ফেইরিটেল পর্ব-৪৬

0
1460

#ফেইরিটেল
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
Part–46

গোটা শহরজুড়ে এক অদ্ভুত রকমের বিষন্নতা নেমে এসেছে৷ নেমে এসেছে এক ফালি অন্ধকার। মিরারও চোখে আঁধার নেমেছে। ভীষণ অপমানিত বোধ করছে সে। সত্যি তো সে এখানে কী করছে? তার এখানে কোন কাজ নেই। ওকে তো ইনভাইটও দেওয়া হয়নি৷ বিনা দাওয়াতের অতিথি সে৷ সে সামনের দিকে তাকালো। ওর চাহনি যেন তাকে পুড়ে ছাড়খার করে দিবে৷ কেমন ক্ষতপ্রাপ্ত, পাগলাটে, খেপাটে সেই দৃষ্টি৷ মায়া হবে সেই দৃষ্টির পানে তাকালে৷ হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে মিরা ব্যথা অনুভব করে কোন কারণ ছাড়া৷ সে মরা গলায় বলে, “ঘুমান নি কেন সারারাত? ”

ইমান তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল। মুখে এক টুকরো হাসি ঝুলিয়ে বলে, ” ঘুম কেড়ে নিয়ে আদিখ্যেতা দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে কেন ঘুমাই নি? ভেরি ফানি।”

–” আমি কারো ঘুম কেড়ে নিই নি।”

ও আরেকদফা হাসলো। কী ধারালো সেই হাসির চাবুক। মনে হচ্ছে সরাসরি মিরার গায়ে বসে যাবে৷ নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। সে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে, ” আমি যাচ্ছি তাহলে। বাই দ্যা ওয়ে, কংগ্রাচুলেশনস।”

ইমান ভ্রু কুচকে বলে, ” যাচ্ছি মানে? কোথায় যাবে? ”

–” বাসায় যাব আপাতত।”

ইমান রাগান্বিত চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলে, ” বাসায় গিয়ে কী বোঝাতে চাচ্ছো, ইমান খান একটা অতিরিক্ত গেস্ট খাওয়াতে পারে না? আমাকে রাস্তার ব্রেগার মনে হয়? এম আই এ স্ট্রিট ব্রেগার?”

–” আপনি ড্রাং/ক। কী বলছেন নিজেও বুঝতে পারছেন না।”

–” তুমি কোথাও যাবা না। পার্টি শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত এখান থেকে বের হবে না।”

–” আমার এখানে ভালো লাগছে না৷”

–” ভালো না লাগলেও থাকতে হবে৷”

–” আপনি এমন পিকিউলিয়ার বিহেইভ কেন করছেন?”

ইমান ফোস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ” মিরা, তুমি কেন এতো হৃদয়হীনা হয়ে পড়লে? আমার বুকের ভাংচুর, তোলপাড় তোমার কানে পৌঁছায় না একটাবারও?”

মিরা কঠিন গলায় বলে, ” আমার ভেতরকার সব মিষ্টি অনুভূতিকে আপনি-ই গলা টিপে হত্যা করেছেন৷”

ইমান কথাটা শ্রবণ করামাত্র পাশের টেবিলে তার হাত দিয়ে আঘাত করল। বিকট শব্দ হলো। দু-তিন জন তাদের দিকে ফিরে তাকালো৷ কথা বলা শেষ করেই সে এলোমেলো পায়ে ডান দিকে চলে গেল। ডান সাইডে সম্ভবত বা-র৷ মিরা সেদিকে না এগিয়ে অনুষ্ঠানের মূল জায়গায় এসে দাড়ালো। স্টেজ তৈরি করা হয়েছে৷ স্টেজের সামনে টেবিলে কেক রাখা। বিশাল বড় কেক৷ এবং গ্লাস দিয়ে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য পিরামিডের মতো বানিয়ে রাখা আছে৷ সাদকে দেখা যাচ্ছে না। একা একা সে কিছুক্ষণ বসে থাকল। একজন ওয়েটার তাকে জুস আর ব্রাউনি খাওয়ার জন্য দিয়ে গেল৷ সে সময় কাটানোর জন্য চামচে টুংটাং আওয়াজ করল। ব্রাউনি মুখে দিতেই কেমন গা গুলিয়ে এলো। খেতে ইচ্ছা করছে না৷ চোখ থেকে টপটপ করে দু’ফোটা মোটা টসটসে তাজা নোনাজল গড়িয়ে পড়ল৷

