ে আছে। তবে সে বুঝতে পেরেছে অন্তর টেনশানে আছে। তাই সে থম মেরে গেছে। অন্তর মাথায় হাত দিয়ে বিড়বিড় করে বলছে,,,,,,

—-“কে এই মেয়ে? কি চাইছে আমার থেকে? আমার জানা মতে, আমি তো এমন কোনো মেয়েকে চিনি না যে আমার থেকে রিভেন্জ্ঞ নেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগবে। ছদ্মবেশে আমার মুখোমুখি হবে। আমার মল্লিকার ক্ষতি করার চেষ্টা করবে। তবে এবার আমি ঐ মেয়েকে ছাড়ব না। আমার মল্লিকার ক্ষতি করার আগেই আমি ঐ বদ মেয়ের মুখোমুখি হবো। হাতে নাতে ধরব ঐ মেয়েকে।”

অন্তর কিছুক্ষন ভেবে আবার বলল,,,,,,

—-“আই থিংক মেয়েটা সিঙ্গাপুরের কেউ হবে। সিঙ্গাপুর তো আমার কোনো চেনা জানা মেয়ে নেই। আমার ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে কেউ সিঙ্গাপুর থাকে না। তবে কে হতে পারে সে? মল্লিকার কোনো শত্রু না তো? হতে পারে মল্লিকার কোনো ফ্রেন্ড আছে যে চায় না মল্লিকা সুখে থাকুক। ভালো থাকুক। সাংসারিক জীবনে হ্যাপি থাকুক। এমন একজন তো শুধু নীল ই আছে। নীল তো ছেলে, ওর অবশ্য মেয়ে সেজে এসব করার কথা না। নিশ্চয়ই অন্য কেউ হবে। মল্লিকাকে একবার জিগ্যেস করা উচিত।”

কথাগুলো মনে মনে বিড়বিড় করে অন্তর পিছু ফিরে মল্লিকার দিকে তাকালো। মল্লিকা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে অন্তরের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্তর গলাটা ঝাঁকিয়ে মল্লিকার পাশে শুয়ে পড়ল। মল্লিকা বেশ খুশি হয়ে অন্তরকে ঝাপটে ধরল। অন্তর মল্লিকার মাথায় হাত বুলিয়ে মলিন হেসে বলল,,,,,

—–“আচ্ছা মল্লিকা তোমার কোনো মেয়ে ফ্রেন্ড আছে? যে এই সিঙ্গাপুরেই থাকে?”

মল্লিকা কিছুটা ভেবে বলল,,,,,

—–“না অন্তর। আমার শুধু এক্টাই ফ্রেন্ড। সে এখন চট্টগ্রাম থাকে। কেনো বলুন তো?”

—-“তোমার এমন কোনো ফ্রেন্ড আছে যে তোমার খারাপ চায়? বা তোমাকে দেখতে পারে না? সহ্য করতে পারে না?”

—-“না অন্তর। আমি সবার সাথে তেমন এক্টা মিশি না। মিশলেই না বুঝতাম কে ভালো কে খারাপ খারাপ। আমার মনে হয় না কেউ আছে যে আমার ক্ষতি করতে চায়।”

—-“নীলের কোনো বোন আছে মল্লিকা?”

—-“না নীল একাই। তবে ওর একজন ফুফাতো বোন আছে। কখনো উনার সাথে কথা হয় নি। তবে নীল মাঝে মাঝে উনার কথা বলত।”

—-“নাম জানো মেয়েটির?”

—-“হুম। মেয়েটির নাম মিষ্টি।”

মিষ্টি নামটা শোনার সাথে সাথেই অন্তরের মাথাটা ফট করে ধরে গেলো। অন্তর তাড়াতাড়ি শোয়া থেকে উঠে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—-“মেয়েটাকে দেখলে তুমি চিনবে?”

