আমার বনু সিজন ২ পর্ব-১৩

0
1285

#বোনু
#সিজন_০২
#Part_13
#Writer_NOVA

নিবরাজ নিজের দুই হাত দিয়ে মিহুকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। মুখে তার এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। হঠাৎ নিবরাজের মাথায় কলেজের ঘটনা চলে এলো। চোখ দুটো রাগে দপ করে জ্বলে উঠলো। মিহুকে সে জরিয়ে ধরে রেখেছে সেটা মনে হয়ে তার রাগ যেনো আগের থেকে ১০০ গুণ বেড়ে গেলো।ধাক্কা মেরে মিহুকে ছাড়িয়ে হাত দিয়ে ওর গলা চেপে ধরলো।

নিবরাজঃ কেন এসেছিস এখানে? মায়া দেখাতে।বেরিয়ে যা এখান থেকে। তোকে আমার সামনে দেখতে চাই না। আমার কথা তোর ভাবতে হবে না। দরদ দেখাতে এসেছিস।চলে যা তুই। সহ্য হচ্ছে না আমার তোকে।কেন এসেছিস? বল,ঐ ছেলের সাথে কি টাইম স্পেন করা শেষ। তাই আমার মন গোলাতে এসেছিস?চাই না তোর ভালোবাসা, চাই না তোকে।তুই যাকে খুশি তাকে নিয়ে ভালো থাক।যাকে খুশি তাকে জরিয়ে ধর আমার কি?আমি কষ্ট পেলে তো তুই অনেক খুশি হোস তাই না।তোকে আমি ৩টা বছর ধরে পাগলের মতো ভালোবাসি।তোর কারণে আশেপাশে কোন মেয়েকে ভিড়তে দিতাম না।যার ফলে আজও আমার কোন মেয়ে ফ্রেন্ড নেই। আর তুই, তুই তো খুব ভালো আছিস।আমিতো তোর জীবনের কাঁটা। চিন্তা করিস না চলে যাবো তোর জীবন থেকে। তোকে ছাড়াতো বাঁচতে পারবো না। তাই তোর জীবন থেকে চলে যাওয়ার আগে নিজেকে শেষ করে দিবো।তোর মুক্তি হয়ে যাবে আমার থেকে। এটাই তো চেয়েছিলি তুই। তোকে ছুটি দিয়ে দিবো সারাজীবনের জন্য।

এদিকে মিহুর অবস্থা খারাপ। গলা চেপে ধরার কারণে শ্বাস নিতে পারছে না।রাজ ওকে ছেড়ে দিলো।মিহু কাশতে লাগলো।চোখ দিয়ে পানি পরছে। হাত দিয়ে গলা ধরে রেখেছে। রাজ ব্যস্ত হয়ে উঠলো ওট এই অবস্থা দেখে।

নিবরাজঃ মিহু কি হয়েছে তোমার? খুব লেগেছে? দাড়াও আমি পানি নিয়ে আসছি।তোমার কিছু হবে না। আমি কিছু হতে দিবো না। আই এম সরি।আমি এতো জোরে ধরতে চাই নি।

নিবরাজ এক গ্লাস পানি নিয়ে এলো।মিহু পানি খেয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হলো।

নিবরাজঃ এখন কেমন লাগছে?
মিহুঃ ভালো।

নিবরাজ আস্তে করে উঠে বারান্দায় চলে গেল। মিহু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। নিজেই গলা চেপে ধরলো আবার নিজেই পাগল হয়ে গেল কি রেখে কি করবে?মিহু রাজের পেছনে দাঁড়ালো।

মিহুঃ রাজ ভাইয়া।
নিবরাজঃ চলে যাও আমার সামনে থেকে।
মিহুঃ কিন্তু —

নিবরাজঃ কোন কিন্তু নয়।চলে যাও।বলেছি না চলে যেতে। কেন ডিস্টার্ব করছো?তোমাকে আমার চোখের সামনে আর ১ মিনিট দেখলে আমি নিজের ক্ষতি করে ফেলবো।আসবে না আমার সামনে।(রেগে)

মিহু শব্দ করে কেঁদে উঠলো।

নিবরাজঃ ন্যাকা কান্না করে লাভ নেই। আমার মন গোলবে না। বেরিয়ে যাও রুম থেকে। আমি যাস্ট তোমাকে সহ্য করতে পারছি না। লিভ মি এলোন।
(জোরে রেগে চিৎকার করে)

মিহু এক মিনিটও দাঁড়ালো না। কাঁদতে কাঁদতে খান বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। নিজের বাড়ি গিয়ে দৌড়ে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো।দরজায় পিঠ হেলান দিয়ে বসে কাঁদতে লাগলো।

