এক ফোঁটা প্রেমের বিষ পর্ব-৬

0
1653

#এক_ফোঁটা_প্রেমের_বিষ
#Tahmina_Akhter

৬.

— মিলি দাঁড়াও। আমি তোমাকে দাঁড়াতে বলেছি, মিলি।

শোয়েব শেষের কথাগুলো হুংকার দিয়ে বলতেই মিলি থমকে দাঁড়ায়। শোয়েব আশফিনের শরীরকে পা দিয়ে ডিঙিয়ে মিলির কাছে এক দৌঁড়ে চলে আসে। শোয়েবকে মিলির কাছে আসতে দেখে মিলির খালা জেসমিন এক পাশে সরে দাঁড়ায়।

শোয়েব মিলির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে ধীর গলায় বলে,

— দেখো মিলি, তুমি আমাকে যেমনটা ভাবছো আমি কিন্তু তেমন না। কিন্তু, তোমাকে দেখার পর থেকে আমি আমাতে নেই। তোমাতে বিভোর হয়ে আজ এই আমি অন্য শোয়েবে পরিণত হয়েছি। প্লিজ,তুৃমি আমাকে ভুল বুঝো না।

শোয়েবের কথার প্রতিউত্তরে মিলি বিদ্রুপের হাসি দিয়ে বলে,

—আপনি কেমন? কি আপনার চরিত্র? সব আমার জানা হয়ে গেছে মি. সরফরাজ আহমেদ শোয়েব। যে কি-না সামান্য গায়ে ধাক্কা লাগার কারণে একজনের হাতে গুলি করতে দ্বিধাবোধ করেনি। যে কি-না আজ শুধুমাত্র আমার শাড়ির আঁচলে তারই আপন চাচাতো ভাইয়ের স্পর্শ লেগেছে বলে হাত গুড়িয়ে দিতে চেয়েছে।
সে আর যাই হোক কাউকে ভালোবাসতে পারে না। সে শুধুই একজন হিংস্র মানব। যার প্রধান কাজই হচ্ছে মানুষকে কষ্ট দেয়া।

—তুমি কিন্তু কথা উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিচ্ছো। যতদিন অব্দি আমি বেঁচে আছি ততদিন অব্দি কেউ যদি আমার চোখের সামনে তোমাকে স্পর্শ করে। তবে তার পরিণতি সুমন এবং আশফিনের মতোই হবে।

— মি. শোয়েব তাহলে আপনিও শুনে রাখুন। আমি যতদিন অব্দি বেঁচে থাকব ততদিন অব্দি চাইব আমি যেন অন্তত আপনাকে দেখতে না পাই। আপনি আমাতে বিভোর এসব ফিল্মি ডায়লগ অন্তত আমার সামনে এসে বলবেন না।

—কিন্তু…

—খালা তুমি উনাকে বলে দাও আজকের পর থেকে যেন উনি আমার চোখের সামনে না আসে কথা দূরের থাক। যদি আসে তবে আমি আত্মহত্যা করব।

মিলির মুখ থেকে এমন কথা শুনে শোয়েব থমকে যায়। মিলির খালা মিলির হাত ধরে রওনা হয় বাড়ির উদ্দেশ্য।

মিলিরা চলে যাবার পর একে একে ক্লাবের সকল গেস্ট চলে যেতে শুরু করলো। শুধু নূরীর শ্বশুরবাড়ির লোক এবং শোয়েবের পরিবার রয়ে যায়।

সবাই চলে যাবার পর ক্লাব যখন পুরো ফাঁকা। তখনি শোয়েব হাতে চেয়ার উঠিয়ে একে একে টেবিলে থাকা সকল কিছুকে ভেঙে গুড়িয়ে দিতে থাকে। শোয়েবের বাবা-মা এবং ছয় বোনেরা কেউই এসে শোয়েবকে থামানোর চেষ্টা করেনি। কারণ, এটাই হচ্ছে শোয়েব রাগ-অভিমান কমানোর একমাত্র মাধ্যম।

কিছুসময় পর শোয়েব যখন হাঁপিয়ে ওঠে তখনি ইরাবতী এসে ওর ভাইকে বলে,

—ভাই এভাবে ভেঙে পরলে চলবে বলো? উঠে দাঁড়াও এবং মিলি ভাবিকে মানানোর জন্য হাজার খানেক চেষ্টা করো। যদি হাজার চেষ্টা করার পরও সে রাজি না হয় তবে। বাংলাদেশের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সুন্দরী মেয়ে আমাদের ভাবি হ..।

—একদম চুপ ইরাবতী।

শোয়েবের ধমকে ইরাবতী কেঁপে ওঠে। শোয়েবের বাবা-মা শুধু ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে সেই পুরনো শোয়েবকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। সেই গম্ভীর, অল্প কথা বলা,নিজের কোনো ইচ্ছে কাউকে জানতে না দেয়া ছেলেটা আজ একটি মেয়ের জন্য কতটা পাগলামি করছে। আসলেই কি চোখে দেখা এই সব কিছু সম্ভব!

