উড়ো পাতার ঢেউ পর্ব: ৩৪

0
479

#উড়ো_পাতার_ঢেউ
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ৩৪
_________________

শীতে হাত-পা জমে যাওয়ার উপক্রম। তবুও ইরতিজা নড়ছে না জায়গাটা থেকে। ঠায় শূন্য দৃষ্টি মেলে চেয়ে থেকে ভাবছে। ভাবনা কেবল রং বদল করছে তার। একেকটা ভাবনা একেক রকম যন্ত্রণা দিচ্ছে। সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছে প্রেমে পড়ার বিষয়টি। এটা কখন কীভাবে ঘটলো? নিমেষেই ঘটে গেল! মানুষের মন এমন এক কেন্দ্রস্থল যেখানে নিমেষেই এমন কঠিন বিষয়ের সূচনা ঘটতে পারে! আর এটার সূচনাতেই যত জ্বালা!
প্রেমে পড়ার অনুভূতি মারাত্মক হয়। এই অনুভূতি কেমন এর বর্ণনা দেওয়া যায় না ঠিক। বুক দুরুদুরু করে। জাগতিক সবকিছু দুর্বোধ্য লাগে তখন!

প্রতিবেশী কিশোর ছেলেটা চোখের সামনে সাইকেল নিয়ে পড়ে গেল রাস্তায়। দু চোখের অবলোকন দৃশ্যপট কেঁপে উঠলো ইরতিজার। নড়েচড়ে উঠলো পাথরের ন্যায় স্তম্ভিত তনুখানিও। পিছনের লন থেকে সে রাস্তাটা দেখতে পাচ্ছে। পড়ে যাওয়া ছেলেটা ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো। অতঃপর কিছুই হয়নি এমন ভঙ্গিতে আবারও ছুট দিলো সাইকেল নিয়ে। মানুষের জীবনও ঠিক এই ঘটনাটার মতোই যেন। জীবনে কত কী ঘটে যায়, অথচ মানুষ কিছুই ঘটেনি এমন ভাণ করে থাকে! থাকতে হয়। একবার নিজের জীবনের দিকে দৃষ্টি দিলেই সে দেখতে পায়, তার জীবন কেমন অগোছালো উদ্যানের মতো। তার জন্মগ্রহণটাই যেন ভারি অগোছালো একটি বিষয়! জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রেই এখন অবিন্যস্ত সুর ছেপে গেছে তার। কলের রিনরিনে শব্দটা চিন্তা-ভাবনায় কালো হয়ে যাওয়া মস্তিষ্কে প্রথমে ধূসর, এবং পরে পুরো শ্বেত রূপ এনে দিলো। পকেট হাতড়ে বের করে আনলো মোবাইলটা। জোনাসের নামটা দেখে ভ্রু মাঝে ঈষৎ ভাঁজ ভেসে উঠলো খানিকটা সময়ের জন্য। পরে তা মিলিয়ে গেল। কল রিসিভ করে কানে ধরলো সে।

“আজ উইকেন্ড ছিল, ভেবেছিলাম তোমায় নিয়ে এই শহরটা ঘুরে দেখবো। কিন্তু তুমি অন্য কারো সাথে অন্য কোনো শহর ঘুরতে গিয়েছিলে! কাজটা ঠিক করোনি টিজা।”

ইরতিজা বিস্মিত হলো। জোনাস কী করে জানে সে অন্য শহর ঘুরতে গিয়েছিল?

“তোমার ওই অসভ্য নিউ ফ্রেন্ডের সাথে কেন ঘুরতে গিয়েছিলে? আমি নিউ ইয়র্ক থেকে এমনি এমনি আসিনি রেডমন্ড। তোমার জন্য এসেছি। তাই তোমার উচিত আমাকে সর্বক্ষণ সঙ্গ দেওয়া। এটা তোমার কর্তব্য। অথচ তুমি নিজের কর্তব্যপরায়ণে অস্বীকৃতি জানিয়ে অন্য কারো সঙ্গ দিয়েছো। ভুল করেছো, অন্যায় করেছো টিজা।”