মিহুঃ তুমি কি জানো, তোমায় কষ্ট দিলে আমার নিজের দ্বিগুণ কষ্ট হয়।আমি সবসময় তোমায় দূরে ঠেললে নিজেকে অপরাধী মনে হয়। এমন একমুহূর্ত নেই যে আমি তোমার কথা ভাবি না।সবসময় তোমার ভালো চাই। তোমায় কেউ কিছু বললে আমার কলিজা ছিঁড়ে যায়।তোমার দিকে কোন মেয়ে তাকালে ইচ্ছে করে তার চোখ দুটো তুলে ফেলি।এরপরেও তুমি বলবে আমি তোমার কথা ভাবি না। তোমার জন্য আমার মনে কোন ফিলিংস নেই। ভালোবাসা শব্দটাকেই তো ঘৃণা করতাম।এখন আমি নিজেই তোমার ভালোবাসার মায়ায় পরে গেছি।এই ভালোবাসা আমার সবচেয়ে কাছের মানুষকে অনেক দূরে নিয়ে গেছে। যে আর কখনি ফিরবে না।আমার সেই বিশেষ মানুষটাও তো আমাকে কথা দিয়েছিলো কখনোই আমায় ছেড়ে যাবে না।কিন্তু ও তো আমায় সবার আগে ছেড়ে চলে গেল। তুমিও যদি ওর মতো চলে যাও।আমি চাইছি না তোমাকে আমার জীবনের সাথে জড়াতে। যদি তোমার কোন ক্ষতি হয়।তাহলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না। আমার যে একটা বড় বদলা বাকি আছে। বদলাটা যে আমায় নিতেই হবে। তোমায় আমার থেকে দূরে রাখার জন্য, তোমায় কষ্ট দেওয়া ছাড়া আমার আর কোন উপায় নেই। আই এম সরি,রিয়েলি সরি মাই নিবরাজ চিলি মসলা।

মিহু জোরে জোরে চিৎকার করে কাঁদছে। আর রাজ নিজের রুমে মুখ ঢেকে অঝোর ধারায় চোখের পানি ফেলছে।দুজন দুজনকে ভালোবাসে।কিন্তু দুজনেই দুই মেরুতে দাঁড়িয়ে আছে। চাইলেও পারছে না মিহু রাজকে নিজের মনের কথা বলতে।বলে দিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।তবে মিহুর যে একটা প্রতিশোধ বাকি আছে। তবে সেটা নিবরাজের ওপর নয়।অন্য কারোর ওপর।যে তার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছে।

☘️☘️☘️

১৫ দিন পর…….

আজ সায়েমের জন্মদিন।ওর জন্য The tim of rainbow -এর সদস্যরা পার্কে অপেক্ষা করছে। মিহুর মন সেদিনের পর থেকে ভালো নেই। রাজের ব্যবহারে খুব কষ্ট পেয়েছে। মন ভালো করতেই আজ পার্কে এসেছে। এই ১৫ দিনের মধ্যে অনেক কান্ড ঘটে গেছে। ১০ দিন আগে রিকির লাশ পাওয়া গেছে বুড়িগঙ্গা নদীতে। কেউ ওকে ১৩ দিন আগে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো।সোজা কপাল বরাবর শুট করেছে। এই ঘটনা নিয়ে গত ১০ দিন ঢাকায় তোলপাড় হয়ে গেছে। মিহুর ওপরও ঝড়-ঝাপটা কম যায়নি। পুলিশের তদন্ত কম হয়নি মিহুকে নিয়ে। পরে অবশ্য দেখা গেছে মিহু এসেবের কিছুই জানে না। মিহু বুঝতে পারছে না রিকেকে ওর জন্য মরতে হয়েছে নাকি অন্য কারোর জন্য। কিন্তু কে মেরেছে সেটা জানে না। ঐশীক ঐ সময় খুলনায় ছিলো। তাই তাকে সন্দেহ করার প্রশ্নই ওঠে না। ১০ দিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে কিছুটা।তাও গতরাতে আবির চৌধুরী মিহুদের বাড়িতে এসে মিহুকে শাসিয়ে গিয়েছে যে ওকে দেখে নিবে।মিহু এসবে মন খারাপের মেয়ে নয়।

সায়েম পার্কে আসতেই সবাই ওকে আটা দিয়ে ভূত বানালো।এবার পালা মাথায় ডিম ফাটানোর।সায়েমকে গাছের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। মিহু ওর মাথায় একটা ডিম রেখে পকেট থেকে স্টিক বের করলো।

