#কৌমুদিনী
#তাফসিয়া মেঘলা
#পর্ব ১২
চন্দ্রিকা আর ফারহান এখনো হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এখানেই৷ কি হলো বুঝলো না কেউ৷ কি যেন কি একটা ভাবলো চন্দ্রিকা৷ বেশক্ষানিক্ষণ পর ঠিক ঠাক হয়ে দাঁড়িয়ে কোথাও যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ফারহান বাধ সেধে বলে,
“কোথায় যাচ্ছিস?”
“আপনাকে বলতে বাধ্য নই৷”
চন্দ্রিকার অকপটে উত্তর পেয়ে ফারহান রেগে গেলো৷ রেগে বলে,
” মহলে যাওয়ার তোর জন্য নিষিদ্ধ চন্দ্র৷”
চন্দ্রিকা এক রোখে ভাবে উত্তর দিলো,
“আমি আপনার কথা শুনতে বাধ্য নই৷”
বলে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো৷ ফারহান এখানে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো৷ এ মেয়ে যে কথা শুনবে না তা তার ভালো করেই জানা৷ একে তো পরে দেখবে৷ কিন্তু ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে কে করলো এমন? উদ্দেশ্য কি ছিলো তার? নিশানা কে ছিলো? কি ভ’য়ং’কর এদিক ওদিক হলে দুজনের মধ্যে এক জনের প্রান যেতো৷ হঠাৎ কিছু একটা ভেবে সেও বেরিয়ে গেলো৷
২৪
রজনী যখন প্রগাঢ় হচ্ছে সময় তখন এগারোটা পনেরো জীর্ণ শীর্ণ শরীর নিয়ে ইঞ্জিনের কালো চার চাকার গাড়িটায় করে ফিরলো শ্রেয়াস৷ পুকুরের ধারে গারি আসতেই গারির জানলা দিয়ে বাইরে চোখ গেলো পুকুরের ধারে হঠাৎ নারীর ছায়া মূর্তি ঢুকতে দেখে প্রিয়মকে গাড়ি থামাতে বললো শ্রেয়াস৷ এতো রাতে হঠাৎ এখানে থামতে বলায় ভরকালো প্রিয়ম৷ গাড়ি থামালো অতঃপর প্রিয়ম কিয়ৎ ব্রু কুচকে এদিক ওদিক তাকালো নিশ্চিত মেয়েটাকে দেখেছে? নয়তো এতো রাতে এখানে থামতে বলবে কেন?
রাজকুমার আজকাল এ মেয়েটার মধ্যে কি পেয়েছে কে জানে? সে দিন জ্ঞান ফেরার পর মেয়েটাকেই খুঁজছিলো সে দিন আরো বেশি অবাক হয়ে ছিলো প্রিয়ম৷ পাষাণ মেয়েটাকে বলেছিলো মহলে থাকতে কিন্তু থাকেনি৷ প্রিয়ম ও মেয়ের ভাব ভঙ্গি দেখলে অবাক হয়৷ রাজকুমার ওই এক রুখে মেয়েটার উপর কি পেয়েছে? রুপ থাকলেও মেয়েটা পাষাণ তাঁর ভাব দেখলে মনে হয় সাহসী কোন রাজ যো’দ্ধা৷
মেয়ে মানুষ এমন হয় নাকি? মেয়ে মানুষ তো নরম মলিন হয়৷ কই রাজকুমারী মিফতা রাজ কন্যা হয়েও তো ওমন ছিলো না? এ মেয়েকে নিয়ে কোন উপন্যাস লিখলে সে উপন্যাসের র’হ’স্য’ময় চরিত্র হয়তো মেয়েটি হবে?
শ্রেয়াস গাড়ি থেকে নামার জন্য দরজা খুলবে এর আগেই প্রিয়ম এক সাহসী কান্ড ঘটিয়ে বসলো৷ অদ্ভুত এক প্রশ্ন ছুড়লো শ্রেয়াসের পানে,
“আপনার কি মেয়েটাকে পছন্দ জনাব?”
এহেন প্রশ্নে থতমত খেলো শ্রেয়াস অতঃপর ধাতস্থ হয়ে ব্রু কিঞ্চিৎ কুচকে বলে,
” অবাদ্ধ মেয়েটার মত তোমার সাহস ও আজকাল বেরেছে দেখছি প্রিয়ম৷ ”
প্রিয়ম ভরকালো ক্ষানিকটা ফের আমতা আমতা করে বললো,
” ন না জ জনাব এমনি জিগ্যেস করছিলা৷”
প্রিয়মের ভরকানো কন্ঠ শুনে হো হো করে হেসে উঠলো শ্রেয়াস৷ এতে প্রিয়ম যেন আরো ভরকালো৷ কি হলো হঠাৎ এমন হাসিছে কেন? নিশিথে পেলো নাকি? চৈত্র মাস চলছে বলাও যায় না ভেবে প্রিয়ম আশে পাশে তাকালো৷
শ্রেয়াস হাসি থামিয়ে বলে,
” বাহ প্রিয়ম বেশ উন্নতি আজকাল তুমি আমায় ভয় পাচ্ছো বেশি? আগে তো মুখের উপরই কথা বলতে?”