“ভুল-সঠিক আমি নির্ধারণ করতে পারি। ভুল তো তুমি। এর আগেও তুমি ভুল করেছো, এমনকি এখনও ভুলের উপরই অটুট তুমি।”

“আমি কোনো ভুল করিনি, আর না তো এখন করছি।”

“তুমি অবশ্যই ভুল। তোমার করা কাজগুলো ভুল, তোমার ভাবনাগুলোও ভুল। নিউ ইয়র্ক ফিরে যাও জন। তোমাকে দেখলেই কষ্ট অনুভব হয় আমার। মনে পড়ে যায় একজন ভালো বন্ধু কীভাবে আমার শত্রু হয়ে গেছে। আমার চোখের সামনে পড়ো না আর কখনও!”

“আমি সামনে এলেই বন্ধ রেখো তোমার চোখের পাতা। দেখবে তোমার বন্ধ চোখের তারাতেও আমি আছি।”

ইরতিজা শক্ত মুষ্টিতে আঁকড়ে ধরলো গায়ে জড়ানো কম্বল। সকল বাধা বিচ্যুতি পেরিয়ে একটা হৃদয় মোচড়ানো শান্ত অথচ তিক্ত অনুভূতির কান্না গলা পর্যন্ত এসে আটকে গেল। বললো,
“তুমি এমন কেন হয়ে গেলে জন? বন্ধুত্বটাকে খুব মিস করি। মিস করি সেই হাস্যউজ্জ্বল চঞ্চল জনকে। যে সব সময় তার দুষ্টুমিতে মাতিয়ে রাখতো আমাদের। এই এক রোখা সিরিয়াস কঠিন জনকে দেখতে ভালো লাগে না। ভালো লাগে না তার কষ্টমাখা পাগলামি গুলো। কষ্টমাখা পাগলামি গুলো আমাকেও কষ্ট দেয়!”
কথাটা বলার সময় জল চিকচিক করছিল ইরতিজার চোখে।

জোনাস বললো,
“আমিও এক মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারি না তোমার করা সেই অভিশপ্ত প্রত্যাখ্যানকে! ওটা একটা অভিশপ্ত প্রত্যাখ্যান ছিল। যে অভিশাপ পুরো আমাকে পরিবর্তন করে দিয়েছে!”

“তুমি ওই প্রত্যাখ্যানকে আঁকড়ে ধরে বসে ছিলে, এখনও আছো। বন্ধুত্বের দিকটা বিবেচনা করোনি। কোনো কিছুই বিবেচনা করো না তুমি। আর এই কারণেই তুমি ঘৃণার! আমি যাদের ঘৃণা করি এবং যারা আমাকে ঘৃণা করে তাদের নিয়ে ভাবার সময় নেই আমার, ভাবতে চাই না আমি!”