মিহুঃ সায়েম, একদম নড়বি না।মাথায় ডিম রাইখা যাস্ট একটা বারি দিমু।

কিরনঃ যদি নোরস তাইলে সোজা উপরে চলে যাবি।

সায়েমঃ না,আমি মইরা যামু।আমি এখনো বিয়া করি নাই।তোগো লিগা একটা প্রেমও করতে পারি নাই।
যেই মেয়ে পটাইছি সেই মেয়েরে হির স্টিক নিয়া দৌড়ানি দিছে।পরের দিন মেয়ে আইসা ব্রেকআপ করে দিছে।

রিমঃ বিয়ে করার অনেক শখ নাকি তোর??

সায়েমঃ হুম☺️।

আভাঃ রুশানের লিগা সেদিন কলেজে যে মিনি হাতি পছন্দ করছিলাম ও তো আর নিবো না।তাই তোর জন্য সে মেয়ে আমরা চয়েজ করলাম।

রুশানঃ তাইলে ঐটা ওর জন্য ফিক্স করে দেই।

আফরাঃ মিনি হাতির সাথে তোর বিয়া দিমু।

সায়েমঃ না আমি মইরা যামু।তাও মিনি হাতি বিয়া করমু না।

মিহুঃ রুশান,কিরন তোরা গিয়া মিনি হাতিরে উঠায় নিয়া আয়।আজকেই সায়েমের বিয়া দিমু ঐ হাতির লোগে।তোরা যা আমরা কাজী অফিসে আছি।

কিরনঃ ঐ ডারে উঠায় আনতে গেলে আমরা নিচে চাপা পইরা গাইল্লা থাকমু।বিয়া খাওন আর হইবো না।

আফরাঃ ঐ ছেমড়া তোগো কি কোলে কইরা উঠায় আনতে কইছি?

রুশানঃ তাইলে—

রিমঃ মিনি হাতির সামনে কতগুলা চকলেট দেখাবি তারপর দিবি দৌড়।হাতি তোগো পিছন পিছন আইয়া পরবো।তাতে তোগো কষ্ট কইরা ওরে আনতেও হইবো না সাথে মিনি হাতির ওজন ২-৩ কেজি কমে যাইবো।

সায়েমঃ না না,কিছুতেই না।আমারে খোল আমি বাড়ি যামু।

আভাঃ আরে ছেমড়া তোর বিয়াটা হইলো আমগো পক্ষ থিকা তোর জন্মদিনের গিফট।

সায়েমঃ লাগবো না তোগো গিফট।খালি বাঁশ দেও তোমরা।

মিহুঃ আফরা ডিম দেস না কে?ওর মাথায় ফাটামুতো।

সায়েমঃ মইরা যামু।ছাইরা দে।আমার হাত-পা খোল।

আফরাঃ হির, নে ডিম ধর।

মিহু সায়েমের মাথায় ডিম রেখে স্টিক দিয়ে জোরে বারি মারলো।

সায়েমঃ বাপ–রে, মইরা গেছিরে🥶!!! সব অন্ধকার কে?এইডা কোন জায়গা?জান্নাত নাকি জাহান্নাম?

রুশানঃ ঐ বেডা চোখ খোল।কিছুই হয় নাই।

মিহুঃ আমি এতো কাঁচা না যে স্টিকের বারি ডিমে না লাইগা তোর মাথায় লাগবো।

রিমঃ We are proud of you.

মিহুঃ Thank you ☺️. সবাই কেচি দিয়া লাল ফিতা কেটে উদ্বোধন করে আর আমি স্টিক দিয়া ডিম ফাটাইয়া উদ্বোধন করলাম।নে এবার তোরা শরীরে ডিম ফাটানো শুরু কর।

☘️☘️☘️

সবাই মিলে ডিম দিয়ে সায়েমের অবস্থা নাজেহাল করলো।বেচারা আগের থেকে জানতো এমন কিছু হবে তাই আলাদা ড্রেস নিয়ে এসেছে। ড্রেস চেঞ্জ করে এলো।

মিহুঃ এবার রেস্টুরেন্টে চল।ট্রিট দিবি।
সায়েমঃ দিমু না।
রুশানঃ কি কইলি?
সায়েমঃ কিছু না।চল,আজকে বোধহয় আমার সবকিছু বন্ধক রাখতে হইবো😵।

