আমার বনু সিজন ২ পর্ব-১৪

0
1347

#বোনু
#সিজন_০২
#Part_14
#Writer_NOVA

মিহু অনেকখন ধরে টেবিলের নিচে বসে আছে। টেবিলের নিচ থেকে ও দুটো ছেলেকে চলে যেতে দেখলো।ও ভাবলো রাজ চলে গেছে। কিন্তু নিবরাজ এখনো ওদের টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।রাজকে দেখে বাকি সবার মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। ওরা ভয়ে একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। মিহু টেবিলের নিচ থেকে ময়লা ঝাড়তে ঝাড়তে বের হলো।

মিহুঃ যাক বাবা বাঁচা গেল। নেংটি ইঁদুর ও নিবরাজ চিলি মসলা বিদায় হয়েছে। এবার শান্তিতে খাবার গিলা যাবে।

তখনি আভা মিহুকে কনুই দিয়ে খোঁচা মারলো।মিহু এখনো ওর সামনে থাকা রাজকে দেখেনি।

মিহুঃ ঐ ছেমরি খোঁচা মারস কে?

আভাঃ সামনে তাকা।(নিচুস্বরে)

মিহুঃ সামনে কি দেখমু?

আফরাঃ একবার তাকা তাইলে বুঝবি।

মিহু সামনে তাকিয়ে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো।নিবরাজ,আইজান ও তার দল ওদের টেবিলের সামনে দুই হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। এমনভাবে দাঁড়িয়ে আছে মনে হচ্ছে কিছু সময় পর তারা মাঠে কাবাডি খেলতে নামবে।

নিবরাজঃ কি বললে তুমি আমাকে?

মিহুঃ আআআআমমমি কককিছছছছু বববববললি নি। (আমতা আমতা করে)

নিবরাজঃ আমি নিবরাজ গুঁড়া মসলা?

মিহুঃ নিবরাজ গুঁড়া মসলা নাতো নিবরাজ চিলি মসলা 😁।

নিবরাজঃ কি বললে আবার বলো?
(সামনে এগুতে এগুতে)

মিহুঃ কই কিছু বলেনি তো?(ভয়ে)

তারপর নিবরাজকে ক্রশ করে পালাতে গেলেই নিবরাজ হাত ধরে ফেললো।

নিবরাজঃ কোথায় যাচ্ছো?
মিহুঃ বাড়িতে🥺।
নিবরাজঃ এখানে বসো।
মিহুঃ না আপনি মারবেন থুরি বকবেন। আমি
বসবো না।

মিহুর কান্ড দেখে রাজের ভীষণ হাসি পাচ্ছে। কিন্তু হাসলে চলবে না।মুখ টিপে হাসি আটকিয়ে বললো।

নিবরাজঃ আমায় রাগিও না, বসো এখানে।
মিহুঃ বসছি তো। হাত ছাড়েন।
নিবরাজঃ উহু,তুমি পালাবে।

মিহু চুপচাপ চেয়ারে বসলো।তারপর রাজের হাতে জোরে একটা কামড় বসিয়ে দিলো। রাজ হাত ছাড়তেই উল্টো দিকে দৌড়। সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা এমন করলো কেন?

মিহুঃ ধূর এই বেডার লিগা খাইতেও পারলাম না।

রেস্টুরেন্টের দরজা দিয়ে উঁকি মারলো মিহু।তারপর চিৎকার করে সায়েমকে বললো।

মিহুঃ ঐ সায়েইমম্মা আমার খাবারগুলো পার্সেল
করে পাঠিয়ে দিস।

সায়েমঃ পারুম না।এই জায়গায় বইয়া খাইয়া যা।

মিহুঃ কথা কম কইস।নাইলে হসপিটালে ভর্তি করমু।রাতে আমার খাওন যেনো পাই।

নিবরাজ মিহুর দিকে তাকাতেই মিহু দৌড়ে পালালো।

মিহুঃ বাপ—রে🥶!! আমার খবর আছে। আমি আর কি করমু। কামড় দেওয়া ছাড়া কোন উপায়
আছিলো না।

