ফেইরিটেল পর্ব-৪৫

0
1397

#ফেইরিটেল
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
Part–45

প্রেয়সীর পানে নিষ্পলক নয়নে তাকালো ইমান। সরাসরি প্রত্যাখ্যান তার বুকের সব ক’টা অনুভূতিকে কেটে-কুটে ক্ষত-বিক্ষত করছে৷ “না” ই যদি উত্তর হয়, তাহলে কেন এত্তো ঘনিষ্ঠ হলো সে? কেন-ই বা সুদূর সাত সাগর তের নদী পাড় করে তার কাছে ছুটে এলো? কেন এতো মায়া বাড়িয়ে ভেতর থেকে ইমানকে দুর্বল করে ফেললো? কেন করল এমন? কেন? কেন? কেন? এতোকিছুর উত্তর সে কার কাছে চাইবে?

মিরা তাকে উপেক্ষা করে পাশ কাটিয়ে নিচে নেমে যেতে ধরলে, ইমান খপ তার হার ডান হাত চেপে ধরে। সঙ্গে সঙ্গে মিরা হাত ছাড়ানোর চেষ্টায় উঠে-পড়ে লেগে যায়৷ একটা সময় সে ক্ষুব্ধ হয়ে গেল এবং ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে, ” হাত ছাড়ুন প্লিজ। সবসময় জোর খাটিয়ে লাভ হয়না৷ আপনি জোর করে নিশ্চয়ই আমার কাছ থেকে ভালোবাসা আদায় করতে পারবেন না?”

–” সম্ভব হলে করতাম কিন্তু আফসোস জোর করে ভালোবাসা যায় না।”

–” এই মোহাব্বত এতোদিন কোথায় ছিল? আমাকে ফেলে এসে একটা বারও খোঁজ নেননি। বিয়ের পরের অবহেলা করার দিনে এই মাখো-মাখো ইশক কোথায় ছিল ইমান?”

ইমান হাতের বাঁধন হালকা করতেই মিরা নিজের হাত সরিয়ে নিল। সে অবশ্য উত্তরের কোনরুপ প্রত্যাশা করে না৷ প্রতারকের কাছে কখনোই সঠিক উত্তর থাকে না৷

ইমান বলে উঠে, ” আমি জানি না আমার কী হয়েছে৷ এমন হওয়ার কথা ছিল৷ আমি তোমাকে কখনোই ভালোবাসতে চাইনি৷ বরং ঘৃণা করার চেষ্টা করেছি৷ প্রতিশোধ নিতে বিয়ে করেছিলাম। ভেবেছিলাম বিয়ে করে সম্পর্ক ভেঙে দিয়ে তোমার বাবাকে মানসিক কষ্ট ভোগ করাব৷ কিন্তু দেখো, তোমাকে কষ্ট দিতে সম্পর্ক ভাঙ্গার বদলে নিজেই ভেঙে গুড়গুড় হচ্ছি। এই প্রতিশোধময় বিয়ের জালে আটকা পরে গেছি। শক্র স্বামী থেকে সত্যিকারের স্বামী হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে যাচ্ছি।”

