যে_শহরে_এখনো_ফুল_ফোটে
পর্ব ২৪
“হ্যালো আপু?”
“কেমন আছ রুমি?”
“আপু সাক্ষী হবা?”
“কিসের সাক্ষী রুমি?”
“বিয়ের।”
“বিয়ে! কার বিয়ের সাক্ষী? কী হেঁয়ালি করছো রুমি?”
“আপু হাসান আমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছে।”
“আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ। অবশেষে হাসান কমিটমেন্টে আসতে রাজি হয়েছে।”
“হ্যাঁ আপু। আমি একটু শক্ত থেকেছি, তাতেই লাইনে এসে গিয়েছে।”
মরিয়ম রুমির চাপা আনন্দ টের পায়। হাসান রুমির জন্য কতটা ভালো তা মরিয়ম জানে না, কিন্তু রুমির চাপা আনন্দ মরিয়মকে ছুঁয়ে যায়।
“রুমি কিভাবে কী হলো? আমি তো জানতাম তুমি হাসানের সাথে আশুলিয়া যেতে মানা করে দিয়েছিলে, এরপর হাসান রাগ করে কথা বলছিল না। তারপর হঠাৎ বিয়ের কথা থেকে আসলো?”
“আপু হাসান ভেবেছিল ও রাগ করলে আমি নরম হয়ে যাব। কিন্তু আমি আমার কথায় অটল ছিলাম। আমি ওর সাথে যেকোন জায়গায় যেতে রাজি, কিন্তু তারজন্য সামাজিক স্বীকৃতি আগে চাই আমার। আজ হঠাৎ করে ও সরাসরি বিয়ের প্রস্তাবই দিয়ে দিলো।”
“ভালোই তাহলে। কিন্তু আমার সাক্ষী হতে হবে কেন? তোমাদের দুই পরিবারের কত মানুষ আছে।”
“আপু আমরা কোর্ট ম্যারেজ করবো এখন। তুমি আর রাকিন ভাই আমার তরফ থেকে দু’জন সাক্ষী হবে।”
মরিয়ম খেতে খেতে রুমির সাথে কথা বলছিল, হঠাৎ রুমির এমন কথা শুনে বিষম খায়। কাশতে কাশতে কয়েক চুমুক পানি খেয়ে একটু ধাতস্থ হয়।
“রুমি কী বলো এইসব? কোর্ট ম্যারেজ কেন?”
“হাসান পরিবারের একমাত্র ছেলে, ওর মা খুব ইমোশনাল। ওর মায়ের কথা ভেবেই এতদিন আমাদের সম্পর্ক আগাতে পারেনি। এখনো যদি আমাকে বিয়ে করার কথা বলে, তিনি হয়তো কান্নাকাটি করে ওকে আটকে ফেলবে। তাই বিয়ে সেরে তারপর ও বাসায় জানাবে।”
“রুমি তুমি কী একটা উনত্রিশ বছর বয়সের ডাক্তার মেয়ের মতো ম্যাচুরিটি নিয়ে কথা বলছো? আমার মনে হচ্ছে আমি সদ্য ষোল পেরোনো কোন টিনএজের সাথে কথা বলছি। বিয়ের আগে বললে আন্টি কান্নাকাটি করবে, আর হঠাৎ বৌ নিয়ে গেলে খুব সুন্দর কোলে তুলে বরণ করে নেবে?”
“আপাততঃ আমরা তেমন কাউকে জানাব না আপু। সম্পর্কের একটা বৈধ নাম দেব। ও আস্তে আস্তে বাসায় ম্যানেজ করলে তখন ছোটখাটো অনুষ্ঠান করে তুলে নিবে।”
“রুমি তুমি তোমার জীবনে জটিলতাময় এলোমেলো এক অধ্যায় পার করে এসেছ। হিমেলের প্রতারণা তোমাকে আর তিতলিকে কতটা রক্তাক্ত করেছে তা কী তুমি ভুলে গিয়েছ? নিজের সাথে তিতলির জীবনটা আবার কেন অনিশ্চিত করছো রুমি? আমি এই রুমিকে চিনি না। তুমি কী ভীষণ একাকিত্বে ভুগছো? না বাবার বাড়ি থেকে বের হওয়ার জন্য একটা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছ? না শুধু জৈবিক তাড়না? জৈবিক প্রয়োজন অস্বীকার করা যায় না রুমি, কিন্তু তার মূল্য যেন জীবন দিয়ে চুকাতে না হয়। তোমার এই বোকামির অংশ হতে পারব না।”
“আপু তুমি সব সময় নেগেটিভ বলো না প্লিজ। আমি তোমাকে কতটা পাশে চাই তুমি জানো না, আমার নিজের ভাই বোনের সাহায্য না নিয়ে তোমাকে ফোন দিলাম। প্লিজ আপু আমাকে একা করে দিও না। তিতলির জন্য আমি সবসময় আছি, ওর নিজের বাবার মেয়ের কোন খবর নেই, সেখানে হাসানের কাছে আমি খুব বেশি কিছু আশা করি না। তিতলির দেখাশোনা আমি করবো। আমার নিজের জীবনে শক্ত একটা হাত প্রয়োজন আপু। দেখো আমি ভুল করবো না এইবার। আরেকজন কাকে বলবো মনে হতে রাকিন ভাইয়ের কথা মনে হলো, তিনি সহজেই রাজি হয়েছে। কাল দুপুর একটায় মগবাজার কাজি অফিসে চলে এসো প্লিজ আপু।”
মরিয়ম ফোন রেখে থম মেরে বসে রইলো। আসলেই কী প্রেমে মানুষের বিবেকবুদ্ধি লোপ পায়! না হলে রুমির মতো পোড় খাওয়া মেয়ে এমন প্রস্তাবে রাজি হয়। মরিয়ম স্পষ্ট বুঝতে পারছে হাসান কোবদিন সামনাসামনি দায়িত্ব নেবে না, হয়তো সাময়িক আবেগ কেটে গেলে রুমিকে একা ফেলে চলে যাবে। প্রথমবার পরিবারের পছন্দে বিয়ে করে একজন ভুল মানুষকে জীবনে এনেছিল রুমি। আর এইবার নিজে পছন্দ করে আরেকটা ভুল মানুষকে জায়গা দিচ্ছে না তো জীবনে। জীবন নিয়ে এ কী জুয়া ধরেছে রুমি।