ইমান বা-রে-র এককোনায় গিয়ে বসল৷ সঙ্গে সঙ্গে একজন ওয়েটার তার দিকেও এগিয়ে এলো। ওয়েটারকে ড্রিং/ক আনার নির্দেশ দিল সে। ওয়েটার বলে উঠে, “আপনার রুমের চাবি।”

ওয়েটার হাত বাড়িয়ে হোটেল রুমের চাবি এগিয়ে দিতেই ইমানের স্মরণ হয়, আজকের রাতটা সে ভেবেছিল এখানে এই হোটেলে কাটাবে মিরাকে নিয়ে ৷ স্পেশাল নাইট টাইপ কিছু করার ইচ্ছা ছিল।

ওয়েটার বলে, ” আপনার পছন্দমতো রুম ডেকোরেশন করা হয়েছে৷ লাল গোলাপ দিয়ে রুমে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ বিশটা ক্যান্ডেল জ্বালানো হয়েছে। আপনি কী একবার চেক করবেন স্যার ?”

ইমানের বুকে অজানা ব্যথা শুরু হলো। কত-শত প্লান-পরিকল্পনা করে রেখেছিল সে। অথচ সবটা এক নিমিষেই ভেস্তে গেল। সব সুখ যেন কেউ তীব্র টর্নেডোতে উড়িয়ে নিয়ে গেল!

ড্রি-ক-স আসার সঙ্গে সঙ্গে সে তা পান করা শুরু করল। এদিকে অনেকেই ড্রি-ক করতে এসেছে। নাচ-গানও চলছে৷ আমেরিকান প্রচুর আনন্দ করতে জানে। মজা করতে ভালোবাসে। ওদের প্রথমবার দেখলে মনে হবে তাদের কোন দুঃখ নাই। আসলে পৃথিবীর প্রতিটা মানুষের ভেতরেই সুপ্ত বেদনা লুকায়িত থাকে৷ ওরা তা প্রকাশ না করে হাসিমুখে সামনে পা বাড়ায়৷

আরেকবার ওর্ডার দিল সে।পাশের টেবিল থেকে হাসির তীক্ষ্ণ শব্দে মাথা ধরে গেল। বুঝতে পারছে নে-শা-গ্র-স্থ হচ্ছে সে। পেছনের টেবিলে একটা মেয়ে আর একটা ছেলে হাসাহাসি করছে। মেয়েটা এখানকারই! সে আরেক পে/গ মুখে তুলবে তার আগেই কেউ তার হাত থেকে ছো মেরে ছোট কাচের গ্লাস টেনে নিল এবং মেঝেতে ফেলে দিল পানীয় দ্রবটা। ইমান ভ্রু কুচকে তাকাতেই হচকচিয়ে গেল। তার সামনে গোলাপি গাউন পরা ওই নিষ্ঠুর, হৃদয়হীনা, কঠোর দিলের মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে। আজ তার রুপ যেন চুইয়ে চুইয়ে পরেছে। অন্যরকম ভাবে সেজেছে বুঝি। তবে ওকে বিয়ের দিন বেশি সুন্দর লাগছিল। একদম চোখ ফেরানো যাচ্ছিল না৷ আজও যাচ্ছে না। হা করে তাকিয়ে রইল ইমান। এরপর রাগ উঠে যায়। আপাতত সে আউট অফ কন্ট্রোল হওয়ার পথে৷হা/ই হয়ে আছে বোধহয়। অনুভূতি, চিন্তা-চেতনা, ভাবনা, লজিক কিছুই বিন্যস্ত নয় তার মস্তিষ্কে। সব কিছু ঘেঁটে গেছে৷ সে রেগে গিয়ে বলে, ” আমার ড্রি-ক কেন তুমি ফেলে দিলে?”

