উড়ো পাতার ঢেউ পর্ব: ১৫

0
715

#উড়ো_পাতার_ঢেউ
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ১৫
_________________

“এটাই আমাদের শেষ দেখা টিজা। আশা করছি আর কোনোদিন আমরা একে অপরের মুখোমুখি হবো না। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করো, যাতে আমাকে আর কোনোদিন তোমার কুৎসিত মনের সামনে এসে না দাঁড়াতে হয়।”

গোধূলি লগ্নে গুমোট হাওয়ার দল এসে শরীর স্পর্শ করতেই শিরশিরে একটা অনুভূতির সাথে জোনাসের কথাগুলোও মনঃস্থলে জাগ্রত হলো। যাওয়ার আগে এটাই ছিল জোনাসের শেষ কথা। জোনাস তার মনকে কুৎসিত বলে গিয়েছে! কুৎসিত কেন বললো? জোনাসের কি ধারণা ইরতিজা তাকে ভালোবাসলেও সেটা মুখে স্বীকার করছে না? এর জন্যই কি কুৎসিত বললো? চিন্তিত মুখে হট চকলেটের কাপে চুমুক বসালো ইরতিজা।
আকাশের দৃশ্যটা এখন ভারি নয়নাভিরাম! গোলাপি, বেগুনি, লাল সব মিলেমিশে একাকার আকাশের বুকে। পাহাড়ের ভ্যালিগুলো রাতের অন্ধকারে গা ঢাকা দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইরতিজা ঝাপসা আঁধারে মিশে থাকা পাহাড়ের চূড়ায় তাকিয়ে রইল নির্নিমেষ।
মোবাইলে কলের মৃদু আওয়াজে সেই ঘোর কাটলো। কল রিসিভ করলে রিশন বললো,
“তুমি কোথায়? সকাল থেকে তোমার দেখা পেলাম না!”

“আমি তো আন্টির সাথে আছি। তার বান্ধবীর বাসায় নিয়ে এলো আমাকে।”

“মমের বান্ধবীর বাসায়?” বিস্ময় নিয়ে বললো রিশন।

“হ্যাঁ, আসার সময় আমাকে বললো, ‘চলো ঘুরে আসবে’। আমার হাতে কোনো কাজ না থাকায় চলে এলাম। কিন্তু তুমি আমার খোঁজ করছো কেন?”

“তোমার সাহায্য প্রয়োজন আমার। তুমি কি একটা ভিডিয়ো ধারণ করতে সাহায্য করবে আমায়?”

ইরতিজা দ্বিধার কণ্ঠে বললো,
“ভিডিয়ো ধারণ? উমম…এক্ষেত্রে তো তুমি জুহির সাহায্য নিতে পারো।”

“দুপুর থেকে ওরও কোনো দেখা নেই। এমনকি ফোন পর্যন্ত সুইচ অফ করে রেখেছে। আই থিংক কোনো ছেলেকে পটানোর চেষ্টায় ব্যস্ত আছে ও। তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে না?”

ইরতিজার সরাসরি না করে দিতে ইচ্ছা হলেও ভদ্রতার খাতিরে সেটা করতে পারলো না। অন্যভাবে বললো,
“দেখো আমি এই কাজে কখনও কাউকে হেল্প করিনি। কেউ কখনও ডাকেনি এ কাজে। আমি স্যরি! মনে হচ্ছে না আমি তোমার উপকারে আসবো।”

“উপকারে আসবে কি আসবে না সেটা তো তখন প্রমাণ হবে। তুমি জলদি বাসায় এসো। আমি অপেক্ষা করছি তোমার জন্য।”

রিশন তাকে বেতন ভুক্ত কর্মচারী মনে করছে না কি বুঝতে পারছে না। এমনভাবে বলছে যেন ইরতিজাকে সে নিজের কাজে সাহায্য করার জন্য মাসে মাইনে দিয়ে নিয়োগ করেছে। ইরতিজার যাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। মন থেকে রিশনের কাজে সহযোগিতা করার জন্য কোনো আগ্রহ অনুভব করছে না। কিন্তু শত হলেও রিশন তার চাচাতো ভাই। একটা কাজে সাহায্য চেয়েছে, সাহায্য না করে তো পারা যায় না। ইরতিজা চাচির সাথে কথা বলে বেরিয়ে পড়লো।

রিশন গাড়ি-টারি রেডি করেই অপেক্ষা করছিল বাড়িতে। ইরতিজা গাড়িতে উঠে প্রশ্ন করলো,
“কোথায় যাব আমরা?”

