#উড়ো_পাতার_ঢেউ
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ২৬
_________________
ওয়্যারড্রোবের ভিতর জামাকাপড়ের পিছনে লুকায়িত নিজের ছবিটা দেখে বেলা লিমাসের চোখে অজান্তেই বিন্দু বিন্দু পানিকণা জমে অক্ষি কোটর পূর্ণ করলো। হৃদয়ভার হয়ে এলো তার। শান্ত ব্যথিত মুখটার পিছনে প্রশান্তির উন্মাদিনী ঝড় প্রলয় তুলছে। সে হাত বাড়িয়ে আলতো ছোঁয়া রাখলো ছবিটার গায়ে। চোখের কোল ছাপিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে চাইছে। সব সময় ‘ঘৃণা করি’ বলা ছেলেটা তার ছবি সযতনে লুকিয়ে রেখেছে এখানটায়! তার মানে মনের অন্তঃস্থলেও লুকায়িত ভালোবাসার পরিধি আছে।
রুমের দরজাটা হঠাৎ কঠিন শব্দ করে খুলে গেল ব্যস্ত ভঙ্গিতে। ক্যানিয়ল এসে দাঁড়িয়েছে। ওর পিছনেই এসে থেমে গেছে ইরতিজা এবং মি. হেনরি।
ক্যানিয়ল বেলা লিমাসের উদ্দেশ্যে গর্জন করে উঠলো,
“কোন সাহস এবং অধিকারে তুমি আমার বেডরুমে প্রবেশ করেছো? কোন সাহসে এসেছো তুমি এখানে?”
বেলা লিমাস পাশ ফিরে দরজায় তাকালেন। তার দু চোখে জল থলথল করছে।
মায়ের দু চোখের এই জল থলথল ভাব ক্যানিয়লের কঠিন মনোবলকে দুর্বল করে দিতে চাচ্ছে। কিন্তু সে নিজেকে যথাসাধ্য অনড় রাখলো। যেরকম সব সময় রাখে।
বেলা লিমাস ওয়্যারড্রোবের সামনে দাঁড়িয়ে আছে প্রথমে এটা খেয়াল হয়নি ক্যানিয়লের। কিন্তু যখন খেয়াল হলো এবং দেখলো ওয়্যারড্রোবের দরজা খোলা তখন আকাশ ভাঙার শব্দ বেজে উঠলো দু কানে। অনড় রাখা কঠিন মনোবলে ভাঁজ পড়ে কুঁচকে গেল। টের পেল তার হাত-পা অবশ হয়ে আসছে। পাথরের মতো জমে যাচ্ছে সে। সেই সাথে তার মনে বিদ্যমান কঠোরতারও পতন ঘটছে। দুর্বলতার আভাস গ্রাস করে ফেলছে তাকে। নিঃশ্বাসের পথে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।
বেলা লিমাস অশ্রু ভরাট চোখে সরল হাসি অঙ্কন করলেন মুখে। অঙ্কিত ওই হাসিটুকু মর্মান্তিক এবং ভারি সুন্দর দেখালো। সে শিথিল পা ফেলে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলেন ক্যানিয়লকে। দুই হাতের শক্ত বাঁধনে ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন এই বহু বছর পর। তার দু চোখের কোল ছাপিয়ে ঝরতে লাগলো বর্ষণ। কান্না রুদ্ধ কণ্ঠে বললেন,
“মমকে কেন ভালোবাসো ক্যানিয়ল? কেন ভালোবাসো?”
ক্যানিয়ল স্তব্ধ হয়ে গেল। মাতৃ পরশের সংস্পর্শে এসে গুঁড়িয়ে গেল তার ভিতরের যাবতীয় কাঠিন্য বিষয়। বুকে সৃষ্টি হলো একরাশ হাহাকার! জ্বালাপোড়া অনুভব হলো হৃদয়ে। আজ সে ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়লো। যে ছবিটা সে লুকিয়ে রেখেছিল এতদিন ধরে, যে ছবিটা সে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতো, সেই ছবিটা প্রকাশ্যে আসায় সে ভীষণ দুর্বল অনুভব করলো। এই ছবি প্রকাশ্যে আসুক এটা সে কখনও চায়নি। অন্তত বেলা লিমাস কখনও এই লুকায়িত ছবিটা দেখে ফেলুক একদমই চায়নি।
ক্যানিয়লের মনে হলো দুটো বৃহৎ আঙুল তার হৃৎপিণ্ড চেপে ধরেছে অতি সজোরে। এই ব্যথা সহ্য করতে না পেরে তার চোখের উপর স্বচ্ছ জল ভেসে উঠলো। অনুভব হলো গলায় বিঁধে আছে সূচালো কাঁটা। সেই কাঁটাকে উপেক্ষা করে ক্যানিয়ল বললো,
“ছাড়ো। আমাকে জড়িয়ে ধরার অধিকার তুমি হারিয়ে ফেলেছো বহু বছর আগে! ছাড়ো…”
বেলা লিমাস ছাড়লেন না, বরং আরও শক্ত করে আঁকড়ে ধরলেন। অতঃপর ছেলের কপালে চুমু খেয়ে বললেন,
“ঘৃণা করো ওটাই তো ঠিক ছিল। ভালোবাসো জেনে তো আরও কষ্ট হচ্ছে মমের। দগ্ধ হৃদয় আরও বেশি করে পুড়বে এরপর থেকে!”
