উড়ো পাতার ঢেউ পর্ব: ৪৩

0
531

#উড়ো_পাতার_ঢেউ
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ৪৩
_________________

নওরিনের ফিয়ন্সে হামাদ থাকে লস এঞ্জেলেসে। ওখানেই তার জব। সাজিদ লস এঞ্জেলেস গিয়েছিল অফিসিয়ালি কাজে। সাথে আরও দুজন কলিগ ছিল। যারা কি না তার বন্ধুর মতো। শুধু অফিসিয়াল কাজেই তারা আটকে থাকেনি, হালকা ঘোরাঘুরিও করেছে। আর ঘুরতে গিয়েই হামাদের সাথে একটা মেয়ের ঘনিষ্ঠতা নজরে পড়েছে। প্রথম দেখায়ই অস্বাভাবিক লেগেছিল ব্যাপারটা। পরে আবারও দেখতে পেয়েছিল মেয়েটার সাথে হামাদকে।
সাজিদের কাছ থেকে ঘটনাটা জানার পর একেবারে মুষড়ে পড়েছে নওরিন। পুল সাইড থেকে ফিরে রুমে ঢুকে কাঁদলো সে। ঘটনাটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু মেনে নিতে না পারলেও জানে এটাই সত্যি। সে নিজেও টের পেয়েছে, আর সাজিদের তো তাকে মিথ্যা বলার কারণ নেই। তবুও সে সাজিদকে ‘আপনি মিথ্যা বলছেন, এই সম্পূর্ণটাই মিথ্যা’ এমন কথা বলে কল কেটে দিয়েছে। হামাদ এমন কী করে করতে পারলো তার সাথে? হামাদ ঠকালো তাকে! মুখোশ পরে কয়েকদিনের জন্য প্রিয়জন হতে এসেছিল। নওরিন আঙুলে থাকা এনগেজমেন্ট রিংটা কষ্ট, রাগে খুলে ছুঁড়ে মারলো। দুই হাত দিয়ে মাথার চুল শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বসে পড়লো ফ্লোরে।

_______________

শুনসান রাত্রি। মৃদু শীতল বাতাসের রাজত্ব বাইরে। মানুষজনের চলাচল স্থগিত। এলাকা প্রায় তলিয়ে গেছে ঘুমের অতলে। ইরতিজার রুমের বারান্দায় স্টার লাইটগুলো জ্বলছে। ইরতিজা বেশ কিছু সময় বারান্দায় বসে থেকে লাইটগুলো দেখছিল। ভীষণ ভালো লাগছিল তার। এরপর রুমে ঢুকে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলো। বারান্দার সাথে সংযোগ স্থাপন করা দরজাটা তখনও বন্ধ করেনি। ওটা যখন বন্ধ করতে গেল একটা আলোক রশ্মি হঠাৎ তার চোখের উপর এসে পড়লো। চোখ বুজে ফেললো ইরতিজা। আস্তে আস্তে করে চোখ খুলে পিটপিট করে তাকানোর চেষ্টা করলো। আলো এখনও তার উপর স্থায়িত্ব। ইরতিজা দেখার চেষ্টা করলো কে ফেলেছে তার উপর এই আলো। কিন্তু সক্ষম হলো না। এটা কি জোনাস? এত রাতে জোনাস আবার তাকে বিরক্ত করতে এসেছে? ইরতিজা
বারান্দার লাইটটা জ্বালিয়ে দিলো। আর এই লাইটের আলোয় মানুষটা তার দৃষ্টিগত হলো। হকচকিয়ে গেল ইরতিজা। এটা তো জোনাস নয়, ক্যানিয়ল! রুমের ভিতর মোবাইলটা বেজে উঠলো এরমধ্যে। ইরতিজা চলে এলো রুমে।
ক্যানিয়ল ফোন করেছে। ফোনটা নিয়ে সে আবার বারান্দায় এলো। ক্যানিয়ল কী করছে বুঝতে পারছে না সে। এত রাতে ক্যানিয়ল কেন এসেছে এখানে? কিছু বলার জন্য কি?

“বারান্দায় আমি যাকে দেখতে পাচ্ছি ওটা কি তুমি পাকিস্টানি গার্ল? না কি তোমার রূপে কোনো প্রেতাত্মা দাঁড়িয়ে আমার সাথে ছলনা করার ফন্দি আঁটছে?” ইরতিজা কল রিসিভ করলে এই কথাটাই সর্বপ্রথম বললো ক্যানিয়ল।

“তুমি এতরাতে এখানে কেন এসেছো?”

