ফেইরিটেল পর্ব-৪২

0
1350

#ফেইরিটেল
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
Part–42

আমেরিকার একেক শহরের ওয়েদার একেকরকম হয়৷ এবছর নিউইয়র্কে শীতের প্রকোপ বেজায়৷ দু’দিন ধরে এ নিয়ে রিপোর্ট হচ্ছিল। তবে টেক্সাসে তেমন শীত ছিল না। বরং আবহাওয়ার এতো চমৎকার ছিল যা বর্ণনার বাহিরে। টেক্সাসের ওয়েদার ইমানের কেন যেন খুব চমৎকার লাগে৷ তবে ইমানের প্রিয় শহর হলো নিউইয়র্ক। এ নিউইয়র্কে সে হাজারো ব্যথা বুকে চেপে হেঁটে বেরিয়েছে। তার আনন্দে, উল্লাসে হেসেছে নিউইয়র্কও। টিন এইজ তো এ শহরেই কেটেছে৷ তাই এই শহরের জন্য মায়া বারংবার একটু বেশিই যেন৷ নিউইয়র্ক শহর আজ তুষার ঝড়ে একেবারে বেহাল দশায় রুপান্তর হয়েছে। চারিদিকে সাদা বরফে ছেয়ে গেছে৷ শীতে হাড় ভেঙে যাওয়ার উপক্রম কিন্তু ভাগ্যিস রুম গরম করার জন্য ফায়ার বক্স আছে৷ শৈত্যপ্রবাহের জন্য আজ সূর্য উঠেনি৷ এ দৃশ্যপট ইমানের জন্য আজকাল দুধভাত। কিন্তু তার বিপরীত প্রান্তে গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকা রমনীর জন্য এটা নিসন্দেহে বিরাট চমক। ইমান তার এক্সাইটমেন্ট উপভোগ করতে চায়৷ এখন ঘড়িতে বাজে কেবল ছোয়া পাঁচটা৷ কালকে রাতে তারা দেরি করে ঘুমিয়েছে৷ সাড়ে বারোটার পর। সম্ভবত একটা থেকে ওয়েদার খারাপ হতে শুরু করেছে৷ কালকে।গভীর ঘুম ঘুমিয়েছে৷

সে ঘুমিয়ে যাওয়ার জন্য আজকে মিরাকে বেডে এনে শোয়াতে পারেনি৷ নিশ্চয়ই বেচারীর এখন ঘার-কোমড় ব্যথা করছে৷ ওইটুকু ডিভানে শোয়া যায়? মেয়েটা প্রচুর জেদি তো। কথা তো শুনবেই না। বরং নিজে যা বলবে তাই। ইমান বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে খুব আস্তে পা ফেলে মিরার নিকটে যায়। এরপর হাঁটু মুড়ে বসে ফ্লোরে। ফ্লোর ঠাণ্ডা হয়ে আছে৷ সে নিজের ডান হাত মিরার গালে রাখে। এরপর খুব মোলায়েম কণ্ঠে ডাকে, ” ওয়াক আপ মিরা।”

মিরা সামান্য নড়েচড়ে উঠে। তার গলা অব্দি পাতলা কম্বল জড়িয়ে রাখা। ইমান কম্বল সরিয়ে দিল। সঙ্গে সঙ্গে তার মনে হলো, কম্বলটার জায়গায় সে থাকলে মন্দ হত না কিন্তু! আনমনে হেসে উঠে সে। এরপর আরো জোরে ডাকে, ” উঠবা না? উঠ।”

মিরা চোখ খুলে মুখের সামনে ইমানের হাসোজ্জল মুখটা দেখে ভারী অবাক হলো। বিষ্ময়ের তোড়ে সে চোখ কচলে বলে, “কী হয়েছে? ”

— ” নিউইয়র্কের সবচেয়ে সুন্দর সকাল দেখার নিমন্ত্রণ জানাচ্ছি। শেহজাদী আপনি কী কষ্ট করে উঠে চমৎকার সকালের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান?”

মিরা এবারে না উঠে পারল না৷ কী দেখাবে তাকে? হুট করে তার সঙ্গে এতো সুইট ব্যবহার কেন করছে? মিরা বলে উঠে, “কোথায় নিয়ে যাবেন?”

ইমান এক গাল হেসে তাকে উঠে দাঁড় করিয়ে ওর চোখ নিজের হাত দিয়ে ঢেকে দিল। মিরা তার হাতের উপর হাত রেখে বলে, “আরে করছেন কী?” চোখ হাত দিলেন কেন? তাহলে দেখব কীভাবে? পাগলামি না এসব?”

