#ফেইরিটেল
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
Part–3
–ইশ, আপনি মোটেও হ্যান্ডসাম না। হুহ। নিউইয়র্কে থাকলেই কেউ হ্যান্ডসাম হয় না। আমাকে দেখেন আমিও সুন্দরী। তার মানে এই না যে আমি নিউইয়র্কে থাকি। আমি থাকি পুরান ঢাকায়। আর পুরান ঢাকার প্রতিটা মেয়েই সুন্দরী। (মিরা তেজী কণ্ঠে বলে)
ইমান হামি তুলে বলে, হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি হলা পুরান ঢাকাইয়া রুপসী। গরীবের এমা ওয়াটসান।ক্যাটরিনা লাইট। খুশি? এবার চল প্লিজ দেরি হচ্ছে৷
— আরে থামেন, আপনি জানেন, কতোগুলো ছেলে আমাকে ফেসবুকে প্রোপোজ করেছে? কত ছেলে আমার এটেনশান চায়? আমিই পাত্তা দিই না।
— কতজন প্রোপোজ করেছে?
— তিনজন তো হবেই৷
— উঃমাগো! এতোজনের প্রোপোজাল পাওয়ার পরও তুমি সিঙ্গেল? হাউ স্যাড!
— আমি প্রেম করব না আম্মু মানা করেছে তাই।
— আচ্ছা ভালো। এবার হাঁটা ধরো প্লিজ।
— আপনিই অযথা টাইম নষ্ট করেন।
তখন দিনের শেষ ভাগ। প্রকৃতির লীলাখেলায় মত্ত গোধূলি অন্তীম সময়ে এসে মরা রোদেরা যেন অলস হয়ে গেছে। যাই যাই করেও বিদায় নিচ্ছে না। দুষ্টু, সুমিষ্ট রোদ আর মিহি বাতাসে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পুরান ঢাকা ছেয়ে গেছে।গাছের ডাল থেকে পাখির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। পাখিরাও ঘরে ফিরে এসেছে তবে অন্ধকার হতে আর সামান্য ক্ষণ বাকি। তখনো আকাশে তারার হাট জমেনি। তারা দুইজনেই যে যার মতো হাঁটতে ব্যস্ত। মিরা এক-দু কদম এগিয়ে আছে। ইমান পকেটে হাত গুটিয়ে তার পিছু হাঁটছে। রিকশা কিংবা গাড়ি করে গেলে ছয়-সাত মিনিটেই হলে পৌছানো যায়। কিন্তু মিরা বেশ আস্তে হাঁটছে জন্য সময় লাগছে। শাড়ির কুচিতে হাত রেখে হাঁটতে গিয়ে বেচারি বেশ হিমশিম খাচ্ছে। এক কী দু’বার হাই হিলের সঙ্গে কাদার ঘর্ষণে সে হোচট ও খেয়েছে অবশ্য দ্রুতই নিজেকে সামলিয়ে নিয়েছে। হাটার মাঝে আচমকা মিরা দাঁড়িয়ে গেল। ইমান অনিচ্ছা সত্ত্বেও জিজ্ঞেস করে, কী হলো?
মিরা হাত উচিয়ে রাস্তার কিনারাকে ইঙ্গিত করে। প্রথমে ইমান বুঝতে পারলো না ঘটনা কী। পরমুহূর্তে মিরার ভয় পাওয়া চেহারা দেখামাত্র সে হোহো করে হাসা শুরু করল। মিরা গাল ফুলিয়ে বলে, এখানে হাসার কি দেখলেন?
অথচ এদিকে ইমানের হাসতে হাসতে পেট ব্যথা হওয়ার উপক্রম। সে কোনমতে হাসি থামিয়ে বলে, তুমি কী কুকুর দুইটাকে দেখে ভয় পাচ্ছো?
মিরা না বলবে তখনি রাস্তার ধারে দাঁড়ানো কুকুর দুইটার মাঝে পলিথিনের মোড়কে থাকা অপচয়কৃত খাবার নিয়ে তর্ক লাগলো। ঘেউ ঘেউ আওয়াজ শোনামাত্র মিরার ভয় দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ায় সে ইমানের পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে, আমি মোটেও ভয় পাচ্ছি না।
ইমান ভ্রু নাচিয়ে বলে, সেটা তো দেখায় যাচ্ছে।
মিরা ঠোঁট উল্টিয়ে বলে, কুকুরগুলোর সমস্যা কী?এখনই এদিকে আসতে হবে?