“সেটা বড়ো মনোরম একটা স্থান।”

রিশনের এই কথাটায় ভারি আনন্দ হলো ইরতিজার। আর কিছু না হোক মনোরম একটা স্থান তো তার ঘুরে দেখা হবে।
গাড়ি পার্ক করা হলো যে রাস্তায় তার এক পাশেই সুবিশাল অরণ্য রাজ্য। রিশন প্রয়োজনীয় সব কিছু নিয়ে গাড়ি থেকে নামলো। অরণ্যের দিকটা ইঙ্গিত করে বললো,
“এর ভিতরে প্রবেশ করবো আমরা।”

কথাটা শোনা মাত্র ইরতিজার পিলে চমকে উঠলো। ভয়ের দীর্ঘ একটা হস্ত হৃৎপিণ্ড খাঁমচে ধরলো তার।

“জঙ্গলের ভিতর ভিডিয়ো শ্যুট করবে?”

“হুম। এখানে অনেক জোনাকি পোকা দেখা যায়। এর আগে এক রাত্রিকালে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে এই জায়গাটার ভিডিয়ো বানিয়েছিলাম। চলো।”

রিশন পায়ে পায়ে এগিয়ে যেতে লাগলো। ইরতিজার ভীষণ ভয় করছে। রিশন যখন মনোরম স্থান কথাটা বলেছিল, তখন ভেবেছিল না জানি কত সুন্দর হবে জায়গাটা। কিন্তু এ কোন জঙ্গলের ভিতর নিয়ে এলো? এর ভিতর না কি জোনাকি পোকা দেখা যায়! ইরতিজার এক পা বাড়াতে ইচ্ছা করলো না। মনে হচ্ছে জঙ্গলের ভিতর থেকে কয়েক জোড়া মৃত আত্মার চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে! গা শিরশির করে উঠলো ইরতিজার। এখানে একা দাঁড়িয়ে থাকতে মোটেই সাহস হলো না। উপায় না পেয়ে সে রিশনের দিকে দৌঁড়ে এলো। হাঁটতে লাগলো রিশনের একেবারে পাশ ঘেঁষে। উঁচু উঁচু গাছ। আকাশের বুকে অর্ধপূর্ণ চাঁদ আলো ছড়িয়েছে। গাছের ডালপালা চাঁদের আলোয় বাধা দিয়ে অদ্ভুত সব ছায়ার নকশা এঁকেছে। সেই সব ছায়ার নকশার দিকে তাকালে অজান্তেই অন্তর কেঁপে উঠছে ইরতিজার। রিশন বলেছিল এখানে অনেক জোনাকি পোকা দেখা যায়, কিন্তু জোনাকির সংখ্যা খুব অল্প। ইরতিজার ভয় করছে। এই জঙ্গলে কোনো হিংস্র প্রাণী নেই তো আবার? প্রশ্নটা মনে মনে যখন ভাবছিল ঠিক তখনই একটা নরম কিছু ইরতিজার পায়ের কাছ থেকে দৌড়ে চলে গেল। আঁতকে উঠলো ইরতিজা,
“আ…”

রিশন সামনে লাইটের আলো ফেলে দেখলো একটা কাঠবিড়ালি দৌঁড়ে যাচ্ছে। সে হেসে ইরতিজার দিকে তাকিয়ে বললো,
“ভিতু।”

ইরতিজা রাগ দেখিয়ে বললো,
“আমি ভিতু নই।”

“হ্যাঁ, তুমি তো ভীতু নও, তার প্রমাণ এই মাত্রই তো পেলাম।”
বলে ফিক করে হেসে দিলো রিশন।

ইরতিজার বেজায় মেজাজ খারাপ হলো। ছেলেটা তাকে এই জঙ্গলের ভিতর নিয়ে এসেছে! আবার তাকে ভিতু বলে সম্বোধন করে মজাও নিচ্ছে! ছেলেটা খুব একটা ভালো নয়!