“তুমি এতরাত অবধি জেগে কেন আছো? আমার আসার অপেক্ষা করছিলে না কি?”

“আমি এমন দেরিতেই ঘুমাই রোজ।”

“কেন? আমার কথা ভাবতে ভাবতে তোমার ঘুমের দেরি হয় বুঝি?”

কথাটা দুম করে ইরতিজার হৃদয় ছেদ করে গেল। অস্থিরতা বাড়লো হৃদয়ের। এই কথার জবাবে কী বলা উচিত বুঝতে পারছে না। ছেলেটা এমন সব কথা বলে তার মুখের ভাষা কেড়ে নেয় কেন? হৃৎস্পন্দনের গতি স্বাভাবিক থেকে আংশিক দ্রুত সম্পন্ন হলো।

ক্যানিয়ল মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট ফেলে তার পাশে থাকা সাইকেলটা দেখিয়ে বললো,
“নতুন সাইকেল। তোমার জন্য আমি আমার সাইকেল হারিয়েছিলাম। তাই নতুন একটা কিনেছি। ভেবো না তোমার মতো ছিঁচকাঁদুনে মেয়েকে এই সাইকেলে উঠতে দেবো। এই সাইকেল ভীষণ স্পেশাল।”

“তো এই স্পেশাল সাইকেলে কাকে উঠাবে?”

“কারো প্রয়োজন পড়বে না, একাই চড়বো এই সাইকেলে।”

“একা চড়লে দুষ্টু মেয়ে জিনদের নজর পড়বে তোমার উপর। সাইকেলের পিছনে বসে কখন যে তারা তোমাকে জড়িয়ে ধরবে টেরও পাবে না।”

“তবুও তোমাকে চড়তে দেবো না। জিনদের আলিঙ্গন তো তাও শান্তিদায়ক হবে, কারণ জড়িয়ে ধরলে টের পাবো না। কিন্তু ছিঁচকাঁদুনে মেয়ে জড়িয়ে ধরলে তো আমার পিঠ নাকের জল আর চোখের জল দুটো দিয়েই ভিজিয়ে দেবে। ওটা ভীষণ বিরক্তিকর হবে।”

“তাহলে কি নাকের জল আর চোখের জল দিয়ে তোমার বুক ভিজিয়ে দিলে স্বস্তিদায়ক হবে তোমার জন্য?”

ইরতিজার কথায় ভীষণ অপ্রস্তুত এবং ভীষণ রকম চমকালো ক্যানিয়ল। এই ছেলেটাও এরকম চমকাতে পারে এটা আশ্চর্যকর! কিন্তু মেয়েটা তাকে চমকেই দিয়েছে।
ক্ষণিক বাদে ইরতিজা নিজেও বুঝতে পারলো সে কেমন বিব্রতকর একটা কথা বলে ফেলেছে। সে তটস্থ কণ্ঠে বললো,
“আমি একবারও বলিনি আমি তোমার সাইকেলে চড়বো।”
বলেই সে দৌঁড়ে পালিয়ে এলো বারান্দা থেকে। ইশ, কী ভীষণ লজ্জাদায়ক একটা কথা বলে ফেলেছে! মুখ ফসকে এমন একটা কথা বেরিয়ে গেল কীভাবে? নিজের কাছেই নিজের লজ্জিত লাগছে। ক্যানিয়ল কী ভাবছে তাকে? রিংটোনের শব্দে হঠাৎ ইরতিজার অবচেতন মন কেঁপে উঠলো। ফোন হাতে নিয়ে আবারও দেখতে পেল ক্যানিয়লের নাম। রিসিভ করে মৃদু কম্পমান ধ্বনিতে বললো,
“হ্যালো!”

“তোমার কি মানসিক সমস্যা আছে পাকিস্টানি গার্ল? পাগলের মতো ওরকমভাবে দৌঁড়ে চলে গেলে কেন? এক্ষুনি বারান্দায় এসো আবার।”

“কেন? পারবো না। আমি ঘুমাবো। তুমিও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। রাত-বিরাতে বাইরে ঘোরাঘুরি করো কেন এত?”

“তোমার কি ভয় হয় আমাকে নিয়ে?”

“কীসের ভয়?”

“রাত-বিরাতে বাইরে ঘুরে বেড়ালে যদি কোনো সুন্দরী মেয়ে জিন আমার প্রেমে পড়ে যায়, সেই ভয়।”

“তারা প্রেমে পড়ে গেলে তুমিও কি প্রেমে পড়বে?”