মিরা তার অধিকাংশ কথাই শুনল না। সে বড় বড় পা ফেলে অবিন্যস্ত কিন্তু চঞ্চল পায়ে ছাদ থেকে নিচে নেমে পরে। ইমান ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। আবহাওয়া এতোক্ষণ যাবত অনুকূলে ছিল। বরফ পড়ছিল না৷ কিন্তু রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীত যেন হুহু মাত্রায় আরো বাড়ল। বরফ পরা আরম্ভ হলো। তিরতির করে পেচা তুলোর মতো নরম তুষারও ইমানের গায়ে পাথর নিক্ষেপের ন্যায় ব্যথা দিচ্ছে৷ আসলে মনের বিষ সর্বাঙ্গে প্রবাহিত হচ্ছে। বহু দিন পর এতো খারাপ লাগছে তার। ঝাকে ঝাকে মন খারাপেরা উড়াল দিয়ে ঠিক বুকের মাঝে হামলে পরছে। এমন কষ্ট এর আগেও পেয়েছিল। বাবা যখন দ্বিতীয়বার বিবাহ করেন৷ ওই সময়কার কষ্টের মতোই আজও সেইম ব্যথা হচ্ছে৷ যন্ত্রণা হচ্ছে। দু’বার ই তার অবচেতন মন বুঝে গেছে আপনজন হারানোর যন্ত্রণা। আচ্ছা, আপনজন হারিয়ে যায় কেন? নিজ দোষে? কিংবা নিয়তির সাপলুডু খেলায়? সে জ্বলজ্বল করে আস্তে আস্তে নিভতে থাকা ক্যান্ডেলটার দিকে তাকালো। বরফ পড়তে আরম্ভ করায় ক্যান্ডেলও বাতাসের তোড়ে নিভে গেল। মুহূর্তেই আঁধার ছেয়ে গেল। অট্টহাসিতে ফেটে পরা চাঁদটাও দূরে সরে গেল৷ ইমান আধো অন্ধকারেই কেকটা হাতে তুলে সজোরে মেঝেতে ফেলে দিল। এরপর পরপর দুবার বুক ফুলিয়ে শ্বাস নেয়৷ সে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসতেই চোখে পরে নিচতলা থেকে অল্প বাতির আলো জ্বলছে। সম্ভবত হলরুমে বাতি জ্বালানো আছে। এতোরাতে কখনোই লাইট অন থাকার কথা নয়। সে হলরুমের দিকে আগালো। সেখানে পৌঁছাতেই দেখল, মিরা সোফায় চুপচাপ হেলান দিয়ে বসে আছে।

সে চোখ বন্ধ করে আরেকবার শ্বাস নিল। তৃষ্ণা পেয়েছে বেশ৷ পানি খেতে পারলে ভালো হত৷ সে বলে উঠে, ” রুমে আসো মিরা। কোন সিন ক্রিয়েট চাই না।”

