শুকতারা পর্ব-৪৩

0
1137

#শুকতারা (পর্ব-৪৩)
#হালিমা রহমান

বাড়িতে পা দিতেই চঞ্চল হয়ে উঠলো ইশতিয়াকের দুটো চোখ।রান্নাঘর থেকে উড়ে আসছে রান্নার তীব্র সুঘ্রাণ। নাসারন্ধ্রে ঢুকে সুড়সুড়ি দিচ্ছে এরা।ক্ষুধা পেটে চনমনিয়ে উঠলো তার মন। চোখ-মুখ বন্ধ করে প্রায় উড়ে চলে গেল রান্নাঘরে।ভূমি রান্না করছে। যেয়ে পাশে দাঁড়িয়ে কিছুটা বিস্মিত স্বরে প্রশ্ন করলো, ” এখন আবার রান্না করছো যে? কী দরকার ছিল এসবের? কিছুতেই কি একটু শান্ত হয়ে বসতে পারো না?”

” উঁহু, পারি না।গন্ধ বেরিয়েছে ভুনা খিচুরির? কালারটা সুন্দর হয়েছে না? তুমি একটু এখানে বসো তো।এক টুকরা মাংস খেয়ে বলো কেমন হয়েছে। ঝাল-টাল হয়েছে কিনা দেখো তো।”

চুলার পাশ থেকে একটা বাটি নিয়ে তাতে দুই টুকরা মাংস নিলো ভূমি।তার ছেলেমানুষি উচ্ছ্বাস দু-চোখ দিয়ে গিলছে ইশতিয়াক। বহুদিন পরে বউকে একটু অন্যরকম লাগছে আজ।ভূমির পাশেই পিঁড়ি পেতে বসলো সে।

” এই নাও, খেয়ে দেখো।মুখে খারাপ লাগলে বলবে কিন্তু।”

এক টুকরা মুখে পুরে বউয়ের সামনে চোখ-মুখের নাটকীয় ভঙ্গি করলো ইশতিয়াক। এদিক-ওদিক চিবিয়ে আঙুল ঘুরিয়ে-প্যাঁচিয়ে বিভিন্ন আকার-ইঙ্গিত করে বললো, ” ফার্স্ট ক্লাস।ইট’স জাস্ট সফট,ওয়ান্ডারফুল, বিউটিফুল,জুসি…

” সোনার চাঁদ,কত ঢং শিখেছো তুমি! সারাদিন ফুড ব্লগারদের ভিডিও দেখে দেখে মাথাটা গেছে।দাও বাটি দাও,খেতে হবে না আর।”

বউয়ের কপট রাগ দেখে ফিক করে হেসে ফেললো ইশতিয়াক।হাতের ঘড়িটা খুলতে খুলতে বললো, ” কিন্তু এই বেলায় আবার এসব কেন? খুব খেতে ইচ্ছা করছে তোমার?”

” না, সূচি এসেছে।”

” সূচিই!! সত্যিই! কোথায় ও? ফয়সালও এসেছে?”

” না,একাই এসেছে।মাঝের ঘরে ঘুমাচ্ছে।”

” তাই নাকি,খেয়ালই করলাম না।তুমি আমাকে আগে ফোন দিয়ে বললে না কেন? কিছু একটা নিয়ে আসতাম হাতে করে।মেয়েটা কতদিন পর এলো! এই অসময়ে ঘুমাচ্ছে কেন? ডাক দাও যেয়ে,উঠুক।”

” না থাক,ঘুমাক।কত রাত ভালো করে ঘুমায়নি কে জানে! যখন ইচ্ছা হয় তখন উঠবে।”

ভূমির কথার মানে বুঝলো না ইশতিয়াক। কপাল কুঁচকে বললো, ” মানে?”

” তুমি ফ্রেশ হয়ে এসে বসো।আমি সব বলছি।”.

কৌতুহলী হয়ে উঠলো ইশতিয়াক।ওর অনুপস্থিতিতে কিছু একটা হয়েছে তা বেশ বুঝতে পারছে।হাত-মুখ ধোয়ার কথা মনেও রইলো না।ভূমির দিকে ঘন হয়ে বসে বললো, ” খুলে বলো সব। কী হয়েছে?”