–” একটু চুপ করবে? ”

মিরা নীরব হয়ে গেল। ইমানের দেখানো পথে সে হেঁটে গেল। পায়ে পা বেজেছিল একবার। সে সামলে নিয়েছে৷ এরপর যখন ওর চোখ থেকে হাত সরিয়ে দিল এবং মিরা চোখ খুলে তাকালো। সঙ্গে সঙ্গে বিষ্ময়ে, খুশিতে তার হৃদয় কম্পিত হলো। বিশাল, ঝকঝকে, স্বচ্ছ জানালার দিকে তাকিয়ে সে চোখ ফেরাতে পারল না। যেদিকে চোখ গেল সেদিকেই পেচা তুলার ন্যায় বরফ। ঝাকে ঝাকে আকাশ থেকে বরফ পরছে৷ প্যাচানো তুলা উড়িয়ে দিলে যেভাবে উড়ে ঠিক সেইভাবে বরফ গুলো দিক-বেদিক হয়ে পতিত হচ্ছে৷ সামনের বাসার দোতলার সানসেট বরফে ঢেকে গেছে৷ ম্যাপেল ট্রি এখন রেড থেকে হুয়াইট হয়ে গেছে। বেঞ্চে স্তুপ আকারে বরফ পরে আছে৷ এছড়াও সবুজ গাছ গুলোতে বরফ লেগে আছে। রাস্তার চারপাশে বরফ আর বরফ৷ তবে অদ্ভুত রকমের ঘন কালো অন্ধকার চারপাশটা ঘিরে রেখেছে৷ জানালা আর বারান্দার দরজা একদম লক করা৷ খোলা যাবে না বুঝি। মিরার মন চাচ্ছে বাইরে গিয়ে বরফ ধরে দেখুক একবার। আদৌ কী সম্ভব! আসমান থেকে বরফ পরা৷ টিভিতে বহুবার দেখেছে এ দৃশ্য কিন্তু বাস্তবের দেখার মধ্যে অন্যরকম এক ভালো লাগা৷ নিজের চোখে বিশ্বাস হচ্ছে না। আজ তুষারপাত হচ্ছে৷ সে নিজ চোখে দেখছে৷ তুষারপাত দেখার ইচ্ছা তার ছোটকাল থেকে। কিন্তু এটা যে এতো দ্রুত পূর্ণ হবে তা কল্পনাও করেনি৷

ইমান পেছন থেকে বলে, “সারপ্রাইজটা কেমন ছিল?”

মিরা বরফ খন্ডের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে, “আপনি জানতেন আজ তুষারপাত হবে?”

— জানতাম বলতে, ওয়েদার রিপোর্টে সো করেছিল তখন দেখেছি।”

–” আমার বাইরে গিয়ে ভিজতে মন চাচ্ছে। বরফ গুলো নিয়ে খেলতে মন চাচ্ছে। ”

–” বাচ্চারা বরফ দিয়ে খেলে। দুপুর হলেই দেখবে সব ক’টা নিচে নামবে ৷ হৈচৈ শুরু করে দিবে। স্নোম্যান বানাবে। তুমি কী বাচ্চা? অবশ্য বাচ্চাই বলা চলে। যারা ভুতে ভয় পায়, তারা নিশ্চয়ই আন্ডাবাচ্চা৷ ”

মিরা তুষারপাত দেখায় এতো মগ্ন যে ইমানের খোটা তার গায়ে মাখালো না। সে অদ্ভুত নয়নে চেয়ে আছে৷ কীভাবে ভূপৃষ্ঠের উপর বৃষ্টির ফোটা নিচে নামতে নামতে বরফ হয়ে যাচ্ছে৷ কী দারুণ লীলাখেলা!

