#ফেইরিটেল
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
Part–21
সকলে যখন নাস্তা খাওয়ার পর কাজে ব্যস্ত৷ মিরা সেই সময় এক ফাঁকে ইমানকে ম্যাসেজ দিল। ইমান সঙ্গে সঙ্গে সিন করে৷
সে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে এরুপ, “কাজটা একদম ঠিক করেননি৷ আপনার জন্য আমাকে কতোখানি লজ্জা পেতে হয়েছে সোনালী আপুর সামনে, কোন আইডিয়া আছে?”
ইমানের ম্যাসেজ এলো, “তোমার লজ্জাও আছে? জানতাম না তো!”
টুং করে আওয়াজ হয়ে এই ম্যাসেজের আগমন ঘটে। মিরা মনে মনে রেগে উঠে কটমট করে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকালো। ইমানের প্রোফাইল পিকচারটা ছোট করে সো করছে৷ কী সুন্দর হাসি-হাসি মুখটা তার। ছবিতে আরোও হ্যান্ডসাম লাগছে তাকে। মিরা রিপ্লে দিল, ” আই হেইট ইউ।”
ইমান অবশ্য আর কিছু ম্যাসেজ দিল না। সে ফোন হাতে অপেক্ষায় থাকে কখন আবার রিপ্লে পাবে৷ কিন্তু রিপ্লে না পাওয়ায় তার বিরক্ত লাগে। সে ফেসবুক অন করে “ইমান খান” নামক প্রোফাইলে ঢুকে, প্রতিটা ছবিতে হাহা দিতে থাকে। তার আইডির ছবিগুলোতে একে একে হাহা রিয়্যাক্ট দিয়ে শান্ত হলো সে। এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ম্যাসেজ এলো, ” কী সমস্যা তোমার?”
কাঙ্খিত ব্যক্তির কাছ থেকে ম্যাসেজ পেয়ে সে হাসি দিল। তার মজা লাগছে বেশ। পাশের রুমে থেকেও চ্যাটিং করার মজা ভিন্ন৷
কিছুক্ষণ আগে ম্যাসেজ সিনও করছিল না আর এখন নিজ থেকে ম্যাসেজ দেয়।হাহ!
সেও সিন করল কিন্তু কিছু রিপ্লে দিল না। আবারো ম্যাসেজ আসলো। “ষ্টুপিড গার্ল” লেখা। এবারে মিরা শব্দ করে হেসে ফেলল। তারপর সেখানেও হাহা দিয়ে ম্যাসেঞ্জার থেকে বেরিয়ে এসে ইউটিউবে ঢুকে ফানি ভিভিও দেখা শুরু করে। সে আপাতত ড্রয়িংরুমে বসে আছে। পা উঠিয়ে বসেছিল সে। দুপুরের রান্নার আয়োজন চলছে।রান্নাঘর থেকে সুস্বাদু খাবারের গন্ধ ভেসে আসছে। মা আর সোনালী আপু ব্যস্ত খুব।সায়েমা আপু শ্বশুড়বাড়ি চলে গেছেন। আর বড় আব্বুর হুট করে শরীর খারাপ লাগছে জন্য তিনি নিজের রুমে বিশ্রাম নিচ্ছেন। সে সুযোগ ও সন্ধানে আছে। ইমানের এই ভালো সেজে থাকা অভিনয় সবার প্রকাশ্য আনা দরকার। কিন্তু, সে বুঝে পাচ্ছে না, দাদী, মা, বড় আব্বু কিভাবে রিয়্যাক্ট করবে? দাদী এতোবড় শক সামলাতে পারবে? এমনি দাদী বারো মাসই অসুস্থ থাকেন। হার্টে সমস্যা তার, সেই সাথে প্রেশার। তার উপর কালকেই তাদের বিয়ে হলো। এই বিয়ের পরিনতি কী হবে? সে সকল চিন্তাকে একপাশে রাখলো৷ ভিডিও ওপেন করা থাকলেও তার সেদিকে ধ্যান থাকলো না। নানান দুশ্চিন্তায় সে দ্বিধাগ্রস্থ। ইমানের মনে কি চলছে তাও সে জানে না! এই বিয়ে টিকবে তো? নাকি সমাজে তাকে ডিভোর্সী উপাধি পেতে হবে?