একটুও কাট-ছাট করলো না ভূমি।সূচির মুখ থেকে যা যা শুনেছে তা সব উগড়ে দিয়েছে স্বামীর সামনে।আজ সূচি যে অবস্থায় এ বাড়িতে পা রেখেছে,তার বিশদ বর্ণনাও করলো।সূচিকে সে নিজে যা যা বুঝিয়েছে তাও বললো।সব শুনে বেশ আশ্চর্য হয়ে গেল ইশতিয়াক।বিস্ময়ের রেশ ফুটে উঠলো তার মুখে।মাথা নেড়ে বললো, ” সব বুঝলাম।কিন্তু তোমার বাবার কান্ড কিছুই বুঝলাম না।তিনি কি পাগল? এমনিই মেয়েটাকে বিয়ে দিয়েছে ছোট বয়সে।তার উপরে যখন দেখছে মেয়ে সুখী না তখন নিজের কাছে নিয়ে আসবে না? আজব!”

” বাবার চক্ষুলজ্জার ভয় বেশি।তাছাড়া একগুঁয়ে মানুষ,নিজে যা ভালো বোঝে তাই করে।কিন্তু তুমি তোমার কথা বলো।আমি তোমাকে না জিজ্ঞেস করেই সূচিকে এখানে থাকতে বলেছি।কাজটা কি ঠিক করেছি? সূচি এখানে থাকলে তোমার সমস্যা হবে না তো?”

মনে মনে খুব আহত হলো ইশতিয়াক। বউয়ের দিকে চেয়ে করুণ গলায় বললো, ” তুমি আমাকে এমন ইতর মনে করো? সূচি কি আমার পর? ও থাকলে আমার সমস্যা হবে কেন? ও তো আমার ছোট বোনের বয়সী। আজ যদি আমার একটা ছোট বোন থাকতো তাহলে কি আমি ফেলে দিতে পারতাম? না,তুমি আমাকে চিনতে পারোনি ভূমি।”

দ্বিধার পাথরটা বুকের উপর থেকে এক লহমায় নেমে গেল।স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে ভূমি বললো, ” বাঁচালে ইশতি।তোমার উপর আমার এই বিশ্বাসটাই ছিল। তবু মানুষের মন,একবার নিশ্চিত হয়ে নেওয়াই ভালো।”

কিছুক্ষণ আপনমনে চুপচাপ আগুনের দিকে চেয়ে রইল ভূমি। তারপর নিজের মনে বললো, ” ওরা যে আমার সূচিটাকে কত বদলে দিয়েছে তা তুমি নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করবে না ইশতি।আমি নিজেই চিনতে পারিনি প্রথমে।ওর ভিতর-বাহির ঘুণপোকায় খেয়ে দিয়েছে একদম।আমি শুধু চিন্তা করি, আমার ছোট্ট সূচিটা এসব সহ্য করলো কী করে? আমি হলেও পারতাম না, বিশ্বাস করো।”

বউয়ের কন্ঠের কাঁপনে বিচলিত হয়ে উঠলো ইশতিয়াক।ওর সবচেয়ে স্পর্শকাতর স্থানটার নামই ভূমি।দু-আঙুলে বউয়ের চোখের পানি মুছে সান্ত্বনার সুরে বললো, ” সব ঠিক যাবে।”

” তা আমিও জানি।কিন্তু সম্পর্কটা মনে হয় না টিকবে।যেই অবস্থা,এই অবস্থায় এরকম একটা ঘরে সংসার করা কঠিন। পাগলীটা এসে কী বললো জানো? এসেই বলে ও থানায় যাবে,আমি ওকে টাকা ধার দেব।থানায় যেয়ে ও সুবিধা করতে পারবে বলো?রাগে অন্ধ হয়েছিলো তখন।খুব কষ্ট করে শান্ত করলাম।”

” কী বলে বুঝ দিলে?”

” বলেছি, ওদেরকে মানুষ করে ঘাড় ধরে সংসার করতে।সংসার ভাঙা উচিত হবে না,প্রয়োজনে বিচার-সালিশ করব,এটাই বলেছি।এগুলো না বলে উপায় ছিল? আমিও যদি ওর সাথে তাল মিলিয়ে বলতাম এখানে সংসার করা ঝুঁকির কাজ,তবেই হয়েছিলো। পাগল আরো ক্ষেপে যেতো।তখনি আমাকে বগলদাবা করে থানায় ছুটতো।ঠিক করেছি না বলো?”