শ্রেয়াসের কথায় ক্যাবলাকান্তের মত হাসলো প্রিয়ম৷ বিরবিরিয়ে বললো,
“লন্ডনে তো আর বাঘের মত এমন গর্জে উঠতেন না৷ আজকাল আপনার গর্জন বেশি শোনা যায়৷”
শ্রেয়াসের আড়ালে কথা গুলো বললেও শ্রেয়াসের কান এড়ালো না৷ মিহি হাসলো শ্রেয়াস অতঃপর বললো,
” কি যেন বলছিলে? মেয়েটাকে আমার পছন্দ কি না? পাষাণ মেয়েকে আমি পছন্দ করবো? ও মেয়ে কালো জাদু জানে আমাকে আমার থেকে দূরে করছে এর শা’স্তি তো পেতেই হবে সে কৌমুদিনী কে৷”
বলে হনহনিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেলো৷ প্রিয়ম কিছুই বুঝলো না সব যেন মাথার উপর দিয়ে গেলো৷ কি বললো? সে যা বলেছে সে বুঝেছে তো? কে জানে৷ থম মেরে বসে রইলো প্রিয়ম কি বললো তা বোধগম্য করার চেষ্টা চালালো৷ কিন্তু মনে হয় না সে চেষ্টায় সে সফল হবে৷ আজকাল সবাই এমন হেয়ালি উত্তর দেয়৷ না বুঝে ব্যার্থ হয়ে সে ও গাড়ি থেকে নামলো৷
শ্রেয়াস সে নারী ছায়া মূর্তিকে অনুসরণ করে তার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো বিনা শব্দে৷
“রাত বিরাতে একটা মেয়ের পিছনে আসা ঠিক নয় রাজকুমার৷ ”
হঠাৎ চন্দ্রিকার কন্ঠে ভরকালো শ্রেয়াস৷ মেয়েটা সত্যি কালো জাদু জানে নাকি? ও তো নৈশব্দে এখানে এসে দাঁড়িয়েছে৷ মেয়েটা বুঝলো কি করে?
“উত্তর দিচ্ছেন না কেন?”
শ্রেয়াস প্রতি উত্তর করলো না কথা ঘুরালো অতঃপর বললো,
“মেয়ে আপনি এতো রাতে এখানে কি করছেন?”
মেয়েটা কিয়ৎ ঘার বাকালো তাতে মুখশ্রীর অর্ধাংশ দেখতে পেলো শ্রেয়াস৷ চন্দ্রিকা নমনীয় শান্ত কন্ঠে বললো,
“কথা ঘুরাচ্ছেন কেন?”
“আপনার কথার উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছি না তাই৷ ”
শ্রেয়াসের এক রোখে উত্তরে হাসলো চন্দ্রিকা অতঃপর বললো,
“আমিও আপনাকে বলতে ইচ্ছুক নই৷”
এ মেয়ে যে এ উত্তর দিবে জানতো শ্রেয়াস৷ মেয়েটা বড্ড ঘার বাঁকা৷ কিন্তু এতো রাতে কোথ্যেকে আসলো মেয়েটা? মেয়েটা অদ্ভুত রাত বিরাতে বাইরে দেখা যায় কেমন রহস্যময় হাসে কথার ধরন হাব ভাব চাল চলন সব অন্য রকম৷ কেন?
“আমাকে নিয়ে ভাবতে যাবেন না রাজকুমার ফেসে যাবেন আমাতে৷”
শ্রেয়াস ফের থতমত খেলো মেয়েটা বুঝলো কি করে ওকে নিয়েই ভাবছে? এ মেয়ে মন পড়তে জানে নাকি? নাকি সত্যি কালী জাদু টোনা জানে? আর কি বললো? ফাসবে কেন? এ মেয়েতো নিজে ফাসাচ্ছে ওকে৷ কিছু বললো না শ্রেয়াস৷ গম্ভীর্যতা বজায় রেখে চন্দ্রিকার পাশ ঘেঁষে দাঁড়ালো মাঝে কিয়ৎ জায়গা খালি রেখে৷ ঘাড় ক্ষানিকটা ঘুরিয়ে মেয়েটার মুখ পানে তাকালো৷ জ্যোৎস্না আজ চাঁদের আলো পুকুরের পানিতে পরে ঝলমলে করে দিচ্ছে সব কিছু মেয়েটার মুখশ্রীও শুভ্র করে তুলেছে৷
কৌমুদিনীকে আজ প্রকৃত কৌমুদিনী লাগছে৷ চন্দ্রের আলোর ন্যায় সব কিছু যেন আলোকিত করে দেয়৷ নেত্র ফেরালো শ্রেয়াস বড় বড় শ্বাস ছাড়লো৷ মেয়েটা ইচ্ছে করে ওকে নিজের জ্বালে ফাসাচ্ছে? নাকি ওই ইচ্ছে করে মেয়েটার জ্বালে ফাসছে?
