স্রোতের টানে পর্ব:২

0
5580

#স্রোতের_টানে
লেখিকা: #Tarin_Niti
পর্ব:২

এখন সন্ধ্যাবেলা,,
ফারিহা এখনো সেই রুমে বন্দি। সারাদিন না খাওয়ার ফলে ফারিহার শরীর খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে। দুপুরের দিকে একটা লোকের ওকে খাবার দিয়ে গিয়েছিলো।ফারিহার হাত খুলে দিয়েছিল খাওয়ার জন্য। কিন্তু ফারিহা একফোঁটা পানিও মুখে তুলেনি।ওর শুধু একটাই কথা,ওকে ছেড়ে দিতে।
লোকটা প্রায় এক ঘন্টার মতো ফারিহা সামনে বসেছিলো।পরে ফারিহা খাচ্ছে না দেখে খাবার নিয়ে ফারিহার হাত বেঁধে চলে যায়।
ফারিহা মাথা হেলিয়ে চেয়ারে বসে থাকে।ফারিহা শুধু ভাবছে আর কতদিন ওকে কিভাবে বন্দি থাকতে হবে?

কিছুক্ষণ পর আয়ান হুড়মুড় করে ওই রুমে প্রবেশ করে।এসেই ফারিহাকে ঠাস করে জোরে একটা চড় মারে।এমনিতেই না খাওয়ার ফলে ফারিহা শরীর দুর্বল হয়েছিলো তার উপরে এতো জোরে চড়!ফারিহা নুইয়ে পড়ে।আইয়ান শক্ত হাতে ফারিহার গাল চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

“দুপুরে খাবার খাসনি কেনো?তুই কি ভেবেছিস তুই না খেলে তোকে ছেড়ে দেবো?আমার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া এতো সহজ না মিস ফারিহা”

ফারিহা দুর্বল কন্ঠে বললো, ” প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন”

আয়াত কিছু বলে না তখন একটা লোক খাবার নিয়ে রুমে প্রবেশ করে।আয়ান লোকটার হাত থেকে খাবার নিয়ে লোকটাকে ইশারা চলে যেতে বলে।লোকটা চলে গেলে আয়ান ফারিহার সামনে চেয়ারে বসে।তারপর ফারিহাকে বললো,

“খাইয়ে দিচ্ছে! চুপচাপ খেয়ে নাও ”

ফারিহা দুর্বল আয়ানের।চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, “আমি খাবো না”

আয়ান রেগে ফারিহার দিকে তাকায় কিন্তু ফারিহা এতে ভয় পায় না।আয়ান ফারিহা সামনে খাবার ধরে কিন্তু ফারিহা মুখ ফিরিয়ে নেয়।আইয়ান দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“তোমাকে ভালোই ভালোই খাবার দিয়েছে তাই এরকম করছো তাইনা?”

ফারিহা তাচ্ছিল্য আসে আয়ার আবার বললো,
“না খেলে তো দুর্বল হয়ে পড়বে। আর দুর্বল থাকলে আমার সাথে লড়াই করবে কিভাবে”

ফারিহা আগের মতোই তাচ্ছিল্য হেসে বললো,
“আপনিই তো বলেন আপনি না চাইলে আমার নাকি আপনার হাত থেকে আমার মুক্তি নেই”

আয়ান হেসে বলেলো, “এতই যখন বোঝো তাহলে পালানোর চেষ্টা করো না। এখন চুপচাপ খেয়ে নাও ”

আয়ান আবার ফারিহার মুখের সামনে খাবার তুলে ধরে। কিন্তু ফারিহা মুখ ফিরিয়ে নেয়। আয়ান একহাতে ফারিহার গাল চেপে ধরে আরেক হাতে ফারিহার মুখে খাবার দে। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“একদম ফেলবে না”

ফারিহা আর উপায় না পেয়ে খাবার খেতে থাকে। এভাবে আয়ান ফারিহাকে সবটা খাবার খাওয়ায়। খাবার শেষে পানি খাওয়ায়।তারপর আয়ান পানি দিয়ে ওর হাত ধুয়ে ফারিহার মুখ মুছে দে। ফারিহা একটু কেঁপে উঠে,চোখ পিটপিট করে আয়নের দিকে তাকায়।খাবার খাওয়ার কারনে ওর এখন শরীরটা একটু ভালো লাগছে।
ফারিহার এভাবে তাকাতে দেখে আয়ান ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললো,

“রেডি হয়ে নাও।কিছুক্ষণ পর আমাদের বিয়ে”

ফারিহা বিস্ফোরিত চোখে আয়নের দিকে তাকায়। এইমাত্র আয়ান যা বলল ওকি ঠিক শুনেছে?ফারিহা আমতা আমতা করে বললো, “বি বিয়ে..?”