” হ্যাঁ। চিন্তা করো না ভূমি।আমরা আছি তো।সব ঠিক হয়ে যাবে।”

” তাই হোক।”

আজ এখনো বৃষ্টির মুখ দেখা যায়নি তবে বাতাস আছে।একটু আগে রোদ পড়ে পশ্চিম থেকে মৃদু হাওয়া ছুটেছে।অশ্বত্থ গাছের পাতাগুলো ছোট বাচ্চাদের মতো দুলছে সেই মিষ্টি হাওয়ায়।মরিচ গাছে ঝুলে থাকা মরিচগুলো ক্ষণে ক্ষণে কাঁপছে।আসরের আযান পড়েছে কিছুক্ষণ আগে।নামাযের বিছানা থেকে উঠতেই চোখে পড়ল সূচিকে।দরজার কাছে দাঁড়িয়ে উঠোনের দিকে চেয়ে আছে।সদ্য ঘুম ভাঙার আভাস চোখে-মুখে।ভূমি পিছন থেকে ডেকে বললো, ” ঘুম ভাঙলো তোর? এতো ঘুমাতে পারে মানুষ! ক্ষুধা পায়নি?”

” পেয়েছে। কেউ কি এসেছিলো বড় আপা?”

” কার কথা বলছিস? ফয়সাল?”

” হ্যাঁ, ঐ বাড়ির মানুষরাই।ওরা কেউ এসেছিলো?”

” না,তুই এতো চিন্তা করছিস কেন?”

” চিন্তা হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। আমার মনে হচ্ছে থানায় গেলেই ভালো হতো বড় আপা।তুমি তখন সাক্ষীর কথা বললে,সাক্ষী হিসেবে বড় ভাবি কিন্তু খারাপ না।সে সবই দেখেছে।”

নামাজের হিজাবটা খুলতে খুলতে ভ্রু কুঁচকে ভূমি বললো, ” কিন্তু তুই যে তখন বললি, বাড়িতে কেউ ছিল না।হুমায়রা আপু নাকি তার বাবার বাড়ি গেছে?”

” হ্যাঁ, আজকে ছিল না।কিন্তু অন্যান্য সময়ে আমাকে যখন বকা-ঝকা করতো তখন তো ভাবি দেখতো।সে কি এসব পুলিশের সামনে বলবে না?”

সূচির দিকে চেয়ে দু-সেকেন্ড ভাবলো ভূমি।তারপর বেশ খানিকটা দ্বিধা নিয়ে বললো, ” কেন বলবে সূচি? কে ঝামেলায় জড়াতে চায়? তোর যাই হোক, সে তো ঠিকই ঐ বাড়িতেই সংসার করবে।তো?তোর ঝামেলায় জড়ালে তার চলবে কেন?তাছাড়া, তার সাথে আগে থেকে এসব নিয়ে আলোচনা করলেও নাহয় একটা ভরসা ছিল।হুমায়রা আপু যদি সাক্ষী না দেয়, তখন কী করবি?”
তারপর গলায় বেশ খানিকটা বিরক্তি ঢেলে বললো, ” তোর হয়েছে কী সূচি? বলছি তো কিছু হবে, তারপরেও শুধু শুধু টেনশন করছিস কেন? টেনশন করলেই কি সব ঠিক হয়ে যাবে? শুধু শুধু প্যারা নিচ্ছিস।তোর ক্ষুধা পায়নি? তোর জন্য বসে থাকতে থাকতে আমার পেটের চামড়া শুকিয়ে যাচ্ছে।”

” তুমি খাওনি এখনো!”

” না।তোর ভাইয়া তোর জন্য অপেক্ষা করে একটু আগে খেয়ে উঠেছে। যা হাত-মুখ ধুয়ে আয়,আমি খাবার নিচ্ছি।”

কলতলার দিকে দু ‘পা এগিয়ে আবার থামলো সূচি।পিছন থেকে ভূমিকে ডেকে বললো, ” বড় আপা, আমার শাড়িটা কোথায়?”

” আলনার উপরে ভাঁজ করে রেখেছি। কেন?”

” শাড়িটাই পরি।তোমার এই জামাটায় অনেক গরম।গরমে অস্থির লাগছে আমার।”

দু-চোখে এক আকাশ হতাশা নিয়ে চেয়ে রইলো ভূমি।

” সুতির জামায় গরম লাগে না।গরমে অস্থির লাগছে না,অস্থির লাগছে টেনশনে। আচ্ছা যা,জামা পাল্টে আয়।তাড়াতাড়ি আসবি,অপেক্ষা করছি আমি।

শাড়ি পরে হাত-মুখ ধুয়ে আসতে মিনিট পনেরো লাগলো সূচির।রান্নাঘরের মেঝেতে পাটি পেতে রেখেছে ভূমি। নিজে বসেছে উঁচু পিঁড়ির উপর।

” ভাইয়াকে দেখছি না যে।”

” ঘুমায়।”

