ফেইরিটেল পর্ব-৪৮

0
1356

#ফেইরিটেল
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
Part–48 (বোনাস)

মিরা এক ছুটে এগারো তলা থেকে নিচে নেমে আসে পায়ে হেঁটে । সিড়ি দিয়ে নেমে এসেছে সে। এগারোতলা থেকে তাড়াহুড়ো করে নামার কারণে সে ঘামতে লাগলো। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে সে এক্সিট গেটের সামনে এসে দাড়ালো। ততক্ষণে বরফে চারপাশে ভরে উঠেনি। কেবল একটু করে তুষারপাত হচ্ছে৷ ঝিরিঝিরি করে৷ জমিনে বরফ পতিত হতেই গলে যাচ্ছে৷ সারাদিনে একবারও বরফ পড়েনি৷ এখন একদিন পর আবার বরফ পড়তে আরম্ভ করেছে৷ সে দু’কদম আগাতেই ওয়াচম্যান তার সামনে এসে বলে, ” তুমি কী বাইরে যেতে চাচ্ছো?”

–” হ্যাঁ। ”

–” ওয়েদার কিছুটা খারাপ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরো খারাপ হবে। এখন এভাবে বের না হলেই ঠিক হবে। ”

–” সমস্যা নেই৷ আমি ম্যানেজ করে নিব৷”

–” আচ্ছা ঠিক আছে। ”

ম্যানেজ করে নিব বলে বিল্ডিং থেকে বের হতেই তার মনে হলো কাজটা ঠিক হয়নি৷ বেশ ভালোই শীত পরে গেছে। বলতে গেলে ঝাকিয়ে শীত নামছে। খুবই নরম নরম বরফ আসমান থেকে বৃষ্টির মতো ঝপঝপ করে পড়ছে। গায়ে এসে আদুরে ভাবে ছুঁয়ে যাচ্ছে৷ কিন্তু মিরার হৃদয়ে তখন ভাংচুর চলছে৷ কাঁচ ভাঙ্গা ক্ষতিকর টুকরো গুলো হাত দিয়ে ধরলে যেমন ক্ষত-বিক্ষত হয় হাত, কেটেকুটে রক্তাক্ত হয় ঠিক তেমনই করে বুঝি কেউ তার হৃদয়ের অন্তঃস্থলটাকে কেটে টুকরো টুকরো করে রক্তাক্ত করছে। সে চোখের পানি বারবার মুছে ফেলছে৷ যতোবারই মুছে ফেলছে ততোবারই অশ্রু বর্ষিত হচ্ছে৷ গাল লাল হয়ে গেছে। সে দিক-বেদিক ভুলে হাঁটা দিল। লোকেশন তার মনে নেই। সম্ভবত তারা সেন্ট্রাল পার্ক ক্রস করে আরো কিছু দূর এগিয়ে গিয়েছিল। এখন মনেই আসছে না তার লোকেশন৷ লোকেশন যাই হোক। আজ যেদিকে মন চাচ্ছে সেদিকে ছুটে পালাবে। ভারাক্রান্ত, ক্ষতপ্রাপ্ত, দুঃখী মন বাস্তবতা ভুলে শুধু বহু দূর ছুটে যেতে চায়, যেখান থেকে তাকে কোনদিন শুনতে হবে না যে সে থার্ড পারসন৷ কেউ তাকে থাপ্পড় ও মারবে না৷ এতো দূরে হারিয়ে যেতে চায়। তার অবস্থা নিদারুণ, করুণ। কাদতে কাদতে মাথা ধরে গেছে৷ এই মূহুর্তে মনে হচ্ছে সে বেঁচে আছে কেন? পৃথিবীটা অর্থহীন।

