#কৌমুদিনী
#তাফসিয়া মেঘলা
#পর্ব ১৬
৩১
মেইন দরজা দিয়ে বাড়ির অন্দরের দরজার সামনে দাঁড়ালো এ তালাও চেক করলো না এ তালার সাথে কিছু করা হয়নি৷ তাদের কাছে থাকা চাবি দিয়েই তালাটা খুলে প্রবেশ করতেই আয়াশ সহ বাকিরা নাক ছিটকে অন্য দিকে মুখ ঘুরালো৷ পচা গন্ধে মাথা ধরে এলো গন্ধটা কিসের দেখার জন্য দৃষ্টি দিতেই বি’স্মিত হলো আয়াশ৷ আশরিফ এর বাড়ির ভিতরে মেইন দরজা দিয়ে ঢুকতেই র’ক্ত পরে আছে মেঝেতে৷
বাড়ির ভেতরে কিসের র’ক্ত? আশরিফের? কাল সকালে তালা কা’টা ছিলো না বাইরের মেইন গেইট তালা লাগানো ছিলো কে এসেছিলো? আর রক্তই কার? আশরিফ আসলেই বা এমন কি হয়েছে?
পা উচু করে র’ক্তের পাশে বসলো আয়াশ অতঃপর ভাবুক হয়ে কন্সটেবল কে বলে,
” আশরিফের বাড়িতে এত র’ক্ত? আশরিফের কিছু হলো নাকি ফের কোন খু’ন করলো? আর তালা কে’টে কেইবা বাড়িতে ঢুকলো? আশরিফ? ও ঢুকলে এভাবেই খুলে রেখে যাবে?”
কন্সটেবল র’ক্তের দিকে তাকিয়ে বলে,
” কি মনে হয় স্যার আপনার? আশরিফ নয়?”
আয়াশ তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে,
” যথার্থ ভাবে কিছুই বলা যাচ্ছে না৷ আপনি এখান থেকে কিছুটা র’ক্ত তুলে নেন আর দেখুন কিছু পাওয়া যায় নাকি৷”
আয়াশের কথায় কন্সটেবল র’ক্ত তুলে নিলো কিছুটা৷ আয়াশ এগিয়ে গেলো সামনের দিকে৷ ঘরের অনেক জায়গায় ছিটে ছিটে র’ক্তের ফোটা ছড়িয়ে আছে৷
একটা ঘরের কাছে আসতেই পায়ে কিছুর সাথে বাড়ি খেলো৷
কিসের সাথে বাড়ি খেলো তা দেখার জন্য তাকাতেই নিচে একটা বন্দুক দেখতে পেলো হাতে গ্লাবস পরে ব’ন্দু’ক টা তুলে নিলো৷
এটা কার? আশরিফের? এমন রি’ভলবার দেখলো আয়াশ বিশ রাউন্ডের এপিএস স্টেচকিন এটা৷ কমিশনার যেহেতু ছিলো এ রি’ভলবার আশরিফ এর হতেই পারে৷
হঠাৎ কন্সটেবল এর ডাকে হুস ফিরলো আয়াশের৷ কন্সটেবল আরো দুইটা রি’ভলবার নিয়ে এগিয়ে এলো৷ আয়াশ সামান্য অবাক হয়ে বলে,
” এটা আবার কার? আমার জানামতে ডিউটি শেষ হওয়ার আগে রি’ভলবার রেখে আসতে হয় তবে কমিশনার যেহেতু তার কাছে রি’ভ’লবার থাকা বড় ব্যাপার না তাই বলে তিনটা? আশরিফ তিনটা রিভলবার রেখেছিলো কেন নিজের কাছে? আদৌ এই তিনটা আশরিফের তো?”
