উড়ো পাতার ঢেউ পর্ব: ৩৩

0
551

#উড়ো_পাতার_ঢেউ
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ৩৩
_________________

ক্যানিয়লের প্রশ্নগুলো ইরতিজার চিন্তা শক্তিকে অতি দুর্বল করে দিলো। এক প্রগাঢ় অনুভূতি অবশ করে ফেলতে চাইছে তার পুরোটা। ক্যানিয়লের দিকে চেয়ে থাকতে পারলো না, দুই চোখ ধরে আসছিল। দ্রুত দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নিয়ে বসা থেকে উঠে বললো,
“আমি বাসায় ফেরার তাগিদ অনুভব করছি। এখনই বাসায় ফিরতে চাই।”
তার বুক ওঠানামা করছে দ্রুত।

ক্যানিয়ল দাঁড়িয়ে বললো,
“এতক্ষণ তো তুমি স্বাভাবিক ছিলে, হঠাৎ বাসায় যাওয়ার জন্য ছটফট করছো কেন?”
ক্যানিয়ল খানিকটা নিকটে এগিয়ে এসে বললো,
“তোমার এই অস্থিরতাই প্রমাণ করছে তুমি আমার প্রেমে পড়েছো! আমার কিন্তু মোটেই মনে হচ্ছে না আমি তোমার প্রেমে পড়েছি! তুমি কেন পড়েছো? আমার মান-সম্মান নষ্ট করতে উঠে-পড়ে লেগেছো কেন?”

এরকম কথা এই মুহূর্তে একদম শুনতে ভালো লাগছে না ইরতিজার। তাকালো ক্যানিয়লের দিকে। ছেলেটা এসব কথা বলে তাকে রাগিয়ে দিয়ে কি মজা পায়?
ইরতিজার মুখটা একেবারে বৈশাখী ঝড় হওয়াকালীন সময়ের মতো কালো রূপ ধারণ করলো। আবারও কঠিন কণ্ঠে বললো,
“আমি এখনই বাসায় ফিরতে চাই।”

“হ্যাঁ যাও, আমি তোমার বস নই যে সকল কাজ আমাকে বলে করতে হবে। তুমি তো স্বাধীন। যা ইচ্ছা করো। বাসায় ফেরার বদলে আমাজন জঙ্গলেও চলে যেতে পারো। আমি কি নিষেধ করবো?”

ক্যানিয়ল নির্বিকার ভঙ্গিতে হাউজে ঢুকলো। কোনোদিক ভ্রুক্ষেপ না করে সোজা বিছানায় এসে শরীর এলিয়ে দিলো। এক-দুই মিনিট করে কাটতে লাগলো সময়। কিছুক্ষণ পর স্প্যানিশ মেয়েটা এসে খবর দিলো,
“তোমার গার্লফ্রেন্ড তো চলে গেছে একা একা!”

ক্যানিয়ল চোখ মেলে এক পলক তাকালো মেয়েটার দিকে। মেয়েটা কৃষাঙ্গ! কিন্তু মুখটা দারুণ সৌন্দর্য দিয়ে খচিত।
ক্যানিয়ল বললো,
“রেগে চলে গেছে? রাগ দেখেছো ওর মুখে?”

“হুম সেরমকই মনে হলো।”

ক্যানিয়ল কিছু বললো না। চোখ মুদিত অবস্থায় নীরব শুয়ে রইল কিয়ৎক্ষণ। অতঃপর এক সময় বললো,
“ও আমার গার্লফ্রেন্ড নয় হেইজ। ও আমার বিষাদ আকাশের নক্ষত্র।”

কথাটা অনুধাবন করতে হেইজের বেশ কিছু সময় ব্যয় করতে হলো। কথাটার অর্থটা যখন সে বুঝতে পারলো তখন বললো,
“আমি মনে করি সেটা গার্লফ্রেন্ড হওয়ার চেয়েও আরও বেশি মূল্যবান। মিরান্ডা তো তোমার বাগদত্তা হয়েও সেই নক্ষত্রটা হয়ে উঠতে পারেনি।”

ক্যানিয়ল উঠে বসলো। উন্মুক্ত জানালা দিয়ে জংলী হাওয়া ছুটে এসে কালো-বাদামি সংমিশ্রিত চুলগুলো হালকা দুলিয়ে দিয়ে গেল। ওর শ্বেত মুখের মাঝে একরাশ সংশয়ের ধূসর নীরদ ঘাপটি মেরে আছে। লালচে ঠোঁট দুটো নির্জনতা বুনে গেল বেশ কিছু সময় ধরে। অবশেষে বললো,
“তোমার ধারণা কী বলে হেইজ? মেয়েটা কি সত্যি আমার প্রেমে পড়েছে?”