ক্যানিয়লের দু চোখ বেয়ে পাল্লা দিয়ে জলের দুটি ধারা গড়িয়ে পড়লো। উচ্ছল হয়ে উঠতে চাওয়া কান্নাকে পোষ মানিয়ে বললো,
“আমি চাই তো তোমার হৃদয় আরও বেশি করে পুড়ুক! কিন্তু ওটা শুধু ঘৃণাতে পুড়বে। বোকার মতো ভেবো না যে ঘৃণার পাশাপাশি তোমাকে ভালোওবাসি! এটা ভাবা বোকামি বা ভুল ছাড়া কিছু হবে না।”
বেলা লিমাস হাসলেন। হাসিটায় ক্যানিয়লের কথা অবজ্ঞা করার ছাপ। বললেন,
“তুমি অভিনয় ভালো জানো ক্যানিয়ল। কিন্তু এই মুহূর্তে তুমি একজন ভালো অভিনেতার পরিচয় বহন করছো না। এটা তোমার দোষ নয়। তুমি কেবল তোমার মাঝে ঘৃণাটা প্রতিস্থাপন করতে চাইলেও, অন্যায়ভাবে তোমার মন এটা মানছে না।”
ক্যানিয়ল অন্যদিকে শূন্য দৃষ্টি স্থাপন করে রেখেছে। জল টলমল চোখ জোড়া ইতোমধ্যে লাল হয়ে উঠেছে তার। ক্যানিয়ল নিজেকে দেখে নিজে বিস্মিত। কাঁদছে সে? এতটা ছিঁচকাঁদুনে কবে হলো সে?
বেলা লিমাস হঠাৎ ক্যানিয়লের হাত দুটো আলতো করে ধরে বললেন,
“মমকে একবার মুখে ভালোবাসি প্রকাশ করা যায় না ক্যানিয়ল? এটা কি এতটাই কঠিন?”
ক্যানিয়ল চোখ বন্ধ করলো। উষ্ণ দুটো ধারা গাল বেয়ে গলা পর্যন্ত বর্ধিত হলো। চোখ খুলে বেলা লিমাসের দিকে তাকিয়ে বললো,
“নির্লজ্জের মতো আর কখনও আমার সাথে দেখা করার জন্য আসবে না! বছরের পর বছর কেটে গিয়েছে। দেখা যেত বছরের ভিতর কেবল দুই কি তিন বার আমাকে দেখার জন্য উঁকি দিয়েছো তুমি। অথচ এই বছরটায় এমন কি হলো যার জন্য এত ঘন ঘন দেখা করতে আসছো? পুরোনো দিনগুলো আমি ভুলে গিয়েছি ভেবেছো? তুমি চলে যাওয়ার পর কতটা দুর্বিষহ অবস্থায় ছিলাম আমি ভুলে যাইনি। অবজ্ঞার ভিতর দিয়ে বড়ো হয়েছি। যেখানে আমাকে নিজের মমই ফেলে রেখে গেছে সেখানে অন্যরা কতটাই বা দেখভাল করবে? কত কেঁদেছি সেই হিসাব কেবল নিজের কাছেই জমা আছে। আমার কান্নার হিসাবটাও কারো জানা নেই। নতুন করে আর কাঁদতে চাই না আমি। সুতরাং আর এসো না। কান্নাকে ভুলে গিয়েছি আমি।”
“তাহলে এখন কেন কাঁদছো?”
“আজবভাবে তুমি কাঁদিয়ে ছেড়েছো। কিন্তু…আমি আর কখনো চোখের জল ফেলতে চাই না। প্লিজ! প্লিজ আর কখনও আমার সামনে এসো না। তোমার উপস্থিতি আমি সহ্য করতে পারি না! আ-আমার কষ্…”
থেমে গেল ক্যানিয়লের ক্রন্দন জড়িত কণ্ঠ। দু চোখ দিয়ে জল নামার প্রতিযোগিতা হচ্ছে বোধহয়। সে তো আসলেই ছিঁচকাঁদুনে হয়ে গিয়েছে! লজ্জা! তার জন্য বড়ো লজ্জা এটা।
বেলা লিমাস বললেন,
“থামলে কেন? কী হয়? কষ্ট হয় তোমার?”