ইমান হাসি আটকিয়ে বলে, তোমার সাথে দেখা করতে আসছে।
মিরা বিরক্তি প্রকাশ করে বলে, আপনি প্লিজ কুকুরগুলোকে ভাগান।
তখনি আরো দুইটা কুকুর দৌড়ে ডাস্টবিনের সামমে আসল৷ চারটা কুকুরের পাশ দিয়ে যাওয়ার মতো সাহস মিরার নেই৷ সে পুনরায় বলে, প্লিজ কুকুর গুলোকে সরান।
মিরার কুকুরভীতি দেখে ইমানের বেশ মজাই লাগছে। অনেকদিন পর এমন বিনোদন পাচ্ছে সে। তাই মিরাকে আরো রাগিয়ে তোলার জন্য সে কুকুর গুলোর দিকে মুখ ঘুরিয়ে, হাত সামান্য তুলে হাই দেওয়ার ভঙ্গিমা করে বলে, “প্রিয় কুকুর ভাই ও বোনেরা কিছু মনে করবেন না প্লিজ, আপনাদের একটু সাইড দিতে হবে। মহারানী রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাবেন।”
তার কথার স্টাইল দেখেই মিরার রাগ উঠলো
আবারও তাকে নিয়ে মজা নিচ্ছে।
ইমান হাত উঠিয়েছে জন্য দুটো কুকুর তাদের দিকে তাকিয়ে ঘেউ ঘেউ আওয়াজ করে ডাক তুলল। মিরার ভয়ে আত্মা কেঁপে উঠে। সে রাস্তার মাঝে গিয়ে দাঁড়ায় এক দৌড়ে। ইমান দ্রুত তার দিকে এগিয়ে এসে তাকে ঝাড়ি মেরে বলে, রাস্তার মধ্যে এতো তিড়িং-বিড়িং করো কেন? মাঝ রাস্তায় যে দাঁড়ালে, গাড়ি ধাক্কা মারলে কী করতে?
মিরা মুখ কাচুমাচু করে বলে, সর্যি৷
— তোমার জন্য অনেক লেইট হয়েছে। বলেই পাশের দোকান থেকে দুটো বনরুটি কিনে কুকুর গুলোর দিকে এগিয়ে দিল। কুকুর চারটা খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত হলে তারা এগিয়ে গেল সামনের দিকে। মিরাও নির্ভয়ে আগাচ্ছে। এক সময়ে সে ইমানকে অতিক্রম করে এগিয়ে গেলে ইমান বলে উঠে, মিরা দেখো দেখো কুকুর৷
মিরা তৎক্ষনাৎ পিছু হটে তার কাছে এসে বলে, কই?
ইমান হাসতে হাসতে জবাব দেয়, আমার সঙ্গে না হাঁটলে কুকুর এসে তোমার সামনে ঘেউ ঘেউ করবে।
— আপনি একটা বেয়াদব।
একথায় ইমান হাসলো। তার হাসির দিকে মিরা অবাক হয়ে তাকালো। ছেলেটাকে হাসলো অসম্ভব সুন্দর লাগে। এই হাসিটার দিকে তাকালে কেমন মমতা এসে যায়। বাইরে আবছা অন্ধকার হলেও মিরার মনে আচমকা প্রদীপ জ্বলে টিমটিম করে।
__________________
হলুদের প্রোগ্রামে যখন পৌঁছালো তারা, তখন মোটামুটি অনেক গেস্টই চলে এসেছে। সোনালী আপু আর দুলাভাই স্টেজে বসে আছে। সোনালী আপুকে খুব সুন্দর লাগছে হলুদের সাজে। ইরা আর মা গেস্টদের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত। খাবারের গন্ধ ভেসে আসছে। মৃদ্যু মিউজিক যেন ষোল আনা পূর্ণ করেছে।
মিরা যখন হলে ঢুকল, তখন বরযাত্রীর পক্ষের একটা ছেলে তাকে দেখে হুড়মুড় করে এগিয়ে এসে বলে, “হাই মিরা। এতোক্ষণে আসলে তুমি? তোমাকে আমি কতবার খুঁজেছি। বাই দ্যা ওয়ে, শাড়িতে খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে।”
ছেলেটা যখন তার সঙ্গে কথা বলছিল সেই সময়টায় মিরা ইমানের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দুষ্টু হাসে। এই হাসির অর্থ হলোঃ বলেছিলাম না? বিশ্বাস হলো তবে?
সে এতো এতো কথার উত্তরে কেবল এক গাল হাসলো এবং হাই ব্যাক দিল।
ছেলেটা নিজ গরজে বলে উঠে, তোমাকে অনেক মিস করছিলাম।
এই কথায় ইমান যেন হাঁসফাঁস করতে করতে অন্যদিকে চলে যায়। মিরাও সামান্য ভড়কে গেল। সে আমতাআমতা করে বলে, আমি আসছি৷ আম্মু ডাকছে।
ছেলেটার সঙ্গে কথা শেষ করে মিরা মায়ের কাছে যায়। বাকিটা সময় সে মায়ের সঙ্গেই গেস্ট নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তবে ব্যস্ততার মাঝেও সে বহুবার ইমানকে খুজার চেষ্টা করে কিন্তু এক মুহুর্তের জন্যও দেখা মিলেনি। তখন সে নিজেই নিজেকে শুধায়, ” ভাইরাসকে কী আর চোখে দেখা যায় নাকী?”
হলুদ দেওয়ার সময় এসে গেলে, সোনালী আপুকে সবার আগে বড় আব্বু এবং দুলাভাইয়ের মা-বাবা হলুদ ছোঁয়ালেন। এরপর মিরার বাবা-মা। বাবা-মা নেমে আসতেই মিরা স্টেজে উঠে পড়ে৷
মিরাকে দেখে সোনালী আপু প্রশ্ন করে, তুই শাড়ি পড়লি কেন? তোর না সালোয়ার কামিজ পড়ার কথা?শাড়ি পড়লি ভালো কথা, এই পুরান শাড়ি কীজন্য পড়লি?