–” ইচ্ছা হলো তাই।”

ইমানের টেবিলে তখন আরো তিন গ্লাস ছিল। সে আরেকটা হাতে তুলে নিতেই মিরা সেটা টেনে এনে টেবিলে ফেলে দিল৷ এরপর এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে বাকি দুটো গ্লাসের পানীয় ওর মাথায় ঢেলে দিল৷ মাথার চুল ভিজে গেল। চুল থেকে পানীয় গড়িয়ে স্যুটের কলার ভিজে উঠে। বিষ্ময়ের তোড়ে ইমান কথা বলতে পারল না৷

মিরা কঠিন সুরে বলে, ” আজকের দিনে এমন না করলে চলছে না? কত মানুষ এই পার্টিতে উপস্থিত। আপনার জন্য একটা বিশেষ দিন৷ অথচ নিজ হাতে নিজের সম্মানহানি করছেন৷”

ইমান এবারে উঠে দাড়ালো এরপর স্যুট খুলল, টাই লুজ করল। নিজের চুল ধরে টানল। তার চোখ-মুখ শক্ত করে বলে, “আমার সম্মান গেলে তোমার কী?বউগিরি ফলাচ্ছ কেন? হু? হুয়াই?”

–” আশ্চর্য! আপনার মাথা পুরোপুরি গেছে।”

–” তুমি যদি বউগিরি ফলাতে পার, আমিও স্বামীগিরি ফলাবো।”

মিরা বিরক্ত হয়ে গেল। এখানে আসাই ভুল হয়েছে তার। ওদিকে থাকতে থাকতে একবার মনে হলো এখানে এসে ইমানকে দেখে গেলে ভালো হয়৷ বা-রে প্রবেশ করতেই সে দেখল ইমান ড্রি/ক করছে৷ কেন যেন এ দৃশ্য তার খুব কুৎসিত লাগল। এভোয়েড করে চলে যেতে পারেনি। এখন মনে হচ্ছে বা/রে আসাই তার ভুল হয়েছে৷ মা/ত/লা/মি সহ্য করতে হবে৷

ইমান তার দিকে ঝুকে এসে ওর নরম গালে হাত রাখল। এরপর আরো কাছে আসতে গেলেই, মিরা বাধা দিয়ে বলে, ” ডোন্ট…….. ”

ইমান থেমে গেল এরপর মৃদ্যু গলায় বলে, ” উইল ইউ ডান্স উইথ মি? ”

–” নো।”

–” তোমার বারং কে শুনবে?”

সে মিরার হাত ধরে এগিয়ে আসলো ডান্স ফ্লোরে। ডান্স ফ্লোরে সাত-আট জন ডান্স করছে৷ রক মিউজিক চলছে। ডিজে গান বাজাচ্ছে৷ লাল-সবুজ বাতি তাক করে ফ্লোরের মধ্যে ফেলা হচ্ছে৷ পার্টি মুড যাকে বলে!

ইমানের গান পছন্দ হয়নি৷ সে ডিজেকে উদ্দেশ্য করে বলে, ” কী জঘন্য গান বাজাচ্ছো তুমি? এতো ফালতু কেন তোমার টেস্ট? রোমান্টিক গান বাজাও ষ্টুপিড। ”

তার কথায় আরোও দুজন সায় দিয়ে বলে, ” রোমান্টিক গান বাজাতে৷”

ডিজে মিষ্টার হেসে ফেলে বলল , ওলরাইট গাইজ। ইনজয়!

প্লে-লিস্ট থেকে গান খুঁজে গান সিলেক্ট করে দিল। খুব চমৎকার একটা সুইট, সফট, রোমান্টিক গান বাজতে লাগলো। সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত লাইট বন্ধ করে দিল। খুবই অল্প আলো ছড়ানো বাতি জ্বালিয়ে দেওয়া হলো। পার্টির আমেজ বদলে গিয়ে খুব শীতল একটা পরিবেশ তৈরি হলো। ইমান মিরাকে নিয়ে মাঝে অবস্থান করছে। সে ওর কোমড়ে হাত রাখল। মৃদ্যু কেঁপে উঠে মিরা চোখ বুজে ফেলে। এরপর ওর আরেকটা হাত নিজের হাতের সঙ্গে মিশিয়ে নেয় ইমান। আংঙুলের ভাঁজে আংগুল গুঁজে দিল। দুজনের মধ্যে দূরত্ব কমে গেল৷ কোমড় চেপে ধরেই টান মেরে নিজের পায়ের পাতার উপর মিরাকে দাড় করালো। এরপর হাত দিয়ে ওর থুতনি উচু করল সামান্য। মিরার চোখের পাপড়ি তিরতির করে নড়ছে৷ চোখে চোখ রেখে করুণ গলায় বলে, ” আরেকটা চান্স দিলে খুব ক্ষতি হচ্ছে তোমার? শরীর দগ্ধ হচ্ছে? আচ্ছা তুমি আমার মন পুড়ে যাওয়ার পোড়া গন্ধ শুনতে পাচ্ছো না? ”