আয়ান ঠোঁট কামড়ে হেসে বললো,
“হ্যাঁ বিয়ে,,আমাদের বিয়ে।তৈরি হয়ে নাও”

ফারিহা একটু তেজী কণ্ঠে বললো,
“কি সব বলছেন আপনি? আপনি এভাবে আমাকে জোর করে বিয়ে করতে পারেন না!”

“আমি সব পারি ম্যাডাম। জোর করে তুলে আনতে পারি আর বিয়ে করতে পারিনা? ”

ফারিহা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো,
“দেখুন আপনার আমার বাপির সাথে শত্রুতা তারমধ্যে আমাকে কেনো টানছেন? ”

“তোমার বাপি আমার আপনজন কেড়ে নিয়েছে। আমি তোমার বাপির আপনজন কেড়ে নেবো! আর তুমি তো তোমার বাপির সবচেয়ে আপনজন।
তাই না মিস ফারিহা?”

ফারিহা কিছু বলতে নিলে আয়ান আবার বলে উঠে, “আর আমাদের সমাজে একটা মেয়ের থেকে প্রতিশোধ নিতে হলে সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে তাকে বিয়ে করা।সো,,কিছুক্ষণ পর আমাদের বিয়ে”

ফারিহা কাঁদো-কাঁদো কন্ঠে বলেলো,
“আমি আপনাকে বিয়ে করবো না। আপনার পায়ে পড়ি প্লীজ আমাকে ছেড়ে দিন”

আয়ান ফারিহার চোখের পানি মুছে দিয়ে আদুরে কন্ঠে বললো,
“হেই ফারিহা।কান্না করে না সোনা!কিছুক্ষণ পর তো আমাদের বিয়ে। কাঁদছো কেনো?”

“আমি বাপির কাছে যাবো”

“এই দেখো এত বড় মেয়ে হয়ে গিয়েছে এখনো বাপি বাপি করে!কিছুক্ষণ পর আমাদের বিয়ে।আর বিয়ের পর তুমি আমার সাথে আমার বাড়িতে থাকবে। তোমাকে তিলে তিলে কষ্ট দিতে হবে তো!”

ফারিহা কান্না করতে করতে বললো,
“না প্লিজ এরকম করবেন না।আমি…”

আয়ান ফারিহার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বললো,
“হুশশ..আর কোনো কথা না। আমি দুজনকে পাঠাচ্ছি।তোমাকে রেডি করে দেবে।আমি যেন কোনো কমপ্লিন না শুনি! চুপচাপ লক্ষী মেয়ের মত তৈরি হবে ওকে?”

তারপর আয়ান বাঁকা হেসে ফারিহার গাল টেনে বললো, “বাই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও”

ফারিহাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আয়ান রুম থেকে বেরিয়ে যায়।ফারিহা কান্না করতে করতে জোরে চিৎকার দিয়ে বললো,
“বাপিইইইই…. ”

ফারিহা কান্না করছে তখন দুটো মেয়ে ওই রুমে প্রবেশ করে।একজন এসে ফারিহার হাতের মুখের বাধন খুলে দেয়।আরেকজন পায়ের বাধন খুলে দে।তারপর বললো,
“ম্যাম চলুন..”

ফারিহা শক্ত কন্ঠে বললো, “আমি যাবো না”

“ম্যাম আপনি যদি না যান তাহলে স্যার আমাদের বকাবকি করবে। প্লিজ চলুন”

“বললাম তো আমি কোথাও যাবো না”

মেয়েদুটো একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে দুজন দুদিক থেকে ফারিহাকে শক্ত করে ধরে। ফারিহা ছুটার চেষ্টা করে।মেয়েগুলো ফারিহাকে অন্য একটা রুমে নিয়ে আসে।ফারিহা ঝটকা মেরে মেয়ে দুটো থেকে সরে যায়।
এই রুমটা আগের রুমে তুলনায় অনেক ভালো।বেড, কাভার্ড, ড্রেসিংটেবিল অনেক কিছুই আছে।একদম সাজানো গোছানো।ফারিহা ভাবে ও বর্তমানে কোথায় আছে? কিন্তু কিছুই বুঝতে পারে না!
তখন এই মেয়েগুলোর থেকে একটা মেয়ে এসে ফারিয়ার হাতে শাড়ি দিয়ে বললো,
“ম্যাম এটা পড়ে নিন”