—-“ছবিতে দেখেছি মেয়েটাকে। দ্বিতীয়বার দেখলে হয়তো চিনব।”

—-“ওয়েট আমি দেখাচ্ছি।”

অন্তরের ছোটাছুটি দেখে মল্লিকা বেশ অবাক হয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে পড়ল। অন্তর বেডের উপর থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে হোয়াটস অ্যাপে ঢুকে কোনো এক্টা মেয়ের আইডিতে গিয়ে কয়েকটা ছবি ওপেন করে মল্লিকার চোখের সামনে ধরল। মল্লিকা ছবি গুলোর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে মলিন হেসে বলে উঠল,,,,,

—–“হুম এই মেয়েটিই তো মিষ্টি আপু।”

হুট করে মল্লিকা মুখটা কালো করে অন্তরের দিকে তাকিয়ে অভিমানী স্বরে বলল,,,,,

—-“অন্তর আপনি মিষ্টি আপুকে কিভাবে চিনেন? তাহলে কি এই মিষ্টি আপুই আপনার নীলান্জ্ঞনা?”

অন্তর তাড়াতাড়ি বসা থেকে উঠে কিছুটা সিরিয়াস হয়ে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—-“এসব নিয়ে আমরা পরে ও কথা বলতে পারব মল্লিকা। তাড়াতাড়ি শোয়া থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও। অনেক কাজ বাকী আছে।”

মল্লিকা বিছানা ছেড়ে উঠে মনটা খারাপ করে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াচ্ছে আর বিড়বিড় করে বলছে,,,,,

—-“তাহলে ঐ মিষ্টি আপুই অন্তরের নীলান্জ্ঞনা। অন্তর মিষ্টি আপুকেই ভালোবাসে। আমাকে একদম ভালোবাসে না। সেজন্যই তো এক্টু আগে আমার সাথে এমন ব্যবহারটা করল। ওকে ফাইন, আমি ও উনার সাথে আর কথা বলব না। আর উনাকে কাছে টানব না।”

মল্লিকা কাঁদতে কাঁদতে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। অন্তর ফোনটা হাতে নিয়ে কিছু এক্টা ভেবে ব্যালকনীর দরজায় দাঁড়িয়ে অনন্যার নাম্বারে কল করল। প্রথম কলটা পিক করে নি অনন্যা তবে সেকেন্ড কলটা পিক করেছে। অন্তর বেশ শান্ত স্বরে অনন্যাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

—–“অনন্যা…..মিষ্টির সাথে কি এখনো তোর কন্ট্রাক্ট আছে?”

—-“না ভাইয়া। ঐ দিনের পর থেকে মিষ্টি আপুর সাথে আমার যোগাযোগ টোটালী অফ হয়ে গেছে। মাইসাকে তো অলরেডি ফ্রেন্ড লিস্ট থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছি। কেনো ভাইয়া? হঠাৎ এই প্রশ্ন যে?”

—-“এক্টা সতি কথা বলবি অনন্যা?”

—-“হুম ভাইয়া বলো।”

—-“প্রমিস করতে হবে যে তুই সত্যি টা বলবি!”

অনন্যা কিছুটা ভেবে বলল,,,,,

—-“প্রমিস ভাইয়া সত্যিটাই বলব।”

—-“নীলের সাথে তোর সম্পর্ক আছে?”

অনন্যা কিছুটা থতমত খেয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল,,,,,

—-“ভাইয়া….আগে বল আমাকে ভুল বুঝবি না বা আমাকে নীলের থেকে আলাদা করবি না?”

