ফেইরিটেল পর্ব-৪৭

0
1297

#ফেইরিটেল
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
Part–47

বক্ষস্থলের বাম পাশে যেন কেউ দুম করে আঘাত মেরেছে। মিরার মুখ দিয়ে অস্ফুটে বেরিয়ে এলো ব্যথাতুর আর্তনাদ। এ আর্তনাদ মনের চিৎকার যেন! যেটা সে বাদে কেউ শুনতে পাচ্ছে না৷ সে ফ্যালফ্যাল করে জুইয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে খানিক বাদে বলে উঠে, “আপনি জানেন আমি ওর কে হই?”

–” জানি তো।”

–” ভুল জানেন। ও…. ও আমার…… ” বাকি শব্দটা মিরার মুখ থেকে বের হতে চাইছে না৷ আদৌও কি কাবিননামায় ওই সইটাই তাদের সম্পর্কের ভিত্তি? সে কী এমন একটা টক্সিক রিলেশনশিপ চায়? নাহ! তার কাছে সবসময় “ভালোবাসা” অর্থ ছিল ভিন্ন। “ভালোবাসা” কে প্রচুর কদর করে সে। সবসময় লাভিং এন্ড কেয়ারিং লাইফ পার্টনার চাই তার৷ বাবা-মায়ের অসফল সম্পর্ক বারবার তাকে ভালোবাসাময় সম্পর্কের কথা মনে করিয়ে দেয়। আচ্ছা তার ভাগ্যটাও মায়ের মতো হলো না? বাবাও তো অন্যকাউকে পছন্দ করত। দাদী জোর করে বিয়ে করালেন শান্ত-নম্র, কমবয়সী সুপ্তি বেগমের সঙ্গে। বিয়ের জোর খাটানো তো যায়নি বাবার উপর? সে-ই তো বাবা বারংবার ওনার কাছে ফিরে যেতেন৷ বিয়ের কাবিননামার ক্ষমতাও নেই অপর মানুষটিকে নিজের করে রাখার। মা তো কম চেষ্টা করেনি। নিজের সব দিয়ে প্রচেষ্টা করে গেছেন। লাভ কী হলো? পরিণামই বা কী হলো? ফলাফল সেই একই! করুণ।

জুই তার দিকে এগিয়ে এসে ওর কানের কাছে উড়তে থাকা চুলগুলো কানে গুঁজে দিয়ে বলে, ” তুমি কী কষ্ট পেয়েছো আমার কথায়? তোমাকে দুঃখ দেওয়ার কোন ইচ্ছে আমার নেই। তোমার বয়সের দোষ সবটা। মাত্র টিন এইজ পেরুলে। দুনিয়ার সবকিছুই আনন্দময় লাগবে। চোখে রঙিন চশমা পরে আছো। তোমার বয়সে আমিও এমন ছিলাম। হ্যান্ডসাম ছেলে পাশ দিয়ে গেলে ফিরে তাকাতাম৷ কিন্তু বিশ্বাস কর, মিষ্টার খানের মতো কাউকেই মনে ধরে না আমার। তুমি মাত্র ম্যাচিউর হচ্ছো। যে কাউকে ভালো লাগতেই পারে তোমার। এটা পাপ নয়৷ কিন্তু অন্য কারো ভালোবাসাকে ছিনিয়ে দেওয়া বড় পাপ। তোমার মতো নিষ্পাপ কেউ পাপ করুক এটা আমি চাই না।”

