#শুকতারা (পর্ব-৩০)
#হালিমা রহমান
সকালে একচোট বৃষ্টি হলো। কাল থেকেই আবহাওয়া খুব একটা ভালো ছিল না। ভ্যাপসা গরমে উত্তাল কালবৈশাখির পূর্বাভাস।রাতটুকু পোহালো না। শেষ রাতের দমকা বাতাসে অস্বস্তিকর গরম এক লহমায় উড়ে চলে গেল অসীমে। সর্বত্র একটা চমৎকার শীতলতার ভাব।স্বস্তি জাগানো সুন্দর আবহাওয়া। ফ্যানের কৃত্রিম বাতাসের প্রয়োজন হয় না।বাইরের দমকা হাওয়ার স্পর্শে রুমের ভিতরের বদ্ধ বাতাসটুকু সজীবতার ছোঁয়া পেয়েছে। গা ছুঁয়ে দিলেই শিরশিরানি ভাব জাগে পুরো শরীরে। প্রকৃতির অপার দানের সাথে ক্যাটক্যাটে যান্ত্রিক ফ্যানের তীব্র বাতাস মধুর সাথে চিনির মিশ্রণের কাজ করে।এতো এতো শীতলতার দরকার নেই।গায়ের পশম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।দু’পা দিয়ে খাটের ওপাশে পায়ের নিচে পাতলা কাঁথা খুঁজলো ফয়সাল।কিছুই নেই।গরমের দিনে বিছানায় কাঁথা কে রাখে? ফয়সাল পেল না তাই।কিন্তু উষ্ণতারও ভীষণ প্রয়োজন।ঘুমের ঘোরে বিছানার বাম পাশেই হাত ফেললো।হাতড়ে হাতড়ে সূচিকে খুঁজলো।সেও নেই।কাঁথার মতো সেও অনুপস্থিত।অর্ধ ঘুম-অর্ধ জাগ্রত অবস্থায় মেজাজ গেল চটে।এই ঠান্ডা সকালে হাতের কাছে আরামদায়ক কিছু না পেয়ে ঘুমের ঘোরেই বিরক্ত হলো খুব।চোখ বুজে ঘুম জড়ানো গলা চড়িয়ে বউকে বললো,” সূচি,ফ্যানটা বন্ধ করে দিয়ে যাও তো।”
গলা উঁচু করার দরকার ছিল না।সূচি সবে গোসল সেড়ে বেরিয়েছে।চুলে প্যাঁচানো গামছাটা খুলতে খুলতে সুইচ টিপে ফ্যান বন্ধ করে দিলো।সকালের নাস্তা বানানো বাকি। এখন রান্নাঘরে যেতে হবে।জট পাকানো চুলে রুক্ষভাবে দু-একবার গামছার আঘাত করতেই ওপাশ থেকে ফয়সালের গলা শোনা গেল।সদ্য ঘুম ভাঙা গলায় প্রশ্ন করলো,” আজ এতো সকালে গোসল করলে যে?”
” আরে, গোয়ালঘরে যাওয়ার সময় পড়ে গেছি।মাটি পিচ্ছিল ছিল খেয়াল করিনি।”
” চোখ বন্ধ করে হাঁটলে এমনই হবে।এতো বড় একটা মানুষ কী করে আছাড় খেয়ে পড়ে?”
জানালার সাথে টাঙানো ময়লা সবুজ দড়িতে টানটান করে গামছাটা মেলে দিলো সূচি।খাটের কাছে এসে ফয়সালের হাত ধরে বললো,” বাইরে চলুন, আমি আরেকবার পড়ে দেখিয়ে দিচ্ছি বড় মানুষ কী করে আছাড় খায়।”
” ফাজিল মেয়ে।সবসময় কথার উত্তর ঠোঁটের কোনে রেডি থাকে?”
সূচির চোখে দুষ্টুমির ঝিলিক।বাঁশ পাতার মতো সরু ঠোঁটদুটোতে পাতলা হাসি।হাসি একটি সংক্রামক রোগ।মেয়েটার হাসির রেশ ছড়িয়ে পড়লো ফয়সালের ঠোঁটের কোনেও।প্রকৃতির মতো কাল ওদের দুজনের সম্পর্কটাও ছিল অস্থিতিশীল।কাল রাতে সূচির গোয়ার্তুমিতে অতিষ্ঠ হয়ে ফয়সাল ভেবেছিল রাগ করবে।ভয়ংকর রাগে দিশেহারা হয়ে বউয়ের সাথে কথাই বলবে না।কিন্তু সকাল সকাল আতিপাতি করে খুঁজেও রাতের সেই রাগের খোঁজ পেল না।স্নানশেষের সজীব মেয়েটা বাইরের প্রকৃতির মতোই সজীব।তার শিরশিরে হাসির ছটায় সম্পর্কের কালো মেঘগুলো ঠাই পায়নি।ভোজভাজির মতো হারিয়ে গেছে।আচমকা মনটা ভালো হয়ে গেল ফয়সালের। মনে হলো এমন সুন্দর সকাল ও অনেকদিন দেখেনি।বাইরের ঝড় শেষের স্নিগ্ধ পরিবেশের মতোই ওদের মাঝের সম্পর্কটাও স্নিগ্ধ এখন।এরকমটা হয় না সচরাচর। সূচিকে এখনই হাতছাড়া করতে ইচ্ছা করলো না।আরো কিছুক্ষন আঁটকে রাখার সাধ জাগলো মনে।মেয়েটার অনেক কাজ বাকি এখনো।ফয়সাল পরোয়া করলো না।কাজ থাকলে থাকুক।অভিমানের পাহাড় ভাঙার খুশিতে একটু ছেলেমানুষি করাই যায়।
” মশারি খুলে দেই?”