ইমান আলমারি থেকে জ্যাকেট বের করে দিল। জেন্টস জ্যাকেট ছিল ওটা। তবুও বাইরে যাওয়ার লোভ সামলাতে না পেরে মিরা জ্যাকেট পরে নিল। স্কাই ব্লু রঙের সেই জ্যাকেটে নিজেকে অন্য এক বেশে আবিষ্কার করে সে। নিজের এ রুপ এতোকাল কই লুকিয়ে ছিল? ইমানকেও দেখলো মোটা সোয়েটারের উপর কোট গায়ে দিল। এরপর দু’জোড়া বুট বের করল। নিজে এক জোড়া পরে। এবং মিরাকে ইশারায় পরতে বলে। মিরা নিজের পায়ে বুট পরিধান করে বুঝতে পারল সাইজে তার দ্বিগুণ এই বুট জুতো। তবুও কিছু বলল না। তার বাইরে যাওয়া চাই৷ ইমানের ওভার কোটটা ছাই রাঙা। সে দু’বার তার দিকে আড়চোখে তাকালো৷

ইমান বলে, ” বেশি দূর যাব না কিন্তু। সামনেই যাব। আর অল্প কিছুক্ষণ থাকব৷ লেটস গো।”

–” ওকে।”

মেইনডোর খোলামাত্র মিরার ফিল আসল সে ডিপ ফ্রিজের মধ্যে ঢুকে পরেছে। পুরা পৃথিবি যেন ফ্রিজ! ওয়েদার দুর্যোগপূর্ণ প্লাস এতো সকাল হওয়ায় সম্পূর্ণ এলাকা নির্জন। কোন গাড়ি নেই। নিউইয়র্কবাসী মনে হয় আরাম করে ঘুমাচ্ছে আজ৷ একটা শুধু একজনকে দেখা গেল। মেইন রাস্তা ধরে আগাচ্ছে ছাতা মাথায়৷ গ্লুমি আবহাওয়া। শুকনো গাছের ডালে ডালে বরফ টুকরো নিচে পতিত হওয়ার সময় আটকে যাচ্ছে। এবং খানিকক্ষণ পর টুপ করে জমিনে পরে যাচ্ছে৷ জমে থাকা বরফের জন্য ভীষণ পিচ্ছিল হয়েছে রাস্তা। বিপদজনক। মেঘ ডাকছে থেকে থেকে৷ মিরার কাছে মেঘকন্যার কাদার আওয়াজ বাদে সবকিছু নতুন। বাতাসে পেচা তুলার মতো আনন্দে মাতোয়ারা এই তুষার নতুন তার কাছে। গাছে-গাছে বরফ ছেয়ে যাওয়া,পিচ ঢাকা রাস্তা কালো থেকে সাদা হওয়া, সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সুদর্শন পুরুষটার তার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকানো সব নতুন তার কাছে৷ জীবনে প্রথম তুষার ঝড়ে তার আসা। প্রথম অভিজ্ঞতা। খুব শীত লাগছে মিরার। শীতের চেয়েও উত্তেজনা হাজার গুণ। তার চুলের উপর বৃষ্টি এসে সঙ্গে সঙ্গে সাদা বরফ হয়ে জমে যাচ্ছে। আবার তুষার এসে জমছে এবং ক্ষণেই গলে পানি হচ্ছে। কয়েক টুকরো আবার গলল না। চুলে পেচিয়ে রইল। সে ঠাণ্ডা সইতে পারছে না। ঠকঠক করে কাঁপছে৷ বাসা থেকে চার কদম এগিয়ে গেছে তারা। ইমান ওভার কোটটা খুলে তার গায়ে জড়িয়ে দিল। ওর পরনে মোটা সোয়েটার আছে৷ খুব শীত লাগছে না তার৷ এই কোটটার দরকার মিরার৷

ওভার কোট গায়ে দিলে ঠাণ্ডা লাগা কমল কিছুটা৷ মিরা হাঁটা শুরু করে। তিন কদম যেতেই পিচ্ছিল রাস্তায় টাল সামলাতে না পেরে এবং সাইজে বিড় বুট পরায় চলনে সমস্যা সৃষ্টির জন্য সে ধপাস করে পরে গেল। একদম পা পিছলে আলুর দম অবস্থা। অবশ্য পরে গিয়ে সে বিন্দুমাত্র ব্যথা পেল না। বরং হাত-পা ছুড়ে দিয়ে সে আয়েশী ভঙ্গিতায় শুয়ে পরে বরফের মাঝে। মাঝ রাস্তায়। নির্জন জন্য কেউ নেই তাকে ডিস্টার্ব করার জন্য।

ইমান আস্তে করে বলে, ” ওহ গড, কি করছো?”

