#ফেইরিটেল
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
Part–40
মিরা পিটপিট করে তাকিয়ে আছে৷ আপাতত এই মূহুর্তে সামনে থাকা অতিমাত্রায় সুদর্শন ছেলেটার মাথা ফাটিয়ে দিতে মন চাচ্ছে তার। আচ্ছা ফাজিল একটা৷ ওর হাসি হাসি মুখের দিকে তাকালে গা জ্বলে যায়৷ মন পুড়ে যায়। নাহ্ ওই হাসির পানে আর তাকানো যাবে না। একবার তাকিয়েছিল এবং জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা করে ফেলেছে। আর নয় সেই একই ভুল। ইমান ব্যস্ত তার গিফট নিয়ে৷
মিরা নিচে নামার উদ্দেশ্য হাঁটা ধরলে ইমান তার পথ আটকায়। তার বাহু আলতো করে ধরে বলে, “কোথায় যাচ্ছো?”
–” নিচে যাই।”
–” কেন?”
–” আপনাকে কেন কারণটা বলব?”
ইমান ভ্রু কুচকে বলে, ” ওসব বাদ দাও। সারাদিন তো নিচেই থাকো। আমি সাতদিন পর আসলাম। ভালো-মন্দ জিজ্ঞাসা অব্দি করলা না৷ নট ফেয়ার।”
–” আপনি ভালো আছেন?”
প্রশ্নটা খুবই কমন৷ কিন্তু ইমানের মনে হলো এই প্রশ্নে কটাক্ষের আভাস আছে৷ সে বলে, ” আমার ভালো থাকা দিয়ে কি যায়-আসে? ”
–“সেটাই।”
–” গিফট দিলে এখন আমার উচিত রিটার্ন গিফট দেওয়া। বল কী নিবে?”
–” আমার কিছু চাই না।”
ইমান বাকা হেসে বলে, ” ফিডার গিফট দেই? নাকি ডায়পার?”
মিরার লজ্জায় এবারে নাক কাটা যাচ্ছে৷ উফ, এখান থেকে পালিয়ে বাঁচতে চায় সে। সে কপট রাগ দেখিয়ে বলে, ” আই জাস্ট হেইট ইউ।”
ইমান শব্দ করে হাসে শুধু। এরপর এক পা দু পা করে এগিয়ে আসে৷ এতে বেশ অপ্রতিভ দেখালো মিরাকে। সে ওড়নার কোণা গুটিয়ে আঙুলের সঙ্গে প্যাচাতে লাগে৷
ইমান তার একদম মুখের সামনে এসে দাঁড়ালো। এরপর বলে উঠে, ” তুমি কী জব নিয়েছো?”
–” হ্যাঁ।”
–” খুব ভালো। মন দিয়ে কাজ করবে। তোমার জন্য এবার সত্যি একটা গিফট আনা দরকার। আমি সিরিয়াস৷”
–” লাগবে না বলছি তো!”
ইমান আচমকা তার গালে হাত ছোঁয়ালো। সে চকিতে উঠে তার আঁখিযুগলের দিকে তাকালো। ইমানের চোখে চোখ রেখে বলে, ” পারমিশন ছাড়া আমাকে কোনদিন টাচ্ করবেন না৷”
বিদ্যুৎ গতিতে ইমান তার হাত ছড়িয়ে নেয়৷ হুট করে যে তার হয়ে গেল৷ এই অহংকারী মেয়েটার আদুরে গাল ছুয়ে দেওয়ার কী দরকার ছিল? বেহায়া মন কেন তার অবাধ্য হচ্ছে? কেন? এক্সপ্লেনেশন দিতে যাবে তার আগেই নিচ থেকে হাসনাহেনার চিৎকার শোনা যায়৷ ইমান-মিরা দুজনেই চমকে উঠে। ভড়কে উঠে৷ এক অপরের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে তারা দুজন দোতলা থেকে নিচে নেমে পরে৷
হাসনাহেনা তার রুমের দরজা ধাক্কাচ্ছে আর চিল্লাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে ইমানের মনে পড়ল মিরাকে কোলে তুলে উপরে নিয়ে যাওয়ার আগে হাসনাহেনার রুমের দরজা লক করে দিয়েছিল। যেন সে পাছে তাদের ওভাবে দেখে না ফেলে। দেখে ফেললে ইমান ওনার সামনে সেকেন্ড টাইম লজ্জায় যেতে পারবে না৷
মিরাকে অতিক্রম করে সে হনহনিয়ে দরজার সামনে গিয়ে প্রশ্ন করে, “আপনি কী আটকা পরেছেন?”
ওপাশ থেকে আওয়াজ আসে হ্যাঁ।
এমন সময় সাদও বের হলো। মিরা আর সাদ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। দুজনের কেউই কিছু বুঝে উঠতে সক্ষম হচ্ছে না। এদিকে ইমান পরেছে বিপাকে। কি করবে সে? ওরা টের পেলে তার মান-সম্মান কিছু রইবে না৷ যতোই হোক সিনিয়র সে। এসব বাচ্চামো কী মানায়? হুহ!