পেছনে যে কেউ এসে দাঁড়িয়েছে সেদিকে বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই তার৷ আনমনে ভেবেই চলেছে৷ ভিডিও শেষ হয়ে গেল। সেই সময় তার ফোনে ইনকামিং কল আসে। রিংটোনের আওয়াজে তার ঘোর কাটে। সে স্ক্রিনের দিকে তাকালো এবং সামান্য হতভম্ব হলো। রাকিবের ফোনকল, তাও এই দুপুরবেলায়। রাকিব মনে হয় তার বিয়ে সম্পর্কে জেনেই কল দিয়েছে। সে যেই না রিসিভ করতে যাবে, ওমনি পেছন থেকে কেউ তার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিল৷ সে চকিতে উঠে পেছনে তাকায়। ক্ষণেই তার দৃষ্টিবিলাস হয় ইমানের সঙ্গে। তার অভিব্যক্তি দেখে বোঝার উপায় নেই যে সে রেগে গেল নাকি বিন্দাস মুডে রয়েছে৷ তবে মিরা ভিতরে ভিতরে ভীষণ ভয় পেল। বিয়ের পরের দিন এমন পরিস্থিতিতে পড়লে করণীয় কী? আচ্ছা এখানে তার দোষ কোথায়? বিয়ের পর কী পরপুরুষের ফোনকল আসা দোষের? সেতো আর কল দেয়নি।
খারাপ কোন উদ্দেশ্যও নেই তার মনে।
ইমান ফোনের দিকে এক সেকেন্ডের একটু বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকে। ফোন বাজতে বাজতে থেমে গেলে, সে ফোনটাই সুইচ অফ করে দিয়ে, নিজের পকেটে রেখে বলে, “বেশি ফোন ইউস করা শরীর-চোখের জন্য ক্ষতিকরম মনের ও সম্পর্কের জন্যও ক্ষতিকর। ৷”
মিরা এরপর পালটা জবাব দিল না। তার কেন যেন নিজেকে অপরাধী লাগছে। সে সংশয়ভরা চোখে তাকিয়ে রইল। ভেবেছিল সে আরো কঠিন কিছু কথা বলবে কিন্তু ইমান এমন কিছু করলো না। সে রুমে চলে গেল৷ এবং আশ্চর্যজনক ভাবে দশ মিনিটের মধ্যে বেরিয়ে আসে। আজকে সে সকালবেলা থেকেই ফিটফাট হয়েছিল। এখন তার লুক দেখে মনে হচ্ছে, বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে৷
ইমান ড্রয়িংরুমে মিরাকে পাশ কাটিয়ে সদর দরজার দিকে অগ্রসর হলে, মিরা প্রশ্ন করে বসে, “বাইরে যাচ্ছেন?”
–“হু।”
— “ফিরবেন কখন?”
এ প্রশ্নে সামান্য রাগান্বিত দেখালো তাকে। সে ভরাট কণ্ঠে বলে, “সবকিছু কী তোমাকে বলে করতে হবে এখন থেকে? তুমি তো আমাকে জানিয়ে কিছু করো না, নিজের মনমতো যেকারো সঙ্গে ফোনালাপ করো! ”
শেষের খোটা মারা কথায় মিরা বেশ অপ্রতিভ হয়ে পড়ে। চোখ এদিক-ওদিক ঘুরিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইমান ইচ্ছাকৃত ভাবে বেশ শব্দ করে ঠাস করে গেট ভিজিয়ে দিয়ে প্রস্থান করে। গেট লাগানোর শব্দে মৃদ্যু কেঁপে উঠে সে৷ কিয়ৎক্ষণ পর, যখন রুমে ফিরে আসে, তখন তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে৷ দরজার একদম মুখে মিরার শখের ফোনখানা ভেঙে তিন ভাগ হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে। তার ভীষণ আফসোস হলো ফোনটার জন্য। এ জেনারেশনের ছেলে-মেয়েদের কাছে এটা একটা দুঃখজনক দৃশ্য। সে ফোন ছাড়া কীভাবে চলবে? ইমানকে কে অধিকার দিয়েছে তার ফোন ভাঙ্গার? দাঁতে দাঁত চেপে সে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা চালায়৷
দুপুরে মুহুর্তগুলো আরো বিৎঘুটে কাটলো মিরার৷ লাঞ্চ আওয়ারেই ইমান যখন ফিরেনি তখন বাসার পরিবেশ ভয়াবহ। দাদী গজগজ করলেন কিছুক্ষণ। মাও সরাসরি মিরাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করলেন।অবশ্য বাবা কিছু বললো না৷ আজ সকাল থেকে মিরা বারবার তার বাবার দিকে তাকাচ্ছে৷ কিছু কোন প্রশ্ন করার সাহস পাচ্ছে না। বরং নিজেরই খুব কষ্ট হচ্ছে। কোন সন্তানই নিজের বাবার বিরুদ্ধে কিছু সহ্য করতে পারেনা৷
সোনালী আপু যখন প্রশ্ন করে, “তোদের মধ্যে কোন সমস্যা হচ্ছে? ইমান কেন খাওয়ার সময় এখানে নেই?”