“এই জঙ্গলটা কীসের?” রিশনের সাথে কোনো কথা বলবে না প্রতিজ্ঞা করেও মুহূর্তেই প্রতিজ্ঞা ভেঙে ফেললো ইরতিজা।

“জানি না। জঙ্গল তো জঙ্গলই। জঙ্গল হওয়ার জন্যও জঙ্গলের কারণ লাগে না কি?”
রিশন মুখ টিপে হাসলো। তার এমন একখানা ভাব যেন ইরতিজার এমন প্রশ্ন করাটা খুব বড়ো বোকামি।
ইরতিজার মেজাজ আবারও চটে গেল। কিছু বলতেও পারছে না। ভিতরে ভিতরে শুধু পুড়ে খাঁক হয়ে গেল তার রাগ।

অনেকক্ষণ ধরে হেঁটে আসার পর রিশন বললো,
“দাঁড়াও।”

দাঁড়িয়ে গেল ইরতিজা। এতক্ষণ হাঁটতে হাঁটতে হাঁপিয়ে উঠেছিল সে। রিশন অঙ্গুলি নির্দেশ করে বললো,
“ওই ট্রি হাউজটায় উঠে ভিডিয়ো শ্যুট করবো আমরা।”

ইরতিজা দেখলো তাদের থেকে একটু দূরেই দাঁড়িয়ে আছে ছোটো একটা ট্রি হাউজ। সে ভ্রু কুঁচকে বললো,
“এটা কার ট্রি হাউজ? তোমার?”

রিশন ট্রি হাউজের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,
“না। জানি না এটা কার। অনেক আগে থেকেই এটাকে এখানে দেখে আসছি। মনে হচ্ছে কোনো বিদেশি পর্যটকেরা এটা নির্মাণ করেছে। এটা একটা পরিত্যক্ত ট্রি হাউজ। এখানে কাউকেই থাকতে দেখা যায় না।”

ইরতিজার কিন্তু তা মনে হলো না। বিদেশি কোন পর্যটক এখানে এটা নির্মাণ করবে? নির্মাণ করা এতই সহজ কাজ? রিশনের পিছন পিছন সিঁড়ি বেয়ে উঠলো ইরতিজা। ছোটো একটা অলিন্দ আছে। অলিন্দের এক পাশে দুটো গোলাপ গাছ। বসার জন্য দুটো চেয়ারও আছে। চেয়ারগুলো দেখে মনে হচ্ছে না এগুলো দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত। গাছগুলোও সতেজ। যদি এটা পরিত্যক্ত হতো তাহলে টবে এত সুন্দর ভাবে কি বেড়ে উঠতে পারতো গাছগুলো? ইরতিজা লাইটের আলোতে দেখলো ট্রি হাউজের পাশে গাছের সাথে একটা দোলনা ঝুলছে। ইরতিজা চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সব দেখছিল। ভূতুড়ে পরিবেশ ছাড়া বিশেষ কিছু আর নজরে পড়লো না।
রিশন আশেপাশে তাকিয়ে বললো,
“আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলে বোধহয় বেশি জোনাকির দেখা পাওয়া যাবে। চলো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি। একটা দুটো জোনাকি দিয়ে ভিডিয়ো চলবে না।”

রিশন অলিন্দে থাকা একটা চেয়ারে বসে ক্লান্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। বসার আগে চেয়ারের ধুলা মুছে নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলো না। ইরতিজা অপর চেয়ারটি হাত দিয়ে ঝেড়ে ময়লা দূর করার চেষ্টা করলো। অতঃপর বসলো। আশেপাশে তাকাতেই ভয়ের যে দীর্ঘ হস্ত তার হৃৎপিণ্ড খাঁমচে ধরেছিল, সেটা আরও জোরে খাঁমচে ধরে। বার বার কেবল ঢোক গিলছে ভয়ে।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরও যখন আর জোনাকির দেখা মিললো না তখন ইরতিজা ভয়ার্ত কণ্ঠে বললো,
“চলো রিশন বাসায় ফিরে যাই। মনে হচ্ছে জোনাকিরা আজ আসবে না। তাড়াতাড়ি চলো এখান থেকে।”

“তুমি কি ভয় পাচ্ছ?”

“ভয় না, আমার ভালো লাগছে না এখানে থাকতে।” সত্যটা চেপে গেল ইরতিজা।

“তোমার কণ্ঠে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ টিজা!”
রিশন ইরতিজার থেকে খানিক দূরে বসা ছিল। চেয়ার নিয়ে সে এবার একেবারে ইরতিজার পাশ ঘেঁষে বসে বললো,
“তুমি এত কেন ভয় পাচ্ছ টিজা? আমাকে তোমার কী মনে হয়? আমি খুবই সাহসী। ভূতেরা যদি তোমায় ধরতে আসে আমি ওদের মারধর করে তাড়িয়ে দেবো। ডোন্ট ও্যরি! আমি খুবই সাহসী, কথাটা মাথায় রাখবে।”

ইরতিজার মন সাহসের ভরসা খুঁজে পেল না। রিশনকে তার একদমই সাহসী বলে মনে হয় না। কিন্তু রিশনের কণ্ঠে ভয়ের লেশমাত্রও নেই। ইরতিজা কিছু না বলে নীরব হয়ে গেল।
হঠাৎই একটা আলোর ধারা এসে পড়লো ইরতিজা আর রিশনের উপর, সেই সাথে কানে এলো একটা গম্ভীর কণ্ঠ,
“ওখানে কে?”