“পড়তেও তো পারি।”

“আসছি আমি।”

ইরতিজা ক্যানিয়লের কথা মতো বারান্দায় এলো আবার। ক্যানিয়ল বললো,
“তুমি কি ভালো ক্যাচ ধরতে জানো পাকিস্টানি গার্ল?”

“কেন?”

“কারণ আমি কিছু ছুঁড়ে মারবো তোমার দিকে।”

“কী ছুঁড়ে মারবে?”

“সেটা ক্যাচ ধরার পরই দেখতে পাবে।” ক্যানিয়ল একটু এগিয়ে আসলো।

ইরতিজা হাতের মোবাইলটা বারান্দায় থাকা চেয়ারটার উপর রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ালো কেবল। এর মধ্যেই একটা ক্যামেরা ছুঁড়ে দিলো ক্যানিয়ল। ইরতিজা অপ্রস্তুত হলেও দুই হাত দিয়ে সামলে নিলো ক্যামেরাটা।
মোবাইলটা উঠিয়ে কানে ধরলো আবার।

ক্যানিয়ল বললো,
“নাও গরিব মেয়ে, তোমার ওই সুন্দর ছবি ওঠা মোবাইলটার থেকে নিশ্চয়ই এই ক্যামেরাটায় ভালো ছবি উঠবে।”

ক্যানিয়লের কথা শুনে ইরতিজার ক্যানিয়লের সাথে তার প্রথম দেখা হওয়া দিনটার কথা মনে পড়ে গেল। সেদিন ইরতিজা যখন নিজের মোবাইলটার জন্য ব্যথিত হৃদয়ের ভাব প্রকাশ করছিল, তখন ক্যানিয়ল তার একটা কথা শুনে বলেছিল,
‘মোবাইলের ক্যামেরা দিয়ে ফটো তোলো তুমি? কেন? তুমি এতটাই গরিব যে তোমার একটা আলাদা ক্যামেরা কেনার ডলার নেই?’

ইরতিজার মনে হলো ক্যানিয়ল যেন ওই ঘটনাটার জন্যই তাকে এই ক্যামেরাটা দিয়েছে। কিন্তু এই ক্যামেরাটা তো তার গ্রহণ করা উচিত নয়। পারবে না সে এই ক্যামেরাটা গ্রহণ করতে। ইরতিজা ক্যানিয়লকে কিছু বলতে যাবে, কিন্তু চোখ তুলে তাকাতেই দেখলো ক্যানিয়ল যে জায়গাটায় দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে আর নেই। দূরে তাকিয়ে দেখলো ক্যানিয়ল চলে যাচ্ছে। ফোনটা হাতে এনে দেখলো লাইনেও নেই ক্যানিয়ল। ইরতিজা ডাকতে যাচ্ছিল ক্যানিয়লকে, কিন্তু এত রাতে উচ্চ কণ্ঠে ডাকতে গেলে বাসার মানুষের ঘুম ভেঙে যেতে পারে।
ক্যানিয়ল একটু সময়ের ব্যবধানেই চোখের আড়াল হয়ে গেল।
ইরতিজা ক্যামেরাটার দিকে তাকিয়ে দেখলো ক্যামেরাটার সাথে একটা ক্ষুদ্র কাগজ ঝুলছে। আর তাতে কিছু লেখা।

‘এই ক্যামেরা দিয়ে কোনো ছেলের ফটো তোলার চেষ্টা করবে না, খবরদার! আমি তাহলে এই ক্যামেরা আবার নিয়ে যাব। সব রকম ছেলে নিষিদ্ধ এই ক্যামেরার জন্য।’

ইরতিজা লেখাটা পড়ে হেসে ফেললো। আনমনে বললো,
“তুমিও কি নিষিদ্ধ?”

_______________

দখিনা হাওয়ায় সাজিদের চুলগুলো উড়ছে। খোলা জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে অদূরে। বিকেলের নরম রোদ এসে ছুঁয়েছে তার মুখ। মনের গহীন প্রান্তরে ইরতিজার ভাবনাখানি পরশ বুলাচ্ছে কোমল আবেশে। গতকাল যখন ইরতিজা নওরিনের ফোনটা রিসিভ করেছিল, আর সে যখন ইরতিজার সাথে গমগমে কণ্ঠে ওই কথাটা বলেছিল তারপর থেকেই হৃদয়ে কেমন যেন এক অনুভূতি হচ্ছে। নিভৃতে অনুভূতিটা তাকে খুব জ্বালাতন করছে। ইরতিজার প্রতি তার একটা রাগান্বিত মনোভাব ছিল। কিন্তু কালকের পর থেকেই নেই। সে ভাবছে, মেয়েটা এমন কেন? রাগ পুষে রাখা যায় না কেন মেয়েটার প্রতি? না, আর এরকম করে থাকা সম্ভব নয় তার পক্ষে। সে বেড সাইড টেবিলের উপর থাকা মোবাইলটার দিকে তাকালো। ভুল হবে এমনভাবে দুই পাশে মাথা নেড়ে বললো,
“উহুঁ না।”