জুইয়ের বলা কথাগুলো কেন যেন মিরাকে অনুভূতিশূন্য করে তুলছে৷ সে চাইলেই এই মেয়েটাকে কষে থাপ্পড় মারতে পারে। তার স্বামীর দিকে কুনজর দেওয়ায় সে পারে ওকে শায়েস্তা করতে। কিন্তু গ্যালারির ছবি গুলো দেখে এবারে সত্যি মনে হচ্ছে, ইমানের সঙ্গে ওর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক না থাকলেও প্রনয়ময় সম্পর্ক আছে৷ দুজনে দিনের পর দিন ধুমসে প্রেম করে বেরিয়েছে। এজন্য তো জুইকে ওর বাসায় সবাই চেনে। তবে কী সে-ই তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে ভুলে ইমানের জীবনে প্রবেশ করে ফেলেছে? ইমান যদি অনুমতি না দিত তবে সে কোনদিন ওর জীবনে আসতে পারত না। সে সুযোগ দিয়েছিল, না কেবল সুযোগ দেয়নি বরং নিজ থেকে এগিয়ে এসেছিল মিরাকে বিয়ে করার জন্য। এখন সবটা এমন ঘোলাটে, অস্পষ্ট লাগছে কেন? জুই যা বলছে সেগুলো পুরোপুরি তার বিশ্বাস হচ্ছে না, আবার অবিশ্বাস করারও কারণ নেই। নাহ! একটা কারণ অবশ্য আছে৷ ইমান এবং তার আচরণ — এই দুটো রিজনেই জুইয়ের কথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তার৷ ইমান যে তার জন্য অহেতুক পাগলামি করছে, বারবার বলছে সেকেন্ড চান্স দিতে, সেগুলো কেন করছে ও? প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বিয়ে করে থাকলে কেন তাকে নিউইয়র্কে নিজের বাসায় আশ্রয় দিল? কেন তার সঙ্গে এতো ভালো ব্যবহার করল? সে তো এসেছিল নিরুপায় হয়ে। ইমান চাইলেই তাকে নিজের বাসা থেকে বের করে দিয়ে আরেকবার প্রতিশোধ নিতে পারত৷ তাতো করেনি। বরং সব ধরনের সহযোগিতা করছিল৷ নতুন করে সব সাজাতে চাইছিল। তাহলে কী মাঝ দিয়ে তাদের মধ্যে জুই নামের বিদেশি মেয়েটি ঝামেলা করছে না?

জুই মেইন দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে, ” তোমাদের দুইজনকে একসঙ্গে ডান্স ফ্লোরে দেখে আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল মিরা। এই কষ্টের কথা কাউকে বলা যায় না। শুধু মনে হচ্ছিল ওই জায়গায় আমার থাকার কথা৷ ওই আদুরে স্পর্শ গুলোতে কেবল আমার থাকার কথা৷”

জুই চোখ বেয়ে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল। সে “আসছি” বলে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে৷ মিরা ভীষণ বিপন্ন অনুভব করল। মনের ভেতরটায় কুটকুটে অন্ধকার নেমে আসল৷ এরপর ফ্লোরেই হাঁটু গেড়ে বসে পরে৷ হাঁটু ভাজ করে বসে থাকল চুপচাপ। উঠে দাঁড়াতে মন চাইছে না। কান্না করতেও ইচ্ছা করছে না। শরীর কেমন অসাড় হয়ে আসছে৷

_____________

ইমানের রক্তে আ্যলকোহোল মিশে গেছে। মদ্যপান করায় সবকিছুই তার কাছে অসহ্য লাগছে। গান-বাজনা কানে এসে বাজছে যেন। ইমোশন, অনুভূতি সবকিছু খুব প্রখরভাবে ফিল করছে সে। এই ঠোঁটের মধ্যে এখনো মিরার ছোঁয়া লেগে আছে জন্য সে আর গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে না। থাক না, আরো কিছু সময় সেই স্পর্শটা! সে দিব্যি বুঝতে পারছে, তার নে/শা ধরে গেছে৷ এই মূহুর্তে তার পক্ষে পরিকল্পিত বা পরিষ্কার করে কিছু ভাবা বা বলা সম্ভব না৷

অনুষ্ঠানের মূল জায়গায় এলো সে। মিরা হোটেল রুম থেকে ফিরে আসল কিনা চেক করার জন্য। অনেক গেস্ট ইতিমধ্যেই চলে এসেছে। সাদকে একটা মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে দেখল। তার দিকে এগিয়ে এসে প্রশ্ন করে, ” মিরাকে দেখেছিস?”