মিরা সরে আসতে চাচ্ছে কিন্তু সম্ভব হচ্ছে না। সাউন্ড বক্সে গান ভেসে আসছে,

I call your name, but you’re not around
I say your name, but you’re not around

I need you, I need you, I need you right now
Yeah, I need you right now.

গানের সুরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেই সন্ধ্যারাতে একশ তারাকে সাক্ষী রেখে, নিগূঢ়, নিকষকালো নিমজ্জিত আঁধারে ছেয়ে যাওয়া রাত্রীতে ইমানও বলে উঠে, ” আই নিড ইউ, আই নিড ইউ রাইট নাও।”

মিরা চমকে উঠে৷ স্লো ভয়েজে বলা কথাগুলো তার রগে, শিরা-উপশিরায় পর্যন্ত পৌঁছে যায়৷ ইমান তাকে আরো একটু কাছে টেনে এনে ঘুরালো, এরপর নিজের বাম হাতের উপর মিরাকে ফেলে দেয়। গান বেজেই চলেছে।

So don’t let me, don’t let me, don’t let me down
I think I’m losing my mind now

It’s in my head, darling, I hope
That you’ll be here when I need you the most, so
Don’t let me, don’t let me, don’t let me down
D-don’t let me down

কি চমৎকার একটা। লিরিক গুলো যেন ইমানের মনের কথা তুলে ধরছে৷ মিরা সোজা হয়ে দাড়ালো। আবারো ইমান তার কোমড়ে হাত রাখে। এরপর নাচের তালে তালে তার কাছে আসে। ঠিক সেই সময় ওদেরকে ফোকাস করে ডিস্কো লাইট জ্বলে উঠে। ডান্স ফ্লোরের মাঝে থাকায় মিরা খেয়াল করল, জুই নামক মেয়েটা এদিকেই আসছিল। কিন্তু তাদেরকে এতো কাছাকাছি অবস্থান করতে দেখে থমকে যায়। মিরারও ভারী অস্বস্তি হতে লাগে৷ ইমানকে দূরে সরানো চেষ্টা করে। তখনই জুই হনহন করে বেরিয়ে যায়৷
মিউজিকের শব্দে সে ইমানের দিকে তাকালো। ইমান ডান্স স্টেপ ফলো করে তাকে পেছনে ঘুরাবে এমন সময় তার কাধের কাছের ফিতা ছিঁড়ে গেল৷ গাউনটা দুই যুগ আগের কেনা৷ আন্টির তরুণী বয়সের কেনা। ড্রাই ওয়াশ করে মিরা পরেছে৷ পুরাতন হওয়ায় আচমকা টান লাগায় ছিঁড়ে গেছে৷ বেশ বিপদে পরলো তো সে!

ইমানের বুকের সঙ্গে নিজের ঘাড় মিশিয়ে ফেলে সে। ইমান তার ডান হাতটা তার পে-টে-র উ-প- রাখল। তার গা বেয়ে মৃদ্যু শীতল শিহরণ বয়ে যায়৷ সে ফিসফিস করে বলে, ” আমাকে ছাড়ুন। আমি সমস্যা হচ্ছে।”

ইমান ঝামটা মেরে বলে, ” আমি পাশে থাকলে কী তোমার গা জ্বলে? যদি না ছাড়ি কী করবা? পুলিশ ডাকবা? হ্যারেস্টমেন্টের জন্য কেইস ফাইল করবে?”