” এতোগুলো দিও না আপা,আধা প্লেট দাও।”

সূচির কথায় কান না দিয়ে পুরো এক প্লেট খিচুড়ি নিলো ভূমি।বোনের দিকে প্লেটটা এগিয়ে দিয়ে ভর্ৎসনার সুরে বললো, ” তোর জন্য কষ্ট করে এই দুপুরবেলা আবার চুলার কাছে গেছি। এই অবস্থায় রাঁধতে কত কষ্ট হয় জানিস? না খেলে খুন্তি দিয়ে গুতিয়ে খাওয়াব।”

” এতো গরজ করে না রান্না করলেই পারতে।”

” আমার কাছে বেশি বড় সাজতে আসবি না,থাপড়ে দাঁত ফেলে দেব।হাতে করে মানুষ করলাম, সেই মেয়ে এখন আমাকে গরজ শেখায়! ফাজিল।”

লেবু চিপে এক লোকমা নিজের মুখে পুরে দিলো ভূমি।সূচি এখনো আস্তে আস্তে খিচুড়িতে ঝোল মাখছে।মেয়েটা যে চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে তা বেশ জানে সে।অস্থির হওয়াটাই স্বাভাবিক।কিন্তু কেন যেন তার কোনো চিন্তাই হচ্ছে না।কতটা খারাপ হবে সূচির সাথে? বড়জোর সংসার ভাঙবে।ভাঙুক। ফয়সালকে এমনিতেও পছন্দ না ভূমির।বাড়ির সাথে ভালো সম্পর্ক থাকলে এই বিয়েতে সবার আগে বাধা দিতো সে নিজেই।একসাথে পড়ার সুবাদে ফয়সালের স্বভাব-চরিত্র বেশ জানা আছে তার।ওরকম দুর্বল চিত্তের একটা ছেলের পাশে নিজেকে ভাবতেও কেমন যেন লাগে।

” হ্যাঁ রে সূচি, তুই কোনো নাম ঠিক করেছিস?”

আত্মচিন্তায় মগ্ন ছিল সূচি।সহসা বোনের প্রশ্ন বুঝতে না পেরে বোকার মতো চেয়ে রইলো।

” তোর ভাগ্নে-ভাগ্নী এই মাসের শেষেই আসবে ইনশাআল্লাহ। একমাত্র খালা হিসাবে তুই কোনো নাম ঠিক করিসনি?”

” না তো।”

” দুটো নাম ঠিক করবি।একটা ছেলের,একটা মেয়ের।দুটোতেই যেন আমাদের দুজনের নামের প্রথম অক্ষর থাকে।বুঝলি?”

” হুম।”

” জ্বর তো আর আসেনি।মাথাটা কি ব্যাথা করছে?”

” হ্যাঁ, আপা।ঘাড় আর মাথাটা ব্যাথা।”

” তোর ভাইয়া উঠলে তাকে নিয়ে রায়হান ভাইয়ের ফার্মেসীতে যাবি। এন্টিবায়োটিক লাগবে হয়তো তোর।”

বোনের মন ভালো করার জন্য হালকা-পাতলা কথা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল ভূমির।কিন্তু ইচ্ছাটা টিকলো না বেশিক্ষণ। অমনোযোগী বেরসিক মানুষের সাথে আর যাই হোক আলাপ জমানো যায় না।দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ভিতর থেকে।খুব মন খারাপের সুরে বললো, ” তুই কি ভয় পাচ্ছিস সূচি?”

” ভয়! হ্যাঁ, তা পাচ্ছি আপা।বাইরের কাউকে না, আমি একমাত্র আব্বাকে খুব ভয় পাই।মারধর আমার সহ্য হয় না।মারের খুব ভয় আমার।আব্বাকে তো চেনোই।তার হাত যে আমার বেলায় কত চলে তা তুমি চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবে না।আথালি-পাথালি চড়-থাপ্পড় মারে।কান-মাথা কিছু দেখে না। আর হাতে লাঠি থাকলে তো কথাই নাই।আব্বা রাগের মাথায় কোথায় কোথায় আঘাত করে সে খবর কি আর সে রাখে?এই একটা জিনিসের জন্যেই আমি নিজের বাপকে খুব ভয় পাই আপা। ঘৃণাও করি।গায়ে হাত তোলার সাহস ফয়সালের নেই।আমি ওকে ভয় পাই না।শাশুড়িকেও ভয় পাই না,তাকে আমি আব্বার মতোই ঘৃণা করি।সে ঐ দূর থেকেই গলাবাজি করতে পারবে অথবা আক্রমণ করতে পারবে।কাছে এসে আমার গায়ে স্পর্শ করার সাহসও তার নেই,শক্তিও নেই।এই দুঃসাহস কেবল আছে আব্বার।তার শক্তির সাথে আমি পারি না।তাই খুব ভয় হচ্ছে এখন।এতোক্ষণে নিশ্চয়ই আব্বার কাছে খবর পৌঁছে গেছে।এই একটা জায়গায় আমি সত্যিই খুব দুর্বল বড় আপা।”