–” না, ব্রো৷ আমি তো কায়রার সঙ্গে ব্যস্ত আছি৷ ওর খবর জানি না। বাই দ্যা ওয়ে,তুমি আজ এতো ড্রিং/ক কেন করেছো? চোখ লাল হয়ে আছে।”

ইমান মুখ কালো করে বলে, ” খুশিতে।” এরপর মনে মনে বলল, “বউ রিজেক্ট করেছে সেই খুশি। পাশ দিয়ে আমার সুন্দরী বউ পরী সেজে ঘুরবে তাও তাকে একটা চু/মু খেতে পারছি না এই খুশিতে খেয়েছি৷

সাদ যখন কায়রাকে নিয়ে পুনরায় গল্প করতে ব্যস্ত হয়ে পরে, ইমান সেখান থেকে সরে এসে হোটেল রুমের দিকে যেতে লাগলো৷ তার মন বলছে মিরা এখানেই উপস্থিত আছে৷ হোটেল রুমে এসে দাড়ালো সে। ভেতর থেকে বন্ধ করা দরজা। আচমকা তার কেমন যেন অনুভূতি হতে লাগলো।সে দরজায় নক করল। কেউ রেসপন্স করল না। সে সামান্য দুশ্চিন্তা গ্রস্থ হয়ে ডাকে, ” মিরা? মিরা? তুমি ঠিক আছো? দরজা খুল।”

খট করে দরজা খোলার আওয়াজ হয়৷ মিরাকে বের হয়ে আসতে দেখে সে স্বস্তি পায়৷ কিন্তু সামান্য চমকেও উঠে সে। মেয়েটার সাজ-গোজ সবটা নষ্ট হয়ে গেছে। মেকাপের কিছুই অবশিষ্ট নেই৷ কেবল লেপ্টে যাওয়া কাজল চোখের আশেপাশে ছড়িয়ে আছে। কোমড় অব্দি কেশ খুলে রেখেছে। তাও কী অপূর্ব লাগছে তাকে! নে/শা অবস্থায় যেন আরোও নেশা ধরে গেল তার৷

ইমান কিছু বলবে তার আগেই মিরা প্রশ্ন করে, ” আপনার কোন গার্লফ্রেন্ড আছে?”

ইমান সামান্য ভড়কে যায়। সে বলে, ” সর‍্যি?”

–” জুই নামের মেয়েটির সঙ্গে আপনার কতদিনের সম্পর্ক? ”

ইমান তার প্রশ্নের তোড়ে বিষ্মিত, হতবাক, হতবুদ্ধি হলো। জুই তাদের মধ্যে কোথা থেকে আসল আবার?

সে বলে উঠে, ” জুই নিয়ে এসময় কেন কথা হচ্ছে? ”

–” ওকে নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছা করেনা? নাকি লুকিয়ে প্রেম করতে চান?”

ইমান ভ্রু কুচকে বলে, ” লুকিয়ে প্রেম মানে? ”

–” জুই আপনার প্রেমিকা হয় তাই না? আচ্ছা বলুন তো, আপনার কতগুলো প্রেমিকা রয়েছে?

মিরার কথাগুলো তার মাতাল করা মাথায় এলোমেলো ভাবে বন্দুকের আঘাতের ন্যায় লাগল। বক্ষস্থলে রক্ত ঝরছিল যেন৷ সে বলে উঠে, ” ফালতু কথা বলবে না।”

ইমানের দিকে তাকাতেই মিরার দু’চোখের সামনে ওর আর জুইয়ের হাসিমাখা ছবিগুলো ভেসে উঠে। সে যেন তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলে, “আমি ফালতু কথা বলছি না। বরং আপনার কাজ-কর্ম খুবই ফালতু, জঘন্য। নিসন্দেহে আপনি একজন চরিত্রহীন লোক। ”

–” আমাকে চরিত্রহীন কেন বলছো তুমি? এই শব্দটা আমি প্রচন্ডভাবে ঘৃণা করি।”

মিরা তবুও থামলো না৷ সে বলে উঠে, ” আচ্ছা আপনি কী জুইকেও হার হাইনেজ বলে ডাকেন? আমাকে যেভাবে জড়িয়ে ধরেছিলেন সেভাবে কী ওকেও জড়িয়ে ধরেন? ওকেও কী এমনই করে চু/মু দেন? সেদিন তুষারপাতের মধ্যে আমাকে যেভাবে পাগল করা আ/দ/র দিয়েছিলেন ঠিক একই ভাবে কী তাকেও দেন, ইমান?”