—-“আলাদা করব কিনা সেটা পরে ভেবে চিন্তে দেখা যাবে। আগে সত্যিটা বল।”

অনন্যা ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কেঁদে বলল,,,,,

—-“আমি নীলকে খুব ভালোবাসি ভাইয়া। ওকে ছাড়া আমি বাঁচব না। প্লিজ তুই নীলের থেকে আমাকে আলাদা করিস না।”

অন্তর কিছুটা চেঁচিয়ে বলল,,,,

—-“তুই জানিস…. নীল মিষ্টির আপন ফুফাতো ভাই? আই থিংক আমাদের থেকে রিভেন্জ্ঞ নেওয়ার জন্য মিষ্টি নীলকে তোর পিছনে লাগিয়েছে।”

অনন্যা কাঁদতে কাঁদতে এক নিশ্বাসে বলে উঠল,,,,,

—-“এসব তুই কি বলছিস ভাইয়া? মিষ্টি আপু নীলের ফুফাত বোন?”

—-“আমি যা বলছি একদম ঠিক বলছি। আমার কাছে এর যথেষ্ট প্রমাণ ও আছে।”

অনন্যা এবার চিৎকার করে কান্না জুড়ে দিলো। অন্তর কিছুটা পেরেশান হয়ে অনন্যাকে শান্তনা দিয়ে বলল,,,,,

—–“কান্না থামা অনন্যা। এখনো খারাপ কিছু হয় নি। আমাদের ক্ষতি করার আগেই আমরা সত্যিটা জেনে গেছি। তুই ও নীলের থেকে দূরে দূরে থাক। আমি দেশে ফিরে কিছু এক্টা করব।”

অন্তর কিছুটা ভেবে আবার বলল,,,,,

—-“আচ্ছা অনন্যা। তুই কি নীলকে বলেছিলি আমাদের সিঙ্গাপুর আসার কথাটা?”

অনন্যা বেশ অনুতপ্ত কন্ঠে বলল,,,,,

—-“হুম ভাইয়া বলেছিলাম। আব্বু আর আম্মু যখন তোদের হানিমুনের প্ল্যানিং করছিলো ঐ সময় ই আমি নীলকে বলেছিলাম তুই আর ভাবী হানিমুনে যাচ্ছিস। আসলে নীল ই আমাকে জিগ্যেস করেছিলো।”

অন্তর মাথায় হাত দিয়ে বলল,,,,,

—-“নীল কি এখন বাংলাদেশে আছে?”

—-“জানি না ভাইয়া। কাল রাত থেকে নীলের সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। ফোনটা বার বার সুইচ অফ বলছে।”

—-“আচ্ছা আমি তোকে পরে কল করছি। আর এক্টা কথা…. নীলের সাথে নেক্সট টাইম আর যোগাযোগ করার চেষ্টা করবি না। নীল আর মিষ্টি মিলে আমাদের ক্ষতি করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। এই মুহূর্তে আমি তোকে সবটা ক্লিয়ার করে বলতে পারছি না। তবে সুস্থভাবে যদি বাড়ি ফিরতে পারি তাহলে নীল আর মিষ্টির মুখোশ আমি ফাঁস করব।”

কথাগুলো বলেই অন্তর কলটা কেটে দিলো। মাথায় হাত দিয়ে কিছু এক্টা ভেবে অন্তর তাড়াহুড়ো করে অন্য এক্টা নাম্বারে কল লাগালো। প্রায় অনেকবার কল করার পর ঐ পাশ থেকে কলটা রিসিভ হলো। অন্তর বেশ আন্তরিক ভাবে কথা বলে ঐ পাশের লোকটিকে বলল,,,,,

—-“হায় তন্ময়। কেমন আছো?”

—-“এইতো ভাইয়া ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?”

—-“খুব ভালো আছি। তুমি নিশ্চয়ই এখন অফিসে?”

—-“জ্বি ভাইয়া মাএ এলাম। কেনো বলুন তো?”

—-“তোমাকে এক্টা দায়িত্ব দেওয়ার ছিলো।”

তন্ময় হাসি মুখে বলল,,,,,

—-“কি দায়িত্ব ভাইয়া?”

—-“অনন্যাকে তোমার দেখে শুনে রাখতে হবে। ব্যাস এটুকুই!”