মিরা তার দিকে ঘুরেও তাকালো না। বরঙ কানে হেডফোন গুঁজে মোবাইল চালানোতে ব্যস্ত হলো। ইমানের উপস্থিতি তার কাছে ঠুনকো হয়েছে যেন। কেন যে এই উপেক্ষা সে নিতে পারল না। ধুপধাপ করে শব্দ তুলে উপরে উঠে গেল৷ মিরা ভুলেও পেছনে তাকায় না। দোতলা থেকে বিকট শব্দ ভেসে আসে। কিছুক্ষণ পর ইমান নিচে নামল। এ্যাশ কালারের জ্যাকেট পরিধান করে। হাতে গাড়ির চাবি৷ মুখটা রাগে থমথমে হয়ে আছে৷ এই মুহূর্তে তাকে স্কুলের সবচেয়ে রাগী টিচার মনে করলে ভুল হবে অনেকের। মিরা তাকে একবার দেখে দৃষ্টি সরিয়ে নিল। কিন্তু মনে মনে বেশ চিন্তিত হলো সে। খচখচ করতে লাগলো। এমন ওয়েদারে ওর বাইরে যাওয়াটা শোভা দিচ্ছে না। কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারছে না। দ্বিধার দেয়াল এসে তাদের দুজনের মধ্যে দূরত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে৷ ও বেরিয়ে যেতেই সে ফোন টেবিলের উপর রেখে দিল। মেইনগেট বেশ শব্দ করে লাগানোর ভয়ংকর শব্দে বুক কেঁপে উঠে। সেও দ্রুত মেইনডোরের সামনে এসে দাড়ালো। নিউইয়র্কের তাদের বাসাটার মেইনডোরের পাশেই ছোট সাইজের একটা জানালা। জানালার গ্রীলে ফেইরিলাইটস দেওয়া আছে৷ কখনো-সখনো বুঝি জ্বালানো হয়। শুধু তাই না, ফাঁকা জায়গায় টবে করে গাছ লাগানো আছে। টবের মধ্যে নুড়ি শ্বেত পাথর দেওয়া আছে। কাচের জানালার পর্দা সরাতেই নজর পড়ল এ্যাশ জ্যাকেট পরা লম্বা ছেলেটার উপর। গাড়ির কালো কভার সরাচ্ছে সে-ই সঙ্গে গাড়িতে লেগে থাকা স্নো সরিয়ে সে ড্রাইভিং সীটে বসে সাইসাই করে বেরিয়ে গেল। তিন সেকেন্ডের মধ্যে সে অদৃশ্য হয়ে যায়। গাড়ির স্পিড কী বেশি তুলেছে? এই রাত্রিটা মিরার আজীবন মনে থাকবে৷ স্মৃতির পাতায় স্মরণীয় এক রজনী। ধবধবে সাদা বরফের উপর জোছনার আলো ঝলমল করছে৷ জোৎস্নারা বুঝি খেলাধুলা করছে৷ ধূসর মেঘে আকাশ সামান্য ছেয়ে গেলেও, অন্য একপাশ মেঘহীন৷ মেঘহীন সেই আকাশে থালার মতো চাঁদটা মিটমিট করে জ্বলছে। দূর, বহু দূর থেকে নক্ষত্ররাজী তীক্ষ্ণ কিরণ বিলাচ্ছে মেদেনীতে৷ জোছনার আলোর তীব্রতায় সারা রাস্তা জুড়ে পরে থাকা বরফ জ্বলজ্বল করছে। এটা ভারী অদ্ভুত একটা দৃশ্য। গ্রামাঞ্চলে দিঘির জলে চাদের প্রতিচ্ছবি যেমন দেখায় ঠিক তেমন, তবে তফাত হলো সম্পূর্ণ রাস্তায় জ্বলছে, ঝলমল করছে। ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে মিরা বিড়বিড় করে বলে, ” রাগ কী শুধু আপনার হয়? আমার রাগ লাগে না? আমার অনুভূতির কোন মূল্য নাই আপনার কাছে? যখন মন চাইবে কাছে টানবেন, আবার ইচ্ছা হলেও দূরে সরে আসবেন। আমি তো ফেলনা না৷ আমাদের বাসররাতে আপনার দুর্ব্যবহার সহ্য না করে, আমিও রেগে বাসা ছেড়ে বেরিয়ে যেতে পারতাম৷ দূরে সরে বা পালিয়ে যাওয়া সমাধান হলে,আজকে পৃথিবীতে কোন ঘর থাকত না।”

_____________________

মোবাইলের স্ক্রিনে দুর্দান্ত একটা রোমান্টিক সীন চলছে। জুইয়ের সবটা মনোযোগ সেই সিনের দিকে। রিসেন্ট রিলিজ হওয়া নেটফ্লিক্সের একটা সিরিজ দেখছে সে। তের তম এপিসোডে আছে। কাজের ফাকে অবসরে দেখতে বেশ লাগে। আজকে দশটায় বসেছিল ফোন নিয়স৷ একটানা পাঁচটা এপিসোড দেখল সে। এখন ঘড়ির কাটা দু’টো ছুঁইছুঁই। মোবাইলে ল্যারির কল আসায় সে বিরক্ত হলো। ল্যারির কাজ কি এখন? সে দু’ সপ্তাহ ধরে ক্লাবে যায় না। টাকাও সব পে করা আছে। তাহলে ফোন দিচ্ছে কেন?

ফোন রিসিভ করতেই ল্যারি বলে উঠে, ” ইমান এসেছে দেখলাম। তুমি ও কী এসেছো জুই?”

–” ক্লাবে?”

–” হ্যাঁ। এসেছো তুমি? ”

–” না। আমি বাসায়৷”

–” ইমান কিছুক্ষণ আগেই এসেছে৷”

জুইয়ের মন চাইলো বলতে ইমান এসেছে তো আমি কী করব? এরপর সে নিজেকে শুধালো। মিষ্টার খানের সবকিছুই তার জন্য বিশেষ এবং গুরুত্বপূর্ণ।

জুই বলে, ” কী করে ও?”