ক্যানিয়ল আর সহ্য করতে না পেরে ডেকে উঠলো,
“মি. হেনরি, তাকে নিয়ে যাও আমার সামনে থেকে।”
“নিজেই চলে যাচ্ছি। তোমার উত্তেজিত হওয়ার প্রয়োজন নেই ডিয়ার।”
বেলা লিমাস এগিয়ে গেলেন দরজার দিকে। ক্যানিয়ল হঠাৎ পিছন থেকে প্রশ্ন করে উঠলো,
“আমাকে একা রেখে তুমি কেন চলে গিয়েছিলে?”
বেলা লিমাসের চলতি পা থেমে গেল। পিছন ফিরে চাইলেন। ক্যানিয়লের প্রশ্নের উত্তর দিলেন না। শুধু বললেন,
“হয়তো তোমাকে একা রেখে গিয়ে ঠিক করিনি, হয়তো বা করেছি!”
কথাটা বলে বেলা লিমাস পা বাড়ালেন। দরজার কাছে হঠাৎ আবার থামলেন তিনি। ইরতিজার দিকে তাকালেন। ইরতিজা হকচকিয়ে গেল। বেলা লিমাস আর দাঁড়ালেন না চলে গেলেন। চোখের অদৃশ্য হওয়ার আগ পর্যন্ত ইরতিজা তাকিয়ে রইল তার যাওয়ার পথে। চলে গেলে দৃষ্টি এনে ফেললো রুমের ভিতর ক্যানিয়লের উপর। ক্যানিয়ল কাঁদছে। বিস্ময়কর আর অবিশ্বাস্য একটা দৃশ্য মনে হলো ইরতিজার ক্যানিয়লের কান্নাকে। তার কেন যেন কোনো দিন মনে হয়নি এই ছেলেটা কাঁদতে পারে বা এই ছেলেটার চোখ দিয়ে কখনও কান্না ঝরেছে। কিন্তু পাজি ছেলেটার কান্নার হিসাব না কি কেউ জানে না!
_______________
ইরতিজা চুপচাপ চলে এসেছে এন্ডারসন হাউজ থেকে। এমন একটা পরিস্থিতির মাঝে পড়েছিল যে পরিস্থিতিটার চিন্তা তার মাথা থেকে দূর হচ্ছে না। ভাবতে ভাবতে মাথা ব্যথা হয়ে গিয়েছে। কেন ক্যানিয়লকে রেখে চলে গিয়েছিল ওর মা?
বাসায় এসে ড্রেস চেঞ্জ করলো আগে। তারপর রুমের ভিতর বসে ব্যাপারটা নিয়ে ভাবলো কিছুক্ষণ। এক সময় ভাবতে ভাবতেই বের হলো বাসা থেকে। বাসায় কেউই নেই এখন।
ইরতিজা এরিয়ার ভিতর হাঁটাহাঁটি করলো কিছুক্ষণ। হাঁটতে হাঁটতে চলে এলো সুইমিং পুলে। এখানে এসে রিশন আর জুহির দেখা পেল। রিশন সুইমিং পুলের ওই মাথায় একা একা কী যেন বকর বকর করছে। একটু দেখার পর বুঝতে পারলো, না একা একা বকর বকর নয়। রিশন লাইভে আছে। ইরতিজা জুহির পাশের বেঞ্চটায় বসলো। প্রকৃতিতে রোদের ছড়াছড়ি। তবে সে রোদ পানসে। কোনো তাপ নেই। সুইমিং পুলের পাশেই রয়েছে জিম। ইরতিজা একবার গিয়েছিল জিমে। কাল আবার একবার যাবে ডিসাইড করলো। এরপর থেকে রোজই জিমে যাতায়াত করা উচিত বলে মনে করছে।
জুহি মোবাইলে কী এক ভিডিয়ো দেখায় মগ্ন। ইরতিজা পাশে এসে বসেছে সেটা বোধহয় খেয়ালও করেনি। ইরতিজাও জুহিকে কিছু না বলে আবার ক্যানিয়ল আর ওর মমকে নিয়ে ভাবনায় মগ্ন হয়ে গেল।
ভাবনা এ দেয়ালের সাথে ও দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে অন্য বিষয়ে গিয়ে স্থির হলো। মনের মধ্যখানে জন্ম নিলো গুরুত্বপূর্ণ এক প্রশ্ন। সে জুহিকে ডাকলো,
“হেই জুহি…”
জুহি তাকালো।
ইরতিজা সরাসরি প্রশ্ন করলো,
“আচ্ছা, ক্যানিয়লের কি আসলেই উডবি ওয়াইফ আছে? ও বলে ওর না কি উডবি ওয়াইফ আছে, এটা কি সত্যি?”