তন্ময় দাঁত বের করে হেসে বলল,,,,,

—-“সত্যি বলছেন ভাইয়া?”

—-“হুম তন্ময়। আমার বোনটাকে তোমার হাতে তুলে দেওয়ার আগে আমি চাইছি তুমি আমার বোনের মনে জায়গা করে নাও। এটুকু তোমার কাছ থেকে আমি চাইতেই পারি।”

—-“আপনি চিন্তা করবেন না ভাইয়া। আমি অনন্যার দায়িত্ব খুব ভালো ভাবেই নিবো। খুব তাড়াতাড়ি আমি অনন্যার মনে জায়গা করে নিবো।”

—-“তাহলে আজ থেকেই লেগে পড়ো।”

—-“সে আর বলতে।”

অন্তর মুচকি হেসে কলটা কেটে দিলো। তন্ময় খুশিতে অফিসের কাজ ছেড়ে ছুড়ে অনন্যার কাছে যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠে পড়েছে। অন্যদিকে অনন্যা বিছানায় পড়ে পড়ে ঢুকরে কাঁদছে। নীলের ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে গেছে। অনন্যা নিজে ও বুঝে গেছে নীল ওর জন্য হানীকারক।

মল্লিকা এতোক্ষনে কেঁদে কেটে ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে। চোখ জোড়া ফুলে ঢোল হয়ে গেছে মল্লিকার। অন্তর ব্যালকনী থেকে রুমে ঢুকে মল্লিকার চোখ, মুখের অবস্থা দেখে বেশ পেরেশান হয়ে মল্লিকাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“তোমার চোখ, মুখ এমন ফোলা ফোলা লাগছে কেনো মল্লিকা? তুমি কি কেঁদেছ? হাতে ব্যাথা লাগছে?”

মল্লিকা কথার জবাব না দিয়ে সোজা রুম থেকে বের হয়ে গেলো। অন্তর বেশ অবাক হয়ে মল্লিকার পিছনে ছুটা আরম্ভ করল। এমনিতেই সামনে অনেক বিপদ অপেক্ষা করছে এর উপর মল্লিকার অহেতুক রাগ সব মিলিয়ে অন্তর বেশ পেরেশানীতে আছে। মল্লিকা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে সোজা রেস্টুরেন্টের ভিতর এসে বসল। অন্তর ও মল্লিকার পিছু পিছু এসে চেয়ার টেনে মল্লিকার পাশে বসে পড়ল। মল্লিকা মুখটা কালো করে মাথাটা নিচু করে রেখেছে। অন্তর মল্লিকার হাত ধরে এক নিশ্বাসে বলে উঠল,,,,,

—-“কি হয়েছে মল্লিকা? কি নিয়ে রাগ করেছ? প্লিজ বলো।”

মল্লিকা অন্তরের হাতটা এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে চোখ লাল করে অন্তরের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—-“নেক্সট টাইম হাত ধরার আগে আমার পারমিশান নিবেন। ওকে?”

অন্তর ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“এসব কি বলছ মল্লিকা? কি হয়েছে তোমার?”

—-“আমার ক্ষিদে পেয়েছে খাবার অর্ডার করুন।”

—-“আগে বলতে হবে আমার দোষ কি? এর পর খাওয়া দাওয়া?”

—-“ওকে আমি নিজে গিয়েই খাবার অর্ডার করছি। আপনার কিছু করতে হবে না।”

কথাগুলো বলেই মল্লিকা টেবিল ছেড়ে উঠে রেস্টুরেন্ট ম্যানাজারের কাছে গিয়ে ওর পছন্দের কয়েকটা খাবার অর্ডার করে আসল। অন্তর বসে বসে মল্লিকার কান্ড দেখছে। এর মাঝেই লজ ম্যানেজার রেস্টুরেন্টে আসল ব্রেকফাস্ট করতে। অন্তর ম্যানেজারকে দেখার সাথে সাথে টেবিল ছেড়ে উঠে লজ ম্যানাজারের মুখোমুখি গিয়ে বসল। লজ ম্যানেজার কিছুটা অবাক হয়ে অন্তরের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,

—-“Any problem boss?” (কোনো সমস্যা বস?”)