এই প্রশ্নে মিরার ভীষণ মেজাজ খারাপ হয়। সে তাকে স্ত্রী হিসেবে মেনেই নেয়নি৷ অথচ সবাই তার কাছে কেন জবাবদিহিতা চাচ্ছে? ইমান কেন আসেনি এখনো এটা তাকে জিজ্ঞাসা করলেই তো হয়!
মিরা সামান্য দুর্ব্যবহার করে ফেলে আপুর সঙ্গে। এরপর নিজের রুমে ফিরে আসতেই মন খারাপ হয়ে যায়। আজকের দিনটা তার জন্য খুবই কুফা। সে নিজেও আর খায়নি। চোখ বেয়ে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল। বিবাহ এতো জটিল কেন? আরো এক্সট্রা কমপ্লিকেশন ক্রিয়েট করছে তার হ্যাসবেন্ড৷ তার সঙ্গে কোন যোগাযোগ রাখবে না, আর সব ধরনের যন্ত্রণা তাকে দেবে। মানসিক যন্ত্রণা ওতো তীব্র যে মিরার সারা শরীর ক্লান্তিতে ভরপুর হয়ে পড়ে। সে বিছানায় শুতে গিয়েও থেমে যায়। কালকে ইমানের ফ্লোরে ঘুমানোতে সে অসম্ভব আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। এতোটা কষ্ট এর আগে কোনদিন পায়নি সে৷ এই নিদারুণ কষ্টের কথা কাউকে বলাও যাচ্ছে না। চেয়ারে বসে থাকতে থাকতে তার তন্দ্রা ভাব চলে আসে। দুপুর চারটা নাগাদ বাইরে থেকে সোনালী আপুর হাহাকার মাখা কান্নায় তার ঘুম ভাব ছুটে যায়। সে মিনিট এক স্তব্ধ রইল। আপু কাঁদছেন কেন? রুম থেকে বের হতেই তার চোখের সামনে সোনালী আপু আর মা দৃশ্যমান হলো। বড় আব্বু খালি গায়ে বসে আছেন। শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছেন কিন্তু পারছেন না। অতিরিক্ত ঘামছেন তিনি৷ সোনালী আপু তার পাশে দাঁড়িয়ে ক্রমান্বয়ে কেদে যাচ্ছেন।
মিরা আশেপাশে তাকালো। তার বাবা কোথাও নেই। সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ল, বাবার দুপুরের পর গোডাউন যাওয়ার কথা ছিল। বাবা নিশ্চয়ই এখম গোডাউনে আছেন। বড় আব্বু হুট করে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ওনাকে হাসপাতালে নেওয়া দরকার। হেলাফেলা করা ঠিক হবে না। বাসায় কী কারো মাথাতেই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা আসেনি একবারও?
মিরা নরম গলায় বলে, “আপু প্লিজ শান্ত হও। আমাদের বড় আব্বুকে এক্ষুনি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে৷”
সোনালী আপু কান্না চেপে রেখে বলে, ইমান তো সিএনজি আনতে গেলো৷
মিরা খানিক ভারমুক্ত হলো। সে বলে উঠে, “গাড়ি নেই?”