” খোলো।”
দুই দিকের গিঁট খুলে অর্ধেক মশারি খুলে ফেললো সূচি।খাটের উপরে উঠে বাকি অর্ধেক খোলার আগেই হ্যাঁচকা টানে তাকে বসিয়ে দিলো ফয়সাল।নরম কোলের উপর মাথা পেতে বললো,” চুলগুলো টেনে দাও না।”
” আহ,সরুন তো।কত কাজ বাকি। পারব না এখন।”
নেতিবাচক উত্তরেও প্রশ্রয়ের সুর।পারবে না বলেও অবিন্যস্ত কোঁকড়া চুলের গভীর থেকে গভীরে নরম দশটি আঙুল চালান করে দিলো। আস্তে-ধীরে চুল টেনে বললো,” কী ব্যাপার? আজ এতো আহ্লাদ?”
” আমার একটা বউ।বউয়ের সাথে আহ্লাদ করা জায়েজ এবং অবশ্য করণীয়।বউয়ের সাথে আহ্লাদ করলে আল্লাহ খুশি হন।”
” আমার অনেক কাজ।কাজগুলো শেষ করাও অবশ্য করণীয়।কর্মঠ মানুষ দেখলেও আল্লাহ খুশি হন।”
” আরেকবার কাজের দোহাই দিলে তোমার খবর আছে।তোমার স্বামী কে? কাজ নাকি আমি? মাঝে মাঝে তোমার এই কাজগুলোকে আমার সতীন মনে হয়।”
” ইশ, আসছে।সংসারটা মনে হয় যেন আরেকজনের।আপনার সংসারেই খাটছি।”
” ভালো করছো।এখন চুপচাপ চুলগুলো টেনে দাও।”
” এই যে পাঁচ মিনিট দেব আর।এর বেশি এক সেকেন্ডও না।”
” আচ্ছা।”
মোলায়েম হাতের স্পর্শে আবারো ঘুমের রাজ্যে ঢুলে পড়ছিলো ফয়সাল।ঘুমন্ত-জাগ্রতর মাঝে নির্জীবের মতো এক অবস্থা।শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্থবির, মস্তিষ্ক ঘোলাটে। কিন্তু এই ঘোলাটে মাথায় অনেক চিন্তাই আসছে।বারবার মনে পড়ছে কাল বিকালের কথা,রাতের কথা।কাল অনেকগুলো বেফাঁস কথা বেরিয়ে গিয়েছিলো না মুখ দিয়ে? অন্তরের গভীরে লালিত কথাগুলোই কী করে যেন বন্যার পানির মতো বেরিয়ে পড়লো। এই কথাগুলো ফয়সালের নিত্যদিনের সঙ্গী সেই বিয়ের আগ থেকে।সূচিকে ভালোলাগে না সেই বিয়ের আগ থেকে।কিন্তু সময়ের সাথে সাথে পরিস্থিতি বদলেছে খানিক।এখন আর আগের মতো খারাপ লাগে না মেয়েটাকে।দেখতে দেখতে চোখ সওয়া হয়ে গেছে।একটু গুছিয়ে শাড়ি পরলে,খিলখিলিয়ে হেসে গড়িয়ে পড়লে,এলোমেলো চুলগুলো খুলে রাখলে বেশ লাগে দেখতে।চোখের আরাম পাওয়া যায়।
তবুও একমাত্র বউয়ের আহামরি রূপের অভাব এখনো কাঁটার মতো খচখচ করে মনে। তাই তো হাটে-বাজারে সাথে নিয়ে একটু ঘুরতে যেতে পারে না।বিয়ের পর বিবাহিত বন্ধু-বান্ধবদের বাড়ি থেকে দাওয়াত এসেছে অনেক।ফয়সাল কবুল করেনি দাওয়াত।ভরা মজলিশে নিজের পাশে সূচিকে দেখলে এখনো মন কেমন করে।সুন্দরী ভাবিদের মাঝে নিজের বউটা বড্ড বেমানান।হাজারটা পদ্মফুলের মাঝে সূচিকে ঠিক অযত্নে রাখা কলমী ফুলের মতোই লাগে।অনুজ্জ্বল,সুন্দরীদের সভায় ফিকের প্রতিনিধি। চার দেওয়ালের মাঝেই যাকে মেনে নিতে টানা এক মাস সময় লাগলো,তাকে এই দর্শনচারী সমাজে প্রতিষ্ঠা করা বড়ই কঠিন।সবসময় মনের মধ্যে কেমন একটা বিশ্রী ভয় হয়। নিজের অগাধ সৌন্দর্যের পাশে এই ময়লা মেয়েটাকে দেখে সবাই কী বলবে?অনেকগুলো বিচারকের চোখ ফয়সালের রুচির দিকে আঙুল তুলবে না?
