#উড়ো_পাতার_ঢেউ
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ২৯
_________________
বাতায়ন দিয়ে প্রবেশকৃত পলকা হাওয়া ইরতিজার কালো কেশে দোল খাচ্ছে। সে আর্ম চেয়ারে বসে ব্যাগের ভিতর রিশনের ব্যস্ত হস্তে কিছু খোঁজার দৃশ্য দেখছে। রুমের দরজাটা শব্দ করে খুলে গেল এই সময়। জুহি ঢুকে কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা হেঁটে এলো বেডের দিকে। বেডের উপর থাকা আকাশি রঙের কোটটা সাদা টি-শার্টের উপর চাপিয়ে নিলো। এগিয়ে গেল নিজের ব্যাগের দিকে। যে ব্যাগটায় কিছু খুঁজছিল রিশন। জুহি একটানে ব্যাগটা ওর হাত থেকে নিয়ে এসে বললো,
“চোরের মতো কী খুঁজছো আমার ব্যাগের ভিতর? ব্লাডি হেল!”
রিশন নিজের চোখের লেন্স রেখেছিল জুহির ব্যাগে, সেটাই খুঁজছিল। কথাটা জানাবে জুহিকে, কিন্তু জুহি ধৈর্য না ধরে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। ইরতিজা বলে উঠলো,
“কোথায় যাচ্ছ?”
জুহি থেমে পিছন ফিরলো। ওর চোখে জল দেখা যাচ্ছে এবার। কিছুটা অভিমানিনী গলায় বললো,
“আমার মুখ দেখে কি কিছু বোঝা যায় না টিজা?”
ইরতিজা অবাক হলো এমন একটা প্রশ্নে, সেই সাথে রিশনও। ইরতিজা বললো,
“হ্যাঁ বোঝা যাচ্ছে তো, তুমি এই মুহূর্তে কোনো একটা বিষয় নিয়ে স্যাড।”
“উহুঁ সেটা বোঝাচ্ছি না আমি। আমার মুখ দেখে কি বোঝা যায় না আমি আন্দ্রেজকে ভালোবাসি? এটা কি আমাকে পেন দিয়ে মুখের উপর বড়ো অক্ষরে লিখে রাখতে হবে?”
ইরতিজা বুঝলো আন্দ্রেজের সাথে কিছু হয়েছে। সে বলার মতো কোনো কথা খুঁজে পেল না। এমন সিচুয়েশনে কী বলা উচিত সে বিষয়ে সে অনভিজ্ঞ।
কিন্তু রিশন বললো,
“খবরদার! ওই আন্দ্রেজকে আমি আমার বোন জামাই হিসাবে মেনে নেবো না। সুতরাং ওর প্রেমে পড়া বন্ধ করো।”
জুহি কটমট করে তাকালো রিশনের দিকে। রিশন চোখ নামিয়ে নিলো। বললো,
“ও কে, যার ইচ্ছা তার প্রেমে পড়ো। জীবন তো তোমার, অবশ্যই তুমি যা চাইবে তাই হবে।”
কথাটা বলার পর রিশন অনুভব করলো, সে হঠাৎ তার প্রাক্তন প্রেমিকাকে খুব মিস করছে। জীবনে একজন প্রেমিকা থাকা প্রয়োজন। প্রেমিকাকে নিয়ে যেখানে-সেখানে ঘুরে বেড়ানো যায়। নিজের ডলারও খরচ করা যায় প্রেমিকার পিছনে। এখন প্রেমিকাও নেই, আর তার ডলারও খরচ করতে হয় না তেমন। ডলার বলতে গেলে জমাই পড়ে রয় সব। রিশন ভিতরে ভিতরে হতাশাজনক নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। জুহিকে বললো,
“আচ্ছা তুমি যে একটা মেয়েকে আমার সাথে ব্লাইন্ড ডেটে যাওয়ার জন্য পাঠিয়েছিলে…ওই যে নীল চোখা? মনে আছে? ওর খবর জানো কিছু?”
“জানি তো, তোমার সাথে ওর আর কখনও দেখা হলে ও তোমার দুই গালে দুটো চ/ড় মারার ইচ্ছা পোষণ করে বসে আছে।”
বলে সে আবারও এগোলো দরজার দিকে। একেবারে দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই ইরতিজা আবার ডাকলো,
“কোথায় যাচ্ছ তুমি?”
“ডাউন টাউনে ফিরে যাচ্ছি। আন্দ্রেজ কিছু বোঝে না এটা শোনার পরও আমি এখানে থাকার আর মন খুঁজে পাচ্ছি না!”