হেইজ অলিন্দে চলমান ওদের সকল কথাবার্তা শুনেছিল। এমনকি ইরতিজাকে এখানে নিয়ে আসার ব্যাপারটাতে সে খুব অবাকই হয়েছিল। এক সামুরা ব্যতীত ক্যানিয়ল এখানে আর কাউকে নিয়ে আসেনি কখনও। এমনকি মিরান্ডা আসতে চাওয়া সত্ত্বেও ক্যানিয়ল নিয়ে আসেনি। আজ যখন ক্যানিয়ল হেইজের কাছে কল দিয়ে বললো,
“একা নই, আরও একজন আছে সাথে। মিস ভায়োলেট কুইন!”
তখন হেইজ মনে করেছিল ক্যানিয়ল হয়তো মিরান্ডার কথা বলছে। কিন্তু তার ধারণা ভুল হলো।
হেইজ উত্তর দিলো,
“শুধু মেয়েটা নয়, তুমিও বোধহয় প্রেমে পড়েছো ওর।”

“বেরিয়ে যাও।” হেইজের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে বললো ক্যানিয়ল।

হেইজ একটু সচকিত হয়ে তাকালো। ক্যানিয়ল বললো,
“মেয়েদের আমি অপছন্দ করি, জানো সেটা?”

“নিজের মমকে ঘৃণা করো বলে পুরো মেয়ে জাতিকে অপছন্দের তালিকায় করে নিতে পারো না!”

“তুমি কি চাও তোমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে তোমার একটা মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং সৃষ্টি করতে আমি সাহায্য করি?”

“ভয় দেখাচ্ছ আমায়? এভাবে?”

ক্যানিয়ল ওষ্ঠ বাঁকিয়ে হাসলো একটু। ঠোঁটে হাসি থাকলেও ভিতরে ভিতরে বড়ো একটি দীর্ঘ নিশ্বাস বেরিয়ে এসে ভিতরটাকে চুপসে দিলো তার। কোথায় যেন হাহাকারের শব্দ হচ্ছে প্রবল। যা দুই কানকে অস্বাভাবিক যন্ত্রণা দিচ্ছে। ক্যানিয়ল উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
“ও কতদূর চলে গিয়েছে বলে মনে হয়?”

“বেশি দূর যায়নি। একটু আগেই তো বের হলো।”

ক্যানিয়ল আর কিছু না বলে প্রায় দৌড়ে বের হয়ে গেল। ইরতিজা বেশি দূরে যায়নি, কিন্তু আবার কম দূরেও যায়নি। ক্যানিয়ল ওকে বাস স্ট্যান্ডে একলা বেঞ্চির উপর বসা দেখলো। গাড়িটা থামালো একেবারে ইরতিজার সামনে। ইরতিজা অন্যমনস্ক হয়ে কী যেন ভাবছিল। ভাবছিল মূলত এটা–সে মেয়েটা কি এতটাই নগণ্য যে, সে যদি ক্যানিয়লের প্রেমে পড়ে তাহলে ক্যানিয়লের মান সম্মান নষ্ট হবে? যদি মান সম্মান নষ্ট হওয়ারই ব্যাপার হয় তাহলে এখনও ওর মান-সম্মান নষ্ট হচ্ছে না কেন?
সে তো ইতোমধ্যে…

“পাকিস্টানি গার্ল!”

পরিচিত কণ্ঠস্বরটায় ইরতিজার ভাবনা ওখানটায়ই থমকে গেল। সামনে তাকিয়ে দেখলো ক্যানিয়ল গাড়ির ভিতর বসে রয়েছে। ইরতিজা দেখেও দেখলো না এমন করে চোখ সরিয়ে নিলো। যা ক্যানিয়লের সম্মানে সূক্ষ্ম ফাটল ধরালো। সে এবার কণ্ঠ গুরুগম্ভীর করে ডাকলো,
“পাকিস্টানি গার্ল…”

ইরতিজা তাকালো। গমগম কণ্ঠে বললো,
“হয়েছে কী? ডাকছো কেন?”