কিন্তু এসব কেবল তার মনের কথা।এ শুধু সে জানে আর মহাপরাক্রমশালী বিধাতা জানেন।যিনি পরিকল্লনা করেই মেয়েটাকে ভাগ্যের সাথে জুড়ে দিয়েছেন।মনগহীনের কথাগুলোই কাল মুখ দিয়ে ফটফট করে বেরিয়ে যাবে, তা কখনো ভাবেনি ফয়সাল।চোখ বুজে হিসাব-নিকাশ করে দেখলো,কালকের উষ্ণ আবহাওয়ার মূল কারণ ছিল এই বেঁফাস কথাগুলোই।মেয়েটা শুনেছে, তারমানে তার মন খারাপ হয়েছে।হওয়াটাই অবশ্য স্বাভাবিক।সূচির জায়গায় ফয়সাল থাকলে তার অবস্থাও ঠিক এমন হতো।একবার কি ক্ষমা চাওয়া উচিত? কালকের আচরণটার জন্য একবার ছোট্ট করে সরি বললে কেমন হয়?বিবাহিত এক বন্ধুর কাছে শুনেছে, ঘরের বউয়ের সামনে একটু নরম হয়ে কথা বললেই তারা গলে যায়।বিশাল ভুল করেও একবার মাথা নিচু করে সরি বললেই তারা দুনিয়াটাকে স্বর্গ ভাবে।সত্যিই কি তাই? একবার কি ক্ষমা চাওয়া উচিত?
” এই উঠুন,আর পারব না।”
ফয়সালের কোনো হোলদোল নেই।সূচি তার গালে আলতো হাত বুলিয়ে বললো,” কি হলো?ঘুমিয়ে গেছেন?”
” সরি সূচি।”
ভয়াবহ অবাক হলো সূচি।কোলের উপরে পেতে রাখা ফয়সালের ভারী মাথাটা নিজের কোল থেকে নামিয়ে বললো,” সরি কেন?”
” কালকের জন্য।আমার আসলে তখন কী যেন হয়েছিলো।আজেবাজে যা বলেছি তা জেনে-বুঝে বলিনি।ঘোরের মাঝে মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে।”
একটুখানিই তো ভুল স্বীকার! এতো ভালো লাগলো সূচির! সকাল সকাল মন ভালোর পারদটা আরেকটু বেড়ে গেল।এবাড়িতে ভুল করে ভূল স্বীকার করে কতজন? দুই-তিন সেকেন্ড ভেবে দেখলো,এর আগে ফয়সালও কোনোদিন ভুল স্বীকার করেনি।
” বিয়ের আগে তোমাকে আমার সত্যিই পছন্দ ছিল না সূচি।কেন ছিল না, সেটা জানতে চেয়ো না।সেটা আমাদের মা-ছেলের ব্যাক্তিগত বিষয়।তবে আমাদের বিয়ের পর অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে।এই এপ্রিলে চার মাস হবে বোধহয়।আমি সব মেনে নিয়েছি,সংসার করছি,তোমার চাহিদাগুলো পূরণ করছি,তুমি আমার চাহিদাগুলো পূরণ করছো, সংসার করছো,আর কী চাই? সাধারন পরিবারের মতোই আমাদের দিন চলছে।সেখানে আগের কথাগুলো ধরে রেখে মন কষাকষির কোনো মানে হয় না।”
” সংসার করছেন ঠিক আছে কিন্তু এখনো একটুও ভালোবাসতে পেরেছেন?”– কথাটা জ্বিভের আগায় এনেও গিলে ফেললো সূচি।সত্যিটা সে নিজেও জানে।অকারণে প্রশ্ন করে কী লাভ? ফয়সাল তার প্রথম প্রেম।ইশ! কি প্রেম ছিল বিয়ের আগে।সে ভাবতো পৃথিবীতে তার প্রেমের তুলনা আর হয় না।তার মতো ভালোবাসতে আর কেউ পারে না।বিয়ের পর তার সংসারটা হবে মাটির পৃথিবীতে এক টুকরো স্বর্গ।ছোট থেকে পুতুল খেলায় অভ্যস্ত পাঁচ-দশটা বাঙালি মেয়ে যেমন ভাবে,সূচির কল্পনাও ঠিক তেমন ছিল।কিন্তু এ ঘরে পা রেখে মেয়েটা বুঝলো, পুতুল খেলার সংসার ও বাস্তবের সংসারে অনেক তফাৎ।পুতুলের প্রাণ নেই বলেই পুতুলের ঘরে এতো সুখ।