মিরা দু’মিনিট গড়াগড়ি খেল রাস্তায়। শোয়া অবস্থায় এতো চমৎকার লাগলো তার৷ ধূসর আকাশ। সূর্য হাল্কা কিরণ দিচ্ছে৷ কিন্তু সাক্ষাৎ ঘটাচ্ছে না সরাসরি। লুকোচুরি খেলছে মেঘমালার সঙ্গে। বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না। বাতাসের তোড়ে চোখের পাপড়ি বন্ধ হয়ে আসছে৷ তার ওভার কোটে, চুলে, বাহুতে বরফ লেগে গেছে। অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় আর পারল না সে। উঠে বসল৷ এরপর হাত দিয়ে গোল গোল করে বরফ গুলোকে বল আকার দিচ্ছে। আগে ছোটবেলায় সে আর ইরা ডিপ ফ্রিজের গায়ে লেগে থাকা বরফ চামচ দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বের করে মাথায় দিত। গায়ে মাখত। ওইটাই খেলা ছিল তাদের৷ আম্মু সেজন্য বকত খুব৷ আচমকা সে খিলখিল করে হাসে। এরপর সামান্য বরফ তুলে মুখে দেয়। এবং ধুক করে মুখ থেকে ফেলে দিল। এই কাজটা সে কেন করল কে জানে!

ইমান বলে উঠে, ” চকলেট সিরাপ আনবো? বরফের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারবে৷”

মিরা চোখ-মুখ কুচকে ছিঃ বলে উঠে। এরপর হাতে দলা পাকানো বরফ ইমানের দিকে ছুঁড়ে মারে৷ আচানক আক্রমণে ইমান অবাক হলো। এরপর সেও বরফ তুলে নিয়ে তার দিকে ছুঁড়ে মারে। দুজনের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হলো কে বেশি বরফ ছুঁড়ে মারতে পারে৷ খেলা জমলো বেশ। একটা সময় দুজন ক্লান্ত হয়ে নিচে বসে পরে৷ মিরা আবারো বরফের মাঝে শরীর এলিয়ে দেয়৷

ইমান অপলক নয়নে তাকালো তার পানে। এতো এতো সৌন্দর্য তার চোখকে ভষ্ম করে দিয়ে যাচ্ছে যেন৷ এই মূহুর্তে তার নিজেকে সবচেয়ে সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে। এই মায়াবতী মেয়েটা তার৷ একান্ত তার৷ একটা সময় মেয়েটা তাকে মন-প্রাণ উজাড় করে ভালোবাসত। সে ভালোবাসার মূল্য দিতে পারেনি। হুট করে অপরাধবোধে তার অন্তর বিষাদময় হয়ে উঠল। সে মিরার দিকে ঝুকে আসে। এরপর দু’হাত দিয়ে তাকে একটা সীমিত জায়গা অব্দি বন্দী করে৷ মিরার উপর নিজের মুখমণ্ডল এগিয়ে আনে সে। দুজনের মধ্যে দূরত্ব খুব কম৷

কয়েক পল সেভাবেই কেটে যায়৷ মিরার চোখের পলক যেন থেমে গেছে। সঙ্গে থেমে গেছে তাকে ঘিরে সমস্ত দুনিয়া৷ নজড়কাড়া আঁখি যুগল যেন পলক ভুলতে ভুলে গেছে৷ ওই মায়াবী ঘোলাটে চোখের মনির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ইমান যেন সম্মোহন হচ্ছে। বুকের বাম পাশটা লাফাচ্ছে শুধু। ফেটে যাবে নাকী! মিরার চোখে সে এক সাগর অনুভূতি দেখতে পাচ্ছে৷ সেই সাগরের মায়ায় ডুবে যাচ্ছে সে। অতলে, অনেক গভীরে। যেখান থেকে উঠে আসার উপায় নেই। ওই সাগরের পথভ্রষ্ট নাবিক হতে চায় সে।

টুপটুপ করে বৃষ্টির কণা ইমানের মাথায় পড়ছে। সেখান থেকে কপালে বেয়ে পড়ছে৷ কপাল থেকে চুইয়ে চুইয়ে বরফপানি মিরার চোখে-মুখে পড়তেই সে আবেশে চোখ বুজে ফেলে৷ এতেই তার ফর্সা টুকটুকে গালটা লালাভ আভায় ছেয়ে গেল। ইমান সেই লজ্জামাখা লালাভ আভামাখা গালে হাত ছুইয়ে বলে, ” আরেকবার কী সুযোগ দিবে? আই ওয়ান্ট এ চান্স। লাস্ট চান্স৷ আই থিংক আই লাভ ইউ। ওনেস্টলি স্পিকিং। আমি সত্যি এই সম্পর্কটাকে টিকিয়ে রাখতে চাইছি। বেটার হাফ হিসেবে পেতে চাইছি তোমায়৷ মিরা, উইল ইউ গিভ এ আনাদার চান্স। আই উইল নট ডিজাপয়েন্ট ইউ এগেইন। ট্রাস্ট মি।”