সত্যি অদ্ভুত ব্যাপার নয়কি? তিনটা রি’ভ’লবার কেন রেখেছিলো বাড়িতে? আশরিফের হলে বাড়িতে এই তিনটার কাগজ থাকবে তা ভেবে সব রুম চেক করলো কিন্তু পেলো না৷ আশরিফের রুম কোনটা বুঝতে পারছে না আরেকটা রুমে ঢুকতেই অবাক হলো আয়াশ৷ আলমারি খোলা সব এলোমেলো হয়ে পরে আছে৷ এমন অবস্থা কেন ঘরের? আশরিফ পা’লানোর আগে কিছু খুঁজছিলো তখন ফেলে রেখে গেছে? না তাহলে সব রুম এলোমেলো থাকতো সব কিছু পরিপাটি গোছানো ছিলো সব রুমের বৈঠকখানার শুধু বাইরে ওই র’ক্ত আর এখানেই এলোমেলো সব৷
এগিয়ে গিয়ে সবটা দেখলো কি অদ্ভুত টাকা পরে আছে কিন্তু আলমারি খোলা এমনকি চেক বই ও পরে আছে৷
আশরিফ পালালে টাকা নিয়ে যায় নি কেন? দুইটা ব’ন্দুকের কাগজ খুঁজে পেলো আয়াশ৷ আর ওই এপিএস স্টেচকিন টা কার তাহলে?
আশরিফ ছাড়া অন্য কেউ এসেছিলো এখানে? কে? সাধারণ কারো কাছে এপিএস স্টেচকিন ব’ন্দু’ক? অবাক ব্যাপার নয় কি? দিন দিন রহ’স্য যেন বাড়ছে৷ কন্সটেবল কে বললো খবর নিয়ে দেখার জন্য কার এই এপিএস স্টেচকিন ব’ন্দু’ক টা৷
বিছানার উপরে থাকা কাপর গুলো এলোমেলো করে দেখলো কিছু পাওয়া যায় কিনা ঠিক তখনই দরজার কোনায় চোখ যেতেই একটা ফোন দেখতে পেলো৷ সাথে সাথেই ব্রু জোরা কুঁচকে এলো আয়াশের মুঠো ফোন টা হাতে নিয়ে দেখলো এটা বন্ধ৷
এটা কার মোবাইল? আশরিফের? মোবাইল টা খোলার চেষ্টা করলো খুললো না চার্জ শেষ হয়ে গেছে হয়তো৷ কিন্তু মোবাইলটা কার? লোকেশন অনুযায়ী আশরিফের মোবাইল শেষ বারের মত আশরিফের বাড়ির লোকেশন দেখিয়েছে৷ আশরিফ পালালে ফোন রেখে পালাবে? তা না হলে কার মোবাইল হতে পারে এটা? ওই বন্দুকটা যার তার নয়তো? কিন্তু কেই বা এসেছিলো এখানে? সব জোট পাকিয়ে যাচ্ছে৷ কি হতে কি হচ্ছে সবই ধাঁধার মত লাগছে৷ কি অদ্ভুত৷
৩২
শেষ রাতেই চন্দ্রিকার জ্ঞান ফিরেছিলো৷ জ্ঞান ফেরার পর থেকেই মেজাজ তার বিগড়ে আছে৷ যাকে সামনে পাবে তাকেই শেষ করে দিবে৷ ফারহান কে সামনে পেলে আজ মেরেই দিবে চন্দ্রিকার মা মেয়েকে আটকে রেখে রসুই ঘরে রান্নার কাজ করছে৷
শেষোক্ত মা ও বুঝলো না? ঘাড়ে হাত দিয়ে দাতেদাত চেপে ব্যাথা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে আর পায়চারি করছে চন্দ্রিকা৷ কি করে বের হওয়া যায়? দরজা ভা’ঙলে চাচি ওর মা কে কথা শুনাবে যা ও চায় না৷ হঠাৎ অলিন্দের কথা মাথায় আসতেই ওষ্ঠ কোণে প্রগাঢ় হাসি ফুটলো৷ বেশি রাগে অলিন্দের কথা মনেই ছিলো না৷ ওর অলিন্দটা খোলা মেলা অনায়েসে দোতলা থেকে ঝাপ দেয়া যাবে নিচে৷