বাস্তবের মানুষগুলোর দেহে প্রাণ আছে।এখানে হাজারটা মন,হাজারটা চাহিদা,হাজার রকম রুচি।বিয়ের পর থেকেই ফয়সালের নির্লিপ্ততা,নিরাসক্ত ভাব, অসমর্থন,ভুল বোঝাবুঝি,অসহযোগিতা, কঠিন বাক্যবাণ—সবকিছু ছাপিয়ে আগের সেই প্রেমটা ঠিক ডানা ঝাপটাতে পারেনি।ডানাভাঙা পাখির মতো গুটিয়ে গেছে এক জায়গায়। যে সম্পর্কে শ্রদ্ধা-সম্মান-শান্তি থাকে না, সেখানে আসলে প্রেম-ভালোবাসা বেশিদিন থাকে না। সূচি কাল রাতে শুয়ে শুয়ে চিন্তা করেছে,ফয়সালের আচরণের সাথে যদি আগের থেকেই পরিচয় থাকতো;তবে কি সে এতো ভালোবাসতে পারতো? কখনোই না। উত্তরটা ঘুরে-ফিরে একই আসে।তখন আরেকটা প্রশ্নও মাথায় আসে। তাহলে বিয়ের আগে সূচি কি কেবল ফয়সালের রূপেই মজেছে? অপরূপ রূপের প্রেমে পড়েই প্রতি মোনাজাতে প্রিয়তমকে চাইতো? তাই হবে।যত ভাবে, ততো দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে ভিতর থেকে।হ্যাঁ, সেটাই হবে।রাস্তাঘাটে চলতে-ফিরতে কত ছেলেই তো চোখে পড়তো।কালো,মোটা,বেঁটে,বাঁশের মতো লম্বা– কত ছেলে।কিন্তু ফয়সালের সৌন্দর্য ছাপিয়ে যেতে পারেনি বলেই হয়তো আর কাউকে ভালো লাগেনি।আমরা মুখে যত কিছুই বলি না কেন,সেই ধবধবে চামড়া,মন স্নিগ্ধ করা রূপই আমাদের পছন্দ।আমাদের সমাজ এখনো সেই আগের তত্ত্বের উপরেই দাঁড়িয়ে আছে।আগে দর্শনচারী,পরে গুণ বিচারী। সূচির সৌন্দর্যপ্রিয় চোখের দোষ না থাকলে ফয়সালের দোষও দেওয়া যায় না।তার একটি সুন্দরী বউয়ের শখ থাকবে,এটাই স্বাভাবিক।বরং শখ না থাকাটাই অস্বাভাবিক। যত ভাবলো ততোই একটা বাজে হীনমন্যতা আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো যেন।রাতের অন্ধকারেই সিদ্ধান্ত নিলো এ নিয়ে আর একটাও কথা বলবে না সূচি।মন খারাপও করবে না।ফয়সালের পছন্দ- অপছন্দের দিকে আঙুল তোলার সে কে?
” ও সূচি”
” হুম ”
” এখনো রাগ করে আছো?”
” না,আমার রাগ কম।কালকেও রাগ করিনি কেবল একটু মন খারাপ হয়েছিলো।”
” আমি ভেবেছিলাম তুমি আমার সাথে আর কথাই বলবে না।”
ফয়সালের গোটা মুখে চোখ পেতে সূচি বললো,” কথা বলব না কেন? আপনার পছন্দ-অপছন্দ থাকতেই পারে।আমাদের তো প্রেমের বিয়ে না যে সব দুজনের মন মতো হবে।এটা এরেঞ্জ ম্যারেজ,এখানে এসব পছন্দ-অপছন্দের হতাশা একটু থাকেই।”
খুব খুশি হলো ফয়সাল।আনন্দের ঠ্যালা-ধাক্কায় উঠে বসলো।আবেগের আতিশয্যে বউয়ের কপালে বাসি, আধোয়া ঠোঁট ছুঁইয়ে বললো,” এই তো লক্ষ্মী মেয়ে।সবসময় এরকম বুদ্ধি করে কথা বলবা।”
” এবার ঢং বাদ দিন।আমার সত্যিই কাজ আছে।”
” আচ্ছা দিচ্ছি।কিন্তু সকাল সকাল আমার মনটা ভালো করে দিলে তো তাই এখন আর বাদ দিতে ইচ্ছা করছে না।”
” অনেক খুশি হয়েছেন?”
” অনেএএক।”
” তাহলে এই খুশিতে আমার একটা ইচ্ছা পূরণ করুন।”
” একটা না,আজকে তোমার হাজারটা ইচ্ছা পূরণ করব।কী লাগবে তোমার? শাড়ি,চুরি,জুতো নাকি কসমেটিকস?”