ইরতিজা ভয়ে চেপে ধরলো রিশনের একটা হাত। দু চোখে ভয় বিস্ফোরিত। চেয়ে আছে রিশনের দিকে। রিশনও ভীষণ অবাক। এই অরণ্যে এই সময় তারা ব্যতীত অন্য কেউও থাকতে পারে এটা তার বিশ্বাস করতে খানিক সময় লাগলো। সে ইরতিজার হাত ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো। আলোর ধারা কাটিয়ে সে দেখার চেষ্টা করলো মানুষটাকে। একজন নয়, দুজন মানুষকে দেখতে পেল। একটু যেন পরিচিত ঠেকলো মানুষ দুটোকে। নিচের মানুষ দুটোও বোধহয় তাকে চিনতে পারলো। একজন তো প্রশ্নও করলো,
“তুমি কি রিশন?”

রিশন এবার পুরোপুরি চিনে ফেললো মানুষ দুটোকে। রিশন উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলো,
“তোমরা দুজন এখানে কেন?”

ইরতিজা ব্যাপারটা বুঝতে পারছিল না, সেও উঠে এসে রিশনের পাশে দাঁড়ালো। নিচে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ দুটোকে দেখে সে ভীষণ চমকে গেল। দূর হলেও, ভালো আলো না থাকলেও, তার চিনতে একদমই অসুবিধা হলো না, ওখানে যে দুজন দাঁড়িয়ে আছে তারা ক্যানিয়ল আর সামুরা! ইরতিজার কপালে গভীর ভাঁজ পড়লো। ক্যানিয়ল আর সামুরা এখানে কেন?

রিশনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটাকে চিনতে বেশি সময় লাগলো না ক্যানিয়লের। মেয়েটার সাথে তার বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে। রিশনকে দেখে সে অবাক হয়েছিল, ইরতিজাকে দেখে অবাকের মাত্রা একগুণ বেড়ে গেল। ইরতিজার উদ্দেশ্যে বললো,
“তাহলে তুমি আমাকে মারার জন্য এখান অবধিও চলে এসেছো?”

ক্যানিয়লের প্রশ্নে সবাই অবাক হয়ে ক্যানিয়লের মুখের দিকে তাকালো। ইরতিজা কী করবে বুঝতে পারছে না। ছেলেটা আবারও তাকে ভুল বুঝছে!

“আমি তোমাকে মারার জন্য কেন আসবো? আমি আর রিশন তোমাদের আগে এখানে এসেছি।”

“মিথ্যা কম বলো মিথ্যাবাদী!”

ক্যানিয়ল হনহন করে উঠে এলো ট্রি হাউজের অলিন্দে। ইরতিজা আর রিশনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললো,
“তাহলে তোমরা কি একই দলের সদস্য? কে কে আছে তোমাদের দলে? তোমরা দুজন… তোমার প্লে গার্ল বোনটাও এই দলে আছে না কি?”

শেষের কথাতে জুহিকে নির্দেশ করে রিশনের উদ্দেশ্যে বললো ক্যানিয়ল।

রিশন অবাকের সুরে বললো,
“কীসের দল?”

“আততায়ী গ্যাং!”

রিশন অবুঝের মতো ইরতিজার দিকে তাকালো। ইরতিজা রাগে ফুলছে। ক্ষুব্ধ চোখে তাকিয়ে আছে ক্যানিয়লের দিকে। মিথ্যা অপবাদ কতদিন সহ্য করা যায়?

“কীসব গ্যাং-ট্যাংয়ের কথা বলছো? কীসের গ্যাং? আমরা এখানে ভিডিয়ো শুট করতে এসেছিলাম।” বললো রিশন।

“এখানে কেন ভিডিয়ো শ্যুট করতে আসবে? এটাকে কি তোমার বাবার প্রোপার্টি মনে হয়?”