জুহি একহাত দিয়ে ভেজা দরজাটা টেনে খুললো। দরজা খোলার সাথে সাথে ভীষণ রকম চমকে উঠলো সে। তার ঠিক সামনেই দাঁড়িয়ে রয়েছে ক্যানিয়ল। প্রথমে স্বপ্ন ভেবেছিল, কিন্তু ভুল ভাঙলো ক্যানিয়লের কণ্ঠে,
“তো তাহলে ঠিকই দেখেছিলাম। আমাকে ফলো করতে করতে এখান অবধি এসে গেছো তোমরা!”
ইরতিজা বিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে আছে। জুহির সামনে দাঁড়ানো মানুষটা ক্যানিয়ল এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তার। এটা কি আসলেই ক্যানিয়ল? কিন্তু এখানে কী করছে?
ইরতিজা হাবলার মতো তাকিয়ে ছিল, ক্যানিয়লের দৃষ্টি জুহিকে এড়িয়ে হঠাৎ এই হাবলার মতো তাকিয়ে থাকা ইরতিজার উপর এসে পড়লো। ইরতিজার মাঝে সচকিতভাবের বিস্ফোরণ ঘটলো। সে মাথা থেকে খসে পড়া ওড়নাটা দ্রুত টেনে দিলো মাথায়।
ক্যানিয়ল বললো,
“এবার এটা স্পষ্ট পাকিস্টানি গার্ল।”
ইরতিজা ভ্রু কুঞ্চন করে বললো,
“কোনটা স্পষ্ট?”
ক্যানিয়ল রহস্যময় হাসলো। ওর শ্বেত মুখে রহস্যমাখা হাসির দুত্যি গভীর সৌন্দর্য খচিত করে ফুঁটে উঠলো। সে হালকা গলায় বললো,
“আমার পিছু পিছু এখানে এসেছো কেন?”
ইরতিজা ক্যানিয়লকে ওরকম হাসতে দেখে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। ক্যানিয়লের এমন হাসির মানে সে খুঁজে পেল না। বললো,
“আমি তোমার পিছু পিছু এখানে আসিনি। আমরা সবাই ঘুরতে এসেছি। তুমি কেন এখানে এসেছো?” পাল্টা আক্রমণটা করতে পেরে আনন্দ হলো ইরতিজার।
কিন্তু ক্যানিয়লের কথায় তার আনন্দে ভাটা পড়লো। ক্যানিয়ল বললো,
“নিচু মানসিকতার মেয়ের কাছে আমার কিছু বলার ইচ্ছা ছিল না। তবুও বলছি। দুজন গার্লফ্রেন্ড নিয়ে এসেছি এখানে। মূল উদ্দেশ্যই হলো গার্লফ্রেন্ডদের সাথে সময় কাটানো।”
ইরতিজার মুখ কালো থেকে গভীর কালো ছায়ায় আচ্ছাদিত হলো। গার্লফ্রেন্ড মানে?
হৃদয়ে গুমোট কষ্টধারা ছড়িয়ে পড়লো ইরতিজার। কষ্টটা খুব করে চেপে ধরলো হৃদয়কে। তিক্ত খারাপ লাগায় ভরিয়ে তুললো মন।
রিশন ক্যানিয়লের কথাকে অহেতুক ধরে নিলো। তাই ঠেস মেরে বললো,
“আচ্ছা? গার্লফ্রেন্ড নিয়ে এসেছো? কী নাম তোমার গার্লফ্রেন্ডদের?”
“স্টিভেন এবং ব্রুস!”
নাম দুটো শুনে প্রত্যেকেই বিস্ময়ের জালে জড়িয়ে পড়লো। জুহি বললো,
“কী নাম?”
জুহির দিকে তাকিয়ে ক্যানিয়ল আরও একবার পরিষ্কার গলায় বললো,
“স্টিভেন এবং ব্রুস।”
ইরতিজা গোলগোল ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে। জুহি অন্যদিকে ঘুরে দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো। স্টিভেন আর ব্রুস? ক্যানিয়ল কি ছেলেদের পছন্দ করে? এই জন্যই কি সে ক্যানিয়লের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিল? কথাটা ভেবে জুহির বুক কাঁপছে। ক্যানিয়ল ছেলেদের পছন্দ করে এ কথা তো ঘুণাক্ষরে কোনোদিন বুঝতে পারেনি। তাই তো ভাবে, যে ক্যানিয়ল কারো সাথে মেলামেশা করে না সেই ক্যানিয়লের জন্য এত কেন কেয়ার লেকচারার স্টিভেন আর প্রফেসর ব্রুসের? এই তাহলে রহস্য!