মিনিট বিশ একটানা দৌড়ে আসার ফলে সে হাপিয়ে উঠে৷ পা চালিয়ে আর এক কদম হাঁটা তার জন্য অসম্ভব বলতে গেলে। সে দম নেওয়ার জন্য থামতেই আঁচ করতে পারল প্রকৃতির তাণ্ডব লীলা। প্রচণ্ড গতিতে বাতাস ধেয়ে আসছে। মনে হচ্ছে বিশাল বড় দালাল গুলোও ভেঙে গুড়গুড় হয়ে যাবে। সেই সাথে সেকেন্ডের মধ্যে নরম তুলতুলে বরফ খণ্ড গুলো রগচটা, ভয়ংকর রুপ ধারণা করে৷ প্রকৃতির রাগান্বিত রুপ দেখে সে ভয় পেয়ে যায়। ঘুটঘুটে অন্ধকার হলেও আলো জ্বলছে৷ আকাশের বুকেও তারা উঠেছে ডজন খানেক৷ বাতাস বইছে প্রবল আকারে। বাতাসের মাত্রা অতিরিক্ত শীতল স্পর্শ গায়ে এসে বিঁধতেই প্রতিটা লোম খাড়া হয়ে আসছে৷ গাউনের কাপড়, চুল উড়ছে এলোমেলো ভাবে। প্রতি মুহূর্তে রাস্তার মধ্যে বরফ জমা হচ্ছে৷ আর কিছুক্ষণ হলেই তো সেদিনকার মতো বরফ জমে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে যাবে। কী করবে সে? একবার ভাবল উলটো দিকে ফিরে যাবে৷ কিন্তু মনের কোনে বিপুল পরিমাণ অভিমান জন্ম নিয়েছে৷ তার অভিমান গুলোকে একগুচ্ছ করে বিশ তলা বিল্ডিং বানানো যাবে৷ কার কাছে ফিরে যাবে সে? মা আর বোন ছাড়া তার কোন আপনজন নেই৷ সে বুকে যন্ত্রণা নিয়ে আবারো হাঁটা ধরে সামনের দিকে। এবারে হাঁটতে বেগ পেতে হচ্ছিল তাকে। রাস্তার মাঝ দিয়ে চার-পাঁচটা গাড়ি বেশ স্পিড তুলে তাকে ক্রস করল। একটা গাড়ি তাকে দেখে থেমে যায়৷ কাঁচ তোলা ওই কালো গাড়ি দেখে মিরা ভাবে নিশ্চয়ই ইমান এসেছে৷ কিন্তু তাকে ভুল প্রমানিত করে অন্য এক শেতাঙ্গ কাঁচ নামিয়ে বলে, ” ডু ইউ নিড হেল্প?”

–” নো। ”

তার সোজাসাপটা জবাব৷ উনি তবুও বলে, ” শিউর? ”

–” ইয়েস৷”

গাড়িটা তাকে ক্রস করে চলে যেতেই সে কান্নায় ভেঙে পড়ে। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার৷ সামনে পা বাড়ানোর ক্ষমতা বা শক্তি তার মধ্যে অবশিষ্ট নেই। উদাস চাউনিতে সে রাতের আকাশ দেখল। বরফ পড়া দেখল। বরফময় শীতল হাওয়ার তোড়ে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে৷ পা জমে যাচ্ছে। হা কাঁপছে। দাঁতে দাঁত চেপে রেখেছে সে । ঠাণ্ডায় মনে হচ্ছে জান বেরিয়ে যাবে৷ সে একটা গাছের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। গাছটা দেখে মনে হলো ক্রিসমাস ট্রি। গাছ সম্পর্কে ধারণা কম জন্য সে পুরাপুরি ঠাওর করতে পারল না৷ তবে গাছের গায়ে বরফ জমতে শুরু করেছে৷ ল্যাম্পপোস্টের আলো গাছে এসে ঠেকছে৷ বরফ গুলো ঝলমলিয়ে হাসছে৷ বরফ দূর থেকে দেখতেই সুন্দর। কাছাকাছি ততোটাই ভয়ংকর। এর কবলে পরে সেটা হারে হারে টের পাচ্ছে সে। মিরার চোখের কোটরে নদী ভরে যাবে যেন! সে নিস্তেজ, ক্লান্তসিক্ত হয়ে বসে পরে। অভিমান, রাগ, দুঃখ, বিরহ, ভালোবাসার থেকে প্রতারণা সব মিলেমিশে এক অসহ্য যন্ত্রণায় সে কাহিল হয়ে পড়েছে৷