মিহু চলে গেলে রাজ মুচকি হাসলো। সত্যি পাগলী একটা।তা না হলে এত বড় একটা মেয়ে কাউকে কামড় দেয়।রাজ যত চায় মিহুর কাছ থেকে দূরে যেতে ততই যেনো আরো কাছে চলে আসে।The tim of rainbow -এর বাকি সবার মুখ শুকিয়ে গেছে ভয়ে।মিহুতো পালালো এবার ওদের কি হবে? সবাইকে অবাক করে দিয়ে রাজ তার বন্ধুদের নিয়ে চলে গেল।

রুশানঃ আমার না NK আর হিরকে নিয়া খোটকা লাগতাছে।

আভাঃ আমারও।

সায়েমঃ যেই ছেলে কারো সাথে কথা বলে না, কোন মেয়ের দিকে তাকায় না।সে হিরের সাথে নিজ থেকে কথা বলতে আসে।

আফরাঃ আমার মনে হয় রাজ ভাইয়া হিরকে
পছন্দ করে।

কিরনঃ হইতে পারে।আমার কাছে তাই মনে হয়।

রিমঃ যেই ছেলের গায়ে কেউ ফুলের টোকা দিতে পারে না, তারে হির কামড় দিলো।আর সে কিছু বললো না। এমনকি রাগলোও না।

আভাঃ রাগ তো দূরে থাক।রাজ ভাইতো মুচকি হাসতেছিলো।

রুশানঃ আমি সিউর NK হিরকে লাভ করে।

আফরাঃ তোর এতো সিউর হইতে হইবো না। যদি তোর সিউর ভুল হয় তাহলে NK তোর জীবনের গ্যারান্টিই আনসিউর করে দিবো।

রুশানঃ 😤😤

☘️☘️☘️

Scotland…….

স্কটল্যান্ডের সেই বিশাল বড় বাড়িতে ভাঙচুর করছে ধূসর চোখের ছেলেটি।পুরো বাড়ির জিনিস তছনছ। এখনও ঝড় চলছে।ওকে থামানো তো দূরে থাক ওর সামনে যেতেও ভয় পাচ্ছে সবাই। সব সার্ভেন্টরা ভয়ো দূরে দাঁড়িয়ে আছে। সকলের কলিজা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। কে জানে?কখন আবার তাদের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যায়।বাড়ির সামনের গেইটে একটা লাল রঙের গাড়ি থামলো।গাড়ি থেকে নেমে ছুটে এসে দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকলো আরেকটি ছেলে।
নাম অন্তু চৌধুরী। বয়স ২৩ বছর।অন্তর চৌধুরীর ছোট ছেলে।আবির চৌধুরীর ভাতিজা। অন্তর ও আবির চৌধুরী দুই ভাই।অন্তর চৌধুরীর দুই ছেলে। বড় ছেলে ধূসর চোখের মালিক। আর ছোট অন্তু।

অন্তুঃ ভাই করছিস কি?পাগল হয়ে গেছিস।

—-হ্যাঁ,আমি পাগল হয়ে গেছি।

অন্তুঃ শান্ত হো ভাই।

—- কি করে শান্ত হবো?বল,কি করে শান্ত হবো? আজ ১০ দিন হলো আমাদের চাচাতো ভাই রিকি মারা গেছে। অথচ কেউ কিছু বলতে পারে না। কে ওকে মারলো,কে তুলে নিয়ে গেল? কেউ বলতে পারছে না। এতো ঠান্ডা মাথায় কে ওকে খুন করলো? কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।কিভাবে সম্ভব?

অন্তুঃ রিকিকে তোর দেশে পাঠানো উচিত হয়নি।ওকে যদি দেশে না পাঠাতি তাহলে আজ এই ঘটনা
ঘটতো না।

—- যারা রিকিকে মেরেছে তাদের কাউকে আমি ছাড়বো না। ওরা জানে না কার সাথে লরতে এসেছে।ওদেরসব কয়টাকে ফ্যামেলী সহ উপরে শিফট করে দিবো।

অন্তুঃ ভাই,শুনেছি রিকি গিয়ে মিহুর সাথে ঝামেলা করেছে। রিকির মৃত্যুর সাথে মিহুর কোন হাত নেই তো।আমার ওকে সন্দেহ হচ্ছে।

—- নাহ, হির এই কাজ করেনি। হির মার্ডারের মধ্যে নেই। কাজটা অন্য কেউ করেছে। আর খুব ঠান্ডা মাথায়।খুন খুব চালাক।যার কারণে কোন চিহ্ন রাখেনি।