রিশন বললো,
“এটা কেমন আজগুবি কথা বলছো? মজা করারও একটা সীমা থাকা জরুরি।”
ক্যানিয়ল রিশনের দিকে ধীর চোখে চেয়ে বললো,
“সীমাটা কীভাবে তৈরি করবো? তোমার প্রেমে পড়ে কি এই সীমা তৈরি করা সম্ভব? আমার তো মনে হয় আমি যদি তোমার প্রেমে পড়ি তাহলে আরও সীমা ভেঙে গুঁড়িয়ে যাবে।”
রিশন এখানে আর দাঁড়ানোর পরিস্থিতি অনুভব করলো না। ক্যানিয়লের দিকে বিরক্তির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
“ইউ আর ডিসগাস্টিং!”
বলে বেরিয়ে গেল।
ক্যানিয়ল ইরতিজার দিকে তাকালো। হাস্য আভা জড়িত মুখে বললো,
“ইউ আর মোর ডিসগাস্টিং!”
বলে সেও হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল।
_________________
আকাশে চন্দ্র উঠে গেছে। চন্দ্রালোকের পরশ মেখে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটাকে অপলক দেখে চলছে সাজিদ। কোনো এক অজানা কারণেই মেয়েটার প্রতি তার গভীর ভালো লাগার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু মেয়েটার ভালো লাগার বিন্দুমাত্র স্থান জুড়েও কি তার বসতি আছে? নেই হয়তো! দীর্ঘশ্বাস ফেললো সাজিদ।
আজাদ চৌধুরী সাজিদের সামনের চেয়ারটা টেনে বসলেন। সাজিদ তার উপস্থিতি টের পেয়েও চোখ সরালো না ইরতিজার থেকে। আজাদ চৌধুরী ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপটা এগিয়ে দিলেন সাজিদের দিকে। বললেন,
“কী দেখছো অত আমার মেয়েকে?”
“আপনার মেয়ে একটু বেশিই সুন্দর, যার কারণে ওর থেকে চাইলেও সহজে চোখ ফেরানো যায় না। মন আটকে থাকতে চায়।”
সাজিদ এবার দৃষ্টি নিয়ে এলো আজাদ চৌধুরীর দিকে। বললো,
“কিন্তু এমন নির্লজ্জের মতো পলকহীন তাকিয়ে থেকে এই প্রথম দেখলাম আপনার মেয়েকে।”
আজাদ চৌধুরী হেসে দিলেন। বললেন,
“তোমার ব্যাপারে কোনটা আমার সবচেয়ে ভালো লাগে জানো?”
সাজিদ মাথা নাড়িয়ে কাপে চুমুক দিলো।
আজাদ চৌধুরী বললেন,
“তুমি সব কথা নির্দ্বিধায় বলে দাও। আমি মেয়ের বাবা অথচ আমার সামনেও এসব কথা বলতে কুণ্ঠাবোধ করছো না তুমি।”
সাজিদ হাস্য মুখে তাকালো আবার ইরতিজার দিকে। আজাদ চৌধুরীকে বললো,
“আপনার মেয়ে ঠিক কতটা ভালো বউ হবে জানি না আঙ্কল, তবে আপনি যে একজন খুব ভালো শ্বশুর হবেন এ ব্যাপারে নিশ্চিত।”
বলতে বলতে আজাদ চৌধুরীর দিকে চাইলো।
আজাদ চৌধুরী হাসলেন।
দূরে বাবা আর সাজিদের আলাপনের দৃশ্যটা দেখতে ভালো লাগছে না ইরতিজার। এই লোকটার সাথে এত হাসিখুশি ভাবে কথা বলে কেন বাবা? সাজিদকে কি বাবার খুব পছন্দ? হয়তো! এই জন্যই বিয়ে ভাঙার কথা বললেও তাতে গুরুত্ব দেয় না। লোকটার আজ একেবারে বাড়ির উপর চলে আসার কি দরকার ছিল? এরিয়া পর্যন্ত নামিয়ে দিলেই তো হতো। বাকি পথটুকু পায়ে হেঁটেই চলে আসতো তারা। কিন্তু না, বাড়িতেই চলে এলো। আর থেকেও গেল। আগামীকাল ছাড়া যাবে না।
গ্রিন লেক পার্ক থেকে ওরা সন্ধ্যার পরপরই ফিরে এসেছে।
ইরতিজা ভাবছিল, সাজিদকে কি তার সত্যিই বিয়ে করতে হবে? কিছুতেই না। চার বছর সময়টা পড়ে রয়েছে, এই চার বছরে এই সম্বন্ধ ভেঙে ফেলা কঠিন কোনো বিষয় নয়। ম্যাসেজের শব্দ কানে লাগলো। ক্যানিয়ল ম্যাসেজ পাঠিয়েছে। এই প্রথম ম্যাসেজ পাঠিয়েছে সে। সিন করে দেখলো তাতে লেখা–
‘একটু আগে তোমাকে আমি দেখেছিলাম ইজা। চন্দ্রকিরণে দেখতে পেয়েছিলাম তোমার মুখ। ইচ্ছা হয়েছিল অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে দেখি তোমায়। কিন্তু আমি তাকিয়ে থাকলাম না। চলার পথে যতটুকু দেখা যায় ততটুকুই দেখে চলে এলাম। এটা আমার জন্য কঠিন ছিল! এত কঠিন কাজ আমি এর আগে কখনও করিনি!’