–” প্রচুর ড্রিং/ক করছে৷ ও তো এতো ড্রিং/ক করে না কোনদিন।”

–” মুডে আছে বস। ওর প্রোমোশন হলো না? এজন্য চিল করছে। লেট হিম ইনজয়৷”

–” ওকে।”

ল্যারি ফোন কেটে দিল। এরপর ক্লাবের ভেতরে ঢুকে ইমানের দিকে তাকালো। ওকে দেখে মোটেও মনে হচ্ছে না, ও হ্যাপি বা মজা করছে।বরং উদাস লাগছে। দুঃখী, ভারাক্রান্ত মনে হচ্ছে। বাঙ্গালী-ইন্ডিয়ানদের এই একটা দোষ। ওরা জানেই না জীবনটা কিভাবে উপভোগ করতে হয়। সারা জীবন খালি আক্ষেপ করা পাবলিক ওরা। বিরক্ত লাগে ল্যারির। আরে বাপ, এতো কষ্ট কিসের তোদের? মজা কর না ভাই! ওভার ইমোশনাল পিপল।

জুই ফোন রেখে ভাবল আরেকটা এপিসোড দেখবে৷ কিন্তু রাত বেশি হয়েছে৷ ইচ্ছেও করছে না। বরংচ ফোনের গ্যালারি ঘাটা যাক। সে নিজের সপ্তম তম জন্মদিনের ছবি দেখল। কী কিউট ছিল দেখতে! পাপা কতো ইয়ং আর হ্যান্ডসাম ছিল। আর এখন সব চুল পেকে যাচ্ছে। পাপা ওকে নিয়ে ডিজনিল্যান্ড ঘুরতে বেড়িয়েছিল সেইদিন৷ বাবা-মেয়ে অনেক মজা করেছিল সেদিন৷ এরপর তার স্কুল ইউনিফর্ম পরা ছবি স্ক্রিনে ভেসে উঠে। হাই স্কুলে উঠার সময়কার ছবি। স্কুলের লাইফের কথা সে কোনদিন ভুলবে না৷ এই সময়গুলো তার জীবনের গোল্ডেন ডেজ। স্কুল লাইফেই ইমানের সঙ্গে তার পরিচয়। প্রথম দেখা এবং প্রেমে পরে যাওয়ার দিনটা স্মৃতির মানসপটে ভেসে উঠে। সে হাইস্কুলে নিউ স্কলে টান্সফার হলো। এজন্য মন খারাপ থাকত বেশিরভাগ সময়। বন্ধুদের সঙ্গে আলাদা হওয়ার কষ্টে সে স্কুলে একা একা থাকত, ঘুরত। টিফিন পিরিয়ডে মুখ কালো করে বসে থাকত৷ একদিন সে কি ভেবে যেন ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে হাটা ধরে টিফিন ব্রেকে৷ হাটতে হাটতে প্লে গ্রাউন্ডে আসতেই অঘটন ঘটে গেল। কোথায় থেকে যেন একটা বাস্কেটবল তার গায়ে এসে ধাক্কা খেল। সে ভীষণ ব্যথাও পায়। মাঠে থাকা স্টুডেন্টরা হাসাহাসি শুরু করে দেয়। ভীষণ লজ্জা লাগে তার৷ মনে মনে বাস্কেটবল তার গায়ে মারা প্লেয়ারকে গালি দেয় খুব। সে সামনে থাকা দেখল, চারটে ছেলে তার দিকে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা ছেলেটা সিরিয়াস ভঙ্গি করে বলে, “সর‍্যি৷ আশা করি তোমার বেশি ব্যথা লাগেনি৷”

ওই এক পলের মধ্যে জুইয়ের যেন কী হলো। ওর কণ্ঠে নিশ্চয়ই ব্যথা কমানোর মেডিসিন ছিল। তার ব্যথা ঘায়েব হয়ে গেল।

ওর কথা শুনে বাকি তিনজন হেসে দিল। তাদের হাসতে দেখে জুই কেদে ফেলে৷

ছেলেটা আবারো বলে, “সিরিয়াসলি গার্ল! এই সিলি রিজনেও কাদতে হয়?”