” বড় আপার কাছে নিয়ে যান না আমাকে।আমি বহুদিন আপাকে দেখি না।আপা নিশ্চয়ই এখন অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছে।জানেন, আপার জন্য আমার অনেক ভয় হয়। একা একটা বাড়িতে থাকে,ভাইয়া থাকে না,কেউ থাকে না।মরে পড়ে থাকলেও কেউ বুঝতে পারবে না।আপার ফোন নম্বরটাও আমার কাছে নেই।এগুলো আমার মুখস্ত থাকে না।থাকলে আমি প্রতিদিন ঘন্টাখানেক কথা বলতাম। আগে তো তবু লুকিয়ে-চুরিয়ে যেতে পারতাম কিন্তু এখন হয় না।একমাত্র আপনিই নিয়ে যেতে পারেন।নেবেন?”– শেষদিকে কন্ঠ একটু ভিজে এলো সূচির।একা বাড়িতে অভাগা ভূমির দুর্দশার কথা মনে করেই হয়তো এই অবস্থা।নিজের দুঃখের কথা বলতে বলতে কোথায় হারিয়ে গেল সূচি। খেয়াল করলো না, মুখোমুখি বসে থাকা লোকটার মুখ সহসা থমথমে হয়ে গেছে।কিছুক্ষণ আগের হাসি-খুশি ভাবটা কেটে গিয়ে একরাশ মেঘ জমেছে মুখে।
” কি গো,নিয়ে যাবেন?”
” আম্মার কাছ থেকে অনুমতি মিললে নিয়ে যেতেই পারি।কিন্তু আম্মা বোধহয় অনুমতি দেবেন না।ভূমি পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে ওকে আম্মা খুব একটা পছন্দ করে না।আমাদের হঠাৎ বিয়ের কথা মনে নেই তোমার? সেখানেও তো ভূমির প্রসঙ্গ টেনেই আম্মা তড়িঘড়ি করে বিয়ে দিয়ে দিলেন।বোঝো এখন,কত অপছন্দ!”
” হাহ! এইটুকু কথাও আম্মাকে জিজ্ঞেস করতে হয়? রোগী দেখা সুন্নত।আমার আব্বার থেকেও আম্মা বেশি কঠিন? আমি লুকিয়ে কতদিন বড় আপার সাথে দেখা করেছি! আব্বার চোখ ফাঁকি দিয়ে আপার জন্য খাবার নিয়ে গেছি।আর আপনি পারবেন না? আম্মাকে এটুকু কথা না জানালেই হয়।বলবেন,আমাকে নিয়ে ঘুরতে বেরোচ্ছেন।ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়।নিয়ে যাবেন? আধঘন্টা থেকেই চলে আসব, প্রমিস।আপাকে আমার অনেক কথা বলার আছে।”
সূচির দেখানো একটা পথও ভালো লাগলো ফয়সালের।গা ঝাড়া দিয়ে বললো, ” পাগল তুমি?ভূমির বাড়ি আমাদের বাড়ির কাছেই।যদি কেউ দেখে ফেলে? যদি আম্মাকে আমাদের কথা এসে বলে দেয়? আমাকে এদিকের সবাই এক নামে চেনে,ভূমির ঘটনাটাও সবাই জানে।আম্মার কানে নিশ্চিত খবর চলে আসবে।আমি এখন অবধি একটা কাজও আম্মার কথার বাইরে করিনি।আম্মা ভালো-খারাপ যা বলেছে, তাই মুখ বুজে মেনে নিয়েছি। আমাকে এসব অবাধ্যতার কথা আর কখনো বলো না সূচি।আম্মার কথার বাইরে একটা পা ফেলার সাহস আমার নেই।অন্তু ভাই যখন এসেছিলো তখনকার কথা মনে আছে তোমার? একদিন রাতে তোমাকে বিরতি দিতে চেয়েছিলাম।আম্মাকে তোমার মিথ্যা জ্বরের গল্প শুনিয়েছিলাম।সকাল হতেই আম্মা কিন্তু ঠিকই ধরে ফেলেছে।তারপর আমার ইজ্জতটাও আর রাখলো না।আমাদের আম্মা অনেক চালাক মানুষ,সূচি।তার কথার বাইরে আমি এখনো চলিনি,ভবিষ্যতেও চলব না।নিজের মনমতো চলার বুদ্ধি বা সাহস,কোনোটাই আমার এখনো জন্মায়নি।আমি কী করতে পারি বলো?”