“তুমি যে আমাকে না জানিয়ে সত্যি সত্যি আমাজন জঙ্গলের উদ্দেশ্যে রওনা হবে আমি ভাবতেও পারিনি! একবার ভাবো তো সেখানে গিয়ে যদি তুমি হারিয়ে যাও তাহলে আমার কী হবে? তুমি হারিয়েছো তো আমাজন জঙ্গলে গিয়ে, অথচ তোমার ফ্যামিলির লোকেরা ভাববে আমি তাদের মেয়েকে কি/ড/ন্যা/প করেছি। এরপর আমাকে পুলিশে দেবে। তুমি তো জানো আমি পুলিশদের কতটা ঘৃণা করি।”

ক্যানিয়লের কথাগুলোকেও বিশেষ গায়ে মাখলো না ইরতিজা। যা দেখে সত্যি সত্যি রাগ হলো ক্যানিয়লের। সে ক্ষুব্ধ হয়ে গাড়ি থেকে নামলো। ইরতিজার এক হাত ধরে ওকে বেঞ্চি থেকে উঠিয়ে এনে গাড়ির ভিতর বসিয়ে দিলো। আর বললো,
“তোমার রাগটা কোথায় থাকে পাকিস্টানি গার্ল? বলো আমাকে। আমি সেই রাগ থাকা স্থানটুকু কে/টে ফেলে দিই পানিতে।”

কথাটায় তীব্র একটা ভাঁজ পড়লো ইরতিজার কপালে। যদিও তা আবার ক্ষণিকেই প্রসারিত হলো। ক্যানিয়লের দিক থেকে চোখ সরিয়ে জানালার বাইরে দৃষ্টি দিলো। আর একটা কথা বলার জন্যও মুখ খুলবে না সে। কথাতে শুধু কথা প্যাঁচাবে। দরকার কী কথা বলার?
পুরো রাস্তায় ক্যানিয়লও আর কোনো কথা বললো না। এমনকি ইরতিজা যখন গাড়ি থেকে নামলো তখনও কিছু বললো না।
ইরতিজা অবাক হলো ভীষণ। হঠাৎ এত মৌনতা দেখা দিলো কেন ক্যানিয়লের মাঝে?
যাই হোক, সেও কিছু বললো না।
দুপুর এখন বিকেলের দিকে রওনা হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। শীত অনুভূত হচ্ছে না তেমন। বাসায় প্রবেশ করলে উষ্ণতা যেন আরও খানিকটা জড়িয়ে ধরলো। নওরিন দরজা খুলেই যে সংবাদটা দিলো সেটা হলো, সাজিদ এসেছিল।

“কখন এসেছিল?”

“কিছুক্ষণ আগে। এসেই চলে গেছে, বসেনি বেশি সময়। ব্যস্ততা আছে না কি! তোমাকে কল দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ও বললো দরকার নেই।”

“এসেছিল কেন?”

“হয়তো তোমাকে দেখতে।”

ইরতিজা নওরিনের এমন সহজ সঙ্গতিক কথায় লজ্জাবোধ করলো। এই লোকটা কী? যখন-তখন দেখার জন্য বাড়ি চলে আসতে হবে? যেখানে সে জানেই এই বিয়েটা হবে না তখন এত দেখতে আসার কী আছে? এমন করে যেন ও সত্যিই তার হবু বউ!
ইরতিজা কিছু বলতেই পারলো না। রুমে চলে এলো। বিছানার উপর গিফট প্যাকেটটা নজরে পড়লো প্রথমেই। ভ্রু জোড়ায় হালকা কুঞ্চন সৃষ্টি হলো। সে প্যাকেটটা নিয়ে গেল আবার নওরিনের কাছে। একবার খুলেও দেখলো না কী আছে ভিতরে।

“এটা আমার রুমে কেন?”