______________________

স্টেজের দিকে সকলের এটেনশন৷ সবাই উত্তেজিত হয়ে আছে পরবর্তীতে কী হতে চলেছে জানার জন্য । ইমানের মুখ থেকে কিছু শোনার জন্য দর্শকরা ব্যাকুল। কিন্তু ও একদম চুপ৷ যেন শশ্মানে দাঁড়িয়ে আছে সে। কিংবা কথা বললেই হাজার ডলার জরিমানা। পিটার তাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ” কী হলো তোমার ডিয়ার?”

ইমামের এবার টনক নড়ল। সে এগিয়ে এসে জুইকে উদ্দেশ্য করে বলে, ” তোমার সাথে জরুরি কথা আছে।”

জুই হেসে বলে, ” পরে বললে চলবে না? ”

–” না। আজ তুমি সত্যটা না জানলে আমাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।”

ইমানের অভিব্যক্তি দেখে কিছু আঁচ করতে পারছে সে। ও অত্যাধিক গম্ভীর হয়ে আছে। যেন দু সেকেন্ড আগেই মৃত্যু সংবাদ শুনেছে৷ জুই বলে উঠে, ” আচ্ছা তাহলে বল।”

ইমান আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে খুঁজল। এরপর বলে উঠে, ” এখানে না। পারসোনালি বলতে চাই।”,

জুই একটু হলেও ভয় পেল। পরক্ষণ ভাবল সবার সামনে হ্যাঁ বলতে লজ্জা পাচ্ছে। সে বলে উঠে, ” ঠিক আছে। কর্ণারে চল৷ ওদিকটা নিরিবিলি।

ইমান তার কথা শুনে স্টেজ থেকে নেমে যায়৷ পিটার কিছু বলে উঠার আগেই জুই বলে, “পাপা, আমাদের একটু স্পেস চাই৷”

–” কিছু হয়েছে? ”

পাপার গালে একটা চুমু খেয়ে বলে, ” না, পাপা। সব ঠিক আছে। জাস্ট কিছুক্ষণ সময় দাও।”,

জুই স্টেজ থেকে নেমে ইমানের পিছু নিল৷ কর্ণারের দিকে এসে থামল সে। ততক্ষণে ইমান মনে হয় যা যা বলবে সেগুলো মনে মনে ঠিক করে নিচ্ছে৷

জুই বলে, ” মিষ্টার খান?”

ইমান চোখ বন্ধ করে হড়বড় করে বলে, ” আই এ্যাম ম্যারিড জুই। আমার উচিত ছিল আগেই সবটা জানানো। এই ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে এখন। ”

জুই কথাটা শোনামাত্র বজ্রপাতের মতো চমকে উঠে। সে অপ্রতিভ হয়ে পড়ে। দিশেহারা হয়ে বলে, ” কী বলছো তুমি? ”

–” বাংলাদেশে যাওয়ার পর আমি বিয়ে করেছি। জানো আমার একটা খুব মিষ্টি বউ আছে। যাকে আমি এখন মন-প্রাণ দিয়ে ভালোবাসি।”

ইমানের মুখে বিয়ে-বউ-ভালোবাসা শব্দ গুলো শুনে জুইয়ের চোখ ভিজে উঠে। সে তোতলাতে তোতলাতে বলে, ” কে সে? তুমি আমাকে জানাও নি কেন? নিশ্চয়ই ফান করছো? ইমান এটা মজা করার কোন সময় হলো?”

ইমান সরাসরি তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, ” আমি মজা করছি না৷ সত্যি আমি বিবাহিত৷ আজ আমাদের বিয়ের দুই মাস চলছে৷ আমি ধারণাও করিনি পিটার স্যার এমন কিছু আবদার করে বসবে৷ তোমাকে সবসময় একজন ফ্রেন্ড হয়তোবা বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবেই দেখেছি। ওই নজরে কোনদিন দেখিনি৷ আমি জানি তুমিও স্যারের কথায় বিব্রত হচ্ছো৷ স্যার আমাদের ভুল বুঝছেন।”

জুই আহত দৃষ্টি মেলে তার দিকে তাকিয়ে বলে, “তুমি আমাকে ভালোবাসেন না?”