অন্তুর মোবাইল বেজে উঠলো। মোবাইল কানে দিয়ে তার ভাইকে বললো।

অন্তুঃ ভাই, চাচ্চু কল করেছে। তোর সাথে কথা বলবে।

অন্তু তার ভাইকে মোবাইলটা দিলো।

আবিরঃ হ্যালো।

— হ্যাঁ, চাচ্চু বলো।কিছু পেলে?রিকিকে কারা মেরেছে? একবার নামটা বলো। তার অস্তিত্ব আমি ধূলোর সাথে মিশিয়ে দিবো।

আবিরঃ কোন কিছু পাইনি।ওকে দেশে পাঠিয়ে সবচেয়ে বড় ভুল করেছিস তুই? যে বা যারা মেরেছে তারা পূর্ব প্ল্যান করেই মেরেছে আমার ছেলেটাকে।আমার মনে হচ্ছে আমাদের পুরাতন শত্রু।

— তুমি আমাকে কলেজের ঘটনাটা খুলে বলো তো।

আবির চৌধুরী সেদিন কলেজের ঘটনা খুলে বললো।

—এই ঐশিকটা কে?

আবিরঃ মেহরুনের মামাতো ভাই। এবং পুলিশের একজন বড় অফিসার।

—- তুমি আমাকে এই ছেলের সব ডিটেইলস দিবে।আর ওকে নজরে রাখবে।হঠাৎ করে এই ছেলে কোথা থেকে উদয় হলো।

অাবিরঃ কিন্তু ঘটনার সময় ঐশিক খুলনায় ছিলো। তাছাড়া ওর কোন কিছুই আমাদের সন্দেহ হচ্ছে না। তোর ড্যাড ও আমি অনেক খোঁজ লাগিয়েছি।কিন্তু কোথাও কোন খোটকা লাগেনি।

—- তুমি বেশি কথা বলো না। আমি যা বলেছি তাই করো।(রেগে)

আবিরঃ ঠিক আছে আমি সব পাঠিয়ে দিবো।

— ভালো থেকো। আর ড্যাডের খেয়াল রেখো।

কলটা কেটে দিলো ধূসর চোখের ছেলেটি। চোখ মুখে তার একরাশ চিন্তা।

অন্তুঃ ভাই, কোন খবর পেলি?

— পাইনি, তবে খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবো।তুই তৈরি হয়ে নে।আগামীকাল সকালে তুই বিডি তে যাবি।

অন্তুঃ কেন?

— রিকির খুনীদের ধরতে হবে।তবে সাবধানে থাকবি।আমাদের শত্রু খুব ঠান্ডা মাথার খেলোয়াড়। সেটা মনে রাখিস।

অন্তুঃ আমার ভয় করছে।আমি বাংলাদেশে গেলে যদি আমারও রিকির মতো অবস্থা হয়।

— কিছু হবে না তোর।আমি কিছু হতে দিবো না। আমি টিকেট কেটে ফেলেছি।তুই সবকিছু গুছিয়ে নে।খানদের কলেজে আগে যাবি।

অন্তুঃ কেন?

— ঐ কলেজ থেকে হয়তোবা কোন ক্লু পেয়ে গেলি।বারবার বলে দিচ্ছি বি কেয়ারফুল।তুই চিন্তা করিস না তোর বড় ভাই তোর কিছু হতে দিবে না।

অন্তুঃ ঠিক আছে ভাই। আমি কালই যাচ্ছি বিডিতে।

ধূসর চোখের ছেলেটি জিহানকে কল দিলো।

—- হ্যালো জিহান।

জিহানঃ ইয়েস বস বলুন।

— আগামীকাল আমার ছোট ভাই দেশে আসছে।তুমি ওকে নিতে এয়ারপোর্ট চলে এসো।আমার একমাত্র ভাইয়ের যদি কিছু হয় তাহলে তোমরা কবরে চলে যাবে।কথাটা মাথায় রাখো।(রেগে)

জিহানঃ কোন চিন্তা করবেন না বস।আপনার ভাইয়ের গায়ে একটা আঁচড়ও লাগতে দিবল না।

— ওকে বাই।

জিহান মোবাইল থেকে কলটা কেটে একটা বাঁকা হাসি দিলো।

জিহানঃ আপনি কোন চিন্তা করবেন না মিস্টার……. চৌধুরী। আমরা আপনার ভাইয়ের গায়ে সত্যি একটা আঁচড়ও লাগতে দিবো না।এতো আদর যত্ন করবো যে আপনার ভাই জীবনেও এই দেশ থেকে ফিরবে না।

☘️☘️☘️

এক দিন পর…..