ইরতিজা এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে লাইনটা কেটে দিলো সঙ্গে সঙ্গে। হৃদস্পন্দন অতি দ্রুততর হচ্ছে তার। মনে মনে নিজেকে বোঝাতে লাগলো, সত্যিই তার ওই মানুষগুলোকে নিয়ে ভাবার সময় নেই। কিন্তু মানুষের মন যে আজব কীর্তিকলাপের সংস্থান। দেখা যায় আমরা ওই মানুষগুলোকে নিয়েই বেশি ভাবছি, যাদের ঘৃণা করি বা যারা আমাদের ঘৃণা করে!
জোনাসের তরফ থেকে আর কোনো কল অথবা ম্যাসেজ এলো না। কেটে গেল কিছুক্ষণ। অকস্মাৎ অদ্ভুত একটা বিষয় উপলব্ধি হলো ইরতিজার। যাতে তার প্রতিটা লোম সজারুর কাঁটার মতো খাড়া হয়ে উঠলো। সচকিত দৃষ্টি এদিক-ওদিক ঘুরতে লাগলো তার। খুব খারাপ একটা আশঙ্কা বুকের মাঝে হাতুড়ি পেটাচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ যেন চুপি চুপি তার উপর নজর রাখছে। ভয়ে রক্ত হিম হয়ে গেল, গলা শুকিয়ে এলো। হঠাৎ এত ভয় পাচ্ছে কেন নিজেই বুঝতে পারছে না। কে রাখছে তার উপর নজর? এদিক-ওদিক ভালো করে তাকিয়ে আরেকবার দেখার সাহস হলো না। সে দ্রুত ঘরে চলে এলো।
ঘরে এসে জানালা দিয়ে আশপাশটা দেখেছে। কিন্তু কাউকে চোখে পড়লো না। তবে কেউ একজন ছিল। আশেপাশেই ছিল।
খাবার খেয়েই শুয়ে পড়লো ইরতিজা। কয়েকটা ঘণ্টা পার হওয়ার পরও ঘুম আসছিল না। ধীরে ধীরে ঘুমের আবেশ যখন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলো তখনই হঠাৎ কলের শব্দটা ডেকে উঠলো তাকে। ক্যানিয়লের নাম দেখতে পেয়েই ধড়ফড় করে উঠে বসলো। এখন মধ্যরাত। পুরো এরিয়ার মানুষ ইতোমধ্যে ঘুমে আচ্ছাদিত। এমন সময় ক্যানিয়ল তাকে কেন কল দিয়েছে? ইরতিজার সংশয় হচ্ছিল এত রাতে কল রিসিভ করবে কি করবে না। করে ফেললো শেষমেশ। তাৎক্ষণিক ক্যানিয়ল বলে উঠলো,
“তোমার উচিত ছিল পাঁচ সেকেন্ডের সময় কল রিসিভ করার, কিন্তু তুমি উনত্রিশ সেকেন্ডের সময় কল রিসিভ করেছো। মোট চব্বিশ সেকেন্ড সময় অহেতুক ব্যয় করিয়েছো আমার জীবন থেকে। এখন এর কী শাস্তি হতে পারে তোমার?”

ইরতিজা বিস্মিত হলো। সামান্য অমূল্যবান একটা বিষয় নিয়ে শাস্তির কথা বলছে?

“আমি ঘুমাচ্ছিলাম।” বললো ইরতিজা।

“ঘুম? এদিকে আমার ঘুম কেড়ে নিয়ে বসে আছো, অথচ তুমি ঘুমাচ্ছ?”

“আমি কীভাবে তোমার ঘুম কেড়েছি?” অবাক কণ্ঠের প্রশ্ন ইরতিজার।

“কাড়োনি? চোখ বন্ধ করলেই তোমাকে দেখতে পাচ্ছি। বলো এসব কী? তোমাকে কে সাহস দেয় আমি চোখ বন্ধ করা সত্ত্বেও আমার সামনে আসার? চোখ বন্ধ করার পর আবারও যদি তোমাকে দেখি তাহলে এর যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবো আমি। দয়া করে আর চোখে ভেসে উঠে ডিস্টার্ব করো না আমায়। ঘুমাতে দাও।”
রাজ্যের বিরক্তি গলায় ঝরিয়ে কল কাটলো ক্যানিয়ল।
এদিকে তার কথা শুনে শিথিল হয়ে গেল ইরতিজা। হৃদকক্ষে ঝুমঝুম শব্দে ভালোলাগার নৃত্য পরিচালিত হতে আরম্ভ করেছে। অসহ্যরকম এক ভালো লাগার অনুভূতি হচ্ছে তার। সে ক্যানিয়লের ঘুম কেড়ে নিয়েছে? এভাবে? মনে মনে হাসে ইরতিজা। ক্যানিয়ল বলেছিল, ইরতিজা তার প্রেমে পড়লে তার মান-সম্মান নষ্ট হবে। অথচ এখন যে সে ইরতিজার প্রেমে পড়েছে? তাও আবার কঠিন প্রেম! এর কী হবে? ক্যানিয়লের মান-সম্মান কি বিন্দু পরিমাণও অবশিষ্ট আছে এখন? কথাটা ভাবতেই হাসে ইরতিজা। এটা ভাবতে ভাবতেই কেটে যায় কিছু সময়।
আবারও হুট করে কল আসে ক্যানিয়লের। এবার সে আরও বিরক্ত নিয়ে বললো,
“তুমি মেয়েটা এত কেন অবাধ্য? এত বার বললাম যে এসো না আমার চোখের সামনে, তাও তুমি বেহায়ার মতো কেন আসছো? কেন ঘুমাতে দিচ্ছ না আমাকে?”