মুখের ভিতরটা মুহূর্তে তেঁতো হয়ে গেল সূচির।সহসা বহুদিন আগের অন্তুর চিঠির কথা মনে পড়ে গেল।সেও তো বলেছিলো,গোয়ালের গরুগুলোর যেমন কোনো নিজস্বতা নেই তেমনি এই শব্দটা ফয়সালের মাঝে নেই।এটা তো পুরোনো কথা।পৃথিবী কাঁপানো দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ভিতর থেকে।ফয়সালের চোখে চোখ রেখে বললো,” গরু মানব! সকালের নাস্তায় আপনি ভুষি খাবেন নাকি ঘাস? একটু ঘাস ভেজে দেই? খাবেন?”
_____________________________
সূচির মনটা আজ অতিরিক্ত ভালো।কতদিন পর বাড়ি যাবে! তাছাড়া, বৌভাতের পর এবাড়িতে এই প্রথম স্বাভাবিকভাবে বাবা আসবে।বাবা-মায়ের প্রতি আহামরি শ্রদ্ধা না থাকুক,রক্তের টান তো ঠিকই আছে।তাদেরকে বহুদিন পর চোখের দেখা দেখবে,হাসিমুখে কথা বলবে,এই বা কম কীসের?
উঠোনের শুকনো মাটি শেষ রাতের বৃষ্টিতে ভিজে গোসল করেছে।এখানে পিচ্ছিল-ওখানে পিচ্ছিল।সকালের ভুলটা করলো না সূচি।পা টিপেটিপে হাঁটলো।আম গাছের ছোট আমগুলো সব ঝরে গেছে বাতাসের দাপটে।অবহেলায় উঠোন জুড়ে ছড়িয়ে আছে তারা।শ্বাশুড়ির চোখ বাঁচিয়ে ধীরে-ধীরে হুমায়রার রান্নাঘরের কাছে এসে দাঁড়ালো সূচি। গলা নিচু করে বললো ” ভাবি,তোমার কাছে আদা-রসুন বাটা আছে?”
হুমায়রা রান্না করছিলো।সূচির মতোই নিচু গলায় বললো,” হ, আছে।নিবা?”
” হ্যাঁ, একটু দাও।আমাদের শেষ।এখন আর বাটতে ভালো লাগছে না।সময়ও নেই।”
আঁচলের আড়াল থেকে বের করা ছোট্ট বাটিতে বেশ খানিকটা আদা-রসুন ঢেলে দিলো হুমায়রা।
” খালু কখন আসব? তুমি আজকেই যাইবা?”
” হ্যাঁ, ভাবি।আম্মা একটু আগে ফোন দিয়েছিলো।আব্বা রওনা দিয়েছে।একটু পরেই এসে পড়বে হয়তো।”
” সব রান্না শেষ?”
” মুরগী আর পোলাওটা বাকি।”
” আচ্ছা যাও,রাইন্ধা ফালাও।আম্মা দেখলে আবার তোমার খবর নিব।”
” এই তো যাচ্ছি।”
রান্নাঘরে পা রাখতেই রোমেলা বানুর মুখোমুখি হতে হলো। আঁচলের নিচে বাটিটাকে আরেকটু গোপন করে নিলো সূচি।রোমেলা বানু ভ্রু কুঁচকে তাকালেন।কঠিন গলায় প্রশ্ন করলেন,” কই গেছিলা?”
” বাইরে আমার শাড়িটা রোদ দিতে গিয়েছিলাম,আম্মা।”
” সব রান্ধা শেষ?”
” মুরগী, পোলাও বাকি শুধু।”
” তোমার পোলাও কিন্তু খুব একটা স্বাদের হয় না।কেমন ভিজা ভিজা থাকে।আজকে ভালো কইরা রাইন্ধো। আমার ইজ্জত মাইরো না।”
” পোলাওটা গ্যাসে রেঁধে ফেলব আম্মা।লাকড়িতে ঠিক আন্দাজ করতে পারি না আমি।পাতিলা চুলায় কম রাখলে ভিজা থাকে,বেশি রাখলে পুড়ে যায়।তাই ভাবছি আজকে গ্যাসেই রাঁধব।”
” হ,যাওয়ার আগে শেষ কইরা যাও সব।সিলিন্ডারের দাম জানো? এগুলি কি তোমার বাপের বাড়ি থেকা আসে? আমার পোলাডারে ডুবানের মতলব সব।সংসারের আয় বুঝতে শিখো।এক হাতে কামাই করে, বুঝছো না?আমার পোলায় জমিদার না।লাকড়িতেই রান্ধো।”
আদেশ দিয়ে রান্নাঘর ছাড়লেন রোমেলা বানু।রান্নাঘরের ছোট্ট জানালা দিয়ে ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ আসছে।ভুড়ভুড় করে ঢুকে যাচ্ছে নাক বেয়ে ভিতরের দিকে।সুন্দর গন্ধটাই মন-মস্তিষ্কে আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছে একদম।রোমেলা বানু পিছু ফিরে দেখলেন না।দেখলে বুঝতেন,একজোড়া রক্তজবার মতো টকটকে লাল আগুনচোখ তাকে ভস্ম করে দেওয়ার চেষ্টায় মত্ত।
মমিন শেখ মেয়ের বাড়ি এলেন সাড়ে এগারোটায়।একাই এসেছেন।হাত ভর্তি মিষ্টি,ফল,পান-সুপারি।হাসিমুখে প্রথমবারের মতো মেয়ের শ্বশুড়বাড়িতে মহাসমারোহেই এসেছেন।খামারের কাছে ফয়সালের সাথে দেখা হয়ে গেল।শ্বশুরকে সালাম জানিয়ে বেশ সম্মানের সাথেই বাড়ি নিয়ে এলো সে।মমিন শেখ অতিরিক্ত খুশি হয়ে গেলেন জামাইয়ের ব্যবহারে।সোনার টুকরা একটা ছেলে।অথচ মেয়েটা এদের সাথেই ঝামেলা করে।
বসার ঘরেই রোমেলা বানুর সাথে দেখা। শ্রদ্ধায় বিগলিত হয়ে মাথা নুইয়ে সালাম দিলেন মমিন শেখ।হাসিমুখে বললেন,” ভালো আছেন বেয়াইন?”
