এক ফোঁটা প্রেমের বিষ পর্ব-৩

0
2064

#এক_ফোঁটা_প্রেমের_বিষ
#Tahmina_Akhter

৩.

—দেখুন,আ..মি কিন্তু আপনাকে কিছুই বলিনি। আমাকে প্লিজ মারবেন না। আমি মরে গেলে আমার বাবা এবং ভাইয়েরা ভীষণ কষ্ট পাবে।

কথাগুলো বলে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে মিলি।

শোয়েবের কি হলো কে জানে! কিন্তু, হটাৎ করে মিলির খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে অত্যন্ত নরম গলায় বলে,

—এই মেয়ে মরে যাওয়ার কথা বলবে না। আর আমি কি একবারও বলেছি তোমাকে মেরে ফেলব?

মিলি মাথা নাড়িয়ে না বোধক শব্দের অর্থ বুঝালো।

—তাহলে,কেন ভয় পাচ্ছো?

—আপনি কেমন যেন? আপনাকে দেখলে ভীষন ভয় লাগে আমার।

মিলির কাছ থেকে নিজের সর্ম্পকে এমন কথা শুনে শোয়েব কিছুটা আশাহত হলো । মিনিট দুয়েক অতিক্রম হবার পর শোয়েব মিলিকে উদ্দেশ্য করে বললো,

—যাকে দেখতে তোমার ভয় লাগে। সে যদি দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা তোমার চোখের সামনে থাকতে চায়। তখন তুমি কি করবে, মিলি?

শোয়েবের কথার আগা মাথা কিছু বুঝতে পারেনি মিলি।এবং,সে বুঝতেও চায় না। শোয়েবের কাছ থেকে দূরে সরে যায় মিলি। তারপর, শোয়েবকে উদ্দেশ্য করে বললো,

—হুটহাট, মেয়ে মানুষের খুব কাছে গিয়ে দাঁড়ানো লোক আমার পছন্দ না।

কথাটি বলে এক দৌঁড়ে ছাঁদ থেকে নেমে নীচে চলে যায় মিলি। মিলির যাবার পথের দিকে তাকিয়ে শোয়েব গুনগুনিয়ে বললো,

— কিন্তু, তোমাকে দেখলে যে আমার পৃথিবীর সবচেয়ে… হতে ইচ্ছে করে।তোমার বুকের সবচেয়ে কাছাকাছি থাকতে ইচ্ছে হয় আমার।
এখন, আমি কি করব,মন?

শোয়েব দীর্ঘশ্বাস ফেলে ধীর পায়ে ছাঁদ থেকে নেমে সোজা বাড়ির বাইরে চলে যায়। নীচে রাখা বাইকে উঠে রওনা হয় এলাকার মোড়ের চায়ের দোকানের দিকে।

চায়ের দোকানের সামনে গিয়ে বাইক থামাতেই শোয়েবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু রেহান ঠাট্টার সুরে বললো,

— কি রে। তোরে তো দেহাই যায় না। প্রেমে পইরা দিওয়ানা হইয়া গেছস।

—কি যে বলিস তুই?

—সত্যি কথা কইলে দোষ আর তুমি দিওয়ানা হইলে দোষ নাইক্কা! তা ভাবিজান দেখতে কেমন?

— ওর সৌন্দর্য আমার বর্ণনা করতে ইচ্ছে হয় না। কারণ, ও একান্তই আমার। ওর সৌন্দর্য শুধু আমার। তোকে বলে লাভ নেই।

— বাব্বাহ্! এত প্রেম এতদিন কই আছিলো? তার সৌন্দর্য তুমি বর্ণনা করবার চাও না কেলা?

— শালা বলছি না একবার। মন মেজাজ এমনিতেই খারাপ। আর তুই আছিস আজাইরা প্যাচাল নিয়ে।

—ক্যান কি হইচে?