— “ড্রাইভার নেই৷ কাজের সময় এদের পাওয়াই যায় না।”
ওই মুহুর্তে ইমান ফিরে আসলো। সে হাপাচ্ছে। হাপাতে হাপাতে বলে, আমি মামাকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছি। তোমরা পরে এসো।”
সে দারোয়ানের সাহায্য নিয়ে বড়মামাকে নিয়ে সিএনজিতে উঠলো। বাকিরা সবাই নিচে নেমে গিয়েছিল। মা আর সোনালী আপু আরেকটা সিএনজি নিয়ে চলে গেল। সে আর ইরা রয়ে যায় বাসায় দাদীর সঙ্গে।
দাদীকে সামলানো কষ্টসাধ্য হয়ে উঠে৷ তার প্রেশার বেড়ে গেল। এই বয়সে দাদী আর কোন কষ্ট বা দুর্ঘটনা নিতে পারেনা। মিরা দাদীকে নিয়ে বাসায় এসে তার মাথায় পানি ঢাললো এবং তেতুলের টক খাওয়ালো। ঘুমের ঔষধ দিয়ে তাকে শুইয়ে রেখে পাশে বসে থাকল। একমনে দোয়া পড়ছে সে। এ কোন বিপদ ধেয়ে আসলো। বড় আব্বুর কিছু যেন না হয় সেই দোয়া করতে থাকে। বিকেলে ইমানের ফোন আসলো দাদীর ফোনে৷ ইরা ফোন ধরলো প্রথমে। ইমান কি যেন বলল তাকে। আর সে ফোনটা তার কানে তুলে দিল। দাদী ঘুমাচ্ছিল জন্য মিরা ভয়েজ নিচু করে,”হ্যালো?”
প্রথমেই যে প্রশ্নটা ইমান তাকে ছুড়লো তাহলোঃ “কাঁদছিলে নাকি?”
–” নাতো।বড় আব্বু কেমন আছে?”
— “দাদীর অবস্থা কী?”
— “ঔষধ খেয়ে ঘুমাচ্ছে। বড় আব্বুর কী হয়েছে?”
ইমান এক মিনিট নীরবতা পালন করে, “মামা স্টোক করেছেন। অবস্থা মোটামুটি ডাক্তার বাহাত্তর ঘন্টা অবজারভেশনে রাখবে৷”
মিরা এ খবর শুনে শক্ত থাকলো।এখন সে কান্নায় ভেঙে পড়লে দাদীকে সামলানো যাবে না৷
ইমান বলে উঠে, “দোয়া কর৷”
সর্বশেষ বাক্যটা বলতে গিয়ে তার গলা খানিক কেঁপে উঠে। এতে মিরা সামান্য অবাক হয়। ইমান কী কাঁদছে নাকী?
______________
সন্ধ্যার দিকে সম্ভবত বড় আব্বুর জ্ঞান এসেছিল। এরপর ইঞ্জেকশন দিয়ে তাকে ঘুমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এজন্য প্রান্ত ভাইয়া সোনালী আপুকে জোর করে তাদের বাসায় নিয়ে গেছে৷ আপুর অবস্থা খুব কাহিল৷ মিরার বাবা-মা ও রাতের খাওয়ার জন্য ফিরে আসল। আসেনি শুধু ইমান৷
মিরা আগেই রান্না করে রেখেছে৷ বাবা-মাকে সে খেতে দিল। দাদীকেও খাইয়ে দিয়েছে সে। ইরা অবশ্য খায়নি এখনো। ও একদম চুপচাপ হয়ে গেছে৷ ইরার জন্য মায়াই লাগছে তার৷
মা খেতে বসে বললেন, “ইমান তো আসলো না। ওখানে থাকবে৷ ভাইয়ের সঙ্গে কারো থাকা দরকার। এদিকে সোনালীর সুস্থ নেই। অপরদিকে, ইমান সেই দুপুর থেকে না খাওয়া। করোনার জন্য হাসপাতালের ক্যান্টিনে বিশেষ কিছু পাওয়া যাচ্ছে না৷”
মিরা বলে উঠে, ” হোটেলে গিয়ে খেতে পারেন উনি।”
সুপ্তি বেগম বহু কষ্টে দুই লোকমা খেয়ে উঠে পড়ে বলে, ” আপন মানুষ অসুস্থ হলে,হোটেলে গিয়ে খাওয়ার রুচি থাকে না৷ ছেলেটা বোধহয় আজ না খেয়েই থাকবে। তোর বাবাকে আমিই থাকতে দিলাম না৷ দুই ভাই-ই হাই প্রেশারেএ রুগী৷ আল্লাহ কী বিপদ দিল আমাদের।”
মিরা সব শুনে বলে উঠে,” ড্রাইভারকে দিয়ে খাবার পাঠাই?”