এরপর সে বেজায় বিরক্ত হয়ে বল হাতে নিয়ে তিন কি চারবার হাত দিয়ে জমিনে টাচ্ করে আপ এন্ড ডাউন করালো। জুই তাকিয়ে থাকল৷ এরপর সে বল নিয়ে ছুট লাগায় মাঠের দিকে। সেদিন প্রথম দেখা এবং প্রেমে পরা৷ জুই অবশ্য তার জুনিয়র ছিল। ইমান চিনত ই না তাকে। দীর্ঘদিন লুকিয়ে লুকিয়ে এক তরফা ভালোবেসেছে সে মিষ্টার খানকে!

__________________

— খামোখা আমার ছেলেকে দোষ দিবেন না সুপ্তি আপা। আপনি খুব ভালো করেই জানেন আপনার মেয়ের চরিত্র কেমন?”

কথাগুলো অনিকের মা বিনু বলে উঠলেন। তিনি সাপের মতো ফেনা তুলে ফোস ফোস করছে রাগে। তার একমাত্র আদরের ছেলেকে ইরা আঘাত করেছে এটা মানতে তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। ছেলের দোষ বা অন্যায় বা অপরাধ কোনটাই তিনি চোখ খোলা অবস্থায় দেখতে পারছেন না৷ সুপ্তি বেগম সম্ভবত এমন কিছু শ্রবণ করার ধারণাও করেনি। তিনি মিইয়ে যাওয়া গলায় বলে, ” আমার মেয়ের চরিত্র বলতে কী বুঝাতেন চাচ্ছেন ভাবী?”

বিনু ভাবী কঠিন স্বরে বলে, ” আপনার মেয়ে আমার ছেলের রুমে কী করছিল? খুব তো বলছো আমার ছেলের চরিত্র ভালো না। শুনেন আপা, আমার ছেলে কিন্তু আপনার মেয়ের রুমে যায়নি। আপনার মেয়ের প্রয়োজন তাই সে আমার ছেলের রুমে এসেছিল। ফাকা বাসায় ও কেন একটা পরপুরুষের ঘরে ঢুকবে? প্রশ্ন করেন আপনার মেয়েকে।এখন ঢং করছে। বে/হা/য়া মেয়ে৷ সারাদিন চ্যাট-চ্যাট করে কথা বলবে। আপনার মেয়ে তো ও-ড়-নাও ঠিক ভাবে নেয় না৷ আমার ছেলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে৷ বড় বোন আমেরিকান ছেলেকে পটায় বিদেশ গেল এখন ছোটটা আমার ছেলেকে বশ করার চেষ্টায় আছে৷”

মামীর কথা শুনে ইরা হাউমাউ করে কেঁদে দিল৷ এই ছোট জীবনে এতো অপমান সে কোনদিন সহ্য করেনি। সুপ্তি বেগম অনুভূতিহীন দৃষ্টি মেলে চেয়ে থাকেন। এরপর ইরার হাত ধরে তাদের রুমে ফিরে আসলেন। দরজা লাগাতেই ইরার কান্নার বেগ বেড়ে যায়৷

সুপ্তি বেগম বলে, ” জীবনের পথচলা এতো কঠন হবে জানলে ওই বাসায় মাটি কামড়ে পরে থাকতাম। ইরা জিনিসপত্র গুছা৷ আমরা আর এক মুহূর্ত এবাসায় থাকব না৷”

__________________

সকাল সাতটার দিকে যখন হাসনাহেনা ঘুম থেকে উঠে নিজের রুম থেকে বের হলেন, উনি দেখলেন মিরা জেগে গেছে৷ হলরুমে বসে আছে৷ এ’কয়েকদিনে সে মিরাকে এতো আর্লি উঠতে দেখেনি। সে সামনে এগিয়ে এসে প্রশ্ন ছুঁড়লো, “আজ এতো সকালে উঠলে যে?”