তখনো মেঘেদের গুড়ুমগুড়ুম ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। খুব হুট করে বাতাসের প্রবাহ বেড়ে গেল। তেজ বৃদ্ধি পাচ্ছে চক্রবৃদ্ধি হারে৷ ঠাণ্ডা প্রকোপ বাড়তে লাগলো। মিরার ঠোঁট কাপছে। চোখ খুলেছে সে। কিন্তু নির্বাক। ইমান এমন কথা বলবে তা কল্পনাতেও ভাবেনি। বরফ গলে যেভাবে পানি হয়ন,ঠিক সেইভাবে কী মানুষের ঘৃণা গলে ভালোবাসায় পরিণত হয়?

এতো কাছ থেকে ইমানের উত্তপ্ত নিশ্বাস তাকে পাগল করে দিচ্ছে। ওর বলা প্রতিটা বাক্য তার বুকের ভেতর জলচ্ছাস বয়ে আনছে। হৃদয়টা ফালা ফালা করে দিচ্ছে৷ “উইল ইউ গিভ এ আনাদার চান্স” বাক্যটা কানে বাজছে শুধু। তিরতির করে কাপছে তার চোখের আইলেস৷ ঠোঁট জোড়া মৃদ্যু কম্পনমান৷

ইমান একাধারে তার দিকে তাকিয়ে আছে৷ মেয়েটার রুপ অপার্থিব। চোখ সরাতে মন চাইবে না৷ তার মুখ,গালে, চোখের পাপড়িতে পানির ছিঁটে৷ ইমান সামান্য হাসল। চোখে চোখ রেখেছে তারা। দৃষ্টিবিলাস চলছে৷ চোখে চোখে অনেক না বলা কথা চলছে৷ মিরার চোখে স্পষ্ট অভিমান দেখছে সে। আচ্ছা মেয়েদের অভিমান কীভাবে ভাঙ্গাতে হয়?

ইমান জবাবের আশায় তীর্থের কাক। কিন্তু ওর নীরবতা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তাকে৷ অস্থির হয়ে পরে সে। এছাড়াও হুট করে আবহাওয়া প্রচুর খারাপের দিকে যাচ্ছে। বাসায় ফেরা উচিত৷ কিন্তু উত্তর না নিয়ে যাবে না সে।

ইমান নড়েচড়ে উঠে বরফের উপর মিরার নরম হাত দুটো চেপে ধরে৷ বরফের মধ্যে তলিয়ে যাচ্ছে তাদের হাত। ইমান ওর গোলাপী কম্পনরত ঠোঁটযুগলে নিজের সিগারেট খাওয়া কালচে বর্ণ ধারণা করা পুরু ঠোঁ-ট ডু-বা-লো। দু’মিনিট আগেও আবহাওয়ার তান্ডবে শীত লাগছিল। মুহুর্তে সব শীত পালিয়ে কোথা থেকে ভ্যাপসা গরম এসে ভর করে দেহে৷ এটা কী ভালোবাসার উষ্ণতা? ইমানের খুশিতে নাচতে মন চাচ্ছে। অবশেষে সে “ভালোবাসা” এর মতো কটমট কঠিন টার্মটা বুঝতে সক্ষম।

Why love is so sweet?
Why life is so beautiful?

[ কয়েকদিন ধরে বেশ কিছু পাঠক গল্প লম্বা হচ্ছে জন্য বিরক্ত প্রকাশ করছেন। আজকের পর্বটা তাদের জন্য একটু স্পেশাল। আমার জায়গায় অন্য কোন রাইটার হলে সরাসরি বলত ইগনোর করুন৷ কিন্তু আমি একথা কখনোই বলি না। কাজেই তাদের জন্য আজকের এই পর্বটা একটু ভিন্ন ভাবে লিখেছি। তাদের জন্য এটাই গল্পের সমাপ্তি। তাদের কাছে বিনীত নিবেদন তারা যেন এই পর্বকে শেষ পর্ব হিসেবে মেনে নেয়। এছাড়া আমার কাছে আর কোন সমাধান নেই৷

আমি জানি বেশ কিছু পাঠক আছে যারা শেষ অব্দি গল্পটা পড়বেন। যাইহোক আজকে যদি বোনাস দিই কেউ পড়বেন? রেসপন্স করবেন প্লিজ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here