—আরে গতকাল,নূরী আপার বিয়ের অনুষ্ঠান চলাকালীন সময় আমাদের বিল্ডিংয়ের সিঁড়ি দিয়ে যাচ্ছিল মিলি আর ওর খালা। কিন্তু, চারতলা ফ্ল্যাটের সুমন ইচ্ছে করে মিলির গায়ের সঙ্গে ধাক্কা খায়। আমার তো এমন দৃশ্য দেখে মাথা গরম হয়ে গেছে। মিলি পড়ে যাচ্ছিল কিন্তু আমি ধরে ফেলেছি। জানিস ও ভয়ে শুধু কাঁপছিল। কিছু সময় পর যখন ও বুঝতে পারে ও আমার বুকে আছে। তখন, এক ঝটকায় আমার বুঝ থেকে সরে গিয়ে ওর খালাকে জড়িয়ে ধরে। মিলির গায়ে সুমনের স্পর্শ লেগেছে কথাটি মনে পরতেই, আমি আমার পিস্তল বের করে গুলি করে দিলাম সুমনের ডানহাতে। গুলির শব্দ শুনে মিলি মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে সুমনের হাতের রক্ত ব্যস অমনি সে অজ্ঞান হয়ে যায়।

—তারপর, তুই ওকে তোদের ফ্ল্যাটে নিয়ে গেছিস। এটাই তো। এই পর্যন্ত বিশবার শুনেছি এই ঘটনা।

—কথা এইখানে শেষ না। আজ আমাদের বাড়ির সকল সিসিটিভি ফুটেজ চেক করতে গিয়ে দেখি ছাঁদে মিলি, ইরাবতী, টুম্পা, আসাদ,রিশাভ বসে আড্ডা দিচ্ছিল। মিলি যখন যখন আসাদ আর রিশাভের দিকে তাকিয়ে হেসে হেসে কথা বলছিল। ঠিক তখনি রাগে আমার পুরো শরীর কেমন যেন করছিল? তাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ছাঁদে গেলাম, আগামীকাল বিকেল থেকে বিল্ডিংয়ের কোনো ছেলে ছাঁদে যেতে পারবে না। আসাদ আর রিশাভকে বলতেই ওরা কিছুটা গড়িমসি করে মেনে নিয়েছে। কিন্তু,আসাইদ্দা কি করলো জানিস? ছাঁদ থেকে নেমে যাবি যা না কিন্তু তা না করে মিলিকে বলে কি ? মিলি তুমি অনেক মিষ্টি একটা মেয়ে। ব্যস, মাথায় রক্ত চেপে গিয়েছে আমার। দিলাম কলার ধরে দুটো থাপ্পড়।আসাদ আমার কাছ থেকে মাফ চেয়ে চলে গেল। রিশাভ আর টুম্পা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ইরাবতী চলে যায়। সবাই চলে যাওয়ার মিলির সঙ্গে কিছু কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, কপাল খারাপ হলে যা হয় আর কি! ও নাকি আমাকে ভীষণ ভয় পায়। আবার, মেয়ে মানুষের কাছে ঘেঁষে থাকা লোক নাকি ওর পছন্দ নয়। ওর আমার প্রতি এমন মনোভাব জানার পর থেকে আমার মনের ভেতর কেমন যেন শূন্য শূন্য লাগছে, দোস্ত।

শোয়েব রাস্তার পাশে থাকা থেমে থাকা একটি রিকশার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললো। বন্ধুর কাছ থেকে কথাগুলো শোনার পর রেহানের মনও খারাপ হয়ে যায়।

তবুও, বন্ধুকে আত্মবিশ্বাসী করার জন্য রেহান শোয়েবের কাঁধে হাত চাপড়ে বললো,

— আমি বুঝতে পারছি না। কেন যে, তোর এক দেখায় একটি মেয়েকে ভালো লেগে গেছে?তোদের প্রথম দেখা কখন হয়েছে সেটাও এখন অব্দি জানি না।? কিন্তু, শোয়েব একটা কথা বলি দোস্ত। ভালোবাসা পেতে আর যাই কিছু করিস কিন্তু জোর করিস না। ভালোবাসা তো পাবি না বরং তুই না পাওয়ার বেদনায় কাতরাবি আর মিলি সারাজীবন তোকে ভেবে অভিশাপ দিবে।