জুহি মাথা নেড়ে বললো,
“হ্যাঁ এটা সত্যি।”
ইরতিজার মুখে গাম্ভীর্য দেখা গেল।
“তুমি চেনো ওর উডবি ওয়াইফকে? দেখেছো কখনো?”
“অবশ্যই। ইউনিভার্সিটির সবাই চেনে তাকে। সে একজন ফেমাস বেলে ড্যান্সার।”
“ফেমাস?”
“হুম, শেখ মিরান্ডা ওয়ালিদ!”
ইরতিজা বিস্মিত হলো। হ্যাঁ, সেও তিন-চারবার মোবাইলে শেখ মিরান্ডা ওয়ালিদের শো পারফরম্যান্স দেখেছিল। মেয়েটা দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি তার ড্যান্সও মুগ্ধ করে। ইরতিজা বিশ্বাস করতে পারছে না শেখ মিরান্ডা ওয়ালিদ ক্যানিয়লের উডবি। জুহি মিথ্যা বলছে না তো?
“মিরান্ডা ক্যানিয়লের থেকে দুই বছরের বড়ো। ছোটো বেলা থেকেই দুজন পরিচিত। ক্যানিয়লের ড্যাড এবং মিরান্ডার ড্যাড দুজন একে অপরের ভালো বন্ধু। ক্যানিয়ল আর মিরান্ডাকে নিয়ে কোনো প্রেম সম্পর্কিত নিউজ কখনও প্রকাশ হয়নি, তাই ধরে নেওয়া যায় ওদের এনগেজমেন্টটা পারিবারিকভাবে হয়েছে।” জুহি বললো।
ইরতিজা চুপ করে বসে রইল। এ বিষয়ে কথা বাড়াতে ইচ্ছা করছে না আর। মেঘ জমার মতোই আঁধার হলো তার মুখ। কিছুক্ষণ উদাসী বসে থেকে অন্যমনস্কভাবে বললো,
“আচ্ছা, এনগেজমেন্ট হয়ে গেলে কি বিয়ে হওয়াটাও আবশ্যক?”
“না, এমনও নয়। এনগেজমেন্ট হওয়ার পরও অনেক সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত গড়ায় না। এটা…”
থামলো জুহি। হঠাৎই তার কিছু ঠাহর হলো, যেটা এতক্ষণ হয়নি। ইরতিজার দিকে সন্দিহান চোখে চেয়ে বললো,
“হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন করছো টিজা? তুমি কি আসলেই …”
জুহির কথার মাঝেই ইরতিজা দাঁড়িয়ে গিয়ে বললো,
“সাজিদের সাথে আমার এনগেজমেন্ট হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমাদের এনগেজমেন্টও কখনও বিয়ে পর্যন্ত গড়াবে না। লোকটাকে আমি মেনেই নিতে পারি না, আর পারবোও না কখনও! তার সাথে এ ব্যাপারে খোলামেলা কথা বলবো আমি।”
বলে ইরতিজা দ্রুত পায়ে বাসায় চলে এলো।
________________
রাতে সাজিদের কাছে কল দিলো ইরতিজা। সাজিদ তার শাড়ি পরা ছবিটা সিন করলেও কিছুই লিখে পাঠায়নি। আর কোনো কলও দেয়নি। ইরতিজার কল রিসিভ হলো একটু সময় নিয়ে। ওপাশ থেকে সালাম দিলো সাজিদ,
“আসসালামু আলাইকুম!”