শেষের দিকে বলা কথাগুলো ইমান সহ্য করতে পারল না। বদহজম হলো৷ চোখ বুজে লম্বা শ্বাস নিয়ে সে মিরার গালে কষে একটা চড় মারে৷ ওই নরম গালে সে কোনদিন ফুলের টোকা দিতে চায় না। সবসময় আ/দ/র দিতে চায়৷ কিন্তু দ্যাখো, পরিস্থিতি কোন জায়গায় এলে দাড় করালো তাকে।

নিজের চুল টেনে ধরে ইমান বলে উঠে, ” মিরা চুপ কর প্লিজ। ননসেন্স কতক্ষন সহ্য করব? লেট মি ক্লিয়ার ওয়ান থিংক, জুই শুধুমাত্র আমার ফ্রেন্ড হয়৷ ওর সাথে বিশেষ কোন সম্পর্ক আমার নেই৷ তবে হ্যাঁ খুব ভালো বন্ধু হয় ও আমার। সবসময় ও আমার ভালো চেয়ে এসেছে।”

মিরা থাপ্পড় খেয়ে বিষ্মিত, ক্ষোভ, হতভম্বের শেষ সীমানায় পৌঁছে যায়। সে বলে উঠে, ” শুধুমাত্র বন্ধুর জন্য আমাকে থাপ্পড় মারলেন?”

ইমান বলে উঠে, ” দেখ, তুমি যদি বুঝতে না চাও আমার কিছু করার নাই। আমার যা বলার বলে দিয়েছি আমি। চোখ বন্ধ করে রাখলে পৃথিবী দেখা যায় না৷ সত্য জানার জন্য হলেও চোখ খুলতে হয়৷ তোমার মুখ থেকে চরিত্রহীন উপাধি আমাকে ভেতরে ভেতরে শেষ করে দিচ্ছে মিরা৷ একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব, পারসোনালিটি গঠন করতে অনেকটা কঠোর পরিশ্রম করতে হয়৷ আমি অনেক হার্ড ওয়ার্ক করে সোসাইটিতে নিজের ব্যক্তিত্ব তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি৷ অথচ এক নিমিষেই তুমি আমার ব্যক্তিত্বে দাগ এঁকে দিলে।”

মিরা গালে হাত দিয়ে নীরব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। ইমানের উপর সন্দেহ করা, সরাসরি প্রশ্ন করা কী তবে মস্ত বড় ভুল হলো?

সে বলে উঠে, ” সবাই ভাবে পুরুষদের চরিত্রে কলঙ্ক লাগালে তারা কষ্ট পায় না। এ ধারণা ভুল। নারীরা যেমন কষ্ট পায়, পুরুষরাও পায়৷ তোমার প্রতিটা কথা আমাকে হত্যা করছে বারংবার। কেন বুঝতে পারলে না তুমি আমাকে? কেন? নিশ্চয়ই এটা আমার ব্যর্থ্যতা৷”

সে খুবই এলোমেলো পায়ে হাঁটা ধরে। মিরা তাকিয়ে থাকল একদন্ড। তাহলে জুই কেন তাকে বলল তারা প্রেমিক-প্রেমিকা। ইমান কী সত্য বলল নাকি সত্য অস্বীকার করে বসল? সবকিছু এতো কনফিউজিং কেন? কেন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সে? সে দরজা ধরে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকল৷ খুব অসহায় লাগছে এই মূহুর্তে। নিচ থেকে মাইকে এনাউন্সমেন্ট করার শব্দ আসছে। নিশ্চয়ই অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। দশ মিনিট সেভাবে দাঁড়িয়ে থাকার পর সে নিচে নেমে এলো। চারিদিকে ঝকঝকে আলো জ্বলছে৷ মৃদ্যু মিউজিক বাজছে। হলজুড়ে হিটার চলছে। আজকেও বাইরে তু্ষারপাত হচ্ছে। যার জন্য মানুষ-জন কম বের হচ্ছে৷ নিজস্ব নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া আজ কেউ বের হবে না বোধহয়। কেউ কেউ বাসায় ঘুমাচ্ছে৷ কেউ পার্টি করছে। আবার কেউ স্টাডি নিয়ে ব্যস্ত । এতো বড় শহরে আজ যে যার মতো ব্যস্ত৷