–” আমি কেন তোমাকে ভালোবাসব জুই? এমন কথা কোনদিন বলেছি তোমায়?”

–” বলেন নি৷ কিন্তু বোঝা যায় তো।”

–” ভালোবাসা প্রকাশ না করলে বুঝলে কীভাবে?”

–” মিষ্টার খান, আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি। সম্ভবত নিজের সত্তা খুইয়ে হলেও আপনাতে আসক্ত।”

ইমান তার কথা শুনে পিলে চমকে উঠে বলে, ” কী বলছো তুমি খেয়াল আছে?”

–” আমার ধ্যান-জ্ঞানে কেবল আপনি! ”

–” জুই তোমার মাথা খারাপ হয়েছে। গিয়ে রেস্ট নাও।”

জুই তার হাত ধরে মিনতি করে বলে, ” আই লাভ ইউ। প্লিজ আমাকে একসেপ্ট করুন৷ আপনাকে ছাড়া আমি নিজেকে কল্পনা করতে পারছি না।”

ইমান এক ঝটকায় তার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, ” আমি বিবাহিত জুই। কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নাও।”

সে জুইকে পাশ কাটিয়ে চলে আসতে ধরলে জুই বলে উঠে, ” তাহলে আপনি আমাকে বিয়ে করছেন না?”

–” তুমি পাগল হয়ে গেছো। সাইক্রিয়েটিস্ট দেখাও।”

–” আপনাকে ভীষণভাবে পস্তাতে হবে৷”

— “ওলরেডি পস্তাচ্ছি আমি৷”

বলে সে চলে আসে হোটেল রুমে। হোটেল রুমের দরজা খোলা৷ ভেতরে কেউ নেই। সে ফোন বের করে মিরাকে কল দেওয়ার জন্য। মেয়েটাকে সর‍্যি বলতে হবে। বেশি রুড হয়ে গিয়েছিল। বুঝিয়ে বলতে হবে। ফোন হাতে নিতেই মিরার ম্যাসেজ দেখেই তার পায়ের তলা থেকে মাটি নাই হয়ে গেল।

সে মরা গলায় বলে, “শিট! কেন বারবার আমাকে ভুল বুঝো তুমি? ”

সে হন্তদন্ত হয়ে নিচে নেমে হল চেক দেয়। কোথাও মিরা নেই। সাদের সঙ্গে দেখা হলো। পিটার তাকে দেখে স্টেজ থেকে নামল। সে বুঝতে পারছে সবাই তার দিকে চেয়ে আছে৷ কিন্তু এই মূহুর্তে সে কোন কিছু ভাবতে পারছে না৷ মিরাকে না দেখা অব্দি ঠিকঠাক নিশ্বাস নেওয়াই দায়৷ সাদ তার দিকে আসলে সে প্রশ্ন ছুঁড়ে, ” মিরাকে দেখেছিস?”

— ” না ভাইয়া। অনেকক্ষণ হলো তাকে দেখিনি।”

ইমান বুঝতে পারল, সিচুয়েশন খুব একটা অনুকূলে নেই। মিরা মেয়েটা বড্ড বেখেয়ালি এবং অভিমানী। রেগে গেলে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সোনালী আপুর হলুদের কথা মনে পড়ে গেল তার৷ সামান্য জামা কেটে দেওয়ার জন্য ও প্রোগ্রামে যাবে না বলে গো ধরে বসেছিল৷ আজ এতোবড় ভুল বোঝাবুঝির পর যদি ভুল কোন স্টেপ নেয় ও? তার বুক ছ্যাত করে উঠে। আতকে উঠে সে। এক পল অপেক্ষা না করে হলের বাইরে এসে লিফট কল করে। ফোন হাতে নিয়ে মিরার নাম্বার তার এক ফ্রেন্ডকে টেক্সট করে লোকেশন ট্রাক করার জন্য।