” এই তো ভাই, আল্লাহ রাখছে শান্তি-অশান্তির মাঝে।আপনে কেমন আছেন? বেয়াইনের কী খবর?”
” আলহামদুলিল্লাহ, সবাই ভালো।”
” বেয়াইনরে নিয়া আসতেন।”
” আসবনি পরে।”
ফয়সাল চেয়ার এগিয়ে দিলো মমিন শেখের কাছে।নরম গলায় বললো,” বসেন আব্বা।আমি সূচিকে ডাক দেই।”
দু-হাত ভর্তি মিষ্টি-ফল নিয়ে দ্রুতপায়ে রান্নাঘরে ঢুকলো ফয়সাল।সেগুলো ফ্লোরে রাখতে রাখতে বললো,” এই আব্বা আসছে।যাও তুমি।”
সূচি তখন পোলাও নিয়ে যুদ্ধ করছিলো।বাবার কথা শুনে মুখটা ঝলমল করে উঠলো।তড়াক করে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,” আব্বা এসেছে? আগে বলবেন না।”
শাড়ি সামলে দৌড়ে বেরিয়ে গেল সূচি।এতো খুশির কারণ আসন্ন মুক্তির আনন্দ নাকি বাবাকে দেখার তৃষ্ণা তা বোঝা গেল না।পিছন থেকে ফয়সালের সাবধানী স্বর শোনা গেল,” সাবধানে সূচি,সকালের মতো পড়ে যেয়ো না আবার।”
বসার ঘরে পৌঁছে বাবার বুকে আছড়ে পড়লো সূচি।ঠিক যেন বেলাভূমিতে একটা চঞ্চল ঢেউ আছড়ে পড়লো। শত হলেও মমিন শেখের পরিচয়,তিনি একজন বাবা।হৃদয়ের গভীরটা শান্ত হলো।একটা সুন্দর শীতলতায় জুড়িয়ে গেল সবটা।মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,” কেমন আছোছ মা?”
” ভালো। তুমি ভালো আছো? আম্মার শরীরটা ভালো আছে?”
” হ, সবাই ভালো আছে।তুই এমন শুকায়া গেছোছ ক্যান? নিজের প্রতি যত্ন নেছ না?”
উত্তরটা সূচিকে দিতে হলো না।পিছন থেকে রোমেলা বানু দিলেন।ফট করে বললেন,” মাইয়ারে খাওন-দাওন শিখাইছেন কিছু? চড়ুই পাখির মতো একটুখানি খায়।আমার ঘরে কি খাওনের অভাব? রাঁনতেও জানে না,খাইতেও জানে না।সূচি,আগে ঠান্ডা শরবত-টরবত দাও বেয়াইরে।রোইদ দিয়া আইছে,গরম লাগতাছে নিশ্চয়ই।”
” এই তো দিচ্ছি আম্মা।”– একগাদা স্বস্তি নিয়েই ঘর ছাড়লো সূচি। মনে মনে একটু ভয় হচ্ছিলো শ্বাশুড়িকে নিয়ে।বাবা-মায়ের পিছনেই যা বলে,সামনাসামনি দেখা হলে না জানি আরো কত কিছু বলে ফেলে।সকাল থেকে এই ভয়েই মরছিলো।কিন্তু না,এখন অবধি সব ঠিকঠাক।বিদায়ের আগ পর্যন্ত এই পরিস্থিতির কামনাই করলো সূচি।
ঠান্ডা-গরম পানিতে লেবু চিপে তিন গ্লাস লেবুর শরবত বানিয়ে ফেললো। নুডুলস রান্না করাই ছিল।আরেকটু গরম করে তিনটে পিরিচে সাজিয়ে নিলো।মাল্টা,আপেল,পেয়ারা,মিষ্টি পিরিচ রাখতেই পুরো ট্রে ভরে গেল।এক হাতে নাস্তাগুলো সাজাতে একটু দেরিই হয়ে গেল সূচির। সাবধানে, শাড়ি সামলে বসার ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।কিন্তু সাজানো ট্রে নিয়ে বসার ঘরে পা রাখার সুযোগ হলো না।পা আটকে গেল চৌকাঠে।ভিতর থেকে ভেসে আসা মৃদু গলার কথাগুলো পুরো গায়ে আগুন ধরিয়ে দিলো যেন।