মিরা দাঁতে দাঁত চেপে বলে, “অসহ্য একটা লোক”।এরপর বলে উঠে, ” আমার জামার ফিতা ছিঁড়ে গেছে৷ ওয়াশরুমে যেতে হবে৷ ইমার্জেন্সি।”

ইমান বোধহয় ওর পরিস্থিতি বুঝল। সে একটু দূরে সরে এসে ছিড়ে যাওয়া ফিতা পর্যবেক্ষণ করল৷ এরপর মিরার উম্মুক্ত, ফর্সা ঘাড়ে হাত বুলালো। ফিতা বাধার প্র‍য়াস করল কিন্তু ব্যর্থ হলো। ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে হোক, ইমান কয়েকবার তার ঘাড়ে হাত ঘুরালো৷ প্রতিবার সে কেঁপে উঠল৷ অবশেষে তার ঘাড়ে গভীরভাবে অধরজোড়া স্পর্শ করে ইমান। এবং খোপা করা চুল খুলে দেয়। ক্ষণেই তার কেশ বদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে কোমড় অব্দি ঝুলে পরে৷ ইমান আচমকা তাকে কোলে তুলে নিল। তখনোও গান বাজছে,

I need you, I need you, I need you right now
Yeah, I need you right now…….

মিরা চঞ্চল চোখে চারপাশ তাকিয়ে বলে উঠে, ” মানুষ-জন দেখছে তো। আপনি এমন পাগলামী কেন শুরু করেছেন? আমাদের কেউ এভাবে দেখলে বেহায়া ভাববে৷”

–” মানুষ দেখলে দেখুক৷ বেহায়া ভাবলে ভাবুক৷ এতে করে অন্তত কেউ তোমার উম্মুক্ত ঘাড় তো দেখতে পারবে না।”

বা/রের পাশ দিয়েও হোটেল রুম গুলোয় যাওয়া যায়। বারোতলা থেকে হোটেলে থাকার জন্য রুম আছে। ইমান তাকে বারো’শ দশ নাম্বার রুমের সামনে এনে দাড় করিয়ে চাবি দিয়ে গেইট খুলে দিল। গেইট খুলতেই রুমের ভেতর দেখা গেল। ডেকোরেশন এখান থেকেই দেখা যাচ্ছে৷ মিরা অবাক হয়ে বলে, ” রুম এভাবে সাজানো কেন?”

ইমান রেগে গেল কিন্তু প্রকাশ না করে বলে, ” আমি কীভাবে জানব রুম সাজিয়ে রেখেছে কেন?”

মিরা রুমের ভেতরে ঢুকে গেইট লাগিয়ে দিল৷ ইমানও গজগজ করতে করতে বেরিয়ে যায়৷

মিরা আয়নায় দাঁড়িয়ে জামা ঠিক করছিল, তখনই দরজায় ঠকঠক আওয়াজ হয়। সে ধরেই নেয় ইমান ফিরে এসেছে। ছেলেটা আজ পুরা হা/ই হয়ে আছে৷ সে দরজা খুলে দিতেই অবাক হলো। জুই নামের মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে৷ মিরা মুগ্ধ হয়ে তার দিকে তাকালো। সাদা জর্জেটের কাজ করা একটা সিম্পেল গাউন পরেছে। গাউনের ডানহাতটা কাটা৷ খুব সুন্দর লাগছে তাকে। মিরা তাকিয়ে দেখল, মেয়েটার সঙ্গে তার চেহারার কোন জানি অংশে মিল রয়েছে। বিষয়টা দারুণ কাকতালীয়।

জুই হেসে বলে, ” ভেতরে আসি?”

–” আসুন।”

জুই ভেতরে প্রবেশ করে তাকে জিজ্ঞাসা করে, “নিউইয়র্ক কেমন লাগছে?”

–“বেশ।”

— “আর ইমানকে?”

মিরা তার করা প্রশ্নে হতবিহ্বল হলো। সে আমতাআমতা করে বলে, “সর‍্যি?”