রেহানের কথার কোনো জবাব না দিয়ে শোয়েব বাইকে উঠে চলে যায় অজানা উদ্দেশ্য। রেহান শোয়েবের যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওর বাড়ির পথে রওনা শুরু করেছে।

মিলির খালা যখন চাষাঢ়া থেকে ফিরে এলেন তখন সন্ধ্যা সাতটা বাজে। তিনি কলিং বেল একবার প্রেস করতেই মিলি এসে দরজা খুলে ওর খালাকে জড়িয়ে ধরে। আচমকা মিলির কাছ থেকে এমন আচরণ পেয়ে আতংকিত হয়ে পরেন জেসমিন। তিনি শান্ত স্বরে মিলিকে কি হয়েে জিজ্ঞেস করলে মিলি জানায় সে এমনিতেই জড়িয়ে ধরেছে কিছুই হয়নি।

জেসমিন মিলির জন্য যা যা কেনাকাটা করেছে সব একে একে খুলে দেখালো। মিলি একনজর দেখে জানায় ওর সবকিছু পছন্দ হয়েছে। তারপর,
রাতে দু’জন মিলে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ঘুমিয়ে পড়ে যার যার ঘরে।

রাত তখন সোয়া দুইটা।

মোবাইলের ভাইব্রেশনের কম্পনে মিলির ঘুম ছুটে যায়। ঘুম ঘুম চোখে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো, মেসেজ এসেছে। তাও আবার জল্লাদ থুক্কু মানে জল্লাদের নাম্বার থেকে।

মিলি মোবাইল হাতে তড়াক করে লাফ দিয়ে উঠে বসে। কাঁপা কাঁপা হাতে মেসেজটা পড়তে শুরু করে মিলি।

” দরজা খুললে দেখবে একটি প্যাকেট রাখা আছে।প্যাকেটে যা আছে আগামীকাল রিসিপশনে তুমি তাই পরিধান করবে। তুমি মনে করো না আমি তোমাকে এমনিতেই বলছি। আমি তোমাকে আদেশ করছি। এবং, আমি যদি আগামীকাল তোমাকে আমার পছন্দসই ড্রেসে না দেখি তবে মাইন্ড ইট। আমার চোখের সামনে যদি তুমি পড়ো। তবে তোমার কি হবে শুধু সময় কথা বলবে।”

—এটা কি মেসেজ ছিল নাকি হুমকি বার্তা?

মিলি হতাশ হয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলো।কারণ, শোয়েবের আচরণ দেখে এতটুকু সে বুঝতে পারছে শোয়েবের মনে মিলির জন্য এক অন্যরকম অনুভূতি তৈরি হচ্ছে বা হয়েছে। কিন্তু, এমন লোককে এতটা প্রশ্রয় দেয়া মিলির ঠিক হবে না। তাই এখন দরজা খুলে প্যাকেট নিয়ে আসার কোনো মানেই হয় না।

—আমার খালা কি আমার জন্য কম কিছু এনেছে যে ওই জল্লাদের দেয়া ড্রেস পরতে হবে? “আমি যদি আগামীকাল তোমাকে আমার পছন্দসই ড্রেসে না দেখি তবে মাইন্ড ইট। চোখের সামনে যদি তুমি পড়ো তবে তোমার কি হবে শুধু সময় কথা বলবে।” হুহ্ শখ কত! যেন আমি তার গোলাম! আমার নামও মিলি। আমিও দেখব আপনি কি করতে পারেন মি. সরফরাজ আহমেদ শোয়েব?

মুখ ভেঙিয়ে কথাগুলো বলে কাঁথা মুড়ি দিয়ে গভীর ঘুমে যাওয়ার জন্য চোখ বুঁজে শুয়ে পরে মিলি।

এদিকে, শোয়েব সিঁড়িতে বসে মিলিদের ফ্ল্যাটের দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। অপেক্ষা কখন মিলি আসবে এবং ওর পছন্দ করা ড্রেসগুলোর প্যাকেট নিয়ে যাবে।

কিন্তু, আফসোস শোয়েব যদি একটিবার জানত। তবে, শোয়েব মিলির জন্য এভাবে সারারাত বসে অপেক্ষা করত না।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here