সে নিচে নেমেই ওয়াচম্যানকে মিরার ছবি দেখিয়ে বলে, ” এই মেয়েটাকে দেখেছো তুমি? ”

ওয়াচম্যান ছবি দেখে বলে, ” প্রায় আধঘন্টা আগে ও এই খারাপ আবহাওয়ায় বেরিয়ে গেছে৷”

আবহাওয়া খারাপ শুনে ইমানের হুশ হলো আজ তো ওয়েদার ফল করার কথা৷ নিউইয়র্ক সহ আরো কয়েক জায়গায় ব্লিজার্ড ওয়ার্নিং দিয়েছে৷ সে কপাল চামড়ালো। ম্যাসেজ আরো চল্লিশ মিনিট আগেই তাকে দিয়েছে। এখন মনে হচ্ছে আগে কেন ফোন বের করেনি সে? উফফ এতো অস্থিরতা নেওয়া যাচ্ছে না৷ দুমিনিট পর তার ফ্রেন্ড রিপ্লে দিল। মিরার ফোনের লোকেশন পাওয়া গেছে। সে যেখানে আছে সেখান থেকে লোকেশন বিশ মিনিটের পথ। গাড়ি বের করে ড্রাইভ শুরু করল। আজ গাড়ি চালাতেও বেগ পেতে হচ্ছে। তুষার পড়ছে। গাড়ির কাঁচ বরফে ভরে যাচ্ছে বারবার। গাড়ি চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে। এছাড়াও অস্থির হয়ে আছে তার সর্বাঙ্গ। মনে কু ডাকছে৷ সে ত্রিশ মিনিট পর কাঙ্খিত লোকেশনে এসে পৌঁছে। জ্যাকেট ছাড়া গাড়ি থেকে বের হতেই মনে হলো সে এই মূহুর্তে জমে ফ্রিজ হয়ে যাবে৷ শীতের জ্বালায় মরি মরি অবস্থা। মিরার লোকেশন ও এখানে সো করছে। সে ফ্লাশ অন করে মিরাকে ডাকতে লাগে। অন্ধকার হলেও ল্যাম্পপোস্টের আলো আছে। বরফে ঢাকা রাস্তায় হাঁটতে পারছে না সে। স্নো বুট পরে আসেনি। পা জমে গেছে। বেশিক্ষণ এভাবে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবে সে।

আচমকা সে যেন কিছু একটা দেখে ফেলে। অবচেতন মস্তিষ্ক সবটা ধরতে পারল। এক মুহুর্ত দেরি না করে ছুটে আসে। ছুটে আসার সময় গাছের গুড়ির সঙ্গে লেগে পা ছুলে যায় তার৷ রক্তও বের হলো বুঝি৷ সেদিকে তাকানোর সময় নেই। গাছের নিচে মিরা উপুড় হয়ে শুয়ে আছে৷ তার চোখ-মুখ-চুল বরফে ঢেকে গেছে৷ কোমড়ের উপর স্তুপ জমা হচ্ছিল। তবে একটু দূর থেকে তার গাউনের গোলাপি রঙের ঝিকিমিকি দেওয়া অংশ হলদে আলোয় ঝলমল করছিল জন্য ইমানের নজর সেদিমে গিয়ে থেমেছিল৷ মিরার কাছে আসতেই তার আত্মা শুকিয়ে উঠে। মেয়েটারর মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে ঠাণ্ডায়। মরা লাশের মতো ঠোঁট সাদা হয়ে এসেছে। তবুও অল্প বিস্তর তার ঠোঁট কাপছে৷ মিরাকে এভাবে, এ অবস্থায় দেখে তার চোখ বেয়ে একফোঁটা পানি পড়ল৷ বহু দিন পর কাদল সে৷ মিরার মাথায় হাত বুলায়। হাতে হাত রাখে। ঠাণ্ডায় হাত যেন জমে গেছে। এক শীতের কবলে পরে বোধহয় ও সেন্সলেস হয়ে গেছে। ওকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে নেয় ইমান। এরপর বলে, ” মিরা, তুমি-ই কেবল আমার হার হাইনেস, আমার রাজকন্যা, আমার শেহজাদী। বিশ্বাস কর, তোমাকে ছাড়া অন্য কোন নারীকেই আমি শেহজাদী বলে ডাকিনি। আমার ছোট্ট রাজ্যের রঙিন পাখিটা শুধুমাত্র তুমি। তবুও কেন সন্দেহ করলে?”