ফারিহা একবার শাড়ির দিকে তাকিয়ে রাগী চোখে বললো, ” আমি পরবো না”

মেয়েটা হেসে বললো, ” ম্যাম আপনি যদি নিজের না পারেন তাহলে আমরা কিন্তু জোর করতে বাধ্য হবো”

“তোমরা কি আমাকে থ্যার্ট দিচ্ছো?”

তখন আরেকটা মেয়ে বললো, ” থ্যার্ট না ম্যাম।এটা স্যারের অর্ডার”

ফারিহা বুঝতে পারে ও যদি এখন শাড়ি না পড়ে তাহলে মেয়ে গুলো জোর করে পড়াবে।তাই কিছু না বলে মেয়েটার হাত থেকে শাড়িটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
ফারিহার মা না থাকলেও ও সব কাজ জানে।রান্না করা,ঘরের সব কাজ করা,এমন কি শাড়ি পড়তেও পারে। যদিও ফারিহার বাপি ওকে কাজ করতে দেয় না। তবুও ফারিহা মোটামুটি সবকিছুই পারে।
ফারিহা শাড়ি পড়ে বেরিয়ে আসে।লাল টকটকে বেনারসির মধ্যে গোল্ডেন কালারের ছোট ছোট ফুলের কাজ।খুব সুন্দর বেনারসিটা।
ফারিহা ওয়াশরুম থেকে বের হলে মেয়ে দুটো ফারিহাকে ধরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসায়। ফারিহা কিছু বলে না চুপচাপ বসে থাকে।কারণ ও জানে এখন কিছু বলে লাভ নেই।ফারিহা আশায় আছে হয়তো ওর বাপী ও কে বাঁচাবে!
মেয়েগুলো ফারিহাকে সাজাতে শুরু করে দে। গলায় সোনার নেকলেস। হাতে বালা,ডায়মন্ডের চুরি।ফারিহার কানে আগে থেকে ডায়মন্ডের ছোট ছোট একজোড়া দুল ছিল।একটা মেয়ের দুলগুলো খুলতে গেলে ফারিহা বাধা দিয়ে বললো,

“এগুলো খুলবেন না প্লিজ”

মেয়েটা হেসে বললো, “স্যারের অর্ডার স্যার যা যা দিয়েছে এই সবকিছু দিয়ে আপনাকে সাজাতে।আপনার বাবার বাড়ির কিছু যেনো না থাকে”

ফারিহার রাগে হাত মুঠো করে ফেলে।মেয়েটা দলগুলো খুললে ফারিহা বললো,
“এগুলো আমাকে দিন”

মেয়েটার কিছু না বলে ফারিহার হাতে দুল গুলো দিয়ে দে।ফারিহা দুলগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে। দুলগুলো ফারিহা এইচএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়াতে ওর বাপী ওকে দিয়েছিল।ফারিহা এতো দামী গিফট নিতে চায়নি কারণ ও সবসময় সিম্পল ভাবে থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু ওর বাপি ভালোবেসে ডায়মন্ডের দুল গুলো দিয়েছিল তাই ফারিহা আর কখনো এগুলো কান থেকে খোলেনি। আর আজকে দুলগুলো…!

মেয়ে দুটো ফারিহাকে একদম বউয়ের মতো সাজিয়ে দে। মাথায় একটা মুকুট দিয়ে লাল ওড়নাটা লাগিয়ে দে।ফারিহা আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে নিজেই অবাক হয়ে যায়। ওকে একদম বউ লাগছে!
ফারিহা তাচ্ছিল্য হাসে।এভাবে ওর বিয়ে হবে কখনো ভাবতে পারেনি।ফারিহার ভাবনার মাঝে একটা মেয়ে বলে উঠে,
“ম্যাম চলুন.. ”
ফারিহার কোনো কথা না বলে একদম রোবটের মতো হেঁটে মেয়েটার সাথে বাইরে যায়।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here