“সাজিদ নিয়ে এসেছিল এটা।”

“ওহ…”

আবার বেডরুমে ফেরত এলো ইরতিজা। হাতের প্যাকেটটা নির্জীবভাবে রাখলো বিছানায়। সাজিদের গিফট দেওয়ার বিষয়টাও সে মানতে পারে না। এর আগেও তাকে শাড়ি এবং নেকলেস দিয়েছিল। আজ আবার কী দিলো?
ইরতিজা প্যাকেটটা খুলে দেখলো। ভিতর থেকে বের হলো আকাশি রঙের একটি শাড়ি। আবার শাড়ি? শাড়ির ভিতর কী দেখতে পেল যে দুই দুইবার শাড়ি উপহার দিলো? ইরতিজা দীর্ঘক্ষণ ধরে দেখতে লাগলো শাড়িটাকে। দেখতে দেখতে হঠাৎ শাড়িটা যেন একটু পছন্দ হয়ে গেল।
সে সাজিদকে এই গিফট দেওয়া-দেয়ি নিয়ে একটা ম্যাসেজ পাঠাবে বলে ফোন হাতে নিয়েছিল, কিন্তু দেখলো তার আগে সাজিদই তাকে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে। ম্যাসেজ পাঠিয়েছে আরও অনেক আগে, কিন্তু ফোন সাইলেন্ট থাকায় ম্যাসেজ অবহেলায় পড়ে রয়েছিল।

‘বাসায় গিয়েও আপনার দেখা পাওয়া যায় না খারাপ মেয়ে! আপনাকে দেখার জন্যই কিন্তু গিয়েছিলাম। ইদানিং আপনাকে দেখার তেষ্টা অনুভব হয় ভীষণ! কিন্তু এই তেষ্টা মেটানোর সুযোগ যে অত সহজ কোনো বিষয় নয়। এটা খুব কঠিন! যেটা আপনি আরও বেশি কঠিন করে তোলেন।’

দ্বিতীয় ম্যাসেজ,
‘আমি এমনিতেই আপনার কাছে অবহেলার বস্তু। এখন তো আবার আপনার প্রেমিকও আপনার কাছে চলে এসেছে! এখন কি আরও বেশি বেশি অবহেলা পাবো? এটা করা চলবে না কিন্তু। অবহেলার মাত্রা ওই এক জায়গাতেই অটুট রাখুন। কারণ বিয়ের পর আপনি এই অবহেলাগুলো ভালোবাসা দিয়ে পূরণ করে দিতে পারবেন কি না সে বিষয়ে আমি দ্বিধান্বিত! আমি ঠিক ততটুকুই অবহেলা সহ্য করতে পারবো যতটুকু অবহেলা আপনি ভালোবাসা দিয়ে মুছে দিতে পারবেন। অবহেলা যদি বেশি বেশি হয় তাহলে ভালোবাসাও বেশি বেশি হতে হবে। এটাকে বলে সমান হিসাব। বুঝতে পেরেছেন?’

তৃতীয় ম্যাসেজ,
‘এবার আর শাড়ি পরে ছবি তুলে পাঠাতে হবে না। একটা ছবি পাঠানোর চেয়ে না পাঠানোই উত্তম। হুট করেই আবার কোনো একদিন আপনাকে দেখতে চলে যাব। বাসায় থাকবেন কিন্তু।’

তিনটা ম্যাসেজই খুব মনোযোগ সহকারে পড়লো ইরতিজা। এর মাঝে দ্বিতীয় ম্যাসেজটা মনে বেশি প্রভাব ফেললো। বিশেষ করে ওই লাইনটা,
‘এখন তো আপনার প্রেমিকও আপনার কাছে চলে এসেছে!’
এর মানে সাজিদ ধরেই নিয়েছে জোনাস তার প্রেমিক? এমনটা কেন মনে হয় লোকটার? ইরতিজা ভীষণ বিস্মিত এই ব্যাপারটা নিয়ে। এটা মনে হওয়ার কারণ কী? জোনাসের চিন্তাটা ইরতিজার মনে তিঁতকুটে কষ্টের সৃষ্টি করলো। এমন তেঁতো কষ্টও সহ্য করা যায়? ছেলেটা কেন এলো এখানে? কাছাকাছি থেকে ঘৃণা করা কি এতটাই জরুরি?