জুই বেডে বসে বেডশীটের উপর লাভ শেইপ করা গোলাপের পাপড়ি গুলো ভেস্তে দিয়ে বলে, তুমি কী জানো যে তুমি আগুন সুন্দরী? তোমার রুপে যেকোনো পুরুষ মজে যাবে৷”

মিরা কথাগুলো শুনল ঠিকই কিন্তু উত্তরে কিছু না বলে অন্য প্রসঙ্গ টেনে এনে বলে,” আপনি আরো সুন্দর।”

জুই তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে, ” সুন্দরী হলে তো আমার প্রেমিক তোমার রুপে মজত না৷”

মিরা যেন।আকাশ থেকে পড়ল৷ ওনার প্রেমিককে কখন মিরা ফাঁদে ফেললো?

জুই দাঁড়িয়ে গেল এবং খুব সাবলীলভাবে বলে, ” মিষ্টার খানও অন্য পুরুষদের মতো তোমার এই রুপেই ঘায়েল হচ্ছে।”

মিরা চোখ বড় করে তাকালো এবং প্রশ্ন করে, ” ইমান?”

–” ইয়েস, ইমানের কথাই বলছি। জানো ওকে আমি স্কুল লাইফ থেকে ভালোবাসি৷ ওর জন্য নিজের ড্রিম সাবজেক্ট বাদ দিয়ে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছি। শুধুমাত্র ওর সাথে থাকব বলে। তোমার ধারণাও নেই ওকে আমি কতখানি ভালোবাসি৷”

মিরা চকিত উঠে তার পানে তাকালো। তার মানে সাদ আর আন্টির কথা সব সত্য?

সে কিছু বলবে তার আগেই জুই বলে উঠে, “ক্রাশকে অন্য কারো সঙ্গে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে দেখে কষ্ট হয়? তাহলে বুঝ আমার কেমন লাগে? যখন ওকে তোমার প্রতি আআকর্ষণবোধ হতে দেখি? ”

মিরা নিষ্প্রাণ কণ্ঠে বলে, ” উনি আপনার বয়ফ্রেন্ড? ”

–” অফ কোর্স। বিলিভ হয় না? ওয়েট এক মিনিট বলে সে নিজের ফোন বের গ্যালারি ওপেন করে মিরার সামনে ধরল। গ্যালারি ভর্তি তার আর ইমানের হাসি মুখে তোলা সেলফি, সুন্দর মুহূর্তে ম্র ছবি। হোটেল রুমেও তাদের ছবি আছে৷

মিরার চোখ ফেটে যেন এক্ষুনি জল গড়াবে। সে তবুও বলে, ” এগুলো তো নর্মাল ছবি।”

জুই বলে, ” আমরা দুজনই এডুকেটেড। তোমার কী মনে হয় রিলেশনে থাকাকালীন আমরা ঘ/নি/ষ্ঠ মুহুর্তের ছবি ক্যাপচার করব? এতো লেইম নই আমরা।”

মিরার চোখ বেয়ে এবারে জল গড়ালো। সে বলে উঠে, ” আমি জানতাম এসব কিছু। ”

–” আসলে মিষ্টার খান এসব নিয়ে কখনোও আলোচনা করেনা৷ আমরা তো ডেইটও করেছি মিরা। বিয়ে করার প্লানও আছে৷ কিন্তু দেখ আমার ভাগ্য কতো খারাপ! তুমি মাঝপথে এসে আমার থেকে আমার ভালোবাসা কেড়ে নিচ্ছো।”

মিরা দু’কদম পিছিয়ে গিয়ে বললো, ” আমি কোনদিন কারো কাছ থেকে তার ভালোবাসা কেড়ে নিতে চাইনা। কখনোই এমন কু-বাসনা অন্তরে নেই।”

— ” তাহলে সরে যাও না ইমান আর আমার মধ্যে থেকে। কেন বারবার আমাদের মধ্যে ফাটল তৈরি করছো? তুমি আসার পর থেকে মিষ্টার খানের আমার সঙ্গে কথা বলার টাইম নেই।”

–” আমি কখনোই আপনাদের মধ্যে জড়াইনি।”

— “আমার আর ওর রিলেশন অনেকদিনের৷ প্লিজ আমাদের সম্পর্কটা ভেঙে দিও না। অনুরোধ রইল তোমার কাছে।”

চলবে৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here