ক্যানিয়লের বিরক্তমাখা কথাগুলো শুনতে ভালোই লাগছে ইরতিজার। মানুষের বিরক্তমাখা কথাও এত সুন্দর হয় না কি? সে কিছু না বলে নীরব থাকে। ওপাশে ক্যানিয়লও নীরব। কেটে যায় কয়েকটা মুহূর্ত। বিরতির পর ক্যানিয়ল বললো,
“আমি বুঝতে পেরেছি আজ রাতে আর ঘুম হবে না আমার। তুমি এক অবাধ্য মেয়ে!”

কিছুক্ষণের জন্য আবারও নীরবতা দেখা দেয়। নীরবতা দিয়েই কলের যবনিকা টানতে চাইছিল ক্যানিয়ল। কিন্তু তার আগে ইরতিজা হঠাৎ বললো,
“তোমার মান-সম্মানের কী অবস্থা ক্যানিয়ল?”

“হোয়াট ডু ইউ মিন?” বিস্ময়ের ছাপ স্পষ্ট ক্যানিয়লের কণ্ঠে।

ইরতিজা মৃদু কণ্ঠে বললো,
“আমি কি তোমার প্রেমে পড়েছি ক্যানিয়ল? না কি তুমি পড়েছো? না কি আমরা দুজনই পড়েছি?”

কথাগুলো কর্ণকুহরে প্রবেশ করা মাত্রই স্তম্ভিত হয়ে গেল ক্যানিয়ল। হৃদস্পন্দন থমকে গেল। এই মাত্র কী বললো মেয়েটা?

_________________

পুরো তিনদিন ঘরে বন্দি হয়ে থাকতে হলো। এর কারণ তুষারপাত! প্রবল তুষারপাতের কারণে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল সব কিছু। বৃষ্টিটাও যেন আড়ি করে দেরিতে ঝরলো। না হলে আরও আগেই গলে যেত বরফ। বরফ যে একেবারে নিঃশেষ হয়ে গেছে তা নয়। প্রকৃতিপানে তাকালে এখনও দেখা যায় তুষারপাতের চিহ্ন। গোলাপি আভার আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আছে ইরতিজা। সামনে লেকের টলমলে পানি। আকাশের প্রতিচ্ছবি ফুঁটে আছে তাতে। পাহাড়ের চূড়ায় বরফ জমে সাদা হয়ে আছে। সামনে লেক আর লেকের পিছনে পাহাড়। অপরূপ এক দৃশ্য বলে মনে হলো ইরতিজার। আকাশি রঙের শাড়ির সাথে একটা আকাশি রঙের কোট পরেছে সে। মাথায় শাড়ির সাথে ম্যাচ করে হিজাব পরেছে। সাজিদ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিল ইরতিজাকে। এক সময় বললো,
“তুমি ভালো শাড়ি পরতে জানো না ইরতিজা!”

কথাটা শুনে ইরতিজা লেক থেকে দৃষ্টি এনে সাজিদের দিকে তাকালো। আজ সে তাড়াহুড়ো করে শাড়ি পরেছে সেটা ঠিক, কিন্তু শাড়ি পরা যে খারাপ হয়েছে এটা মানতে নারাজ। কিন্তু সাজিদের কথাটায় সে সায় মিলিয়ে বললো,
“হ্যাঁ ঠিক বলেছেন, ভালো শাড়ি পরতে জানি না আমি। আর যে মেয়ে ভালো শাড়ি পরতে জানে না তাকে বিয়ে করা মানে গুণহীন কাউকে জীবনসঙ্গী করা। আপনি তো একজন বহু গুণসম্পন্ন ব্যক্তি। আপনার এমন কাউকে বিয়ে করা উচিত যার মাঝে হাজার হাজার গুণ আছে।”

ইরতিজার কথাটায় হাসলো সাজিদ। বললো,
“আপনি সব সময় এই বিয়েটা ভাঙার চেষ্টায় থাকেন কেন?”