ভিতর থেকে উথলে আসা একটি তীব্র কান্নার স্রোতকে গিলে নিলো ভূমি।ভেঙে যাওয়া ভীতু ছোট বোনের সামনে সে কিছুতেই দুর্বল হবে না।কিন্তু সূচির কথা শুনে ভয় এখন তারও হচ্ছে।নিজেকে তলিয়ে দেখিলো সেকেন্ডের মাঝে।সত্যিই বাবাকে সেও ভয় পায়।আপন শত্রু বড় শত্রু।এখানে প্রতিদ্বন্দ্বী এমন একজন যার সাথে ওদের সম্পর্কটা রক্তের।এতোবছর পর সূচিকে কেন্দ্র করে যার মুখোমুখি হতে হবে সে বড্ড গোঁয়ার,বড্ড একগুঁয়ে, বড্ড নিষ্ঠুর।সম্পর্কে সে এমন একজন যার অধিকারটাও বেশি।সূচির উপরে কার অধিকার বেশি? ভূমি না মমিন শেখের? মেয়ের ভালো-মন্দ সম্পর্কে সব জায়গায় কার কথার জোর বেশি? বোন-দুলাভাইয়ের নাকি স্বয়ং জন্ম দেওয়া বাবার? উত্তর খুঁজে পেতে দেরি হয় না।তবে খুঁজে পাওয়া উত্তরটা মেনে নিতে বেগ পেতে হয়। দুরুদুরু বুকে নিজেকে শুনিয়ে বোনকে সাহস দেয় ভূমি, ” কিছু হবে না সূচি। আমি আছি।”

এবার আর “আমি আছি ” বলার সময় অবিচল থাকে না ভূমির কন্ঠ।গলার স্বর একটু নরম, একটু বিচলিত শোনায়।বোকা সূচি বোনের মাঝেও ভয়ের বীজ বুনে দিয়েছে। দস্যুর মতো নিষ্ঠুর ভয় মুহূর্তেই কাবু করে ফেলেছে সাহসী ভূমিকে।খাওয়ার বদলে প্লেটের ভিতর আঁকিবুঁকি আঁকে সে।

দুজনের মাঝে গাঢ় নিস্তব্ধতা।বাইরে বেলা পড়ে যাচ্ছে।বাতাসের বেগও বাড়ছে একটু একটু করে।বহুক্ষণ খিচুড়ি নড়াচড়া করার শেষে ছোট্ট একটা লোকমা সবে মুখে দিয়েছে সূচি,ঠিক এমন সময় বাইরে থেকে ক্ষেপা জন্তুর মতো আর্তনাদ করে উঠলো একটি চেনা কন্ঠ।ভিতর-বাইরের নিস্তব্ধতার পর্দাকে ছিঁড়েখুঁড়ে বাইরে থেকে ভেসে এলো দু-বোনের আত্মা কাঁপানো কন্ঠ, ” সূচিইই,সূচিইইই।বাইরে আয়, তাড়াতাড়ি বাইরে আয়।সূচিইই।”

চমকে উঠলো ভূমি।বেখেয়ালে হাত থেকে পড়ে গেল খিচুড়ির প্লেট।সভয়ে সামনের দিকে চেয়ে দেখলো সূচি কাঁপছে।দ্বিতীয় লোকমাটা মুখে পুরে দেওয়ার সময় হয়নি।তার আগেই মরার মতো ফ্যাকাশে হয়ে গেছে আদূরে বোনের মুখ।

চলবে….

( পর্বটা এখানে শেষ করার ইচ্ছা ছিল না।এই পর্বেই ঝামেলাটা শেষ করার ইচ্ছা ছিল।কিন্তু কিছু গুরুত্বপূর্ণ বর্ণনাই এখনো বাকি।পুরোটা একসাথে লিখতে গেলে খুব বড় হয়ে যাবে।তাই পর্বটাকে দুই ভাগে ভাগ করছি। এই পর্বের বর্ধিতাংশটুকু কালকে দেওয়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here