অন্তর গলাটা ঝাঁকিয়ে বলল,,,,,

—“Yes boss. I really wanted to know something from you.” (ইয়েস বস। আসলে আপনার থেকে কিছু জানার ছিলো।”)

—-“Tell me boss.” (জ্বি বস বলুন।)

—- “Does your restaurant have any female employees?” (আপনার রেস্টুরেন্টে কোনো মহিলা কর্মচারী আছে?’)

ম্যানেজার কিছুটা ভেবে চিন্তে বলল,,,,,

—- “No sir. To my knowledge there are no female employees.” (না স্যার। আমার জানামতে তো কোনো মহিলা কর্মচারী নেই।)

অন্তর বাঁকা হেসে বিড়বিড় করে বলল,,,,,,

—-“তাহলে আমার সন্দেহটাই সঠিক। ঐ মেয়েটা লজ স্টাফ ছিলো না। আউট পার্সন ছিলো। যার নাম মিষ্টি। মিষ্টির কাজিন সিঙ্গাপুরেই স্যাটেল্ডড। হয়তো এই উসিলায় মিষ্টি সিঙ্গাপুরে এসেছে। সাথে ক্রিমিনাল নীল টা ও এসেছে। আই থিংক মিষ্টির প্ররোচনায় নীল বাধ্য হয়েছে সিঙ্গাপুর আসতে। নীল ই মিষ্টির কাছে খবরটা লিক করেছে। দুই ভাই বোন মিলে আমার আর মল্লিকার ক্ষতি করার ছক কষছে। ব্যাপার না এই অন্তর ও কম যায় না। খেলা আমি ও দেখাবো। তবে আস্তে ধীরে। কালকের মধেই আমি তোদের চ্যাপ্টার ক্লোজ করব।”

আচমকাই অন্তরের চোখ গেলো মল্লিকার টেবিলের দিকে। মল্লিকার পাশেই একজন স্টাফ খাবার হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মল্লিকা নুডলস খাচ্ছে খুব মনযোগ দিয়ে। স্টাফটা কেবল অস্থির দৃষ্টিতে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। হাতে থাকা জুসের গ্লাসটা টেবিলের উপর রেখে ছেলেটা জুসের গ্লাসটা বার বার মল্লিকার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মল্লিকা ক্ষিদেয় কাত হয়ে আছে বলে ডানে বামে তাকানোর সময় পাচ্ছে না। নুডলসটা খুব স্পাইসি। মল্লিকার আচমকাই ঝাল লেগে গেলো। টেবিল থেকে জুসের গ্লাসটা হাতে নিয়ে মল্লিকা যেই না মুখের কাছে ধরল অমনি অন্তর দৌঁড়ে গিয়ে মল্লিকার হাত থেকে গ্লাসটা ছোঁ মেরে নিয়ে নিলো। স্টাফ বয়টা কিছুটা ঘাবড়ে যেই না পিছনে ফিরে দৌঁড়াতে যাবে অমনি অন্তর খপ করে ছেলেটার কলার ধরে ফেলল। ছেলেটা আপ্রাণ চেষ্টা করছে অন্তরের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর। অন্তর চোয়াল শক্ত করে দাঁত কিড়মিড় করে ছেলেটার কলার চেঁপে ধরে বলল,,,,,

—–“বল তোকে কে পাঠিয়েছে? না হয় এক্ষনি তোর লাশ ফেলে দিবো।”

ছেলেটা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলছে,,,,,

—-“আমাকে কেউ পাঠায় নি। আপনি আমাকে এভাবে চেঁপে ধরেছেন কেনো? এটা কোন ধরনের অসভ্যতা?”

#চলবে,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here