পার্কের পাশে একটা বড় রেস্টুরেন্ট আছে।সেখানে সবাই গেলো।ভেতরে এক টেবিলে সাতজন বসলো।পরিবেশটা খুব সুন্দর। ঠিক ওদের কোণার টেবিলের দিকে নিবরাজ, আইজান ওদের দল বসে আড্ডা দিচ্ছে। অনেক দিন পর বের হয়েছে।রাজ ঐদিনের ঘটনার পর থেকে বেশি একটা কলেজে আসে না। তারপর আবার রিকির রহস্যজনক মৃত্যু। মিহু রাজদের কাউকে দেখেনি।ওর কোণাকুণি রাজ বসেছে।

মিহুঃ ওয়েটটটটটটটটাররররর!!!!
(জোরে চিৎকার করে)

ওয়েটারঃ ইয়েস ম্যাম।এনি প্রবলেম(ভয় পেয়ে)

মিহুঃ নাহ,খাবারের মেনুটা দিন।

ওয়েটারঃ এই যে ম্যাম নিন।আপনি অর্ডার করুন।

মিহুঃ আপনি লিখতে থাকুন।

ওয়েটারঃ জ্বি ম্যাম বলুন।

মিহুঃ চিকেন পিৎজা, নাগেট,জালি কাবাব,ফ্রেঞ্চ ফ্রাই,হটডগ,চিকেন ফ্রাই,দই ফুচকা,লাচ্ছি, ম্যাংগো জুস,চকলেট কেক,বার্গার,স্যান্ডউইচ,হালিম,সফট ড্রিংকস, পেস্ট্রি, পনির,চিকেন রোল,চটপটি, ফালুদা।

একদমে সবকিছুর নাম বলে থামলো মিহু।

সায়েমঃ এত কষ্ট করে বলতে গেলি কেন?তারচেয়ে মেনুর সবকিছু অর্ডার করলেই পারতি।

মিহুঃ মাত্র কয়েকটার নাম বললাম।আরো তো অনেক কিছু বাকি আছে।

সায়েমঃ কয়েকটা😲!!!! আমারে আজকে ফকির বানাইবো পেটুকগুলি।

মিহুঃ ওয়েটার,আপাতত এই কয়টা নিয়া আসেন।তারপর আরো মনে হলে বলবোনি।

ওয়েটারঃ ওকে ম্যাম।

মিহুঃ আরো কতগুলো খাবারের নাম মনে করে দে না তোরা।

আফরাঃ তুই তো সবগুলির নাম বলে দিছিস।

সায়েমঃ এগুলো খাইয়া নে,তারপর মনে করিস।আল্লাহ তুমি আজকে আমার মান-সম্মান বাঁচাইও।এত কিছু খাবি কেমনে তোরা?

আভাঃ মুখ দিয়া খামু।

রিমঃ না পারলে প্যাকেট কইরা বাড়িতে নিয়া যামু।

সায়েমঃ খাদকগুলি।এগুলি তে ওগো জামাইরে ফকির বানাইয়া রাস্তায় ঘুরাইবো।

ওদের কথা সব মনোযোগ সহকারে শুনছিলো নিবরাজ ও তার বন্ধুরা।সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। খাবার তালিকার মধ্যে মনে হয় একটা নামও বাদ নেই যা মিহু অর্ডার করে নেই।

আইজানঃ ভাই, মেনুতে বোধহয় একটা নামও বাদ নেই। যা এনাকোন্ডা অর্ডার করে নাই।

রিমনঃ এটা কি পেট নাকি কুয়া?

আইজানঃ আমার তো মনে হয় তলা ছাড়া নৌকা।

সাদাফঃ এতো খাবার কেমনে খাইবো?

আরিফঃ রাজ,তোকে তো ফকির বানিয়ে ছারবো।

নিবরাজ মুচকি হাসলো। হঠাৎ মিহুর চোখ রাজের টেবিলের দিকে গেল।রাজকে দেখে ওর চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো।সেদিন যা কান্ড করেছিলো।নিশ্চয়ই আজও রাজ মিহুর সাথে রাগ করে আছে।দেখলে নির্ঘাত কোন শাস্তি দিবে।এই ভেবে মিহু টেবিলের নিচে লুকালো।

কিরনঃ আরে হির তুই কি করোস?
মিহুঃ ঐ ছেমড়া চুপ কর।(ধমক দিয়ে)
রিমঃ তুই টেবিলের নিচে পলাইতাছিস কেন?
মিহুঃ তোগো কি চুপ করতে কইছি আমি। (রেগে)

মিহুকে টেবিলের নিচে লুকাতে নিবরাজ দেখেছে।ও বুঝতে পারলো না হঠাৎ মিহু এমন কেন করলো।তাই রাজ ওদের টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here