বলেই ঝট করে উঠে দাঁড়ালো। কিচেনে গিয়ে কফির মগটা রেখে আবার এসে ঢুকলো বেডরুমে। রেডি হলো ঝটপট। গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো এপার্টমেন্ট থেকে।

তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। ইরতিজা নিজের রুমে বসে বই পড়ছিল। দরজার গায়ে টোকা দিয়ে কেউ ইরতিজার মন আকর্ষণ করলো। ইরতিজা তাকিয়ে দেখলো রিশন দাঁড়িয়ে আছে। ইরতিজা বললো,
“কোনো প্রয়োজন?”

“তোমার সাথে একজন দেখা করার জন্য এসেছে, আর তুমি রুমে ঢুকে বসে আছো? ব্রাইট স্টুডেন্টদের মতো আবার বইও পড়ছো?”

রিশনের কথায় আহত হলো ইরতিজা। সে স্টুডেন্ট হিসাবে ভালোই বলা চলে। অথচ রিশন যেন তাকে তুচ্ছজ্ঞান করে কথা বলেছে। যাই হোক, এ নিয়ে কিছু বললো না সে।

“কে দেখা করতে এসেছে? আমি তো জানি না!”

“বাসা থেকে বের হলেই তাকে দেখতে পাবে। তোমাকে খবরটা জানাতে এসে আমার প্রায় কয়েক মিনিট সময় নষ্ট হয়ে গেছে। এতক্ষণে আমি একটা ভিডিয়ো এডিটের কাজ করতে পারতাম।”

রিশন চলে গেল এটুকু বলে। ইরতিজা মনে মনে বিস্ময়ান্বিত। কে এসেছে তার সাথে দেখা করতে? ইরতিজা বিছানা থেকে নামলো। একটা কালো কোট গায়ে দিয়ে বের হলো বাসা থেকে।
কিন্তু কাউকেই দেখতে পেল না। আশ্চর্য! রিশন কি তার সাথে মজা করলো?
চোখ হঠাৎ পার্কিং সাইডে গিয়ে পড়তেই দেখলো পার্ক করে রাখা গাড়ির ওখানে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। পার্কিং সাইডটা অনেকটা দূরবর্তী হওয়ায় মানুষটা কে তা বুঝতে সমস্যা হলো। এছাড়া প্রকৃতিতে অন্ধকারের পসরা বসতে শুরু করেছে ইতোমধ্য। ইরতিজা কিছুক্ষণ দেখার পর বুঝতে পারলো ওটা সাজিদ। বিস্ময়ে তরান্বিত হলো সে। সাজিদ? কী করে সম্ভব? ভ্রম হচ্ছে তার? ইরতিজা দুই-তিনবার চোখের পলক ফেলে আবার তাকালো। এখনও দেখা যাচ্ছে ওখানে সাজিদ দাঁড়িয়ে আছে। ইরতিজা এগিয়ে গেল।

সাজিদ দেখতে পাচ্ছে তার প্রতীক্ষিত মানুষটি তার কাছে আসছে। আরও আগেই দেখা হয়ে যেত মানুষটির সাথে। কিন্তু এপার্টমেন্ট থেকে বের হওয়ার পর হঠাৎ এক অফিস সিনিয়রের কল এসেছিল। এরপর তাকে সেই অফিস সিনিয়রের বাসায় যেতে হয়েছিল। অফিস সিনিয়র নিজের একটা ব্যক্তিগত কাজ তার উপর চাপিয়ে দিয়েছে। কাজটা এমন, অফিস সিনিয়রের দেওয়া একটা বক্স ওয়াশিংটন ডিসি গিয়ে নির্দিষ্ট একটা স্থানে দিয়ে আসতে হবে। এগুলোকে উড়ে এসে জুড়ে বসা কাজ বলা যায়। তো সিনিয়রের ওখান থেকে বের হতে হতে দেরি হয়ে গেছে।
ইরতিজা সাজিদের সামনে এসে দণ্ডায়মান হয়ে বললো,
“আপনি? এই সময় এখানে কী করছেন?”