আবারো তার চোখ বেয়ে পানি পড়ে। এভাবে তুষার পাতের মধ্যে থাকা যাবেনা৷ কিছু করতে হবে৷ গাড়ির হিটারেও বুঝি মিরার গা গরম হবে৷ সামান্য দূরে সে একতলা কাঠের একটা বাড়ি দেখল৷ ওখান থেকে টিপটিপ আলো ভেসে আসছে। এধরনের বাসাগুলো যারা সলভেন্ট কম তারা কম ডলারে রেন্টে থাকে। ওখান থেকে সাহায্য নিতে হবে। সে মিরার ঠাণ্ডা শরীরটা কোলস তুলে ওই বাসায় গিয়ে দরজা জোরে জোরে নক করে। এমন ওয়েদারে আমেরিকানরা রাতে নিজের মত করে কাটায় ম/দ পান করে। বার কিউ করে৷ কেউ বেল বাজালে বিরক্ত হয়৷

দু’মিনিট এর মাথায় একজন বুড়ি গেইট খুলে দিল। তাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে উনি বিরক্ত৷

ইমান তার কাছে সাহায্য চাইল। উনি ঝারি মেরে বলে, ” এমন শীতে এতো পাতলা কাপড় পরে বের কেন হয়েছো? নতুন নাকি নিউইয়র্কে? তোমাদের মতো কিছু গাধার আমদানি আজকাল নিউইয়র্কে হয়েছে। বুলশিট। আস। ভেতরে। আমার বাসায় হিটার নষ্ট। ফায়ার প্লেস আছে৷ ওটা জ্বালিয়ে তোমার সঙ্গীকে উষ্ণতা দাও।”,

— অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে।”

–” তোমার মতো গাধাকে সাহায্য করতে পেরে আমি খুশি।”

উনি টাওয়াল, মোটা কাপড় দিয়ে চলে গেলেন। একটা ছোট্ট রুমে তাদের থাকার জায়গা হলো। ফায়ার প্লেসে আগুন জ্বালালো সে৷ কিন্তু মনে হয় কাঠ ড্যাম হয়েছে। দাউদাউ করে জ্বলার বদলে খুবই ধীরে আগুন জ্বলছে। ইমান ওর গাউন বদলে মোটা জামা পরিয়ে দিল। পায়ে মুজা পরালো। হাতে হাত রেখে ঘষতে লাগলো। একটুকুও গা গরম হয়নি ওর। নিজের শার্ট খুলে শুকাতে দিল। মিরার এই মূহুর্তে উষ্ণতা, উত্তাপ, তাপ, গরম দরকার। তার কী উচিত মিরার ঘনিষ্ঠ হওয়া? কাছে আসলেই তো মিরা ক্ষেপে যায়। এখন এসব ভাবার সময় না। ওর দরকার উষ্ণতা। ইমান তার শরীরের সব উষ্ণতা পারলে ঢেলে দেয়৷

ইমান সাত-পাঁচ না ভেবে মিরার মুখ মণ্ডল নিজের ঠোঁ/টে/র দিকে এগিয়ে আনে৷ ক্ষণেই ওকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে নিজের সবটা উজাড় করে ভালোবাসা, আ/দ/র, উষ্ণতা বিকিয়ে দিল৷ তাদের মধ্যে দূরত্ব মিটে গেল৷ আস্তে আস্তে মিরার শরীরের ঠাণ্ডা ভাব কমতে লাগলো। ইমান তার চোখে, মুখে, গলায়, হাতে নিজের উষ্ণ অ/ধ/র জোড়া ছুইয়ে দিল।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here