অগত্যা সে অভিনয় শুরু করে৷ লক ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে হ্যান-ত্যান শুরু করে৷ ভাবখানা এমন লকে সমস্যা হয়েছে। অবাক হলেও সত্যি এই যে, ইমানের এক দারুণ প্রতিভার আবির্ভাব ঘটেছে। সে ইদানীং ফাস্ট ক্লাস এক্টর হয়ে গেছে৷ কী সুন্দর অভিনয় করে সে! এই যে এখন অভিনয় করে ভাবখানা এমন দেখাচ্ছে যেন নকে সমস্যার জন্য উনি আটকা পরেছেন। সে বেশ সাবধানে লক খুলে এবং দরজা খুলে দিয়ে গম্ভীর মুখে তাকিয়ে থাকল৷
হাসনাহেনার ভয়ে মুখ শুকিয়ে গেছে৷ মিরা দৌড়ে গিয়ে পানি আনলো। উনি এক ঢকে সবটা পানি খেয়ে বলে, ” হুট দরজা খুলতে পারছিলাম না৷ কি যে ভয় পেয়েছি।”
ইমান বলে, ” লকে সমস্যা হয়েছে মনে হয়৷”
উনি বলে, ” কী সমস্যা হয়েছে?”
ইমান বলে উঠে, ” আমি কীভাবে বলব? মিস্ত্রী ডেকে চেক করান।”
–” তুমি-ই তো মিস্ত্রী।”
হাসনাহেনা মুখে ফসকে কথাটা বলে উঠে। ইমান চোখ বড় করে তার দিকে তাকালো। উনি আমতাআমতা করে বলে, ” মানে ইঞ্জিনিয়ার মানুষ তুমি। এসব বুঝো ভালো। এজন্য বললাম আরকি। মনে কিছু নিও না৷ ”
ওনার কথায় সাদ আর মিরা দুজন হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার উপক্রম৷
ইমান একবার হাসনাহেনার দিকে তাকায় এরপর মিরাদের দিকে তাকিয়ে বলে, ” এ বাসার সবাই পাগল-ছাগল। ইঞ্জিনিয়ারকে মিস্ত্রী বানায় দিলেন? মানে আমার ডিগ্রির এভাবে অপমান! এ দিনও দেখা লাগলো? এরচেয়ে রাখাল বলতেন খুশি হতাম৷ ”
হাসনাহেনা বলে, ” আমি কালকেই মিস্ত্রী এনে চেক করাব।”
–” মিস্ত্রী কেন আনবেন? মেকারনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার আনেন৷ যত্তসব।”
ইমান গজরাতে গজরাতে উপরে উঠে যায়। ও চলে যাওয়ার পর তারা তিনজন মিলে হাসার লাইসেন্স পেয়ে গেল যেন! ঘর অট্টহাসিতে কেঁপে উঠে৷
রাতের ডিনারে একেবারে নিচে নামল। আজকাল তার কী যেন হয়েছে। বাসায় খাওয়া-দাওয়া করছে৷ অন্যথায় সে বাইরে থেকে খাবার অর্ডার দিয়ে এনে খায় নাহলে রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে আসে৷ ইদানীং এনার্জি খরচ করে বাইরে খেতে মন চায়। বাসায় খেতেই ভালো লাগছে। সে চেয়ার টেনে বসতেই হাসনাহেনা প্লেট এগিয়ে দিল৷
মিরা আর সাস হলরুমে টিভির রুমে নেটফ্লিক্স ছেড়ে রেখেছে। মনে হয় মুভি সিলেকশন করছে৷ ওরা কী রাতে আবারো মুভি দেখবে?