শ্রেয়াস পানির দিকে তাকিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলে,
“আপনার শাস্তি আমি দিবো চন্দ্রিকা৷ কৌমুদিনী হয়ে আমায় আঁধারে ঠেলে দিচ্ছেন৷ আমার থেকে আমাকে কেড়ে নিচ্ছেন বার বার প্রতিবার৷ প্রতিটা শাস্তি আমি দিবো আর সে শাস্তি আপনাকে মাথা পেতে নিতে হবে৷”
একা একা বিড়বিড় করলো শ্রেয়াস৷ নিজের নতুন দহনে ডোবা মন কে নিজেই শান্ত করলো৷ বুঝে না সে নিজের কান্ড নিজেই৷
কি চাইছে ও? মাঝে মাঝে একাই ভাবে মেয়েটা ওর মাথা খেয়ে নিয়েছে৷
“নিরবে নিভৃতে কিছু ঘটছে জনাব যা আপনি টের পাচ্ছেন না৷ বা বুঝেও অবুঝ হচ্ছেন? প্রণয়ের আভাস পাচ্ছি আমি৷ গভীর প্রণয়৷”
হঠাৎ মেয়েটার এহেন কথা বুঝলো না শ্রেয়াস কি বললো মেয়েটা ভাবতে বসলো তার আগেই মেয়েটা যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো৷
কিন্তু মেয়েটা যাওয়ার আগে হঠাৎ চন্দ্রিকার ডান বাহুতে শুভ্র সাদা ব্যা’ন্ডে’জের মত কিছু দেখতে পেলো শ্রেয়াস৷ হাতে কিসের ব্যা’ন্ডে’জ? চন্দ্রিকা কয়েক কদম এগিয়ে যাওয়ার পর শ্রেয়াস বাধ সাধে,
“থামুন চন্দ্রাবতী৷”
থামলো চন্দ্রিকা কিছুটা ঘার ঘুরিয়ে পিছনে তাকালো অতঃপর বললো,
“চন্দ্রাবতী নই চন্দ্রিকা বলুন৷”
কথা কানে নিকো না শ্রেয়াস ডান বাহুর দিকে তাকালো এখন ব্যা’ন্ডে’জটা স্পষ্ট দেখতে পেলো শ্রেয়াস৷
শ্রেয়াস ক্ষানিকটা এগিয়ে গেলো ব্যান্ডেজের দিকে তাকিয়েই কৌতুহল নিয়ে জিগ্যেস করে,
“আপনার হাতে কি হয়েছে চন্দ্রাবতী?”
চন্দ্রিকার কি হলো কে জানে উত্তরে একবার হাতের দিকে তাকিয়ে অতঃপর শ্রেয়াসের দিকে তাকিয়ে কেমন অদ্ভুত ভাবে হাসলো৷ প্রাণ খোলা হাসি নয়৷ র’হ’স্য’ময় হাসলো চন্দ্রিকা৷ এ হাসির মানে বুঝলো না প্রশ্ন বোধক চাওনি দিয়ে একবার শুভ্র সাদা ব্যান্ডেজে মোরানো হাতের ব্যান্ডেজের উপর রক্তের দিকে আরেকবার ওষ্ঠ কোণে জুলে থাকা সে হাসির দিকে দৃষ্টি দিলো৷
ফের কিছু জিগ্যেস করবে এর আগেই চন্দ্রিকা উরনা দিয়ে হাতটা আড়াল করতে করতে উত্তর না দিয়েই বড় বড় পা ফেলে হেটে চলে গেলো৷
শ্রেয়াস ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো৷ মেয়েটা উত্তর দিলো না কেন? চন্দ্রিকা কোথ্যেকে এসেছে? হাতে কিসের আ’ঘা’ত? আর ওই রহস্যময় হাসির মানে কি? মেয়েটা কেমন রহস্যময়ী সত্যি রহস্যময়ী৷
চলবে কি?