— আমার বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সুন্দরী মেয়ের দরকার নেই। আমার শুধু সাধারণ এক মিলি হলে চলবে। মিলি যদি আমার না হয় তবে আমি আর কারো হবো না।

কথাটি বলে শোয়েব ক্লাব থেকে বের হয়ে বাইকে চড়ে রওনা হয়।

শোয়েব চলে যেতেই শোয়েবের মা শোয়েবের বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললেন ,

—ছয় মেয়ে হবার পর যখন আমার শোয়েব এলো। তখন, কত আনন্দিত হয়েছিলাম আমরা সবাই! বিশেষ করে মেহের, মহতাজ, ইতি,নূরী, নূসফা, আর ইরাবতী তখন বেশ ছোট ছিল বলে ভাই আসার আনন্দটুকু উপভোগ করতে পারেনি। ছেলের কোনো কিছুতে যেমন আমরা কমতি রাখিনি তেমনি ওর বোনেরা ওর জন্য কম কিছু করেনি। যেই ছেলে মেডিকেলে পড়াশোনা করতে গিয়ে দু’বছর পর পড়াশোনা একেবারে বন্ধ করে মেডিকেল থেকে ফিরে এসে জানিয়েছিল। সে কোনোদিনও বিয়ে করবে না। সেই ছেলে আমার আজ তিনবছর পর একটি মেয়ের জন্য পাগলামি করছে! যদি ছেলের মনের মানুষ ছেলেকে উপহার দিতে না পারি তবে কেমন মা-বাবা হলাম আমরা?

—কিন্তু, মরিয়ম। তোমার ছেলের আচরণ দেখে আজকের পর থেকে অন্তত মেয়েটি চাইবে না তোমার ছেলে ওর জীবনসঙ্গী হোক। একজন পাগলাটে প্রেমিক হয়তো সবাই চায়। কিন্তু স্বামী হিসেবে একজন শান্তশিষ্ট এবং কেয়ারিং হাজবেন্ড সব মেয়ে চায়।

নিজের স্বামীর মুখ থেকে এমন কথাগুলো শোয়েবের মা মরিয়ম চিন্তিত তাকিয়ে রয় মেয়েদের দিকে।

— আজ রাত দুটোর ট্রেনে আমি রওনা হবো কুমিল্লার উদ্দেশ্য। দোস্ত, তুই একটু সকালে এসে আমাকে স্টেশন থেকে পিকআপ করতে আসিস।

— ঠিক আছে। দোস্ত আসব। কিন্তু,এতরাতে কেন? কাল সকালের ট্রেনে চলে এলে তো হতো?

— না সামনে পরীক্ষা আছে। তাই আজই ফিরতে হবে।

—আচ্ছা, তুই যা ভালো বুঝিস।

কথা শেষ হলে মোবাইল কেটে ব্যাগ গুছানো শুরু করে মিলি। পাশে দাঁড়িয়ে আছে জেসমিন। মিলির ব্যাগ গুছানো শেষ হলে জেসমিন বলে উঠলো,

— চলে যেহেতু যাবি। তবে, কাল সকালে গেলেই হতো। আর পালিয়ে গেলে অন্তত কোনোকিছুর সঠিক সমাধান হয় না।

নিজের খালার কাছ থেকে ওমন কথা শুনে মিলি খাটের কিনারায় সোজা হয়ে বসে বললো,

— আমি কোথাও পালিয়ে যাচ্ছি না। আমি আমার আপন ঠিকানায় ফিরে যাচ্ছি। আর যেই সমস্যা আমার না সেই সমস্যার সমাধান আমি কি করে করব, খালা?

—কিন্তু…

—কিন্তু, মানে এইসব শব্দ আমার সামনে এসে বলো না। তুমি শুধু আমার একটি উপকার করো। আর তা হলো। ওই সাইকোকে আমাদের বাড়ির ঠিকানা দিও না। দুসপ্তাহ চলে গেলে এমনিতেই এসব পাগলামি ভুলে গিয়ে অন্য মেয়েদের পেছনে ঘুরবে। বেঁচে ফিরলে আর কখনো নারায়ণগঞ্জ ফিরে আসব না।

— তুই জানিস মিলি। শোয়েব কিন্তু কসম খেয়ে বলেছিল, ও কোনোদিনও বিয়ে করবে না। কিন্তু, হুট করে তোকে দেখার পর থেকে শোয়েব কেমন যেন হয়ে গেছে!

মিলি চুপ করে ওর খালার কথাগুলো শুনতে থাকে। কোনো জবাব দেয় না। কি দরকার হবে তার ব্যাপারে জেনে? আজ রাতের ট্রেনে কুমিল্লায় পৌঁছেতে পারলেই হলো। কিন্তু, তাকে দেখার পর থেকে কেন শোয়েব তার করা কসম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে? মিলি কথাগুলো আনমনা হয়ে ভাবতে ভাবতে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে ফ্রেশ হবার জন্য।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here