স্টেজে ইমান দাঁড়িয়ে আছে। তার পাশেই পিটার। উনি একটা ক্রেজ ইমানের হাতে তুলে দিতেই চারপাশে করতালিতে পরিবেশ মুখরিত হলো। পিটার সাহেব কেক কাটলেন। ইমানকে খাইয়ে দিতে চাইলে সে না বোধহয় ইচ্ছা পোষণ করে৷ যার প্রিয় মানুষ তাকে সন্দেহ করে, তার নিশ্চয়ই এখানে মজা করে কেক খেতে মন চাইবে না৷ ইমান গোমড়া মুখে দাঁড়িয়ে রইল। হুট করে জুই স্টেজে উঠে এসে তার পানে তাকিয়ে মুচকি হাসল। তার ভারী বিব্রতবোধ হচ্ছে৷ তাকে আর জুইকে নিয়ে কীসব বাজে বলেছে মিরা।

পিটার মাইক হাতে বলে, ” একটা গুরুত্বপূর্ণ এনাউন্সমেন্ট বাকি আছে।”

সবাই আবারো চিয়ার আপ করল। উনি ইমানের কাঁধে হাত রেখে হাসিমুখে বলে, ” আপনারা সবাই জানেন, ইমান আমার কোম্পানিতে অনেকদিন ধরে আছে৷ ওর পরিশ্রম, মেধা, সততা, ডেডিকেশনের জন্য কোম্পানি শুধু লাভই করে গেল। বিনিময়ে ওকে আমরা তেমন কিছু দিতে পারছি না৷ এজন্য ওকে আমি আমার জীবনের সবচেয়ে দামী সম্পদটা দিতে চাই। ওকে নিজের কাছে রাখতে চাই৷ ওকে আপনজন করে পাশে রাখতে চাই আজীবন। ”

ইমান পিটারকে উদ্দেশ্য করে বলে, ” স্যার, আমি তো সবসময়ই আপনার সঙ্গে আছি। নতুন করে বলার কী আছে? ”

পিটার হেসে ফেলে বলে, ” আমি তোমাকে আমার সন-ইন-ল হওয়ার প্রোপোজাল দিচ্ছি৷ তুমি কী আমার আদরের প্রিন্সেসের দায়িত্ব নিবে? ”

ইমান পিটার স্যারের কথায় পিলে চমকে উঠে। সে আড়চোখে জুইয়ের দিকে তাকালো। সে মুচকি হেসে মাথা নিচু করে ফেলল। হুট করেই ইমানের বড্ড পিপাসা পেল। এইসব মিরা শুনে ফেললে নিশ্চয়ই তাকে ভুল বুঝবে। কেন বারবার এমন হচ্ছে? তার হাঁসফাঁস লাগতে শুরু করল। মস্তিষ্কে চাপ পড়ছে। মনে হচ্ছে মাথা ঘুরে পরে যাবে সে। এদিকে পিটার উত্তরের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে৷

কথায় আছে না? যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে সন্ধ্যা নাকি একটু আগে হয়! মিরা এতোক্ষণ উপরে বসে বসে কান্না করলেও ঠিক তখনই নিচে নামে যখন পিটার ইমানকে নিজের মেয়ের জন্য যোগ্য বলে সবার কাছে পরিচয় দিচ্ছিল।

তার চোখ ফেটে জল গড়িয়ে পড়ল। সে স্টেজের দিকে তাকিয়ে থেকে আস্তে আস্তে বের হয়ে আসে। আসার আগে ইমানের নাম্বারে ম্যাসেজ দেয়, ” বন্ধুর বাবাও জানে সম্পর্কের কথা। ভাই জানে, মা জানে। শুধু জানে না সে, যাকে দিনের পর দিন ঠকাচ্ছেন৷ আচ্ছা ইমান এমন বন্ধু কোথায় পাওয়া যায়? যার সঙ্গে ডেইট করা যায়? বিয়ে করা যায়?আমাকে বলবেন প্লিজ? তাহলে আমিও এমন জাস্ট ফ্রেন্ড বানিয়ে রাখব।যার সঙ্গে যখন ইচ্ছা ডেটে যাওয়া যায়৷ আপনার তো ডেট খুব পছন্দ। আমাকেও কফি ডেটের অফার দিয়েছিলেন৷”

চলবে৷

[ আজকে রাতে একখানা বোনাস পর্ব দিব? আপনারা পড়বেন প্রিয় পাঠকমহল? ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here