” আমগো বসার ঘরটা একটু বেশিই খালি বেয়াই।এই নিয়া আপনার মেয়ের আফসোসের শেষ নাই।একসেট সোফার শখ তার অনেক।আমার লগেও কয় মাঝে মাঝে।আমি শুইন্না হাসি।বউ মানুষগো কি এতো শখ করলে চলে? জামাইয়ের আয়টাও তো দেখতে হইব।একজনের কামাই।কিন্তু এখনকার মেয়েরা তো এগুলা বুঝেই না।”
” হ,বেয়াইন ঠিক বলছেন। এখনকার পোলাপাইনের বুদ্ধি কম।”
রোমেলা বানু যেন শুনতেই পেলেন না।নিজের কথার রেশ টেনে বললেন,” এই তো কালকেই আমগো পাশের বাসার টুটুলের বউ একগাদা জিনিস আনছে বাপের বাড়ি থেকা।টুটুলের মায়ে কত গর্ব কইরা সব দেখাইলো আমগোরে।আমরা তো আবার এমন না।চাওয়ার ধাঁত আমগো নাই। আপনের মেয়ের ঘর, আপনে মন চাইলে সাজায়া দিবেন।আমি কি আপনেরে না কমু? এই আপনেই যদি সূচির শখ পূরণ করতে চান,তাইলে কি আমার কিছু কওয়ার আছে? আপনে দিলে আপনের মেয়ের থাকব।এটা তো আর শরিকের ঘর না। আপনে দিলেও কিছু কমু না, আপনে না দিলেও কিছু কমু না।এটা আপনের আর সূচির বিষয়।আসলে চাওয়া-পাওয়ার মইধ্যে আমরা নাই।আমি একদম বিনা-পয়সায় ছেলে দুইটারে বিয়া করাইছি।দেশচল হিসাবেও কিছু চাই নাই।চাইছি ভাই?”
ইঙ্গিতটা এতোই সুস্পষ্ট যে মমিন শেখকে চুপ করতে হলো।বলার মতো কিছু খুঁজে পেলেন না তিনি।ঘরে সেকেন্ডের নিস্তব্ধতাকে খানখান করে দিয়ে থপথপ করে সূচি ঢুকলো। সর্বাঙ্গ দিয়ে রাগ-জেদ যেন ফুটে বেরোচ্ছে।নাস্তার ট্রে টেবিলে রাখার সময় রোমেলা বানুকে উদ্দেশ্য করে ঠান্ডা গলায় বললো,” আমাদের বসার ঘরে একসেট সুন্দর সোফা থাকলে খুব মানাতো, তাই না আম্মা?”
” হ।বেয়াইরে তোমার শখের কথাই বলতাছিলাম।”
শরবতের গ্লাসটা নিজের বাবার দিকে এগিয়ে দিলো সূচি।প্রসন্ন গলায় বললো,” আব্বাকে বলার কী দরকার আম্মা? আমি আপনার ছেলেকে বলেছি কাল।উনি বলেছেন, সোফা বানিয়ে দেবেন।আমি তো আর লাখ টাকার শখ করিনি।”
তেঁতে উঠলেন রোমেলা বানু।এতোক্ষণের অভিনয় ভুলে উত্তপ্ত গলায় বললেন,” হাজার টাকার শখ করছো।ফয়সালের এতো সামর্থ্য কই?”
” আমি তো আর গলায় ছুঁড়ি ধরছি না।যেদিন সামর্থ্য হবে সেদিন বানিয়ে দেবে।কোনোদিন সামর্থ্য না হলে শখ পূরণ করার দরকার নেই।আমি আমার স্বামীর আয় বুঝি।হাজারটা শখ মাটিচাপা দিতে পারব তার জন্যে।”
তৃতীয় গ্লাসটা স্বামীর দিকে বাড়িয়ে দিলো সূচি।ফয়সাল মাথা নিচু করে বসেছিল।মা-বউয়ের মিথ্যার প্রদর্শনীতে তার অস্বস্তিবোধ হচ্ছে। এখান থেকে পালাতে পারলে বেঁচে যায় সে।
” কী হলো? গ্লাসটা ধরুন।”
সূচির চোখে চোখ পড়লো।টকটকে লাল ডাগর ডাগর দুটো চোখ,কঠিন মুখ।সারা মুখে ছড়ানো একটাই প্রশ্ন,” কাল রাতে কী বলেছিলাম আপনাকে? এবার বিশ্বাস হলো? আব্বা যাক,খবর আছে আপনার।”
চলবে……