“তাহলে কি এটা তোমার বাবার প্রোপার্টি?” পাল্টা আক্রমণ করলো রিশন।

“না, এটা আমার ড্যাডের প্রোপার্টি তো নয়, এটা আমার মাদারের প্রোপার্টি। এই ট্রি হাউজ আমার মাদারের।”

কথাটা বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হলো না রিশনের। সে সন্দেহের চোখে বললো,
“এটা হতেই পারে না। তোমাকে অথবা তোমার ফ্যামিলির কাউকে কখনও দেখিনি এখানে। এটা একটা পরিত্যক্ত ট্রি হাউজ। এটা বিদেশি পর্যটকরা তৈরি করে রেখে গিয়েছে।”

ক্যানিয়ল মজার কোনো জোক শুনেছে এমনভাবে হাসলো,
“হোয়াট? কী জোক শোনাচ্ছ তুমি রিশন? বিদেশি পর্যটকরা এটা তৈরি করেছে এসব মাথায় আসে কী করে তোমার? আর আমাকে অথবা আমার ফ্যামিলির কাউকে কখনও দেখোনি এটা কি আমার ব্যর্থতা? এখানে আসার আগে আমি কি তোমাকে নক করে আসবো যে, রিশন আমি এই মুহূর্তে এই ট্রি হাউজে যাচ্ছি, তুমিও চলে এসো, বিশাল অরণ্যের বুকে মিষ্টি একটা ডেট হবে আমাদের দুজনের! এটাই কি বলতাম?”

“তোমার মুখের কন্ট্রোল নেই ক্যানি!”

ক্যানিয়ল ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। তারপর বললো
“এখানে এসে চরম ভুল করেছো তোমরা। এর যথোপযুক্ত শাস্তি তোমাদের পাওয়া উচিত। আমি এখনই পুলিশকে…”
থেমে গেল ক্যানিয়ল। ভুল হয়েছে এমনভাবে দুই পাশে মাথা নেড়ে বললো,
“নো, পুলিশ নয়। আই হেইট পুলিশ! পুলিশরা কোনো কাজের নয়। ওরা একটা ঘটনা পেলে সেটাকে শুধু পেঁচিয়ে যায়। আমি নিজেই তোমাদের ব্যবস্থা করবো। জানি না আমার এই দামি ট্রি হাউজে কত বার কদম ফেলেছো তোমরা। কতবার কদম ফেলেছো সেটা তোমরাই ভালো জানো। প্রত্যেক কদমের জন্য এক হাজার ডলার করে জরিমানা দেবে। দাও।”

ইরতিজা সব শুনে হতবিহ্বল হয়ে গেল,
“হোয়াট?”

ক্যানিয়লের ধ্যান ইরতিজার দিকে ঘুরে গেল,
“হেই পাকিস্টানি গার্ল, কতবার কদম ফেলেছো তুমি এই দামি কাঠের মেঝেতে? পাই টু পাই হিসাব করে প্রত্যেক কদমের জন্য এক হাজার ডলার করে জরিমানা দাও।”

“তুমি কি পাগল হয়েছো ক্যানি?”
পাশ থেকে বলে উঠলো রিশন।

তর্ক-বিতর্ক শুরু হলো দুজনের মাঝে। দুজনই রাগান্বিত। উত্তর-প্রত্যুত্তর চলতে লাগলো। হাঁপিয়ে গিয়ে দুজনই থেমে গেল এক সময়। রিশন নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে বললো,
“চলো টিজা, এখানে আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালে অসুখ করবে।”

ইরতিজা রিশনের পিছন পিছন সিঁড়ি দিয়ে নামতে নিলেই ক্যানিয়ল ইরতিজার গায়ে থাকা হুডি টেনে ধরলো। পিছন দিকে টান পড়তেই থেমে যেতে হলো ইরতিজার। পিছন ফিরে বললো,
“এটা কোন ধরনের অসভ্যতামি?”

ক্যানিয়লের হাতে একটা নভেল বুক ছিল। সেটা দিয়ে ইরতিজার মাথায় আস্তে আঘাত করলো। ‘আ’ মতন শব্দ করে আঘাত করা স্থান চেপে ধরলো ইরতিজা।

“তোমার মাথার হিজাব কোথায় পাকিস্টানি গার্ল?”

ইরতিজা কিছু বললো না। শুধু রেগে তাকিয়ে রইল।

“তোমার মাথার টুপি কোথায় পাকিস্টানি গার্ল?”

এবারও কিছু বললো না ইরতিজা।

ক্যানিয়ল আগের মতো সুরে বললো,
“তোমার মাথায় চুল কেন আছে পাকিস্টানি গার্ল? তোমার মাথার চুলগুলো আমি যত্ন সহকারে কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলতে চাই!”

বলে নিজের মাথার টুপিটা খুলে পরিয়ে দিলো ইরতিজার মাথায়।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here