“ওয়াআলাইকুমুস সালাম! আপনাকে একটা কথা বলার জন্য কল দিয়েছি। জরুরি কথা।”
“হ্যাঁ বলুন, শুনতে অসুবিধা নেই আমার।”
“অসুবিধা থাকলেও শুনতে হতো। আমি কিন্তু সত্যি সত্যিই বিয়ে করবো না আপনাকে। আ…”
“তাহলে কি আপনি মিথ্যা মিথ্যা বিয়ে করবেন আমাকে?” সাজিদ নীরব হাসলো, শব্দহীন।
ইরতিজা তবুও বেশ বুঝতে পারলো সাজিদ হেসেছে। সে বললো,
“এটা মজা নয়। আমি কিন্তু প্রথম থেকেই সিরিয়াস। আর…”
কথাটা বলতে ইতস্তত বোধ কাজ করছে ইরতিজার ভিতর।
“আমি কিন্তু আপনার জন্য মেয়ে-টেয়ে খুঁজিনি। না, একেবারে যে খুঁজিনি সেটা না। তবে আপনার কাছে যে মেয়েগুলোর ছবি পাঠিয়েছিলাম ওগুলো সব ইন্সট্রাগ্রাম থেকে সংগ্রহ করা মেয়েদের ছবি। তবে আমি একবার একটু খোঁজ লাগিয়েছিলাম। পেয়েও গিয়েছিলাম একজনকে। মেয়েটা লাইব্রেরির একজন স্টাফ। মুসলিম। দেখতে-শুনতে খুবই ভালো। কিন্তু সমস্যাটা হলো…”
“সমস্যা?”
“সমস্যাটা হলো মেয়েটা বিবাহিত এবং এক বছরের একটা বাচ্চাও না কি আছে!”
সাজিদ হেসে বললো,
“দেখুন ইরতিজা, আমার পক্ষে একজন লোকের ওয়াইফ এবং একটা বাচ্চার মাকে বিয়ে করা সম্ভব না।”
“হ্যাঁ সেজন্যই তো ওটা নিয়ে আর সামনে এগোইনি আমি।”
সাজিদ কিছু বললো না। ক্ষণকাল নীরব থেকে ইরতিজা বললো,
“আমার পক্ষে আপনাকে বিয়ে করা সম্ভব নয়। আমি আমাদের এনগেজমেন্টটা মেনেই নিতে পারিনি কখনও। আর বোধহয় পারবোও না কোনোদিন!”
“কেন মেনে নিতে পারছো না? কোনো কারণ?”
“জানি না কোনো কারণ আছে কি না। আমি এই মুহূর্তে খুঁজে পাচ্ছি না কোনো কারণ। ধরে নিন কারণহীনই মেনে নিতে পারছি না। আপনি আমার হাসব্যান্ড হবেন এটা আমি কল্পনাও করতে পারি না সাজিদ!”
“কিন্তু আমি তো খুব করে কল্পনা করতে পারি হবু স্ত্রী। এই মুহূর্তেও আমি তোমাকে আমার স্ত্রী রূপে কল্পনা করতে পারি। আমি কি একবার কল্পনা করবো?”
“এই খবরদার! আমাকে নিয়ে কোনো আজেবাজে কল্পনা করবেন না। আমাদের বিয়ে হবে না। সুতরাং এমন কল্পনা করাও অন্যায়। আপনি শুধু একবার আমার আব্বুকে কল করে বলবেন। সে আমার কথা শুনবে না সহজে। আপনি যদি বিয়েতে অসম্মতি জানান তাহলে এ বিয়ে সেকেন্ডের ভিতর ভেঙে যাবে। আপনি আমাকে বিয়ে করে সুখী হবেন না।”
“আমার সুখী হতে হবে না। আমি তোমাকে সুখী রাখবো।”
“উহুঁ, আপনি বুঝতে পারছেন না!”
“আমি তোমাকে গ্যারান্টি দিতে পারি ইরতিজা। তুমি আমাকে বিয়ে করে সুখী হবে। ওই ছেলেটার থেকে আমার কাছেই বেশি সুখী থাকবে তুমি।”
সাজিদের কথায় চমকে উঠলো ইরতিজা,
“কোন ছেলের কথা বলছেন আপনি?”
“জানো না? যদি না জানো তাহলে তুমি বোকা। এছাড়া তুমি এমনিতেও বোকা। কল কাটছি বোকা মেয়ে।”
সাজিদ কল কেটে দিয়ে বিড়বিড় করলো,
“আমি অবশ্যই গ্যারান্টি দিতে পারি, আপনি জোনাসের থেকে আমার কাছেই বেশি সুখী থাকবেন। এই গ্যারান্টি এক-দুই বছরের জন্য নয়, সারা জীবনের জন্য দিতে পারি আমি।”
(চলবে)
____________
যারা ‘উড়ো পাতার ঢেউ’ গল্পটা পড়েন তাদের কাছে অনুরোধ রইল, আপনারা একটু কষ্ট করে কমেন্ট করার চেষ্টা করবেন। আমার পেইজের রিচ হঠাৎ করেই কমে গেছে! পোস্ট করলে তা অনেকের নিউজফিডেই গিয়ে পৌঁছায় না! পোস্টে বেশি কমেন্ট হলে না কি এটা ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করছি পাশে থাকবেন আপনারা।