ইরতিজার কথার পর কয়েক সেকেন্ড চুপ কাটলো। তারপর সাজিদ অকস্মাৎ মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট অন করে তার আলো ফেললো ইরতিজার উপর। অন্ধকারে ইরতিজাকে ভালো করে দেখতে পাচ্ছে না বলে এমন করলো। ইরতিজা চোখ বুজে ফেলেছে। মুখের সামনে এক হাত দিয়ে আলোটাকে বাধা দিয়ে পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো।

“এটা কী করছেন?”

সাজিদ সাথে সাথে কিছু বললো না। সে আরও কয়েক সেকেন্ড নীরবতা পালন করে বললো,
“আপনার ঠোঁটের ক্ষত সেরেছে?”

সাজিদের এমন প্রশ্ন ইরতিজাকে বিস্মিত করলো। সে কিছু সময় তির্যক চোখে তাকিয়ে থাকার পর বললো,
“আমার ঠোঁটের ক্ষত সেরেছে কি না সেটা দেখতে এসেছেন আপনি?”

সাজিদ আলোটা সরাসরি ইরতিজার উপর না ধরে একটু নিচের দিকে নামিয়ে রাখলো। আর এতে ইরতিজা নিজের চোখের সামনে ধরে রাখা হাতটা সরিয়ে ফেলে সরাসরি তাকাতে পারলো সাজিদের দিকে। সাজিদ বললো,
“উহুঁ, আপনার ঠোঁট, চোখ, নাক, গাল, কপাল সবই দেখতে এসেছি। পুরো আপনাকেই দেখতে এসেছি আমি।”

ইরতিজা হতভম্ব হয়ে গেল। মানুষটা না তার উপর রাগান্বিত ছিল? কাল সে কল রিসিভ করেছে বুঝতে পেরে কেমন ভাবেই না কথা বললো। অথচ আজ…

“ভালো আছেন আপনি?” প্রশ্ন করলো সাজিদ।

“হ্যাঁ, আলহামদুলিল্লাহ। আপনি?”

“ভালো নেই!”

“কেন?” অবাক হয়ে জানতে চাইলো ইরতিজা।

“আমি চাইছি যথা শীঘ্রই আপনাকে বিয়ে করে নেবো।”

ইরতিজার দু চোখে ভয় ভর করলো। সচকিত হয়ে উঠেছে দু চোখের তারা।
“কী?” অবিশ্বাস্য ভঙ্গিতে কথাটা বললো ইরতিজা।

সাজিদ হেসে দিলো,
“ভয় পেয়েছেন?”

ইরতিজা থতমত খেলো। থতমত ভাবকে শীঘ্রই সামলে নিয়ে বললো,
“ভয় পাবো কেন? আমি তো আর আপনাকে বিয়ে করবো না। বা জোর করে আমাকে কেউ বিয়ে দিতেও পারবে না।”

সাজিদ শুধু একটুখানি হাসলো। তারপর গাড়ির ভিতরে ঢুকতে গিয়েও ঢুকলো না আবার। ইরতিজার দিকে ফিরে আবারও মোবাইলের আলো ফেললো ইরতিজার উপর।
ইরতিজার চোখ তাৎক্ষণিক বুজে গেল আলোর তান্ডবে। হাত দিয়ে আলোর পথে বাধা সৃষ্টি করলো সে। সাজিদ তন্মনস্ক হয়ে ইরতিজার দিকে তাকিয়ে বললো,
“যখন তুমি এসে আমার সামনে দাঁড়ালে, ওই সময়টায় আমার মন যে বাসনা পোষণ করেছিল তাতে আমি নিজেই ভীষণ লজ্জিত ছিলাম নিজের কাছে।”

ইরতিজা কৌতূহলপূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।
সাজিদ অধরে মুচকি হাসির প্রজ্ঞাপন করে বললো,
“সেই সময় আমি নিজেকে বিনীত না রাখলে তোমার ক্ষত সেরে যাওয়া ঠোঁটে হয়তো আবারও পড়তো রক্ত চিহ্ন।”

সাজিদের কণ্ঠ ধ্বনিত মারাত্মক আখ্যানে ইরতিজার ওষ্ঠাধর বিভক্ত হলো একে অন্যের থেকে। দু চোখে বিস্ময়ের ঠিকরে পড়া উত্থান। বিস্ময়ের পাশাপাশি ভীতিপ্রদ ছায়াও অন্তরিন্দ্রিয় জ্ঞাপন হলো। সে নিস্পন্দ হয়ে তাকিয়ে আছে। কী বললো এইমাত্র সাজিদ?

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here