এদিক থেকে মহলের মেইন দরজা সরাসরি দেখা যায় ওদের বাড়িটা মহলের দক্ষিন দিকেই এটা আগে অতিথিশালা ছিলো মহলের সেটাকে দোতলা করে দিয়েছে শ্রেয়াসের দাদামশাই এখন এটা ওদের বাড়ি৷
কিন্তু এই ঘাড়ে ব্যাথা নিয়ে আদৌ নামতে পারবে কিনা কে জানে? ওর এখন বের হতেই হবে সকাল থেকেই শুনছে মারজিয়া বেগল কথা শুনাচ্ছে চন্দ্রিকার মাকে৷ মা ছেলের মুখে ঝামা না ঘষলে ঠান্ডা হবে না৷ আগেই ওই ফারহানকে কিছু করতে হবে এক তো খাটিয়ে মারে আবার এমন অকথ্য ভাষায় গা’লাগা’লি করে মারজিয়া বেগম৷ আর ওর মা শুনছে বসে বসে৷ কতবার বললো নবাব কে নালিশ করি কিন্তু শুনলো না ওর মা ধম’কে বসিয়ে দেয় প্রতিবার৷ নবাব কে লাগবে না ও নিজেই আজ ওদের ব্যবস্থা করবে৷ আশেপাশে চোখ বুলিয়ে আর কিছু না ভেবেই অলিন্দের কার্নিশ থেকে ঝাপ দিলো ঠিক তখনই কোথ্যেকে শ্রেয়াস এসে দাঁড়ালো ৷ শ্রেয়াশ লক্ষ করেছিলো আগে থেকে সবে আসছিলো না করতে আর এই মেয়ে ঝাপ দিয়েই বসলো৷
থতমত খেলো চন্দ্রিকা ভরকালো কিছুটা৷ শ্রেয়াস তপ্ত শ্বাস টেনে কিছুটা গম্ভীর্য নিয়ে বলে,
” আপনার জন্ম কি উল্টো ভাবে হয়েছিলো চন্দ্রাবতী? না মানে সব কিছুতেই উল্টো কাজ করেন৷ আপনি কি সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে দরজা দিয়ে ঢুকতে বের হতে পারেন না চন্দ্রাবতী? যখনই দেখি ব্যাঙের মত লাফিয়ে পাচিল টপকে দেওয়াল টপকে মহলে ঢুকেন৷ এখন দেখছি নিজের বাড়ি থেকেও দরজা রেখে দোতলার অলিন্দ টপকে নিচে নামলেন৷”
চন্দ্রিকা বৃ’তিষ্ণায় ছেয়ে থাকা মুখ নিয়ে ঘাড়ে হাত দিয়ে চেপে দাঁড়িয়ে আছে৷ শ্রেয়াসের কথা কর্ণপাত হতেই ব্যাথায় চোখ মুখ কুঁচকে রেখেই দাতেদাত চেপে নমনীয় কন্ঠে বলে,
” আমার যেখান দিয়ে ইচ্ছা সেখান দিয়ে উঠবো নামবো আপনার এতো কিছু জানার প্রয়োজন নেই৷ আর আপনাকে এত কথার উত্তর দিতে বাধ্য নই আমি৷”
মেয়ে ভাঙবে তবু মচকাবে না! সেও কম যায় না শ্রেয়াস বাঁ’কা হেসে বলে,
“তা তো আপনি জন্মগত অবাধ্য৷”
অ’বাধ্য কথা শুনে রাগের পাল্লা ভারি হলো৷ তবুও নিজেকে সংযত রেখে বিনীত কন্ঠে বললো,
“আপনি আমায় অবাধ্য বলছেন?”
শ্রেয়াস উত্তরে কু’টিল হাসলো৷ যে হাসি দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো চন্দ্রিকা, মনে মনে কয়েকশ কঠিন বাক্য শুনিয়ে দিলো শ্রেয়াস কে৷ এবারো নিজের রাগটা বহিঃপ্রকাশ করলো না দমিয়ে রাখলো৷ আগের মতই বিনীত সুরে বললো,
“পথ ছাড়ুন আমার রাজকুমার৷ ”
শ্রেয়াস বাঁ’কা হেসে বলে,
“বাহ রাগ সংযত রাখার চমৎকার ক্ষমতা আপনার মধ্যে আছে দেখছি চন্দ্রাবতী ৷ তা আহত হয়েও ঝাসির রানীর ঝাঝ কমলো না? আপনাকে দমানো যায় কিসে বলুন তো?”