মিরা অভিমানী গলায় বলে, তোমার ভাইয়ের জন্য এই শাড়ি পড়তে হয়েছে।
সোনালী মুচকি হাসল। সে বুঝে গেছে ইমানের কথাই বলা হচ্ছে। কারন ইমান ছাড়া তাদের আর কোন ছেলে কাজিন নেই। সে বলে উঠে, আচ্ছা তো ইমান শুধু আমার ভাই?
— হ্যাঁ।
— তাহলে কী ইমান তোর জামাই লাগে?
— আপু প্লিজ। ওই বেয়াদব ছেলেটাকে এতো মাথায় উঠাবা নাতো৷
— আমি মাথায় উঠায় রাখলাম কই? বরং তুই-ই তো এয়ারপোর্টে ইমানকে হোয়াইট টি-শার্টে দেখেই ক্রাশ খেয়ে আধমরা হইলি।
মিরা নাক ফুলিয়ে বলে, শুন আপু, তখন তো আর জানতাম না তোমার ভাই একটা বিচ্ছু।
তখনই দুলাভাই বলে উঠে, কেমন শালি আমার? আমাকে একবিন্দু পাত্তা দেয় না? খালি বোনের সঙ্গে কথা।
প্রান্ত ভাইয়ার কথায় মিরা-সোনালী তাদের কথপোকথন বন্ধ করল। মিরা সোনালী আপুর গালে হলুদ ছুঁইয়ে দিয়ে দুলাভাইয়ের হাতে হলুদ ছোঁয়ালে, উনিও মিরার হাতে হলুদ ছুঁইয়ে দিয়ে বলে, শালিকা, বিয়ের বর-কনে কাউকে হলুদ ছোঁয়ালে নাকি সেই ব্যক্তির তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়।
মিরা চোখ বড় করে বলে, সত্যি দুলাভাই?
— হ্যাঁ হ্যাঁ সত্যি।
— তাহলে আপনি আমাকে কেন হলুদ ছোঁয়ালেন?
এবারে প্রান্ত আর সোনালী আপু একসাথে বলে উঠে, কারণ আমরা চাই তোর দ্রুত বিয়ে হোক।
মিরা বলে, তোমরা খুব পঁচা।
সোনালী আপু মিরাকে মিষ্টি খাইয়ে দিয়ে বলে, আমি বাসা থেকে বের হইছি না? এখন তোকেও বের করার প্লানিং এ আছি।
মিরা স্টেজে থাকতে থাকতেই ইমান বড় আব্বুর সাথে স্টেজে উঠে আসল। মিরা-ইমানের মধ্যে দৃষ্টি বিনিময় ঘটে যায়। মিরা দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নিয়ে যেতে ধরলে বড় আব্বু বলে, মিরা-মামনি যাচ্ছো কেন? এখানে থাকো।
অগত্যা মিরাকে থেকে যেতে হলো। সোনালী আপুর পাশে দাঁড়ালো সে। ইমান স্মিত হেসে আপুকে হলুদ ছোঁয়াতে গেলে, সোনালী আপু তার হাত ধরে ফেলে আবেগী কণ্ঠে বলে, ভাই আমার! তুই যে এতোদূর থেকে আমার জন্য আসলি, আমার তো ভাবতেই কান্না পাচ্ছে। বিশ্বাস কর, তোর মতো কেউ আমাকে এতো ভালোবাসে না। কলিজার ভাই আমার। সোনা মানিক।
ইমান সোনালী আপুকে জড়িয়ে ধরতেই আপু আবেগে কেঁদে দেয়। সে বলে উঠে, আমি আছি তো সবসময়ই তোমাদের সঙ্গে। শুধু সাত-সমুদ্র দূরে থাকি।
সোনালী আপু হলুদের বাটি থেকে এক চিমটি হলুদ নিয়ে ইমানের কপালে ছুঁইয়ে দিয়ে বলে, আমার ভাইটার জীবনে যেন একটা ফুটফুটে রাজকন্যা আসে।
ইমান হালকা হেসে বলে, তোমার ভাই কী রাজপুত্র যে রাজকন্যা পাবে?
— তুই রাজপুত্রের চেয়েও খাঁটি।
হলুদ পর্ব শেষ হলে বাড়ির সবাই এক ফ্রেমে ছবি তোলার জন্য স্টেজে উঠে। যখনই মিরার বাবা স্টেজে উঠে, সেই মুহুর্তে ইমান নেমে যায়। বড় আব্বু বাঁধা দিতে গিয়েও থেমে গেলেন৷ সবকিছুই মিরার চোখের সামনে ঘটলেও সে বিষয়টা আমলে নিল না।
চলবে৷
[ আসসালামু আলাইকুম, গল্পটা কী সবার ভালো লাগছে? যারা যারা পড়ছেন একটু কমেন্ট করে জানাবেন প্লিজ। ]