–” ড্রাইভার আমাদের না জানিয়ে বাড়িতে গেছে।”
মিরা বলে উঠে, তাহলে আমি টিফিন ক্যারিয়ারে করে খাবার দিয়ে আসব?
মা আজকে আর তাকে মানা করল না। রাত দশটাও সে বের হতে পারবে। নিজেকে অনেক বড় মনে হচ্ছে। মিরা সত্যি খাবার নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্য হাঁটা দেয়৷ বড় আব্বুকে এক ঝলক দেখার জন্য তার মন আকুপাকু করছে৷
হাসপাতালে পৌঁছে সে সিড়ি বেয়ে চারতলায় উঠে। কেবিনের দরজার পাশেই সাড়ি সাড়ি বেঞ্চ রাখা। তার মধ্যে একটায় ইমান বসে আছে চুপচাপ। দেয়ালের সঙ্গে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ তার৷ মুখটা শুকিয়ে গেছে৷
মিরা আস্তে করে ডাকে তাকে। ইমান চোখ খুলে হতভম্ব হলো। সম্ভবত তার উপস্থিতি আশা করেনি৷
— “বড় আব্বুকে দেখতে এসেছি৷”
ইমান উঠে দাঁড়ালো এবং তাকে উদ্দেশ্য করে বলে, “আসো৷”
দু’জনে হেটে কেবিনের দিকে গেল। বড় আব্বুর ক্লান্ত, দুর্বল, মেশিন লাগানো দেহ দেখে তার খারাপ লাগা হুহু করে বেড়ে গেল।
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ইমান বলে, “তুমি যাও তাহলে। একা এসেছো?”
মিরা টিফিন ক্যারিয়ার দেখিয়ে বলে, “আপনি খেয়ে নেন।”
–” ক্যান্টিনে বসি?”
— “ঠিক আছে।”
তারা নিচে নেমে এসে ক্যান্টিনে বসে। রুটি আর সবজি এনেছিল মিরা৷ ইমান বহু সময় নিয়ে একটা রুটি খেল।
এরপর বলে উঠে, “আমার মাথা প্রচন্ড ব্যথা করছে। মেডিসিন নিব৷”
— আচ্ছা৷
–” তুমি বস। আমি আসছি৷”
ইমান উঠে চলে গেল। মিরা টিফিন ক্যারিয়ার গুছিয়ে নিল। দশ মিনিট পর ইমান ফিরে এলো। ইমান চাচ্ছিল মিরা এখনি চলে যাক। কিন্তু মিরা যায়নি। উপরে উঠে আসে সে।
দুইজন একই বেঞ্চে বসে পরে৷ কারো কিছু করার নেই৷ সে চোখ বুজে ফেলতেই, মিরা নিজের শীতল হাত দিয়ে তার মাথার চুলে বিলি কেটে দিতে লাগে। প্রশান্তিতে ইমানের ঘুম পেয়ে যাচ্ছিল। ব্যথায় মাথার রগ টান লেগে গিয়েছিল। এখন এই নরম স্পর্শে যেন রগগুলো শিথিল হচ্ছে৷
ইমান অনেকক্ষণ পর চোখ খুলে মিরার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে, মিরা, “আমাকে আর সাতদিন পর যেতে হবে৷”
সে অবুঝের মতো প্রশ্ন করে, “কোথায় যাবেন?”
— যেখান থেকে এসেছিলাম। অর্থাৎ আমার বাসায়।আমি নিউইয়র্ক ব্যাক করছি সাতদিন পর।”
এই সাধারণ কথা শোনামাত্র মিরার বুকের বাম পাশটায় তোলপাড় উঠে। সে তো কখনোই ইমানের ফিরে যাওয়া নিয়ে ভাবেনি৷
চলবে৷
[ যারা পর্ব ২০ পড়তে পারেননি, কমেন্ট করে জানাবেন প্লিজ৷ ]