শ্রেয়াসের কথায় ভ্রুক্ষেপ করলো না৷ তবে রাগ বাড়লো নিজেকে বুঝিয়েও ঠিক রাখতে পারলো না৷ ক্রুদ্ধ কন্ঠেই বললো,
“পথ ছাড়ুন আমার শ্রেয়াস৷ ”
শ্রেয়াস অবাক হলো ভরকালো, চমকালো৷ হঠাৎই নিজের কাছে নিজের নাম টা ভালো লাগলো শুধু ভালো না অনেক ভালো লাগলো৷ নিজের নামটা আজ নিজের কাছে অনেক বেশি সুন্দর বলে মনে হলো৷ কিন্তু কেন? মেয়েটা বলেছে তাই? মেয়েটার তেঁতো বুলিও শ্রেয়াসের ভালো লাগে কিন্তু কেন? মেয়েটা তার নজরে এসেছে বেশ গাঢ় প্রগাঢ় ভাবে৷ হঠাৎই মনে হলো মেয়েটা ভালো না একটুও ভালো না অন্যের অন্তরের অন্তস্থলে কেমন জায়গা করে নেয় কেমন বিনা অনুমতিতে৷ এ মেয়ের শাস্তি হওয়া উচিত কঠিন শাস্তি৷
শ্রেয়াস ফের একই ভাবে কুটিল হেসে বলে,
“মেয়ে আপনার সাহস বেড়েছে৷”
“তা আমার সর্বদাই বেশি৷ পথ ছাড়ুন এখন৷”
চন্দ্রিকার অকপটে উত্তর পেয়ে ফের হাসলো শ্রেয়াস মন খোলা প্রসন্ন হাসি৷ তবে এমন উত্তর তার মোটেও পছক্নদ না৷ কিন্তু এ মেয়েকে জ্বালাতে তার বেশ লাগে কেমন অল্পতেই রেগে যায়? মেয়ে মানুষের এত রাগ শ্রেয়াস প্রথম দেখলো৷ এ নারী তাকে অভিভূত করে সর্বদা৷ এ এক অদ্ভুত কন্যা একটু গম্ভীর, একটু রা’গী আর অনেকটা রহ’স্যময়ী৷
শেষে কিনা এ অদ্ভুত মেয়েতে নিজেকে হারালো? না হারিয়েছে কি? না না এ মেয়ে পছন্দ না তার৷
শ্রেয়াস এবার ক্ষানিকটা গম্ভীর সুরে বলে,
“পথ খোলা আছে চন্দ্রাবতী৷ তবুও কেন বার বার বলছেন পথ ছাড়ুন?”
চন্দ্রিকা অবাক হলো এ ছেলে নিজেই পথ আটকে দাঁড়িয়ে এ কথা বলছে৷ কথা না বাড়িয়ে পাশ কেঁ’টে যেতে নিলে ফের সামনে এসে দাঁড়ালো শ্রেয়াস৷ উষ্ঠ কোনে হাসির রেশ স্পষ্ট যা চন্দ্রিকার রাগ বাড়াতে সক্ষম৷ কিছু বললো না দাতে দাত চেপে অন্য জায়গা দিয়ে পাশ কাঁ’টাতে নিলেই আবার পথ আটকে দাঁড়ালো শ্রেয়াস৷
চন্দ্রিকা এবার আরো বেশি রেগে গেলো ঘাড় আর হাত ব্যথায় কুঁ’কিয়ে আসছে বারবার এ ছেলে এখানে এমন শুরু করেছ৷
রেগে হাত উচিয়ে ধাক্কা মা’রতেই ছিটকে পরে শ্রেয়াস৷ ধাক্কা দিয়ে শ্রেয়াস কে সরাতে সক্ষম হলেও নিজের শরীর আর সায় দিলো না চন্দ্রিকার সব ঝাপসা হয়ে এলো লুটিয়ে পরলো নিচে৷ শ্রেয়াস হতভম্ব হয়ে দাড়িয়েই রইলো সেখানে৷ কি হলো এটা? ওকে ধা’ক্কা দিয়ে মেয়েটার আবার কি হলো?
চলবে,
[নোটঃ১৩৪৪ শব্দ সংখ্যা৷ রিচেক হয়নি অসম্ভব ব্যাস্ত তাই সকালেই দিয়ে দিলাম আশাকরি বুঝে নিবেন]