মিরা চকিতে উঠে আন্টির কণ্ঠ শুনে। সে রাত থেকেই এক জায়গায় বসে আছে। কিছুক্ষণ আগেই অহেতুক কেদেছে৷ আন্টি তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। সে দ্রুত চোখ মুছে ফেলে তার দিকে তাকিয়ে বলে, ” ঘুম আসছিল না।”

–” ও।”

যথারীতি নতুন আরেকটা দিন শুরু হলো। আজকেও তুষারপাত হচ্ছে। তবে আগেরদিনের চেয়ে তুলনামূলক কম। নাস্তার টেবিলে সাদ বলে, ” আজকে ভাইয়ার সাকসেস পার্টি। বেস্ট এমপ্লয়ি এয়ার্ড পাবে। আমাদের সবাইকে ভাইয়া বিকেলের মধ্যে যেতে বলেছে। মম তুমি যাবে না?”

হাসনাহেনা ব্রেডে বাটার লাগাতে লাগাতে বলে, ” আজকে রাতে তোমার বাবা ফিরবে৷ আমি বরং থেকে যাই।”

মিরা সুযোগ বুঝে বলে, ” সাদ তুমি যাও৷ আমার শরীর ভালো না।”

হাসনাহেনা বলে, ” তোমরা না গেলে আবার ইমান রাগ করবে। মিরা তুমি সারাদিন রেস্ট নাও। বিকেলে কিছুক্ষণের জন্য যেও। তোমার জন্য আমি একটা গাউন বের করে দিচ্ছি৷ সেটা পরো। আমি আমি সাজিয়ে দিব। কত শখ ছিল একটা মেয়ে হবে আমার। ওকে নিজের হাতে সাজাব। তা আর হলো কই।”

ঘড়ির কাঁটা যখন বিকেল হাসনাহেনা জোর করে মিরাকে সাজাতে বসালো। মেকাপ করে দিল। চুল বেধে দিল। এরপর গোলাপি রঙের একটা গাউন হাতে ধরিয়ে দিল পরার জন্য। সাদ আর সে সন্ধ্যা ছয়টায় রওনা হলো৷ মিরার যাওয়ার একদম ইচ্ছা নাই। তাকে তো একবারও বলেও নি!যাইহোক, ক্যাবে করে তারা বিশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যায়৷ খুব সুন্দর একটা বিল্ডিংয়ের এগারো তলায় পার্টিটা হচ্ছে। পার্টি সেন্টারে গিয়ে দেখা গেল অনেক গেস্ট চলে এসেছে৷ মিরার চোখ কেবল ইমানকে খুজছে। কালকে রাত থেকে ও বাসায় ফেরেনি। সারাটা দিন বাইরে ছিল৷ অবশেষে ইমানের দেখা মিলল। হুয়াইট শার্ট আর ব্লাক স্যুট পরা। হাতে দামী ঘড়ি। ব্লাক সু পরেছে৷ সাদের দিকে এগিয়ে এসে বলে, ” এতো দেরি হলো কেন?”

সাদ মিরার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। যার কারনে ইমান আর তার মধ্যকার দূরত্ব বলতে গেলে একহাতের কম। ওকে দেখেই বুক ছ্যাত করে উঠে মিরার। চোখ রক্তিম বর্ণ ধারণা করেছে। পা কেমন টলছে ওর। কথা বলার সময় মুখ দিয়ে বা-জে গন্ধ আসছিল৷ মিরা সচকিত দৃষ্টিতে তার পানে তাকালো। ইমান তাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে পা বাড়ায়৷ মিরা দৌড়ে এসে তাকে জিজ্ঞেস করে, ” এতো ড্রিংক কেন করেছেন? ”

–” তাতে তোমার কী? হু আর ইউ? আমাকে প্রশ্ন করার কে তুমি? জাস্ট গেট লস্ট। এখানে কেন এসেছো? ”

চলছে।

[ কালকের পর্বে টুইস্ট আসছে।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here