রাতের দিকে প্রচুর ঠান্ডা পড়তে লাগলো। হঠাৎ করে তাপমাত্রা অনেক নিচে নেমে গেছে। উষ্ণ কাপড় পরা সত্ত্বেও হাত পা কাঁপছে রীতিমতো। ঘরে ভালো লাগছিল না ইরতিজার। তাই একটা কম্বল পেঁচিয়েই বাইরে বের হয়ে বসেছিল। বাড়ির পিছনের ছোটো লনটায় বসে ক্যানিয়লের বাড়িটা একটু দেখা যায়। ওখানে আলো জ্বলছে। ক্যানিয়ল কি তাহলে এখন এই বাড়িতে আছে? বসে বসে নানান চিন্তা করছিল ইরতিজা। এখানে বসেও সে শুনতে পাচ্ছে ঘরের ভিতর চলা জুহি আর রিশনের ঝগড়া। ওদের ঝগড়া ঝাটি সবসময় উপভোগেরই বিষয় হয়। তবে এই মুহূর্তে ইরতিজার সবকিছু কেমন পানসে লাগছে তাই অত মনোযোগ দিলো না ওদের ঝগড়ার উপর। ইরতিজা নিজের চিন্তা থেকে ক্যানিয়লের মায়ের বিষয়টাও উহ্য রাখতে পারলো না। কেন চলে গিয়েছিল সে ক্যানিয়লকে ছেড়ে? কেন একটা বিষাদের আকাশ ক্যানিয়লের মাথার উপর বিছিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছিল? ঘটনাটা জানার আগ্রহ বেশ কিছুক্ষণ ধরে খুঁড়ে খুঁড়ে খেলো ইরতিজাকে। শীতের তীব্রতায় সে কেঁপে উঠছে একটু পরপর। যেমন করে কচি কিশলয় কেঁপে ওঠে মৃদু বায়ুতে।

আজাদ চৌধুরী বেশ কিছুসময় ধরে ইরতিজাকে বসে থাকতে দেখছেন পিছনের লনে। ইরতিজা বসে আছে বলে তার সমস্যা হচ্ছে না। কেন এরকম বসে আছে সেটা জানারও প্রয়োজন বোধ করছে না। সে খুব যত্ন করে এক কাপ কফি বানালো মেয়ের জন্য।
এমন পানসে সময়ে হঠাৎ বাবার হাতের এক কাপ কফি পেয়ে খুশি হলো ইরতিজা। মিষ্টি হেসে কফিটা গ্রহণ করে ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ জানালো। আজাদ চৌধুরী মেয়ের মাথায় এক হাত রেখে বললেন,
“ঠান্ডার ভিতর এরকমভাবে বসে থাকা কি তোমার প্রিয় শখ না কি?”

ইরতিজা হাস্যমুখে জানালো,
“ওরকমই কিছু।”
এরপর কফির কাপে এক চুমুক দিয়ে আজাদ চৌধুরীর দিকে চেয়ে বললো,
“মায়ের কী অবস্থা এখন?”

শারমিন আহমদ গতরাত থেকেই অসুস্থ বোধ করছেন। দুপুর পর্যন্ত স্বাভাবিক ভাবে চললেও বিকেলে এসে হঠাৎই বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন! বিছানা ছেড়েই ওঠেনি সেই বিকাল থেকে। মাগরিবের সালাতও আদায় করেননি! আজাদ চৌধুরী বললেন,
“এটা আমাকে জিজ্ঞেস না করে তোমার মাকেই জিজ্ঞেস করতে পারতে সে কেমন আছে। তাহলে সে আরও খুশি হতো।”

“খুশি হতো না কি বিরক্ত হতো?”

“তুমি ভাবছো তোমার মা তোমাকে ঘৃণা করে! আসলে তা না, সে কিন্তু তোমাকে অত্যাধিক ভালোওবাসে।”

ইরতিজা কিছু বললো না। শুধু মুখে একটুখানি হাসি ফোঁটালো।
আজাদ চৌধুরী বললেন,
“বেশিক্ষণ বাইরে বসে থেকো না। তাড়াতাড়ি ভিতরে এসো।”
বলে তিনি চলে গেলেন।

ইরতিজা তাকালো আকাশের দিকে। বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো তার। মা তো ভালোবাসে তাকে। কিন্তু ঘৃণার পরিমাণটা কি তার চেয়ে বেশি নয়?

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here