ম্যাসেজটা পড়ার পর ইরতিজার হৃদস্পন্দন হঠাৎই তরতর করে বেড়ে গেল। হৃদয়ের শব্দ নিজ কানে শুনতে পেল সে। এই ম্যাসেজ…
ইরতিজার মনে হলো পুরো শরীরই কাঁপছে তার। অসুস্থ বোধ করছে সে!
_______________
গতরাতে ম্যাসেজটা দেখার পর থেকে ইরতিজার হৃদয় ধুকপুক করে চলছে। এক মুহূর্তের জন্যও থামেনি হৃদয়ের এই অদ্ভুত আচরণ। ওই ম্যাসেজটায় এমন কী ছিল যা তাকে গতরাত থেকে এত ভাবাচ্ছে? ছিল তো কিছু অবশ্যই। আবশ্যকীয় থাকা ওই বস্তুটুকুর জন্যই তো তার এমন পাগল পাগল লাগছে এখন। সকাল বেলা এক্সারসাইজে বের হওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু বাবা ডাকাডাকি করে শেষমেশ তাকে বাইরে বের করিয়েই ছাড়লো। বের হওয়ার আগে অবশ্যই সে মাথায় একটা কালো হিজাব পরিধান করে নিয়েছে। আজকে সাইকেলটা নিয়ে বেরিয়ে গেল সে। রাস্তায় বের হয়ে দেখলো অনেকেই সাইক্লিং করছে, জগিং করছে, ওয়াকিং করছে।
ইরতিজা আশপাশ দেখছিল আর সাইকেল চালাচ্ছিল। একই প্রকৃতি দেখে রোজ, কিন্তু তাও মুগ্ধতা সরে না চক্ষু হতে। আরও কিছুটা চালিয়ে আসার পর হঠাৎ পিছন থেকে ডাক শুনতে পেল,
“হেই পাকিস্টানি গার্ল!”
ইরতিজার সাইকেল থেমে গেল। ঘাড় ফিরিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখলো ক্যানিয়লও সাইক্লিং করছে। ক্রমশ ওর সাইকেলটা এগিয়ে আসছে তার দিকে। ইরতিজা চোখ ফিরিয়ে আনলো। এইমাত্র কি তার দেখা হলো ক্যানিয়লের সাথে? এখন কি কথাও হবে? না, এটা হতে দেবে না। ক্যানিয়লের সাথে এখন কথা বলতে গেলেই নার্ভাস ফিল করবে। নার্ভাস ফিল নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সে কোনো কিছু প্রমাণ করতে চায় না। ইরতিজা সাইকেল চালানো স্টার্ট করলো। এটা দেখে অবাক হলো ক্যানিয়ল। পিছন থেকে বললো,
“তুমি কি আমাকে অবজ্ঞা করে চলে যাচ্ছ?”
ইরতিজা কিছু বললো না, যত দ্রুত সম্ভব সাইকেল চালিয়ে চলে যেতে চাচ্ছে। তা দেখে ক্যানিয়লও নিজের সাইকেলের গতি বৃদ্ধি করলো। এমনকি ধরেও ফেললো ইরতিজাকে। নিজের সাইকেল দ্বারা ইরতিজার সাইকেলের চাকায় ধা/ক্কা দিতেই সাইকেল নিয়ে পড়ে গেল ইরতিজা। মৃদু স্বরে আর্তনাদ বেরিয়ে এলো ওর মুখ ছুটে। ক্যানিয়ল ব্রেক কষলো। সাইকেলের নিচে চাপা পড়া ইরতিজার দিকে তাকিয়ে বললো,
“ছোটো একটা শাস্তি!”