“কারণ চাই না এই বিয়েটা হোক। আমি আপনাকে বিয়ে করবো না এটা তো সেই পুরোনো কথা। এবার বিয়েটা ভেঙে গেলেই নতুন একটা কাহিনীর সূচনা হবে। আপনি কি চান না পুরোনো কাহিনীর সমাপ্তি ঘটে একটা নতুন কাহিনীর সূচনা হোক?”

“চাই। তবে বিয়ে ভেঙে নয়, বিয়ে হয়ে গিয়ে নতুন কাহিনীর সূচনা হোক এটা চাই।”

ইরতিজা বিরক্তিতে মুখ বিকৃত করলো।
“আপনি শুধু শুধু নিজের জীবনের সময় অপচয় করছেন। এতদিনে খোঁজ করলে খুব ভালো একটা মেয়েকে বিয়ে করতে পারতেন।”

“ভালো মেয়েতে এলার্জি আমার, খারাপ মেয়েই আমার জন্য পারফেক্ট।”

কথাটায় ইরতিজার বিরক্ত তো লাগলোই সাথে রাগের একটা সুতোয়ও টান পড়ে ঝিরঝির করে কেঁপে উঠলো। ইচ্ছা করলো র’শি দিয়ে বেঁ/ধে এই ঘাড়ত্যারা লোকটার ঘাড় সোজা করে। কিন্তু পিছিয়ে যেতে হলো ইচ্ছাটা থেকে। বললো,
“এত ঘাড় ত্যাড়ামি আমি সহ্য করতে পারি না।”

“কথায় কথায় আপনার এই ‘বিয়ে করবেন না’ কথাটাও আমি সহ্য করতে পারি না।”

ইরতিজা দাঁতে দাঁত চেপে ধরলো। কিছু বলে আর কথা বাড়ানোটাই অনুচিত মনে হলো তার। সে তাৎক্ষণিক সাজিদকে নির্দেশ দিলো তাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য। সাজিদ নির্দেশ পালন করলো। গাড়িতে উঠে বসে ইরতিজা অনুভব করলো শাড়ি পরাটা ভীষণ ভুল হয়ে গেছে। পরতে তো একদমই চায়নি। কিন্তু সাজিদ যখন শাড়ি পরার কথা বলেছিল তখন সেখানে নওরিন এবং মা উপস্থিত ছিল। শাড়ি পরতে না চাইলে নওরিন তাকে অনেক কিছু বলেছে। বাধ্য হয়ে তাই শাড়িটা পরে নিয়েছে। সাজিদ ইরতিজাকে এরিয়ার ভিতরে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। জরুরি কল এসেছিল বসের থেকে। এখনই দেখা করতে বলেছে।

আকাশের গোলাপি আভা এখনও বিরাজমান। বাতাসে শীতলতার অনুভব। চলতে চলতে ক্যানিয়লকে ভাবছিল ইরতিজা। সেদিনের পর ক্যানিয়লের সাথে আর কথা কিংবা দেখা হয়নি। এমনটা কেন হচ্ছে? শূন্যতা উপলব্ধি হচ্ছে তার! একটা পাজি ছেলে হঠাৎ চুপচাপ ভদ্র হয়ে গেলে সেটা মেনে নিতে হিমশিম খেতে হয় আসলেই।
এক পা, দুই পা, তিন পা করে এগিয়ে আসছিল ইরতিজা। কিন্তু তার পিছন পিছন যে আরও এক জোড়া সাবধানী পা শব্দহীনভাবে এগিয়ে আসছিল সেটা টের পায়নি। টের পাওয়া মাত্রই দাঁড়িয়ে গেল। মস্তিষ্ক সচকিত হয়ে উঠলো। দাঁড়িয়ে গেল শরীরের প্রতিটি লোম। পিছনের ব্যক্তিটাও ইরতিজার এমন দাঁড়িয়ে যাওয়াতে সচকিত হয়ে উঠলো। সে প্রস্তুত ছিল। ইরতিজাকে পিছনে ফিরতে দিলো না। ইরতিজা ফেরার আগেই একটা রুমাল জাতীয় কাপড় দিয়ে মুখ চেপে ধরলো ওর। ইরতিজার মনে হলো তার প্রাণ পাখিটা খাঁচা ছেড়ে বেরিয়ে যাবে এখনই।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here