ইমান বলে, ” খেতে আসো তোমরা।”
ইমানের এককথায় সবাই টেবিলে বসল। যেন সে এ বাসার অঘোষিত হেডমেম্বার৷
খাওয়া শেষ করে সাদ বলে, ” আমরা মুভি দেখন ভাইয়া। তুমি জয়েন কর আমাদের সঙ্গে।”
–” সকালে অফিস আছে৷”
–” ওহ আচ্ছা৷”
–” কি মুভি দেখবি তোরা? ”
–” ওটাই তো সিলেক্ট করতে পারছি না।”
–” হরর কিছু দেখ। মজা পাবি।”
–” নাইস আইডিয়া৷ ”
ইমান একবার মিরার দিকে তাকালো। এরপর টিটকারি মেরে বলে, ” সাদ হরর দেখিস না৷ মিরা ভুত ভয় পায়৷”
মিরা তখন খাচ্ছিল। চামচ মুখে দিয়েছে। এ কথা শুনে সে চামচ মুখ থেকে বের না করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে উঠে, ” আমি ভূত আর ভালোবাসায় বিশ্বাসী নই।”
ইমান খুকখুক করে কেশে উঠে৷
____________
রাত দুটোয় মিরা আস্তে আস্তে রুমে ফিরে আসে। তারা সত্যি ভয়ংকর একটা হরর মুভি দেখেছে৷ আপাতত সে ভয়ে সিটিয়ে আছে৷ মানে এত্তো ভয়ংকর কোন মুভি হয়? এখন নিজের চুল টানতে মন চাচ্ছে। কেন সে পন্ডিতি করে ভূতের মুভি দেখতে গেল? উফফ! রুমটা একদম ওই হরর মুভির মতো অন্ধকার হয়ে আছে৷ সে দরজার ক্যাচ ক্যাচ আওয়াজে সামান্য ভয় পেয়ে ঢোক গিলে৷ মানে আজকে সবকিছুই কুফা তার জন্য। পুরা রুম জুড়ে পিনপতন নীরবতা৷
সে ডিভানে এসে বসতেই ইমান নড়েচড়ে উঠে বলে উঠে, ” মিরা”।
মিরা চমকে উঠে বলে, ” কী?”
–” তোমার পেছনে ওই সাদা ওটা কী?”
এটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে সে লাফ দিয়ে উঠে চেচিয়ে উঠে। এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ইমান ঝারবাতি অন করে হাসতে থাকে৷
—” ভীতুর ডিমদের ভূতের মুভি দেখা শোভা দেয় না।”
–” আমি মোটেও ভীতুর ডিম না। আপনি যেভাবে চেচিয়েছেন যেকোন মানুষ ভয় পাবে৷”
ইমান মজা নিয়ে বলে, ” আচ্ছা তাহলে তুমি ভীতুর আন্ডাবাচ্চা। এক গ্রেড প্রোমোশন করিয়ে দিলাম।”
–” শয়তান কোথাকার।”
তার কথা শুনে ইমান সিরিয়াস মুড নিয়ে বলে, ” এমন রাতে শয়তানের নাম নিও না। সত্যি সত্যি ডেভিল চলে আসবে তোমার কাছে।”
মিরা ঢোক গিলে বলে, ” শয়তানকে আমি দাওয়াত দিইনি৷”
–” জনাবের দাওয়াত লাগে না। ভীষণ ছ্যাচড়া। নাম নিলেই বান্দা হাজির হয়৷ আর সুন্দরী মেয়েরা ডাকলে তো কথাই নাই। লুঙ্গিতএ গিট দিয়ে দৌড়ে আসবে৷
–” ইভিল লুঙ্গি পরে?”
–” পরতেই পারে। হু নোজ।”
মিরা গাল ফুলালো। এবং সঙ্গে সঙ্গে কেমন উদ্ভট একটা শব্দ তার কানে ভেসে আসল। মিরা আতকে উঠে ডিভানে পা তুলে বসে। ইভিল তার ডাক শুনে চলে আসলো না তো? আজকের মুভিতে মেয়েটা ডেভিলকে মজা করে ডা দেয়। এবং সত্যি সত্যি ওটা মেয়েটার পিছু নেয়৷ মিরার চেহারা ভয়ে পাংশুটে হয়ে আসে৷
ইমান আরেকদফা হাসে। কারণ এই সাউন্ড তার ফোনে সেট করা। ইচ্ছা করে মিরাকে ভয় দেখানোর জন্য বাজাচ্ছে। বুঝো ঠ্যালা এবার! তাকে নিয়ে খুব হাসাহাসি করা হলো, আজব একটা ব্যাঙ গিফট দিল আবার ইগনোর করা তো আছেই। এর শোধ তো তুলবেই সে। এমনি এমনি ছাড় দেওয়ার পাব্লিক নয় সে। ইমান পৈশাচিক হাসি হাসল। দশ মিনিট পর আবারো সাউন্ড হবে৷
দশ মিনিট পর যখন আওয়াজ শুরু হলো। মিরা সুরসুর করে তার দিকে এসে বলে, “আপনি কোন আওয়াজ শুনতে পারছেন?”
ইমান ঘুম ঘুম ভাব করে বলে, ” তুমি আমার রাজ্যে কী করছো?”
–” এই আহাম্মক চুপ কর। আওয়াজ শুনতে পারছেন কোন?”
–” না। কিসের শব্দ?”
মিরাকে চিন্তিত দেখালো ভারী। ইমান হাসি আটকে রেখে তাকিয়ে আছে৷ মানুষকে জ্বালানোতে এত মজা! উফফ!
আচমকা মিরা কেদে উঠে। ইমান পুরা শক হয়ে যায়৷ ওর কান্নার বেগ বাড়লে ইমান উঠে এসে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, ” আরে পাগলী কোথাকার। ”
চলবে৷
[ মিরার মতো কে কে ভুত ভয় পান?🤥]