সাইকেল দাঁড় করিয়ে নামলো ক্যানিয়ল। ইরতিজার চোখে ইতোমধ্যে অশ্রু টলমল করছে। ক্যানিয়ল সাইকেল সরিয়ে ওঠালো ওকে। দাঁড়ানোর পরই ইরতিজা ক্যানিয়লের হাতটা ছিটকিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললো,
“তুমি কি মানুষ?”
ক্যানিয়ল অবাক হয়ে বললো,
“মানুষ নই? তাহলে কী?”
ক্যানিয়ল ভাবতে খানিক সময় ব্যয় করে বললো,
“আমি কি ভিন গ্রহের প্রাণী?”
“আমি জানি না তুমি কী, যদি জানতাম তাহলে…”
ইরতিজা থেমে গেল। অতঃপর কণ্ঠে করুণতার ছোঁয়া রেখে বললো,
“আমি তো মরেও যেতে পারতাম! এটা কীভাবে করলে? যদি আমি মরে যেতাম?”
“তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি ব্যথাও পাওনি তেমন, আর মৃ/ত্যু/র কথা বলছো? অবশ্য তুমি ম/রে গেলেও কিছু যায় আসতো না আমার। কারণ তুমি আমার কেউ না।” নিতান্তই অবজ্ঞাত কণ্ঠে বললো ক্যানিয়ল।
যা শুনে ইরতিজার অভিমানিনী অশ্রু চোখের কোল ছাপিয়ে নেমে গেল। বললো,
“তোমার মতো এত বাজে মানুষ আর দেখিনি ক্যানিয়ল!”
ইরতিজা ঘুরলো অন্যদিক। সাইকেল নিয়ে চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই ক্যানিয়ল বললো,
“তুমি কি রাগ করেছো? বেশি ব্যথা পেয়েছো?”
ইরতিজা পিছন ফিরে বললো,
“বেশি ব্যথা না পেলে কী করবে? মেরে র/ক্তা/ক্ত করবে আমাকে?”
ক্যানিয়ল এগিয়ে এসে সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
“কথা না শুনলে শি/র/শ্ছে/দ করে ফেলবো তোমাকে। অভদ্র মেয়ে! কথা না শুনে চলে যাচ্ছিলে কেন?”
“আমি অভদ্র নই। আর কখনও যদি অভদ্র বলো তাহলে নিশ্চয়ই আমি আর তোমার সাথে ভদ্র ব্যবহার বজায় রাখবো না!”
ইরতিজার চটাং চটাং কথা প্রমাণ করছে সে এখন রেগে আছে। ক্যানিয়ল তাকে আর না রাগিয়ে বললো,
“আমার সাথে এমন করে কী পাও ইজা?” নরম শোনালো ক্যানিয়লের কণ্ঠ।
“কী করেছি আমি?” আগের মতো তেজি কণ্ঠেই বললো ইরতিজা।
“কে জানে কী করেছো! তবে যা করেছো ভালো করোনি এটুকু জানি!” ক্যানিয়লের কণ্ঠে এখনও নমনীয়তার পরশ।
ইরতিজা এতক্ষণ যে রাগ অনুভব করছিল ক্যানিয়লের প্রতি, এখন আর সেই রাগটা বহাল নেই। বরং হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিক চলন আবারও ফিরে এসেছে। সে একদৃষ্টে বিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে রইল। কিছু বললো না। তার বলার তো কিছু নেই। তবে সে সবটা উপলব্ধি করতে পারছে।
“টিজা…”
ইরতিজার চুপসে যাওয়া বিচলিত মনটা পরিচিত কণ্ঠস্বরে চমকিত হয়ে উঠলো। গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেল সব। ডাক অনুসরণ করে তাকিয়ে দেখতে পেল তাদের থেকে কতক দূরে দাঁড়িয়ে আছে জোনাস। ওর মুখে আলতো নরম হাসি লেগে রয়েছে। ইরতিজার কণ্ঠ কাঁপতে লাগলো,
“তু-তু-তুমি…”
জোনাস ইরতিজাকে বলতে দিলো না। ওর কথা শেষ হওয়ার আগেই কাছে এসে দুই হাতের শক্ত বেষ্টনে জড়িয়ে ধরলো ওকে।
ইরতিজার হৃদস্পন্দন রুদ্ধ হয়ে গেল। দু চোখ স্ফীত হয়ে উঠেছে।
ক্যানিয়লের দু চোখে গভীর বিস্ময়। এমন একটা ঘটনার জন্য সে একদমই প্রস্তুত ছিল না!
(চলবে)