কলেজ….

খান কলেজে আজ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছে। বিভিন্ন কলেজ থেকে ছেলেরা তাতে অংশগ্রহণ করতে এসেছে। নিবরাজ ক্রিকেট খেলা অনেক পছন্দ করে। তাই প্রতিবছর নবীন বরণের পরে ক্রিকেট খেলার আয়োজন করে।মিহু কলেজে ঢুকেই অবাক।চারিদিকে মানুষে গমগম করছে। কেমন একটা উৎসব উৎসব ভাব।মাঠটাকে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। মিহু ওর টিমের কাছে গেলো।

মিহুঃ ঘটনা কি রে? চারিদিকে এত মানুষ কেন?মাঠটাকে এতো সুন্দর করে সাজানো হয়েছে কেন?কার বিয়ে আজকে?নেংটি ইদুর নাকি নিবরাজ চিলি মসলার।

সায়েমঃ ধূর,ছেমরি। কি কস এসব?

মিহুঃ তাহলে এতকিছু কে?

আফরাঃ কয়েক দিন পর কলেজে এসেছিস।জানবি কি করে?

আভাঃ আজকে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আছে।

মিহুঃ ও এই খবর?

রিমঃ জ্বী এই খবর।তুই তো কত কিছু ভেবে ফেললি।

রুশানঃ কে কে খেলবো রে?

আফরাঃ তুই, আমি,আভা,হির,সায়েম,রিম আর কিরন।

রুশানঃ মজা করোস।

আফরাঃ ঐ ছেমড়া তোর সাথে মজা করুম কে?তুই কি আমার বেয়াই লাগোস।

রুশানঃ 😡

সায়েমঃ শুনছি NK নাকি খেলবো।তুই খেলবি না।

মিহুঃ রাজ ভাইয়া খেলবো সেটা আমার সাথে কিসের জোড়া?

রিমঃ তোর সাথে কিসের জোড়া সেটা তুই জানিস না।

মিহুঃ সবাই আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?

সায়েমঃ মাম্মা, ভাবে লাভ নাই।টাকায় সব।তাই ভাব নিও না।

কিরনঃ ছোট বেলায় খাইছি সুজি একটু হলেও কিছু বুঝি।

মিহুঃ কি বোঝাতে চাইছিস তোরা?

আভাঃ NK তোমায় পছন্দ করে হির বাবু।

মিহুঃ করলে করতে পারে।সেটা আমাকে না জিজ্ঞেস করে ওনাকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর।যত্তসব ফাউল পেচাল।এর জন্য আমার সাথে ঘুরিয়ে-প্যাচিয়ে কথা বলছিলি। আমার মুডটাই নষ্ট করে দিলি তোরা।যা তোদের সাথে আর থাকবোই না।

মিহু কপট রাগ দেখানোর ভান করে উঠে চলে গেল। নিবরাজ ও তার নিজের ব্যাপারটা মিহু ওর বন্ধুদের এখন জানাতে চাচ্ছে না।তাই মিথ্যে রাগের অভিনয় ছাড়া অন্য কোন উপায় তার ছিলো না।

রুশানঃ হির, শোন। যাইস না কোথাও।

রিমঃ কোথায় যাচ্ছিস?

আফরাঃ যাহ বাবা চলে গেল।

সায়েমঃ সবসময় বেশি বাড়াবাড়ি না করলে হয় না তোদের?

কিরনঃ আমরা বাড়াবাড়ি করি আর তুমি?তুমি তো দুধের ধোয়া তুলসী পাতা।

আভাঃ এখানে পেঁচাল না পেরে, দেখ ও কোথায় গেলো?

মিহু হাঁটতে হাঁটতে গেইটের সামনে চলে এসেছে। তখনি গেইট দিয়ে একটা কালো কালার গাড়ি ঢুকলো।গাড়িটা ওর সামনে এসে থামলো।গাড়ি থেকে একটা ছেলে বের হলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here